ভালোবাসাকে দিলাম ছুটি
Ariful Islam Akash
শেষ পর্ব……
আমরা কথা বলছিলাম আর টাফিক সিগন্যালের জন্য অপেক্ষা করতে ছিলাম। অথচ, আমার খেয়ালই হয় নি আমাদের পাশে যে গাড়িটা দাড়িয়ে আছে সেটা আমাদেরই গাড়ি। আর গাড়ির মধ্যে সয়ং আমার বাবা বসে আছে।
কথাকে ওর বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে আমি বাসায় চলে এলাম। তুলি ডয়িংরুমে বসে টিভি দেখছিলো। আমাকে দেখে বললো,
— আজ এত দেড়ি হলো যে?
— একটা কাজ ছিলো।
— ও আচ্ছা।
তুলি আর কিছু বললো না, আবারো টিভির দিকে মনোযোগ দিলো। আমি রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে সোজা ছাদে চলে এলাম। চুপচাপ দাড়িয়ে ছিলাম এক কোনে, তখন তুলি ছাদে এলো। আমাকে চুপ করে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বললো,
— কি ব্যপার, পাথরের মত দাড়িয়ে আছেন কেনো?
— এমনিতেই।
— আপনার কফি।
তুলি আমার দিকে একটা কফির মগ এগিয়ে দিলো। আমি একটা হাসি দিয়ে তুলির হাত থেকে কফির মগ নিয়ে চুমক দিলাম। আমি তুলির ব্যপারটা ঠিক বুঝতে পারছি না। মেয়েটি আমার সাথে সব সময় স্বাভাবিক ব্যবহার করছে কি করে। তুলির জায়গায় অন্য কোনো মেয়ে হলে অব্যশই এতটা সহজ থাকতো না। কারন, তুলি খুব ভালো করেই যানে আর কিছুদিন পর আমাদের ডির্বোস হয়ে যাবে। আমরা সারা জিবনের জন্য একে অপরের থেকে আলাদা হয়ে যাবো। তারপর তুলির ব্যবহারে মনে হয় না ওর এই বিষয়টা নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা আছে।
সেদিন অফিসে যাবার সময় তুলি কে বললাম,
— তুলি?
— হ্যাঁ বলুন, কিছু লাগবে?
— না,কিছু লাগবে না। একটা কথা বলতে চাইছিলাম।
— জি বলুন।
— তুমি রেডি হয়ে থেকো।আমি আজ দুপুরে অফিস থেকে চলে আসবো তারপর দুজন ঘুরতে যাবো। এমনিতেই তোমাকে নিয়ে কোথাও যাওয়া হয় না। সব সময় তো বাসাতেই থাকো। বাইরে ঘুরে আসলে ভালো লাগবে।
— হঠাৎ আমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবের ইচ্ছা হলো কেনো?
— বললাম তো এমনিতেই। ঠিক আছে তুমি যদি যেতে না চাও তাহলে জোর করবো না।
— আচ্চা যাবো।
আমি তুলির দিকে তাকিয়ে একটা হাঁসি দিয়ে বের হয়ে গেলাম। দুপুরে অফিস থেকে বের হতেই কথার ফোন এলো। আমি ফোন রিসিভ করতেই কথা দেখা করতে বললো। আমি কোনো ভাবেই না করতে পারলাম না। কথার সাথে দেখা করে, বাসায় যেতে যেতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। কথার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসার দিকে যাবার সময় মনে পড়লো আজ তো তুলিকে নিয়ে বাইরে যাবার কথা ছিলো। মেয়েটা নিশ্চয় রেডি হয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করছিলো। দুর, কি যে করি না। নিজের প্রতি নিজেরই প্রচন্ড রাগ হলো। একদিন কথার সাথে দেখা না করলেও তো হত। তুলি নিশ্চয় মন খারাপ করে বসে আছে। এতসব ভাবতে ভাবতে বাসায় চলে এলাম। আম্মু ডয়িংরুমে বসে ছিলো আমি জিঙ্গেস করলাম তুলি কোথায়? আম্মু বললো রুমে আছে। আমি রুমে এসে দেখি তুলি রুমে নেই। বারান্দায় উকি দিয়ে দেখি তুলি দাড়িয়ে আছে। আমি যেয়ে তুলির পাশে দাড়িয়ে বললাম,
— সরি তুলি।
— কেনো?
