#বর্ষার_এক_রাতে
#সাদিয়া
১৪
না দেখা সেই মানুষটা তাকে নিয়ে উপরে চলে গেল। ছাদ থেকে কি ফেলে দিবে? কিন্তু চাঁপ গুলি খুব ব্যথা করছে তার। মনে হচ্ছে গলায় এখনি ডেবে যাবে।
ছাদে নিয়ে গিয়ে লোকটা তার মুখের উপর থেকে হাত সরিয়ে দিল। সে ফুস করে নিশ্বাস ছাড়ল। প্রাণ ভরে আগে শ্বাস টেনে নিল। তারপর জিজ্ঞেস করল
“কে কে আপনি?”
“….
“কে আপনি?”
ছুরির শক্ত চাঁপ গলায় পেল আবারো। চুপ হয়ে গেল তূবা। কি করবে এবার তা মাথায় আসছে না। লোকটা পিছন থেকে তাকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে সামনে এগিয়ে দিল। হঠাৎ সামনে কিছু আলো ফুটে উঠল। সেই আলো আস্তেআস্তে বড় হয়ে দৃশ্যমান হতে লাগল।
“তূবা কে আহফিন বিয়ে করতে চায়। তূবা কি রাজি? এখনি যেন জবাব দেয়। নয়তো মেরে ফেলব আহফিন দ্বারা।”
আলোর মাঝে এমন একটা লেখা দেখে থমকে যায় তূবা। আচমকা তাকায় পিছনে। তখনো আবছা দেখছিল লোকটা কে। হঠাৎ আলো চলে এলে আহফিন কে দেখতে পেল তূবা। একটু আগের ভয় আর রাগ এক সাথে মিশে বাজে একটা অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছে তার। তূবা আহফিনের বুকে ধাক্কা মারে প্রচন্ড জোরে। তূবার চোখ টলমল করছে পানি তে। আহফিন তার ধাক্কা খেয়ে গিয়ে নিচে পড়ল ধপ করে। কিছু বলতে যাবে তার আগে দেখল তূবার ওমন চোখ। আহফিন ফিক করে হাসি মারল। তার এমন হাসি দেখে তূবার শরীর আরো জ্বলে উঠল। সে গিয়ে আহফিন কে টেনে তুলল। রাগে কিল ঘুষি দিতে দিতে ফুঁপিয়ে উঠল তূবা। আহফিন তাকে জড়িয়ে ধরতে চাইলেও তূবা দিচ্ছে না। পাখির ডানা ঝাপটানোর মতো ছটফট করছে।
“আচ্ছা সরি সরি।”
“….
“সরি তো তূবা।”
“…
“এই দেখো সরি।”
আহফিন কান ধরে উঠবস করতে লাগল। তাতেও কাজ হলো না। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে তূবা। আহফিন আবার এগিয়ে গেল তূবার কাছে। বাহু ধরতেই ছিটকে সরিয়ে দিল তার হাত। বিড়বিড় করে আহফিন বলে উঠল “হায় গারমি।”
তূবা কপাল কুঁচকে রাগি চোখে তাকাল তার দিকে। আহফিন আবার বলল
“ইশশ ভয় পাইছি।”
“…
“আচ্ছা সরি তো প্রিয়তমা।”
“একদম ধরবেন না আমায়।”
“তোমাকে ধরব না তো কাকে ধরব?”
“যাকে ইচ্ছা তাকে ধরুন গিয়ে।”
“সত্যি তো?”
“…
“গেলাম তবে।”
তূবা লম্বা টানে শব্দ তুলে কাঁদতে শুরু করল। আহফিন বলল “আমার প্রেয়সী দেখি খুব রাগ করতে জানে। আচ্ছা ভুল হয়ে গিয়েছে তো আমার। একটু মজা করতে গিয়ে এমন হবে জানলে কে করতাম বলো তো? এমন ভুল আর হবে না প্রিয়তমা।”
“এটা কে ভুল বলে? ভয়ে যদি মরে যেতাম?”
“আমি তো অন্যরকম সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম।”
“এমন সারপ্রাইজ নিয়ে আপনি বসে থাকেন। আমার এত অদ্ভুত সারপ্রাইজের দরকার নেই।”
তূবা চলে যেতে চাইল। আহফিন তার হাত ধরে হেচকা টানে নিজের কাছে নিয়ে এলো তাকে। কোমর টেনে আরো কাছে আনল তূবা কে।
“দেখুন একদম ভালো হবে না। ছাড়ুন।”
“ধরতেই এমন বলছো কেন? কি ভাবছো কিছু করব তোমায়?”
