বাতাসা ❣️ পর্ব -০৫

‘বাতাসা’❤
ঈশানুর তাসমিয়া মীরা❤

০৫.
দুপুরে খাবার টেবিলে জেন আর দিশাকে একসাথে বসতে হয়েছে। যদিও দিশা বসতে চায় নি। কিন্তু বসার জায়গাও তো আর ছিল না, তাই বাধ্য হয়ে জেনের পাশেই বসতে হয়েছে তাকে।

খাবার নড়াচড়া করছে দিশা। খাচ্ছে না। জেনের পাশে বসে থাকতে একটুও ভালো লাগছে না তার। অদ্ভুদভাবে ভয়, ঘৃণা, লজ্জা তিনটাই কাজ করছে তার মধ্যে। হঠাৎ জেনের মৃদু গলা শুনতে পায় সে। জেন মাথা নিচু করে বলছে,

— “দিইইসা, খাচ্ছো না কেন?”

দিশার রাগ হলো প্রচুর। সে কেন খাচ্ছে না তার কৈফিয়ত কি এখন জেনকে দিতে হবে? কেন দিতে হবে? জেন কে? পরপরই দুপুরের ঘটনাটি মনে পড়ে যায় তার। লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে সে। জেন আড়চোখে তাকায় দিশার দিকে। দিশার গাল লাল হতে দেখে বাঁকা হেসে ফিসফিসিয়ে বলে,

— “তুমি লজ্জা পাচ্ছো কেন, দিইইসা? তোমাকে কিন্তু অনেক সুন্দর লাগছে। রেড স্ট্রবেরির মতো।”

দিশা চোখ বড় বড় করে তাকায় জেনের দিকে। জেন হাসছে। দিশা ইশারায় মানা করলেও তার হাসি বন্ধ হচ্ছে না। রেগে গিয়ে চেয়ারের মাথা দিয়ে জেনের পায়ে জোড়ে চাপ দেয় দিশা। ফলসরুপ জেনের হাসি বন্ধ হয়ে যায়। ব্যথায় চিল্লাতে গিয়েও চিল্লাতে পারছে না সে। সবার সামনে এভাবে চিল্লালে কি মনে করবে সবাই? দাঁতে দাঁত চেপে ব্যথা সহ্য করছে জেন। কিছুক্ষণ অতিবাহিত হতেই প্রবল ব্যথার দরুণ জেনের মুখ লাল হয়ে যায়। চোখ দু’টোও ভীষণ লাল হয়ে গেছে তার। দিশা আড়চোখে এসব দেখে তাড়াতাড়ি চেয়ার সরিয়ে নেয়। জেন যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। বড় বড় নিশ্বাস নিয়ে এত ব্যথা পাওয়া সত্ত্বেও দিশার দিকে হেসে তাকায়। ফিসফিসিয়ে বলে,

— “ব্যথাটা বুকে লেগেছে সুইটহার্ট।”

‘সুইটহার্ট’ শব্দটা কানে যেতেই কেশে ওঠে দিশা। চোখ রাঙ্গিয়ে জেনের দিকে তাকাতেই দিশার ভাই অপরপাশ থেকে বলে উঠে,

— “কিরে দিশা? খাচ্ছিস না কেন? ওদিকে কি দেখিস?”

দিশা হকচকিয়ে গেলো। তাড়াতাড়ি চোখ ফিরিয়ে খাওয়ায় মন দিলো আবার। এদিকে জেন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। দিশার ভাইয়ের কথা কিছু বুঝে নি সে। তবে আন্দাজ করেছে দিশাকে খাওয়া নিয়ে কিছু বলেছে সে। আড়চোখে দিশার দিকে একবার তাকালো জেন। পরপরই সেও খাবার খাওয়ায় মন দিলো। বাংলাদেশের খাবারের মধ্যে আলু ভর্তা বেশ ভালো লেগেছে তার। যদিও লাল কাঁচামরিচের ঝালে অবস্থা নাজেহাল তার তবুও ভালো লাগছে খেতে!

খাওয়া শেষে দিশা আনমনে হাঁটতে হাঁটতে নিজের রুমে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে জেন এসে তার পথ আটকায়। মুচকি হেসে বলে,

— “দিইইসা, আমার সঙ্গে ছাদে যাবে?”

দিশা ‘হ্যাঁ, না’ কিছুই বলল না। পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে জেন তার হাত ধরে ফেলে শক্ত করে। কিছু না বলেই টেনে নিয়ে যেতে থাকে দিশাকে। ছাদের চিলেকোঠায় আসতেই ছেড়ে দেয় হাত। সাথে সাথে মৃদু চেঁচিয়ে ওঠে দিশা,

— “সমস্যা কি আপনার জেন ভাইয়া? এমন ব্যবহার কেন করছেন? আপনি কি বুঝতে পারছেন না, আপনি যা চাচ্ছেন তা কখনোই সম্ভব না। আপনি আমার ভাইয়ার বন্ধু। সম্পর্কে আমার ভাই। আর আমি আপনার বোন। তাই প্লীজ এমন করবেন না।”

জেন অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে দিশার দিকে। পরপরই ভ্রু উঁচিয়ে বলল,
— “ওয়াট?”

দিশা ভুলেই গিয়েছিলো জেন বাংলা জানে না। রাগের মাথায় বাংলায়ই বলে ফেলেছে এতগুলো কথা। এখন কি তাকে আবারো ইংরেজীতে বলতে হবে কথাগুলো? কান্না পাচ্ছে দিশার। কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,

— “হেট ইউ!”

জেন বাঁকা হেসে বলল,
— “লাভ ইউ!”

______
চলবে…

__________কপি করা নিষেধ__________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here