— এই যে কথা দিয়ে কথা রাখতে পারলাম না। তুলি আমি সত্যই খুব দুঃখিত।
তুলি আমার দিকে তাকিয়ে একটা হাঁসি দিয়ে বললো,
— সমস্যা নেই, হয়ত কোনো কাজে আটকে গিয়ে ছিলেন। আমরা নাহয় অন্য দিন ঘুরতে যাবো। আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন খাবার দিচ্ছি।
তুলি চলে গেলো, আমি বুঝতে পারছি না। এই মেয়ের সমস্যা কি? এ কি কখনো রাগ করতে পারে না। অন্য কোনো মেয়ে হলে তো আমাকে ঝাড়ু দিয়ে আদর করতো। আর তুলির কোনো রিআ্যকশনই নেই?
–চলুন নিচে যাই, আম্মু খাবারের জন্য ডাকছে।
তুলির কথায় ঘোর ভাঙলো, আমি বললাম,
— চলো।
নিচে এসে খাওয়া দাওয়া করে রুমে চলে এলাম। বিছানায় শুয়ে মুভি দেখতে দেখতে কখন ঘুমিয়ে গেছি যানি না। মধ্যরাতে কারো কান্নার আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেলো। আমি পাশ ফিরে দেখি তুলি বিছানায় নেই। আমি উঠে বসলাম, ডিম লাইটের আবছা আলোয় দেখি তুলি মেঝেতে বসে মোনাজাত করছে। তুলির কান্নারত অবস্থায় বলা কথা গুলো একদম আমার বুকে এসে বিধলো। নিজেকে বড্ড বেশি অপরাধী মনে হতে লাগলো। আসলেই তো তুলির কোনো দোষ নেই, মেয়েটা কেনো শুধু শুধু কষ্ট পাবে?
সারারাত আর ঘুমাতে পারলাম না। বার বার শুধু মনে হলো এভাবে চলতে পারে না। যা করার খুব তারাতাড়ি করতে হবে। কয়টা দিন শুধু একটাই চিন্তা হলো কি করবো এখন আমি? না পারবো তুলিকে ছাড়তে, না পারবো কথাকে ছাড়তে।
তুলি আর আম্মু কিচেনে ছিলো। আমি আব্বুর রুমে এসে দেখি আব্বু পত্রিকা পড়ছে। আমি আব্বুর সামনে যেয়ে দাড়িয়ে বললাম,
— আব্বু তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো।
আব্বু বুঝতে পারছে জরুরী কিছু বলতে এসেছি। পত্রিকা পাশে রেখে দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
— বলো, কি বলতে চাও।
আমি কোনো রকম ভনিতা না করে সরাসরি বললাম,
— তুমি হয়ত যানো আমি কথা নামের একটা মেয়েকে ভালোবাসি। আর তোমরা তুলির সাথে হঠাৎ করে আমার বিয়ে দিয়ে দিলে। আমি কিছুতেই তুলিকে মেনে নিতে পারছিলাম না। বারবার শুধু কথার কথা মনে পড়ছিলো। ঢাকায় আসার পর, একদিন হঠাৎ করেই আমি আর কথা বিয়ে করে ফেলি।
— কী? কি বলছো তুমি?
— আব্বু আমি সত্য কথাই বলছি, তুলিকে বিয়ে করার পর আমি কথাকেও বিয়ে করেছি।
আমার মনে হলো, আব্বু উঠে ঠাসস করে আমার গালে এক্ষুনি কয়টা থাপ্পর বসিয়ে দিবে। কিন্ত কয় মিনিট হয়ে যাবার পরও যখন গেলে কোনো থাপ্পর পড়লো না তখন আমি মাথা উচু করে আব্বুর দিকে তাকালাম। আব্বু একদম স্থীর হয়ে বসে আছে। আব্বু একদম শান্ত গলায় বললো,
— এখন কি করতে চাইছো তুমি?
