বসন্ত কন্যা পর্ব -২১+২২+২৩+২৪

#বসন্ত_কন্যা
#পর্ব_২১
#লেখিকা : সাদিয়া

( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )

আমি আমার স্বামীকে নিয়ে সুখে থাকতে চাই। দয়া করে আমাদের দুজনের মাঝখানে আসবেন না। আমি তাকে বিয়ে করে যথেষ্ঠ খুশি। আবসার ভাইয়ের মতো একজন মানুষ পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার। বলে নিশা ভীর ঠেলে বেরিয়ে গেল।

ফয়সাল পিছন থেকে চিৎকার করে বলল – তুই মিথ্যে কথা বলছিস। তুই আমাকে ভালোবাসিস। ঐ আবসারকে আমি দেখে নেব। তুই শুধু আমার হবি শুধু মাত্র আমার।

______________________

ড্রইং রুমের সোফাতেই বসে ছিলেন সোহেল ইমদাদ। সদর দরজা থেকে ঢুকেই বাবার মুখোমুখি দাঁড়ালো ফয়সাল। চুলগুলো উস্কো খুস্কো, চোখগুলো রক্তিম বর্ন ধারন করেছে , দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে ভালো নেই। সোহেল ইমদাদ একবার ছেলের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল-

– কোথায় গিয়েছিলে ?চেহারার একি হাল করেছো?

– আমাকে শেষ করে দিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করছো চেহারার একি হাল করেছি?

– মানে কি বলতে চাইছো?

– কি বলতে চাইছি বুঝতে পারছো না? তুমি দাঁড়িয়ে থেকে কাল নিশার বিয়ে দিয়েছো?

– হুম তো তা নিয়ে তোমার কি সমস্যা? তোমাদের তো আরও খুশি হওয়ার কথা ও এ বাড়িতে আর আসবে না।

ফয়সাল চিৎকার করে উঠল, বলল – আমি খুশি হতে পারিনি বাবা , খুশি হতে পারিনি। তুমি বাবা হয়ে কিভাবে আমার সুখ কেড়ে নিলে, কেন আমার এত বড় সর্বনাশ করলে বাবা?

ছেলের চিৎকার শুনে রান্নাঘর থেকে ফারজানা বেগম ছুটে এলেন। ছেলের অবস্থা দেখে তার কলিজায় মোচড় দিয়ে উঠলো। দৌড়ে এসে ছেলেকে জড়িয়ে নিলেন নিজের সাথে।

ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলেন – কি হয়েছে বাবা এমন করছিস কেন?

ফয়সাল হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো, বলল – বাবা আমার কাছ থেকে নিশাকে কেড়ে নিয়েছে, ওর বিয়ে দিয়ে দিয়েছে অন্য কোথাও।

ড্রইং রুমের চিৎকার চেঁচামেচি শুনে এতক্ষনে বাড়ির সবাই চলে এসেছে।
ফারজানা বেগম জিজ্ঞেস করলেন – হ্যা তো নিশার বিয়ে হয়েছে তাতে তুই এমন করছিস কেন?

– আমি ভালোবাসি নিশাকে, ভীষণ ভালোবাসি।

ফয়সালের কথা শুনে সবাই হতবাক। সবচেয়ে হতবাক সোহেল ইমদাদ। তিনি তো দেখেছে সব সময় মা ছেলে উঠে পড়ে লেগে থাকতো নিশাকে অপমান করার জন্য আজ এসে সেই ছেলে দাবি করছে সে নাকি নিশাকে ভালোবাসে।

ফয়সাল ফারজানা বেগমের হাত দুটো ধরে বলল – দেখো না বাবা আমার কাছ থেকে নিশাকে কেড়ে নিয়েছে তুমি আমার কাছে নিশাকে এনে দেও না, দিবে তো মা?

ছেলের অবস্থা দেখে সোহেল ইমদাদ প্রশ্ন করলেন – তুমি এই কথা আগে বলোনি কেন?

– আগে বলিনি এখন বলছি তো, আমার নিশাকে আমার কাছে এনে দেও।

– তুমি বড্ড দেরী করে ফেলেছো ফয়সাল এখন আর কিছুই করা সম্ভব নয়।

ফয়সাল ফারজানা বেগমের দুই বাহু ঝাঁকিয়ে বলল – মা দেখো বাবা কি বলছে তুমি বলো না নিশাকে আমার কাছে এনে দেবে, তুমি তো আমাকে সব কিছু এনে দেও যখন যা চাই।

ছেলের অবস্থা দেখে ফারজানা বেগমের কলিজা জ্বলে যাচ্ছে, ওরনায় মুখ গুজে কাঁদছে। একটাই ছেলে তার। যদি উপায় থাকতো তাহলে আজ যে করে হোক নিশাকে ধরে বেঁধে ছেলের সামনে নিয়ে আসতো। কিন্তু তারও উপায় নেই। এতদিন টাকা পয়সার অহংকারে অন্ধ ছিল সে, তাই হয়তো আজ ছেলের এমন পরিস্থিতি।

_________________________

সারাদিন ডিউটির পর মাত্রই বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছিল আবসার। কাল সারারাতে ঘুম হয়নি, ট্রেনে ছিল। সকাল সকালই আবার ডিউটি শুরু হয়েছে। সারাদিন মোবাইল ধরার সুযোগও ছিল না। নাহ এখন একটু নিশার খবর নেওয়া প্রয়োজন। বিছানা থেকে উঠে পাহাড়ের গায়ে গিয়ে দাঁড়ালো, কোয়ার্টারের ভিতরে নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। হেঁটে হেঁটে নেটওয়ার্ক খুঁজছে। কাল বিয়ে করে সদ্য বিবাহিত বউকে ফেলে এসেছে ডিউটি করতে। আর্মিদের জীবন বুঝি এমনই। বউ, বাচ্চা, ভালোবাসার আগে দেশকে ভালোবাসতে হবে। তাদের প্রথম ভালোবাসা হবে দেশ, দেশের মানুষ। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ডাটাটা অন করতেই একটা ভিডিও এলো আয়নার আইডি থেকে।

ক্যাম্পাসে ফয়সাল ঢুকতেই আবসারকে কল করেছি আয়না কি হয় না হয় লাইভ দেখাবে কিন্তু আবসার ডিউটিতে থাকায় পুরো ঘটনা ভিডিও করে সেন্ড করেছে আয়না।

