বর্ষণের সেই রাতে ৫৫

#বর্ষণের সেই রাতে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ৫৫
.
চোখ তীব্র আলো এসে পরায়
আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকালো অনিমা। ভালোভাবে তাকানোর পর নড়তে গিয়েই বুঝতে পারল যে অনিমার হাত চেয়ালের সাথে বাধা, আর এটাও বুঝতে পারলো যে ওর মুখও বাধা।ভালোকরে তাকিয়ে দেখলো যে ওর সামনে মিস্টার রঞ্জিত চৌধুরী দাঁড়িয়ে আছেন ওনার মুখে শয়তানী হাসি, যেই হাসি অনিমা আগেও দেখেছে। মিস্টার রঞ্জিত চৌধুরী অনিমার সামনের একটা চেয়ারে বসল। অনিমা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে ওনার দিকে। রঞ্জিত চৌধুরী অনিমার সামনের একটা চেয়ারে বসে বলল,

— ” কেমন আছো মা। কতোদিন পর দেখা হলো আমাদের তাইনা? লাস্ট আমাদের কবে দেখা হয়েছে মনে আছে তোমার?”

অনিমার চোখের সামনে সেই রাতের প্রতিটা দৃশ্য ভেসে উঠলো। ওর বাবার সেই ঝুলন্ত লাশ, ওকে তুলে নিয়ে যাওয়া সব কিছুই। আর এসব মনে পরতেই ওদের চোখ দিয়ে এক ফোটা জল গড়িয়ে পরল। সেটা দেখে রঞ্জিত চৌধুরী হেসে দিলেন। তারপর বললেন,

— ” যাক মনে পরেছে তাহলে? ও তোমার মুখ তো বাধা উত্তর দেবে কীকরে? তাইনা? দাঁড়াও।”

বলে অনিমার মুখের কাপড়টা নামিয়ে দিলো। অনিমা চোখ নামিয়ে নিলো। অনিমাকে চুপ থাকতে দেখে রঞ্জিত চৌধুরী বললেন,

— ” তুমি ঠিক সেই ভুলটাই করলে যেই ভুলটা তোমার বাবা করেছিলো। আচ্ছা এই বাপ বেটি মিলে আমার পেছনেই কেনো পরলে বলোতো?”

অনিমা ওনার দিকে ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

— ” কারণ আপনার মতো শকুনদের নজর দেশের কিছু অসহায় মানুষদের ওপর থাকে। তাই আমার আব্বুর মতো কিছু সৎ মানুষদের অাপনার পেছনে পরে থাকতেই হয়।”

অনিমার কথায় মিস্টার রঞ্জিত চৌধুরী হসতে হাসতে বলল,

— ” একদম বাবার মতো হয়েছো দেখছি। তা কালকে আমাকে এক্সপোস করতে চাইছিলে নাকি?”

অনিমা শক্ত চোখে রঞ্জিত চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” সবটাই তো জানেন আর জানেন বলেই তো আমি এখন এখানে আছি তাইনা? তাহলে এসব ফালতু নাটকের মানে কী?”

মিস্টার রঞ্জিত অবাক হয়ে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” বাহ গলায় জোর খুব বেড়ে গেছে দেখছি। সাত বছর আগে এই বাচ্চা মেয়েটাই আমার একটা ধমকে ভেজা বেড়ালের মতো চুপসে গেছিলো ভাবা যায়?”

অনিমা কিছু না বলে চুপ করে রইলো। মিস্টার রঞ্জিত বললেন,

— ” এবার চুপচাপ বলে দাও যে আর্টিকেল টা কোথায় রেখেছো?”

এটা শুনে অনিমা রঞ্জিত চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,

— ” একটু আগে বললেন না যে আমি আমার বাবার মতো হয়েছি। ভাবলেন কীকরে? হাসান কোতয়ালের মেয়ে হয়েও আমি নিজের প্রাণের ভয়ে আপনাকে আর্টিকেলটা কোথায় আছে বলে দেবো?”

