বৈধ সম্পর্ক সিজন ২ পর্ব ১৮

#বৈধ_সম্পর্ক
#সিজন_২
#পর্ব_১৮
#Saji_Afroz
.
.
.
সকাল ১১টা….
উপমার মা বাবার সামনে বসে আছে আরাফ।
উপমার ভরসায় সে আজ এখানে এসেছে।
উপমার মা বাবা আরাফের ঠিক সামনেই বসে আছে। তাদের পাশেই রয়েছে উপমা।
যদিও তাদের আরাফের মুখ দেখারও ইচ্ছে ছিলোনা তবে উপমার আবদার রাখার জন্যই এসেছে তারা।
আরাফ শান্ত ভঙ্গিতে তাদের উদ্দেশ্যে বললো-
সেদিনের ঘটনার জন্য আমি দুঃখিত।
.
ফখরুল মোবারক কিছু না বলে চলে গেলেন। আর রুপা আক্তার আরাফের দিকে তাকিয়ে বললেন-
একমাত্র মেয়ে উপমা আমার। ও যা চায় আমরা তাই করবো। কিন্তু মন থেকে তোমাকে বা তোমার পরিবার কে আমরা মানতে পারবো না। সেই তুমি পায়ে ধরে ক্ষমা চায়লেও।
.
উপমার দিকে তাকিয়ে রুপা আক্তার বললেন-
তুই কি করতে চাইছিস আমি জানিনা। কিন্তু মনে রাখিস, এই ছেলে কখনো তার মায়েদের চেয়ে বেশি তোকে দাম দিবেনা।
সেদিন থাপ্পড় একটা মেরেছিলো। মায়েদের প্রশ্রয়ে বারবার মারবে। এক শ্বাশুড়ীর জ্বালায় থাকতে পারতাম না। দুইটা নিয়ে কিভাবে ভালো থাকবি আমি জানিনা।
.
কথাটি বলে রুপা আক্তারও ভেতরের দিকে চলে গেলেন।
উপমার দিকে তাকিয়ে আরাফ বললো-
আমার আম্মুরা অনেক বেশি ভালো উপমা। ভালো রাখবে তোমাকে।
-চলো তোমার বাসায়।
-কি যেনো বলতে চেয়েছিলে?
-সবার সামনেই বলবো।
.
.
.
মিশিকারা সবাই পাবেলের এক বন্ধুর বাসায় যাচ্ছে আজ।
দুপুরের দাওয়াত পেয়েছে তারা।
মিশিকা যদিও আরাফ কে সাথে নিয়ে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু মুনিরার কাছে শুনেছে আরাফ আজ ব্যস্ত।
মুনিরা কিছুতেই চায়নি, উপমার কথা তাদের সামনে আসুক।
তার আশা পূরণ হয়েছে। কাল রাতেই পাবেলের বন্ধু ফোনে দাওয়াত টা দিলো।
ভাগ্যিস আজ দাওয়াতে যাচ্ছে তারা। নাহলে উপমার ব্যাপারে সবটা জেনে ফেলতো।
আপনমনে এসব ভেবে স্বস্থির একটা নিঃশ্বাস ফেললো মুনিরা।
মিশিকা তার আর সায়নীর উদ্দেশ্যে বললো-
আরাফের সাথে কথা বলে নিস আমরা আসার আগেই। এসে যেনো খুশির খবর শুনি।
.
মুনিরা মৃদু হেসে বললো-
অবশ্যই।
-আসি আমরা।
.
.
মিশিকারা বেরিয়ে যেতেই সোফায় বসে পড়লো মুনিরা।
তার পাশে এসে বসলো সায়নী।
তার দিকে তাকিয়ে সায়নী বললো-
উপমা যদি অনুতপ্ত হয় তবে আরাফ যা চায় তাই হবে।
-বাচ্চারা ভুল করবে। সে ভুল আমরা সাপোর্ট করবো?
-আরাফ আর বাচ্চা নেই মুনিরা। নিজের টা নিজে বুঝতে শিখেছে। তুই ওকে কোনো প্রেসার দিবিনা।
-উপমা তো সরি বলবেই। তাই তো সে এখানে আসছে। কিন্তু আমি তাকে ক্ষমা করবোনা। আরাফ কে বোঝাবো আমি, মেয়েটা এই বাড়ির যোগ্য নয়।
-যতক্ষণ না আরাফের মন এটা বুঝবে ততক্ষণ তাকে কেউ বুঝাতে পারবেনা।
-এই প্রথম আমার কোনো সিদ্ধান্তে তুমি আমার সাথে নেই।
-তুই ও কি আছিস?