“স.সরুন তো।”
তূবা যেতে চাইলেও নড়তে পারল না মানুষটার জন্যে। আহফিনের মুখে দুষ্ট হাসির আভাস।
আহফিন তূবার দুই গালের পাশে হাত রেখে তূবার চোখের দিকে তাকাল। মুচকি হেসে তার ঠোঁটজোড়া একেবারে নিজের দখলে নিয়ে এলো। না তূবা বাঁধা দিল। আর না সে বাঁধা দিতে চায়। মানুষটার স্পর্শ তাকে সর্বোচ্ছ সুখ দেয়।
একটু পর তূবা কে ছেড়ে দিলে লজ্জায় মাথা নুয়িয়ে আনল।
“তোমার লজ্জার আঁচ আজীবনেও না কমুক। এত লজ্জা পাও কেন তূবা? বুঝতে পারো না তোমার লজ্জা মাখা মুখটা দেখলে ইচ্ছা করে বুকের মাঝে লুকিয়ে রাখি তোমায়।”
তূবা তাকে জড়িয়ে ধরল। শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। আহফিন তার মাথায় গভীর চুমু দিয়ে আকাশপানে তাকাল।
“তূবা কিন্তু এখনো উত্তর দেয় নি।”
“কিসের?”
“সে রাজি কি না।”
“..
“তূবা কি রাজি?”
“না আপনার মতো মানুষ কে বিয়ে না করাই ভালো। করব না বিয়ে। কি করবেন মেরে ফেলবেন?”
“আহফিনের ভয়ংকর ভালোবাসা তোমাকে ঝলসে দিতেও জানে তূবা। মৃত্যুর চেয়ে কম নয় তা। কিন্তু তুমি আমায় বিয়ে করবে তোমার ঘাড়ও করবে। না করলে জোর করে করব। হাত পা বেঁধে করব।”
“উমম বললেই হলো?”
“আলবাত হলো।”
“মুটেও না।”
“দেখতে চাও?”
“দেখান।”
“তুমি না চাইলে কি আমি তোমার ভেতরে ঢুকে কবুল বলাব?”
তূবা ফিক করে হেসে উঠল তার এই কথায়।
“আমি যখন থাকব না তখন বুঝবে। কাঁদবেও তখন।”
চোখ মুখ শক্ত করে তূবা আহফিনের দিকে তাকাল। আহফিনও ঠোঁট উল্টে অভিমানী ভাবে মুখ ফিরিয়ে নিল অন্য পাশে। তূবা তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। বুকের গভীরে ঢুকার চেষ্টা করে বলল “আমার সমস্ত মন প্রাণ আর জীবন জুরে একটাই নাম আছে। আহফিন আহফিন শুধু আহফিন। সে চলে গেলে কি আমি নিস্ব হয়ে যাবো না?”
আহফিন মুচকি হেসে তূবার চুল এলোমেলো করে দিল। বুকে এখন শান্তির জোয়ার বয়।
বিয়ের তোরজোড় করে দিয়েছে আহফিন। তূবার বাসায় একগাদা মিষ্টি ফল আরো অনেক রকম খাবার নিয়ে হাজির হয়েছে সে। তূবা এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
শিরিন বেগম কিছুই বুঝতে পারছেন না। বড় করে অবাক চোখ করে সে সবকিছু দেখছেন তিনি। তূবা কিছু জানায়নি। আহফিন বলল,
“আন্টি আমি তূবার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছি। তাকে আমার খুব পছন্দ। এখন আপনার অনুমতি হলেই ফরজ কাজ সেরে নিব।”
“….
শিরিন বেগম একবার আহফিনের দিকে তাকালেন। অন্যবার তূবার দিকে। তিনি হতবাক।
“আন্টি আমি তূবার ব্যাপারে সব টা জানি এ নিয়ে আপনার চিন্তা করতে হবে না। সে আমার কাছে সুখেই থাকবে ইনশাল্লাহ।”
“বাবা আমি কি কইতাম বুঝবার পারতাছি না।”
“….
