#ভালোবাসার_রাত
#Season_2
#রোকসানা_রাহমান
পর্ব (৭+৮)
সন্ধ্যার হাঁসিমাখা ধন্যবাদটাও রাত এতদুর থেকে পড়ে ফেলেছে। যে ছাতার নিচে রাত আর সন্ধ্যা থাকার কথা সে ছাতার নিচে অন্য ছেলে?? রাগে পুরো শরীর দিয়ে যেন আগুন জ্বলছে রাতের। সেই আগুনে বৃষ্টির শুদ্ধ,ঠান্ডা পানিগুলোও গরম হয়ে বাষ্পাকারে উড়ে যাচ্ছে!
রাত সন্ধ্যার দিকে চেয়ে আছে নির্লিপ্তে। ও কি আমাকে দেখতে পায়নি?? নাকি ইচ্ছে করেই না দেখার অভিনয় করে যাচ্ছে?? তুই কি এখন অভিনয়ও শিখে গিয়েছিস সন্ধ্যা?? তোর পরিবর্তনের এতো চতুরতা আমি যে মেনে নিতে পারছিনা।
সন্ধ্যা চলে যাওয়ার পানে চেয়ে রয়েছে রাত। আকাশ চিড়ে ভেঙে পড়া বৃষ্টির অতিক্ষুদ্র ফুটাকেও যেন রাত গুনে নিচ্ছে। শরীরের টুপটাপ পড়ে ছিটকে যাচ্ছে বৃষ্টির টুকরো। আজ সে নড়বেনা এখান থেকে। চোখের বৃষ্টিতে নয় আজ সে আকাশের মুশলবৃষ্টিতে নিজেকে ভেজাবে।
সন্ধ্যা চোখের আড়াল হতেই রাত আধখোলা ছাতাটা দুরে ঢিল মেরে ফেলে দিলো। ইচ্ছে করছে সব ভেঙে গুড়িয়ে দিতে। কিন্তু এই খোলা রাস্তায় সে কি ভাঙবে??
~~
শরীর ভিজে চুপচুপে হয়ে আছে রাতের আপাদমস্তক। মনে হচ্ছে সে নিজেই এখন আকাশ বনে আছে। আর সারা শরীর বেয়ে যাচ্ছে বৃষ্টির পানির ঝরণা প্রপাত। তিয়ামতী গলায় শাসনীর সুরে বললো,,
“” এভাবে ভিজেছিস কেন,রাত?? তোর ফর্সা শরীরটা কেমন কালোরঙ ধারণ করে আছে। আর চোখটা দেখেছিস,লালের বন্যা।””
রাতের দায়সারা উত্তর,,
“” ইচ্ছে হলো তাই।””
তিয়ামতীর শাসনবানী শোনার ধৈর্য্যটুকু নেই রাতের। বাহিরে এখনো অবিশ্রান্ত বৃষ্টির ঝিরিঝিরি ফোটা পড়ছে একাধারে। এই বৃষ্টির মাঝে কোথায় গিয়েছিলো সন্ধ্যা? তাও একটি ছেলের সাথে। কে এই ছেলেটি?? খুব কাছের কেউ নাকি হঠাৎ দেখা হয়ে যাওয়া কেউ?? রাত নিজের বিক্ষুব্ধ চাহনিতে সন্ধ্যাকে খুজতে ফুজতে ভিতরে ঢুকে পড়েছে। পেছন থেকে তিয়ামতীর বাক্যব্যয়ের কথা কানে আসছেনা।
সন্ধ্যাকে কোথাও না পেয়ে ওর রুমের কাছ ঘেসে এগিয়ে যাচ্ছে রাত। দরজা মেলে ভেতরে ঢুকবে তখনি রিমার বিরক্তিকন্ঠ,,
“” তুই দেখি বাড়িটাকে সমুদ্রের মধ্যে ডুবিয়ে ফেলেছিস,রাত। তুই জানিস না আমি সাতার জানিনা? যদি ডুবে মরে যায় তখন তোদের রেধে-বেড়ে খাওয়াবে কে?””
রাত পেছন ঘুরে ফুপির দিকে তাকালো। তার চক্ষুদ্বয় রাতের দিকে নয়,মেঝেতে। তাকে অনুসরন করে সেও মেঝেতে তাকিয়ে আছে। নিজের ভিজে শরীর থেকে পানির টপটপানিতে পুরো ফ্লোর ভিজে যাচ্ছে। আকাঁবাকা খালের ন্যায় সরু রাস্তাকারে ছুটে চলছে আপনমনে। রাত ছোট্ট করে বললো,,
“” সরি,ফুপি।””
“” তোর কি মনে হয় এখন সরি বললেই এই সমুদ্র শুকিয়ে যাবে?? আচ্ছা তোর মা,আমার ছোটবেলার বান্দুবী,কাকার মেয়ে,আমার ভাইয়ের বউ তাই এখনো ভালোবেসে আমি একাহাতে ঘর সামলাচ্ছি। আর তুই আমার বাবার একমাত্র নাতি,আমার ভাইয়ের ছেলে,আমার বান্ধুবীর ছেলে,আমার কাকারও নাতি আবার আমারও ভাইপো তাই তোকেও ভালোবেসে একটা শক্ত কথাও শুনাইনি কখনো। কিন্তু আমি কি তোদের কিছু হইনা? আমাকে এভাবে খাটিয়ে মারছিস কেন বলতো?? আমি কি কলুর বলদ??””
