বর্ষণের সেই রাতে পর্ব ৫৪

#বর্ষণের সেই রাতে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ৫৪
.
আদ্রিয়ান ওর রুমের সোফায় চুপচাপ বসে আছে। একটু আগে শাওয়ার নিয়ে এসছে। চুপচাপ বসে বসে গভীরভাবে কিছু একটভেবে চলেছে ও। অনিমা কফির মগ নিয়ে আদ্রিয়ানের রুমে এসে দেখে আদ্রিয়ান চুপচাপ সোফায় বসে কিছু একটা ভাবছে। অনিমা দরজায় টোকা মেরে বলল,

— ” আসবো?”

অনিমার ডাকে আদ্রিয়ান ভাবনা থেকে বেড়িয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে অনিমা দাঁড়িয়ে আছে। আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” আমার রুমে ঢুকতে তোমার পার্মিশন নেওয়ার কোনো দরকার নেই সেটা কতোবার বলতে হবে অনি?”

অনিমা ভেতরে ঢুকে মুচকি হাসি দিয়ে বলল,

— ” সরি আসলে অাপনি কিছু একটা ভাবছিলেন তাই আরকি..”

আদ্রিয়ান বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” যাই হোক না কেনো আর কক্ষনো এমন করবেনা, আই ডোন্ট লাইক ইট।”

অনিম হালকা হেসে আদ্রিয়ানের পাশে বসতে বসতে বলল,

— ” আচ্ছা মিস্টার সরি বলেছিতো আর হবেনা।”

আদ্রিয়ান অনিমার দিকে তাকিয়ে নিজেও হেসে দিলো তারপর অনিমার হাত থেকে কফির মগটা নিয়ে ওকে একহাতে জরিয়ে নিয়ে বলল,

— ” হুমম সকাল সকাল বউয়ের সুইসসি হাতের সুইটসা কফি পেলে গোটা দিনটাই ভালো যায়।”

অনিমা একটা টেডিস্মাইল দিলো আদ্রিয়ানের কথায়, একটুপর কিছু একটা ভেবে বলল,

— ” আচ্ছা এতো গভীরভাবে কী ভাবছেন বলুন তো?”

আদ্রিয়ান অনিমার দিকে একপলক তাকিয়ে একটা শ্বাস ফেলে আবার সামনে তাকিয়ে বলল,

— ” রিক যেমনি হোক আর আগে যাই করে থাকুক না কেনো, এটা কিন্তু সত্যিই যে ও তোমাকে খুব ভালোবাসতো আর এখনো বাসে।”

কথাটা শুনে অনিমার মাথা নিচু করে ফেলল। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,

— ” জানি আমি সেটা। কিন্তু আমার কিছু করারই নেই। উনি নাকি আমাকে দেখেছিলেন যখন আমার আঠারো বছর বয়স। আমার আব্বুকে যেদিন খুন করা হয়েছিলো সেদিন। কিন্তু আমি দেখেছিলাম যখন আমার বিশ বছর বয়স তখন। উনি আমার লাইফে এন্ট্রিটাই এভাবে নিয়েছিলো যে ওনার প্রতি ভয় ছাড়া কোনো অনুভূতি আমার কাজই করতো না। কী আর করতাম আমি? আমার একেকটা কদম ফেলতেও ভয় লাগতো জানেন, যে কখন রিকের অপছন্দের কিছু করে ফেলবো আর কখন কী শাস্তির সম্মুখীন হতে হয়। আমার পরিস্থিতি ই তখন এমন ছিলো যে কিছু ভাবতেই পারিনি আমি। মামুর অকারণে বকাঝকা করা, মামীর কথায় কথায় গায়ে হাত তোলা। আর অর্ক ভাইয়া, এমন একটা মানুষের সাথে একি বাড়িতে থাকা যেই মানুষটা সুযোগ পেলেই আমাকে…। আর তারওপর রিকের ঐসব ব্যবহার। কিছু ভাবার মতো অবস্হাতেই ছিলাম না আমি। আমার মাথায় তখন শুধু এটাই ঘুরছিলো যে কীকরে এসবের থেকে মুক্তি পাবো, তখন শুধু সুস্হ স্বাভাবিক একটা জীবণ পাওয়ার জন্যে মরিয়া ছিলাম আমি। রিক আমাকে সত্যিই ভালোবাসে আমি সেটা সুইডেনে থাকা অবস্হাতেই একটু একটু করে বুঝতে পেরেছি। কিন্তু আমার তখন কিছু করার ছিলোনা কারণ তখন অলরেডি আমি অাপ.. মানে ওনার ভালোবাসা বুঝতে পারলেও ওনাকে ভালোবাসা আমার পক্ষে সম্ভব ছিলোনা তখন আর। আমি হেল্পলেস ছিলাম আদ্রিয়ান, তবে সেলফিস নই। অনেকেই হয়তো ভাবছে যে আমি শুধু নিজের স্বার্থটা দেখেছি, নিজের সুখের জন্যে অন্যকে কষ্ট দিয়েছি। কিন্তু সত্যিই তো এটাই যে আমার কাছে সেকেন্ড কোনো অপশনই ছিলোনা।”