আবসার ভিডিওটা ওপেন করতেই রাগে এক হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছে, কান দিয়ে ধোয়া বের হচ্ছে, চোখ দুটো অসম্ভব রকমের লাল হয়ে রয়েছে। কত বড় সাহস ওর থেকে ওর বসন্ত কন্যাকে আলাদা করতে চাইছে। এই মুহূর্তে ফয়সালকে যদি পেত হয়তো মেরে পুতে দিত। আস্তে আস্তে ভিডিওটা দেখছে আর রাগের জায়গায় এক রাশ প্রশান্তি জায়গা করে নিচ্ছে। ওর বসন্ত কন্যা ওকে ভালোবাসে, এর থেকে খুশির সংবাদ আর কি হতে পারে। ওর বসন্ত কন্যা নিজে বলেছে সে ওকে ভালোবাসে। আবসার মনযোগ দিয়ে নিশার কথাগুলো শুনছে। আবসারের ঠোঁটের কোনে ফুটে উঠেলো এক চিলতে প্রশান্তির হাসি। মেয়েটা ওর কথা কত ভাবে, ওকে কতটা ভালোবাসে আর ও জানতোই না। ও যেভাবে ওর বসন্ত কন্যার জন্য ছটফট করে ওর বসন্ত কন্যাও ওর জন্য ছটফট করে ভাবতেই বুকের ভিতরটায় কেমন শান্তি শান্তি অনুভব করছে আবসার। ইচ্ছে করছে এখন ছুটে নিশার কাছে চলে যেতে, সামনে বসিয়ে নিশার কাছ থেকে আবার কথাগুলো শুনতে। সারাদিনের ক্লান্তি যেন আজ এক নিমেষেই শেষ। দিনশেষে যদি এমন কিছু অপেক্ষা করে তাহলে আবসার সারা জীবনও ও ডিউটি করতে প্রস্তুত। কিন্তু ফয়সালের শেষ বলা কথাগুলো শুনে আবার চোয়াল শক্ত হয়ে এলো আবসারের তবুও নিজেকে শক্ত নিল নিশার কথা ভেবে। নিশার স্বীকারোক্তির গুলো যে আজ তার হৃদয়ে গেঁথে গেছে। ইচ্ছে করছে এখন ছুটে নিশার কাছে চলে যেতে, তা তো আর সম্ভব নয় কিন্তু কথা বলতে হবে নিশার সাথে ।‌ না হয় আজ শান্তিই পাবে না আবসার। আর কিছু না ভেবে কল লাগালো নিশার নম্বারে। প্রথমবার রিং হতেই রিসিভ করলো নিশা।

– আসসালামুয়ালাইকুম।

– ওয়ালাইকুমুস সালাম। কেমন আছ?

– আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি?

– ভালো আর থাকতে দিলে কই?

– খারাপও বা রাখলাম কই?

– এই যে সারাদিনে আমার একটু খোঁজও নিলে না।

– আপনার খোঁজ নিতে আমার বয়েই গেছে।

– সে আমি জানি আমার বউটা যে ভীষণ পাষান। আচ্ছা শোনো বউ….

– কি?

– আমার না এই মুহূর্তে তোমাকে ভীষণ চুমু খেতে ইচ্ছে করছে। কি কপাল আমার বিয়ে করেও বউয়ের থেকে কতদূরে।

চুপ হয়ে গেল নিশা। লজ্জা লাগছে ভীষণ, এমনি এতক্ষন আবসারের মুখে বউ বউ শুনে লজ্জায় গাল দুটো লাল হয়ে গিয়েছিল আর এখন আবার কিসব কথা। আবসার মে এতটা ঠোঁটকাটা জানা ছিল না নিশার। একরাশ লজ্জা নিয়েই নিশা বলল –

– আপনি দিন দিন বড্ড ঠোঁটকাটা হয়ে যাচ্ছেন ক্যাপ্টেন সাহেব।

– বউয়ের জন্য হতে হচ্ছে। না হয় বউও যদি অন্যদের মতো ভাবে আমি নিরামীষ।

– রাখছি আমি। আপনার সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছে নেই আমার।

– সত্যিই নেই?

– জানি না।

– আচ্ছা ঘুমাও, আমিও বড্ড ক্লান্ত। কাল সারারাত ঘুমাইনি। এসেই ডিউটি শুরু হয়েছে।

– রেস্ট না নিয়ে কল করতে বলেছে কে? শরীর খারাপ করলে ওখানে দেখবে কে শুনি?

হাসি ফুটে উঠল আবসারের মুখে, বলল – বউটা আমার কেয়ার করা শুরু করেছে নাকি?

লজ্জায় মিইয়ে গেল নিশা। এই লোকটা ওকে সব সময় লজ্জা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকে।

– রাখছি আমি, রেস্ট নিন বলে কেটে দিল কলটা।

________________________

কলেজ ক্লাসরুমেই বসে ছিল নিশা। আজ আর আড্ডা দেওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই। কাল যা হলো এমনি ওকে নিয়ে কলেজে বেশ কানাঘুষা চলছে ভালোই টের পাচ্ছে সে। তাই ক্লাসরুমেই চুপচাপ বসে আছে। আয়না, কাজল , রাকিব, নিলয় ওকে ঘিরেই বসে আছে। সবাই কথা বললেও ও মৌনতাই পালন করছে। হঠাৎ এক স্টুডেন্ট এসে বলল – নিশা তোমাকে ইয়াসিন স্যার ডাকছে।

ইয়াসির স্যার হঠাৎ ওকে ডাকছে কেন? ভ্রু কুঁচকে এলো নিশার। ইয়াসিন স্যার এই কলেজে জয়েন্ট করেছে বেশিদিন হয়নি। ওদের ডিপার্টমেন্টের সবচেয়ে কমবয়সী স্যার, অনেক মেয়েরাই স্যারের প্রতি ফিদা। সে আবার হঠাৎ ওকে কেন ডাকছে। আর কিছু চিন্তা না করে ব্যাগ নিয়ে গেল ইয়াসিন স্যারের সাথে দেখা করতে।

স্যারের কেবিনে টোকা দিয়ে জিজ্ঞেস করলো – আসবো স্যার?

– আসুন মিস নিশা স্যরি মিসেস নিশা আপনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।

– কিছু বলবেন স্যার?

