#ভালোবাসি_তোমায়
#A_mysterious_love_story
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_১৬
আজ নিজের বাড়িতে চলে যাবে ফাইয়াজ। ফাইয়াজ এর বাবা মিস্টার ফরিদ আজ সকালেই হুরদের বাড়িতে হাজির হয়েছেন। তিন দিন আগেই নিজের সকল কাজ সম্পন্ন করে দেশে চলে এসেছেন তিনি। ছেলেকে ছাড়া মন টিকছিলো না ফরিদ সাহেবের।
ফরিদ সাহেব হুট করে আসায় কিছুই গোছগাছ হয়ে ওঠে নি ফাইয়াজ এর। তাই এখন সব গোছগাছ করছে সে। মিসেস হেনা তাকে সাহায্য করছে আর মাঝে মাঝে কেঁ’দে ফেলছে যেনো তার ছেলে তার থেকে দূরে চলে যাচ্ছে।
সারা বাড়িতে যেনো আজ শো’কের ছায়া নেমেছে। সবাই মনম’রা হয়ে আছে। লিয়াও সকাল থেকে হুরদের বাড়িতে আছে। হুর আর লিয়া আজ ভার্সিটি তে যায় নি। ফাইয়াজ আর ফরিদ সাহেব দুপুরের খাওয়ার পরই চলে যাবেন।
মিসেস হেনা রান্নার কাজে রান্নাঘরে যাওয়ার জন্য বের হতেই হুর ধীর পায়ে ফাইয়াজ এর রুমে প্রবেশ করলো। ফাইয়াজ নিজ কাজে মগ্ন। হুর নিজের হাত মোচড়াতে লাগলো।
-“কিছু বলবে মিস হুর! ”
হুট করে ফাইয়াজ এর কণ্ঠ শুনে চমকে উঠলো হুর। বুঁকের ভেতর টা কেঁ’পে উঠলো। আজ কতটা দিন পর ফাইয়াজ তার সাথে কথা বললো! হুরের গলা টা ধরে এসেছে। অনেক কিছু বলতে চাইছে সে কিন্তু কথা গুলো যেনো বেরোতে চাইছে না। হুর কাঁ’পা কাঁ’পা স্বরে অনেক ক’ষ্টে বলে উঠলো ,
-“আ,,, আবার কবে আসবেন! ”
ফাইয়াজ হুরের কথা শুনে উদাস ভঙ্গিতে বললো,
-“কেনো! আবার কবে আসবো তা জানতে চাইছো যে! আমি চলে গেলেই তো বরং ভালো হয়। আপদ দূর হবে তোমার বাড়ি থেকে। আমার মতো বিরক্তিকর, খারাপ মানুষ কে সহ্য করতে হবে না। তাইনা! ”
ফাইয়াজ এর কথা শুনে হুরের চোখ জলে ভরে উঠলো। যেকোনো সময় চোখ ফে’টে জল গড়াবে বুঝতে পেরে হুর দ্রুত ফাইয়াজ এর রুম থেকে বেরোতে নিলো। কিন্তু পিছন থেকে হাতে টান পড়ায় থেমে গেলো হুর। অশ্রুশিক্ত চোঁখে পিছনে তাকাতেই দেখতে পেলো ফাইয়াজ তার হাত ধরে আছে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ফাইয়াজ হেঁচকা টানে হুর কে নিজের খুব কাছে নিয়ে আসলো। নিজেকে ফাইয়াজ এর বুকে আবিষ্কার করে ধীরে ধীরে ফাইয়াজ এর মুখের দিকে ঝাঁপসা দৃষ্টি মেলে তাকালো হুর। তার দৃষ্টিতে বিরাজ করছে অবাক ভাব।
ফাইয়াজ হুরের কপালে লেপ্টে থাকা ছোট ছোট চুলগুলো কানের পিছনে গুঁজে দিতেই কেঁ’পে উঠলো হুর।
-“ফা,,, ফাইয়াজ ভাইয়া কি করছেন! দূরে যান প্লিজজ! কেউ এসে যেতে পারে যেকোনো সময়। সর্ব’নাশ হয়ে যাবে কেউ দেখে ফেললে। আমাকে ছাড়ুন প্লিজ। ”
