#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – # আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ১৭
কলিং বেল বাজাতেই পূর্ণতা এসে দরজা খুলে দিতেই দেখল পিপিলিকার দল বাহিরে দাঁড়িয়ে । পূর্ণতা দরজার সামনে থেকে সরে দাঁড়িয়ে ওদের ভেতরে আসতে জায়গা করে দিল ।
জিব্রান , আয়মান , তাসিন , ফাহিম , প্রেনা প্রবেশ করতেই শেষে আবরন ঘরে প্রবেশ করল ।
পূর্ণতা আবরনের দিকে আড়চোখে তাকাতেই দেখল আবরন ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে ওর দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচাচ্ছে । পূর্ণতা ভেংচি কেটে নিজের রুমে চলে গেল ।
রাতে আধিরা আনজুম আর মিলি রহমান এক খাটে শুয়েছেন । আর পূর্ণতার রুমে পূর্ণতা আর প্রেনা একসাথে খাটে শুয়েছে । আর জিব্রানের রুমে খাটে আবরন আর জিব্রান শুয়েছে আর নিচে বিছানা করে ফাহিম , তাসিন আর আয়মান শুয়েছে ।
আবরন চোখ বন্ধ করতেই পূর্ণতার মায়াবি ফেস টা বার বার ওকে এসে জ্বালাচ্ছে । আবরন চোখ খুলে জিব্রানকে বলল ,
– ভাইয়া !!
জিব্রান ফোনে স্ক্রলিং করছিল , আবরনের ডাক শুনে জবাব দিল ,
– কি হয়েছে রে !
আবরন শোয়া থেকে উঠে বসে বলল ,
– তুমি কি চোখ বন্ধ করলে নাদিরা ভাবিকে দেখতে পাও ??
জিব্রান বলল ,
– হঠাৎ এমন প্রশ্ন ??
ফাহিম নিচ থেকে বলল ,
– আরে ভাইয়া বোঝো না !! আমাদের আবরন তোমার বোনের প্রেমে এতোই হাবুডুবু খাচ্ছে যে সে চোখ বন্ধ করলেই পূর্ণতা কে দেখতে পাচ্ছে ।
আয়মান বাদে সবাই হাসল । তাসিন বলল ,
– দেখ , তুই ঘুমাতে পারছিস না আর শালা আয়মান ঘুমিয়ে পানি হয়ে গিয়েছে ।
আয়মান মাথা তুলে হেসে বলল ,
– ঘুমাই নি , তবে চোখ লেগে আসছে । আর শোন যতদিন না তুই পূর্ণতাকে নিজের করে পাবি ততদিন তোর মধ্যে এমন ফিলিংস গুলো কাজ করবে , এটাই স্বাভাবিক । আমি প্রেনাকে যখন এক তরফা ভালোবাসতাম , তখন রাতে আমার ঘুমও হারাম ছিল । এখন তো জেনে গিয়েছি যে প্রেনা শুধুই আমার , তাই রাতে শান্তির ঘুম হয় ।
আবরন বলল ,
– দাড়া আমার ঘুম নষ্ট করে পূর্ণতা নাক ডেকে ঘুমুচ্ছে , তা তো হতে দেব না !!
জিব্রান বলল ,
– আমার বোনের ঘুম নষ্ট করার ফন্দি আটছিস !!
আবরন হেসে বলল ,
– হ্যা । বলোতো কি করতে পারি ??
জিব্রান উঠে বসে সাইড টেবিলের ল্যাম্প টা জ্বালিয়ে বলল ,
– আবরন , তুই পূর্ণতা কে কল দে তো !
আবরন বলল ,
– ও তো পাশের রুমেই , কল দিব কেন ??
– আরে দে না কল ! দেখি কি বলে !
নিচ থেকে ফাহিম , তাসিন আর আয়মান দাঁত কেলিয়ে বলল ,
– গাইজ , ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড আমরাও কি জয়েন হতে পারি !!
