#ডার্ক ডায়মন্ড
#আফরিন ইভা
#পর্ব-১৮
______________________
– মীরা লোকটা কে খুঁজতে লাগলো, কিন্তু কোথাও পেলো না।
মীরা ব্যালকনিতে গিয়েও খুঁজে দেখলো কিন্তু কোথাও নেই।
হঠাৎ মীরা ধপাস করে বসে গেলো আর ভাবতে লাগলো ছায়াটা নিশ্চয়ই কোনো মানুষের ছিলোনা। মীর ভাবছে তাহলে কি ছিলো?
এবার মীরার আর বুঝতে বাকি নেই ছায়াটা নিশ্চয়ই মীরা কে কোনো সঠিক পথ দেখাবার জন্য কথাগুলো বলে গিয়েছে।
তাই মীরা আর দেরি করে ছায়া টার বলা কথাগুলো নিয়ে ভাবতে বসলো।
মীরার মাথায় হঠাৎ উদয়ন হলো ছায়াটা কোনো একটা পুরুষ মানুষের ছিলো তা-ও কোনো বয়স্ক পুরুষ কন্ঠের।
মীরা ভাবছে ঐ প্যালেস টায় হয়তো গভীর কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে যা মীরা বেদ করতে পারছে না।
তাছাড়া ঐ ছবিগুলোর দিকে তাকালে মীরার মনে হয় যেনো ছবিগুলোর মানুষগুলো মীরার বড্ড বেশি আপন। মীরা চোখ দু’টি বন্ধ করলেই যেনো ঐ মানুষ দু’টোকে দেখতে পাচ্ছে।
মীরা ভাবতে লাগলো এতোক্ষণ বলা কথাগুলোর লোকটা কে ছিলো তাহলে সে কি সত্যি কোনো মানুষ ছিলো না-কি অন্যকিছু।
– হঠাৎ কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে মীরা চমকে তাকালো।
তাকিয়ে দেখলো সান্ড্রা দাঁড়িয়ে আছে।
মীরা সান্ড্রার মায়া ভরা মুখ দেখে সান্ড্রার হাত নিজের হাতে নিয়ে বললো সান্ড্রা তুমি বলো আমার সাথে কেনো অদ্ভুত অদ্ভুত কান্ড হচ্ছে?
আজ একটা প্যালেসে ঘুরতে গিয়ে আমি চমকে উঠি।
– সান্ড্রা ভয়ার্ত চোখে মীরার দিকে তাকিয়ে বললো, প্যালেস?
— মীরা সান্ড্রা কে প্যালেস সম্পর্কে সব কিছু বললে সান্ড্রা যেনো খুবি অবাক হলো।
– মীরা সান্ড্রার ভয়ার্ত চেহারা দেখে বিমূর্ত চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, সান্ড্রা তুমি কি প্যালেস টায় কখনো গিয়েছিলে?
” সান্ড্রা আমতা-আমতা করে বললো, না..নাহ. আসলে না আমি যাইনি কখনো।”
– সান্ড্রার বলা কথাগুলো মীরার কাছে যেনো এক অদ্ভুত লাগলো।
.
.
.
-মীরা রাত টা কোনো রকম কাটিয়ে ভার্সিটি পথে রওয়ানা দিলো।
মীরার কেনো জানি মনে হচ্ছে কেউ একজন মীরা কে ফলো করছে।
হঠাৎ মীরা পেছনে তাকিয়ে দেখলো কেউ নেই। মীরা আবারও হাঁটতে শুরু করলো নিজের মতো করে।
মীরা থমকে দাঁড়ালো নির্জন একটা জায়গায় এসে।
মীরা পেছন ফিরে তাকিয়ে যা দেখলো ভয়ে দু কদম পিছিয়ে গেলো।
মীরা স্বপ্ন ভেবে চোখ বন্ধ করে আবার তাকালো।
তাকিয়ে ঠিক একই দৃশ্য দেখতে লাগলো।
মীরা দেখলো কুকুরের মতো অনেক গুলো প্রাণী দাঁড়িয়ে আছে মীরার চারপাশে।
মীরা কে একদম ঘিরে রেখেছে।
ভয়ে মীরা গুটিসুটি পায়ে দাঁড়িয়ে আছে।
-এই দৃশ্য বেশ অনেক্ষণ ধরে কেউ একজন দেখে যাচ্ছে।
-নেকড়ে গুলো যে-ই মীরার উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে ঠিক তখনই কেউ একজন, নেকড়ে গুলোর উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো।
অনেক তোরজোর করে মারামারি শুরু হলো।
মীরা চোখ বন্ধ করে ফেললো।
– কোনো কিছুর বিকট চিৎকারে মীরা চোখ খুলে তাকালো।
,-মীরা তাকিয়ে দেখলো ওদিনের ঐ বাদুড় টা মীরার দিকে বেশ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো।
যেনো মীরা কিছু একটা ভুল করেছে।
নেকড়ে গুলো বাদুড় টার উপর যে-ই হামলা করতে যাবে এমন সময় ভ্যাম্পায়ার টা কালো হুডি পরিহিত এক মানুষে রূপ ধারণ করে নেকড়ে গুলোকে মাঝখান দিয়ে খুব হিংস্রভাবে ছিঁড়ে ফেললো।
– এমন হিংস্রতা দেখে মীরা গুটিয়ে গেলো।
মীরা যা কখনো দেখেনি আজ তা দেখলো।
মীরা অবাক হলো এটা ভেবে কালো হুডি পরিহিত লোক টার এমন হিংস্রতা দেখে।
– ভ্যাম্পায়ার সবকটা কে শেষ করে মীরার কাছে এসে জোরে ধমক দিয়ে বললো, একা-একা বের হয়েছো কেনো?