— যানি না, কিছুই যানি না আমি। শুধু এতটুকু যানি আমি তুলিকে ছাড়তে পারবো না।
— তাহলে কথাকে ছাড়ে দাও।
— সেটাও পারবো না।
— তোমার কি মনে হয় না, তুমি যেটা বলছো সেটা অসম্ভব?
আমি কিছু বললাম না, আব্বু বললো,
— তুমি বলেছিল কথা নামের একটা মেয়েকে তুমি ভালোবাসো। আমি মেনে নিয়ে ছিলাম, কারন তুমি একটা মেয়েকে ভালোবাসতেই পারো এতে আমার কোনো আপত্তি ছিলো না। কিন্ত যখন আমি সেই কথার সম্পকে যানলাম তখন মনে হলো কথা তোমার যোগ্য নায়। আর এরকমটা এমনি এমনি মনে হয় নি আমার যথেষ্ট কারন ছিলো। কথাকে বিয়ে করার আগে তোমার একটাবার তুলির কথা ভাবা উচিৎ ছিলো। তোমার একটা ভুল সিদ্ধান্তে একটা মেয়ের জিবন নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
আমি চুপকরে দাড়িয়ে রইলাম, আব্বু বললো,
— তোমাদের বিয়ের কথাটা কয়জন যানে?
— আমি কথা আর আমার দুটো বন্ধু।
— ও আচ্ছা। শোনো আমি বাবা হিসেবে চেয়েছিলাম তুমি যেনো সুন্দর মনের একটা জিবনসঙ্গী পাও। তার জন্যই তুলির সাথে তোমার বিয়ে দিলাম। কারন, আমি যানতাম তুলি অনেক ভালো একটা মেয়ে। কিন্ত তুমি এমন একটা ভুল করলে যা আমি কখনো ভাবতেও পারি নি। এবার এই দুজনের মধ্য থেকে কোনো একজন কে তোমাবেই বেছে নিতে হবে।আমি যা বলবো সেটাই করবে তুমি। আমি বলবো না তুমি কথাকে বিয়ে করে ভুল করেছো। শুধু বলবো কে ঠিক ছিলো। তুলির সাথে তোমার বিয়ে দিয়ে আমি সঠিক কাজ করেছি না তুমি কথাকে বিয়ে করে সঠিক কাজ করেছো। এই কথাটা আমি তোমার মুখ থেকেই শুনতে চাই। তার জন্য তোমাকে যা যা বলবো তুমি তাই করবে। আর আমি শিওর তুমি এক মাসের মধ্যেই বুঝতে পারবে।
আজ প্রায় ১ মাস হতে চললো আমি হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি। আমার ডান পাশের কাচের জানালা ভেদ করে হালকা রোদ এসে পড়েছে রুমে। একটু আগে আম্মু বাসায় গেলো। আম্মু প্রতিদিন একবার করে দেখতে আসে আমায়। আমি বারন করেছি যে আসতে হবে না। কিন্ত তারপরও প্রতিদিন আসবে। তুলি প্রতিদিন সন্ধায় আসে, সারারাত আমার পাশে বসে থাকবে। বার বার জিঙ্গেস করবে কিছু লাগবে কিনা? এই ১ মাসে তুলি প্রতিদিন আমার পাশে বসে থেকেছে। কখনো একটা মিনিট ও ঘুমায় নি। সকালে আমাকে নিজ হাতে নাস্তা করিয়ে দিয়ে বাসায় যায়। বাসায় আব্বু আম্মুকেও তুলিরই সামলাতে হয়। এই এক মাসের ব্যবধানে তারা একদম ভেঙে পড়েছে। তুলি মেয়েটাও কেমন যেনো শুকিয়ে গেছে, চোঁখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে। সবার এমন অবস্থার জন্য একমাত্র আমিই দায়ী। আজকাল নিজেকে খুব বড় মাপের অপরাধী মনে হচ্ছে।
একমাস আগে একদিন সকালে সিড়ি দিয়ে নামার সময় সিড়ি থেকে পড়ে যাই। তারপর কিছু মনে নেই। যখন জ্ঞান ফিরে তখন নিজেকে এই বের্ডে আবিষ্কার করলাম। চোঁখ খুলে দেখি আম্মু আমার পাশে বসে কাদছে। আমি বুঝতেই পারলাম না কি হয়েছে আমার। কেউ কিছু বললোও না আমাকে। কয়দিন পর যানতে পারলাম আমার ব্রেনক্যান্সার। আমি আর বেশি দিন বাচবো না।