হুর নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই ফাইয়াজ হুরের কোমর আরেকটু শক্ত করে চেপে ধরলো। মুখটা কে হুরের মুখের আরেকটু কাছে নিতেই চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে ফেললো হুর। দুইজনের নাক ছুঁই ছুঁই করছে। ফাইয়াজ এর প্রতিটা নিঃশ্বাস মুখে আ’ছড়ে পড়ায় কেঁপে কেঁপে উঠছে হুর। তার এখন মনে হচ্ছে এই রুমে আসা টাই ভুল ছিলো। হুরের চিন্তার মাঝে ফাইয়াজ স্লো ভয়েসে বলে উঠলো,
-“Look at me Hur…. ”
হুর নিজের চোখ আরও শক্ত করে বন্ধ করে ফেললো। ভ’য়ে আর অস্বস্তিতে অসম্ভব হারে কাঁপছে হুরের বুক। হার্টবিট এতো জোরে চলছে যে মনে হচ্ছে যেকোনো সময় ম’রে টোরে যাবে। একেতো ফাইয়াজ এর এতোটা কাছে থাকায় আর দ্বিতীয়ত যেকোনো সময় কেউ চলে আসতে পারে এই ভ’য়ে সারা দেহে কাঁ’পুনি দিচ্ছে হুরের।
-“কি হলো তাকাও আমার দিকে! ”
হুর বুঝতে পারলো আজ কথা না শেষ করে ফাইয়াজ তাকে ছাড়বে না। তাই পিটপিট করে চোখ মেললো। কিন্তু ফাইয়াজ কে এতোটা নিকটে আবিষ্কার করে ভ’ড়কে গেলো হুর। ভ’য়ার্ত দৃষ্টিতে একবার ফাইয়াজ এর দিকে আর একবার দরজার দিকে তাকাতে লাগলো হুর। হুরের অবস্থা দেখে হালকা হাসলো ফাইয়াজ। আগের মতো স্লো ভয়েসে বললো,
-“এতো ভ’য় পাচ্ছ কেনো হুর! আমাদের এভাবে দেখে ফেললে বেশি আর কি হবে ; হয়তো আমাদের ধরে বিয়ে দিয়ে দিবে। ”
হুর চোখ বড়ো বড়ো করে ফাইয়াজ এর দিকে তাকালো। ফাইয়াজ পুনরায় বললো,
-“আর জিজ্ঞেস করলে না আবার কবে আসবো! ধরে নাও আমি সবসময় তোমার সাথেই থাকবো ঠিক ছায়ার মতো। ”
কথা শেষ করে হুট করে হুর কে জড়িয়ে ধরলো ফাইয়াজ। হুরের চুলে নাক ডুবিয়ে বললো,
-“জানি তোমাকে এভাবে ধরার কোনো অধিকার আমার নেই। কিন্তু কেনো যেনো আজ খুব করে তোমাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে হলো। তাই ইচ্ছে টাকে দমিয়ে রাখতে পারলাম না। ”
এক মিনিট গড়ালো, দু মিনিট গড়ালো , তিন মিনিটের মাথায় যেভাবে হঠাৎ করে হুর কে জড়িয়ে ধরেছিলো ঠিক সেভাবেই ছেড়ে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো ফাইয়াজ। হুর এখনো হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে যেনো নড়াচড়া ভুলে গেছে। হুশ ফিরতেই দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে গেলো হুর।
———————————
কিছুক্ষন আগেই লাঞ্চ করা শেষ হয়েছে সবার। যদিও আজকে কারোরই খাওয়াতে মন ছিলো না। সবাই জোর করে একটু একটু কোনোরকম খেয়ে উঠে গেছে। মন ভালো না থাকলে কি আর খাবার মুখে রুচে!