জিব্রান হেসে বলল ,
– উঠ , উঠ । বিছানায় উঠ ।
ওরা সবাই বিছানায় উঠে বসল ।
আবরন হোয়াটস্ অ্যাপে পূর্ণতা কে অডিও কল দিল ।
………………………………………………
প্রেনা পূর্ণতা কে বলছে ,
– পূর্ণ , তোর আবরন ভাইয়াকে কেমন লাগে ??
পূর্ণতা বলল ,
– কেমন আবার লাগবে !! একদম হুবহু সাদা কাউয়্যা !!
– ধুর , সেটা না । মানে ভাইয়ার প্রতি তোর কেমন ফিলিংস কাজ করে ??
পূর্ণতা প্রেনার প্রশ্ন শুনেই একদম প্রথমদিন আবরনের সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যাওয়া থেকে শুরু করে আজকে রাতের ছাদে ঘটা ঘটনা সব মনে পড়তে লাগল ।
প্রেনা ওকে চুপ করে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করল ,
– কিরে ?? চুপ করে আছিস যে ?? বল না !!
পূর্ণতার হার্টবিট আবার বেড়ে গেল । পূর্ণতা শোয়া থেকে উঠে বসল । ও মনে মনে ভাবছে ,
– মানুষ টা এত অদ্ভুত কেন ?? যখনই উনি সামনে থাকেন বা উনার কথা মনে পড়ে তখনই আমার হার্ট এত জোরে বিট করে যে সেই আওয়াজ আমি শুনতে পাই ।
প্রেনা পূর্ণতার জবাব না পেয়ে ওরই মতো উঠে বসে ওর হাতে ধাক্কা দিতেই দেখল ওর শরীর কাটা দিয়েছে । পূর্ণতা প্রেনার স্পর্শে ভাবনা থেকে বেরিয়ে বলল ,
– কি হয়েছে ??
প্রেনা হেসে বলল ,
– আবরন ভাইয়ার কথা ভাবছিস ? দেখ মিথ্যা বলবি না ।
পূর্ণতা যেন কিছুই জানে না এমন একটা ফেস করে বলল ,
– কোথায় , কিছু ভাবছি না তো !!
প্রেনা বলল ,
– দেখ , তুই যদি সত্যি বলিস আমি তোকে তোর পছন্দের দই ফুচকা খাওয়াবো । প্লিজ , বল না সত্যি করে ।
তুই জানিস , যখন শাদমান আঙ্কেল ভাইয়ার সাথে জল আপুর বাগদান ঘোষণা করেছিল তখন তুই খুব কেদেছিলি ।
পূর্ণতার কিছু মনে নেই কিন্তু এইটুকু মনে আছে ও আবরনের সাথে কোনো কারনে অভিমান করেছিল । প্রেনার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বলল ,
– আমি কেন কেদেছিলাম ??
– আগে তুই আমাকে উত্তর দে ড্রিংক কেন করেছিলি ??
– কারন আমি তোদের সাথে , উনার সাথে , সবার সাথে অভিমান করেছিলাম ।
– কিন্তু কেন ??
পূর্ণতা রেগে বলল ,
– কারন , উনি ইচ্ছে করে আমার সাথে কোনো কথা বলে নি । ঐ পেত্মীর সাথে কথা বলছিল আমার সামনে দাঁড়িয়ে !!
প্রেনা বলল ,
– একটা লাষ্ট প্রশ্ন তোর জন্য ?? আবরন ভাইয়াকে ভালোবাসিস ??
প্রেনার প্রশ্ন শুনে পূর্ণতার কেমন যেন লাগছে । হাত পা ঠান্ডা হয়ে অবশ হয়ে আসতে শুরু করলো ক্রমশ !!
প্রেনা বলল ,
– তুই হয়তো জানিস না ,নিজের অজান্তেই ভালোবাসা বলতেও কিছু আছে ।
পূর্ণতা বলল ,
– আমি কিছু জানি না ।কিন্তু উনার কথা মনে পড়লে বা উনি কাছাকাছি থাকলে আমার কেমন যেন লাগে !!