সাথে কাউকে নিয়ে আসোনি কেনো?
– মীরা ধমক শুনে বেশ চমকে নড়েচড়ে দাঁড়ালো।
মীরা আমতা-আমতা করে বলতে লাগলো, সান্ড্রা আজ একটু বিজি তাই সাথে আসতে পারেনি।
– ভ্যামপায়ার টা মীরার কাছে এগিয়ে এসে বললো, আর যেনো এমন ভুল না হয়, চলো তোমায় ভার্সিটি পর্যন্ত এগিয়ে আসি।
– মীরা কিছু একটা বলতে যাবে এমন সময় ভ্যাম্পায়ার টা মীরার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলতে লাগলো, ভয় নেই তুমি ছাড়া আমায় কেউ আর দেখবে না।
” ভ্যাম্পায়ারের কথা শুনে মীরা যেনো হাঁপ ছেড়ে বাঁচল।
মীরা ভয়ে ভয়ে ভার্সিটির পথে এগিয়ে গেলো।
– এদিকে ভ্যাম্পায়ার টা মীরার পেছন পেছন এসে মীরা কে এগিয়ে দিলো।
– মীরা ভার্সিটির সব ক্লাস শেষ করে যখনই ভার্সিটির গেইট দিয়ে বের হওয়ার জন্য পা বাড়ালো ঠিক তখনই আবার কালো হুডি পরিহিত ভ্যাম্পায়ার টা কে একটা গাছের নিচে দাঁড়াতে দেখলো।
ভয় পেয়ে মীরা ঢোক গিললো।
মীরা চারদিকে তাকিয়ে সান্ড্রার গাড়ি দেখে গভীর একটা নিঃশ্বাস নিলো।
সান্ড্রা মীরা কে হাত দিয়ে ইশারা করে গাড়িতে উঠতে বললো।
– মীরাও আর দেরি না করে কালো হুডি পরিহিত ভ্যাম্পায়ার টার দিকে এক নজর তাকিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো।
-সান্ড্রা মীরা কে দেখে জিজ্ঞেস করলো মীরা তুমি কি অসুস্থ?
এমন নার্ভাস লাগছে কেনো তোমায়?
– মীরা ঠোঁটে ঠোঁট চেপে বেশ কিছুক্ষণ ভেবে উত্তর দিলো না তো আমি ভালো ফিল করছি। এদিকে মীরা ভাবছে সান্ড্রা কে বলবে কি না?
কিন্তু বলবার মতো সাহস আর মীরার হলো না।
-বাসায় এসে মীরা একটা হট শাওয়ার নিয়ে বেডে বসে ভাবতে লাগলো সারাদিন হয়ে যাওয়া কান্ডকারখানা দেখে।
হঠাৎ মীরা ফোনের শব্দে ঘোর কাটে।
মীরা ফোনের স্কিনের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলো।
মীরা ফোন টা রিসিভ করে হ্যালো বলার সাথে সাথে কারো কান্নার শব্দ পেয়ে চমকে উঠলো।
মীরা…. বলে কেউ একজন চুপ করে থাকলো।
– মীরা হ্যালো বলতে বলতে ব্যাস্ত হয়ে পরলো।
মীরা বুঝতে পেরেছে এটা আর কেউ নয় মীরার মা।
মীরা মা বলতে বলতে ব্যাস্ত হয়ে যাচ্ছে কিন্তু জাহানারা বেগম কোনো সাড়া দিচ্ছেন না।
-হঠাৎ কেউ ফোনটা কেড়ে নিয়ে বললো,কিরে বোন তুই কি আমাদের ভুলে গেছিস বল তো?