রাত ঠোঁটটিপে হেঁসে মজার ছলে বললো,,
“” তুমি তো আমার হবু শ্বাশুড়ি,হবু বউয়ের আম্মু,হবু ছেলের নানি,আমার আম্মুর হবু বেয়াইন তাই জ্বালাচ্ছি। যখন এই হবুটা চলে যাবে তখন আর জ্বালাবোনা,এই তোমার সমুদ্র ছুয়ে প্রমিস করছি।””
রিমা শক্ত চাহনি নিয়ে গভীর আদরে বললো,,
“” হবু জামাই,যাও এবার গোসল করে নাও। নাহলে সর্দি লাগিয়ে তো আমার হবুটা টুপ করে মরে যাবে।””
রিমা মহাসমুদ্র বন্ধ করার ব্যবস্থাতে নেমে পড়লো। রাত সন্ধ্যার দরজার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে চলে যাওয়ার জন্য পা ফেলতেই ভেতর থেকে ডাক পড়েছে।
“” রাত ভাইয়া,ও রাত ভাইয়া।””
সন্ধ্যার এমন আদরমাখা ডাককে পিছে ফেলে এগুনোর শক্তিটুকু কি আছে রাতের?? নিজের সব রাগ ধুয়েমুছে নিংড়ে নিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়লো। রুমতো ফাঁকা তাহলে কি আমি ভুল শুনলাম?? রাত বিড়বিড় করতে করতে বের হওয়ার উপক্রম হতেই সন্ধ্যা আবার ডেকে উঠে,,
“” কই তুমি? আমার ডাক কি তুমি শুনতে পাওনা? জলদি এদিকে এসো।””
সন্ধ্যার কন্ঠধ্বনি অনুসরণ করে ওর ওয়াশরুমের দিকে এগুচ্ছে। দরজাটা ভেতর থেকে আটকানো। তবে কি ওয়াশরুমে? রাত ছোট্টকরে ডেকে উঠলো,,
“” সন্ধ্যা!””
সাথে সাথে দরজা খুলে গিয়েছে। নিজের অর্ধঢাকা পিঠটা রাতের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,,
“” কখন থেকে চেইনটা লাগানোর চেষ্টা করছি,কিন্তু পারলাম কই? তুমি এতো লেটে এলে কেন??””
সন্ধ্যার পরবর্তী কথাগুলো কি রাতের কানে ঢুকছে? তার চোখ তো অন্য জায়গায় আটকে আছে। বেগুনি রঙের জামাটা চিড়ে গিয়ে দুধারে হেলে আছে,তার ঠিকমাঝখানেই খোলা পিঠের সাদা আলো ঝলকে উঠেছে। তবে স্পষ্ট নয়। সন্ধ্যার কাধছাড়া চুলগুলো ভিজে বিভিন্নভাগে ছড়িয়ে আছে সন্ধ্যার খোলা পিঠে। চুলগুলো সরালেই ওর বক্ষবন্ধনীর কালো ফিতের এটে যাওয়াটা হয়ে উঠবে অনাবৃতে!
সন্ধ্যার সদ্যগোসলের স্নিগ্ধ শরীরে একটু ছুয়ে দিতে ইচ্ছে জেগে উঠলো। ভেজা চুলের,কোমল সুগন্ধে ডুবে যেতে ইচ্ছে করছে সুখস্পর্শে। একটু কি ছুয়ে দিবে? হস্ত ছোয়া অথবা অধর ছোয়ায়?
রাতের ভেতরের অস্থিরতায় উথালপাথাল হয়ে যাচ্ছে সব। এতো কেন উতলা হয়ে যাচ্ছে আমি? এতো কেন ছুয়ে দিতে ইচ্ছে করছে?? আগে তো কখনো এমন হয়নি। সন্ধ্যার শরীরদর্শন তো আমার জন্য নতুন নয়। তাহলে?? তবে কি ওর দুরত্বতা আমার ভেতরটা খাইখাইপনা জাগিয়ে দিচ্ছে?? ওকে কাছে পাওয়ার প্রবলটাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে! যে কাছে পাওয়ার ইচ্ছেটাকে এতোদিন দমে রেখেছিলাম সেটা এতো বেশি উগ্র হয়ে জাগছে কেন?? কেন কেন??
“” কি হলো তুমি কি আমার আটকে যাওয়া চেইনটার দুরত্ব মাপছো? কতটা শক্তি ব্যয় করবে তার হিসেবনিকেশ করছো?? এইভাবে আর কতক্ষণ দাড়িয়ে থাকবো। আমার খোলা পিঠটাকে এবার তো একটু বস্ত্র দান করার ব্যবস্থা করো। চেইনটা লাগাও রাত ভাইয়া।””
সন্ধ্যার কথাতে রাতের হুশ এলো। চোখের চাহনিকে প্রশ্রয় না দিয়ে ওর চুলে হাত দিয়েছে।
“” এই সন্ধ্যেবেলায় গোসল করলি যে?””
“” বৃষ্টিতে ভিজে গিয়েছিলাম।””
“” তুই কি সবে বাসায় এসেছিস?””