.
নীরব হয়ে গেলো মুনিরা। সাথে সায়নীও।
তারা জানেনা, সামনে কি অপেক্ষা করছে তাদের জন্য।
দুজনের জায়গা থেকে দুজনেই ঠিক। কেউ কারো জায়গায় এসে দাঁড়াতে নারাজ। তবে দুজনের একটাই চাওয়া, আরাফ যেনো ভালো থাকে।
.
.
.
আরাফের সাথে বাসায় প্রবেশ করা মাত্রই সায়নী ও মুনিরার দেখা পেলো উপমা।
তারা ড্রয়িং রুমেই বসে আছে।
উপমা কে দেখে সায়নী তার পাশে এসে বললো-
ভালো আছো মা?
.
মৃদু হেসে উপমা বললো-
জ্বী, আপনি?
-আছি।
.
আরাফ তাকালো মুনিরার দিকে। সে চুপচাপ বসে আছে।
উপমা মুনিরার উদ্দেশ্যে বললো-
আপনি আমার উপর রেগে আছেন? আমি আজ সরি বলতে এসেছি। সব রাগারাগির অবসান হবে আজ।
.
কোনো জবাব দিলোনা মুনিরা।
সায়নী বললো-
তোমার কোনো সরি বলতে হবেনা। তুমি বসো আমাদের সাথে।
-নাহ! আমি তো বসতে আসিনি। আরাফ চায় আমি যেনো আপনাদের সরি বলি। তা বলতেই এসেছি।
.
উপমার উদ্দেশ্যে ফিসফিসিয়ে আরাফ বললো-
এভাবে কেনো কথা বলছো তুমি?
.
দাঁড়িয়ে পড়লো মুনিরা। তার দিকে এগিয়ে এসে বললো-
আরাফ চায় বলে এসেছো। তার মানে তোমার মনে হচ্ছেনা তুমি যা করেছো ঠিক করোনি?
-হুম আরাফ চায় বলেই এসেছি। কারণ আমি আরাফকে ভালোবাসি।
.
আরাফের দিকে তাকিয়ে উপমা বললো-
কাল যাকে আমার সাথে রেস্টুরেন্ট এ যাকে দেখেছো? সে ছেলেটার নাম রোমান। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার সে। তুমি জানো এমন কতো ছেলে আমাকে বিয়ে করতে চায়?
-হু। তুমি মেয়েটাই যে সেরা।
-কিন্তু আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। কারণ আমি তোমাকে ভালোবাসি। তাই আমি আজ তোমার কথাতেই এখানে এসেছি।
-আমি জানি উপমা।
-আমি উনাদের সরি বলবো, তবে আমার একটা কথা তোমার রাখতে হবে।
.
মুনিরা কিছু বলতে চায়লে তাকে আটকালো সায়নী।
সায়নী বললো-
ওকে বলতে দে মুনিরা। কি বলতে চায় আমরাও শুনি।
.
উপমার দিকে তাকিয়ে আরাফ বললো-
আমি বুঝতে পারছিনা কি বলতে চাইছো তুমি! এভাবে ঘোলাটে না করে প্লিজ ক্লিয়ার করবা?
-অবশ্যই করবো। আমি চাই বিয়ের পর আমরা আলাদা হয়ে যাবো। আমি তোমাকে বিয়ে করবো কিন্তু এখানে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয় আরাফ।
কেনো জানো? তোমার মায়েদের দেখলেই আমার মনে পড়বে, উনাদের জন্যই তুমি আমার গায়ে হাত তুলেছো। উনাদের সমস্যার জন্যই বাবা তোমাকে মানতে নারাজ।
তাই…
.
উপমার কথা শুনে যেনো স্তব্ধ হয়ে গেলো সায়নী ও মুনিরা।
আরাফ মৃদু হেসে বললো-
তুমি এসব কি বলছো উপমা! আমি তাদের একমাত্র সন্তান। তাদের ফেলে আমি…
তুমি এসব মজা করছো, তাইনা?
-অবশ্যই না। আমিও আমার মা বাবার একমাত্র সন্তান। আমি যদি তাদের ফেলে তোমার কাছে আসতে পারি তুমি কেনো পারবেনা?
-উপমা তুমি মেয়ে। আর এটাই তো সমাজের নিয়ম, তাইনা?
.
তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে উপমা বললো-
-ওহ তাই! একটা বিয়ে করাই সমাজের নিয়ম। সেই জায়গায় তোমার দুই মা যে এক ঘরে থাকে! তুমি তাদের ছেলে হয়ে আমাকে নিয়ম অনিয়ম বোঝাচ্ছো?
.
এপর্যায়ে মুখ খুললো মুনিরা।
কর্কশ কন্ঠে সে বলে উঠলো-
দরকার নেই তো তোমার এতো কথা বলার। তোমার চেয়ে ভালো মেয়ে আমাদের ছেলের জন্য আনবো।
-কোনো ভালো পরিবারের মেয়ে এই ঘরের বউ হয়ে আসবেনা। কোন ভালো মেয়ে বিয়ে করবে আরাফ কে! হ্যাঁ যদি পটিয়ে পারে আরাফ তাহলেই করবে।
তাই আমি যে অফার টা দিচ্ছি মেনে নিন সবাই। আরাফ কে বুঝান। এতে করে সরিও ফ্রি পাবেন।
.
উপমার এসব কথা শুনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে আরাফ। নাক, কান রাগে লাল হয়ে আছে তার।
সায়নী বললো-
মা, আরাফ তোমাকে অনেক ভালোবাসে। আমাদেরও অনেক ভালোবাসে সে। কি করে আমাদের ফেলে থাকবে সে?
-সে আমি জানিনা। তবে দুই শ্বাশুড়ীর সংসারে আমি থাকতে পারবোনা। আরাফ আমাকে ভালোবাসলে এই শর্ত টা মানতেই হবে।
.
আরাফের দিকে তাকিয়ে উপমা বললো-
কি ব্যাপার আরাফ? উপমা চলে গেলে তোমার লাইফে কে আসবে? কে মানবে তোমাদের ফ্যামিলির এসব?
.
সায়নী বললো-
এ ছাড়া অন্য কোনো শর্ত কি দেয়া যায়না মা?
.
কিছুক্ষণ ভেবে উপমা বললো-
হু পেয়েছি! আমার হবু শ্বশুড় তার যেকোনো একজন স্ত্রী কে ডিভোর্স দিলেই কিন্তু হয়ে যায়। তাহলে আমাকে আর দুই শ্বাশুড়ী নিয়ে থাকতে হলোনা। আমার মা বাবাও নিশ্চিত থাকবে। কেউ নোংরা ফ্যামিলির বউ ও বলবেনা। সবাই বলবে, উপমা এসেই বাড়িটাকে নোংরামুক্ত করলো।
কিন্তু কাকে ছাড়বে হবু শ্বশুড়!
হ্যাঁ।, এখানেও কিন্তু ভালো সমাধান আছে। আরাফের আসল মা যিনি, তিনি থাকলেই হয়। বাকিজনের কি দরকার এই সংসারে! সো বলুন আন্টি? আরাফের আসল মা কে?
.
উপমার প্রশ্ন শুনে থমকে গেলো সায়নী।
মুনিরা রাগে গিজগিজ করতে করতে বললো-
তুমি যদি এই বাড়ির বউ হও, আমি নিজেই চলে যাবো এই বাড়ি ছেড়ে।
-সত্যি! যেতেই পারেন। তবে আরাফের আসল মা হলে যাবার দরকার নেই।
.
-অনেক হয়েছে!
.
আরাফের গলার স্বর শুনে উপমা বললো-
না হয়নি অনেক। তুমি আমাকে ভালোবাসলে এটা তোমার করতেই হবে। থাপ্পড় টা আমি ভুলিনি আরাফ। মায়েদের জন্য আমাকে মেরেছো এবার
আমার জন্য কি করতে পারো তুমি দেখিয়ে দাও। নাহলে কোন ভরসায় আমি থাকবো তোমার কাছে?
.
দাঁতে দাঁত চেপে আরাফ বললো-
থাকার কোনো দরকার নেই। তুমি আসতে পারো। আমার জীবনে এমন কোনো মেয়ে দরকার নেই, যে আমার ফ্যামিলি কে অসম্মান করে।
-এসব তুমি কি বলছো আরাফ! আমি আমার ভালোবাসার পরীক্ষা চাইছি। এটা অন্যায়?
-ন্যায় অন্যায় বিচার করার বোধশক্তি আছে তোমার!
আমি খারাপ কিছু করার আগেই তুমি এখান থেকে বেরিয়ে যাও উপমা। আমার মায়েদের সামনে কোনো মেয়ের অপমান আমি করতে পারিনা। নাহলে….
.
অবাক চোখে তাকিয়ে উপমা জিজ্ঞাসা করলো-
নাহলে কি? সেদিনের মতো থাপ্পড় দিতে একটা?