হাসপাতালে আসার ৩ দিন পর কথা আমাকে দেখতে আসে। কথা আমাকে জরিয়ে ধরে খুব কান্না করছিলো। কথার কান্নাটা কেনো যেনো আমার সহ্য হচ্ছিলো না। তারপরও যথা সম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক রাখলাম। প্রথমে কথা প্রতিদিন আমাকে দেখতে আসতো। আমাকে ভরসা দিতো। খুব তারাতারি সব ঠিক হয়ে যাবে, আমি শীঘ্রই সুস্থ হয়ে যাবো এইসব কথাবার্তা বলতো। কয়দিন পর থেকে কথা একদিন পর পর আসতো। তারপর ৩ দিন দিন পর পর। ডাক্তার বলছে আমার অবস্থা ধীরে ধীরে খারাপের দিকে যাচ্ছে। তেমনি কথাও আমাকে দেখতে আসার সময় পাচ্ছে না।
আজ বিকালে কথা আমাকে দেখতে এলো। কথার সাথে অনেকক্ষণ কথা বলার পর একটা সময় আমি বললাম,
— একটা জরুরী কথা বলার ছিলো তোমাকে।
— বলো।
— কথা তুমি তো যানো আমি বেশিদিন বাচবো না। কিন্ত আমি চাই আমাদের সম্পকটা পূণতা পাক। আমাদের বিয়ের কথাটা তো কেউ যানে না। আমি চাইছি আজকেই আব্বুকে আমাদের সম্পকের কথা বলে দিবো। তারপর আব্বু তোমার পরিবারের সাথে কথা বলবে।
— আরে না, তার কোনো দরকার নেই।
— কেনো?
— আমি বলছি এক্ষুনি এসবের দরকার নেই। তুমি আগে সুস্থ হয়ে উঠো তখন আমরা সবাইকে যানাবো।
— কথা আমি আর সুস্থ হবো না। আমি যদি মারা যাই তাহলে আমাদের বিয়ের ব্যপারটা কেউ মেনে নিবে না। তোমার কথা কেউ বিশ্বাস করবে না। সেই জন্য আমি সবাইকে জানাতে চাইছে। যেনো আমি মারা গেলেও পরে কোনো সমস্যা না হয়।
— ঠিক আছে, তুমি আমাকে একটু ভাবতে দাও। আমি আজ ভেবে কাল এসে তোমাকে বলবো।
—- ঠিক আছে। তুমি বললেই আমি আব্বুকে বলে দিবো।
কথা আরো কিছুক্ষণ থেকে চলে গেলো। প্রতিদিনের মত আজকেও মধ্যরাতে ঘুম ভেঙে গেলো। আমি দেখলাম প্রতিদিনের মত তুলি আজও তাহাজ্জতের নামাজ আদায় করছে। নামাজ শেষ করে তুলি প্রতিদিনের মত আজও মোনাজাতে শুধুমাত্র আমার সুস্থতা কামনা করছে। আমার অজান্তেই চোঁখ থেকে কয় ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।
পরদিন দুপুরের দিকে কথা আসলো। কথা আমার পাশে বসে বললো,
— আকাশ তোমাকে কিছু কথা না বলে পারছি না। তুমি আমার কথা শোনার পর কি ভাববে আমি যানি না। কিন্ত কথা গুলো আমাকে বলতেই হবে।
— আচ্ছা বলো শুনি।
— আকাশ আমি ডাক্তারের সাথে কথা বলেছি। এবং কথাটি অপ্রিয় হলেও সত্য যে তুমি আর বেশি দিন আমাদের মাঝে থাকবে না। ডাক্তার বলেছে খুব বেশি দেড়ি হয়ে গেছে এখন কোনো চিকিৎসাই আর কাজে আসবে না। তুমি তো আমাকে ভালোবাসো। তুমি অব্যশই চাও আমি ভালো থাকি, সুখে থাকি। আর সত্য কথা বলতে কি আমি তোমার সাথে কখনো সুখে থাকবো না। কারন, তুমি বাচবেই আর মাত্র কয়টা দিন। এই কয়টা দিন হয়ত আমরা একসাথে থাকতে পারবো কিন্ত তারপর তো আমাকে