বসন্ত এসে গেছে পর্ব ৮

#গল্পঃবসন্ত এসে গেছে
#লেখাঃনুশরাত জেরিন
#পর্বঃ৮
,

,

,

সকাল সাতটায়,অপুর ঘুম ভাঙলো। আচমকা নতুন পরিবেশে, নতুন জায়গায় ঘুমানোর ফলে হয়তো বেশি বেলা হয়ে গেছে।তাছাড়া ঘুমাতেও গিয়েছিলো তো শেষ রাতে।
কিছুক্ষণ বসে আড়মোড়া ভেঙে উঠে দাড়ায় অপু।
পরমুহূর্তে তড়িঘড়ি করে।এ বাড়ির নিয়মকানুন তো অপু কিছুই জানেনা।যদি এ বাড়িতে সকাল সকাল ওঠার নিয়ম হয়?তখন তো অপুকে কথা শুনতে হবে।
অপু চটজলদি উঠে ওয়াশরুমে যায়।ফেশ হয়ে রুম থেকে বাইরে বেরোয়।
নোমান তখন ঘুমে বেঘোর।

অপু সিড়ি দিয়ে নিচে নামে।ড্রয়িং রুমে নেমে আসেপাশে তাকিয়ে দেখে।
চোখ বড় হয়ে যায় তার।এতো দামী আসবাব জিবনেও দেখেনি অপু,ব্যবহার করা তো দুরে থাক।
আশেপাশে দেখতে দেখতে সামনে এগোয়।
ড্রয়িং এর পাশে ডাইনিং রুম।
তারপাশে কিচেন।
কিচেনে টুংটাং শব্দ শুনে অপু কিচেনে যায়।দেখে দুজন মহিলা কাজ করছে আর গল্প করছে।
অপুকে দেখে তারা এগিয়ে আসে।
বলে,

—আপনে এইখানে কি করেন ছোট ম্যাডাম?

আরেকজন বলে,

—কিছু দরকার হইলে আমাগো ডাকতেন,আমরা চইলা আইতাম।

অপু তাদের থামিয়ে বলে,

— আরে আপনারা এতো ব্যতিব্যস্ত হবেননা।আমি এমনি ঘুরে দেখছিলাম।

—ওহ।আচ্ছা ছোট ম্যাডাম দেখেন।

অপু কপট রাগ দেখিয়ে বললো,
—কিন্তু আপনাদের ব্যবহারে আমি খুব মাইন্ড করেছি।

দুজনেই ভয় পাওয়া ভঙ্গিতে বললো,

—আমরা কি করলাম?

—আপনারা আমাকে ছোট ম্যাডাম বলে কেন ডাকলেন?

—তাইলে কি ডাকুম?

— নাম ধরে ডাকবেন,আমি আপনাদের মেয়ের বয়সী,আমাকে নাম ধরে ডাকতেই পারেন।আর হ্যা তুমি করে বলবেন।আপনি আপনি বলা চলবেনা।

—নাম ধইরা ডাকমু?

—হ্যা,আর আমি আপনাদের…

একটু চিন্তা করে বলে,

—খালা বলে ডাকবো।
আচ্ছা খালা বলে ডাকলে কি আপনারা রাগ করবেন?

রুজি বেগম আর নয়না বেগম দুজনের মুখ চাওয়াচাওয়ি করেন।দুজনে যেন বিশ্বাসই করতে পারছেননা এসব।
এ বাড়িতে কেউ তাদের সাথে ঠিকমতো কথাই বলেন না সেখানে ছোট স্যারের বউ এসে তাদের খালা সম্মোধন করে ফেললো?
দুজনে ছলছল চোখ নিয়ে হ্যা সূচক মাথা নাড়ে।

অপু মুচকি হাসে।এগিয়ে চুলার কাছে উঁকি দেয়।বলে,

— কি রান্না করছেন আপনারা ।

—চা বানাই।

—আর ওটা কি?

—কফি,ছোট স্যারের লাইগা।
আসলে আমি চা বানাইতাছি আর রুজি নাস্তা বানাইতাছে তাই এখনো কফিটা ঘরে দিয়া আসতে পারিনাই।

অপু বলে,

—দিন তো আমি দিয়ে আসছি।

রুজি বেগম ইতস্তত করেন।
অপু হাত এগিয়ে দেয়।কিন্তু দুর্ঘটনাবশত রুজির হাত থেকে কফির কাপ পরে যায়।
নয়না মাথায় হাত দেয়।
চা কাপে ঢালতে ঢালতে বলে,

—বড় স্যার আর মেডামরে চা দিয়া আমি আইসা আবার কফি বানাইতাছি।তুই নাস্তা বানা রুজি।

কথা বলতে বলতে সে চার ট্রে নিয়ে বেরিয়ে যায়।

অপু রুজি বেগমকে বলে,
—কফিটা আমি বানাই খালা?

—আপনে?মানে তুমি বানাইবা?