বলতে বলতে কেঁদে দিয়েছে অনিমা। আদ্রিয়ান এতোক্ষণ চুপচাপ অনিমার কথা শুনছিলো। এবার ও অনিমার চোখ মুছে দিয়ে বলল,

— ” তোমার নিজেকে এক্সপ্লেইন করার কোনো দরকার নেই অনি। আমি জানি তুমি কী আর কেমন। যা হয়েছে তাতে তোমার কোনো দোষ নেই। তাই প্লিজ নিজেকে আর অপরাধি ভাববে না। দেখবে রিকের জন্যে নিশ্চয়ই ভালো কিছু অপেক্ষা করছে। আর ও একদিন খুব ভালো থাকবে।”

অনিমা নিজেকে সামলে হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ল। আদ্রিয়ান অনিমাকে বুকে জরিয়ে ধরে চুপচাপ বসে রইলো। রিকের জন্যে ওর নিজেরও খারাপ লাগছে, রিকের কষ্টের পরিমাণ ও খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারছে। কিন্তু এখন কিছুই করার নেই। শুধু এটুকু প্রার্থনা করতে পারে যে রিক তার জীবণে খুব ভালো একজনকে পাক যে ওকে খুব ভালোরাখবে।

____________________

রিক, রঞ্জিত চৌধুরী আর কবির শেক তিনজন বসে ব্রেকফাস্ট করছে। রঞ্জিত চৌধুরী রিকের দিকে তাকিয়ে বললেন,

— ” ওদিকের কী অবস্হা? আদ্রিয়ান নতুন করে কী প্লান করেছে?”

রিক খাবার খেতে খেতেই বলল,

— ” করলে তো বলতামই। তোমাদের যেটুকু বলার সেটুকু বলেছি, যা দেওয়ার তাতো দিয়েছি।”

কবির শেখ খাওয়া থামিয়ে রিকের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” হ্যাঁ কিন্তু আপাদত কী করছে?”

রিক কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,

— ” নিউসে তো দেখেছোই যে কালকে ওদের এনগেইজমেন্ট হয়েছে। সেসব নিয়েই বিজি ছিলো।”

কবির শেখ চামচ নাড়াতে নাড়াতে কিছুক্ষণ ভাবলেন তারপর রিকের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” তুমি এসব মেনে নিচ্ছো?”

রিক বাঁকা হাসি দিয়ে বলল,

— ” মেনে কোথায় নিলাম মামা? সময় মতো আসল চালটা দেবো আমি। তবে হ্যাঁ অনিমাদের নিউস কম্পানির হেড এর সাথে যোগাযোগ রেখো। ওদের নিউস পেপার বা চ্যানেলেই কোনো নিউস পাবলিস্ট করতে পারে, বি কেয়ারফুল।”

রঞ্জিত চৌধুরী ভ্রু কুচকে বললেন,

— ” ওরা বলেছে?”

