বলব_কবে_ভালোবাসি পর্ব শেষ

#বলব_কবে_ভালোবাসি
#পর্ব_১৫
#Marufa_Yasmin

দীপ্ত আরুর কমোড় জড়িয়ে ধরে আছে।কিছুতেই আরু কে ছাড়ছে না আজ আরুর পরীক্ষার ফলাফল বেরিয়েছে আরু পাস করে গেছে। দীপ্ত তো সেই খুশি।আরু কে ছাড়ছে ই না।আরু কে বিরক্ত করে চলেছে।

” উফফ ছাড়ুন না । ”

” আগে বলো ভালোবাসি । ”

” পরে। ”

” না আজ এখনি বলো। ”

” আপনি ছাড়বেন কি না? ”

”না ছাড়বো না কি করবে তুমি। ”

” প্লিজ ছাড়ুন। ”

” এই ভর দুপুরে কোথায় যাবে তুমি? ”

” কোথাও না। ”

” তাহলে প্রবলেম কি? ”

” কিছুই না। ”

” তাহলে এখন আমি তোমাকে জড়িয়ে ঘুমাবো।”

আরু কিছু বলল না চুপ করে আছে।দীপ্ত আরু কে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পরল।

______________________

ʼʼ বলব কবে কাছে ডেকে আমি তোমাকে ভালোবাসি। ʼʼ

ʼʼ করেছে পাগল আমাকে ওগো তোমার ওই মিস্টি হাসি ʼʼ

ʼʼ কবে বলব আমি কবে শুনবে তুমি কেউ আছে গো তোমার আশাই ʼʼ

ʼʼ যার ছবি মন এঁকে যায় …….ʼʼ

ʼʼ যার কথা ভেবে দিন কেটে যায়। ʼʼ

ʼʼ সেকি জানে শুধুই তাকে ভালোবাসে আমার হৃদয়। ʼʼ

হৃদ গিটার হাতে গান করছে আর মিষ্টি হৃদয়ের বুকে মাথা দিয়ে বসে আছে। ছাদে নানারকম আলোতে ঝলমল করছে।চারিদিকে গোলাপ।
থালার মতো গোটা চাঁদটা তাদের ভালোবাসার সাক্ষী হয়ে আছে। মিষ্টি হৃদয়ের বুক থেকে মাথা তুলে বলল

” আমার ঘুম পাচ্ছে নিচে গেলাম। ”

হৃদ গিটার রেখে মিষ্টি হাত পেছন থেকে ধরে টেনে কোলে তুলে নেই।মিষ্টি অবাক হয়ে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তখনই হৃদ মিস্টির ঠোঁট জোরা আঁকড়ে ধরল। মিষ্টি চোখ বন্ধ করে হৃদয়ের কলার আঁকড়ে ধরে আছে। হৃদ মিষ্টির ঠোঁটের সাধ নিতে ব্যস্ত।কিছুক্ষন পর হৃদ মিষ্টির ঠোঁট জোরা ছেড়ে দিয়ে মিষ্টির কপালে ভালোবাসার পরশ একে বলল

” ভালোবাসি ! তোকে অনেক ভালোবাসি মিষ্টি। সারাজীবন তোর সাথে থাকতে চাই। আমার অনেক গুলো বেবি চাই। ”

মিষ্টি লজ্জা পেয়ে যাযা।হৃদ মিষ্টি কে কোলে নিয়ে।রুমে চলে আসে। হৃদ মিষ্টি ভালোবাসার সাগরে ডুব দেয়। ।

______________________

দীপ্ত আরু কে শক্ত করে বিছানার সাথে চেপে ধরে আছে।আর ঠোঁটের কোনে বাঁকা হাসি আরু কাঁদো কাঁদো ফেস নিয়ে বলল

” এই ভাবে কেউ বাচ্চা মেয়েকে ধরে রাখে। ”

দীপ্ত মুখ ভেংচি দিয়ে বলল
” তুমি আর বাচ্চা? কয়দিন পর আমার বাচ্চার মা হবে। ”

