ভালোবাসার রং মিছিল পর্ব -২৪+২৫

#ভালোবাসার_রং_মিছিল💚
#লেখিকা:ইশা_আহমেদ
#পর্ব_২৪

৫৩.
সন্ধ্যায় সবাই বসেছে আড্ডা দিতে।অর্ষাও আছে বেশ হাসিখুশি ভাবেই কথা বলছে সে সবার সাথে।তাদের ডিপার্টমেন্টের একটা ছেলে গিটার বাজাচ্ছে আর একজন মেয়ে গান গাইছে।অর্ষারও গান গাইতে ইচ্ছে করছে কিন্তু এই সবার মাঝে বলতেও কেমন লাগছে।টিচারও সবার সাথে বসেছে।রুশান অর্ষার চেহারা দেখে বুঝতে পারে।

সে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,,,,”গাইস আমাদের অর্ষাও খুব ভালো গান করে”

সবাই অর্ষাকে গান গাইতে বলে।অর্ষা সেই ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলে,,,

—“তোমার গিটারটা দাও,আসলে রুশান গিটার না বাজালে গান গাইতে একটু অসুবিধা হয়”

ছেলেটাও হাসি মুখে গিটারটা দিয়ে দেয়।রুশান গিটার বাজাতে শুরু করে।অর্ষা এক পলক তাকায় ইরহামের দিকে।ইরহাম তার দিকেই তাকিয়ে আছে।আজকে অর্ষা চোখ সরায় না।ইরহামের দিকে তাকিয়েই গাইতে শুরু করে,,,,

আমায় বলে বলুক লোকে মন্দ
বিরহে তার প্রাণ বাঁচে না
বলে বলুক লোকে মন্দ
বিরহে তার প্রাণ বাঁচে না

দেখেছি…..দেখেছি রুপ সাগরে
মনের মানুষ কাঁচা সোনা
দেখেছি রূপ সাগরে
মনের মানুষ কাঁচা সোনা

অর্ষা থেমে যায়।সবাই অনেক প্রসংশা করে।সবাই কিছুক্ষণ আড্ডা দেয়।এরপর রাতের খাবার খেতে যায়।সবাই বিভিন্ন ধরনের মাছের আইটেম টেস্ট করে।মাছের আইটেমগুলো অনেক মজার।

৫৪.

উশা অর্ষা নিজেদের রুমে আসে।অর্ষা রুমে এসে ধপ করে শুয়ে পরে।উশা টেনে অর্ষাকে উঠায়।অর্ষা বিরক্তি নিয়ে তাকায় উশার দিকে।উশা মুচকি হাসে অর্ষাকে বিরক্ত হতে দেখে।উশা একটা শপিং ব্যাগ অর্ষার হাতে দিয়ে বলে,,,,

—“যা এটা পরে আয় তাড়াতাড়ি”

অর্ষা শপিংব্যাগটা খুলে অবাক হয়ে যায়।শপিং ব্যাগে কালো রঙের একটা শাড়ি সাথে ম্যাচিং করা জুয়েলারি ফুল সবাই আছে।অর্ষা বিষ্ময়কর কন্ঠে বলে,,,

—“কে দিয়েছে এগুলো তোকে।এতো সুন্দর এগুলো।আমি পরবো কেনো?”

উশা বিরক্ত হয়ে বলে,,,”পরতে বলেছি পরবি এতো কথা কেনো বলিস যা পরে আয়”

অর্ষাও জেদ দেখিয়ে বলে,,

—“তুই যদি না বলিস তবে আমিও পরবো না”

—“ইরহাম স্যার নিহানা ম্যামকে প্রপোজ করবে তাই আমাদের সবাই ভালো জামাকাপর পরে যেতে বলেছে হয়েছে তোর যা এবার”

অর্ষা আকাশ থেকে পরে।ইরহাম নিহানাকে প্রপোজ করবে শুনেই মাথায় আগুন ধরে যায়।কিন্তু মনে মনে কিছু একটা ভেবে বাঁকা হেসে রেডি হতে যায়।উশা হাসে।বোকা মেয়ে বুঝতেও পারলো না সে মিথ্যা বলেছে।অর্ষা শাড়ি পরে বের হতেই উশা মুগ্ধ হয়।অর্ষাকে শাড়িটা পরে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।উশাও একটা শাড়ি পরেছে।অর্ষা সাজতে বসেছে।

