গল্প: #বাক্সবন্দী_চিঠি
লেখক: Ninika Jaman Noor
পর্ব: ১৪
আবিরের রুমে বউ সেজে বসে আছে ইতু।এক প্রকার ঘোরের মধ্যেই আছে।আবির সামনে সোফায় পায়ের উপর পা তুলে সিগারেট ফুঁকছে। তার গভীর দৃষ্টি ইতুর দিকে।চোখ মুখ শক্ত করে বসে আছে ইতু।বিয়ে হওয়ার পর থেকেই ইতুকে এমন চুপচাপ দেখছে।ঝড় আসার পূর্বাভাস কিনা ঠিক বুঝা যাচ্ছে না।
সিগারেট শেষ করে বাকি অংশটুকু স্ট্রেতে রেখে উঠে দাড়ালো।ধীর পায়ে ইতুর দিকে আগালো আবির।বিছানায় বসতেই ইতু চেঁচিয়ে উঠলো।
“দূরে থাকুন আমার থেকে।একদম কাছে আসবেন না।বিয়ে হয়ে গেছে তারমানে এটা না আপনাকে আমার কাছে আসার পারমিশন দিয়ে দিয়েছি।এই বিয়ে আমি মানি না।বিয়ের আগের শর্তগুলো মনে আছে তো?এটা শুধু নামে মাত্র বিয়ে।কাল সকালেই আমি এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো।এইসব ছল চাতুরি করে আমাকে আপনি আটকে রাখতে পারবেন না।একটা কথা কান খুলে শুনে রাখুন, আপনাকে কোনোদিন আমি ক্ষমা করবো না।আজ যেটা আপনি করেছে সারাজীবনের জন্য আপনি আমার চোখে ছোট হয়ে গেছেন।”
কথাগুলো বলে ইতু হাপাচ্ছে।বুক ফেটে কান্না আসছে তার।মাথার ভিতরটা দপ দপ করছে।ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে আবিরের দিকে।আবির অতি শান্ত চোখে ইতুকে দেখছে।একটু আগে ইতুর বলার কথাগুলো তার কান পর্যন্ত গেছে কিনা বুঝা যাচ্ছে না।
ইতুর ইচ্ছে করছে নিজের চুল নিজে টেনে ছিঁড়তে।আবিরের এই ডোন্ট কেয়ার ভাবটাই অসহ্য লাগছে তার।
আবির উঠে দাড়িয়ে বারান্দার দিকে যেতে যেতে বললো,”অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়।তোর ছোট মাথায় এতো প্রেশার নিতে যাস না।”
“আবির ভাই….”
ইতু চেঁচিয়ে উঠলো।
আবির শান্ত ভঙ্গিতে তাকিয়ে বললো,”আমি তোর বিয়ে করা একমাত্র বর।নিজের বরকে কেউ ভাই ডাকে না।তোর মুখে এই ভাই ডাক আর শুনতে চাই না।”
“আবির ভা…”
“চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়।আর একটা কথাও শুনতে চাই না।”
ইতু অগ্নিচোখে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে।
আবির বারান্দায় দাড়িয়ে সিগারেট ধরালো।সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে চিন্তায় ডুবে গেলো।তখন জোঁকের মাথায় ইতুর ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়েটা করলেও এখন মনে হচ্ছে ইতু এতো সহজে বিয়েটা মেনে নিবে না।ইতুর মনে তার জন্য জায়গা আছে কিনা তাও ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না।বিয়েটা করাতে ইতু যেভাবে ক্ষেপেছে যে কেউ দেখলে বলবে আবিরকে সে দুই চোখে দেখতে পারেনা।
আবির একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো।
ইতুর খারাপ লাগাটা এখন আবিরকে ও ঝেঁকে ধরেছে।বিয়েটা করে ঠিক না ভুল করেছে সেসব চিন্তা মাথায় ঘুরছে।
ভোরে ফজরের আজানে আবির বারান্দা থেকে রুমে এলো।ইতু গুটিসুটি হয়ে বেডে ঘুমিয়ে আছে।
লাল জামদানিতে পুরো লাল পরি লাগতে তাকে।মানুষ বলে বিয়ে হলে নতুন বউয়ের সৌন্দর্য বেড়ে যায়।ইতুকেও অনেক বেশী রূপবতী লাগছে আবিরের কাছে।ইতুর দিকে এগিয়ে যেতে গিয়েও নিজেকে বাধা দিলো।ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়তে বেরিয়ে গেলো।
নামাজ পড়ে এসে আবির আর নিজেকে বাধা দিলো না।ইতুর কথা মেনে চলতে গেলে ইতুকে পাওয়া হবে না।আবির বেডে শুয়ে ইতুকে কাছে টেনে নিলো।আবিরের শরীরের উষ্ণতা পেয়ে ইতু মুখে গুঁজে গভীরভাবে ঘুমিয়ে পড়লো।আবির সে দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।এতোক্ষনে তার বুকের ফাঁকা জায়গাটা পরিপূর্ণ লাগছে।আবির ইতুর কপালে ভালোবাসার পরশ একেঁ ঘুমিয়ে পড়লো।
সকাল ১০:২০ মিনিট
ইতু আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে বসলো।চোখ এখনো খুলেনি।আলসেমি ঝেঁকে ধরেছে তাকে।বড় একটা হাই তুলে পাশে তাকিয়ে চমকে উঠলো।আবিরকে এক ধাক্কা দিয়ে উঠে দাড়ালো।
আবির পিটপিট করে চোখ খুলে দেখে ইতু রাগে ফুঁসছে।
আবির ভ্রু কুঁচকে উঠে বসে।
“কি হয়েছে?এমন ফোঁস ফোঁস করছিস কেনো?”কি হয়েছে?এমন ফোঁস ফোঁস করছিস কেনো?”