প্রেনা বলল ,
– কেমন লাগে ??
– তুই আমাকে ধরে দেখ , আমার শরীর ঠান্ডা হয়ে আছে আর কাটা দিয়েছে ।
– তা তো দেখলামই । বলে দে ভাইয়াকে সত্যিটা ।
– কিসের সত্যি ?
– যে তুই ভাইয়াকে ভালোবাসিস !
– ভালোবাসা না ছাই !! আমি জানি না এটা ভালোবাসা নাকি মোহ ?? বাদ দে এসব কথা । আমার ঘুম পাচ্ছে ।
– ঠিক আছে । সময় ই তোদের দুইজনকে এক করে দেবে ।
এই বলে প্রেনা শুয়ে পড়ল ।
পূর্ণতাও শুয়ে পড়ল । এরই মধ্যে স্বজোরে ফোন বেজে উঠলো ।
পূর্ণতা রেগে বলল ,
– ধুর , প্রতিদিনই ফোনটা সাইলেন্ট করতে ভুলে যাই । আর এত রাতে কে ফোন দিচ্ছে !!
ফোনটা সাইড টেবিল থেকে হাতে নিতেই তাকিয়ে দেখল , স্ক্রিনে আবরন লেখা । পূর্ণতা উঠে বসে বলল ,
– উফফ , এই লোকটা আমাকে জ্বালিয়ে মারবে ।
প্রেনা আগ্ৰহ নিয়ে আবারও উঠে বসে বলল ,
– কে কল করেছে ?
পূর্ণতা ফোনের স্ক্রিনটা ওর দিকে ঘুরিয়ে ধরল ।
প্রেনা দাঁত কেলিয়ে বলল ,
– জলদি রিসিভ কর ।
পূর্ণতা একরাশ বিরক্তি নিয়ে কলটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে আবরন লাউড স্পিকার অন করে বলল ,
– মিস .কাউয়্যার বউ !! কি করছো ??
আবরনের প্রশ্ন শুনে ওর সাথের সবাই নিঃশব্দে দাঁত কেলাচ্ছে ।
আবরনের এই বিরক্তি কর প্রশ্ন শুনে পূর্ণতা বলল ,
– লুঙ্গি ড্যান্স দিচ্ছি ।
পাশ থেকে প্রেনা ফিসফিস করে বলল ,
– স্পিকারটা অন কর । শুনি ভাইয়া কি বলে !!
পূর্ণতা স্পিকার অন করতেই আবরনের গলা শোনা গেল ,
– একা একা এত রাতে লুঙ্গি ড্যান্স দিচ্ছ ?? তুমি চাইলে আমরাও জয়েন হতে পারতাম তোমার সাথে !!
পূর্ণতা বলল ,
– অনুগ্রহ করে যদি বলতেন , পাশের রুমে থেকে আমাকে কেন কল করেছেন তাহলে চিরকৃতজ্ঞ থাকতাম ।
জিব্রান আবরনকে বলল ,
– ওকে বল , তোর ঘুম আসছে না ।
আবরন বলল ,
– আমার ঘুম আসছে না ।
পূর্ণতা বলল ,
– তো ??
আবরন জিব্রানের দিকে ভ্রু কুচকে তাকালো । জিব্রান বলল ,
– ওকে বল যে তোর চোখ লেগে আসলেই সে চোখে তুই কাউকে দেখতে পাস ।
আবরন বলল ,
– ইউ নো !! আমি ঘুমুতে চেষ্টা করছি , কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছে না । চোখ বন্ধ করলেই চোখের সামনে এমন একজনের ফেস ভেসে উঠছে যার ফলে আমি ঘুমুতে পারছি না ।
প্রেনা পূর্ণতার কানে কানে বলল ,
– সেটা নিশ্চিত তুই । তোর জন্য ভাইয়া ঘুমুতে পারছে না ।
পূর্ণতা রেগে আবরনকে বলল ,
– সবই বুঝলাম , এখন আমি কি করতে পারি !! আমাকে কেন কল করেছেন ??