উশা ভেবে পাচ্ছে না অর্ষার এতো সাজার কারণ।কিন্তু এতটুকু জানে এই মেয়ে অকারণে কিছু করে না।কারণেই করছে।অর্ষা রেডি হয়ে উশার সাথে বাইরে বের হয়।দূরে ইরহামকে কালো পাঞ্জাবি পরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে।নিহানাকেও নিজের রুম থেকে বের হতে দেখে।

অর্ষা সব থেকে অবাক হয় রুশান মুহিব আর নাইমকে ইরহামের সাথে দেখে।রুশান তো হেসে হেসে কথা বলে যাচ্ছে।অর্ষা মনে মনে ভীষণ ক্ষুব্ধ হয় রুশান মুহিব নাইমের উপর।আশেপাশে কাউকে দেখতে পায় না অর্ষা।এতো রাতে অবশ্য কারো থাকার ও কথা না।এখন রাত ১২ টার উপরে বাজে।

অর্ষা কিছুদূর আসতেই ইরহামকে দেখতে পায় না।হঠাৎ কেউ পেছন থেকে চোখ বেঁধে দেয়।আর কোলে তুলে নেয়।অর্ষা ভয় পেয়ে লোকটার কলার খামচে ধরে।লোকটার পারফিউমের ঘ্রানটা চেনে অর্ষা।ইরহাম এই ব্রান্ডের পারফিউম ইউস করে।অর্ষা রেগে ইরহামকে বলে,,

—“নামান আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমায়।অসভ্য পুরুষ মানুষ আমায় নামান।”

ইরহামের বুকে কিল থাপ্পড় ঘুসি মেরে যাচ্ছে অর্ষা।এতে ইরহামের হেলদোল নেই।অর্ষা হাত পা ছোড়াছুড়ি করতে থাকে নামার জন্য।কিন্তু ইরহাম তো ইরহাম সে কি ছাড়ার মানুষ।আরো শক্ত করে ধরে।অনেক সময় হাঁটার উপর এক জায়গায় অর্ষাকে দাঁড় করিয়ে দেয়।ইরহাম একটু একটু করে সরে যায় অর্ষার কাছ থেকে।

অর্ষা ভয় পেয়ে যায়।দ্রুত চোখ থেকে কাপড়টা সরিয়ে ফেলে।সামনে তাকাতেই এমন দৃশ্য দেখে যা কল্পনাও করতে পারিনি অর্ষা।তার সামনে ইরহাম হাঁটু মুরে একঝুড়ি চুড়ি নিয়ে যার ভেতরে বিভিন্ন রঙের চুড়ি আছে।সে দাঁড়িয়ে গোলাপের পাপড়ির উপর।ইরহাম অর্ষার ভাবনার মাঝেই বলে ওঠে,,

—“জানি না কবে কখন কিভাবে ভালোবেসেছি তোমায়।শুধু এতোটুকুই জানি ভালোবাসি ভীষণ ভালোবাসি তোমায়।আই লাভ ইউ মাই লাভ।তোমার চোখের প্রেমে পরলেও ভালোবেসেছি নিজের অজান্তে।তোমার দুষ্টমি তোমার রাগ সব কিছুকেই ভালোবাসি আমি।প্রেয়সী তোমার হাতের চুড়ির ঝনঝন শব্দ আমার বুকে ঝড় তোলে।তোমার ওই তীক্ষ্ণ চাহুনি আমায় মাতাল করে।হবে কি আমার সুখপাখি,আমার মনের রাজ্যের রানী”

অর্ষা ঘোরের ভেতরে আছে।ইরহামের কথাগুলো কানে বাজছে।মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ইরহামের মুখপানে।ইরহাম অর্ষার অবস্থান বুঝতে পারে।মৃদু হেসে উঠে দাঁড়ায়।অর্ষার কাছে এসে ওর হাতে ঝুড়ি থেকে এক সেট কালো রেশমি চুড়ি নিয়ে পড়িয়ে দেয়।অর্ষার ঘোর কাটে।ও রেগে ইরহামকে ধাক্কা দিয়ে বলে,,,

