#বৈধ_সম্পর্ক
#সিজন_২
#পর্ব_২৪ (শেষ_পর্ব)
#Saji_Afroz
.
.
.
সকাল সকাল চোখটা খুলতেই নিজেকে আফরানের বুকে আবিষ্কার করলো মুনিরা।
কাল রাতে প্রথম সে আর আফরান কাছাকাছি এসেছে।
আফরান তাকে স্ত্রীর অধিকার দিয়েছে।
নিজেকে ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে মুনিরার।
আফরানের ঘুম না ভাঙে মতো তার কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুইয়ে দিলো মুনিরা।
বিছানা ছেড়ে উঠতে চাইলে হাতের টান পড়ে আবারো আফরানের বুকে ফিরে আসলো সে।
আফরান জেগে আছে!
নিজের কর্মের জন্য লজ্জা পেলো মুনিরা।
আফরান বললো-
লজ্জা পেলে তোমাকে আরো ভালো লাগে মায়াবতী।
.
.
আফরান ও তার আগের সময়ের কথা মনে পড়তেই মুখে মৃদু হাসি ফুটলো মুনিরার।
সম্পর্ক সে তো এক আলাদা শক্তি।
নাহলে এতো সহজ ছিলোনা আফরানের ভালোবাসা পাওয়া।
ভুল করে সম্পর্কে জড়ালেও বৈধ সম্পর্কের জোরে সে আজও এই বাড়িতে আছে।
ঠিক এভাবে মেহেনুবাও আরাফের মনে জায়গা করে নিবে দৃঢ় বিশ্বাস তার।
.
.
.
মুনিরা উঠে এগিয়ে গেলো রান্নাঘরের দিকে।
রান্নাঘরে এসে সায়নী ও মেহেনুবাকে দেখে বললো-
শুভ সকাল। কিন্তু মেহেনুবা তুমি নতুন বউ হয়ে এতো সকালে কেনো উঠো! কাজ করার সময় অনেক আছে। আগে তো একটু এনজয় করো বিবাহিত লাইফ টা।
-না ছোট আম্মু সমস্যা নেই। আমার ভালোই লাগছে করতে।
.
মুনিরা ভেতরে এসে বক্স থেকে ময়দা ঢালছে গামলায়।
মেহেনুবা বললো-
একটা কথা জিজ্ঞাসা করি?
.
সায়নী বললো-
হুম করো।
-বাবা একা থাকেন কেনো?
-এমন সে আগেও করতো। ওই রুমেই থাকা শুরু করে দিতো।
-কিন্তু কেনো?
-হীনমন্যতা কাজ করে আফরানের মনে। সে ভাবে আমাদের সাথে অন্যায় করছে সে।
-আমি আম্মুর কাছে আপনাদের পুরো কাহিনী শুনেছি বড় আম্মু।
আপনাদের সাথে যা ঘটেছে তাতে কিন্তু কারো দোষ ছিলোনা। পরিস্তিতির শিকার ছিলেন আপনারা। কিন্তু জানেন আম্মু?
এমন অনেক পরিবার আছে যেখানে একের অধিক বউ আছে। তাদের স্বামী প্রথম বউ কে ঠকিয়ে বিয়ে করে অন্যজনকে। একাধিক বিয়ে করার ফলে সমান অধিকার দিতে পারেনা। একজন কে অধিকার দিয়ে অপরজনকে বঞ্চিত করে। শুধুমাত্র ভোগের জন্যই আরেকটা বিয়ে করে।
আব্বু কিন্তু এমনটা করেন নি।
পরিস্থিতির চাপে পড়ে ছোট আম্মুকে বিয়েটা করেছিলেন। হ্যাঁ মানলাম সবারই কিছুনা কিছু ভুল ছিলো। কিন্তু আপনাদের মাঝে যে বন্ধন টা আছে অন্য কোন দুই সতীনের পরিবারে সে বন্ধন টা নেই। কেনো জানেন? তাদের স্বামী ঠিক নেই। ঠকিয়ে বিয়ে করা, দায়িত্ব পালন না করা, দুই সতীনের মাঝে হিংসাপরায়ণতা এসবের জন্যই ভালো থাকতে পারেনা তারা।
আব্বু সেইসব লোকের মধ্যে পড়েনা যারা ভোগের জন্য আরেকটা বিয়ে করেছে। আরেকটা বিয়ের পরেও বড় আম্মুকে ভুলে যাননি তিনি।
আবার ছোট আম্মুর সাথেও অন্যায় তিনি করেন নি।
ভালোবাসা টা এতো সহজ না। তাই একটু সময় লেগেছে ছোট আম্মুকে মনে জায়গা দিতে।
তাহলে কেনো তিনি হীনমন্যতায় ভুগবেন!