ফাইয়াজ এর সব মা’লপত্র গাড়িতে ওঠানো হচ্ছে। ফাইয়াজ একে একে সবার কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছে। হাসান সাহেব ফাইয়াজ এর মাথায় হাত বুলিয়ে অনেক দোয়া দিলেন। মিসেস হেনার কাছে আসতেই ফাইয়াজ কে জড়িয়ে ধরে হা’উ’মা’উ করে কেঁ’দে দিলেন তিনি। অল্পতেই সবাইকে আপন করে ফেলেন তিনি। আর এই ছেলে টাকে তো নিজের ছেলের আসনে বসিয়েছিলেন। ফাইয়াজ মিসেস হেনা কে জড়িয়ে ধরে তার মাথায় হাত রেখে বললো,
-“মামুনী তুমি এভাবে কাঁ’দছো কেনো! আমি কি সব সময়ের জন্য চলে যাচ্ছি নাকি! আমি রেগুলার আসবো তো আমার cute মামুনী টার সাথে দেখা করতে। এখন একটু হাসো দেখি! আর আমাকে অনেক অনেক দোয়া করে দাও। তুমি এভাবে কাঁ’দতে থাকলে আমি যাবো কি করে! ”
মিসেস হেনা ফাইয়াজ এর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
-“অনেক অনেক দোয়া করি বাবা। সবসময় ভালো থাক। জীবনে যা চাস তাই যেনো পাস। তোর সকল ইচ্ছা পূর্ণ হোক। আর এই মা কে মনে রাখিস। ভুলে যাস না যেনো! ”
-“না মামুনী জান থাকতে এই ফাইয়াজ তোমাকে ভুলবে না কথা দিলাম। ”
ফাইয়াজ এবার হৃদ আর লিয়ার সামনে গেলো। দুইজনের হাত নিজের মুঠোয় নিয়ে বললো,
-“ছোটবেলা থেকে অনেক একা ছিলাম। ভাই-বোন ছিলো না আমার। আমার অনেক শখ ছিলো ভাই বোনের। তোমাদের দিয়ে আমার সেই শখ পূর্ণ হয়েছে। আমি একটা দুষ্টু ভাই আর একটা মিষ্টি বোন পেয়েছি। থাকবে তো সবসময় আমার ভাই বোন হয়ে! মনে রাখবে তো এই ভাই কে! ”
লিয়া আর হৃদ একত্রে ফাইয়াজ কে জড়িয়ে ধরে বললো,
-“সবসময় তোমার ভাই বোন হয়ে থাকবো। সবসময় তোমাকে হৃদয়ের মাঝে রাখবো। তুমি আমাদের জীবনে বড়ো ভাইয়ের অভাব দূর করেছো। যেই স্থান তোমাকে দিয়েছি তা অন্য কাউকে দেয়া সম্ভব না ভাইয়া। প্রমিস করো আমাদের সাথে দেখা করতে আসবে! ”
-“প্রমিস করলাম। ”
মিষ্টি হেসে বললো ফাইয়াজ। হুর এক কোনে দাঁড়িয়ে সবটা দেখছে। তার আঁখিদ্বয় জলে ভরে উঠেছে। সবাই ফাইয়াজ কে নিয়ে বেরিয়ে গেলো গাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেয়ার জন্য। হুরের ভীষণ অভিমান হলো। ফাইয়াজ সবার সাথে কথা বললো আর তার দিকে ফিরেও তাকালো না।
হুরের ভীষণ কা’ন্না পাচ্ছে। ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কা’মড়ে কা’ন্না আটকানোর বৃথা চেষ্টা করতে লাগলো হুর। কেনো যেনো তার খুব ক’ষ্ট হচ্ছে।
-“আসি মিস রা’ক্ষসী। ভালো থেকো। নিজের খেয়াল রেখো। ”
হুট করে ফাইয়াজ এর আওয়াজ শুনে চমকে তাকালো হুর। ফাইয়াজ মিষ্টি হেসে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। হুর অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ফাইয়াজ এর পানে। ফাইয়াজ যে আবার এসেছে তার বিশ্বাস হচ্ছে না। ফাইয়াজ এর কথাগুলো মস্তিষ্কে পৌঁছাতেই মৃদু হাসির রেখা দেখা দিলো হুরের ঠোঁটে।
ফাইয়াজ হুরের মুখে হালকা করে ফুঁ দিয়ে বললো,
-“তোমাকে কিন্তু এই রূপে চমৎকার লাগছে মিস রা’ক্ষসী। ঠোঁটে হাসি, চোখে জল।”
হুরের হাসি প্রসারিত হলো ফাইয়াজ এর কথা শুনে। ফাইয়াজ আবারও বলে উঠলো,
-“কি হলো কিছু তো বলো! আমি তোমাকে বিদায় জানাতে সবাইকে বলে আসলাম যে আমার ইম্পরট্যান্ট একটা ফাইল ছুটে গেছে। আর তুমি তো দেখি কিছুই বলছো না!”
