#বৃষ্টিপ্রিয়া
পর্ব- ০৭।
লেখা- জাহান লিমু।
প্রীতি ছলছল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আবারও সরি বললো। চোখের জল গড়িয়ে পড়ার আগেই,আমি তা মুঠোবন্দি করে নিলাম। প্রীতির চোখে চোখ রেখে বললাম,
তুমি বৃষ্টিপ্রিয়া,বৃষ্টির জলে ভিজবে। নয়নের জলে নয়।
প্রীতি ভালোবাসার হাসি হাসলো। কোন কথা বললোনা। শুধু নীরব দৃষ্টি বিনিময় করলো। যে দৃষ্টিতে ছিলো একরাশ ভালোবাসা, আর মুগ্ধতা।
পরিবেশটা কেমন জানি থমথমে হয়ে গেছে। তাই অন্যরকম করা দরকার। আমি চাকুটা কুঁড়িয়ে নিয়ে আবার প্রীতির হাতে দিলাম। প্রীতি বিস্ফোরিত চোখে আমার দিকে তাকালো। হয়তো আবারো কিছু বুঝতে পারছেনা। সেটাই স্বাভাবিক। কারণ আমি এখন যা করতে চলেছি,সেটা প্রীতির ভাবনার বাইরে। আমারও ভাবনার বাইরে। হুঁট করেই ভাবনাটা আসলো। ভাবলাম কাজে লাগানো উচিত। হুঁট করে আসা ভাবনাগুলো বিশেষই হয়। আমি মৃদু হাসলাম। পকেট থেকে আমার ফোনটা বের করলাম। যদিও বিয়েতে সবাই শেরোয়ানি,পাঞ্জাবি পরে। কিন্তু আমি আমার অফিস ড্রেসেই বিয়ে করতে আসলাম। অবাক হওয়ার কিছু নেই। এটা উনার ইচ্ছে ছিলো। মানে আমার বৃষ্টিপ্রিয়ার। অফিসারের বিয়ের ড্রেস হিসেবে নাকি এটাই বেস্ট। বিয়ের ছবি দেখলেই, অফিসারের বউ বউ ফিলিং আসবে তার। সেজন্যই তার ইচ্ছে পূরণ করতেই,আমার এ পোশাকে আসা। যদিও আমার নিজেকে একদমই বর বর লাগছিলো না। মনে হচ্ছিল ডিউটিতেই আছি। অবশ্য বউয়ের ডিউটিই,সবচেয়ে বড় ডিউটি। ঘর শান্তি,তো সব শান্তি।
আমি প্রীতিকে আবার চাকুটা আগের মত গলায় ধরতে বললাম। সে তা না করে, করুণ চোখে আমার দিকে তাকালো। আমি এবার আদেশ করার মত করে বললাম।
প্রীতি এবার ভড়কে গিয়ে আগের মত ধরলো।
আমি মুখ লুকিয়ে হাসলাম। প্রীতিকে বলে রাখলাম, যতক্ষণ আমি সরানোর কথা না বলবো,ততক্ষণ যেন ধরে রাখে। প্রীতি বাধ্য মেয়ের মত মাথা নাড়ালো।
এবার আমি ফোনের ক্যামেরা অন করে ফটাফট কয়েকটা ছবি তুলে নিলাম। সবকটা ছবিতে প্রীতি চোখ ইয়া বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো। আর আমি অসহায়ের মত মুখ করে রাখলাম। একটা ছবি এমন তুললাম যে, প্রীতি আমার হাত কেটে ফেলছে। চাকুটা আমার হাতের কাঁটা জায়গাটায় ধরা ছিলো। প্রীতি হঠাৎ আমার এভাবে ছবি তোলা দেখে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে। ছবি তোলা শেষ করে প্রীতির হাত থেকে চাকুটা নিয়ে পাশে সরিয়ে রাখলাম।
প্রীতি তখনো কিছু বুঝতে পারছেনা এমন ভাবে তাকিয়ে রইলো। আমার বেশ লাগছে প্রীতির এই মুখটা দেখতে। প্রীতির রুমের সাথেই বড় বারান্দা। আমি সেখানে গিয়ে বসলাম। প্রীতিও পিছু পিছু আসলো। জানি আসবে।
আমি এবার বারান্দার দরজা খুলে বাগানের একপাশে বসার জায়গাতে বসলাম। প্রীতিকে ইশারা করলাম বাইরে আসার জন্য। এখানে বড় বড় গাছ থাকার কারনে দূর থেকে তেমন দেখা যায় না। তাছাড়া এদিকটায় কেউ নেই ও। সবাই অন্যপাশে ব্যাস্ত। ভাবা যায়,নিজের বিয়েতে বর বউ এভাবে রোমাঞ্চকর পরিবেশে।
প্রীতি আসার সাথে সাথেই আমি উঠে আমার জায়গাটাতে ওকে বসালাম। তারপর আমি হুঁট করে ওর কোলে শুয়ে পড়লাম। ফোনের গ্যালারীতে ছবিগুলো দেখতে লাগলাম।প্রীতি রোবটের মতো বসে আছে। আমি ছবি দেখতে দেখতে বললাম,এই ছবিগুলো আমাদের ছেলেমেয়েদের দেখাবো।দেখিয়ে দেখিয়ে বলবো, তোদের মা আমাকে চাকু দিয়ে ভয় দেখিয়ে জোর করে বিয়ে করেছিলো। আমি না করতে চাওয়ায়,সত্যি সত্যিই হাত কেটে দিয়েছিলো। তারপর শেষমেষ ভয়ে আমি বিয়ে করে ফেললাম।