.
মেহেনুবার কথা শুনে একে অন্যের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে সায়নী ও মুনিরা।
.
মেহেনুবা আরো বললো-
কাল যদি আরাফ উপমার সাথে থাকতে চাইতো আমি চলে যেতাম। আবার যদি আরাফ আমাকে না জানিয়ে উপমাকে বিয়ে করে আনতো আমি হয়তো যেতাম না।
জেনে শুনে হয়তো আমি আরাফের ভাগ কাউকে দিতে পারতাম না। কিন্তু পরিস্থিতির শিকার হলে ঠিকই দিতাম। তবে তোমাদের মতো মিলেমিশে উপমার সাথে কখনোই আমি থাকতে পারতাম না।
.
মেহেনুবার মাথায় হাত বুলিয়ে সায়নী বললো-
কতো কিছু বুঝো তুমি!
আমরা অনেক খুশি তোমার মতো একটা মেয়ে পেয়ে।
.
মুনিরাও মৃদু হেসে বললো-
আসলেই।
.
.
.
সকাল সকাল দরজার কড়া নাড়ার শব্দ পেয়ে দরজা খুলে সায়নীর দেখা পেলো আফরান।
দুজনে পাশাপাশি বসলো বিছানার উপরে।
সায়নী বললো-
আমাদের সাথে যা হয়েছে আরাফের সাথে হয়নি বলে আমি অনেক খুশি। এক মুহুর্তের জন্য মনে হয়েছিলো আরাফ হয়তো উপনার জন্য কষ্ট পাবে। তাকে আবার ফিরে পেতে চাইবে। কিন্তু এমনটা হয়নি।
জানো মেহেনুবা কি বলেছে?
নিজের ভালোবাসার ভাগ সে দিতে পারবেনা জেনে শুনে।
-কিন্তু তুমি দিয়েছিলে।
-জেনে শুনে? না। পরিস্থিতি টাই এমন ছিলো। আমি তো ভেবেছিলাম আমি মরেই যাবো…..
-সায়নী!
-তারপরের সব কিছু তো অজানা নয়। আসলে আমাদের নিয়তিই হয়তো এমন ছিলো। ভুলে হোক, মায়ায় পড়ে হোক, সম্পর্কের টানে হোক আমরা তিনজন এক সুতোয় গেঁথে গিয়েছি।
-হুম।
-কিন্তু তুমি এখন যা করছো আমাদের সাথে তা কিন্তু অন্যায়।
-আমি কি করলাম?
-এই যে নিজে বাবার রুমে থাকো। অথচ তোমার দুটো বউ আছে।
-সবটা আমার জন্য হয়েছে। আমিই তো তোমাদের দুজনের জীবনটা এতোটা জটিল করে দিলাম।
-মানিয়ে নিয়েছিলাম আমরা। তুমি বুড়ো বয়সে এসে একা থাকছো কেনো! আজব!
আগের মতো থাকবা। ১৫দিন ১৫দিন করে।
-হুম।
-আজ মেহেনুবা কি বলেছে শুনবে?
-কি?
-আমরা ছাড়াও আরো পরিবার আছে যেখানে দুটো বউ আছে। অনেক পুরুষ প্রথম বউ কে ঠকিয়ে আরো বিয়ে করে শুধুমাত্র ভোগের জন্য। একজনকেই প্রাধান্য দেয় অপরজনকে বঞ্চিত করে।
আসলেই তো! আমাদের সাথে এমন কিছু কিন্তু ঘটেনি। আমরা সবাই পরিস্থিতির শিকার ছিলাম। মুনিরা তোমার বউ হওয়া স্বত্তেও তার প্রতি তুমি আসক্ত ছিলেনা। আস্তেধীরে সেও তোমার মনে জায়গা করে নিয়েছে। আর মুনিরার কথা কি বলবো!