“আবির ভাই তোমাকে আমি কাল রাতেই বলেছি এটা শুধু নামে মাত্র বিয়ে।এই বিয়েতে কিছু কন্ডিশন আছে।তাহলে তুমি কেনো আমার পাশে শুয়ে ছিলে?তোমাকে কে পারমিশন দিয়েছে?আমার ঘুমিয়ে থাকার এডভান্টেজ নিচ্ছিলে তুমি?”
মুহুর্তেই আবিরের মেজাজ বিগড়ে গেলো।আবির বিছানা ছেড়ে উঠে এসে বললো,”সমস্যা কি তোর?তুই এখন আমার বিয়ে করা বউ আমি যদি এখন তোর সাথে কিছু করেও ফেলি না কেউ কিছু বলতে আসবে না।কিন্তু আমি সেসব কিছুই করছি না ফিউচারে করবো।টিপিকাল হাসবেন্ডদের মতো জোর করে বউ এর উপর অধিকার খাটানোর মতো ছোট মন মানসিকতা আমার নেই।সো ডোন্ট ট্রাই মাই পেশেন্ট।
আমি রেগে গেলে কি হতে পারে তোর কোনো ধারণাই নেই।”
ইতু ভয়ে ঢক গিললো।আবির বলছে সে এখনো রেগে যাই নি কিন্তু তার চোখ রক্ত লাল হয়ে আছে কপালের রগ গুলো ফুলে উঠেছে।রুমের আবহাওয়া যে বেশ গরম হয়ে গেছে ইতু বেশ বুঝতে পারছে।
আবির চোখ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত করলো।কাবার্ড থেকে কাপড় নিতে নিতে বললো,”আধ খোলা শাড়িটা ঠিক করে পড়ে বেরিয়ে যা রুম থেকে।তোকে এখন দেখতে ইচ্ছা করছে।”
আবিরের কথায় চোখ বড় বড় করে নিজের দিকে তাকিয়ে থমকে গেলো।গায়ে তার শাড়ি নেই।কোমড়ে শাড়ির একটা কোনা পেঁচিয়ে আছে বাকি পুরো শাড়ি বিছানায় আর ফ্লোরে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
ইতু নিজের দিকে তাকিয়ে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে দিলো।
“এই অসভ্যর সামনে আমার শাড়ি খুলতে হলো?আমার আর কিচ্ছু রইলো না।”
ইতুর কান্না শুনে আবির বেরিয়ে এলো।
ইতু চমকে শাড়ি টেনে কোনো রকম নিজেকে পেঁচিয়ে নিলো।
আবির ভ্রু জোঁড়া কুঁচকে বললো,”তুই কাঁদছিলি কেনো?”
“কাঁদবো না আমি?তোমার সামনে আমার শাড়ি খুলে গেছে।তোমার তো মেয়ে দেখলে মাথা ঠিক থাকে না কিভাবে হা করে তাকিয়ে ছিলে।”
আবির দাঁত চেপে বললো,”কি বললি আবার বল।”
ইতু আমতা আমতা করে বললো,”ঠি..ক ইতো বলেছি।সে কখন থেকে তোমার সামনে দাড়িয়ে ছিলাম তুমি একবার ও বলেছো আমার শাড়ি খুলে গেছে?”
আবির দুই হাত আড়াআড়ি ভাবে ভাঁজ করে বললো,”আমি কেনো বলতে যাবো?তোর শাড়ি তোর গায়ে নেই সেটা তোর বোঝা উচিত ছিলো।নাকি ইচ্ছা করেই এইভাবে আমার সামনে দাঁড়িয়েছিলি যেনো আমি তোর দিকে আরো আকর্ষিত হই।”
ইতু অবাক হয়ে চোখ বড় করে তাকালো।
পরক্ষনেই দাঁতে দাঁত চেপে বললো,”তোমার মতো অসভ্য আর বাজে লোক আর একটাও নেই ছিঃ”
“অসভ্য বল আর যাই বল এখন থেকে এই আবির তোরই আর তুই আমার।”
আবির ইতুর দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে চলে গেলো।
চলবে।
(