-একটা না। কয়েক টা দিতাম।
-এই তুমি আমাকে ভালোবাসো?
-এই আমি তোমাকে ভালোবেসেছি! ভাবতেই নিজের প্রতি ঘৃণা হচ্ছে আমার।
প্লিজ যাও তুমি এখান থেকে। নাহলে দাড়োয়ান ডাকতে বাধ্য হবো আমি।
.
উপমার চোখে পানি। তার ভালোবাসা হেরে গিয়েছে।
আরাফ হারিয়ে দিয়েছে।
কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে পড়লো সে খান বাড়ি থেকে।
.
এদিকে সায়নীর চোখ জোড়া ছলছল করছে।
উপমার কথা অনুযায়ী
আরাফের যে মা নয় তার কি থাকা দরকার এখানে!
আসলেই তো!
আরাফের দিকে তাকিয়ে সায়নী বললো-
উপমা কে ফিরিয়ে আন আরাফ। আমি তোর আব্বুকে ডিভোর্স দিয়ে দূরে কোথাও চলে যাবো।
.
সায়নীর কাছে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলো আরাফ।
কাঁদতে কাঁদতে বললো-
আমার জন্যই তোমাকে এসব শুনতে হয়েছে বড় আম্মু, আমার জন্য। কিন্তু তুমি ওর কথায় কেনো মনে কষ্ট পাচ্ছো? তুমি আমার জন্য কি তা আমি জানি। শুধু কি গর্ভধারণ করলেই মা হওয়া যায়?
-আমার জন্য যে উপমা চলে গেলো। এটা করলে হয়তো তোর ভালোবাসা ফিরে আসবে।
-চাইনা আমার এমন ভালোবাসা। যে আমার আম্মুকে সম্মান দিতে জানেনা। আসলে উপমা আমার ভালোবাসা না৷ সে আমার ভুল। ভুল মানুষকে মন দিয়েছিলাম আমি, ভুল মানুষকে।
.
সায়নী ও আরাফ একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে।
তাদের দিকে তাকিয়ে কাঁদছে মুনিরাও।
আরাফ জন্মের সময় সায়নী ডাক্তার কে বলেছিলো, দুজন থেকে যদি একজনকেই বাঁচানো যায় তবে যেনো রোগীকে বাঁচানো হয়।
অথচ মুনিরা তাকে বলেছিলো, বাচ্চাটিকে নিয়ে সুখে থাকতে। মুনিরা নিজে বাঁচতে চায়নি। সায়নীর কাছে নিজের বাচ্চা তুলে দিয়ে নিজে পরপারে চলে যেতেও রাজি ছিলো।
মুনিরা তা সায়নীকেও জানায়। তবুও সায়নী স্বার্থপর হয়নি।
দুই বোনের এই ত্যাগের জন্যই হয়তো সেদিন মীরাক্কেল হয়ে যায়।
বেঁচে যায় মুনিরা ও তার সন্তান দুজনেই।
তবে মুনিরা সুস্থ হয়েই তার সন্তান কে তুলে দেয় সায়নীর হাতে।
দুজনের সবটা জেনে আফরান খুব অবাকই হয়। এই দুইটা নারীই যে মহৎ তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সেদিনের পর থেকে দুজনের প্রতি ভালোবাসা ও সম্মান আরো যেনো বেড়ে যায় আফরানের।
আরাফ কে কখনো বুঝতে দেয়নি কেউ, কে তার আসল মা।
সমান ভালোবাসা পেয়েছে সে দুজনের কাছেই। তাই সে সায়নীকে বড় আম্মু ও মুনিরাকে ছোট আম্মু ডাকে। ভালোও বাসে দুজন কে প্রচুর।
আর তাদের নামে এসব কথা সে সহ্য করবে! এমনটা কখনো হবেনা।
আরাফ যে বুঝতে পেরেছে উপমা মেয়েটা তার ও তার পরিবারের জন্য ঠিক নয় এটাই অনেক।
সায়নীর মনেও উপমাকে নিয়ে আর সংকোচ থাকবেনা।
.
আপনমনে এসব ভেবে চোখের পানি মুছে মুখে হাসি ফুটালো মুনিরা।
.
.
.
-আচ্ছা আপু বাবুর নাম কি দেয়া যায়?
-তুই দে মুনিরা।
-কেনো! তুমি দাও। স দিয়ে দাও, তোমার সাথে মিলিয়ে।
-নাহ। ম দিয়ে দে, তোর সাথে মিলিয়ে।
-আরে তুমি দাও।
-আরে তুই দে!