সে কোনোদিন চেষ্টা করেনি তোমার আমার মাঝে ফাটল সৃষ্টি করতে। যা হয়েছে সবটাই নিজেদেরই কিছুনা কিছু ভুল ছিলো। কিন্তু তুমি আদর্শ স্বামীর দায়িত্ব পালন করেছো আফরান। কেনো তুমি হীনমন্যতায় থাকবে!
.
চোখ জোড়া ছলছল করছে আফরানের।
সায়নীর হাত ধরে বললো-
তুমি যদি ঠিক না থাকতে সবটা এতোটা সহজ হতোনা সায়নী।
.
.
.
আরাফ এখনো শুয়ে আছে।
তার পাশে এসে বসলো মেহেনুবা।
হালকা ঝুঁকে সে আরাফের কপালে নিজের ঠোঁটের ছোয়া বসিয়ে দিতেই চোখ জোড়া খুলে ফেললো আরাফ।
অবাক হলোনা মেহেনুবা।
আরাফের নাকের সাথে নাক লাগিয়ে বললো-
ভালোবাসার প্রথম স্পর্শ কপালে দিলাম তোমার। বলেছিলে না তোমার মনে জায়গা করে নিতে?
আজ থেকে মিশন শুরু।
.
মৃদু হেসে আরাফ বললো-
আমি জেগে ছিলাম কি করে বুঝলে?
-চোখ দুটো বন্ধ থাকলেও মিটমিট করছিলো তাই।
.
উঠে বসলো মেহেনুবা।
আরাফও বসলো।
তার উদ্দেশ্যে বললো-
তুমি আমার আম্মু আব্বুর সবটা কি করে এতো সহজে মেনে নিলে?
-আমি ছোট থেকেই আম্মুর কাছে এই কাহিনী শুনতাম।
আব্বু বড় আম্মুকে আগেই গোপনে বিয়ে করে রেখেছিলেন।
কেননা দাদাভাই বড় আম্মুর সাথে আমার আব্বুর বিয়ে দিতে যাচ্ছিলেন।
বিয়ে করার পর দাদাভাইকে জানাতে চায়লেও তারা নানা কারণে পারেনি।
কিছুদিন পর আব্বু গ্রামে গিয়ে দাদাভাইয়ার কথা রাখতে গিয়ে অসহায় ছোট আম্মুকে বিয়ে করে। পরে বিভিন্ন কারণে তাকে বড় আম্মুর কথা জানাতে পারেনি।
কিছুদিন পর ছোট আম্মু নিজেই সবটা জানতে পারে।
প্রথমে না যেতে চাইলেও পরে চলে যেতে চান।
কেননা তার জন্য বড় আম্মুর বড় ধরনের এক্সিডেন্ট হতে পারতো। তবে সেই এক্সিডেন্টের হাত থেকে তাকে ছোট আম্মুই বাঁচিয়েছে।
এই ঘটনার পরে ছোট আম্মুর জন্য বড় আম্মুর মনে ভালোবাসা জন্ম নেয়।
এর পরেই বড় আম্মুর অসুখের খবর পেলে বড় আম্মু ভাবে সে হয়তো মারা যাবে। তাই ছোট আম্মুকে যেতে দেন না তিনি। কারণ ছোট আম্মুর চোখে যে ভালোবাসাটা তিনি দেখেছেন আব্বুর প্রতি, তার অবর্তমানে যে তিনিই আব্বুকে ভালো রাখতে পারবেন বুঝেছেন তিনি।
তবে আল্লাহ এর রহমতে বড় আম্মু সুস্থ হয়ে যায়।
কথানুযায়ী দুজন বোনের মতো থাকলেও আব্বু বড় আম্মুকেই ভালো বাসতো।
বড় আম্মু প্রেগন্যান্ট হয়।
ঠিক সেই সময় ছোট আম্মুর বাবা মারা যান।
বাবার মরদেহ দেখতে গিয়েও গ্রামের মানুষের কাছে অপমানিত হয়েছিলো ছোট আম্মু। কেননা সবাই তাকে অলক্ষী ভাবতো।
আব্বু সেই সময় তার পাশে ছিলো। ছোট আম্মুর অনেক খেয়াল রাখতো। এভাবে একসাথে থাকতে থাকতে তার প্রতিও ভালোবাসা জন্ম নেয় আব্বুর মনে। কেনোই বা নিবেনা! ছোট আম্মুও তার বৈধ স্ত্রী।