মিস্টার রঞ্জিত এবার খানিকটা চিন্তায় পরে যাওয়ার ভান করে বলল,

— ” হুমম খুব চিন্তার বিষয় তাইনা? নিজের প্রাণের কথা না হয় না ভাবলে। কিন্তু আদ্রিয়ান? ওর প্রাণের কথাও ভাববে না? ”

অনিমা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো, রঞ্জিত চ‍ৌধুরী অনিমার সামনেও আদ্রিয়ান ওদের কাছে বন্দি আছে সেই ভিডিওটা প্লে করলো। ভিডিওটা দেখে পুরো হ্যাং হয়ে গেলো।

______________________

আদ্রিয়ান একটা চেয়ারে বসে আছে তবে বাধা নেই কারণ আদ্রিয়ানকে আর যাই হোক বেধে রাখা যায়না সেটা সবাই জানে। কবির শেখ ওর বরাবর বসে আছে আর মাঝখানে আছে একটা টেবিল। কবির শেখ আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” কী? কেমন লাগল আমার চাল?”

আদ্রিয়ান একটা হাই তুলে বলল,

— ” বোরিং। সেই পুরোনো স্ট্রাটেজি। নতুন কিছু ট্রায় করলে ভালো লাগত আরকি।”

কবির শেখ রেগে বললেন,

— ” আচ্ছা এতো কনফিডেন্স? দাবাতে ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন আমি। তোমার কী মনে হয় স্ট্রাটেজি তোমার কাছে শিখব আমি?”

আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল,

— ” ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন নট ওয়ার্ল্ড সো এতো প্রাউড করার কিচ্ছু নেই।”

কবির শেখ ভ্রু উচু করে বললেন,

— ” আচ্ছা? তাই নাকি? এমনভাবে বলছো যে তুমি খুব এক্সপার্ট? তাহলে তো একটা দান খেলতেই হয় কী বলো? দেখি কতো ক্ষমতা তোমার হ্যাঁ যদি জিতে যাও তো আমি নিজে পুলিশের কাছে স্যারেন্ডার করবো।”

আদ্রিয়ান হেসে বলল,

— ” আপনি নিজেও জানেন আপনি তা করবেন না। তবুও যখন আপনি খেলতে চাইছেন তো চুলুন খেলা যাক।”

কবির শেখ ইশারা করতেই দাবার কোট আনা হলো। আদ্রিয়ান ব্লাক নিলো আর কবির শেখ হোয়াইট । ব্লাক আদ্রিয়ানের ফেবরেট তাই ওটাই নিয়েছে। আরেকটা কারণ হলো ব্লাক আগে আ‍্যাটাক করেনা ডিফেন্স দিয়ে শুরু করে আর পারলে কাউন্টার অ‍্যাটাক করে সেটাই ওর ভালোলাগে। কবির শেখ নিজের প্রথম চাল হোয়াইট পর্ন টাকে E4 কোটে চাললেন। আদ্রিয়ানও নিজের ব্লাক পর্নটাকে E5 কোটে চালল। কবির শেখ নিজে নাইটটাকে F6 কোটে চাললেন। আদ্রিয়ান ও কিছু চিন্তা না করে সাথে সাথে ওর নাইটটাকে C6 এ চেলে দিলো। কবির শেখ একটু ভেবে নিজের বিষপকে C4 এ চালল। আদ্রিয়ানও স্বাভাবিক ভাবেই নিজের নাইট টাকে F6 এ দিয়ে দিলো। কবির শেখ কিছু একটা ভেবে নিজের এগিয়ে আনা নাইট টাকে C5 কোটে চাললেন। চালটা চেলেই কবির শেখ এর মুখে বিজয়ের হাসি ফুটে উঠলো কারণ পরের চালটাতে ওনার নাইট টা সোজা আদ্রিয়ানের এরিয়ার F7 পর্ন কে ক্যাপচার করবে আর একিই সাথে কুইন আর রুফ দুটোকেই একসাথে অ্যাটাক করবে এতে আদ্রিয়ানের কুইন বা রুফ এর মধ্যে কোনো একটা গুটি যাবেই আর বিশাল লস হবে কারণ দুটো গুটিই ইম্পর্টেন্ট। আর কবির শেখ এর নাইট টাকেও আটকানোর কোনো উপায় নেই কারণ কবির শেখ তার বিষপ দিয়ে নাইটটাকে প্রকেক্ট দিয়ে রেখেছে। আদ্রিয়ান কিছু চিন্তা না করেই সোজা ওর বিষপ C5 কোটে চালল। কবির শেখ অবাক হয়ে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে শব্দ করেই হেসে দিলেন। হাসতে হাসতে বললেন,