সারা জিবন ভুগতে হবে। আমি কথা গুলো তোমাকে বলতাম না। কিন্ত তোমার মাথায় ভুত চেপেছে যে আমাদের বিয়ের কথাটা তুমি সবাইকে বলতে চাও। তুমি সুস্থ থাকলে কোনো সমন্যা ছিলো না। কিন্ত এখন আমাদের বিয়ের কথাটা প্রকাশ করা মানে আমার জিবনটা শেষ করে ফেলা যেটা আমি চাই না এবং আমার বিশ্বাস তুমিও চাইবে না। তাই আমি বলছিলাম কি, আমাদের বিয়েটা যেমন গোপন ছিলো তেমনি গোপনই থাক। তাছাড়া, এই বিষয়টা প্রকাশ করলে আমার পরিবার আমাকে ভুল বুঝবে। তখন না থাকবে তুমি না থাকবে আমার পরিবার। আমার জিবনটা একদম শেষ হয়ে যাবে। আর সব ভালোবাসা যে পূণ্যতা পাবে তার তো কোনো মানে নেই।
কথার কথা শুনে আমার দম বন্ধ হবার জোগার। যাকে এতবেশি ভালোবাসি তার মুখ থেকেই এইসব শুনতে হচ্ছে। কথা ওর ব্যগ থেকে একটা কাগজ বের করে আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
— আমাদের ডির্বোস পেপার। নিয়ম অনুযায়ী করতে গেলে সময় লাগতো অনেক। আমি উকিল কে টাকা দিয়ে অন্য ভাবে করে নিয়েছি। কারন, আমি খুব করে চাইছিলাম তোমার সাথে আমার সম্পকটা শেষ করে ফেলতে। আমি সাইন করে দিয়েছি তুমি সাইন করলেই হয়ে যাবে।আমাদের মাঝে আর কোনো সম্পক থাকবে না। আকাশ যদি পারো আমাকে ক্ষমা করে দিও।
কথা গুলো বলে কথা আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই উঠে পড়লো। কথা চলে যাবার জন্য পা বাড়াবে তখন আমি কথাকে ডাক দিলাম। কথা আমার দিকে তাকাতেই আমি বললাম,
— আমি যদি মারা যাই তুমি আমাকে দেখতে এসো না। আর যদি বেচে থাকি তাহলে জিবনে ২য় বার তোমার মুখ দেখতে চাই না।
কথা চলে গেলো। আমি ডির্বোস পেপারের দিকে তাকিয়ে রইলাম। যাকে ভালোবাসি বলে তুলিকে ডির্বোস দিয়ে আমি সেই কথাকে জিবনসঙ্গী হিসেবে পেতে চাইলাম। বিবাহিত হয়ে আবারো বিয়ে করলাম। সেই কথা আমার ভালোবাসার এই প্রতিদান দিলো। আমি আর বাচবো না, শুনে আমাকে ছেড়ে চলে গেলো। অথচ, যে মেয়েটা যানে আমাকে সে কখনো পাবে না, আমি বেচেঁ থাকলেও পাবে না মরে গেলেও পাবে না। যাকে বিয়ে করার পরও কখনো স্ত্রীর মর্যাদা দেই নি সেই আমাকে ছেড়ে যায় নি। নামাজ পড়ে আমার জন্য প্রার্থনা করে, জিবনের শেষ দিন পর্যান্ত থাকতে চায় আমার সাথে।
আমি বেড থেকে উঠে দাড়ালাম। আমাকে উঠতে দেখে নার্স অবাক হয়ে চেয়ে রইলো আমার দিকে আমি নার্সের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাঁসি দিয়ে বললাম,
— আজিজ আংকেলকে বলে দিবেন আমি বাসায় চলে গেছি।
হাসপাতাল থেকে বের হয়ে একটা গাড়ি নিয়ে রওনা দিলাম বাসার দিকে। আসলে আমার কিছু হয় নি। এই একমাস যাবত যা যা হয়েছে সব কিছু ছিলো আব্বুর সাজানো নাটক। যেদিন আব্বুকে কথার কথা বলেছিলাম আব্বু সেদিন আমাকে বলেছিলো আমি কথাকে ভালোবাসি যানার পরও কেনো আব্বু তুলির সাথে আমার বিয়ে দিলো। আমি যানতে চাইলাম কেনো?
