#বুকভরা_ভালোবাসা
#পর্বঃ৯
#লেখিকাঃদিশা মনি
মেহুলের বাবার নাম শুনে তানজিন বলে,
‘এই বিয়ে হবে না। আমি কিছুতেই এই বিয়ে হতে দেব না।’
তানজিনের হঠাৎ এই পরিবর্তনে মেহুল,স্নিগ্ধ দুজনেই বেশ অবাক হয়। স্নিগ্ধ জিজ্ঞেস করে,
‘কি হলো খালামনি?’
তানজিনঃআপু আমি কিন্তু বলে দিচ্ছি এই মেয়ে যেন কিছুতেই স্নিগ্ধর বউ না হয়। যদি হয় তাহলে তোদের কারো সাথে আমি কোন সম্পর্ক রাখব না।
ফরিদাঃমনির ভাইয়ের উপর এখনো তুই রাগ করে আছিস? এতগুলো দিন হয়ে গেল এখন সব ভুলে যা। তাছাড়া মনির ভাই তো স্নিগ্ধর বাবার কতদিনের পুরাতন বন্ধু। যদি এই সম্পর্কটাকে আত্মীয়তার বন্ধনে যুক্ত করা যায় তাহলে অসুবিধা কোথায়?
তানজিনঃআমি কিছু শুনতে চাইনা। আমার যা বলার সব বলে দিয়েছি।
তানজিন দ্রুত রাগ দেখিয়ে সেখান থেকে চলে যায়। স্নিগ্ধ, মেহুল দুজনে এসবের কিছু বুঝতে না পেরে একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকে।
ফরিদা তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলে,
‘তানজিনের কথায় তোমরা কিছু মনে করো না। ও কখন কি করে তার কোন ঠিক নেই। আগামী সপ্তাহে স্নিগ্ধর বাবা দেশে ফিরলেই আমরা তোমার বাড়িতে যাবো মেহুল। মনির ভাই আর স্মিগ্ধর বাবা তো স্কুল লাইফ থেকে ফ্রেন্ড, তারপর এখন যে যার মতো ব্যস্ত। অনেকদিন থেকে তোমাদের সাথে যোগাযোগ নেই। সেই কোন ছোটবেলায় তোমায় দেখেছিলাম। মেহেজাবিন এখন কেমন আছে?’
মেহুলঃআপনি আমার মাকে চেনেন?
ফরিদাঃচিনবোনা? আমরা তো বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলাম। তারপর কোথা থেকে সব এলোমেলো হয়ে গেলো। যাইহোক এসব কথা বাদ দাও। আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। তাইতো এতবছর পর তোমাদের মাধ্যমে আমাদের আবার মিলিয়ে দিলেন। তুমি একটু অপেক্ষা করো আমি কিছু আনছি প্রথমবার আমাদের বাড়িতে এলে খালি মুখে তো আর যেতে দিতে পারিনা।
মেহুল ফরিদার কথায় খুব খুশি হয়। তার মনে হয় এখন আর খারাপ কিছু হবে না। যা হবে ভালোই হবে।
১৭.
ভার্সিটিতে আজ একটা প্রোগ্রাম উপলক্ষে আয়োজন চলছে। মেহুল,ইতি,মোহনা তিনজন একসাথে প্রস্তুতি নিচ্ছে। কারণ তাদের তিনজন একসাথে নৃত্য পরিবেশন করবে।
ইতি মোহনাকে দেখে মোটেও খুশি নয়। সে মেহুলকে বলতে থাকে,
‘এই মোহনাকে আমাদের সাথে নিলি কেন? ওকে আমার একদমই বিশ্বাস নেই। জানি না কখন কি করে।’
মেহুলঃতুই কোন চিন্তা করিস না। মোহনা যখন নিজে থেকে আমাদের সাথে নৃত্য পরিবেশন করতে চাইছে তখন নিশ্চয়ই ভেবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাছাড়া মানুষ পরিবর্তনশীল। মোহনা এখন হয়তো নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে তাই নিজে যেচে এসেছে।
ইতিঃতুই যাই বল আমার এই মেয়েকে এক ফোটাও বিশ্বাস নেই। কিছু না কিছু গড়বড় তো করবেই।
মোহনাঃতোমরা কি নিয়ে কথা বলছ।
ইতিঃতোমাকে নিয়েই কথা বলছি।
মোহনাঃআমাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে তাইনা?