হুর ঠোঁটে মিষ্টি হাসি ঝুলিয়ে বললো,
-“ভালো থাকবেন। শীঘ্রই আবার দেখা হবে। ”
ফাইয়াজ হুরের চুল এলোমেলো করে দিয়ে বললো,
-“তা তুমি না বললেও হবে চিন্তা করো না। ”
ফাইয়াজ আর এক সেকেন্ড ও দাঁড়ালো না। সোজা বের হয়ে চলে গেলো। হুর ফাইয়াজ এর কথার মানে না বুঝলেও তার কাণ্ড দেখে হেসে ফেললো। চোঁখের জল মুছে জানালা দিয়ে ফাইয়াজ দের গাড়ির চলে যাওয়া দেখতে লাগলো, যতক্ষণ দেখা যায়।
#ভালোবাসি_তোমায়
#A_mysterious_love_story
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_১৭
অন্ধকার ক্লাসরুমে হুর কে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে আছে কেউ একজন। হুরের বুক জোরে জোরে ধুকপুক করছে। বদ্ধ রুম টায় এতটাই অন্ধকার ছেয়ে আছে যে কিছুই দেখতে পাচ্ছে না হুর। অচেনা লোকটার অস্তিত্ব খুব কাছেই টের পাচ্ছে সে। লোকটার নিঃশ্বাস ঘাড়ে গলায় আ’ছড়ে পড়তেই কেঁপে উঠলো হুর। লোকটার বুকে ধাক্কা মা’রলো তাকে সরানোর জন্য। কিন্তু এক চুল ও নড়াতে পারলো না। উল্টো লোকটা তার হাত নিজের হাতের মাঝে বন্দি করে নিলো। লোকটার নিঃশ্বাসেও রাগের আভাস পাচ্ছে হুর। লোকটা হুরের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,
-“তোমাকে বলেছিলাম না তুমি শুধু আমার! তোমার সাহস কি করে হলো ওই ছেলেটার কাছ থেকে ফুল আর চিঠি নেয়ার! অনেক বার বেড়েছে তোমার তাই না! তোমাকে আগেই সতর্ক করেছিলাম তুমি ভুল করলে তোমারও শাস্তি পেতে হবে। আর ওই ছেলেটার অবস্থা আমি কি করবো তা জাস্ট দেখতে থাকো। আমার জানের দিকে হাত বাড়ানোর শাস্তি তো ওকে পেতেই হবে। ”
লোকটার কথা শুনে আঁ’ত’কে উঠলো হুর। লোকটার আওয়াজ শুনেই সে বুঝে গেছে এইটা সেই অচেনা লোকটা যে তার রুমে এসেছিলো। হুর তো লোকটার কথা ভুলতেই বসেছিলো। কারণ বহুদিন লোক টা আসে নি। আজকে আবার হঠাৎ করে এসেই শাস্তির কথা বলছে। হুর ভয়ার্ত গলায় বললো,
-“দে,,, দেখুন ওই ছেলে টার কোনো ক্ষতি আপনি করবেন না। ওর কোনো দোষ নেই। ”
হুরের কথায় যেনো আরও রেগে উঠলো লোক টা। হুরের গাল শক্ত করে চেপে ধরে বললো,
-“অনেক মায়া লাগছে না ওই ছেলের জন্য! অনেক প্রেম জেগেছে মনে! তোর সাহস কিভাবে হলো ওই ছেলের পক্ষ নিয়ে কথা বলার! এতক্ষন তো শুধু ভেবেছিলাম একটু খাতিরদারি করে ছেড়ে দেবো কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ওই ছেলে কে উপরে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। ”