কথাগুলো বলা শেষ করে প্রীতির মুখের দিকে না তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে রইলাম। পিটপিট করে চোখ খুলে দেখছিলাম তার মুখের অবস্থা। একটু তাকিয়েই আবার চোখ বন্ধ করে ফেললাম। আকাশের অবস্থা ভালো নয়। যেকোন সময় বজ্রপাত হতে পারে। মানুষজনের সাবধান হওয়া উচিত। আর নয়তো…
আমি কথাটা পুরো শেষ করতে পারলাম না। তার আগেই বজ্রপাত হলো। আর সেই বজ্রপাতের হেতু আমি এখন মাটিতে পড়ে গড়াগড়ি খাচ্ছি। ভাবছেন,এটা আবার কেমন বজ্রপাত?জ্বি,তিনি আমাকে ফেলে দিয়েছেন জমিনে। এটাই বজ্রপাত।আমি উঠে বসতে বসতে জামা কাপড় ঠিক করতে লাগলাম।
তার পাশে মুখ ভার করে বসে রইলাম। একজন অফিসারকে সে এভাবে ট্রিট করছে,মানসম্মান আর রইলো না। সে কিছুই করেনি এমন ভাব করে আমার পোশাকের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,
আপনার এই পোশাকটাই আপনার সব প্ল্যান ভেস্তে দিলো,বুঝলেন মিস্টার অফিসার। আব ত্যারা ক্যায়া হোগা অফিসার?
এটা বলে প্রীতি একটা পৈশাচিক হাসি দিলো। তারপর বলতে লাগলো, ভাগ্যিস আমার এমন অদ্ভুত ইচ্ছে হয়েছিলো। আর নয়তো আমি কি আর জানতাম যে,আপনার পেটে পেটে এতো বদ বুদ্ধি? আমিতো আপনাকে ভোলাভালা কালা ভেবেছিলাম। কিন্তু আপনি তো সাদাবিল্লি বের হলেন।
আর বাকী রইলো আপনার ছেলেমেয়ের কথা?
আপনার ছেলেমেয়ে নিশ্চয়ই আপনার মতো এতোটাও হাঁদারাম হবে না যে,এতটুকু বিষয় বুঝতে পারবেনা। যে একজন সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট কে , সামান্য একটা চাকু ঠেকিয়ে আমি বিয়ে করে ফেলবো। এসব গবেট মার্কা চিন্তা আপনার মাথায়ই উৎপন্ন হতে পারে। আসছে, প্রমাণ রাখতে। এটা বলে প্রীতি ভেংচি কাটলো।
এবার আমি মাথা চুলকাতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর দু’হাত মাথার উপরে তুলে বললাম,
সারাজীবনের জন্য আপনার কাছে স্যারেন্ডার করলো এই অফিসার। আমার অফিসার তো আপনি।
প্রীতি এবার জোরে হাসলো। আমি সেই হাসিতে খুন হতে লাগলাম সহস্রবার। হঠাৎ একটা জিনিস খেয়াল হলো। সাথে সাথে প্রশ্ন করলাম,
এই,” তুমি না কি ট্যাবলেট খেয়ে ফেলেছিলে? তাহলে এখনো সুস্থ কি করে?”
প্রীতি এবার আগের চেয়েও দ্বিগুণ জোরে হাসলো। তারপর আচমকায় কিছু না বলে ওর রুমের দিকে গেলো। কিছুক্ষণ পর হাতে একটা বোতল নিয়ে ফিরে আসলো। আমার সামনে বোতলটা ধরলো। আমি কিছু বুঝতে পারলাম না। তাই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম।প্রীতি এবার বোতলের গায়ের লেখাটা পড়ার জন্য ইশারা করলো। আমি লেখাটা দেখে আরেকদফা বেআক্কেল সাজলাম। আসলেই আমি হাঁদারাম। আতঙ্কে বোতলটা ঠিকমত খেয়াল করে দেখিও নি। এবার নিজের গালে নিজে দুইটা দিতে মন চাইছে,এমন বাজে চিন্তা করার জন্য। কারণ সেটা টেস্টি হজমীর বোতল ছিলো।
আর আমি কি না ভাবলাম!
অতঃপর আমার জীবন এভাবেই যাবে,সেটা আমি বেশ বুঝতে পারলাম। এজন্য আগেই স্যারেন্ডার করে নিয়েছি। পুরুষ সে যতবড় অফিসার,মন্ত্রী,ব্যবসায়ী হোক না কেন,তার ঘরের বস তো স্ত্রী। সেটা তার রাজত্ব। সেখানে তার অনুশাসনই চলে।
এখন আমার সালমান শাহর অন্তরে অন্তরে সিনেমার ঐ গানটা খুব মনে পড়ছে।
ভালোবাসিয়া,গেলাম ফাঁসিয়া…
করতে হবে,এবার বিয়া।
সোনারি চাঁন,পিটলা ঘুঘু
যাবে কোথায় পালাইয়া!
#চলবে…