রিক বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” তো কী এমনি এমনি বলছি নাকি আমি? এবার প্লিজ একটু খেতে দাও আমায়।”

বলে রিক খাওয়ায় মনোযোগ দিলো ওনারাও আর কথা না বলে খেতে শুরু করলেন।

___________________

আশিস বেশ কয়েকবার অরুমিতাকে কল করেই যাচ্ছে কিন্তু এস ইউসিয়াল অরুমিতা ফোন রিসিভ না করে কল কেটে দিচ্ছে। কিন্তু আজকে আশিসও নাছোড়বান্দা কনটিনিউয়াসলি ফোন করেই যাচ্ছে। অরুমিতা কল কাটতে কাটতে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে এবার সহ্য করতে না পেরে ফোন রিসিভ করে চড়া গলায় বলল,

— ” কী সমস্যা কী আপনার? কেনো এভাবে বিরক্ত করে যাচ্ছেন আমাকে? বলুন কেনো? নূন্যতম লজ্জাবোধ নেই না আপনার? এতো অপমান করি তবুও পেছনে পরে আছে?

আশিস অস্হির হয়ে বলল,

— ” অরু আমি…”

অরুমিতা ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল,

— ” চুপ! একদম ঐ নামে ডাকবেন না আমাকে আর না বিরক্ত করবেন।”

আশিস একটা শ্বাস ফেলে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,

— “অরুমিতা প্লিজ আমার কথাটা একটু শোনো?”

অরুমিতা বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” বলার বা শোনার মতো আর কিছু আমাদের মধ্যে অবশিষ্ট নেই মিস্টার আশিস। আর এখন কী হয়েছে বলুনতো? আপনার ঐসব গার্লফ্রেন্ডরা কোথায়? ওদের সাথে ফ্লার্ট করে বোর হয়ে গেছেন বুঝি? তাই আবার আমার পেছনে পরেছেন? ফুর্তি করার জন্যে?”

আশিসের খুব খারাপ লাগলো অরুমিতার কথায় কিন্তু ওর এইসব কথা পাওনাই ছিলো এতে অরুমিতার দোষ নেই। তাই নরম কন্ঠে বলল,

— ” অরু আমি জানি যে আমি যেটা করেছি তার পরে তোমার এরকম ব্যবহার করা খুব স্বাভাবিক। আমি জানি আমি অন্যায় করেছি। আর নিজের ভুলটা বুঝতেও পেরেছি। প্লিজ ক্ষমা করে দাও আমায়।”

অরুমিতা একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,

— ” ক্ষমা করার আমি কে বলুনতো? আপনার প্রতি আমার কোনো অভিযোগ বা ক্ষোভ কিছুই নেই। ইনফ্যাক্ট আমার লাইফে আপনি আর ম্যাটারই করেন না। সো প্লিজ নিজেকে এতোটাও গুরত্ব দেবেন না। রাখছি!”

বলে অরুমিতা ফোনটা রেখে দিলো। না চাইতেও কেঁদে দিলো ও। একয়দিনে আশিস ওর কাছে বারবার ক্ষমা চেয়েছে, অরুমিতা এখন বুঝেও গেছে আশিস সত্যিই অনুতপ্ত আর ও শুধরেও গেছে কিন্তু যতোবার ভাবে ওকে ক্ষমা করে সব মেনে নেবে ততোবার ঐদিনের সেই দৃশ্য আশিসের বলা কথা মনে পরে যায়, আর ও নিজেকে শক্ত করে পিছিয়ে আসে।
আর এদিকে আশিস নিজের দুইহাত দিয়ে মাথাটা চেপে ধরলো। না চাইতেও ওর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরল। এতোটা কষ্ট এর আগে কোনোদিন পায়নি ও। অরুমিতা যখন ওর ছিলো তখন ওর গুরুত্ব বুঝতে পারেনি। যখন ওর ভুলের জন্যেই ছেড়ে চলে গেছে তখন বুঝতে পারলো যে ওর জীবণে অরুমিতা ঠিক কী ছিলো।

_______________________

আনোয়ার হোসেন নিজের অফিস রুমে বসে কাজ করছে। হঠাৎ অনিমা এসে দরজায় নক করে বলল,

— ” মে আই কাম ইন স্যার?”

