#ভালোবাসার_প্রজাপতি
#পর্বঃ১৯
#মাহিয়া_মুন
“তাহলে মিস নিহা খান যাকে মেরেছে সে কি আরমান আংকেল ছিলো নাকি পাপা।”
লোকটি পিছে তাকিয়ে দেখে তার ওতি লোক দেখানো আদরের ছেলে তার দিকেই এগিয়ে আসছে। লোকটি হেসে ছেলেটিকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলে উঠলো,
“একদম ঠিক ধরেছো আদিত্য বেটা। নিহা খান তোমার পাপা/আদিল এহসান/আমি ভেবে যাকে মেরেছে সেতো আমি ছিলাম ই নাহ। সে ছিল আরমান এহসান। যে কিনা আমার যমজ ভাই। তবে এই কথা টা কেউ জানত না।”
“কিন্তু পাপা তুমি এরকম কেন করলে। আরমান আংকেল তো তোমার সাথেই কাজ করতো। আর কিভাবেই বা করলে এসব। তুমিতো আমায় কিছুই বল নি। শুধু বললে চৌধুরী বাড়িতে প্রবেশ করতে। আর আজ হটাৎ বললে সবার সামনে এমন অভিনয় করতে যেন তুমি সত্যিই মরে গেছ।”
“আদিত্য বেটা, অস্থির হচ্ছো কেনো। তোমার আংকেল/আমার ভাই মিস্টার আরমান এহসান আমার সাথেই কাজ করতো খান ইন্ডাস্ট্রি পাওয়ার লোভে। আর একটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হচ্ছে গত ঊনিশ বছর আগে সেই রাতে মিস নিহা খানের বাবা এস এইচ ও মিষ্টার নোমান খানকে মারার সময় সেই নদীর তীরে শুধু আমি ছিলাম না। আরো একজন ছিলো। সে হচ্ছে তোমার আরমান আংকেল। দুজন মিলেই নোমানের খেল খতম করেছিলাম। আর আমি আমার কার্য সম্পাদনের জন্য সব করতে পারি। তোমার আংকেল কেও সেই জন্য মরতে হলো।”
“সেটা নাহয় বুঝলাম পাপা কিন্তু সেদিন এসব কিভাবে করলে?”
“এখনও বুঝনি বেটা। সেদিন তো নিহা খানকে কিডন্যাপ আমি করাই নি। খান ইন্ডাস্ট্রি নিজের করে নেওয়ার জন্য আরমান বোকার মত কাজ করে ফেললো। সে নিহাকে কিডন্যাপ করিয়ে নিজের নামে সব কিছু করে নিতে চেয়েছিলো। কিন্তু ভাই আমার এইটা বুঝতে পারে নি যে এই মেয়ে S.H.O মিষ্টার নোমান খানের মেয়ে মিস নিহা খান। ঠিক বাবার মতোই। এতো সহজে সে সাইন করে দিবে, কখনোই না। আরমান আমার পরিচয় ব্যাবহার করেছে তখন নিহার সামনে। আর এতেই মিত্রু কে স্বাগতম করেছিলো নিজের কাছে। কারণ মিস নিহা খান তোমার আংকেল/আরমানের ব্যাপারে কিছুই জানত না। সে জানত আমার ব্যাপার এ। মিস্টার আদিল এহসানের ব্যাপার এ। আর আদিল এহসান ভেবেই………….”
বেলকনির জানালার কাঁচ ভাঙার আওয়াজে মিস্টার আদিল এহসানের কথা বন্ধ হয়ে গেল।
দুজনেই সেদিকে তাকিয়ে অবাক হলো। সম্পূর্ণ কালো পোশাকে আবৃত একজন মেয়ে জানালার কাঁচ ভেঙে রুমে প্রবেশ করে ঠিক তাদের দিকেই এগিয়ে আসছে। মুখ কালো রুমাল জাতীয় কিছু একটা দিয়ে ঢেকে রাখায় বুঝতে পারছে না মেয়েটি কে।
কিছু বুঝে উঠার আগেই দুজনের পায়ে পর পর দুটি করে চারটি গুলি করলো মেয়েটি।
ব্যাথায় চিৎকার দিয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়লো দুজনই।
মেয়েটি শব্দ করে হেঁসে বলে উঠলো,
“মিস নিহা খান মিস্টার আরমানের ব্যাপারে কিছুই জানত না ঠিক তবে তোর ব্যাপারে যেহেতু সব জেনেছে, তখন তোকে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরতে দেয় কি করে বল।”
এই বলে মেয়েটি নিজের মুখের উপর থেকে রুমাল টি সরিয়ে ফেললো।