—“অসভ্য পুরুষ দরকার নেই আপনার ভালোবাসা আমার।নিহানা আর সেদিন হাত ধরে হাটা মেয়েকে ভালোবাসি বলুন।”

ইরহাম ঠোঁট প্রসারিত করে হাসে।অর্ষা যে অভিমান করে কথাগুলো বলছে খুব ভালো করেই জানে সে।সে অর্ষার দিকে ঝুঁকে মাতাল করা কন্ঠে বলে,,,

—“আর ইউ জেলাস জান?হুমমম আই নো ইউ লাভ মি সো মাস বউ”

অর্ষা অন্যদিকে তাকিয়ে বলে,,,

—“মোটেও না আমি কেনো জেলাস হবো।আমি তো আপনাকে ভালোবাসি না।আপনাকে ভালোবাসার অনেক মানুষ আছে জানি আমি।তাদের কাছে জান”

ইরহাম নিচের ঠোঁট কামড়ে হাসে।অর্ষা আরো একবার প্রেমে পরে ইরহামের।ইরহাম অর্ষার কোমড়ে হাত দিয়ে টেনে নিজের কাছে আনে।দুজনের মাঝের দূরত্ব ঘুচিয়ে ফেলে।অর্ষার হার্টবিট বাড়ছে,শরীর কাঁপছে।ইরহাম প্রেয়সীর কপালে কপাল ঠেকিয়েছে।ইরহামের তপ্ত নিঃশ্বাস অর্ষার মুখে আছড়ে পরছে।

—“তোমার কাজল কালো চোখ আমায় মাতাল করছে প্রেয়সী।”

অর্ষা টেনে টেনে বললো,,”দূরে সসসসরুন পপপপ্লিজ”

ইরহাম অর্ষাকে কোলে তুলে নিয়ে চেয়ারে বসালো।রুশান নাইম মুহিব অনেক কষ্টে ডেকোরেশন করেছে।এখানে ক্যান্ডেল লাইট ডিনারের ব্যবস্থা করেছে।অর্ষার চোখ জুড়িয়ে যায় ডেকোরেশন দেখে।ইরহাম হাঁটু মুড়ে অর্ষার সামনে বসে বলে,,,

—“জান প্লিজ উত্তরটা দাও”

জান শব্দটা অর্ষার মনে ঝড় তোলে।নেশাক্ত কন্ঠ ইরহামের।অর্ষা নিজেকে সামলাতে কষ্ট হয়।সে এই মানুষটাকে ফেরাতে পারবে না।অর্ষা চোখ বন্ধ করে বলে উঠে,,,,

—“আমিও ভালোবাসি আপনাম আমার অসভ্য পুরুষ।আমি আপনার মনের রাজ্যের রানী হয়ে থাকতে চাই আমার জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত।”

ইরহাম উঠে নিজের ওষ্ঠদ্বয় অর্ষার কপালে ছোঁয়ায়।অর্ষা শিউরে ওঠে।এরপর ইরহাম অর্ষাকে কোলে তুলে বিচে নিয়ে আসে।বাতাসে অর্ষার চুলগুলো উড়ছে।ইরহাম মুগ্ধ হয়ে নিজের প্রেয়সীকে দেখছে।অর্ষার কোমড় চেপে ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে ইরহাম।অর্ষা ইরহামের বুকে মাথা রাখে।অর্ষার শান্তি লাগছে ইরহামের বুকে মাথা রেখে।

—“আমায় ছেড়ে যাবেন না প্লিজ কখনো,থাকতে পারবো না”

—“তোমাকে ছাড়ার কথা ভাবার আগে মৃত্যু হোক আমার।তুমি চাইলেও আমার সাথে থাকতে হবে না চাইলেও।ভালোবাসি তোমায়।নিজের ভালোবাসাকে কিভাবে নিজের কাছে রাখতে হয় জানি আমি।”

দু’জন রাতের সমুদ্রবিলাস করে রুমে আসে।আজকে অর্ষা ইরহামের সাথেই থাকবে।উশার সাথে যে নাইম আছে তা খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে।তাই ইরহামের সাথে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।রুমে এসে অর্ষা বিপদে পরে।সে তো ভারি শাড়ি পরে ঘুমাতে পারবে না কি করবে এখন।

—“মিস্টার অসভ্য পুরুষ আমি ঘুমাবো কি করে এই ভারি শাড়ি পরে”

—“আমি অসভ্য পুরুষ?”