“” না,তোমার আগে এসেছি। এসেই তো গোসলে ঢুকলাম।””
রাত চুল থেকে হাতটা সরিয়ে নিলো।
“” আমি ফুপিকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।””
রাত দ্রুত সন্ধ্যার রুম থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছে। এখানে আর সে এক মুহুর্তও দাড়াবেনা৷ এক মুহুর্তও না। সকালে বেড়িয়ে রাত করে বাড়ি ফেরা। তাও এই বৃষ্টিবাদলায়?? কই ছিলি তুই? কার সাথে ছিলি?? তুই কি পদে পদে আমার চোখের আড়াল হয়ে যাচ্ছিস?? তুই কি পেছন ফিরে একবারও দেখছিস না,তোর পদের নিচিহ্ন জায়গাটা কেমন গভীর কালো হয়ে আমি হারিয়ে যাচ্ছি???
রাত ওয়াশরুমে ঢুকে মাথায় পানির ঝরণা ছেড়ে দিয়েছে। শরীরের উত্তাপটা ছেড়ে দেওয়ার ইচ্ছেতে। জামাকাপড় যেমন ছিলো তেমনি রয়েছে। চেন্জ করবেনা সে। এভাবেই থাকবে। আজ সে ভেজারাত কাটাবে।
রাত যত গভীর হচ্ছে রাতের শরীরটা তত গরম হয়ে আসছে। যন্ত্রণারা মাথাটা নাড়া দিয়ে তুলছে। চোখ দিয়ে বের হচ্ছে গরম ভাপসা। শরীর বারবার কাপুনি দিয়ে উঠছে। তাতেও যেন রাত দমে যাচ্ছেনা। চোখের সামনে বারবার সন্ধ্যার খোলাপিঠটা ভেসে উঠছে। ছুটে যেতে ইচ্ছে করছে ওর কাছে। কিন্তু পরক্ষণেই সেই অন্যকারো ছাতার ছায়ায় সন্ধ্যার মুখটা ভেসে উঠছে।
ভেজা শার্টটা এখন অনেকটাই শুকিয়ে এসেছে। এভাবেই বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো রাত। না চাইতেও গভীর ঘুমে তলিয়ে গিয়েছে।
~~
তিয়ামতী ফযরের নামাজ শেষে ছেলের রুমের দিকেই এগিয়েছে। ছেলেটার মনে কি চলছে কে জানে?? রাতে খেতেও এলোনা৷ রাতের রুমের সামনে গিয়েই থমকে গিয়েছে।
“” এতো সকালে রাতের রুমে কি করছিস,সন্ধ্যা?””
সন্ধ্যা উল্টোঘুরে বাহির থেকে নিশব্দে দরজা লাগানোতে মনোযোগি ছিলো। আচমকা শব্দতে কিছুটা হকচকিয়ে গেলো। হাত থেকে ছোট্ট পেয়ালা শব্দ করে পড়ে গিয়েছে।
তিয়ামতী মেঝেতে তাকালো। পেয়ালা ফেটে গিয়েছে,চারপাশে পানি ছড়িয়ে আছে,কিছুদুরেই একটা ছোট কাপড়ের টুকরো।
সন্ধ্যা পা চালিয়ে চলে যেতে নিলে ওর সামনে এসে দাড়ালো তিয়ামতী,,,
“” তুই চাচ্ছিসটা কি বলতো। সবার চোখে তুই যেমন রুপেই থাকনা কেন,আমি কিন্তু তোর আসল রুপটা জানি। কেন এতো লুকোচুড়ি তোর মধ্যে??””
সন্ধ্যা অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইলো। তিয়ামতী ওর গাল ছুয়ে বললো,,
“” আমাদের সন্ধ্যা যে সেই ছোট্টকালেই বড় হয়ে গিয়েছে সেটা আমার চোখের আড়াল নয়। তুই ও তা জানিস। তাহলে কেন কষ্ট দিচ্ছিস আমার ছেলেটাকে??””
“” দিবোই তো আরো দিবো। আমি যা চায় সে আমাকে দেয়না কেন?””
“” কি এমন চাস যে রাত তোকে সেটা দেয়না। আমি যতটুকু জানি তুই চাইলে ও ওর প্রাণটাও তোকে দিয়ে দিতে পারে। “”
“” তোমার ছেলের প্রাণ নিয়ে আমার কি কাজ? নিজের প্রাণ নিয়ে চলতেই হোচট খেতে খেতে আধমরা হয়ে যাচ্ছি আবার দুটো প্রাণ??””
“” তাহলে কি চাস?””
সন্ধ্যা ঠোঁটে দুষ্টু হাঁসি নিয়ে মেঝে থেকে পেয়ালা তুলতে তুলতে বললো,,
“” তোমাকে বলা যাবেনা।””
“” কেন?””
“” কারণ তুমিও তোমার ছেলের মতো মুখ পাতলা।””
“” মানে?””
সন্ধ্যা বসা থেকে উঠে দাড়ালো। তিয়ামতীর মুখোমুখি দাড়িয়ে বললো,,
“” তোমার ছেলের সাথে আমার ঘটে যাওয়া অকাম-কুকাম তোমাকে বলেনি?””