” প্লিজ ছাড়ুন আর এইসব ফালতু কথা বলবেন না। ”

” আগে তুমি বলো তারপর ভালোবাসি বলো। ”

” বলব না । ”

” আমার মনে হচ্ছে তোমার আদর চাই।তাই বলতে চাইছো না। ”

” এই না না বলছি বলছি প্লিজ ছাড়ো। ”

” ও ভাবে না। ”

” তো কিভাবে? ”

” দীপ্ত প্লিজ ছাড়ো জান। ”

” জান না ছাই । ”

” তাহলে ছাড়বো না ।”

” প্লিজ দীপ্ত ছাড়ো। ”

দীপ্ত আরু কে কিছু বলতে না দিয়ে আরুর ঠোঁট জোড়া আঁকড়ে ধরল। আরু হাত পা ছড়াছড়ি করছে কিন্তু দীপ্তর শক্তির কাছে পারছে না।দীপ্ত জোরে আরুর ঠোঁটে কাঁমড়ে দিয়ে ঠোটটা ছেড়ে দেয়।তারপর আরুর গলার কাছে একটা কালো তিল আছে সেখানে জোরে কামড়ে দেয় আরু তো কেঁদেই দিয়েছে।

” আরো ভালোবাসা দিতে চাই। ”

আরু কিছু না বলে দীপ্ত কে জড়িয়ে ধরে।
দুজন ডুবে যায় ভালোবাসার গভীরে সমুদ্রে।

_________________

সকাল বেলা আরু ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে উঠে বসে।চোখটা খুলে দীপ্তর দিকে তাকাই।আরু খুব লজ্জা পেয়ে গেল দীপ্ত এবং নিজের অবস্থা দেখে।
দীপ্ত পিঠে আরুর সিঁথির সিঁদুর লেগে।আরুর সিঁদুর লেপ্টে আছে কপালে।
আরু বিছানা থেকে নেমে ফ্রেশ হতে চলে গেল।কিছুক্ষন পর আরু ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে দীপ্তর কাছে বসে বলল

” এই যে উঠুন সকাল হয়ে গেছে। ”

দীপ্ত চোখটা খুলে একটা ঝটকা দিয়ে আরু কে বুকে ফেলে দেয়।আরুর চুল নিয়ে খেলা করতে থাকে।

” প্লিজ ছাড়ুন । ”

” এটা কি হল রাতে কি বললে? তুমি বলতে বলেছিলাম তো। ”

” সরি তুমি এবার উঠো। ”

দীপ্ত আরুর গলায় মুখ ডুবিয়ে দিল।
” যান না ফ্রেশ হয়ে আসুন।অনেক দিন হলো হসপিটালে যাননি আজ যেতেই হবে যান। ”

আরু জোর করে দীপ্ত কে বাথরুমে পাঠায়। হেয়ার ড্রয়ারটা নিয়ে চুলটা শুকিয়ে নিল। আরু তারপর চুলটা সুন্দর করে বেঁধে নিল।সরু করে সিঁথিতে সিঁদুর লাল লিপস্টিক।আরু নিচে চলে যায়।

রান্নাঘরে প্রতিমা দেবী রান্না করছিলেন আরু গিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল

” কি রান্না করছ মা? ”

” লুচি আলুর দম। ”

” wow দাও আমি লুচি বেলে দিই। ”

” না না তোকে কিছু করতে হবে না যা গিয়ে টেবিলে বস ।”

” কেনো? আমি করব । ”

” তোকে টেবিলে বসতে বলেছি আমি থাকতে তুই কেনো করবি। বাচ্চা মেয়ে এত কাজ করতে হবে না যা বস । ”

আরু বাধ্য হয়ে টেবিলে বসে পড়ে।
দীপ্ত কিছুক্ষন পর নিচে আসে। আরু বলে
” আমি বাবার সাথে দেখা করতে যাবো আজ। ”

” ওকে চলো আমি রেখে আসছি। ”