— ” এই স্কিল নিয়ে আমার সাথে দাবা খেলতে বসেছো? এটা দিয়ে কী হলো? ”

আদ্রিয়ান ওনার দিকে তাকিয়েই একটু হেসে বলল,

— ” চাল চালুন।”

কবির শেখ ওনার নাইট আদ্রিয়ানে F7 কোটের পর্ণটাকে ক্যাপচার করলেন। এবার নিশ্চিত ভাবেই আদ্রিয়ান নিজের কুইন বা রুফ এর মধ্যে কোনো একটা গুটি হারাবে। আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে থুতনিতে হাত রেখে কোটের দিকে তাকালো আর কবির শেখের মুখে বিজয়ের বাঁকা হাসি ফুটে উঠল। আদ্রিয়ান ওর এগিয়ে রাখা বিষপটাকে কবির শেখের F2 কোট এর পর্ণ টাকে ক্যাপচার করল এবং তার ফলে কিং এর ওপর চেক পরল। কবির শেখ একটু ভাবনায় পরলেও কিছুক্ষণ ভেবে তারপর বাঁকা হাসি দিয়ে বললেন,

— ” সত্যিই তুমি খুব বোকা আদ্রিয়ান।”

কবির শেখ এর এই কথা বলার কারণ উনি ওনার কিং দিয়ে পর্নটাকে ক্যাপচার করতেই পারবেন আর তারপরের চালে আদ্রিয়ানের কুইন বা রুফ এর মধ্যে একটাতো যাবেই। আদ্রিয়ান কিছু না বলে চুপ করে রইলো আর প্লান অনুযায়ী। কবির শেখ ওনার কিং দিয়ে F2 কোর্টের পর্ন টা ক্যাপচার করে বললেন,

— ” আমার চালগুলো এরকমি হয় আদ্রিয়ান। শত্রু যখনি ভাবে যে সে আমায় কিস্তিমাত করে দেবে আমি ঠিক এইভাবেই সেই ভাবনাকে উপরে ফেলি। যেমন আজ ফেলেছি ”

আদ্রিয়ান কিছু বললনা শুধু ওর বাম পাশের নাইটটাকে E4 এ দিলো আর আবারো কিং এর ওপর চেক পরল। আদ্রিয়ান কবির শেখ এর দিকে তাকিয়ে বললেন,

— ” ভাবনা উপরে ফেলতে গেলে ভাবনাটা আগে বুঝতে হয় মামা। আর আমার ভাবনা বোঝাটা এতোটাই সহজ নয়।”

কবির শেখ একটু চিন্তায় পরলেন কখন আদ্রিয়ানের রুফ আর কুইনকে অ‍্যাটাক করে বসে আছে কিন্তু আদ্রিয়ান ক্যাপচার করার সময়টাই দিচ্ছে না ওনাকে। পরপর দুটো চেইক দিয়ে এদিক ব্যাস্ত রাখছে ওনাকে।

_____________________

অনিমা অবাক হয়ে কিছুক্ষণ ভিডিওটার দিকে তাকিয়ে কান্নাভেজা চোখে মিস্টার রঞ্জিতের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” ওনাকে কেনো আটকে রেখেছেন আপনারা? প্লিজ ওনাকে ছেড়ে দিন।”

মিস্টার রঞ্জিত একটা শয়তানী হাসি দিয়ে বলল,

— ” কী আর করবো বলো? দোষটাতো তোমার! তুমিতো উল্টৌপাল্টা কাজ করো সবসময়। তুমি আমাদেরকে বলো আর্টিকেলটা কোথায় আছে নইলে আদ্রিয়ানের শেষ দিন আজকেই হবে।”

অনিমা কিছু না ভেবেই রঞ্জিত চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল,

— ” আপনি যা বলবেন আমি করবো কিন্তু প্লিজ ওনার কোনো ক্ষতি করবেন না। প্লিজ।”

রঞ্জিত চৌধুরী শয়তানী হাসি দিয়ে বলল,

— ” ঠিক আছে তাহলে বলো তোমার আর্টিকেলটা কোথায় আছে?”