আনোয়ার হোসেন অনিমার দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন,

— ” আরে অনিমা কাম ইন।”

অনিমা গিয়ে ওখানে দাঁড়াতেই আনোয়ার হোসেন বললেন,

— ” বসো। কিছু বলবে মনে হচ্ছে?”

অনিমা চেয়ারে বসে ওনার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” স্যার আপনার সাথে কিছু গুরত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করার আছে।”

আনোয়ার হোসেন ভ্রু কুচকে বললেন,

— ” হ্যাঁ বলো!”

অনিমা একটা শ্বাস ফেলে নিজেকে শক্ত করে বলল,

— ” স্যার আমি একটা আর্টিকেল প্রেসেন্ট করতে চাই। আর টপিকটাও খুবই স্ট্রং আর ইম্পর্টেন্ট।”

আনোয়ার হোসেন এবার একটু নড়েচড়ে বসে বললেন,

— ” কাকে নিয়ে?”

অনিমা একটু দৃঢ় কন্ঠে বললেন,

— ” মিনিস্টার রঞ্জিত চৌধুরীর এগেইনস্টে।”

আনোয়ার হোসেন এবার অবাক হয়ে বললেন,

— ” তুমি সুস্থ মস্তিষ্কে বলছোতো কথাটা?”

অনিমা হালকা হাসলো তারপর শক্ত কন্ঠে বলল,

— ” একদম স্যার।”

আনোয়ার হোসেন দুই হাতের আঙ্গুল একত্র করে বললেন,

— ” এর পরিণাম কী হতে পারে জানা আছে তোমার?”

অনিমা আনোয়ার হোসেনের কথায় একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,

— ” আমার চেয়ে ভালো হয়তো অন্যকেউ জানেনা স্যার!”

আনোয়ার হোসেন অনিমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

— ” কবে জমা দেবে আর্টিকেল টা?”

অনিমা কিছু একটা ভেবে বলল,

— ” কালকেই স্যার আপনি বললে আমি কালকেই জমা দিয়ে দেবো।”

আনোয়ার হোসেন মুচকি হেসে বললেন,

— ” ঠিকাছে ওটা যদি যুক্তিসঙ্গত হয় তো অবশ্যই এক্সেপ্ট করা হবে।”

অনিমা হেসে বলল,

— ” থ্যাংক ইউ। থ্যাংক ইউ সো মাচ স্যার। আসছি।”

বলে উঠে রুম থেকে সরে নিজের ডেস্কে চলে গেলো অনিমা। অনিমা চলে যেতেই আনোয়ার হোসেন কাউকে একটা কল করলেন। কল রিসিভ করতেই আনোয়ার হোসেন বললেন,

— ” আপনিই ঠিক ছিলেন স্যার। ওই মেয়েটা আপনার এগেইনস্টে কালকেই আর্টিকেল জমা দিতে চলেছে।”

রঞ্জিত চৌধুরী বাঁকা হেসে বললেন,

— ” রাখছি! আপনার টাকাটা পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে নিয়ে নেবেন।”

বলে ফোনটা রেখে একটা শ্বাস ফেলে রিক আর কবির শেখ এর দিকে তাকালেন উনি। তারপর বললেন,

— ” মেয়েটা কালকের মধ্যেই আর্টিকেল জমা দেওয়ার কথা ভাবছে। তাই যা করার আজ রাতের মধ্যেই করতে হবে।”

কবির শেখ কিছু চিন্তা করতে করতে বললেন,

— ” আদ্রিয়ান থাকতে অনিমার কোনো ক্ষতি করা কারো পক্ষেই সম্ভব হবেনা। তাই সরালে দুটোকেই সরাতে হবে তাও আজ রাতের মধ্যে।”

রিক একটু আলসেমি ঝেড়ে বাঁকা হেসে বলল,

— ” ইতিহাস তাহলে তার পুনরাবৃত্তি করতে চলেছে?”