—“হ্যাঁ তা নয়তো কি।আপনি কি সাধু পুরুষ নাকি।হুটহাট কোমড় জড়িয়ে ধরেন এই করেন ওই করেন”

ইরহাম অর্ষার দিকে এগোতে এগোতে বলে,,,

—“কি কি করি বলো”

অর্ষা পেছাতে পেছাতে দেওয়ালের সাথে পিঠ ঠেকে যায়।অর্ষা তুতলিয়ে বলে,,,

—“দে.. খুন এগোবেন না মোটেও দূরে সরুন”

ইরহাম দেওয়ালের দুপাশে হাত রেখে অর্ষার দিকে ঝুঁকে বাঁকা হেসে বলে,,,

—“আমি অসভ্য পুরুষ যখন তখন তো একটু অসভ্যতামি করেই দেখাতে হয় তাই না”

অর্ষাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ইরহাম কোমড় জড়িয়ে নিজের কাছে এনে অর্ষার ওষ্ঠদ্বয়ের সাথে নিজের ওষ্ঠদ্বয় মিলিয়ে দেয়।দ্বিতীয় কিস অর্ষার।ইরহাম পাগলের মতো চুমু খেয়ে যাচ্ছে।অর্ষা ছাড়াতে চাইলেও পারে না।অর্ষা ইরহামের গলা জড়িয়ে ধরে।বেশ কিছুক্ষণ পর ইরহাম অর্ষার ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে অর্ষার নাকে নাক ঘষে বলে,,,

—“এখন থেকে তোমার এই টক,ঝাল,মিষ্টি টর্চারগুলো সহ্য করতে হবে জান”

অর্ষা লজ্জায় ইরহামের বুকে মুখ লুকায়।ইরহাম জড়িয়ে ধরে শক্ত করে অর্ষাকে।অর্ষাও জড়িয়ে ধরে ইরহামকে।ইরহামের বুকে মাথা রেখে অর্ষা মনে মনে বলে,

—“আমি ভালোবাসা বলতে আপনাকেই বুঝি আমার অসভ্য পুরুষ।”

ইরহাম অর্ষাকে তার একটা টিশার্ট দেয় পরতে।অর্ষা টিশার্ট পরে বের হতেই ইরহাম তাকে দেখে হাসতে শুরু করে।টিশার্টটা এতো ঢোলা হয়েছে অর্ষার যে অর্ষার মতো আরো একজনও ঢুকতে পারবে ভেতরে।ইরহাম হো হো করে হাসতে হাসতে বলে,,

—“জান ইউ লুকিং সো ফানি এন্ড হটটটটট”

অর্ষা রেগে ইরহামের দিকে বালিশ ছুড়ে মারতে থাকে।ইরহাম তবুও হাসতে থাকে।অর্ষা ইরহামকে মারতে মারতে ইরহামকে নিয়ে বিছানায় পরে যায়।ইরহাম নিচে অর্ষা ইরহামের বুকের উপর।ইরহাম অর্ষার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।অর্ষা সেই নেশাক্ত দৃষ্টিতে বেশি সময় তাকিয়ে থাকতে পারে না।চোখ ঘুরিয়ে নেয়।

#চলবে#ভালোবাসার_রং_মিছিল💚
#লেখিকা_ইশা_আহমেদ
#পর্ব_২৫

অর্ষা সেই নেশাক্ত দৃষ্টিতে বেশি সময় তাকিয়ে থাকতে পারে না।চোখ ঘুরিয়ে নেয়।ইরহাম অর্ষার মুখের সামনে পরে থাকা চুল কানের পেছনে গুঁজে দেয়।অর্ষার হার্টবিট জোরে জোরে যাচ্ছে।নিশ্বাস ভারি হয়ে এসেছে।ইরহাম অর্ষাকে নিচে ফেলে নিজে অর্ষার উপরে উঠে যায়।অর্ষা চোখ বন্ধ করে আছে।অর্ষার ইরহামের ওই মাতাল করা চোখের দিকে তাকানোর সাহস নেই।