অনিমা কান্না থামিয়ে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,

— ” আমার ল্যাপটপে আছে।”

রঞ্জিত চৌধুরী উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,

—- ” হুমম ঠিকি ধরেছিলাম তাহলে? ”

মিস্টার রঞ্জিত অনিমার ব্যাগটা এনে ওখান থেকে ল্যাপটপ বের করে টেবিলে রেখে ওটা ওপেন করে বলল,

— ” পাসওয়ার্ড বলো?”

অনিমা চুপ করে আছে। মিস্টার রঞ্জিত রেগে গিয়ে বললেন,

— ” তুমি কী চাও আমি এখন সেই সাত বছর আগেল ঘটনার পুনরাবৃত্তি করি?”

অনিমা চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস নিয়ে তারপর পাসওয়ার্ড বলে দিলো আর ফাইলের নাম আর পাসওয়ার্ড টাও বলতে হলো। আপাদত এটা ছাড়া আর কিছুই করার নেই ওর।

_______________________

কিছুক্ষণ চিন্তা করার পর কবির শেখ তার কুইন F3 তে দিলো তাতে আদ্রিয়ানের নাইটটার ওপর অ‍্যাটাক হয়। এই চালটা দেখে আদ্রিয়ান বাঁকা হেসে ওর কুইন F6 এ দিলো। এতে ওর কুইনটা নাইট এর হাত থেকে বাঁচলো। কবির শেখ আবারো হাসলেন। আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললেন,

— ” তুমি কী নতুন নতুন খেলা শিখেছো নাকি?”

আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকালো। কবির শেখ ওনার কিং দিয়ে আদ্রিয়ানের নাইটটাকে ক্যাপচার করলো আর হেসে বলল,

— ” এভাবেই আমি শত্রুর মেরুদন্ড ভাঙ্গী।”

আদ্রিয়ান উত্তর দিলোনা শুধু কিছক্ষণ ভেবে ওর একটা পর্ণ D5 কোটে চালল। কবির শেখ কোটের দিকে তাকিয়ে চিন্তা করে তার বিষপ কে D5 এ চেলে পর্ণটাকে ক্যাপচার করে ফেলল আর হেসে বলল,

— ” আর শত্রুর প্রত্যেক পরিকল্পনা এভাবেই ফ্লপ করি।”

আদ্রিয়ান থুতনিতে দুই হাত দিয়ে কিছুক্ষণ চিন্তা করে কুইন টু F4 এ চালল আর কিং কে চেক দিলো। কবির শেখ তার কিং D3 কোটে চালল। আদ্রিয়ান সঙ্গে সঙ্গেই ওর কুইন D4 কোটে দিয়ে কিংকে চেক দিয়ে দিলো। কবির শেখ চেক থেকে বাঁচে কুইন E2 তে চাললেন। আদ্রিয়ান একটু হেসে ওর কুইন দিয়ে কবির শেখ এর বিষপটাকে ক্যাপচার করে বলল,

— ” ধৈর্য্য ধরুন মামা। গেইম বাকি আছেতো এখনো।”

কবির শেখ একটু ভেবে এবার সোজা সেই নাইট দিয়ে প্রথম যেই অ্যাটাক টা করেছিলেন সেই অ্যাটাক প্লান অনুযায়ী আদ্রিয়ানের রুফ টাকেও ক্যাপচার করে শব্দ করে হাসতে লাগলেন। তারপর আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললেন,

— ” বলেছিলাম না আমি যেইরাজ্যে হামলা করি সেই রাজ্য ধ্বংস করে দেই? দেখো ভালোকরে তোমার কাছে এখন কী আছে? নাইট, বিষপ, রুফ সব হারিয়ে একপ্রকার শেষ তুমি। অনিমার আর্টিকেলটা জিজু কে দিয়ে দিয়েছে। আর এখন শুধু বেঁচে আছে কিং আর কুইন। মানে তুমি আর অনিমা। আগে রিক অনিমাকে মারবে তারপর আমরা তোমাকে।”