রঞ্জিত চৌধুরী একটা শ্বাস ফেলে বললেন,

— ” হয়তো তাই। তোমার কী মত?”

রিক খানিকটা শব্দ করে হাসলো তারপর হাসি থামিয়ে বলল,

— ” আমার মত? সাত বছর আগে আমার মত নিয়েছিলে যে আজ নিচ্ছো? আমার কাজ ছিলো তোমাদেরকে সকল ইনফরমেশন দেওয়া আমি দিয়েছি। এখন তোমরা কী করবে সেটা তোমাদের ব্যাপার।”

কবির শেখ ভ্রু কুচকে বলল,

— ” অনিমাকে মেরে ফেললে তোমার কোনো আপত্তি নেই?”

রিক শক্ত কন্ঠে বলল,

— ” না নেই। কেনো থাকবে? কোনোদিনও আমার ভালোবাসা বোঝেনি ও। কখনো আমার কষ্ট টা ওর চোখে পরেনি। অন্যকে ভালোবেসেছে অন্যকে বিয়ে করছে। স্বার্থপরের মতো শুধু নিজের কথাই ভেবেছে। আর এটুকুও বুঝে গেছি যে ও আমার হবেনা তাই ওকে আমি অন্য কারো হতেই দেবোনা। তোমারা তো জানোই যেই জিনিসের ওপর আমার নজর পরে হয় আমি সেটাকে নিজের করে নেই আর তা না হলে সেটার অস্তিত্বই শেষ করে দেই যাতে অন্যকেউ সেটা না পায়। তাই অনিকেও মরতে হবে। আর ওকে তোমারা কেউ মারবেনা আমি নিজের হাতে মারবো। আর আমি চাই অনিমার মৃত্যু আদ্রিয়ান নিজের চোখে দেখুক। বাকি যা খুশি করো তোমারা আই ডোন্ট কেয়ার।”

বলে উঠে চলে গেলো রিক। কবির শেখ ওনার সেই বিখ্যাত হাসিটা দিলেন। উনি ঠিক যেটা চেয়েছিলেন আজ সেটাই হচ্ছে। পুরো খেলাটাই সেভাবে চলছে যেভাবে উনি চেয়েছিলেন। রঞ্জিত চৌধুরীর ডাকে ভাবনা থেকে বেড়িয়ে এলেন উনি। এরপরে দুজনে মিলেই ছক তৈরী করলেন যে আজ রাতে কীভাবে কী করবেন।

_____________________

রাত আট টায় অনিমা অফিস থেকে বেড়িয়ে তীব্র আর অরুমিতাকে বিদায় দিয়ে। নিজের স্কুটির কাছে এসে যেই স্কুটিতে উঠতে যাবে কেউ ওর কাধে হাত রাখলো। অনিমা পেছনে তাকাতেই দেখলো ওর চারপাশে মাস্ক পরা কিছু লোক দাঁড়িয়ে আছে। অনিমা প্রচন্ড ভয় পেলো তাদের দেখে, সাহায্যের জন্যে চিৎকার করবে তার আগেই একজন লোক কাপড় দিয়ে ওর মুখ চেপে ধরলো। অনিমা কয়েকসেকেন্ড ছটফট করার পর অজ্ঞান হয়ে গেলো। লোকগুলো ওকে ধরে ওদের গাড়িতে তুলে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো।

আদ্রিয়ানও নিজের কাজ সেরে গাড়ি স্টার্ট করে বাড়ি ফিরছে। হঠাৎ ওর গাড়ির সামনে তিনটে বড় গাড়ি এসে থামলো। গাড়িগুলো দেখে বাঁকা হাসলো আদ্রিয়ান তারপর গাড়ি থেকে নেমে গেলো। আর ওই গাড়ি থেকেও কিছু লোক নেমে এলো তারমধ্যে রঞ্জিত চৌধুরী, কবির শেখ ও আছেন। রজ্ঞিত চৌধুরী বললেন,

— ” কী মিস্টার রকস্টার? সবসময় তো খুব এটিটিউট দেখাও। আর আজ এতো রাতে একা একাই চলাফেরা করছো? তোমার তো শত্রুর অভাব নেই। একটু সতর্ক থাকবে তো কে কখন অ্যাটাক করে বলা যায়?”