“” হুম,বলেছে।””
“” তাহলে ভাবো,যে ছেলে তার গার্লফ্রেল্ডের লজ্জাজনক ঘটনা তার মায়ের সাথে শেয়ার করে সে কতটা মুখ পাতলা স্বভাবের!””
“” রাত বলেছে,আমি তো বলিনি।””
“” বলোনি,বলতে কতক্ষণ। তোমাদের মা-বেটার ভালোবাসায় আমি ভয়ার্ত।””
“” এখানে ভয়ের কি হলো? তুই এইভাবে তোর মামিকে মুখ পাতলা বানিয়ে দিতে পারলি? তাও কোনো দোষ না করে?””
“” আমি আমার মামিকে বানিয়েছি,তোমার মামিকে তো বানায়নি। তাহলে তোমার মুখ পানসে হয়ে যাচ্ছে কেন?””
সন্ধ্যার কথার উত্তরে তিয়ামতি কি বলবে বুঝতে পারলোনা। সে যে বরাবরই তর্কে পিছিয়ে তা তো কারো অজানা নয়। তিয়ামতীর এমন চুপসে যাওয়া চেহারাটা বেশ উপভোগ করলো সন্ধ্যা। বিজয়ীর হাঁসি হেঁসে চলে যেতে নিলে তিয়ামতী পেছন থেকে বললো,,
“” যা চাস তা চেয়ে নিলেই তো হয়। এমন অগোচরে দন্দ্ব না করলেই কি নয়?””
সন্ধ্যারও চলতি পথের উত্তর,,
“” তোমার ছেলে যদি না চেয়ে থাকতে পারে আমিও পারবো। হয় দেখাবে নাহয় চাইবে। দুটোর একটা তার করতেই হবে নাহলে আমার আগুনে জ্বলবে।জ্বলতে জ্বলতে ছাইয়ের টিলাতে পুর্ন হবে। আর আমি বাতাস হয়ে তার সবকিছু উড়িয়ে দিবো।””
~~
সকালে সন্ধ্যার চিৎকারে ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠেছে রাত। গাঢ় ঘুম থেকে আচমকা লাফিয়ে উঠাতে মাথাটা ঝিম ধরে রইলো। চারপাশে কি চলছে বুঝার চেষ্টা করছে। কিন্তু তার সময় কই? সাথে সাথে সন্ধ্যার দ্বিতীয় চিৎকার তবে এবার আল্লাহর জায়গায় রাত ভাইয়া শব্দ ভেসে এলো রাতের কানে।
চলবে
#ভালোবাসার_রাত
#Season_2
#রোকসানা_রাহমান
পর্ব (৮)
সকালে সন্ধ্যার চিৎকারে ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠেছে রাত। গাঢ় ঘুম থেকে আচমকা লাফিয়ে উঠাতে মাথাটা ঝিম ধরে রইলো। চারপাশে কি চলছে বুঝার চেষ্টা করছে। কিন্তু তার সময় কই? সাথে সাথে সন্ধ্যার দ্বিতীয় চিৎকার তবে এবার আল্লাহর জায়গায় রাত ভাইয়া শব্দ ভেসে এলো রাতের কানে।
রাত চোখ ঢলতে ঢলতে রুম থেকে বের হচ্ছে। হাঁটতে হাঁটতে বাইরে এসে তাকিয়ে রইলো সন্ধ্যার দিকে। কাজল কালো চোখদুটো বিরক্তে কিছুটা বুজে আছে। চুল ছেড়ে দিয়ে একপাশে দুটো ক্লিপ লাগানো। শরীরের সাদা জামাটা শরীর ছেড়ে পায়ে গিয়ে বাজছে। এতো লম্বা লাগছে কেন? এক রাতের মধ্যেই কি লম্বা হয়ে গেলো?? ওর নামের সাথে ওর রুপমাধুরী একটুও মানায়না। ওর নাম সন্ধ্যা না হয়ে ভোর হলে কেমন হতো? নাহয় সকাল?? ভোরের শুভ্রতা যেমন প্রকৃতির মাঝে ছড়িয়ে আধার কাটিয়ে কোমলতায় ভরিয়ে দেয়। ও ঠিক তেমন। ও কেন আমার রাতের আধার কাটিয়ে নেয়না?? আমাকে তো আরো আধারে ঠেলে দিচ্ছে!
সন্ধ্যা দুহাতে নিজের কোমড়ের দুপাশ শক্ত করে চেপে ধরে আছে। বেশ রাগরাগ নিয়ে রাতের সামনে এসে বললো,,
“” গাড়ীর কাঁচ কিভাবে ভাঙলে?””
রাত তখনো সন্ধ্যার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে। এমন মুক্তোর মতো মেয়েটা তার কাছে কবে ধরা দিবে??
“” রাত ভাইয়া!””
সন্ধ্যার শক্ত ডাকে রাত কিছুটা চমকে উঠেছে। খুব স্বাভাবিক সুরেই বললো,,
“” কি হয়েছে? এভাবে চেচাচ্ছিস কেন?””