” না আমি একাই যেতে পারবো আপনার এমনি তেই অনেক লেট হয়ে গেছে।আপনি হসপিটাল চলে যান আমি একা যেতে পারব। ”

” জেদ করো কেনো? আমি বলছি তো আমি দিয়ে আসবো তোমাকে। ”

” আমি একাই যাবো আপনি হসপিটাল যান।”

” আরু ! তুমি এত জেদি কেনো? ”

” জেনেই তো বিয়ে করছেন। ”

” উফব অল টাইম বিয়ের কথা। ”

দীপ্ত মা এসে দুজন কে থামিয়ে বলল
” তোরা দুজন থামবি। দীপ তুই হসপিটাল যা ও যখন বলছে একাই যাবে যাক না। ”

দীপ্ত কিছু না বলে খেতে বসে যায়।তাড়াতাড়ি করে খেয়ে আরুর সাথে কোনো কথা না বলে বেরিয়ে যায়।

আরু বিড়বিড় করে বলল
” যাহ বাবা একবার কথা ও বলল না এত রাগ হু তাতে কি যাই আমি রেডি হয়ে নিই। ”

আরু রেডি হয়ে প্রতিমা দেবীর কাছে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেল।
রাস্তায আরু হাঁটছে। হঠাত দেখে আদি অন্যমনস্ক হয়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে।আরু দাভাই বলে ডাকতে গেলে দেখে পেছন থেকে একটা গাড়ি আসছে আরু ছুটে গিয়ে আদি কে গাড়ির সামনে থেকে সরিয়ে দেয় কিন্তু গাড়িটা আরু কে ধাক্কা মেরে দেয়।আরু ছিটকে পড়ে। আদি কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না।

_______________________________

দীপ্ত নিজের কেবিনে বসে কাজ করছিল।হঠাত আদির নম্বর থেকে কল আসে।দীপ্ত ফোনটা রিসিভ করে না। আদি পুনরায় কল করে দীপ্ত এবার বিরক্ত নিয়ে কল রিসিভ করে বলল

” প্রবলেম কি তোর বারবার কল করছিস কেনো?”

” দীপ আরুর এক্সিডেন্ট হয়েছে তুই তাড়াতাড়ি নিচে আয় আমি আরু কে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।”

দীপ্ত ফোনটা রেখে ছুটে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে দেখে আদি আরু কে কলে নিয়ে ভেতরে ঢুকছে।
দীপ্ত তাড়াতাড়ি করে আরু কে ভেতরে ঢুকে নার্স এবং বাকি স্টাপদের ডাকতে থাকে।

__________________

দীপ্ত আরুর ট্রিটমেন্ট করছে ভেতরে। আরো ডাক্তার আছে।বাইরে আরু পরিবার দীপ্তর পরিবার চিন্তিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আরুর তেমন কিছু হয়নি মাথায় একটু আঘাত পেয়েছে কিন্ত দীপ্ত মনে হচ্ছে প্রানটা চলে যাচ্ছে।

বিকাল বেলা আরুর জ্ঞান ফিরে।দেখে সবাই দাঁড়িয়ে আছে আদি কে না দেখতে পেয়ে বলল
” দাভাই কোথায়? ”

মঙ্গলা দেবী বললেন
” বাইরে আছে।আদি আরু তোকে ডাকছে। ”

আদি মাথা নীচু করে ভেতরে আসে। হুট করে আরু কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগে।
” আরু আজ আমার জন্য তোর অনেক বড়ো ক্ষতি হয়ে যেতো তুই আমাকে বাঁচাতে গিয়ে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিলি। ”

” দাভাই ওসব বাদ দাও আগে বলো তুমি রাস্তায় ওভাবে হাঁটছিলে কেনো? ”

” মেঘা কে আমি ভালোবাসি আজ হঠাত দেখি ও একটা ছেলের সাথে নোংরামো করছে। অনেক কথা কাটাকাটি হয়েছে দুজনের তাই। মেঘার কথা শুনে তোর অনেক ক্ষতি করেছি বিশ্বাস কর।তোর জন্য আমার কানে অলটাইম বিষ ঢালত। ”

” দাভাই যা হয়েছে ভুলে যাও তুমি এমন না করলে আমি দীপ্ত কে পেতাম না। ”

আদি আরুর কপালে চুমু খাই।

___________________

পাঁচবছর পর ………………….