– বলার তো অনেক কিছুই আছে তবে এই স্থানটা কথাগুলো বলার জন্য উপযোগী নয়। বাহিরে সময় দিতে পারবেন আমাকে একটু বেশি সময় নেব না জাস্ট ১০ মিনিট।

ভ্রু কুঁচকে এলো নিশার। এই ভদ্রলোক আবার ওকে কি বলতে চায়? দুইজন কি কম ছিল যে আরও একজন এসে হাজির। না না ওর তো ভুলও হতে পারে , স্যার কোনো ইম্পর্ট্যান্ট কথাও বলতে পারে। নিশা আর কিছু না ভেবে বলে দিল – অবশ্যই, আপনি কখন সময় করতে পারবেন?

– আপনি বললে এখনই।

– আচ্ছা , আমি ফ্রি আছি।

চলবে….
পরের পর্বটি পেতে পেইজে ফলো দিয়ে সাথে থাকুন। ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ধন্যবাদ#বসন্ত_কন্যা
#পর্ব_২২
#লেখিকা : সাদিয়া

( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )

কফি শপে মুখোমুখি বসে আছে নিশা আর ইয়াসিন স্যার। এখানে এসেছে ১০ মিনিট হয়ে গেছে। পুরো সময়টা শুধু ইয়াসিন স্যার একাই কথা বলেছে আর নিশা শুনেছে।

– পুরো কথাটা তো শুনলেন এখন একমাত্র আপনিই পারেন আমাকে সাহায্য করতে এ ছাড়া আর কাউকে আমি ভরসাযোগ্য বলে খুঁজে পাচ্ছি না মিসেস নিশা।

নিশা একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল – আপনি একদম ঠিক মানুষের সাথে কথা বলেছেন ইয়াসিন স্যার। আমি অবশ্যই আপনাকে সাহায্য করবো ‌। আরও আগে বললে তো আমি আরও আগেই সাহায্য করতাম।

নিশার এই হাসি হয়তো কারো সহ্য হয়নি তাই ওর সামনে এসে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। নিশা ভ্রু কুঁচকে সামনে তাকাতেই দেখে ফয়সাল ওর দিকেই তাকিয়ে আছে, চোখে মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি। নিশা কিছু বলতে যাবে এর আগেই ফয়সাল উঠে বলল –

– কাল তো খুব বড় বড় কথা বলছিলি তোর স্বামীকে নাকি তুই খুব ভালোবাসিস, তাকে বিয়ে করে তুই খুব খুশি। তা সেই খুশি একদিনের মধ্যে কোথায় উধাও হয়ে গেল যে আজ আবার নতুন নাগরের সাথে কফিসপে এসেছিস?

রাগে চোখ মুখ শক্ত হয়ে এলো নিশার। উঠে দাঁড়িয়ে বলল – কথায় আছে না কয়লা ধুলে ময়লা যায় না। আপনিও ঠিক তেমনই ফয়সাল ভাই। কোনো দিনও আপনার ঐ বান্দরমার্কা মুখটা মানুষের মতো হবে না। আপনার ঐ মুখ আর ব্যবহারের জন্যই আপনি আজ আমাকে হারিয়েছেন। মানুষকে সম্মান দিতে শিখুন, নিজের ভালোবাসাকে সম্মান করতে শিখুন ফয়সাল ভাই। মানুষকে সম্মান না করতে পারলে নিজেও অন্যের কাছ থেকে সম্মান পাওয়ার আশাটাও ভুলে যান। আর আমাকে সব জায়গায় ফলো করাও বন্ধ করুন বলে হনহন করে বেড়িয়ে গেল নিশা।

________________________

( রাত ১০ টা )

নিশাকে লাগাতার কল করে যাচ্ছে আবসার। বারবার ওয়েটিং বলছে। মেজাজ এবার বিগড়ে যাচ্ছে। এমনি সারাদিন ডিউটিতে থাকার কারনে নিশার সাথে কথা হয়নি তার উপরে শুনেছে সকালে কোন স্যারের সাথে নাকি কফি শপে গেছে। আর এখন আবার ওয়েটিং । পাগল হয়ে যাচ্ছে আবসার। এমনিতে নিশার উপর তার পূর্ন বিশ্বাস আছে কিন্তু চারিদিকের শত্রুদের যা আনাগোনা। ওর ছোট খাট মুরগির বাচ্চার মতো বউটাকে যদি কেউ আঙ্গুলের মাথায় করে তুলে নিয়ে যায়। জীবনের এই প্রায় ৩১ বসন্ত পেরিয়ে একটা মাত্র বউ হয়েছে ওর তা নিয়েও সারাদিন ভয়ের অভাব নেই। টানা ৩০ মিনিট পর কলটা রিসিভ করল নিশা। কলটা রিসিভ করার সাথে সাথেই কর্কশ কন্ঠে আবসার বলে উঠলো –

– এতক্ষন কার সাথে কথা বলছিলে?

– কলেজের এক স্যারের সাথে।

আবসার বিরবিরিয়ে বলল – ওয়ান মোর এনিমি।

– কিছু বললেন?

– না কিছু না।

– এভাবে কথা বলছেন কেন?

– কিভাবে কথা বলছি?

– কেমন গম্ভীর রাগ রাগ।

– আমার রাগে তোমার কি আসে যায়?

– সত্যিই কি আসে যায়? যাই হোক আপনার সাথে আমার একটা জরুরী কথা বলার আছে।

গাল ফুলালো আবসার, সত্যিই কি তার রাগে কিছুই আসে যায় না নিশার। কন্ঠে গম্ভীরতা এনে বলল – কি কথা?

জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজালো নিশা। অনেক সাহস সঞ্চয় করে বলল – ইয়াসিন স্যার আয়নাকে ভালোবাসে , বিয়ে করতে চায় ওকে।

হাসি ফুটে উঠল আবসারে মুখে। তো এ ব্যাপার, ইয়াসিন স্যার তাহলে নিশার পিছনে নয় আয়নার পিছনে ঘুরছে।

– তো এই জন্যই আজ সকালে সে তোমাকে কফি শপে ডেকেছিল?

– হুম কিন্তু আপনি জানলেন কিভাবে?

– সে আমি যেভাবেই জানি তারপর বলো….

– ইয়াসিন স্যার আপনার বোনকে ভালোবাসে আপনার বোনের মনেও তার জন্য কিছু একটা তো চলছে , কিন্তু ওদের সম্পর্কটাও ঠিক আপনার আর আমার মতো, আয়না ভয় পায় ইয়াসিন স্যারকে তাই থেকে দূরে দূরে থাকে। এখন আপনিই কিছু একটা করুন।

– আচ্ছা বিষয়টা দেখবো আমি, তোমার স্যারের ভালোভাবে খোঁজখবর নিয়ে দেখি। একটা মাত্র বোন আমার তাকে তো আর না দেখেই কারো হাতে তুলে দিতে পারি না।

– আমার মনে হয়না ইয়াসমিন স্যার খারাপ। যথেষ্ঠ ভদ্র এবং মার্জিত উনি। একটু কম হাসে আপনার মতো তবে দেখতে খুব সুন্দর। জানেন আমাদের কলেজের কত মেয়ের ক্রাশ উনি?