ইতিঃএকদম পেত্নীর মতো লাগছে।
মোহনাঃকি বললে?
মেহুলঃকিছু না। তোমাকে কিন্তু সত্যি আজ খুব সুন্দর লাগছে।
মোহনা খানিকটা লজ্জা পেয়ে বলে, ‘ধন্যবাদ।’
স্নিগ্ধ রেওয়াজ করছিল কারণ সে আজ এই প্রোগ্রামে একটা গান গাইবে। মুগ্ধ তখন বসে বসে পেইন্টিং করছিল। এতদিন সে পাহাড়,প্রকৃতির ছবি আঁকত। আজ সে আঁকছে নিজের প্রিয়তমার ছবি।
মুগ্ধ জানে সে কোনদিনও মেহুলকে পাবে না কিন্তু তার মন যে মানতে চাইছে না। বুকভরা ভালোবাসা বুঝি এমনই হয়। মুগ্ধ মেহুলের ছবিই আঁকছিল তখন হঠাৎ পেছন থেকে আশা চলে আসে। আশাকে দেখে মুগ্ধর চোখে বিরক্তি প্রকাশ পায়।
আশা মুগ্ধকে বলতে থাকে,
‘কি আঁকছ তুমি মুগ্ধ ভাইয়া? ওমা এত সুন্দর মেয়ে। এটা নিশ্চয়ই আমাকে কল্পনা করেই আঁকছ? আমি জানি তুমি মুখে যাই বলো মনে মনে আমাকে ঠিকই ভালোবাসো।’
মুগ্ধ এবার আর রাগ করেনা। তামাশাভরা সুরে বলে,
‘তোমাকে কল্পনা করে আমি কি আঁকতে পারি জানো?’
আশা উৎসাহী ভাবে বলে,
‘কি?’
মুগ্ধঃআমাকে পাঁচ মিনিট সময় দাও আমি এঁকে দেখাচ্ছি।
আশা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে। পাঁচ মিনিট পর মুগ্ধ আশার হাতে একটা ছবি তুলে দিয়ে বলে,
‘দেখে নাও।’
আশা খুশিমনেই ছবিটি দেখতে যাচ্ছিল। কিন্তু ছবিটা দেখে তার সব খুশি উধাও হয়ে যায়।
মুগ্ধ একটা কুকুরের ছবি এঁকেছে। আশার মুখ দেখে মনে হচ্ছিল এক্ষুনি কেদে দেব। আশা মুগ্ধকে জিজ্ঞেস করে,
‘আমাকে আপনার কু’কুর মনে হয়?’
মুগ্ধঃতা নয়তো কি? সবসময় তুমি কুকু’রের মতো পেছনে ঘুরঘুর করো। এত অপমান করি তাও তোমার লজ্জা হয়না। তুমি তো কু’কুরই।
আশাঃঠিক আছে। আজকের পর থেকে আর কোনদিনও আপনার পেছনে ঘুরব না।
আশা কান্না করতে করতে চলে যান। মুগ্ধ দীর্ঘশ্বাস ফেলে। আশার কাছে ক্ষমা চেয়ে বলে,
‘আজ আমি যা করলাম তোমার ভালোর জন্যই করলাম। এখন তুমি নিজে থেকে আমার থেকে দূরে চলে যাবে। আর আমি এটাই চাই। আমি যে একজনকেই শুধু বুকভরে ভালোবেসেছি। এই বুকে আর কারো যায়গা নেই কারো না। তার থেকে ভালো হবে এই কষ্ট নিয়ে তুমি আমায় ঘৃণা করো। আমায় ভুলে নতুন করে জীবন শুরু করো।’
১৮.
মেহুল,ইতি এবং মোহনা তিনজনই নৃত্য পরিবেশন করতে মঞ্চে ওঠে। তিনজন একসাথে নাচতে শুরু করে। তখন নাচতে গিয়ে হঠাৎ মেহুলের সাথে ধাক্কা লেগে মোহনা পড়ে যায়।
উপস্থিত সবাই এই দৃশ্য দেখে হেসে ফেলে। মেহুল মোহনাকে তোলার জন্য হাত বাড়িয়ে দেয়। তখন মোহনা মেহুলের হাত ঠেলে সরিয়ে দেয়। তারপর উঠে দাড়িয়ে সবার সামনে ঠা’স করে মেহুলকে থাপ্প’র মা’রে।
ইতি এগিয়ে এসে বলে,
‘এটা কি করলে তুমি? মেহুলকে মা’রলে কেন?’