কিন্তু তখন বড় আম্মুর মনে ছোট আম্মুকে নিয়ে সংশয় আসে।
ছোট আম্মু তা বুঝতে পেরে চলে যেতে চায়। আর তখনি বড় আম্মুর একটা দূর্ঘটনায় পেটের বাচ্চা নষ্ট হয়ে যায়।
বড় আম্মু সুস্থ হয়ে নিজের ভুল বুঝতে পারে৷ ছোট আম্মুকে যেতে দেয়না।
দুজনে মিলেমিশে থাকার চেষ্টায় ছিলো।
ছোট আম্মু যখন প্রেগন্যান্ট হয় তার মনেও সংশয় আসে।
কিন্তু একটু পরেই তার পেইন উঠলে ডাক্তারের কাছে নেয়া হয় তাকে। ডাক্তার জানায় যেকোনো একজন বাঁচবে। পরবর্তীতে রোগী আর মা হতে পারবেনা।
বড় আম্মু দুজনের কথা বললে ডাক্তার জোর দিয়ে বললেন, যেকোনো একজনের নাম বলতে। তখন আব্বুও কিন্তু ছিলোনা। তবুও বড় আম্মু ডাক্তার কে জানায়, ছোট আম্মুকে যেনো বাঁচানো হয়।
কথাটি শুনে ছোট আম্মুর মনের সংশয়ও চলে যায়।
বড় আম্মুর জায়গায় অন্য সতীন থাকলে হয়তো বাচ্চাকে বাঁচাতে বলতো!
আল্লাহ এর কি অশেষ রহমত!
তুমি সুস্থভাবে জন্ম নিলে।
.
নিশ্চুপ হয়ে আছে আরাফ।
মেহেনুবা বললো-
আমি এসব সবটা জানি আরাফ। এখানে কার দোষ বেশি কম এসব ধরার উপায় নেই।
সবটাই পরিস্থিতির শিকার আর নিয়তির খেলা। তারা নিজেরা মানিয়ে নিয়েছে আমার কেনো আপত্তি থাকবে! হুম থাকতো, যদি আব্বু ভোগের জন্য আরেকটা বিয়ে করতো বা একজনকে অধিকার দিয়ে আরেকজন কে বঞ্চিত করতো।
অন্য কোনো দুই সতীনের পরিবারের মতোন না তোমাদের পরিবার টা। যারা সবটা জানবেনা তারাই এটা নিয়ে কথা বলবে।
.
ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে আরাফ বললো-
উপমাও জানতো সবটা। শুধু আমি কার ছেলে এটা কখনো বলিনি। কারণ আমার কাছে দুজনি সমান।
-সবার মন মানসিকতা এক নয় আরাফ। দুই বিয়ে এটা সহজে কেউ মেনে নিতে পারেনা। মানা উচিতও না। কিন্তু মা বাবার জন্য ছেলে মেয়েদের ভুগতে হবে, কথা শুনতে হবে এমনটাও মানা যায়না।
উপমা যা করেছে ভুল করেছে। তোমার পরিবার অন্য পরিবারের মতো নয়। যারা ভোগ বা স্বার্থের জন্য একাধিক বিয়ে লিপ্ত হয়।
আর হলেও এতে পরের প্রজন্মের দোষটা কি! তারা কেনো মা বাবাদের কর্মের জন্য কথা শুনতে থাকবে! আর বাইরের মানুষও কেনো শুনাবে!
-সবাই যদি তোমার মতো বুঝতো তাহলে তো উপমা কে হারাতে হতোনা আমার।
-হুম।
.
মেহেনুবার হাতটা ধরে আরাফ বললো-
তুমি সব জানো এতে আমি অবাক হইনি। কিসে হয়েছি জানো?
-কিসে?
-এতো তাড়াতাড়ি তুমি সবাইকে আপন করে নিলে। আমার আব্বুকে আব্বু, আম্মুদেরও বড় আম্মু, ছোট আম্মু ডাকছো।
.
মৃদু হেসে মেহেনুবা বললো-
তোমাকেও আপন করে নিয়েছি।
-আসবো?
.