তেতে উঠল আবসার। গম্ভীর কন্ঠে বলল – এক তারপরে দাঁত ফেলে দেব ফাজিল মেয়ে। স্বামীর সামনে অন্য পুরুষের গুনগান গাইছো কই আমাকে নিয়ে তো কখনও এমন গুনগান করতে শুনিনি।

– আপনি বড্ড হিংসুটে ক্যাপ্টেন সাহেব।

– আমার জিনিস নিয়ে আমি বরাবরই বড্ড হিংসুটে বসন্ত কন্যা।

– আপনি কি জানেন , আপনি দিন দিন বাচ্চাদের মতো হয়ে যাচ্ছেন ক্যাপ্টেন সাহেব?

– শুনেছি প্রেমে পড়লে নাকি সবাই একটু আধটু বাচ্চা হয়ে যায়, আমিও না হয় হলাম ক্ষতি কি?

– আপনার কথা বলাই বেকার।

– তবুও কথা যে আমার সাথেই বলতে হবে এছাড়া আর কোনো উপায় নেই তোমার।

– বলবো না কথা করবেন কি?

– বাড়িতে ফিরে প্রথম রাতেই বাসরটা সেরে ফেলবো।

আকর্ষিক আবসারের কথায় হতবম্ব নিশা।‌ কোথা থেকে কি? লজ্জায় কান দুটো ঝা ঝা করছে। গাল দুটো লাল হয়ে গেছে। ঐ ঠোঁটকাটা মানুষের সাথে আর কথা বলার শক্তি নেই। ধাপ করে কেটে দিল নিশা। ফোন কাটার সাথে সাথেই হো হো করে হেসে উঠলো আবসার। নাহ এবার অল্পতেই ছুটি নিতে হচ্ছে। বউটার জন্য মনটা বড্ড ছটফট করছে। ইচ্ছে করছে অল্প স্বল্প ছুয়ে দিতে কিন্তু পারছে না। সারাদিন যায় ডিউটিতে আর সারারাত যায় বউয়ের জন্য ছটফট করতে করতে ‌।

________________________

সকাল সকাল ঘুম ভেঙে মোবাইলা ধরেই আবসারের মুখে হাসি ফুটে উঠল। তার বউ আজ মেসেজ দিয়েছে ” গুড মর্নিং। ” এই প্রথম তার বউ তাকে মেসেজ দিল, মনের মধ্যে কেমন শান্তি শান্তি লাগছে। ঠোঁটের কোনে হাসি নিয়ে হেলেদুলে ওয়াশ রুমে ঢুকে গেল আবসার।

ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়েই মোবাইল নিয়ে বাইরে চলে গেল আবসার, উদ্দেশ্য নিশাকে ভিডিও কল করা। নিশাও ওয়াশ রুমে থাকায় কলটা ধরলো রিশা। কলটা রিসিভ করেই হাসি হাসি মুখে রিশা বলল –

– কি দুলাভাই কেমন আছেন?

আবসার কাঁদো কাঁদো মুখ করে উত্তর দিল – তোমার বোন আর ভালো থাকতে দিল কই ?

– আমার বোন আবার কি করলো?

– এই যে তার শান্ত শিষ্ট, সুশীল, হ্যান্ডসাম, মার্জিত, অবলা, কিউট সুন্দর জামাইটাকে একটুও পাত্তা দিচ্ছে না।

এর মধ্যেই নিশা ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে এলো। এক ভ্রু উঁচিয়ে রিশাকে জিজ্ঞেস করলো – কি করে কার সাথে কথা বলছিস?

– এই তো তোর একমাত্র ভোলাভালা জামাইয়ের সাথে বলেই নিশার দিকে মোবাইলটা তাক করলো রিশা।

নিশা হতবম্ব, একবার নিজের দিকে তাকাচ্ছে একবার মোবাইলের দিকে। আবসার ঠোঁট কামড়ে এক দৃষ্টিতে নিশার দিকে তাকিয়ে আছে। সেও মোটেই এই দৃশ্যের জন্য প্রস্তুত ছিল না। আজ রাতে ডিউটি থাকায় সকালেই কল করেছিল নিশাকে। কিন্তু এই সময় কল করে যে বউকে এই অবস্থায় দেখবে জানা ছিল না তার। ঢোক গিলল আবসার। নিশা দৌড়ে গিয়ে একটা ওরনা গায়ে জড়ালো। রাতে টি – শার্ট আর প্লাজো পড়ে ঘুমানোর অভ্যাস নিশার। রাতের ড্রেসেই ছিল সে গায়ে ওরনাটাও ছিল না । কি একটা লজ্জাজনক পরিস্থিতি । নিশা দ্রুত মোবাইলটা এনেই কলটা কেটে দিল। আবসার এখনও মোবাইলের স্ক্রীনের দিকেই তাকিয়ে আছে। কেমন ঘোর লেগে গেছে আবসারের।

চলবে….
পরের পর্বটি পেতে পেইজে ফলো দিয়ে সাথে থাকুন। ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ধন্যবাদ#বসন্ত_কন্যা
#পর্ব_২৩
#লেখিকা : সাদিয়া

( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )

কফি সপে মুখোমুখি বসে আছে ফয়সাল আর নিশা। নিশার ওকে কাল রাতে মেসেজ করে এখানে আসতে বলেছে জরুরি নাকি কিছু কথা আছে। ফয়সালও চলে এসেছে, এভাবে একা আগে কখনও দেখা করেনি নিশার সাথে, সেই সুযোগটাই হয়ে ওঠেনি। তার হওয়ার আগেই সে যে অন্য কারো। তার প্রিয়তমার মনে মনে মনে অন্য কারো ছবি আঁকা। ভাবতেই বুকটা ভার হয়ে গেল নিশার, বুকের উপরে যেন কেউ কয়েকমন ওজনের পাথর চাপিয়ে দিয়েছে। তবুও কিছুটা আশা নিয়েই আজ এখানে আসা ফয়সালের। কি , কেন, কি বলার জন্য নিশা এখানে ওকে ডেকেছে জানা নেই ফয়সালের। এখানে এসেছে ১৫ মিনিটের অধিক সময় পার হয়ে গেছে তবুও দুজনেই চুপ। আজ কেন যেন বিরক্ত লাগছে না ফয়সালের, নিশার মৌনতাও যেন প্রশান্তি দিচ্ছে ফয়সালকে। প্রিয় মানুষের সান্নিধ্যে এলে হয়তো এমনই হয়। টানা ২০ মিনিট পর নড়েচড়ে বসলো নিশা। মৌনতা ভেঙে বলল-

– নিজের একি অবস্থা করেছেন ফয়সাল ভাই? আপনাকে মোটেই এই লুকে মানাচ্ছে না। দেখতে কেমন দেবদাস দেবদাস লাগছে, আমি তো চলে গেছি এর পর কিন্তু আর কোনো মেয়ে ফিরেও তাকাবে না আপনার দিকে।

মলিন হাসলো ফয়সাল, উত্তর দিল – যে তাকানোর সেই তাকালো না অন্য কাউকে দিয়ে কি করবো?