বলে জোরে জোরে হাসতে লাগলো কবির শেখ আর আদ্রিয়ান গম্ভীর মুখ করে একদৃষ্টিতে কোটের দিকে তাকিয়ে আছে।

_______________________

রঞ্জিত চৌধুরী এক এক করে সব গুলো পেইজ ডিলিট করে দিয়ে অনিমার কাছে এসে ওর হাতের বাধন খুলতে খুলতে বলল,

— ” হুমম এবার সব শেষ। আমাকে এক্সপোস করার চিন্তাও আর প্রমাণও। আগেই বলেছিলাম আমার সাথে লেগোনা দেখলে কী হলো? এবার দেখো কী হয়।”

বলে অনিমাকে ধরে দাড় করাতেই অনিমা ঝাড়া দিয়ে হাত সরিয়ে নিয়ে বলল,

— ” আপনারা কী এটা ছাড়া কিচ্ছু পারেননা? আমার আব্বুকে আমার ক্ষতি করার ভয় দেখিয়ে থামানোর চেষ্টা করেছিলেন। আর আমাকে আদ্রিয়ানের প্রাণে মারার ভয় দেখিয়ে আমাকে থামানোর চেষ্টা করছেন। আবার নিজেদের ক্ষমতাবান বলে দাবী করেন? লজ্জা করেনা আপনাদের?”

মিস্টার রঞ্জিত ধমক দিয়ে বললেন,

— ” ওই একদম চুপ। হ্যাঁ তোমার বাবা আমার এগেইনস্টে একটা আর্টিকেল ছাপতে চেয়েছিলেন তাই প্রথমে ওনাকে টাকা অফার করেছি শোনেনি, প্রাণের ভয় দেখিয়েছি তবুও থামেনি, শেষে তোমার ক্ষতি করার ভয় দেখিয়েছি তাকে কিন্তু তোমার বাবা নাছোড়বান্দা ছিলেন তাই।”

অনিমা কাঁদতে কাঁদতে বলল,

— ” তাই আপনি আমার বাবাকে মেরে ফেললেন? আর সকলের সামনে এটাকে সুইসাইড বানিয়ে দিলেন তাইতো? ওই রিপোর্ট, পুলিশদের ইনকোয়ারি, জার্নালিস্ট দের আর্টিকেল সব ওদের টাকা খাইয়ে মিথ্যে বলে বানিয়েছেন রাইট?”

মিস্টার রঞ্জিত একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,

— ” হ্যাঁ করেছি? তাতে কার কী? তুমি তখন চলে যাওয়ার পর আমরা এসে তোমার বাবাকে তোমারি বাবার রুমে নিয়ে গিয়ে ফাস দিয়ে খুন করেছি, ঐ একা একটা মানুষকে সামলাতে আমাদের বারোটা বেজে যাচ্ছিলো, কী গায়ের জোর রে বাবা। অনেক কষ্টে অনেকে মিলে কাবু করতে হয়ে। খুব ছটফট করছিলো। শেষে শুধু একটা কথাই বলেছিলো ‘ আমার মেয়েটাকে কিছু করোনা ও কিচ্ছু করেনি, দয়া করে ওর কোনো ক্ষতি করোনা।’ হাহ যত্তসব।”

অনিমার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে এসব শুনে কতোটা কষ্ট দিয়ে মেরেছে ওরা ওর আব্বুকে। আর ও কিচ্ছু করতে পারেনি, কিচ্ছু না। আর মরার আগেও শুধু ওর কথাই চিন্তা করেছে। এসব কথা ভাবতে ভাবতে মিস্টার বললেন,

— ” এবার তুমিও মরবে একিই ভাবে। তবে তোমাকে আমি মারবোনা আমার ছেলে মারবে।”

অনিমা অবাক হয়ে তাকালো। মিস্টার রঞ্জিত হেসে বললেন,

— ”ওর খুব সখ আদ্রিয়ানের সামনে নিজের হাতে ও তোমাকে মারবে। আর তুমি মরলে তো আদ্রিয়ান এমনিতেই মরে যাবে, তোমার শোকে তাইনা ?”