মুখ এতো শক্ত করে চেপে ধরায় ব্যথায় গুঙিয়ে ওঠে হুর। দাঁত মনে হচ্ছে গালে গেথে যাচ্ছে। কিন্তু এই মুহূর্তে চুপ করে থাকলে চলবে না। একজনের জীবন ম’রণের ব্যাপার। এই লোক যে ভয়া’নক হবে তা হুর ওই রাতেই ধারণা করেছে। মুখ চেপে ধরে রাখায় হুর অস্পষ্ট স্বরে নিজের কথাগুলো আওড়ালো। লোকটার মনে হয়তো কৌতূহল জন্মালো হুর কি বলতে পারে তা ভেবে। লোকটা হুরের মুখ থেকে হাত টা সরিয়ে নিলো। হুরের জানে যেনো পানি এসেছে এতক্ষনে। আর একটু সময় গেলে ব্যথায় দম আটকে ম’রে যেতো মনে হয়। মুখ নাড়াতেও ক’ষ্ট হচ্ছে হুরের। তাও ক’ষ্ট করে বলতে লাগলো,
-“আ,,, আপনি ভু,,, ভুল বুঝছেন। ওই চিঠি আর ফুল আমার জন্য ছিলো না। ওই,,, ওই টা লিয়ার জ,, জন্য ছিলো। ওই ছেলেটা আমাদের ভার্সিটি তে মাস্টার্স করছে। সে নাকি লিয়া কে ভা,,, ভালোবাসে। কয়েকবার লিয়া কেও বলেছে। কিন্তু লিয়া তাকে পাত্তাই দেয় না। তার কথাই কখনো পুরো টা শোনে না। তাই ওই ভা,,, ভাইয়া টা আজকে আমাকে অনেক রিকোয়েস্ট করেছে আমি যেনো ওই চিঠি আর ফুল টা লিয়া কে দেই। ওই ভাইয়া টা আমাকে না লিয়া কে পছন্দ ক,, করে। ”
নিজের কথা শেষ করে হাঁপিয়ে উঠলো হুর। চোখ দিয়ে তার পানি গড়াচ্ছে। মনে মনে চিন্তা করতে লাগলো,
-“এমন রাক্ষ’সের মতো কেউ গাল চেপে ধরে! গালের হার গুলো সব মনে হয় ভেঙে গেছে নাহলে এতো ব্যথা করছে কেনো! ”
-“এরচেয়েও বা’জে ভাবে চেপে ধরতে পারি। অন্যায় করলে শাস্তি তো দিবোই তাইনা! খুব ব্যথা পেয়েছো তাই না পরি! ইশ আগে কেনো বলো নি ওই ছেলে লিয়া কে চিঠি লিখেছে। তাহলে তো এতো ক’ষ্ট পেতে হতো না। ”
হুর দাঁত ক’টম’ট করে করে মনে মনে বললো,
-“ওরে রা’ক্ষসের বাচ্চা তুই আমাকে বলার সুযোগ দিলি কই। ডাইরেক্ট মুখটা চেপে ধরে হাড়গোড় ভেঙে দিলি। তোর জীবনেও ভালো হবে না। বউ পাবি না শয়’তান কোথাকার! আবার আমাকে বউ বানানোর স্বপ্ন দেখিস। তোকে বিয়ে করার চেয়ে তো আমি সারাজীবন কুমারী থাকবো তাও ভালো। ”
-“আর কতো বকা দিবে জান! আর আমার বউ তুমিই হবে এটা নিশ্চিত থাকো সেটা তুমি চাও বা না চাও। ”
হুর চোখ বড়ো বড়ো করে ফেললো।
-“লোকটা আবার আমার মনের কথা বুঝে যাচ্ছে না তো! ”
-“উহুম আমি তোমার মনের কথা আন্দাজ করে নিচ্ছি। তুমি কি চিন্তা করতে পারো তা আমার জানা আছে। ”
হুর শুকনো ঢোক গিলে এখান থেকে বের হওয়ার পথ খুঁজতে লাগলো। এর মাঝে গালে ধার জাতীয় কিছু লাগতেই আহঃ করে উঠলো হুর। কিছুক্ষন যেতেই বুঝতে পারলো লোকটার খোঁচা খোঁচা দাড়ি তার গালে বিধছে। লোকটার উপস্থিতি এতো কাছে বুঝতে পেরে ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটপট করতে লাগলো সে।
লোকটা হুরের গালে নাক ঘষে বললো,
-“আমি ব্যথা দিয়েছি। এবার আমিই নাহয় ব্যথার ওষুধ দিয়ে দেই!”