মুনিরার গলার শব্দ শুনতে পেয়ে মেহেনুবার হাত ছেড়ে আরাফ বললো-
হুম ছোট আম্মু আসো।
-তোর নানী তো অসুস্থ শরীর নিয়ে এখানে আসতে পারেনি তোর বিয়েতে। আজ বউ ভাত ও হয়ে যাবে। তারপর তো সবাই ফ্রি।
-হুম।
-ভাবছিলাম গ্রামে যাবো সকলে মিলে।
-হ্যাঁ আম্মু। দাদা,দাদী,নানা কারো সঙ্গই তো পেলাম না। একমাত্র নানি আছে, সেও অসুস্থের জন্য আসতে পারলোনা। নতুন বউ নিয়ে আমরা যাবো তার কাছে।
-ঠিক আছে এখন খেতে আয় তোরা।
.
.
.
কাল রাত থেকে কিছু খায়নি উপমা।
রুপা আক্তার খাবার নিয়ে তার পাশে বসে বললেন-
নিজের শরীরকে কষ্ট দিয়ে লাভ কি?
.
উপমা শান্ত স্বরে বললো-
আরাফের সাথে আমার বিয়েটা হলে ভালোই থাকতাম আমরা। ওর দুই মাও আমাকে ভালোবাসা দিতো। এটা আগে কেনো বুঝিনি আমি! ওইদিন আমি এমন না করলে আরাফ আমার গায়ে হাত তুলতো না। নিজের দোষ না দেখে শুধু এক তরফাই ভেবে গেলাম! আজ আমি মেহেনুবার জন্য ওদের সকলের টান দেখে বুঝেছি আম্মু। তারা আমাকে কষ্ট দিতোনা। আর আরাফও দুটো বিয়ে করতো না। করার হলে সে তো আমাকে করতেই পারতো। আমার প্রস্তাবে রাজি হতো। তাইনা?
.
নিশ্চুপ হয়ে আছেন রুপা আক্তার।
তার কোলে মাথা রেখে উপমা বললো-
আমি আমার ভুলটা এখন বুঝতে পারছি আরাফ কে হারিয়ে। কিন্তু এখন আর কিছু করার নেই। অনেকটা দেরী হয়ে গেলো। আরাফের মায়ের কথায় ফললো।
যেদিন আমি আমার ভুল বুঝতে পারবো, দেরী হয়ে যাবে সেদিন!
.
আড়াল থেকে মেয়ের অবস্থা দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন ফখরুল মোবারক।
খুব তাড়াতাড়ি মেয়েটার বিয়ে দেয়া প্রয়োজন। তাহলে হয়তো এসব থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে সে।
.
.
.
৩বছর পর….
আজ আরাফ ও মেহেনুবার মেয়ে আরনুবার ১ম জন্মদিন।
আফরান তার নাতনীর জন্মদিন উপলক্ষে বিশাল আয়োজন করেছে।
এই তিন বছরে অনেক কিছুই বদলে গিয়েছে।
মিশিকারা এখন দেশে থাকে।
তাসুর বিয়ে হয়েছে বাংলাদেশেরই একটা ছেলের সাথে।
আরাফ তো মেহেনুবা বলতেই পাগল। নিজের ভালোবাসা ও সম্পর্কের শক্তি দিয়ে আরাফ কে পুরোপুরি নিজের করে নিয়েছে মেহেনুবা।
রুমানা ও রাকিবেরও সন্তান আচ্ছে।
তবে মুনিরার মাও আগের থেকে সুস্থ।
তার কথা হলো-
আরাফের ছেলে মেয়ের বিয়ে না দেখে এই পৃথিবী ত্যাগ করবেন না তিনি। যদিও শরীরটা অনেক দূর্বল।
আজ বাড়িতে মিশিকার পুরো পরিবার, রুমানার পুরো পরিবার, তাসুর শ্বশুড় বাড়ির লোক, মুনিরার মা সকলেই উপস্থিত আছেন।
সায়নী ও মুনিরা ব্যস্ত মেহমানদের নিয়ে।
মেহেনুবাও তাদের সাথে ছিলো এতোক্ষণ। তবে সায়নীদের জোরাজুরিতে সে তৈরী হতে গিয়েছে নিজের রুমে।
নিজের রুমে এসে আরনুবাকে বিছানার উপর রেখে তৈরী হতে থাকলো মেহেনুবা।
ঘুমিয়ে পড়েছে আরনুবা।
লাল টকটকা একটা শাড়ি পরেছে মেহেনুবা।
ড্রেসিংটেবিলের দিকে তাকিয়ে চোখে কাজল লাগাতে থাকলো সে।
আচমকা তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো আরাফ।
মেহেনুবার কানের পাশে মুখটা নিয়ে ফিসফিসিয়ে আরাফ বললো-
তোমার ওই কাজল চোখ ছাড়াই পাগল হয়ে যাই আমি, কাজল লাগিয়ে কি নেশায় ফেলতে চাও?