দীর্ঘশ্বাস ফেলল নিশা, ফয়সাল কার কথা বলেছে বুঝতে পারছে নিশা।

– জানেন ফয়সাল ভাই জীবনটা বড় অদ্ভুত যখন আমি আপনাকে চাইতাম তখন আপনি আমাকে চাইতেন না দূর দূর করে তারিয়ে দিতেন। আর এখন আপনি আমাকে চাইছেন আমি আপনাকে চাই না।

– প্রতিশোধ নিচ্ছো তাই না?

– প্রতিশোধ আমি নিতে জানি না ফয়সাল ভাই। একটা কথা কি জানেন যত্ম না করলে সজীব জীবন্ত গাছটাও মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ে আর যত্ম করলে মরা গাছটায়ও ফুল ফোটে। ভালোবাসা হয়তো তেমনই, জানি অনেক লেখক লেখিকা বা কবিগন ভালোবাসার হাজারটা ব্যাখ্যা দিয়েছে কিন্তু সত্যি কথা কি জানেন ফয়সাল ভাই কারো প্রতি ভালোবাসাটা সারাজীবন এক রকম থাকে না যদি সে নিজে না রাখে। আমাদের কাছের কোনো একজন মানুষ যখন মারা যায় তখন খুব কান্নাকাটি করি, ভেঙে পড়ি । ২ দিন কান্না করি ৪ দিন কান্না করি ৫ দিনের দিন আমাদের কান্নাগুলো বন্ধ হয়ে যায়। তারপর আমরা থেকে থেকে শুরু যখন একা থাকি বা মনে পড়ে তখন কান্না পায়, এরপর এক বছর অতিবাহিত হয় দুই বছর অতিবাহিত হয় সে শুধু আমাদের দীর্ঘশ্বাসেই থাকে আগের মতো আর কান্না পায় না তার জন্য। আবার অপরিচিত একজনের সাথেও দিনের পর দিন থাকতে থাকতে মায়া হয়ে যায় তার প্রতি। আমার আর আপনার ভালোবাসাটাও ঠিক তেমনি ফয়সাল ভাই। একটা সময় ছিল আমি আপনাকে ভীষণ চাইতাম কিন্তু আপনি আমাকে দিনের পর দিন শুধু অপমানই করে গেছেন। একদিন দুইদিন তারপর আপনার অপমানগুলো আমার হৃদয়ে ক্ষতের সৃষ্টি করেছে আর সেই ক্ষতে মলম হয়ে নেমেছিল আবসার। এত অপমানের পর আপনাকে আমি মনে করতে চাইনি, কেঁদেছি, কষ্ট পেয়েছি নিজেকে সামলে নিয়েছি। আপনি হয়তো এখন আমাকে ভালোবাসেন কিন্তু আমি আর আপনাকে ভালোবাসি না, আপনার অস্তিত্ব শুধু মাত্র আমার দীর্ঘশ্বাস পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। হ্যা আপনাকে আমি ভালোবাসতাম কিন্তু দিনের পর দিন আপনার অপমানে , অযত্মে সেই ভালোবাসায় মরিচিকা ধরে গিয়েছিলো আর সেই মরিচিকা ভেঙে ঝকঝকে তকতকে করেছে আবসার। মানুষ চাইলে সব পারে ফয়সাল ভাই, আপনি আমাকে ভুলে যান নতুন করে জীবন শুরু করুন ফয়সাল ভাই। জীবনে মুভ অন করুন। ভালোবাসলেই যে সবসময় তাকে পেতে হবে এমন কোথাও লেখা নেই। কিছু কিছু ভালোবাসা ত্যাগেই সুন্দর। আমি এখন বিবাহিত। স্বামী নিয়ে সুখে থাকতে চাই। কিন্তু আমি সুখে থাকতে গিয়ে দেখবো কেউ আমাকে ভালোবেসে ধুঁকে ধুঁকে মরছে সে সুখও যে আমার সহ্য হবে না। আমি চাই আপনি সুখে থাকুন। দ্বিতীয় বার কাউকে ভালোবাসুন। আমি জানি ফয়সাল ভাই আপনি ততটাও খারাপ নয় যে অন্য কারো সংসার ভাঙবেন আপনি যা করছেন বা ভাবছেন নিজের ভিতরের কষ্ট , অভিমান, রাগ থেকে । আপনি দয়া করে আমার আর আবসারের মধ্যে আসবেন না। ভুলে যান আমাকে। আশা করি আমার কথাটা রাখবেন আপনি। এটা আমার চাওয়া নয় অনুরোধ আপনার কাছে। আসছি আমি ভালো থাকবেন।

বেরিয়ে গেলো নিশা, এখনও কফিসপে ঠাঁয় বসে আছে ফয়সাল। বুকের ভিতরটা হু হু করছে ‌। নিশার কথাগুলো বারবার মনের ঘরে কড়া নাড়ছে।