কথা শেষ করেই লোকটা হুরের দুই গালে পরপর কয়েকটা চুমু খেলো। হুর লোকটাকে সরাতে ব্যর্থ হয়ে নিজের চোখ খিচে বন্ধ করে নিলো। কিছুক্ষন পর সব কিছু স্বাভাবিক মনে হতেই চোখে মেললো হুর। দেখলো ক্লাসরুমের দরজা খোলা। হুর দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে আশপাশে সব দিকে তাকালো কিন্তু কাউকেই দেখতে পেলো না। এটা ক্লাস টাইম। সবাই হয়তো ক্লাসে।
-“ধুর আজকেও দেখতে পারলাম না কে এই লোকটা। আমার জীবন টা অতিষ্ট করে দিলো। ”
হুর রা’গ করে ক্যান্টিন এ গিয়ে বসে পড়লো। এখন ক্লাসে গেলেও স্যার ঢুকতে দিবে না। তাই শুধু শুধু অপমানিত হওয়ার চেয়ে এখানে বসে থাকা ভালো। হুর এক কাপ কফি অর্ডার করে ভাবতে লাগলো ভার্সিটি তে আসার পরের ঘটনা।
হুর আর লিয়া ভার্সিটি তে আসার পর লিয়া হুর কে ক্লাসে যেতে বলে নিজে যায় লাইব্রেরি তে। তার নাকি একটা বই লাগবে আর আনতে বেশি সময় লাগবে না। হুর নিজের ক্লাস রুমেই যাচ্ছিলো হঠাৎ সিনিয়র ভাই মাহিম তার পথ আটকে দাঁড়ায়। হুর চেনে এই ভাইয়া কে। তার মতে যথেষ্ট ভদ্র একজন মানুষ মাহিম। আর মাহিম যে লিয়া কে পছন্দ করে এটাও জানে হুর।
মাহিম হুর কে ফুল আর চিঠি দিয়ে অনেক রিকোয়েস্ট করে যাতে সে এই চিঠি আর ফুল লিয়া কে দেয়। হুর প্রথমে নিতে না চাইলেও পরে মাহিম তাকে বোন বলায় সে রাজী হয়ে যায়। এতটুকু তো সে করতেই পারে। মাহিম কে আশ্বস্ত করে আবার লাইব্রেরির পথে হাঁটা দেয়। কারণ ক্লাসে এসব দেয়া ঠিক হবে না। সবাই বা’জে নজরে দেখতে পারে। লাইব্রেরির আশেপাশে অনেকগুলো ফাকা ক্লাসরুম আছে। হুট করে তার মধ্যের একটা রুম থেকেই অচেনা লোকটা হুরের হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়। হয়তো লোকটা আগে থেকেই রেডি ছিলো এমনটা করার জন্য।
সব চিন্তা করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে হুর। কফি চলে এসেছে। কফি খেয়ে ঘড়িতে সময় দেখে নেয় আরও বিশ মিনিট বাকি ক্লাস শেষ হতে। তাই ব্যাগ থেকে ফোন বের করে টিপতে শুরু করে।
——————————-
বাড়ি ফিরেছে হুর। আসার সময় লিয়ার হাতে ফুল আর চিঠি টা গুঁজে দিয়েছে কিছুতেই নিতে চাচ্ছিলো না সে। অনেক বলে কয়ে দিয়েছে তাকে। কিন্তু বাড়িতে ঢুকতেই একটা ঝা’টকা খেলো হুর। ফাইয়াজ আর মিস্টার ফরিদ তাদের বাড়িতে এসেছে। ফাইয়াজ এর মুখটা অসম্ভব গম্ভীর লাগছে। হুর অবাক হয়েছে তাদের হঠাৎ আগমনে। আজ প্রায় এক মাস পর ফাইয়াজ তাদের বাড়িতে এসেছে। এর মাঝে মিসেস হেনার সাথে প্রতিদিনই তার ভিডিও কলে কথা হতো। কিন্তু সময়ের অভাবে সে নাকি আসতে পারতো না। হুরের সাথে এর মাঝে একবারও কথা হয়নি ফাইয়াজ এর। ভিডিও কলে কথা বলার সময় সে আশপাশ থেকে দেখতো মাঝে মাঝে ফাইয়াজ কে। কিন্তু সামনে যেতো না অভিমান করে। ফাইয়াজ ও তার সাথে কখনো কথা বলতে চায় নি তাই হুর ও আর সামনে যেতো না। হুরের বাবা হাসান সাহেব ও বাড়িতে আছেন। হুর ভাবলো হয়তো ফরিদ সাহেব এসেছে তাই তার বাবাই ও চলে এসেছে।
হুর সামনে গিয়ে ফরিদ সাহেব কে সালাম দিয়ে কেমন আছে তা জিজ্ঞেস করলো। টুকটাক কথা শেষে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো সে। অনেক tired লাগছে তার। শাওয়ার নিয়ে একটা লম্বা ঘুম দিবে ভাবলো হুর। কিন্তু তার মাথায় একটা জিনিস ঘুরপাক খাচ্ছে আর তা হলো সবাই আজ অন্য দিনের তুলনায় একটু বেশিই গম্ভীর ছিলো। কিছু হয়েছে কিনা ভাবতে ভাবতে নিজের রুমে চলে গেলো হুর।
চলবে?
(