.
মুচকি হেসে মেহেনুবা বললো-
হু চাই তো।
-তাহলে আর নিচে নামতে হবেনা। নেশায় ডুব দিই আমি।
.
আরাফের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে মেহেনুবা বললো-
এই না!
-এই হ্যাঁ!
-আরাফ! আজ আমাদের আরনুবার বিশেষ দিন ভুলে গেলে চলবে?
-ও হ্যাঁ তো!
-ওকে ঘুম থেকে তুলে রেডি করো।
-মেয়েটা কিভাবে আরাম করে ঘুমোচ্ছে। থাক না!
-সবাই ওয়েট করছে আরাফ। ওকে তুলে লাল ফ্রকটা পরাও। আমি একটু সেজে নিই।
-আমি সাজবো না?
-মজা নিচ্ছো! তুলোনা প্লিজ আরনুবাকে।
.
মৃদু হেসে আরাফ বললো-
হু তুলছি।
.
.
.
সিড়ি বেয়ে নিচে নামছে মেহেনুবা ও আরাফ।
আরাফের কোলেই রয়েছে আরনুবা।
সকলের দৃষ্টি তাদের দিকে।
মুনিরার মা থুথু ছিটিয়ে বললেন-
নজর না লাগে যেনো আমার নাতি পুতির উপর।
.
মুনিরা হেসে বললো-
নাতির বউ এর উপরেও যেনো না পড়ে।
.
.
তারা নিচে নামতেই তাসু মোবাইলে তাদের কিছু ছবি তুলে নিলো।
মেহেনুবা সায়নীদের দিকে তাকিয়ে বললো-
আব্বু ও আম্মুগণ? একটা ফ্যামিলি পিকচার হয়ে যাক?
.
আফরান মৃদু হেসে বললো-
কেনো নয়!
.
আফরান তাদের দিকে এগিয়ে যেতেই তার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো আরনুবা।
আফরান কোলে নিলো তাকে।
সায়নী ও মুনিরা এসে যোগ দিলে তাদের সাথে।
তাসু ছবি তুলছে তাদের।
সকলের মুখেই হাসি।
যেমন পরিস্থিতিতেই তাদের সম্পর্ক টা জড়াক না কেনো, প্রত্যেকের মাঝেই আজ ভালোবাসা বিদ্যমান বৈধ সম্পর্কের জোরে।
.
(সমাপ্ত)
.
বি:দ্র: একাধিক বিবাহ…
এটা সমাজের কেউই ভালো চোখে দেখেনা। দেখা উচিতও নয়।
আমার গল্পে একাধিক বিবাহ কে প্রাধান্য দিয়ে কিছু লেখা হয়নি।
সমাজের কেউ ভালো চোখে না দেখলেও এসব ঘটনা অহরহ ঘটতে থাকে।
তবে এই গল্পের নায়ক নায়িকারা শুধু মাত্রই পরিস্থিতির শিকার ছিলো।
আমাদের আফরানের চরিত্র টাকে নিজেদের জায়গায় বসানোর কি দরকার!
আফজাল খান, পাবেল বা আরাফকেও বসাতে পারি।
সবাইকে আফরান, সায়নী বা মুনিরা হতে হবে কেনো!
গল্পে আরো চরিত্র আছে কিন্তু।
যাই হোক, মা বাবার কর্মের জন্য ছেলেমেয়েদের কথা শুনিয়ে থাকে এই সমাজ। এটা কি আদৌ ঠিক?
যদি বাবার মতোই ছেলে হতো আফরান দুটো বিয়ে করতো না।
কেননা আফরানের বাবা আফজাল খান, তার স্ত্রীর মৃত্যুর পরেও আর বিয়ে করেন নি।
আবার আরাফও দুটো বিয়ে করেনি।
কিছু সাময়িক পাঠক আছে যারা একটা গল্প পড়েই ভালো না লাগলে লেখক/লেখিকাদের পারসোনাল এট্যাক করে ফেলে। যেটা করার কোনো মানেই হয়না। সমালোচনা করুন সমোলোচনার মতো।
কেননা সবার জীবনের কাহিনী তো আর এক নয়, তেমনি সব গল্পও এক নয়।
😊