আব্বু বললো, আমি যা বলবো তুমি তাই করবে তাহলে তুমি নিজেই কথা আর তুলির প্রার্থক্য বুঝতে পারবে। সেদিন আব্বু আমাকে অসুস্থ হবার নাটক করতে বলে। আর এই বিষয়টা শুধু আমি আব্বু আর ডাক্তার আংকেল যানতাম।
বাসায় এসে কলিংবেল দিতেই তুলি এসে দরজা খুলে দিলো। আমাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে যেনো ভুত দেখেছে একটা চিৎকার করে উঠলো তুলি। আমি তুলির মুখ চেপে ধরে বললাম,
— কানের পোকা একদম নড়িয়ে দিলে।
ততক্ষণে তুলির চিৎকার শুনে আব্ব আম্মু ডয়িংরুমে চলে এলো। আমাকে দেখে তুলির মত আম্মুও অবাক হয়ে গেলো। আম্মু আমাকে জরিয়ে ধরে একের পর এক প্রশ্ন করতে লাগলো। আমি জবাব দেওয়ার আগে আব্বু বললো,
— এত তারাতারি চলে এলে যে?
— কাজ তো শেষ, আর থেকে কি করবো?
— তাহলে রেজাল্ট কি? কে সঠিক ছিলো তুমি না আমি?
— তুমি।
আমি আর আব্বু কথা বলছিলাম তখন আম্মু বললো,
— কিসের রেজাল্ট? কিসের ঠিক বেঠিক? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
আব্বু আম্মুর দিকে তাকিয়ে বললো,
— তুমি আমার সাথে রুমে আসো আমি সব বুঝিয়ে দিবো।
আম্মু আব্বুর পিছু পিছু রমে চলে গেলো। তুলি এখনো আমার দিকে অবাক হয়ে চেয়ে আছে। আমি বললাম,
— তুমি আবার এমন হা করে চেয়ে আছো কেনো?
— আপনি সুস্থ হলেন কি করে?
— তুমি যে পরিমানে দোয়া করেছো আমার জন্য। আল্লাহ তোমার দোয়া কবুল করেছে তাই আমি সুস্থ হয়ে গেছি।
— আমার মাথায় কিছু ঢুকছে না।
— তোমার মাথায় কিছু ঢুকাতেও হবে না।
আব্বু আম্মুকে সব বলে দিয়েছিলো হয়ত। যার কারনে বাসায় তিনদিন আমার ভাত বন্ধ করে দিলো আম্মু। এটা নাকি তাকে কাদানোর শাস্তি। সবকিছু আবারো আগের মতই হয়ে গেলো।
রাতে ছাদে দাড়িয়ে ছিলাম তুলি ছাদে এসে আমার পাশে দাড়িয়ে বললো,
— তাহলে তো আপনি এখন সুস্থ। অবশ্য আপনি অসুস্থও ছিলেন না। শুধু শুধু একমাস এমন নাটক কেনো করলেন আমি জানি না। আর যানতে চাইও না। কারন, আমার সময় তো শেষ। এবার আমাকে চলে যেতে হবে।
তুলির কথা আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না। আমি বললাম,
— কি বলছো তুমি? ঠিক বুঝতো পারছি না।
তুলি আমার দিকে একটা কাগজ এগিয়ে দিয়ে বললো,