“তোমরা দুইজন যহন দুইজনরে পছন্দ করো এইনে আমি কি কইতাম? তুমি বাবা দেখতে মাশাল্লা একটা চান্দের টুকরা। তূবার আব্বা মইরা যাওনের পর থেইকা আমরার দুর্দশা দেহনের মতো কেউ নাই।” বলে কেঁদে উঠলেন তিনি।
আহফিন তূবার দিকে তাকিয়ে আবার শিরিন বেগমের দিকে তাকাল।
বলল “চিন্তা করবেন না আজ থেকে এটা আমারও পরিবার। আমি আপনাদের খেয়াল রাখার চেষ্টা করব।”
আহফিন কে বসিয়ে শিরিন বেগম খুব যত্নে রান্নাবান্না করে খাওয়ালেন। উনার বড় শখ ছিল একটা ছেলের কিন্তু আল্লাহ দেন নি। দিলে হয়তো জীবন অন্যরকমও হতে পারত।
আহফিন মনে মনে ঠিক করে নিয়েছে তূবার বিয়ের জন্যে কিনাকাটা এখন থেকেই শুরু করতে হবে। ভেবেই মনে উল্লাস হচ্ছে তার।
—–
এদিকে ডাক্তার বলে দিয়েছে তুসির অপারেশন আর কিছুদিন পর করতে হবে। বড়জোর একমাস সময়। এবার হয়তো তুসি হাটতে পারবে। জন্ম থেকেই তুসি হাটতে পারে না। অথচ তার কত ইচ্ছা নিজের বোনের সাথে দৌড়ে বেড়াবে।
“এবার তুসি হাটতে পারবে দৌড়াতে পারবে। কি বলো তুসি?”
ঘাড় কাত করে তূসি আহফিন কে দেখল। পাশ থেকে তূবাও বলল “আমি আর তুসি একসাথে হাটব দৌড়াব। আর আপনি ভিডিও করবেন।”
“হ্যাঁ দুজনে তো আমাকে কামলা পেয়েছো।”
“কি বললেন?”
“কিছু না রানিসাহেবা। জো হুকুম।”
আহফিন আর তূবার কথায় তুসি হেসে উঠল। তবে মনে মনে কেন যেন শান্তি লাগছে না তার। ‘কি হবে কি হবে’ ভাবনাটা তাকে অস্থির করে তুলেছে। সত্যিই জীবনে হাটাট স্বাদ গ্রহণ করতে পারবে তো? মনের খজখজানিটা তাকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলছে। এমন খবর শুনেও মনের তৃপ্তি টা সে পাচ্ছে না। ভেতরে ভয় তাকে কুড়ছে কিন্তু তূবা কে তা বুঝতে না দেওয়ার চেষ্ট করে যাচ্ছে। তুসি সবটা উপরওয়ালার উপর ছেড়ে দিয়েছে এখন।
—-
এখনো তূবা কে আহফিনের বাসায় যেতে হয়। এক প্রকার বাধ্য হয়েই যেতে হয়। নয়তো আহফিন রাগ করে বসে থাকে। তূবা কত করে বলল ‘আর কিছুদিন পর বিয়েই হয়ে যাবে। এখন না আসাই ভালো।’ কে শুনে কার কথা? তারপরও যেতেই হয় তূবা কে। তূবার প্রতিদিন গিয়ে রান্না করে নিজ হাতে আহফিন কে খায়িয়ে দেয়। আহফিন যখন নামাজ পড়ে দূরে বসে তূবা তাকিয়ে থাকে। রাত হলে আহফিনের বুকে চুপটি মেরে শুয়ে ঘুমাতে হয়। এই যা তূবার কাজ। আহফিনের বক্তব্য,
“আমার বাজে অভ্যাস গুলি তো তুমি করেছো। এখন তোমার হাতে না খেলে তো আমার পেটই বড়ে না। বুকে না শুলে কেমন খালি খালি আর হাল্কা লাগে। মনে হয় আমার সবচেয়ে বড় আর দামী সম্পদ টাই তো আমার মাঝে নেই। ঘুম হয় না যে তখন। এই অভ্যাস যেহেতু তুমি করিয়েছো একটু কষ্ট তো এবার করতেই হবে প্রিয়।”
আহফিনের কথায় খিল খিল করে হেসে উঠে তূবা। আর ওই মুক্তঝড়া হাসির দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রয় তূবার প্রেমে একঅন্ধ পুরুষ।
চলবে♥