মোহনা নিজের নাটক শুরু করে। ন্যাকা কান্না করতে করতে বলে,
‘এই মেহুল সবসময় আমার সাথে এমন করে। আমি ওদের বাড়িতে আশ্রিত তাই সবসময় আমার উপর অত্যা*চার করে। আমাকে মানুষ বলে গণ্য করেনা। আজ সবার সামনে আমায় এভাবে অপদস্ত করল। ইচ্ছা করেই আমায় ধা’ক্কা দিলো।’
মেহুলঃতুমি ভুল ভাবছো মোহনা আমি তোমাকে ইচ্ছা করে ধা’ক্কা দেইনি। পুরোটাই একটা দূর্ঘটনা ছিল।
মোহনাঃহ্যা তোমাদের বড়লোকদের কাছে তো এসব দূর্ঘটনাই। তোমরাই এভাবে আমাদের রাস্তায় গাড়ি চা’পা দাও। তারপর দূর্ঘটনা বলে চালিয়ে দাও।
ইতিঃতুমি একটু বেশিই রিয়্যাক্ট করছ।
মোহনাঃআমি একদম ঠিক বলছি। এই মেহুল বড়লোকের একটা বিগড়ে যাওয়া মেয়ে। মা-বাবা লাই দিয়ে মাথায় তুলেছে। কোন সুশিক্ষা দেয়নি। এরকম অভদ্রতা শিখিয়েছে।
এতক্ষণ চুপ থাকলেও নিজের মা-বাবার নামে এরকম কথা শুনে মেহুল আর ঠিক থাকতে পারে না। মেহুল পরপর দুবার মোহনার গালে থাপ্প’র মা’রে। তারপর বলে,
‘আমাকে যা বলার বলো কিন্তু আমার বাবা-মায়ের নামে একদম খারাপ কথা বলবে না। তোমার মতো অকৃতজ্ঞ মেয়ে আমি জীবনে দুটো দেখিনি। আমার মা-বাবার দয়াতেই তুমি এখনো বেঁচে আছো। আর তুমি তাদের নামেই এরকম কথা বলছ।’
মোহনা এবার আরো সুযোগ পেয়ে যায়। আরো নাটক করতে করতে বলে,
‘দেখছেন তো আপনারা সবাই। কিভাবে আমার উপর জু’লুম করছে এই মেয়েটা। আপনাদের সামনেই এমন করছে তাহলে ভেবে দেখুন বাড়িতে আমার সাথে আরো কি কি করে।’
সবাই মোহনার হয়েই কথা বলতে থাকে আর মেহুলের নামে খারাপ খারাপ কথা বলতে শুরু করে।
মেহুলও চুপ থাকার পাত্রী নয়। সে সবাত উদ্দ্যেশ্যে বলে,
‘আপনারা যা খুশি বলুন। আমার কিছু যায় আসেনা। এটা আমার জীবন কোন নাটক-সিনেমা নয় যে নায়িকাদের মতো আমায় মহান সাজতে হবে। কেউ অকারণে আমার ক্ষ’তি করে আমার গায়ে হাত তুলবে আর আমি মহান সেজে থাকব? কেন এমন করবো আমি? আমার কি দরকার? সিরিয়ালের নায়িকাদের মতো মহান সাজা আমার দ্বারা হবে না। আমি যা করেছি ঠিক করেছি। আপনারা যা খুশি বলুন।’
কথাটা বলে মঞ্চ থেকে নেমে আসে মেহুল। মুগ্ধ মেহুলের কাছে এসে বলে,
‘তোমার সাথে কিছু জরুরি কথা আছে।’
চলবে কি?
>>>> আসসালামু আলাইকুম। আপনারা যারা গল্পটা পড়লেন তারা আজকের পর্ব সম্পর্কে নিজেদের মন্তব্য জানিয়ে দেবেন। যাতে আমি সামনের পর্বগুলো সুন্দরভাবে গুছিয়ে পরিবেশন করতে পারি সেইজন্য আমার ভুলগুলো তুলে ধরবেন।