– মীরা নিজেকে আর ধরে রাখতে না পেরে কেঁদে ফেললো।
নিজেকে অনেক কষ্টে সামলে নিয়ে বললো আপু আমি একটু চাপে ছিলাম প্লিজ রাগ করো না। মা’কে একটু বুঝিয়ে বলো, আর আমার ফোনটা একটু দাও।
– ইরা আচ্ছা বলে জাহানারা বেগম কে ফোন টা দিলো।
– মীরা হ্যালো বলার সাথে সাথে কেউ ওপাশ থেকে বললো, তুই অনেক বাজে মেয়ে আমার নয়তো কেউ এভাবে মা’কে কষ্ট দিতে পারে?
” মীরা নিজের কান্না কে আর আঁটকে রাখতে না পেরে বললো, মা বিশ্বাস করো আমি খুবি চিন্তিত, আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে, আমি সাধারণ কোনো মানুষ নই, আমাকে তোমরা যা দেখছো আমি তা নই, আমার আরো একটা পরিচয় আছে।
– মীরার বলা কথাগুলো শুনে জাহানারা বেগম চুপসে গেলো।
জাহানারা বেগম বিচলিত গলায় বলতে লাগলো, তোকে কে বললো এসব?
আমি তোর মা, তুই আমার মেয়ে।
আমি আর কিছু শুনতে চাই না তুই শীঘ্রই আমার বুকে ফিরে আয় মা।
– মীরা নিজেকে সামলে মা’কে বললো, ফিরতে চাইলেও যে এখন সম্ভব নয় মা। আমার যে আরো অনেক কাজ বাকি।
মীরা কথাগুলো মনে মনে বললেও মুখে কিছুই প্রকাশ করেনি।
মা’কে বুঝিয়ে বললো, ফাইনাল এক্সাম বাকি খুব বেশি দিন নেই ভালো করে প্রস্তুতি নিতে হবে।
মীরা মায়ের সাথে আরো কথা বলে ফোনটা রেখে চিন্তিত হয়ে পরলো।
“বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতে লাগলো।
মীরার মনের খটখটে ভাব কিছুতেই যেনো থামছে না।
হঠাৎ মীরার গলা শুকিয়ে আসছে।
মীরা দম নিতে কষ্ট হচ্ছে।
মীরার তৃষ্ণা পেয়েছে, এই তৃষ্ণা কি খেলে কাটবে মীরা ভাবছে। হঠাৎ মীরা রুমের দরজাগুলো বিকট শব্দে বন্ধ করে ফেললো। মীরার পুরো শরীর যেনো ফুলতে শুরু করেছে।
মীরার দাঁত গুলো গিজগিজ করছে, হাত পা গুলো শিরশির করছে।
মীরার এই তৃষ্ণা মেটাতে না পেরে মীরার ইচ্ছে করছে নিজের মাথার চুলগুলো ছিঁড়ে ফেলতে।
মীরার চোখ আস্তে আস্তে ভয়ার্ত রকম লাল হয়ে যাচ্ছে।
মীরা নিজেকে আর ধরে রাখতে না পেরে, ডাইনিং রুমে গিয়ে টেবিলের উপর কিছু একটা দেখে বিকট শব্দে হেঁসে উঠলো।
মীরা দেখতে পেলো এক বোতল রক্ত রাখা।
মীরা আর কিছু না ভেবে ঢকঢক করে পুরো বোতল রক্ত খেয়ে ফেললো।
মীরা খেয়ে বুঝতে পারলো একদম তাজা গরম রক্ত।
রক্তের স্বাদ মীরার কাছে একদম অমৃতের মতো।
– খাওয়ার পর মীরার পুরো শরীরে খুব শক্তি অনূভুত হচ্ছে।
হঠাৎ মীরা মাথা ঘুরে পড়ে গেলো।
-চলবে—–
বিদ্রঃ সবাই গঠনমূলক মন্তব্য করে পাশে থাকবেন, গল্পটা কেমন হচ্ছে জানাবেন, গল্প নিয়মিত দেওয়া হবে।
আমার একজন পাঠক এক আকাশ ভালোবাসা ❤❤