—“তুমি কাছে থাকলে কেনো আমার সব কিছু এলোমেলো হয়ে যায়।মাতাল হয়ে যাই আমি।”

অর্ষা কাঁপছে ভীষণ ভাবে।এই লোকটা তার আশেপাশে থাকলে তারও সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়।ইরহামের নেশাক্ত কন্ঠ অর্ষার ভেতরে ঝড় তুলে।ইরহাম অর্ষাকে কোলে তুলে নিয়ে রুমের বেলকনিতে যায়।বেলকনি থেকে সমুদ্র স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।দু’জন ভালোবাসার মানুষের আজ মিলন হয়েছে তাদের মান অভিমানের পালা শেষ হয়েছে।তবে আদেও কি তাদের টকঝাল মিষ্টি ঝগড়া শেষ হয়েছে।মোটেও না অর্ষা তার অসভ্য পুরুষের সাথে সারাজীবন ঝগড়া কডরবে।

অর্ষা ইরহামের কাঁধে মাথা রেখে সমুদ্রের পানে তাকিয়ে আছে।ইরহাম তার পাশে বসে থাকা একান্ত ব্যক্তিগত চাঁদকে দেখছে।মেয়েটা তাকে পাগল বানিয়ে ছাড়লো।অর্ষা বকবক করছে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ইরহাম দেখে চলেছে তার প্রেয়সীকে।অর্ষা কথা বলতে বলতে ইরহামের কাঁধে মাথা রেখেই ঘুমিয়ে পরে।

—“পাগলি বউ আমার,পাগল করে ছাড়লে আমাকে”

ইরহাম অর্ষাকে কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দেয়।অর্ষার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে ইরহাম বেশ কিছুক্ষণ।এরপর অর্ষার কপালে চুমু খেয়ে অর্ষার পাশে শুয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।

৫৫.

সকালে অর্ষার ঘুম ভাঙতেই নিজের উপর ভাড়ি কিছু অনুভব করে।কেউ তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে আছে।চোখ খুলে ইরহামের ঘুমন্ত মুখটা দেখে।এক নিমেষেই মন ভালো হয়ে যায় অর্ষার।অর্ষা ইরহামের কপালে টুপ করে একটা চুমু খায়।

—“বউ আমার ঘুমের সুযোগ নিচ্ছো কেনো?জেগে থাকলেই তো কয়েকটা চুমু দিতে পারো।আমি কিন্তু কিছু মনে করব না”

অর্ষা হকচকিয়ে যায়।ইরহাম চোখ বন্ধ রেখেই কথাগুলো বলল।অর্ষা ভেবেছিলো ইরহাম ঘুমিয়ে আছে।কিন্তু তার অসভ্য পুরুষ যে না ঘুমিয়ে তাকে বোকা বানাচ্ছিল।অর্ষা ইরহামের কাছ থেকে উঠে যেতে চায়।ইরহাম অর্ষার কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে রাখে।অর্ষা মিথ্যা রাগ দেখিয়ে বলে,,,

—“আপনি আমাকে ধোকা দিয়েছেন জেগে থেকেও ঘুমিয়ে থাকার অভিনয় করেছেন বদ লোক”

ইরহাম চোখ খুলে তাকায় অর্ষার দিকে।অর্ষা সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নেয়।ইরহাম তা দেখে ঠোঁট কামড়ে হাসে।অর্ষাকে ছেড়ে দেয়।অর্ষা দ্রুত উঠে পরে।ইরহাম ও উঠে দাঁড়ায়।ইরহাম ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে চলে যায়।অর্ষা ফোন বের করে সময় চেক করে ৭ টা বাজে।এখনও কেউ ওঠেনি।এখনই তার এখান থেকে নিজের রুমে চলে যাওয়া উচিত।