মিস্টার আদিল এহসান এবং আদিত্য এহসান দুজনের মুখ দিয়ে বেড়িয়ে আসলো,
“মিস নিহা খান।”
“হুম মিস নিহা খান তো ঠিকই তবে সেই সাথে মিসেস নিহা চৌধুরী ও। কি ঠিক তো দেবর জি।”
আদিত্য কে উদ্দেশ্য করে কথাটি বলে উঠলো।
মিস্টার আদিল এহসান সুযোগ বুঝে নিজের বন্দুক টি হাতে নিতে গেলে নিহা পুনরায় আদিল এহসানের হাতে গুলি করলো ।
“কি আংকেল, আপনার সামনে দাঁড়িয়ে আছি আর আপনি কিনা বন্দুক নিতে যাচ্ছেন। কী ভাবছেন আপনার খোঁজ কিভাবে পেলাম? এইখানে কীভাবে আসলাম? সবই সম্ভব হয়েছে আমার এই সুইট দেবর জির কারণে। দেবর ভাবী বলে কথা, বুঝেন তো আংকেল।”
আদিল এহসান ব্যাথায় কুচকে যাওয়া মুখে নিহার দিকে তাঁকিয়ে বলে উঠলো,
“মানে।”
“আরেহ সেদিন আরমান এহসান কে মারার পর তার কাছে থাকা আপনার ফোন টি বেজে উঠে ছিলো। আর কে ফোন করেছিলো জানেন, আমার এই গুলুমুলু দেবর জি। আর তাতে আমি বুঝে গিয়েছিলাম আদিত্য এহসান আপনার ছেলে। আপনি প্ল্যান করে আদিত্য কে পাঠালেন চৌধুরী বাড়ি যাতে সুযোগ বুঝে কোপ মারতে পারে। কিন্তু তা আমি হতে দিলাম নাহ। কিন্তু আংকেল আপনি ভাবলেন আপনার প্ল্যান মতোই সব হচ্ছে। আহারে…….. আর একটা বোকার মতো কাজ করলেন কি জানেন । পার্কে ওই লোকটিকে পাঠিয়ে। আমাকে মারা এতো সহজ নাকি আং…..কেল। বেচারা ভয়ে আপনার নামটি বলে দিলো। সুন্দর দুয়ে দুয়ে চার মিলিয়ে আমার দেবর জিকে ফলো করা শুরু করলাম। আর এখন আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আর আমাকে তো জানেনই আংকেল, আমার বাবা দাদাকে ঐভাবে মেরেছেন আর আমি আপনাদের ছেড়ে দিবো। অপেক্ষায় ছিলাম কখন ঘুঘু নিজেই আমার পাতা ফাঁদে পা ফেলে। এখন জানেন তো কয়টা বাজে। ঠিক রাত 12 টা। ঠিক এই সময়, এইরকম আঁধারে ঘেরা রাতে আপনি আমার বাবাকে মেরেছিলেন। আজো সেই রকমই হবে।”
কথাটি বলার সাথে সাথে পুরো রুম অন্ধকার হয়ে গেলো।
আদিল এহসান এবং আদিত্য অনুভব করলো তাদের মুখ বেধে দেওয়া হচ্ছে।
কিছুক্ষণ এভাবে যেতেই হটাৎ পুরো রুম আলোকিত হয়ে উঠলো।
অনেক্ষন পর হটাৎ করে আলো আসায় আদিত্য চোখ বন্ধ করে ফেললো।
আসতে আসতে চোখ খুলে সামনে তাকাতেই চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।
#চলবে#ভালোবাসার_প্রজাপতি
#পর্বঃ২০
#মাহিয়া_মুন
আদিত্য নিষ্প্রাণ তাকিয়ে রইলো সামনে। সে বুঝতে পারছে না সে যা দেখছে তা আদো সত্যি কিনা। চোখের পাতা কয়েকবার ঝাপটে আবারো তাকালো সামনে। হ্যা, সে যা দেখছে তা কোনো ভ্রম নয়।
তার সামনেই কয়েক খন্ডে খণ্ডিত হয়ে আছে তাঁর বাবা মিস্টার আদিল এহসান। চারদিকে রক্ত ছিটিয়ে আছে। মেঝেতে যেন রক্তের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। শরীলের বিভিন্ন অংশ রুমের চতুর্দিকে পড়ে আছে।
মেঝেতে রক্ত দিয়ে লেখা,
“সাইলেন্ট কিলার………”
এইরকম অবস্থায় যে কেউ ই নিজেকে ঠিক রাখতে পারবে না।
আদিত্য নিজেকে ঠিক রাখতে পারলো না। এক পলক তাকালো নিহার দিকে। মেয়েটা কেমন ঠান্ডা চোখে নিজের হাতের চাকুটির দিকে তাঁকিয়ে আছে। যেন এখানে কিছুই হয় নি।
আদিত্য আসতে করে বলে উঠলো,
“পাপা…….”