– কারন , আমি মনে করি আমার লাইফের সব কথা তোমাকে শেয়ার করা যায় । আমি তোমাকে ভরসা করি ।
পূর্ণতার রাগ পানিতে মিলিয়ে গেল । পূর্ণতা বলল ,
– কেন ভরসা করেন ??
– সময় এলে বলবো । আর পরশু থেকে তো মেডিক্যাল খোলা , মানসিক ভাবে প্রস্তুতি নিয়ে ফেলো ।
– হুম ।
– ওকে গুড নাইট । হ্যাভ এ হরর ড্রিম !!
পূর্ণতা বলল ,
– এই এই হরর ড্রিম কেন বললেন !! আপনি একটা বাজে লোক । আপনি জানেন আমি এসবে ভয় পাই তবুও কেন ??
পাশ থেকে জিব্রান এবার জবাব দিল ,
– দোয়া পড়ে ঘুমাস পুচকি !!
পূর্ণতা যেন ৪৪০ ভোল্টের শক খেল ।
– ওয়েট ওয়েট ওয়েট !!
এই বলে পূর্ণতা বিছানা থেকে নেমে ওরনা গলায় ঝুলিয়ে দরজা খুলে রুম থেকে বেরিয়ে দৌড়ে জিব্রানের রুমে গিয়ে দরজা খুলে উঁকি মেরে দেখল ,
সব গুলো একসাথে দলা পাকিয়ে বসে আছে ।
পূর্ণতা কে এভাবে চলে আসতে দেখে প্রেনাও ওর পিছু পিছু এলো । পূর্ণতা কলটা কেটে দিয়ে বলল ,
– আমার সাথে ট্রল করছিলে তোমরা সবাই মিলে !!
পূর্ণতা ওদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে দেখে ওরা সবাই হুহা করে হেসে উঠল ।
প্রেনা পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে দেখল , ও এখন কান্নাই করে দেবে ।
রাগ করে পূর্ণতা সেখান থেকে চলে যাচ্ছিল , মাঝপথে প্রেনা ওকে বলল ,
– এটা তো ফান ছিল , সিরিয়াসলি কেন নিচ্ছিস ??
পূর্ণতা প্রেনাকে বলল ,
– আমি ভীত আর দুর্বল বলে সবাই আমাকে নিয়ে মজা করে শান্তি পায় । প্লিজ , আমাকে স্বান্তনা দিতে আসিস না । আম ফাইন ।
আবরন পূর্ণতার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল । জিব্রান বিছানা থেকে উঠে পূর্ণতার পিছু পিছু গেল । পূর্ণতা ওর রুমে গিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে কাদতে শুরু করেছে । জিব্রান পেছন থেকে গিয়ে বলল ,
– সরি পুচকি । প্লিজ রাগ করিস না । তোকে ট্রল করার প্ল্যানটা আমার ছিল , ওদের কারো দোষ নেই এতে ।
পূর্ণতা বলল ,
– কেন এসেছো তুমি এখানে ?? যাও এখান থেকে ।
জিব্রান বলল ,
– আর এক দুইমাস । তারপর তো সত্যিই চলে যাচ্ছি । তখন আর তোকে কেউ জ্বালাবে না ।
পূর্ণতা কান্নার গতি বাড়িয়ে দিয়ে বলল ,
– হ্যা , তুমি চলে যাও । আমার কি ?? আমি তো তোমার কেউ না !! আমার কষ্ট হলে কার কি আসে যায় ??
জিব্রান বলল ,
– তোর কষ্ট হলে আর কারো কিছু না আসলে গেলেও আমার আর আম্মুর ঠিকই আসে যায় । তুই আমাদের সবার কলিজা , তুই কষ্ট পেলে আমরা কি করে ঠিক থাকবো বল !!
