বৈধ সম্পর্ক সিজন ২ পর্ব ১৯

#বৈধ_সম্পর্ক
#সিজন_২
#পর্ব_১৯
#Saji_Afroz
.
.
.
আরাফের সামনে বসে আছে রুমানা।
ভ্রু জোড়া কুচকে সে জিজ্ঞাসা করলো-
সত্যি তুই মেহেনুবা আপুকে বিয়ে করবি?
.
আরাফ জবাব দিলো-
হু।
-জেদের বসে করছিস না তো ভাইয়া?
-তুই জানিস না, উপমা আমাকে কি কি বলেছে। আমি নাকি কোনো ভালো ফ্যামিলির মেয়ে বিয়ে করতে পারবো না। মেহেনুবা কে বিয়ে করে দেখিয়ে দিবো আমি। সবার চিন্তা ধারা ওর মতো নোংরা নয়।
-তাহলে তুই জেদের বসেই বিয়েটা করতে রাজি হয়েছিস।
-এটা কে যদি জেদ বলে তাহলে জেদই।
-পরে যদি ওই উপমা ভুল বুঝে ফিরে আসে?
-আসবেনা।
-যদি আসে?
.
চুপ হয়ে গেলো আরাফ।
তার নিশ্চুপ মুখের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে রুমানা বললো-
জেদের বসে মেহেনুবা আপুর লাইফ টা খারাপ করিস না।
.
.
.
-সত্যি বলছিস! তুই রোমান কে বিয়ে করবি?
.
রুপা আক্তারের প্রশ্নে উপমা জবাব দিলো-
হ্যাঁ বললাম তো! যত দ্রুত সম্ভব বিয়ের আয়োজন করো।
-তুই আমাদের একমাত্র মেয়ে, ধুমধামে ভাবেই বিয়ে দিবো তোর।
-সেটা কি দ্রুত করা যায়না?
-আমি রোমানের পরিবারের সাথে কথা বলবো।
-তারা যদি না পারে অন্য পাত্র দেখো। সাত দিনের ভেতর বিয়ে করবো আমি।
.
রুপা আক্তার বুঝতে পারলেন, উপমার মনের অবস্থা ভালোনা।
এই সুযোগ টা কাজে লাগিয়ে তার বিয়েটা দিয়ে দিলেই যেনো বাঁচে তারা।
কিন্তু রোমানের পরিবার রাজি হবে তো এতো তাড়াতাড়ি বিয়ের অনুষ্ঠান করতে?
.
.
.
রুমানার কথা ভাবাচ্ছে আরাফ কে।
সে কি আসলেই মেহেনুবা কে ভালো রাখতে পারবে?
মেহেনুবা ভালো কাউকে ডিসার্ব করে। তবে সেও কি তার মায়েদের ভালো রাখতে পারবে?
নাকি মিশিকা অর্থ্যাৎ তার মায়ের কথায় বিয়েটা করতে রাজি হয়েছে?
এমনটা হলে মেহেনুবার সাথে খুব দ্রুত কথা বলা উচিত।
তারও যদি উপমার মতো চিন্তাধারা থাকে!
নাহ, রিস্ক নিতে চায়না আরাফ।
মেহেনুবার সাথে কথা বলার জন্য খুঁজতে লাগলো তাকে।
.
.
.
-আমার ছেলেটা বড্ড মা পাগল, এতে তোমার আপত্তি নেইতো?
.
মুনিরার কথা শুনে মুচকি হেসে মেহেনুবা বললো-
অবশ্যই না।
-যে ছেলে মায়েদের এতো ভালোবাসে। সে নিশ্চয় তার স্ত্রী কেও ভালোবাসবে। জানো নিশ্চয়?
-জ্বী।
.
মেহেনুবার উদ্দেশ্যে সায়নী বললো-
তুমি কি এই বিয়েতে রাজি আছো? নাকি মিশিকার কথা তেই….
-এমন কিছু নয় আন্টি। আরাফ যদি চায় আমিও রাজি আছি।
-আমাদের কোনো কিছু নিয়ে তোমার কোনো অভিযোগ নেই তো?
-কি যে বলেন না আন্টি! আমি দুইটা মায়ের আদর পাবো যেমনটা আরাফ পেয়েছে। আর আপনাদের যে মেয়ের অনেক শখ আমি শুনেছি। আপনাদের কাছে আমি ভালোই থাকবো।
-আর আরাফ? না মানে কেমন লাগে তাকে?