___________________________

১৫ দিনের ছুটি নিয়ে বাড়িতে এসেছে আবসার। সামনে ঈদে, ঈদে ছুটি পাবে না তাই রমজানের আগেই ছুটি কাটাতে এসেছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে এই ছুটিতেই নিশাকে ঘরে তুলবে, আয়নার বিয়ে দিবে। আয়নাকে দেখতে আসবে আজ। সকাল সকাল নিশা আর কাজল এসেও এ বাড়িতে উপস্থিত। আবসারও আজ খুব ভোরে এসে পৌঁছেছে। পাত্রের খোঁজ খবর সব আয়নকে দিয়ে আগেই নিয়েছে। বেশি দেরি করতে চায়না আবসার, এই ছুটি পেয়েছে এরপর আবার কবে ছুটি পাবে তার কোনো ঠিক নেই , এমনকি ঈদের দিনটাও নিজের পরিবারের সাথে কাটাতে পারবে না। মাঝে মাঝে জীবনের উপর খুব আফসোস হয় তার আবার পরক্ষনেই নিজের কাজে গর্ব বোধ হয় তার। আজই আয়নার দেখতে আসার দিন ফেলেছে, আজ একসাথেই বিয়ের দিন তারিখও ফিক্সড করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সারারাত জার্নি করে ভোরে এসেই ঘুমিয়েছে আবসার। বিকেলে দেখতে আসবে আয়নাকে। ড্রইং রুমের সোফায় বসেই তিন বান্ধবী খুনসুটিতে মেতে ছিল ওদের সাথে আয়ানের বউ মিষ্টিও আছে, নামও যেমন মিষ্টি মেয়েটাও তেমন মিষ্টি, আয়না মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। হঠাৎ আবিদা বেগম নিশাকে ডাক দিল রান্নাঘর থেকে।

– আন্টি ডাকছিলেন?

– আন্টি কি গো মেয়ে মা বলো মা। তুমি এই বাড়ির বড় বউ হও।

লজ্জায় মিইয়ে গেল নিশা। আবিদা বেগমকে হঠাৎ এভাবে মা বলে ডাকতে কেমন লজ্জা লজ্জা করছে।

– হয়েছে আর লজ্জা পেতে হবে না। এই কফিটা দিয়ে এসো তোমার বরের রুমে। ( এক কাপ কফি নিশার হাতে ধরিয়ে দিয়ে )

নিশা আমতা আমতা করে বলল – আআআমি নিয়ে যাবো কফি?

– তুমি নয়তো কে? এত বছর ঐ ধিঙ্গি ছেলের দায়িত্ব আমি সামলিয়েছি। এখন ওই ধিঙ্গি ছেলের দায়িত্ব নিয়ে আমাকে উদ্ধার করো মা।

অগত্যা কফি নিয়ে আবসারের রুমে যেতেই হলো নিশাকে। দরজাটা চাপানো ছিল। নিশা আস্তে করে ধাক্কা দিতেই খুলে গেল দরজাটা। রুমটা বেশ অন্ধকার, তবুও জানালার ফাঁকা থেকে আবছা আলোয় স্পষ্ট রুমটা। উপুড় হয়ে শুয়ে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে আবসার, গলা পর্যন্ত কম্বল দিয়ে মুড়িয়ে রাখা, আবার এসিটাও অন করা। যদি শীত করে তাহলে এসি কেন ছেড়েছে আর যদি গরম লাগে তাহলে কম্বল কেন মুড়িয়ে রেখে শরীরে বুঝে আসছে না নিশার। কতক্ষন ভালোভাবে আবসারকে পর্যবেক্ষণ করে আবসারের শরীরের উপর আরেকটা কম্বল দিয়ে শয়তানি হাসি দিল নিশা। এসিটা অফ করে আবসারের খাটের পাশেই সিঙ্গেল সোফায় বসে পড়লো নিশা।

৫ মিনিটের মাথায়ই হুড়মুড়িয়ে উঠে বসলো আবসার। ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা, ঠোঁট টিপে হাসছে নিশা। হাই তুলতে তুলতে বলল – গুড মর্নিং ক্যাপ্টেন সাহেব।

নিশার কন্ঠস্বর শুনেই ঝট করে পাশে তাকালো আবসার, চোখ দুটো অসম্ভব বড় হয়ে গেল। সে এই সময় নিশাকে কোনো ভাবেই আশা করেনি। হঠাৎ নিশাকে দেখে ভরকে গেল। একে তো ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠেছে তার উপর হঠাৎই নিশা। এটা তার ভ্রম নয় তো। কিছুক্ষণ চুপ থেকে সবটা পর্যবেক্ষণ করে কন্ঠে গম্ভীরতা এটে বলল – এটা কি ধরনের দুষ্টমী? আমি ঘুমাচ্ছিলাম।

– হুহ ভাব দেখলে বাঁচি না, ফোনে এমন করে কথা বলে যেন মনে হয় আমার জন্য ভালোবাসা উতলাইয়া পড়ে আর এখন দেখো কিভাবে কথা বলছে মনে হচ্ছে এখনই কেউ তিতা করল্লার রস খাইয়ে দিয়েছে।

নিশা মনে মনে এই কথাগুলো বললেও মুখে বলে উঠতে পারলো না সাহসের অভাবে। এমনি এইভাবে ঘুম ভাঙানোর কারনে হয়তো বেশ রেগে আছে, কথা শুনে তো তাই বোঝা যাচ্ছে। চুপসে গেল নিশা। মিনমিনিয়ে বলল-

– মা আপনার জন্য কফি পাঠিয়েছিল বলেই পা বাড়ালো বাইরের দিকে।

আবসার ধমক দিয়ে বলল – কোথায় যাচ্ছো তুমি? যেতে বলেছি আমি তোমাকে?

নিশা ভদ্র মেয়ের মতো এসে আবার সেই সোফায় বসে পড়লো। আবসার একবার নিশার দিকে তাকিয়ে ওয়াশ রুমে ঢুকে গেল ফ্রেশ হতে। যাওয়ার আগে বলে গেল – আমি বের হওয়ার আগে এই রুম থেকে এক পা ও বাইরে দেবে না। আমি বেড়িয়ে যেন তোমাকে এখানেই পাই।

নিশা বিরবির করে বলল – এসেছে পর থেকে ধমক আর ধমক। পোড়া কপাল আমার না হয় এই উদ্ভট প্রানীকে ভালোবাসি আমি?

১০ মিনিট পর টাওয়েল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে এলো আবসার।‌ নিশার দিকে তাকিয়ে বলল – কফিটা দেও।

নিশা মিনমিন করে বলল – কফিটা ঠান্ডা হয়ে গেছে। অন্য এক কাপ নিয়ে আসি?