-দাও না।
-দে না!
.
সায়নী ও মুনিরার কথপোকথন শুনে আফরান বলে উঠলো-
বাচ্চা শুধু তোমাদের! আমার নয় কি! নাম আমিই দিবো। ওর নাম হবে আরাফ খান।
.
নামটি শুনে সায়নী ও মুনিরা দুজনে একসাথেই বলে উঠলো-
চমৎকার!
.
আরাফ কে কোলে নিয়ে, সায়নীর কাছে এসে তার কোলে তুলে দিয়ে মুনিরা বললো-
তুমি জানোনা আপু তুমি আমার জন্য কি! বাইরের মানুষ যাই বলুক না কেনো, আমরা ঠিক থাকবো। আর এই যে আরাফ, ওকে মানুষের মতো মানুষ করার দায়িত্ব তোমার৷ সবাই যেনো দেখে বলে, এই যে আরাফ একদম সায়নীর মতো হয়েছে।
.
মুনিরার কথা শুনে সায়নী মুচকি হেসে বললো-
আরাফ একদম তার বাবা ও মায়েদের মতো হয়েছে।
.
আগের স্মৃতি মনে করে ডুকরে কেঁদে উঠলো সায়নী।
সে কখনো আরাফ কে সৎ ছেলে মনে করেনি। আরাফও তাকে সৎ মা ভাবেনি। তাহলে বাইরের মানুষের কি অসুবিধে!
বারবার কেনো আরাফের আসল মা কে, এটাই তারা জানতে চায়।
কেনো!
.
বেশকিছুক্ষণ সময় অতিবাহিত হয়ে যায়। তবুও সায়নীর মনের অস্থিরতা কাটেনি।
মুনিরা তার রুমে এসে বললো-
ওই বেয়াদব মেয়ের কথায় কষ্ট পাবার কি আছে বলো তো আপু?
-আমি কষ্ট পাচ্ছিনা।
-তুমি পাচ্ছো। দেখেছো ওই মেয়ের আসল রূপ? এখনো বলবে ওই মেয়ের পক্ষে তুমি?
-আমি আরাফের পক্ষে। ওই মেয়ের না।
-আচ্ছা! আরাফ যদি এখনো ওই মেয়েকে আনতে চায় তবে?
-তাহলেও আমি আরাফের পক্ষে। তার জন্য যদি আমাকে চলে যেতে হয় রাজি আছি।
.
সায়নীকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে মুনিরা বললো-
তুমি এতো ভালো কেনো আপু!
.
.
.
ভেবেছিলো আজ উপমা তার আম্মুদের সরি বলবে।
অথচ কি হয়ে গেলো!
আজ মেহেনুবার বলা কথাটি বড্ড মনে পড়ছে আরাফের।
ভুল মানুষকে ভালোবাসা আসলেই অনুচিত।
পকেট থেকে মোবাইল বের করে উপমার নাম্বার ব্লক দিলো আরাফ।
ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে বিড়বিড় করে বললো সে-
আজ তুমি সত্যিই আমার মন থেকে উঠে গেলে উপমা। নিমিষেই মনের গহীনে থাকা ভালোবাসা হারিয়ে গেলো আমার। তুমি সেই উপমা নও, যাকে আমি চেয়েছিলাম। সেই উপমা নও তুমি, যাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলাম।
.
.
.
সন্ধ্যে ৬টাই মিশিকারা ফিরে আসলো খান বাড়িতে।
যে যার যার রুমে চলে গেলে সায়নীর উদ্দেশ্যে মিশিকা জিজ্ঞাসা করলো-
আরাফ কে জিজ্ঞেস করেছিস?
সে এই বিয়েতে রাজি কিনা?
-না মানে…
.
-আমি রাজি মেহেনুবা কে বিয়ে করতে।
.
.
পেছন থেকে আরাফের মুখে কথাটি শুনে সায়নী চমকে গেলেও মুখে হাসি ফুটে মিশিকা ও মুনিরার।
মিশিকা ও মুনিরা খুশি বিনিময় করলেও ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেললো সায়নী।
আরাফের মনে যে তুফান চলছে এটা তার অজানা নয়।
উপমা একদিন পস্তাবে। নিজের ভুল সে বুঝবে। সেদিন হয়তো অনেকটা দেরী হয়ে যাবে। কিন্তু আরাফও সেদিন পারবে তো, নিজেকে উপমার কাছ থেকে দূরে রাখতে!
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here