— আমাদের ডির্বোস পেপার। আপনি যখন হাসপাতালে ছিলেন তখনই পেয়েছি। আপনি অসুস্থ ছিলেন বলে কিছু বলিনি। কিন্ত এখতো আপনি ঠিক আছেন। তাছাড়া পেপার ও চলে এসেছে। এবার আমাকে বিদায় দিয়ে আপনার ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়ে আসুন। শুভ কামনা রইলো আপনাদের জন্য। আশা করি এবার আপনাদের ভালোবাসা পূণ্যতা পাবে। আর আমি কাল সকালেই চলে যাবো।
কথা গুলো বলার সময় তুলির কন্ঠটা কেমন যেনো কেপে উঠলো। অন্ধকারে দেখতে না পেলেও বুঝতে পারছিলাম তুলির চোঁখে জল। তুলি ঘুরে চলে যেতে নিলেই আমি তুলির হাত ধরে ফেললাম। তারপর একটানে আমার কাছে নিয়ে এলাম। এতটাই কাছে যে একজনের হার্ডবিটের শব্দ অন্য জন শুনতে পাচ্ছিলাম। আমি তুলির চোঁখ মুছে দিয়ে বললাম,
— তোমার কি মনে হয়? একটা মাস হাসপাতালে এমনি এমনি থেকেছি। হাসপাতালে থাকার যথেষ্ট কারন ছিলো এবং হাসপাতাল থেকে আসার সময় আমার ভালোবাসাকে ছুটি দিয়ে এসেছি।
— মানে?
— মানে হলো, দুঃসময়ে যে পাশে থাকে না সে না হতে পারে বন্ধু, না হতে পারে ভালোবাসার মানুষ। সার্থযুক্ত,অভিনয় যুক্ত, মিথ্যা ভালোবাসাকে দিলাম ছুটি।
আমার জিবনে হাজারো কথার থেকে একটা তুলি ভালো। যার ভিতর থাকবে শুধুই ভালোবাসা। মিথ্যা ভালোবাসার পেছনে অনেক ছুটেছি। এবার সত্য ভালোবাসার পিছু ছুটতে চাই।
তুলি আমাকে জরিয়ে ধরে কান্না করে দিলো।
আমি ডির্বোস পেপার টা ছিলে টুকরো টুকরো করে ফেলে দিলাম। তারপর তুলিকে কোলে তুলে নিয়ে বললাম,
— আমাদের বিয়ের তো অনেকদিন হয়ে গেলো। কিন্ত আসল কাজটাই তো এখনো হয় নি।
— আসল কাজ মানে?
— রুমে যাই তারপর বুঝতে পারবে।
তুলি হয়ত আমার কথা শুনে লজ্জা পেয়ে গেলো। সেই মুহুতে মেঘের আড়াল থেকে চাঁদ বেরিয়ে এলো । পুরো পৃথিবি ভরে গেলো রুপালী জোৎস্নায়। চাঁদের আলো এসে তুলির মুখে পড়তেই আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম তুলির লজ্জাময় মুখটি। আমার মনে হলো রুমে যাবার ধোর্য নেই। এই ছাদেই ডুব দেই ভালোবাসার সাগরে। কিন্ত আকাশের চাঁদটি বেহায়ার মত চেয়ে আছে আমাদের দিকে। আমি তুলিকে কোলে নিয়েই পা বাড়ালাম সিড়ির দিকে। আমার বউকে শুধু আমি দেখবো। আমি ছাড়া অন্য কারো দেখার অধীকার নেই সে হোক মানুষ অথবা আকাশের চাঁদ।
…… সমাপ্ত……
( বিঃদ্রঃ ভুল তুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আমি নিজেও যানি না কেমন হয়েছে। আসলে পড়াশোনার চাপে লেখার সময় পাই নি। প্রতিদিন একটু একটু করে লিখতে হয়েছে। তবে পরবতীতে ভালো কিছু হবে আশা করছি। ধন্যবাদ সবাইকে)তুমি