“” চেচাবোনা তো কি করবো? তুমি তো আমার সব প্ল্যানে জল ঢেলে দিলে। ইশ! এতো কষ্ট করে সাজুগুজো করলাম। এই সাদা গাড়ীটাতে করে যাবো বলে। আমি তো গাড়ীর কালারের সাথে ম্যাচিং করে নিজেকেও সাদাতে রাঙালাম। এই যে আমার ইয়ারিংটা! জানো এটা খুজতে আমার কত কষ্ট হয়েছে?? এমন সাদা পাথরের দুলটা খুজতে কতগুলা দোকান ঘুরতে হয়েছে? শেষে তো শাকিল আমাকে অনলাইন থেকে এনে দিলো। আর তুমি কি করলে? আমার সাদা সাজে কাঁদা লাগিয়ে দিলে?? আমার সব পরিশ্রম তুমি পন্ড করে দিলে,রাত ভাইয়া!””
সন্ধ্যার মুক্তো ঝরানো কথাতে রাতের কোনো হুশ নেই। ওর কথার তালে তালে কানের দুলগুলো নড়ে উঠছে। রোদের আলোতে বারবার ঝিলিক দিয়ে উঠছে,সেদিকেই প্রখর দৃষ্টি রাতের। এই মুহুর্তে যদি তার হাতে হাতুরী থাকতো তাহলে ঠিক ঠিক এই কানের দুল ভেঙে গুড়িয়ে দিতো। অন্য ছেলের কাছে নিজের প্রয়োজন শেয়ার করাও হয়ে গেছে?? এখন আর রাত ভাইয়াকে লাগেনা?? রাতের ভেতরের ক্ষিপ্র ক্রোধেরা চিৎকার করে বলছে,ছিড়ে ফেল ঐ দুল,ভেঙে ফেল ঐ দুল,পিষে ফেল ঐদুল,যে দুলে অন্য ছেলের স্পর্শ থাকে সেই দুল তোর স্বপ্নবধু পড়তে পারেনা-পারেনা-কখনোই পারেনা!
রাতের হাত সন্ধ্যার কানের দিকে এগুলেও তা দুলকে স্পর্শ করেনি,ছোটছোট বাচ্চা চুল ওর কানে গুজে দিয়ে বললো,,
“” কোথায় যাবি?””
“” কোথায় আবার, দিয়ার জন্মদিনে!””
সন্ধ্যার চিৎকারে ওর মা রিমা রান্নাঘর থেকে ছুটে এসেছেন। হাতে ব্যঞ্জন নাড়ুনি। তেলে মাখা মশলা চিকচিক করছে! চোখ ঘুরিয়ে বুঝার চেষ্টা করছেন,কি হচ্ছে এখানে। কপালে গরম চুলার উত্তপ্ত ঘাম! রাত ফুপির দিকে তাকাতেই উনি চোখের ইশারায় বুঝালেন এ ব্যাপারে কিছু জানেননা।
“” ফুপাকে বলেছিস,তুই জন্মদিনে যাচ্ছিস?””
“” আব্বুকে বলার কি আছে? আমি তো তোমার সাথে যাবো। তোমার সাথে গেলে কাউকে বলতে হবে নাকি?””
রাতের ভেতরের সব রাগ শীতল হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। চোখে,মুখে ফুটে উঠেছে অনাকাঙ্ক্ষিত সুখের ঝিলিক। সন্ধ্যা আমার সাথে বেরোবে? এমন মুক্তোরানী সেজে?? ইশ! আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছেনা। আমি কি স্বপ্ন দেখছি?? রাত নিজের হাতেই নিজের শরীরে চিমটি কাটতে চাইলো। কিন্তু তার প্রয়োজন হয়নি। তার আগেই সন্ধ্যার অভিযোগ,,
“” কিন্তু এখন আর তোমার সাথে যাবোনা।””
“” কেন?””
“” কারণ তুমি আমার সব সাজের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছো।””
“” আমি কি করলাম?””
সন্ধ্যা সাদা গাড়ীটার ভাঙা কাচের দিকে ইশারা করে অভিযোগি সুরে বললো,,
“” এই যে, এটা করে? আমার এতো এতো সাজ সব নষ্ট। তুমি কেন এমন করলে রাত ভাইয়া।””
সন্ধ্যার মুক্তো চেহারার প্রভা নুয়ে গিয়ে কালো মেঘের ছায়া নেমে এসেছে। রাত দ্রুততার সাথে বললো,,
“” তাতে কি হয়েছে? আমরা ফুপার গাড়ীতে করে যাবো।””
“” কিন্তু আব্বুর গাড়ীতো লাল কালার। লালের সাথে সাদা একটুও সুন্দর লাগবেনা,রাত ভাইয়া। সব থেকে বাজে দেখাবে।””
রাত কিছু বলতে যাবে তার আগেই সন্ধ্যা চট করে বললো,,
“” আমি বরং আমার লাল জামাটা পড়ে নেই,নিজেকে লাল রঙে সাজিয়ে ফেলি। তাহলে আমাকে আরো দারুন লাগবে। লাল রঙ মানেই ক্রাশ! দিয়ার জন্মদিনের সব ছেলেরা আমার উপর ক্রাশ খাবে।””
সন্ধ্যা খুশিতে গদগদ হয়ে বললো,,
“” ভাগ্যিস গাড়ীর কাচটা ভেঙেছিলে নাহলে তো আমার উপর ক্রাশ খাওয়ার সংখ্যাটা হুরহুড় করে বাড়তোইনা। আমার তো ভাবতেই শরীর শিউরে উঠছে,পার্টিতে সকল ছেলে আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।””
সন্ধ্যা কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে মুখটাকে এমন ভঙ্গিমায় আনলো যেন তার সামনে হাজার হাজার ছেলে ওর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে,ওর সৌন্দর্যকে গিলে গিলে খাচ্ছে। কিন্তু এদিকে যে রাতের ভেতরটা ফেঁটে চৌচির,সেটা কি সন্ধ্যা বুঝছে??