.
সায়নীর উদ্দেশ্যে মুনিরা বললো-
ভালো না লাগলে নিশ্চয় রাজি হতো না। দেখো কি প্রশ্ন করেছো, লজ্জায় মেয়েটার মুখ লাল হয়ে আছে।
-আরে আমরা আধুনিক হবু শ্বাশুড়ী। এসব প্রশ্ন করতেই পারি। তাছাড়া আমরা বউ আনছিনা। মেয়ে আনছি, মেয়ে।
-হয়েছে, এবার চুল গুলো আঁচড়ে দাও আমার।
-আচ্ছা আয়। তারপর আমার গুলোও দিবি।
.
মেহেনুবা তাদের উদ্দেশ্যে বললো-
আমি দিই?
.
মুনিরা বললো-
-দুজনকেই?
-হুম। প্রথমে বড় আন্টি তারপর ছোট আন্টি।
-ভালো বুদ্ধি। আমরাও দেখি। হবু মেয়ে কেমন চুল আঁচড়ে দিতে পারে।
.
কথাটি বলেই হেসে উঠলো মুনিরা। তার সাথে যোগ দিলো সায়নী ও মেহেনুবা। আর দূর থেকে তাদের হাসিমাখা মুখ দেখে হেসে চলেছে আরাফ।
এতক্ষণ আড়াল থেকে দাঁড়িয়ে সবটা শুনেছে সে।
এমন দৃশ্য দেখে তার মনটা জুড়ে গেলো।
তার ভালোবাসা পূর্ণতা পায়নি, মায়েদের পছন্দই না হোক পূর্ণতা পাক!
.
.
.
-দুলাভাই?
.
তাসুর ডাকে দাঁড়িয়ে পড়লো আরাফ।
তাসুর দিকে তাকিয়ে বললো-
দুলাভাই?
-হু।
-হয়নি এখনো।
-হয়ে যাবা। আর কয়দিন! যাক, খুশি তো এই বিয়েতে?
-হঠাৎ এই প্রশ্ন?
-জানতে চাইলাম আর কি।
-তুমি খুশি না?
-আমার ক্রাশ আমার দুলাভাই হতে যাচ্ছে। খুশি তো হবোই।
-আমি ক্রাশ তোমার?
-হু।
-কখন?
-অনেক আগে থেকে।
-তার মানে মেহেনুবার ও?
-নাহ! আপু তো তোমাকে দুই চোখে সহ্য করতে পারতো না।
-কি!
-হুম, এমনটাই দেখাতো সে। তবে এখন আমার মনে হচ্ছে আগে থেকেই সে তোমাকে পছন্দ করতো।
-কেনো মনে হচ্ছে?
-নাহলে এতো সহজে বিয়েতে রাজি হতো নাকি! তুমিই বলো?
-সেতো আতিকের সাথেও হয়েছিলো।
-হয়নি। আম্মুরা অনেক বুঝানোর পরে হয়েছে। সায়নী আন্টি আতিক কে পছন্দ করেছে এমনটা বলার পরে হয়েছে। আমার মনেহয়, সায়নী আন্টি তোমার কথা বলেনি তো তাই অভিমান করে আপু রাজি হয়ে গিয়েছিলো।
-তুমি ওর সৎ বোন?
-মানে কি?
-তাহলে কিছুই সিউর করে জানো না কেনো?
-আপু কেমন চাপা স্বভাবের জানোই তো।
-হু।
-আচ্ছা, তুমি কি আপুকে আগে থেকে পছন্দ করতে?
-নাহ।
-তাহলে রাজি কেনো হয়েছো?
-প্রেম, ভালোবাসা, আগে থেকে পছন্দ এসব ছাড়া বুঝি বিয়ে হয়না?
-এই যুগে কই হয়!
-ওহ! তার মানে তুমি কাউকে ভালোবাসো। বলো বলো?
-এই না! এমন কিছু না।
-তাহলে এতো কনফিডেন্স সহকারে এসব বলছো যে?
-আমি বাসিনা তবে বাসবো। ভাগ্যিস তোমাদের বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে। নাহলে তোমার পাশে থাকতে থাকতে তোমার প্রেমেই পড়ে যেতাম।
.