হঠাৎ করেই রিক ওখানে এসে বলল,

— ” একদম তাই।”

অনিমা চমকে তাকিয়ে দেখলো রিক দাঁড়িয়ে আছে আর মুখে বাঁকা এক হাসি। অনিমা কান্নাজরিত চোখে একবার রিক আর একবার মিস্টার রঞ্জিতের দিকে তাকালো।

______________________

এদিকে আদ্রিয়ান বেশ গম্ভীরভাবে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করার পর ওর ডান পাশের বিষপটাকে G4 কোটে চালল। ফলে আবারও চেক পরলো আদ্রিয়ানের। কবির শেখ হেসে বললেন,

— ” কী করছো আদ্রিয়ান বারবার চেক দিয়ে যাচ্ছো তো দিয়েই যাচ্ছো। কী হচ্ছে তাতে? আমিতো বলেছি আমি শত্রুর ভাবনা গুলোকেই গোড়া থেকে শেষ করে দেই আমার ভাবনা দিয়ে।”

আদ্রিয়ান এবারেও কিছু না বলে গম্ভীর মুখ করে বসে আছে আর গভীরভাবে ভাবছে। কবির শেখ ওনার কিং টাকে এককোট পিছিয়ে নিতেই আদ্রিয়ান একটা বাঁকা হাসি দিলো তারপর কবিল শেখ এর দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” ইউ নো হোয়াট মিস্টার শেখ ? আজ আপনার প্রত্যেকটা চাল আপনার বোকামীর পরিচয় ছিলো। আপনি আমার গুটিগুলো স্যাকরিফাইস করা দেখে ভাবছিলেন যে আমি খেলায় খুব কাঁচা আর এটা ভাবাই আপনার প্রথম ভুল ছিলো কারণ আমার গুটি স্যাকরিফাইস করা আমার অজ্ঞানতা ছিলো না আমার ট্রাপ ছিলো। আপনার দ্বিতীয় ভুল ছিলো এটাই যে অাপনি জিতে যাচ্ছেন বলে এতোটাই ওভার কনফিডেন্ট ছিলেন যে কিং এক কোট পেছানোর আগে এটা দেখেননি যে আমার এই ছোট্ট বিষপ টা আপনার কুইনকে ক্যাপচার করে ফেলবে। ”

বলেই ওর বিষপ দিয়ে কুইন টা ক্যাপচার করে ফেলল। কবির শেখ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন আদ্রিয়ান একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলল,

— ” এই ভুলটা আপনি আজও করেছেন। নিজের বুদ্ধির ওপর এতোই ওভার কনফিডেন্ট ছিলেন যে আপনার প্লানটা যে পুরো ফ্লপ হতে পারে সেটা ভাবেনই নি। ভেবেছিলেন সবকিছু আপনার প্লান মাফিক হচ্ছে তাই চিল করা যাক? তাইতো? কিন্তু এটা ভাবেননি হার বাপকা এক বাপ হোতা হ্যা। আর আপনার ভাবনা দিয়ে আমার ভাবনাকে উপরে ফেলার তো কোনো চান্স ই নেই কারণ আপনার ভাবনা যেখানে শেখ হয় আমার ভাবনা শেখান থেকে শুরু হয়।”

কবির শেখ ভীত হয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,

— ” ম্ মানে?”

আদ্রিয়ান একটু হেসে আলসেমি ঝেড়ে সোজা হয়ে বসতেই ঐ রুমে এ পুলিশ ফোর্স এসে সব লোকগুলোকে আটকে ফেলল আর কবির শেখ কেও ঘিরে ফেলল লোক গুলো। কবির শেখ অবাক হয়ে আদ্রিয়ানের দিকে তাকাতেই আদ্রিয়ান কোটের দিকে তাকিয়ে ওর কুইনটাকে সোজা কবির শেখ এর কিং এর বরাবর কোটে রেখে কবির শেখ এর দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে বলল,

— ” চেকমেইট মা…মা।”

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here