পূর্ণতা বলল ,
– আমি খুব ভীতু , ম্যান্দা মার্কা , বোকা । ঠিকই বলো তোমরা সবাই । কিন্তু আই প্রমিজ , আমি আমার জীবনটা বদলে ফেলবো । সবাইকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেব আমার পরিবর্তন । I swear ….
জিব্রান কিছু বলবে তার আগেই আবরন পূর্ণতার শক্ত কথা শুনে বলল ,
– তোমার এই বদল টাই আমরা সবাই চেয়েছি পূর্ণতা । জগৎ টা অনেক ছোট , কিন্তু খুবই কঠিন । চলার পথে হাজারো হোচট খেতে হবে এটাই স্বাভাবিক । কেউ হোচট খেয়ে পড়ে গিয়ে আবার উঠে দাঁড়ায় আবার কেউবা হোচট খেয়ে পড়ে গিয়ে ব্যথায় আর উঠে দাঁড়াতে পারে না । তুমি যেমন সহজ সরল এভাবে তুমি জীবনে চলার পথে হোচট খেলে ব্যথায় আর উঠে দাঁড়াতে পারবে না । তাই কঠোর হও । সব বিষয়ে পারদর্শী হও যেন তোমাকে দেখে অন্যরা শিখতে পারে । এখন ডাক্তারি পড়বে , কারাতি শিখছো । পরে গিটার শিখবে , ড্রাইভিং শিখবে দেখবে সবাই তোমাকে দাম দেবে । তোমাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করতে সাহস পাবে না । কারন তোমার মধ্যে কোনো খুঁত থাকবে না । মূল বিষয় হচ্ছে ,
আজ আমাদের সবার সাথে রাগ করে যে প্রমিজটা করেছো সেটা মাথায় রেখে সামনে এগিয়ে চলো ।
আবরনের কথা গুলো পূর্ণতার মনকে আরো কিছুগুন শক্ত করে দিল ।
জিব্রান বলল ,
– আমি চলে গেলে আমার অনুপস্থিতিতে আবরন তোর গার্ডিয়ান হিসেবে থাকবে । তোর কোনো আপত্তি আছে ??
পূর্ণতা কান্না থামিয়ে জিব্রানকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল ,
– না ভাইয়া !! তুমি যেভাবে বলবে আমি সেভাইবেই শুনবো । আমার কোনো আপত্তি নেই ।
জিব্রান বলল ,
– আবরন ঠিক বলেছে । কঠোর হতে শিখ । আমি চাই তুই অল ইন ওয়ান হ ।
– আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করবো ভাইয়া । তুমি দোয়া করো শুধু ।
– সেটা আর বলতে হবে না ।
পূর্ণতার রুমে সব এসে জড়ো হয়ে আছে । ওদের কথা বার্তা টের পেয়ে পাশের রুম থেকে মিলি রহমান আর আধিরা আনজুম উঠে এসে বললেন ,
– কিরে , তোরা এত রাতে কিসের গোল মিটিং করছিস ?? ( মিলি রহমান )
– তোদের গল্প শেষ হয়নি ?? এখন তো দেখছি আমাদের এত বছরের জমানো গল্পের চেয়ে তোদের প্রতিদিনের গল্প অনেক দীর্ঘ । ( আধিরা আনজুম )
সবাই হেসে উঠল । আবরন বলল ,
– আম্মুজান , হাজার বছরের গল্প সংক্ষেপে শেষ করে দেওয়া যায় , কিন্তু প্রতিদিনের গল্প সত্যিই দীর্ঘ হয় । আর এখানে ভাই বোনের ভালোবাসা আর কান্নার গল্প চলছে ।
মিলি রহমান বললেন ,
– জিব্রান !! তুই আমার মেয়েটাকে আবার চেতিয়েছিস ??
পূর্ণতা জিব্রানকে ছেড়ে মিলি রহমানের কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল ,
– তোমার আদরের ছেলে আমাকেই পায় চেতানোর জন্য !!