সন্ধ্যা দৌড়ে বাসার ভেতরটায় ঢুকতে ঢুকতে বললো,,
“” রাত ভাইয়া,এখন আর তোমাকে নিবোনা। আমার সাজ ঘেটে দেওয়ার অপরাধে উইথআউট নিমন্ত্রণ, মিস করলে ক্রান্চি আয়োজন। আব্বুকে বলে দিও আমার ফিরতে রাত হবে।””
রাত ভাঙা কাঁচটার দিকে তাকিয়ে আছে। ইচ্ছে করছে এই কাঁচের টুকরো দিয়ে নিজের শরীর ফুটো করে দিতে। কেন যে কাল এটা ভাঙতে গেলাম?? নিজের রাগটা নিয়ন্ত্রণে রাখলে আজ আমার মুক্তোরানীর সাথে মধুর মুহুর্ত কাটাতে পারতাম। রাগ,ক্ষোভ,আফসোস,কষ্ট,দুঃখ সব মিলেমিশে রাতের হাত মুঠো হয়ে এসেছে।
~~
প্রচন্ড শব্দে সন্ধ্যা দৌড়ে বাহিরে এসেছে। লাল গাড়ীটার দিকে তাকিয়ে বললো,,
“” আমার লাল গাড়ীটা এভাবে ভগ্ন হলো কিভাবে,আম্মু?””
ভাঙা গ্লাসটার মাঝে আঙুল দিয়ে ছুয়ে দেখছিলো রিমা। বেশ কৌতুহলতায় ছিলো তাই সন্ধ্যার আকস্মিক প্রশ্নের উত্তরে ওর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। ঘাড় ফিরিয়ে রাতের চলে যাওয়ার পথটার দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলো,,
“”গাড়ীটা ঠিক আছে নাকি খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে এসেছিলাম। হঠাৎ!””
সন্ধ্যার কৌতুহলি প্রশ্ন,,
“” হঠাৎ কি?””
রিমার গড়গড় উত্তর,,
“” হঠাৎ হাত থেকে নাড়ুনিটা পড়ে গেলো,সাথে সাথে কাঁচটাও ভেঙে গেলো!””
সন্ধ্যা অবাকের সপ্তম পর্যায়ে গিয়ে বললো,,
“” নাড়ুনি পড়ে গিয়ে গাড়ীর কাঁচ ভেঙে গেলো?””
রিমা নাড়ুনিটা এদিক ওদিক নাড়িয়ে বললো,,
“” হুম। তোর বাবার মতো তোর বাবার গাড়ীটাও প্রোটিনহীন রোগী। আমি তো ঠিক করেছি,এখন থেকে তোর বাবাকে দিয়ে তরকারী নাড়বো আর নাড়ুনিটা দিয়ে সংসার করবো। নে একবার এটাকে আব্বু বলে ডাকতো!””
~~
“” আমি প্রোটিনহীন রোগী? তুমি এতো বড় অপবাদটা দিতে পারলে রিমা?? মেয়ের সামনে আমার সব প্রেস্টিজ এভাবে ঝপঝপ করে ছেড়ে দিলে?””
সন্ধ্যার বাবা সিকান্দার সাহেবের আহত কন্ঠে রিমা ঘুরেও তাকালোনা। সে বেশ মনোযোগী রান্নাতে।
সিকান্দার সাহেব এতে বেশ হতাশ হলেন। রিমাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললেন,,
“” তুমি দিনে দিনে আমার সব প্রেস্টিজ নিঃশেষ করে দিচ্ছো রিমা। কেন এমন করছো বলোতো!””
“” আমি কি ভুল কিছু বলেছি নাকি? তোমার প্রোটিনহীনতার জন্যই তো সন্ধ্যার একটা ভাই এলোনা। মেয়েটা আমার ভাইয়ের অভাবে হবু স্বামীকে ভাইয়া ভাইয়া বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলেছে।””
রিমার কথা শুনে সিকান্দার সাহেব থ হয়ে রইলেন। রিমা চুলার আঁচটা কমিয়ে দিয়ে অন্য চুলাতে আগুন ধরালেন। ফ্রাইপ্যানে তেল ঢালতেই সিকান্দার সাহেব বললেন,,
“” এখন সব আমার দোষ? সন্ধ্যাকে কোলে নিয়ে নিজেই তো বলেছিলে,আমার আর কিছু চাইনা সিকা। আমার রাত বাবা আর এই কোলভর্তি করা মেয়েটাকে নিয়েই সারাজীবন কাটিয়ে দিতে পারবো। আজ থেকে তোমার আমার সাথে ঘুমানো নিষেধ!””
“” তখন কি আমি জানতাম,রাত আমার ছেলে না হয়ে জামাই হবে? আর আমি একবার খুশিতে উল্টাপাল্টা কথা বলেছিলাম বলে তুমি আমাকে আর বাবু দিবেনা?””