কবির শেখও হেসে বললেন,

— ” যেমন এখন আমরা করবো।”

আদ্রিয়ান পকেটে হাত দিয়ে সিটি বাজাতে বাজাতে ওনাদের সামনে গিয়ে বলল,

— ” বাহ বাহ। হিস্ট্রি রিপিটস ইট সেল্ফ! কথাটা শুনেছিলাম আজ নিজ চোখে দেখেও নিলাম। আজ থেকে সাত বছর আগে এরকমি এক রাতে একজনের রাস্তা এভাবেই আটকানো হয়েছিলো তাকে মারার জন্যে রাইট? তবে তিনটে পার্থক্য আছে। এক, সেদিন বৃষ্টি ছিলো আজ নেই। দুই, আমি নেমে আপনাদের মুখোমুখি হলেও, সেদিন উনি গাড়ি ইউটার্ন করে শর্টকাট নিয়েছিলেন কারণ ওনাকে ওনার মেয়েকে বাঁচাতে হতো। আর তিন, উনি ছিলেন জার্নালিস্ট আর আমি রকস্টার। আর কী যেনো বললেন? আমি একা? জাস্ট আ মিনিট।”

বলে আদ্রিয়ান কাউকে একটা মিসডকল দিতেই সাথে সাথে চারটে গাড়ি এসে থামলো আর সেখান থেকে লোক বেড়িয়ে এলো। আদ্রিয়ান বাঁকা হেসে বলল,

— ” আপনাদের এখনো মনে হয় আমি একা?”

কবিল শেখ আর মিস্টার রঞ্জিত দুজনেই হাসলেন। ওদের হাসি দেখে আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকালো, কারণ হাসির কারণটা ওর অজানা। কবির শেখ এগিয়ে এসে বললেন,

— ” আমাদের মারার কথা ভাবার আগে এটা দেখে নাও।”

বলে অাদ্রিয়ানের সামনে মোবাইলের স্ক্রিনটা তুলে ধরলো। স্ক্রিনে তাকিয়ে আদ্রিয়ান অবাক হয়ে গেলো কারণ একটা চেয়ারে অনিমা হাতমুখ বাঁধা অবস্হায় অজ্ঞান হয়ে আছে। রঞ্জিত চৌধুরী এগিয়ে এসে বাঁকা হেসে বললেন,

— ” এখন যদি এখানে আমাদের কিছু হয় তাহলে ওখানে তোমার অনিমা মরবে। কী সেটা চাও?”

আদ্রিয়ান রাগী চোখে ওনাদের দিকে তাকিয়ে শক্ত কন্ঠে বলল,

— ” ছেড়ে দিনওকে।”

কবির শেখ হেসে বললেন,

— ” আরে এতো তাড়া কীসের রকস্টার বাবু? একটু সবুর করো! যদি চাও যে অনিমা বেঁচে থাকুক তো কোনরকম টালবাহানা না করে আমাদের সাথে চলো।”

আদ্রিয়ান একটা শ্বাস ফেলে পেছনে তাকিয়ে ওর লোকদের চলে যেতে ইশারা করলো তারপর ওনাদের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” যা বলবেন তাই করবো কিন্তু ওর গায়ে যদি একটা আচড় ও লাগে না তাহলে খুব বেশি পস্তাবেন আপনারা।”

কবির শেখ কিছু না বলে লোকগুলোকে ইশারা করতেই ওরা আদ্রিয়ানের হাত আর চোখ বেঁধে দিয়ে হাত ধরে নিয়ে গাড়িতে বসালো। তারপর রঞ্জিত চৌধুরী আর কবির শেখ গাড়িতে উঠতেই গাড়ি স্টার্ট দিলো ওরা। আদ্রিয়ানও কিছু না বলে চুপচাপ ওদের সাথে গেলো কারণ অনিমা ওদের কাছে আছে তাই ওকে সেটাই করতে হবে যেটা ওরা বলছে।”

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here