মিষ্টির আর হৃদয়ের ছোট ফুফুটে একটা ছেলে হয়েছে অনেক দুষ্টু নাম নীল বয়স চারবছর
।মিষ্টি ছেলেকে খাইয়ে দিচ্ছিল হৃদ এসে ছেলেকে কোলে নিয়ে বলল

” আমার নীল কি খাচ্ছে? ”’

” দেখতেই তো পাচ্ছ মা ভাত খাইয়ে দিচ্ছে। ”

” বাবা এত পাকা তুমি ।”

” হুম অনেক ।”

আদি বিয়ে করেছে।এখনো কোনো বাচ্চা হয়নি আদির বউ মেঘনা। অনেক ভালো মেয়ে।

দীপ্ত আরু ছাদে বসে আছে। আরু প্রেগনেন্ট আরুর চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে দীপ্ত।দীপ্ত আরুর মাথায় চুমো খেয়ে বলল

” আরু শরীর খারাপ করছে? ”

” হুম বমি লাগছে। ”

” চলো নিচে চলো। ”

দীপ্ত আরু কে কোলে নিয়ে নিচে চলে যায়।
আরু কে বমি করিয়া বিছানায় শুয়ে দিয়ে।আরু কপালে চুমু খেয়ে বলল

” ভালোবাসি আরু। ”

” আমি ও অনেক ভালোবাসি তোমায়। ”
” এতদিন পর ভালোবাসি বললে তাহলে। ”

” এতদিন ভাবছিলাম বলব কবে ভালোবাসি।আজ বলে দিলাম।”

” কাল হৃদ এর ছেলের জন্মদিন যেতে হবে। ”
” হুম ।”

_______________

আজ নীল এর জন্মদিন।অনেক মানুষ এসেছে।দীপ্ত আরু কে নিয়ে এসেছে।হৃদয় আর দীপ্ত গল্প করছে। মিষ্টি আরুর সাথে কথা বলছে তখন নীল এসে বলল

” আন্টি আন্টি তোমার পেটটা এত বড়ো কেনো?”

নীলের কথায় সবাই হেসে দেয়।মিষ্টি নীল কে কোলে তুলে বলল
” একটা ছোট্ট বাবু হবে তাই ।”

” ও আমার বন্ধু হবে? আমি ওকে বিয়ে করব।”
নীলের কথায় সবাই অবাক না হয়ে পারল না।মিষ্টি রেগে বলল

” নীল এসব কি ধরনের কথা।”

” আমি টিভিতে দেখেছি একটা মেয়ে আর একটা ছেলে বিয়ে করছে সিঁদুর পরাচ্ছে। ”

আরুর নীলের গালে চুমু খেয়ে বললল
” সোনা তুমি এখন ছোট্ট আছো তুমি বড়ো হলে তোমার বিয়ে দেবো। ”

” সত্যি দেবে তো? ”

” হুম সত্যি দেবো। ”

সবাই হাসতে লাগে।

এভাবে শক্ত সুতোতে বাঁধা থাকুক প্রতিটা সম্পর্ক।

|| সমাপ্ত ||

এতদিন সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।লাস্ট পর্ব কেমন লাগল জানাবেন।ধন্যবাদ।ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।আর হ্যা কেউকে ভালোবেসে থাকলে বলে দিন এইটা ভেবে বসে থাকবেন না বলব কবে ভালোবাসি। বলব কবে নয় বলতে হবে।❤❤🌚🌚 আর আপনাদের লেখিকা অনেক অলস তার একটা গল্প ও 20 পার্টের ওপরে যাইনি 😅😅

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here