সিকান্দার সাহেব রিমার কাছ ঘেষে দাড়িয়ে বললো,,
“” তুমি তো আমাকে,তোমার কাছে ঘেষতেই দেওনা!””
“” তাহলে এখন ঘেষে দাড়িয়ে আছো কিভাবে?””
সিকান্দার সাহেব মুখভর্তি হাঁসি নিয়ে রিমাকে জড়িয়ে ধরলেন। আদুরী গলায় বললো,,
“” শোনোনা,আজ আমরা…””
সিকান্দার সাহেব কথা শেষ করার আগেই রিমা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেছে। চোখ পাকিয়ে বললো,,
“” দুদিন পর নাতি-নাতনি আসবে আর এখন তোমার প্রোটিনগিরি জেগে উঠেছে? যাও এখান থেকে। তোমার জন্য আমি গরমে হাপিয়ে উঠেছি! উফ! কি গরম।””
সিকান্দার সাহেব ফ্রাইপ্যানটা উল্টে দিয়ে চলে গেলেন।
~~
ডিনার করতে এসে সন্ধ্যাকে কোথাও দেখলোনা রাত। আম্মুর উদ্দেশ্যে বললো,,
“” সন্ধ্যা কোথায়, আম্মু?””
তিয়ামতী কিছু বলার আগেই সন্ধ্যার আম্মু বলে উঠলো,,
“” ঢংগির আবার ঢং শুরু হয়ে গিয়েছে!””
তিয়ামতী পাশ থেকে শক্ত চোখে তাকাতেই রিমা খাবার বাড়ায় মনোযোগ দিলো।
সন্ধ্যা পিঠ ঘুরিয়ে হাতের উপর ভর দিয়ে শুয়ে আছে। টানটান হয়ে শুলেও একটা পায়ের উপর আরেকটা পায়ের পাতা। আজকাল মেয়েটাকে দেখলেই শরীরের অনুভূতিরা কেমন চট করে জেগে উঠে। শুধু ছুই ছুই ইচ্ছে জাগে। আবার কি নিয়ে রাগ করেছিস রে? আমার তো ইচ্ছে করছে তোর পিঠের উপর নিজের বুকটা শুয়িয়ে শুয়ে পড়তে। তোকে শক্ত বাধনে বেধে এলোপাথারী চুমু খেতে। তখন তুই কি করতি? লজ্জায় লাল হতি নাকি রাগে লাল হতি?? যেভাবেই লাল হোসনা কেন,আমি কিন্তু এতো অল্পতেই থেমে যেতামনা। আমিতো তোর লাল যতক্ষণনা নীলে রুপান্তরিত হতো ততক্ষণ চুমু খেয়ে যেতাম!
রাত সন্ধ্যার কাধে হাত দিতে গিয়ে থমকে গেলো। সাদা ব্যান্ডেজে মোড়ানো হাতটা পেছনে লুকিয়ে বললো,,
“” তোকে কতবার বলেছি ভাতের উপর রাগ দেখাবিনা। তাও এককাজ বারবার করিস কেন?””
সন্ধ্যা ঘাড় ঘুরিয়ে একটা মিস্টি হাঁসি উপহার দিলো রাতকে। শোয়া থেকে উঠে বসলো। রাতকেও টেনে পাশে বসিয়ে বললো,,
“” তো কি করবো? তোমাদের তো আমার উপর কোনো মায়া নেই,সব মায়া ভাতের উপর। আমি যে সেই সন্ধ্যে থেকে রাগ করে বসে আছি কই কেউ তো একবার আমার রুমে উকিও দিলেনা,আর এখন যখন ভাত খেলামনা অমনি দৌড়ে এলে। ভাত বুঝি তোমার কাছে নালিশ করেছে?””
রাত সন্ধ্যার দিকে তাকাতে পারছেনা। এদিক ওদিক তাকিয়ে ওর ওড়নাটা খুজছে। আশেপাশে কোথাও না পেয়ে উঠে দাড়ালো।
“” কি হলো,চলে যাচ্ছো নাকি?””
সন্ধ্যার কথার উত্তর না দিয়ে সোজা ওর ওয়াড্রবের দিকে এগুলো। ড্রয়ার খুলে একটা ওড়না এনে ওর গলায় জড়িয়ে দিয়ে বললো,,
“” এবার বাচ্চামীগুলো বন্ধ কর!””
“” কেন? আমি কি বড় হয়ে গিয়েছি?””
“” হুম।””
“” তাহলে এটা আব্বুকে গিয়ে বলো,এখনি বলবে।””
রাত ভ্র কুচকে বললো,,
“” কেন?””
“” কারণ উনার ধারণা আমি এখনো বাচ্চা তাই আমাকে পিকনিকে যেতে দিবেনা। তুমি যদি বলো আমি বড় হয়ে গিয়েছি তাহলে আমি পারমিশন পাবো।””
“” কিসের পিকনিক?””
সন্ধ্যা উল্লাসভঙ্গিমায় বললো,,
“” আমাদের কলেজ থেকে ট্যুরে যাবে,কক্সবাজারে। ২ রাত তিনদিনের জন্য। আমার সব ফ্রেন্ডরা যাচ্ছে,শুধু আমি বাদে। তুমি আব্বুকে বলোনা,আমাকেও যেতে দিতে। আমিও সবার মতো ঘুরবো,সমুদ্রে গোসল করবো!””