আরাফ শান্ত স্বরে বললো-
আমার যেকোনো একজন হলেই হবে। তবে যেনো তার মধ্যে আমার ফ্যামিলির জন্য রেসপেক্ট টুকু থাকে।
.
.
.
মা রা তো পরশুই চলে আসবে তাইনা?
.
মিশিকার প্রশ্নে জবাব দিলো পাবেল-
হুম।
-তাড়াতাড়ি বিয়ের আয়োজন টা সেরে ফেলবো। তুমি খুশি তো?
-কেনো হবোনা! আমি তো আরাফ কে মেয়ের জামাই হিসেবে দেখতে চেয়েছি।
-হু। তবে মেহেনুবা যে এতো সহজে রাজী হবে আমি ভাবিনি।
-ডাক্তার হতে হবে কথা নেই। হ্যান্ডসামই যথেষ্ট।
আরাফ ছেলেটা এমনি। মেহেনুবার জায়গায় অন্য কেউ হলেও রাজি হতো।
এই যে যেমন তুমি। নিজে ডাক্তার হয়ে আমার প্রেমে পাগল ছিলে। কেনো? আমি হ্যান্ডসাম ছিলাম বলে।
-হু তখন এসেছিলাম বলো ভাগ্যিস। নাহলে তো তুমি সায়নীর শোকে ছ্যাকা খেয়ে বেকা হয়ে যেতে।
-মন্দ বলোনি।
.
মুখটা প্যাচার মতো করে আছে মিশিকা।
তার মুখের দিকে তাকিয়ে পাবেল হেসে বললো-
মেয়ের বিয়ে দিতে যাচ্ছো, পাগমালি কমলো না তোমার।
.
.
.
নিজের রুমের বারান্দায় বসে আছে আরাফ।
মেহেনুবা কে নিয়ে তার মনে কোনো সন্দেহ আর নেই। এই মেয়ে নিশ্চিত তার পরিবার কে ভালো রাখবে।
তবে সে নিজে ভালো থাকতে পারবে তো উপমাকে ছাড়া!
.
চোখ জোড়া বন্ধ করে উপমার কথা মনে করতে চায়লো আরাফ।
চোখ বন্ধ করতেই ভেসে আসছে সেই দৃশ্য ও কানে শুনছে উপমার সেই কথা-
কোন ভালো ফ্যামিলির মেয়ে তোমাকে বিয়ে করবে!
.
চোখ জোড়া খুলে ফেললো আরাফ।
আগে চোখ বন্ধ করলেই উপমার সাথে কাটানো সেই মুহুর্ত ভেসে আসতো। উপমা দূরে থাকলেও উপলব্ধি করতে পারতো তাকে। আর আজ….!
একবার নয়, কয়েকবার সুযোগ দিয়েছে সে তার ভালোবাসা কে।
কিন্তু ফলাফল শূন্য।
মানুষ নাহয় একবার ভুল করে।
বারবার যেটা করা হয় সেটা ভুল নয়।
আর উপমা যা করেছে এর কোনো ক্ষমা হয়না।
তার বাসায় এসে সে জানতে চেয়েছে কে তার আসল মা!
আরাফ কি কখনো ভেবেছিলো?
তার ভালোবাসার মানুষটাই তাকে এভাবে আঘাত করবে?
বারবার আঘাত করবে!
ভালোবাসা মানেই কি শুধু দুটো মানুষের মনের বা শারীরিক মিলন?
বিশ্বাস, ভরসা বলতে কিছু নেই?
নাকি উপমার কাছে নেই?
উফফ… অসহ্য যন্ত্রনা অনুভব করছে আরাফ।
মাথাটা তার প্রচন্ড ব্যাথা করছে।
কি ভেবেছিলো আর কি হয়েছে!
এখন কি করার উচিত আরাফের?
ব্যর্থ প্রেমিকের মতো নিজেকে গুটিয়ে নেয়া?
নাকি এক কোণায় বসে বসে সিগারেটের ধোঁয়া উড়ানো?
.
-আমার মনেহয় এখন এক কাপ চা প্রয়োজন তোমার?
.