—বানাইনা খালা,প্লিজ।

রুজি অপুর এমন চেহারা দেখে হেসে ওঠে,অপুও হাসে।
নিজ হাতে কফি বানিয়ে বাইরে বেরোতে যায় আবার ফিরে আসে।
বলে,

—একটা কথা বলবো খালা?

—হ কও।

—না মানে একটা শাড়ির ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন?আমার কাছে এইটা ছাড়া আর কোন শাড়ি নেই।

রুজি বেগম অপুর দিকে তাকিয়ে দাঁতে জিভ কাটে। মেয়েটা এখনো বিয়ের শাড়ি পরে আছে।
সে বলে,

—বড় স্যার তোমার লাইগা এক গাদা শাড়ি আইনা রাখছে।
আমারে কইছিলো তোমারে দিতে,আমি এক্কেরে ভুইলা গেছি।
দাঁড়াও তোমারে আইনা দেই।

—না না আপনাকে এনে দিতে হবেনা, আপনি বলুন কোথায় রাখা আছে,আমি নিয়ে নিচ্ছি।

—তোমার রুমের পাশে আরেকটা রুমে রাখা আছে,সেইখানে।

—ঠিক আছে,ধন্যবাদ খালা।

রুজি বেগম অপুর কথা শুনে হাসেন।

অপু কফির কাপটা হাতে নিয়ে উপরে ওঠে।পাশের রুমে ঢুকে শাড়ির ব্যাগ দেখতে পায়।সেখান থেকে গোলাপি রংয়ের একটা শাড়ি তুলে নেয়।
নিজের রুমে ঢুকে খাটের পাশে সেন্টার টেবিলে কফির কাপটা রেখে শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে ঢোকে।

ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখে নোমান উঠে বসেছে।হাতে তার কফির কাপ।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই তার কফি খাওয়ার অভ্যাস।

অপু বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়।বেলকনিটাকে তার কাছে কেমন ন্যাড়া ন্যাড়া মনে হয়।কেন দোলনা,ফুলের টব কিচ্ছু নেই।কেমন যেনো নির্জীব লাগে দেখতে।
অপু সোজা হয়ে দাড়িয়ে গ্রিলের ফাঁকে হাত রাখে। সকালের মিষ্টি রোদ গায়ে মাখে।চারদিক থেকে ঝিরিঝিরি বাতাস দোলা খায়।অপু চোখ বুজে বাতাস উপভোগ করে।
হঠাৎ বিকট কোন শব্দে চকিত দৃষ্টিতে পেছন ফেরে।
শব্দটা অনুসরণ করে রুমে ঢোকে।
দেখে ফ্লোরে কফিসহ ভাঙা মগের কাচ এদিকওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
নোমানের দিকে তাকিয়ে দেখে তার চোখ লাল,মুখটা অসম্ভব রাগী।
অপু এগিয়ে গিয়ে বলে,

—কি হয়েছে?

নোমান রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে অপুর উপর।
অপু ভয় পায়,দু কদম পিছিয়ে যায়।
নোমান চিৎকার করে ডাকে,

—নয়নাআআ,রুজিইইই,,কোথায় সবাই।

অপু ঢোক গেলে।এতো সুন্দর রাজপুত্রের মতো দেখতে মানুষটার এমন ভয়ংকর রুপ দেখে সে ঘাবড়ে যায়।
মিনমিন করে বলে,

—আমাকে বলুন।

নোমান বলে,
—তোমার নাম রুজি?নয়না?

—না।

—তাহলে তোমাকে কেনো বলবো।

রুজি বেগম,নয়না দরজায় দাঁড়ায়। তাদের মুখটা ভয়ার্ত দেখায়।
কাঁপা কাপা কন্ঠে বলে,

—কি হয়ছে ছোট স্যার?

নোমান গর্জে উঠে,

—কি হয়েছে?সকাল সকাল আমার মুড খারাপ করে বলছো কি হয়েছে?

—-কি করছি আমরা স্যার?

—কি করছো?কফিতে চিনি কেনো দিয়েছো?কেনো?জানোনা আমি কফিতে চিনি খাইনা?

রুজি আর নয়না বেগম কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে।চোখাচোখি করে কথা বিনিময় করে।একটু পর বলে,

—ভুল হয়ে গেছে স্যার,আর হবেনা।এবারের মতো ক্ষমা করে দেন।

অপু অবাক হয়।কফিটা সে বানিয়েছিলো।তাহলে রুজি খালা সে কথা বলছেনা কেনো?কেনো নিজের ঘারে দোষ নিচ্ছে? অপুকে বাঁচাতে?
কৃতজ্ঞতায় ভাষাহীন হয়ে পরে অপু।

নোমান রুজিকে কিছু বলতে যাওয়ার আগেই সামনে দাড়ায় অপু।
নোমান জিজ্ঞাসু সূচক চোখে তাকায়।
অপু বলে,

—কফি রুজি খালা বানায়নি,আমি বানিয়েছি।

,

,

,

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here