সন্ধ্যার কথাতে রাতের কলিজা কেঁপে উঠেছে। যে মেয়েটাকে একরাত চোখের আড়াল করার কথা ভাবলেও রাতের সবকিছু আধার হয়ে আসে,সে মেয়ে দুরাতের জন্য পিকনিকে যাবে বলে মুখ কালো করে বসে আছে। সন্ধ্যা বেলাও তুহিনের সাথে ঝগড়া হয়েছে আমার,কেন হয়েছে? ওর ভাইয়ের বিয়েতে সব বন্ধুরা যাচ্ছে শুধু আমি বাদে। কেন যাচ্ছিনা? কারণ ওখানে গেলে দুদিন থাকতে হবে তাই। এই মেয়ের জন্য আমার বন্ধুত্ব নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে আর এ কিনা!
রাতের ইচ্ছে হলো ওর চুল টেনে ধরে কঠিন গলায় বলতে,তুই কোথাও যাবিনা,আমার চোখের আড়াল হলে আমি অন্ধ হয়ে যাবো,শ্বাসকষ্টে মরে যাবো!
“” কি এতো ভাবছো? তুমি আমার হয়ে আব্বুকে বলবেনা?? প্লিজ! প্লিজ!!প্লিজ!!!””
সন্ধ্যা হাতজোর করে অনুরোধী চোখে তাকিয়ে আছে রাতের দিকে। রাত কিছু বলতে যাবে তার আগেই সন্ধ্যা রাগ দেখিয়ে বললো,,
“” বুঝছি,তোমরা কেউ চাওনা আমি ভালো থাকি,খুশি থাকি,আনন্দে থাকি। ভালোবাসোনা একটুও। যাও এখান থেকে আমি ঘুমাবো।””
সন্ধ্যা ধপ করে বিছানায় শুয়ে পড়লো।
“” খাবিনা?””
“” যারা আমাকে ভালোবাসেনা,তাদের অন্ন আমি গ্রহণ করবোনা।””
~~
সন্ধ্যাকে গাড়ীতে উঠিয়ে দিয়ে এসেছে আধঘন্টা হতে চললো। এতেই রাতের বুকের ভেতর হাঁসফাঁস শুরু হয়ে গিয়েছে। বাহিরের হিমেল হাওয়াটাকেও কেমন উত্তপ্ত লাগছে। এতোটাই নিসঙ্গ লাগছে যে,আশেপাশের ব্যস্ত রাস্তাটাকেও নিশ্তব্ধতায় ছেয়ে আছে মনে হচ্ছে। কিছু ভালো লাগছেনা। দুটো রাত,তিনটে দিন ওকে না দেখে কিভাবে থাকবে রাত?? এ কয়টা দিন রাত বেঁচে থাকবে তো?? নাকি সন্ধ্যাহীন শহরটায় রাতের ঘনঘটায় হারিয়ে যাবে সে??
গুনে গুনে বিশ মিনিট পরপর সন্ধ্যাদের সহযাত্রী আয়েশা ম্যামকে কল দিয়ে যাচ্ছে। উনি যে বেশ বিরক্ত তাতে তা রাতকে একটুও বোধগম্য করতে পারলোনা। এক পর্যায়ে ওর ফোন রিসিভ করা বন্ধ করে দিয়েছেন উনি। তাতে কি? একজন কল রিসিভ না করলে আরেকজন কে দিবে। আয়েশা ম্যমকে রেখে পিয়াস স্যারের নাম্বারে ডায়াল করলো রাত।
সারাটাদিন বাহিরেই কাটিয়ে দিয়েছে রাত। ও বাসায় সে যাবেনা। ওখানে গেলে সন্ধ্যাহীন শুন্যতা রাতকে গ্রাস করে ফেলবে। দম আটকে যদি মরে যায় তখন?? সন্ধ্যাকে কে দেখবে?? কে রাখবে ওর ভালোমন্দের খোজ??
ঘন্টার কাটা ১২ টায় পৌছুতেই তিয়ামতীর কল। ফোনের স্ক্রিণে তাকিয়ে রাতের বুকটা আরেকবার কেঁপে উঠলো। এক পৃথিবীর শোকে সে আরেক পৃথিবীকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে?? রাত কলটা রিসিভ করেই ছোট্ট করে বললো,,
“” আমি এখনি আসছি,আম্মু। এখনি আসছি!””
~~
ঘড়ির কাটা তিনটেতে পৌছুতেই আননোন নাম্বার থেকে কল। ঘুম আসবেনা দেখে দুটো ঘুমের ঔষধ খেয়ে সবেই শুয়েছিলো রাত। ফোনের উচ্চশব্দের সাথে তীব্র ভো ভো কাপুনিতে রাতের চোখের বন্ধ পাতা নরম হয়ে এসেছে। ঘুমের ঘোরেই কলটা রিসিভ করে কানে ধরে আছে,,অপর পাশ থেকে কিছুক্ষণ ফুপানির শব্দ। রাত কিছু বুঝে উঠার আগেই শব্দ করে কান্না করে দিলো সন্ধ্যা।
“” রাত ভাইয়া,তুমি কোথায়? আমার তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে,তোমাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে,তোমার হাতে খেতে ইচ্ছে করছে!””
চলবে