নিহা আদিত্যের দিকে তাঁকিয়ে কিছু একটা ভাবলো।
আদিত্যর সামনে এসে বসে বলে উঠলো,
“কি দেবর জি কষ্ট হচ্ছে নাহ্ খুব। জানোতো আমারও এরকম কষ্ট হতো, এর থেকেও বেশি কষ্ট হতো যখন এই পুরো পৃথিবীতে আমার কেউ নেই ভাবতাম। আহ্হারে এই সমাজে বাবা মা হীন একটা মানুষ বেঁচে থাকা যে কি কষ্টের। সেই জায়গায় আমিতো মেয়ে। আর আমার মা বাবা একসময় সব ছিলো। আমাকে এই বাবা মা হীন করলো কে বলোতো। ওইযে খণ্ডিত হয়ে যে পড়ে আছে মেঝেতে সে। আমার বাবাকেও এইরকম করেই মেরেছে। তুমি বলতে পারো এখানে আমার দোষ টা কি ছিলো। আমায় কেনো এই পৃথিবীতে একা থাকতে হলো। আমার কথা বাদ দিলাম, আমার বাবার কি দোষ ছিল। সে তার ডিউটি পালন করেছে। দোষ তোমার দাদা করেছিল, শাস্তি স্বরূপ মৃত্যু দন্ড হয়েছে। কিন্তু তোমার বাবা আর চাচা মিলে সম্পত্তির লোভে পড়ে আমার দাদা এবং বাবাকে মারলো। কি জানত, তোমার বাবা আর চাচা তোমার দাদা মরাতে একটুও কষ্ট পায় নি। তারা খুশি হয়েছে যে তাঁরা একাই খান ইন্ডাস্ট্রি ভোগ করতে পারবে। কিন্তু তাঁরা হয়তো ভুলে গেছে মিস্টার নোহান খানের সন্তান রা ঠিক তাঁর মতোই হবে। সো দেবর জি তোমার আমার সম্পর্ক শুধু ভাবী আর দেবর এর মধ্যেই থাকবে। এইখানে কি হয়েছে ভুলে যাও। আমার সাথে তোমার বাবা আর চাচার মত লাগতে এসো না, নাহলে এখন তো জানটা নিলাম না তখন ঠিক নিয়ে নিবো একদ….. ম সাইলেন্ট ভাবে। ”
আর কিছু শুনতে পেল না আদিত্য। তার আগেই ঢলে পড়লো নিহার গাঁয়ের উপর।
মেঘা চিন্তায় পায়চারি করতে করতে এক পর্যায়ে বসে পড়লো মেঝেতেই। হাতের নখের দিকে তাঁকিয়ে ঠোঁট উল্টে ফেলল। এতো সুন্দর নখ গুলোকে চিন্তায় কখন যে কামড়ে ভেঙে ফেলেছে সেদিকে খেয়াল ছিল নাহ। তার মাথায় বিকাল থেকে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলোই ঘুরছে। কতো শত প্রশ্ন মনে জমা হলো কিন্তু যে উত্তর দিবে সে মেমসাহেব সেজে হাওয়া হয়ে গেলো।
পার্ক থেকে এসে নিহা সেই যে রূমে ঢুকেছিলো একসাথে ঐভাবে 9 টার দিকে বের হয়েছিল। কিছুই জানতে পারে নি মেঘা।
ঘড়িতে তাকিয়ে দেখল রাত 1 টার কাছাকাছি। এর মধ্যে কয়েকবার আদ্রিজ ভাই কল দিয়েছে। একবার রিসিভ করে নিহার বলে দেওয়া কথাটাই বলেছে। তার পর থেকে আর ফোন রিসিভ করে নি।
ভয় ও হচ্ছে প্রচুর। নিহা কি কোন খারাপ কাজের সাথে জড়িত আছে নাকি।
এসব চিন্তা করতে করতে সামনে তাকাতেই চিৎকার দিয়ে উঠলো।
বুকে থু থু দিয়ে রেগে সামনে বসা ব্যাক্তিটির দিকে তাকালো।
“কোন ভাবনায় ছিলি বলতো। আর এতো রাত না ঘুমিয়ে মেঝেতে বসে আছিস কেন?”
“তো কি তোর ঘাড়ে বসে থাকবো। আর কি চিন্তা করছি মানে। সেই বিকাল থেকে কিসব হয়ে যাচ্ছে আমার চোখের সামনে দিয়ে আর আমি চিন্তা না করে ঘুমাবো। মেমসাহেব সেজে সেই যে বের হলি এখন কয়টা বাজে রা….. র…রক্ত.. তোর পোশাকে রক্ত কেন? কার রক্ত, কিসের রক্ত?”
“এক অমানুষের।”
“মা…..মানে?”
“ভয় পাচ্ছিস নাকি। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। তারপর সব বলবো।”
*
বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে নিহা এবং মেঘা। মেঘার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে নাহ। শুধু অবাক হয়েই তাকিয়ে আছে নিহার দিকে।
এই মেয়ে একজন সাইলেন্ট কিলার। তার প্রিয় বোনের মত বান্ধবী কিনা একজন সাইলেন্ট কিলার।
অতিরিক্ত চিন্তায় আর হটাৎ করে এতো কিছু শুনায় মস্তিষ্ক এতো চাপ আর নিতে পারলো না।
লুটিয়ে পড়লো নিহার গাঁয়ের উপর।
নিহা দ্রুত ধরে বলে উঠলো,
“বুঝলাম না বইন তোরা সব আমার গাঁয়ের উপরেই কেন পড়ছ। এখন আবার আদ্রিজ বাবুর সাথে কথা বলতে হবে। না জানি কতটা রেগে আছে।”
*
*
#চলবে