– না ঐ কাপই দেও। প্রতিদিন তো গরম কফিই খাই আজ না হয় বউয়ের জন্য একটু ঠান্ডা কফিই খেলাম।

নিশা কফিটা এগিয়ে দিল আবসারের দিকে। নিশার হাত থেকে কফিটা নিতে গিয়ে আলতোভাবে স্পর্শ লেগে গেল নিশার হাতে, কেঁপে উঠলো নিশা । আবসার কফির মগে চুমুক দিতে দিতে বলল – এত কাঁপাকাঁপির কিছু নেই স্পর্শটা আমি ইচ্ছে করেই করেছি।

নিশা কাঁপাকাঁপি বাদ দিয়ে হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আবসারের দিকে। আবসার একের পর এক চুমুক দিয়েই ঠান্ডা কফিটা খেয়ে নিচ্ছে বেশ সানন্দে।

চলবে….
পরের পর্বটি পেতে পেইজে ফলো দিয়ে সাথে থাকুন। ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ধন্যবাদ#বসন্ত_কন্যা
#পর্ব_২৪
#লেখিকা : সাদিয়া

( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )

আবসার ব্যাগ থেকে কিছু একটা নিয়ে নিশার পিছনে দাঁড়ালো, আলতো হাতে পিঠের চুলগুলো সরিয়ে দিল, পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলল নিশা। একটা চেইন পড়িয়ে দিল নিশার গলায়, চেইনে উজ্জ্বল সোনালী রঙের একটা লকেটও রয়েছে। শ্যামবর্না শরীরে সোনালী বর্নের লকেটটা চকচক করছে। আবসার নিশার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল –

– বিয়ের পর এই প্রথম আমার বউকে দেওয়া প্রথম উপহার। সব সময় যেন এটা তোমার গলায়ই দেখি। কখনও খুলবে না।

উপর নিচে মাথা নাড়িয়ে হ্যা সূচক মত দিল নিশা। আবসার নিশার নাক টেনে বলল – এই তো গুড গার্ল‌ ।

_______________________

বিকালে আয়নাকে দেখতে এসেছে পাত্রপক্ষ। ড্রইং রুমে বসে তাদের সাথেই কথা বলছে আনসার সাহেব, আবসার আর আয়ান। মিনিট বিশেক পরই আয়নাকে নিয়ে হাজির হয়েছে নিশা , মিষ্টি আর কাজল। আয়না বেশ লজ্জা লজ্জা মুখ করে পাত্রপক্ষের সামনে বসলো। লজ্জায় মাথা উঁচু করে সামনে তাকাচ্ছে না ওর পাশেই নিশা দাঁড়িয়ে। হঠাৎ পাত্রপক্ষের মধ্যে কেউ একজন বলে উঠল – ইয়াসিন তোর চয়েস আছে বলতে হবে।

নামটা শুনেই ঝড়ের গতিতে সামনে তাকালো আয়না ওর সামনেই হাসি হাসি মুখ করে বসে আছে ইয়াসিন। আয়না বিষ্ফোরিত দৃষ্টিতে ইয়াসিনের দিকে তাকিয়ে আছে। মুখ থেকে অস্ফুট স্বরে বেরিয়ে এলো – ইয়াসিন স্যার।

নিশা একটু ঝুঁকে আয়নার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল – একেই বলে প্রতিশোধ। তুই আমাকে না জানিয়ে প্ল্যান করে আমার জমের সামনে বসিয়ে দিয়েছিলি। এবার আমিও তোর জমের সামনে তোকে বসিয়ে দিলাম। আর অবশ্য বিয়েটাও তোর ইয়াসিন স্যারের সাথেই হবে কারন আমি তোর ভাইকে বলেছি তুই ইয়াসিন স্যারকে বড্ড ভালোবাসিস শুধু ভয়ে মুখে বলতে পারিস না।

আয়না কটমট করে নিশার দিকে তাকালো, নিশা ভাবলেশহীন ভাবে আয়নার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। ওর সামনেই ওর বিয়ের দিন তারিখ সব ঠিক হলো আর ও কিছুই করতে পারলো না। ইয়াসিন স্যারকে প্রচন্ড ভয় পায় আয়না আর সেই ইয়াসিন স্যারই কিনা ওর গলায় বাঁধলো, কি কপাল।

ইয়াসিনের পরিবারের সাথে দুটো ছেলে এসেছিল অল্প বয়সী, অবিবাহিত। ওরা ইয়াসিনের কাজিন হবে হয়তো। মেয়ে দেখতে এসে আয়নার দিকে না তাকিয়ে একজন নিশা আর একজন বারবার কাজলের দিকে তাকাচ্ছিল বার বার যা মোটেও চোখ এড়ায়নি আবসারের। আবসার একবার নিশার দিকে তাকাচ্ছে একবার ঐ ছেলেটার দিকে। চারদিকে শুধু শত্রু আর শত্রু, শত্রুর অভাব নেই। আয়নাকে দেখানো শেষে ওকে নিয়ে ভিতরে চলে গেল নিশা, কাজল আর মিষ্টি। আবসার উঠে ঐ ছেলেটার পাশে বসলো।

– কি খবর ব্রাদার কি করছো?

– এই তো কিছু না।

– তো এদিক ওদিক তাকিয়ে কি দেখছেন?

ছেলেটা আমতা আমতা করে জবাব দিলো – ন না কই কিছু না তো।

আবসার ছেলেটার কলারটা ঠিক করে দিতে দিতে শান্ত কন্ঠে বলল – ৫ টা না ১০ টা আমার একটা মাত্র মুরগীর বাচ্চার মতো কিউট বউ আমার। আমার বউয়ের দিকে কুনজর দিয়ে আমার কড়া চোখের নজরে পড়ো না, ভালো হবে না তোমার জন্য।

_________________________

এক সপ্তাহ পর পর। তিনটা বিয়ে একসাথে হবে, নিশার সাথে আবসারের , আয়নার সাথে ইয়াসিনের , কাজলের সাথে শাহরিয়ার। নিশা এই এক সপ্তাহ এবাড়িতেই থাকবে। নিশার বাবা মোটেই নিশার এবাড়িতে থাকায় রাজি ছিলেন না কিন্তু করার কিছুই নেই একই দিনে আয়নাকে বিদায় দিবে আবার নিশাকে ঘরে তুলবে। আবসার যদি বরযত্রী নিয়ে নারায়ণগঞ্জ যায় সাথে সাথে ইয়াসিন বরযাত্রী নিয়ে এবাড়ি আসে তাহলে অনেক ঝামেলা হয়ে যায় তাই সিদ্ধান্ত হয়েছে ৩ টা বিয়েই একসাথে কমিউনিটি সেন্টারে বসেই হবে , আয়নাকে সেখান থেকে শ্বশুর বাড়ি পাঠানো হবে আর নিশাকে এ বাড়িতে নিয়ে আসা হবে। আর এই কয়দিন নিশা এ বাড়িতেই থাকবে। বিয়ের আগের দিন রাজন সাহেব, নদী বেগম আর রিশা চলে আসবে। কিন্তু সমস্যা হলো নিশা আয়নার রুমে থাকবে এই কয়দিন। আবিদা বেগম সাফ সাফ বলে দিয়েছেন ” যেদিন নিশাকে ঘরে তোলা হবে আর বাসর ঘরে দিবে সেদিন নিশাকে আবসারের রুমে সিফট করা হবে । তার আগে দুজন আলাদা আলাদা থাকবে। ” আবসার শুধু বার বার নিশার দিকে তাকাচ্ছে। নিশার ভীষণ হাসি পাচ্ছে কিন্তু হাসতেও পারছে না।