মেহেনুবার কথায় তার দিকে পেছনে ফিরে তাকালো আরাফ।
চায়ের কাপ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে।
আরাফ তার হাত থেকে কাপ টা নিয়ে চুমুক দিলো চায়ে।
বেশ ভালোই লাগছে তার।
কোনো কথা না বলে চা টা শেষ করলো সে।
বারান্দায় থাকা চেয়ারের কাপ টা রেখে মেহেনুবার উদ্দেশ্যে বললো-
কি করে বুঝলে আমার এখন চা দরকার?
-তোমার উপর দিয়ে যা যাচ্ছে তাতে করে না বোঝার কারণ নেই।
-আজ উপমা এসেছিলো বাসায়। জানো?
-না তো।
-আবারো অপমান করেছে সে।
-তাই বুঝি রাজি হলে বিয়েতে?
.
নিশ্চুপ হয়ে গেলো আরাফ।
কিন্তু মেহেনুবা মৃদু হেসে বললো-
জানো আরাফ? আমি ভাগ্য বিশ্বাসী। তাই আতিকের সাথেও বিয়েতে রাজি হয়ে গিয়েছিলাম। ভাগ্যে থাকলে সেই আমার জীবনসঙ্গী হবে এমনটাই ভেবেছি। কিন্তু দেখো, বিয়েটা হতে হতেও ভেঙ্গে গেলো। এখন আমার সাথে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি আবার হতে পারে জেনেও তোমার সাথে বিয়েতে রাজি হয়েছি আমি।
-কেমন?
-এই যে উপমা ফিরে আসলে তুমি তার হয়ে যাবে।
-এমন টা আর হবেনা। সে শুধু আমাকে আঘাত করতেই ফিরবে।
-আর যদি ভালোবাসতে ফিরে?
.
চুপ হয়ে গেলো আরাফ।
এতো কিছুর পরেও উপমা ফিরলে কি করবে কেনো সে বলতে পারেনা! তার তো উচিত বলা, উপমা ফিরলেও আর কিছুই সম্ভব নয়। তবুও কেনো পারছেনা সে!
.
মেহেনুবা বললো-
ভাগ্য বিশ্বাস করি বলেই আমি রাজি হয়েছি। তবে তোমার মনের অবস্থাটা আমি পুরোপুরি না বুঝলেও বুঝছি। আমাকে যে তুমি উপমার জায়গা দিতে পারবেনা সেটা আমি জানি। কিন্তু ভাগ্য যদি আমাদের এক সূত্রে গেঁথে রাখে তাহলে কিছু করার নেই। ভালো না বাসো, তবুও রয়ে যাবো। কারণ…
.
মেহেনুবা থেমে গেলে আরাফ তাকে জিজ্ঞেস করলো-
কারণ?
.
-কারণ আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। তাই চেষ্টা করবো তোমাকে সুখে রাখতে। কষ্ট না দিতে। তোমাকে এভাবে দেখতে যে মোটেও ভালো লাগছেনা আমার।
তোমার খুশির জন্য সবটা করতে পারবো আমি।
ভাগ্য বিশ্বাসীর সাথে আজ আমি ভালোবাসায়ও বিশ্বাসী আরাফ!
.
কথাটি আপনমনে বললেও আরাফ কে বললো না মেহেনুবা।
আরাফের উদ্দেশ্যে সে শুধুই বললো-
কিছুনা। তবে বিয়ের আগ পর্যন্ত যদি তুমি ডিসিশন বদলাতে চাও বদলাতে পারো। আমি তোমার সাথে আছি।
-হুম।
.
মেহেনুবা চলে যেতে চায়লে আরাফ তার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়লো-
তুমি কি আমাকে ভালোবাসো?
.
আরাফের প্রশ্ন শুনে থমকে গেলো মেহেনুবা।
হঠাৎ এমন প্রশ্ন আরাফের!
সে কি কিছু আন্দাজ করতে পেরেছে!
যদি তাই হয়, সে হয়তো ভাববে নিজের ভালোবাসার জন্য আমি তাকে চাইছি। কিন্তু আসলেই তো এমন না। আমি যে আরাফ কে সুখে দেখতে চাই।
.
-কি হলো বলো মেহেনুবা?
ভালোবাসো আমাকে? নাহলে আমার সম্পর্কে সবটা জানার পরেও রাজি হয়েছো কেনো? শুধুই ভাগ্যের উপর বিশ্বাস করে?নাকি অন্য কিছু?
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here