যদিও তারা হ্যাসবেন্ড ওয়াইফ তবুও সবার সামনে ইরহামের রুম থেকে বের হতে অর্ষার অস্বস্তি হবে।ইরহামকে বলে যাবে বিধায় ইরহামের অপেক্ষা করছে অর্ষা।ইরহাম বের হতেই অর্ষা উঠে দাঁড়ায়।

—“আমি এখন আমার রুমে যাচ্ছি।সবার সামনে বের হতে আমার লজ্জা লাগবে।”

—“বউ তুমি এইভাবে বের হতে চাইছো কিন্তু এভাবে তো তোমাকে শুধু আমিই দেখবো।আর কেউ না”

অর্ষার নিজের দিকে চোখ পরে।ওড়না নেই তার শরীরে।লজ্জা পায়।সে এতো সময় ওড়না ছাড়া ছিলো ইরহামের সামনে।ইশ কি লজ্জা।দ্রুত ওড়না খোঁজে ওড়না নিয়েই ভালোভাবে গায়ে জড়িয়ে নেয়।ইরহাম তা দেখে বাঁকা হাসে।অর্ষা ইরহামের এই লুকের ও প্রেমে পরে।ইরহাম পকেটে হাত গুঁজে তার দিকে নেশাক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

অর্ষা কিছু না বলে বের হয়ে যেতে নেয় তখনই পেছন থেকে ইরহাম বলে ওঠে,,,

—“ড্রেস চেঞ্জ করে ফার্স্ট বাইরে আসো”

অর্ষা মাথা নাড়িয়ে বের হয় রুম থেকে।রুম থেকে বের হয়ে আসে পাশে তাকিয়ে দেখে কেউ আছে কিনা।কাউকে না দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে পা বাড়ায় নিজের রুমের দিকে।রুমে এসে নক করে।নাইম ঘুম ঘুম চোখে দরজা খোলে।অর্ষাকে দেখে লাফিয়ে কয়েক পা পিছিয়ে যায়।অর্ষা মুখ বাঁকিয়ে নাইমকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে রুমে ঢোকে।

অর্ষা রুমে ঢুকতেই নাইমের খেয়াল আসে।দ্রুত উশাকে টেনে তোলে।এরপর নিজে বাইরে চলে যায়।অর্ষা উশার দিকে তাকিয়ে একটা জামা বের করে ওয়াশরুমে চলে যায়।উশার মাত্র ঘুম ভেঙেছে কালকে নাইম তাকে ঘুমাতে দেয়নি সারা রাত গল্প করেছে আর দুষ্টমি করেছে।অর্ষাকে দেখে থতমত খেয়ে তাকিয়ে থাকে।

৫ মিনিট পর অর্ষা বেরিয়ে দেখে উশা বলদের মতো হা করে তাকিয়ে আছে।সে মুখ বাঁকিয়ে বলে,,,

—“মুখ বন্ধ করে ফ্রেশ হয়ে আয়।তোদের রোমান্সের ঠেলায় আমার ইরহাম স্যারের সাথে থাকতে হয়েছে সয়তান মাইয়া”

—“তোমার তো আরো সুবিধা হয়েছে জানু।তুমি নিজেও স্যারের সাথে রোমান্স করে এসেছো”

—“তোকে বলেছে না নিজে যা আমাকেও তাই ভাবিস নাকি”

অর্ষা বেরিয়ে যায় রুম থেকে।বাইরে এসে দেখতে পায় ইরহাম দাঁড়িয়ে আছে তার অপেক্ষায়।সে মৃদু হেসে নিজের প্রেমিক পুরুষের কাছে চলে আসে।এই সুদর্শন পুরুষটা তার একান্তই তার।ভালোবাসে সে তার অসভ্য পুরুষকে।

—“এতো সময় লাগে আসতে দ্রুত আসতে বলেছিলাম আমি”

—“জামা চেঞ্জ করে আসবো তো”

ইরহাম অর্ষার দিকে শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সোজা হাঁটতে থাকে।অর্ষাও ইরহামের সাথে হাঁটতে থাকে।অর্ষা আলতো হেসে ইরহামের পকেটে গুঁজে রাখা হাতের বাহু চেপে ধরে।ইরহাম মুচকি হাসে।ইরহামের চুলগুলো বাতাসে উড়ছে।চুলগুলো এসে চোখের সামনে পরেছে।দেখতে ভীষণ কিউট লাগছে।