( রাত ১২ : ৩০ টা )

নিশার ফোনে টুং করে শব্দ করে একটা মেসেজ এলো,কিন্তু নিশা বেঘোরে ঘুমাচ্ছে । মোবাইলের ঐ অল্প টুং করে আওয়াজ ঘুম ভাঙাতে সক্ষম হয়নি নিশার। সে এখনও পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে। এদিকে ছাদে তার অপেক্ষায় ক্ষনে ক্ষনে অস্থির হয়ে উঠছে আবসার। ২০ মিনিট কেটে গেল নিশার টিকিটাও দেখা যাচ্ছে না। শেষে বিরক্ত হয়ে কল লাগালো নিশার ফোনে যা হওয়ার হবে পরে দেখা যাবে।

মাঝ রাতে প্রবল ঝংকারে বেজে উঠল নিশার ফোন। সাথে সাথে ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠলো নিশা আর আয়না। আয়না কিছুটা বিরক্ত হয়েই বলল – প্রেম করবি তোরা আর ঘুম নষ্ট করবি আমার। কল রিসিভ কর, ঘুমালাম আমি বলে আবার শুয়ে পড়লো।

মোবাইলের স্ক্রীনে তাকিয়ে দেখে সত্যি সত্যি আবসার কল দিয়েছে। এদিক ওদিক আর না ভেবে কলটা রিসিভ করলো নিশা, সাথে সাথেই ওপাশ থেকে কর্কশ কন্ঠে ভেসে এলো আবসারের কন্ঠ-

– আমার ঘুম হারাম করে নিজে শান্তিতে ঘুমাচ্ছো? এখনই ছাদে এসো ৫ মিনিট সময় তোমার।

নিশাকে কিছু না বলতে দিয়ে কলটা কেটে দিল আবসার। নিশা বড্ড দোটানায় পড়ে গেল এত রাতে ওর ছাদে যাওয়া ঠিক হবে? কেউ দেখে ফেললে কি ভাববে ? আর যদি নাও যায় তাহলে আবসার ওকে মেরেই ফেলবে, আর ধমক তো আছেই ধমকরাজের। বেশ কিছুক্ষণ চিন্তাভাবনা করে ছাদের দিকে পা বাড়ালো নিশা‌ ।

ছাদের এক পাশে দাঁড়িয়ে আনমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল আবসার। নিশা গুটি গুটি পায়ে নিঃশব্দে আবসারের পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো। আবসার এখনও আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। নিশা গলা খাঁকারি দিয়ে নিজের উপস্থিতির জানান দিল। পিছন ফিরে তাকালো আবসার, মুচকি হেসে ছাদের মেঝে ফুঁ দিয়ে কিছুটা পরিষ্কার করে বলল – বসো এখানে।

নিশা বাধ্য মেয়ের মতো আবসারের দেখানো জায়গায় বসলো। আবসারও হাঁটু ভাঁজ করে নিশার গা ঘেঁষে বসলো।

মিনমিনিয়ে নিশা বলল – কিছু বলবেন এত রাতে ডেকেছেন যে?

– কেন তোমাকে বুঝি কথা না থাকলে ডাকা যাবে না?

– না ঠিক তেমন না।

– দেখো আকাশে কত সুন্দর একটা চাঁদ উঠেছে।

নিশাও আকাশের দিকে তাকালো সত্যিই আজ খুব সুন্দর একটা চাঁদ উঠেছে আকাশে, গোল থালার মতো। চারদিকে টুকরো টুকরো মেঘ যেন চাঁদের সৌন্দর্যটাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

– আমাদের বিয়ের দিনও আকাশে এমন একটা চাঁদ উঠেছিল দেখেছিলে তুমি?

– হুম আপনার সাথে কথা বলতে বলতে জানালা দিয়ে।

– আমিও দেখেছিলাম ট্রেনের জানালা দিয়ে।

নিশা কোনো উত্তর দিল না। চারদিকে পিনপতন নীরবতা। শুধু কয়েকটা ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে থেকে থেকে। নড়েচড়ে বসলো আবসার , বলল – তোমার হাতটা একটু দেবে , ধরবো?

আবসারের নিসংকোচ আবদার। নিশা থামকালো, চমকালো। শিড়দাড়া বেয়ে একটা শীতল স্রোত বয়ে গেল, পুলকিত হলো মন। কাঁপা কাঁপা হাতটা বাড়িয়ে দিল আবসারের দিকে, আবসার খপ করে নিশার হাতটা ধরে নিল।

– এই কোমল হাতের পিঠে আমি যদি একটা চু*মু খাই তাহলে কি খুব ক্ষতি হবে বসন্ত কন্যা?

লজ্জায় মিইয়ে গেল নিশা, তাকাতে পারছে না আবসারের দিকে। এতদিন তো লোকটা শুধু মোবাইলে লজ্জা দিতো এখন সামনাসমনি লজ্জা দিচ্ছে। চুপ করে আছে নিশা।

আবসার শান্ত কন্ঠে বলল – তবে কি আমি ধরে নেব মৌনতাই সম্মতির লক্ষণ বসন্ত কন্যা?

নিশা মাথা নিচু করে চুপ করেই আছে। আবসার বুঝলো মৌনতাই সম্মতির লক্ষন। মুচকি হাসি ফুটে উঠল আবসারের ঠোঁটের কোনে। আলতোভাবে নিশার হাতের উল্টো পিঠে একটা চুমু খেল। কেঁপে উঠলো নিশা। লজ্জা মিশ্রিত দৃষ্টিতে আবসারের দিকে তাকালো।

আবসার ঠোঁটে দুষ্ট হাসি টেনে বলল – ওভাবে তাকিও না মেয়ে আমি ভয়ংকর কিছু ঘটিয়ে ফেলবো।

চলবে….
পরের পর্বটি পেতে পেইজে ফলো দিয়ে সাথে থাকুন। ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ধন্যবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here