ইরহাম অর্ষাকে নিয়ে ডাব খেতে আসে।দু’জন ডাব খায়।এরপর সমুদ্র সৈকতে এসে পানিতে পা ভিজিয়ে হাঁটে দু’জন।ইরহামের মনে হচ্ছে সময়টাকে এখানেই থামিয়ে দিতে।সে হাজার বছর তাকিয়ে থাকতে পারবে নিজের প্রেয়সীর দিকে তাকিয়ে।অর্ষা হঠাৎ করে তাকায় ইরহামের দিকে ইরহাম এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অর্ষার দিকে।

—“এই যে মিস্টার অসভ্য পুরুষ এইভাবে তাকাবেন না আমি জানি আমি সুন্দরী।এভাবে তাকিয়ে আর বোঝাতে হবে না।”

অর্ষা ভেবেছিলো ইরহাম হয়তো অন্যদিকে তাকাবে।কিন্তু ইরহাম অর্ষার কোমড় চেপে ধরে নিজের দিকে টেনে নিয়ে বলে,,

—“আমি জানি আমার বউ সুন্দরী।আর সেই রূপের দিকে তাকানোর অধিকার শুধু আমার আছে।”

অর্ষা ভেংচি কেটে বলে,,,”এসেছে আমার বউ ওয়ালা”

৫৬.

সকালে নাস্তা করে সবাই এখানের মার্কেটের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।আজকে রাতেই তারা নিজেদের গন্তব্যে রওনা দিবে।রুশান তো সকাল থেকে অর্ষা আর উশার মজা উড়াচ্ছে।অর্ষা রেগে কয়েকটা বসিয়েও দিয়েছে।কিন্তু রুশান তো রুশান।এখনও বলে যাচ্ছে।অর্ষাও এবার বলে,,,

—“তো তুই নিজের শত্রুর সাথে কিভাবে মিলে গেলি বলতো কাল রাতে হাসছিলি তো দুজন বেশ”

—“বুঝিস না ইলমাকে নিজের করতে হলে তো তার বড় ভাইকে ইমপ্রেস করতে হবে তাই করেছি”

অর্ষা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় রুশানের দিকে।রুশান বোকা হেসে ফোনের দিকে তাকায়।আসলে কালকে রাতে ইরহাম রুশান মুহিব নাইমকে সব খুলে বলে এবং তারা সবাই মিলে ইরহাম কি করে অর্ষাকে প্রপোজ করবে তার প্লান করে।

মার্কেটে এসে সবাই যার যার কাপল বা ফ্রেন্ডের সাথে ভাগ হয়ে যায়।উশা নাইম একসাথে গিয়েছে।অর্ষাকে ইরহাম নিয়ে গিয়েছে। বেচারা আপাতত সিঙ্গেল মুহিব আর জন্ম থেকে সিঙ্গেল রুশাইন্না একসাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

ইরহাম অর্ষাকে নিয়ে মার্কেটের বিভিন্ন দোকান ঘুরে।দোকান থেকে ইরহাম অর্ষাকে পছন্দ করে বিভিন্ন ঝিনুক মুক্তার জিনিস কিনে দিচ্ছে।অর্ষার চোখ পরে চুড়ির দিকে।মনে পরে কালকের কথা সবাই গোলাপ রিং দিয়ে প্রপোজ করলেও ইরহাম তাকে চুড়ি দিয়ে প্রপোজ করেছে।

—“আচ্ছা আপনি আমায় চুড়ি দিয়ে কেনো প্রপোজ করলেন অসভ্য পুরুষ”

—“আমার প্রেয়সীর চুড়ি পছন্দ।তার চুড়ির ঝনঝন শব্দ আমায় মাতাল করে,বুকের মাঝে শান্তি দেয় তাই তো তাকে ভিন্ন ভাবে নিজের মনের কথা জানানো”

#চলবে

আসসালামু আলাইকুম।ব্যস্ত ছিলাম গতকালকে ভিষণ।তাই গল্প দেওয়া হয়নি দুঃখিত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here