প্রেনা বলল ,
– আহা আহা , আমার যদি এমন চেতানোর জন্য একটা ভাই থাকতো !!
জিব্রান প্রেনাকে বলল ,
– কেন ?? আমি তোর ভাই না ?? আর এই যে ফাহিম , তাসিন , আবরন ওরা তোর ভাই না ?? আর কত ভাই লাগবে তোর ??
প্রেনা বলল ,
– তোমরা আমাকে চেতাও না তো এইজন্য !!
আয়মান বলল ,
– চেতালে পরে কান্না করে কুল পাবে না ।
আধিরা আনজুম বললেন ,
– অনেক হয়েছে । রাত বাজে আড়াই টা । সব যার যার রুমে যা , গিয়ে ঘুমিয়ে পড় ।
সবাই ” গুড নাইট “বলে যার যার রুমে গেল ।
আবরন সবার চোখের আড়ালে প্রেনার সামনেই পূর্ণতা কে বলে গেল ,
– have a horror dream কাউয়্যার বউ ।
বলেই দৌড় দিয়ে চলে গেল ।
পূর্ণতা ওকে মনে মনে ১০১ টা গালি দিয়ে দরজা লাগিয়ে গিয়ে শুয়ে পড়ল ।
…………………………………………….
সকাল ৮ টার দিকে পূর্ণতার ঘুম ভেঙ্গে গেল । ঘুম ভাঙতেই কানে শব্দ ভেসে আসতে লাগল । মনে হচ্ছে , কেউ গান গাইছে । পূর্ণতা বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াতেই শুনলো শব্দটা উপর থেকে ভেসে আসছে ।
শব্দের খোঁজে পূর্ণতা ওরনা গলায় জড়িয়ে নিঃশব্দে দরজা খুলে ছাদের দিকে রওনা হলো । ছাদে পৌছাতেই গানের শব্দ গুলো এবার পুরোপুরি শোনা যেতে লাগল ,
যদি সত্যি জানতে চাও
তোমাকে চাই, তোমাকে চাই
যদি মিথ্যে মানতে চাও
তোমাকেই চাই
যদি সত্যি জানতে চাও
তোমাকে চাই, তোমাকে চাই
যদি মিথ্যে মানতে চাও
তোমাকেই চাই
হলো শুরু সাতদিনে
এই খেলাধুলো রাতদিনের
জানি বারণ করার সাধ্যি নেই আর আমার
তোমার নামের মন্দিরে
আর তোমার নামের মসজিদে
আমি কথা দিয়ে এসেছি বারবার
বিন্দু থেকে সিন্ধু হয়ে যাও
তুমি ইচ্ছেমত আমাকে সাজাও
যদি সত্যি জানতে চাও
তোমাকে চাই, তোমাকে চাই
যদি মিথ্যে মানতে চাও
তোমাকেই চাই
যদি সত্যি জানতে চাও
তোমাকে চাই, তোমাকে চাই
যদি মিথ্যে মানতে চাও
তোমাকেই চাই
মনের গভীরে, ঘুমের শরীরে
তোমাকে নিয়ে ডুবে যাবো
আমার কাছে কারণেরা আছে
নিজেকে আমি খুঁজেই নেবো
যদি সত্যি জানতে চাও
তোমাকে চাই, তোমাকে চাই
যদি মিথ্যে মানতে চাও
তোমাকেই চাই
যদি সত্যি জানতে চাও
তোমাকে চাই, তোমাকে চাই
যদি মিথ্যে মানতে চাও
তোমাকেই চাই#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ১৮
পূর্ণতা গানের স্রোতের সাথে ভেসে ভেসে অবশেষে গানের উৎস খুঁজে বের করে ফেলল । তবে কোনো শব্দ করে নি । চুপচাপ দাঁড়িয়ে গান শুনছিল ।
গান গাইছিল আবরন ঠিক পূর্ণতার বারান্দা বরাবর উপরে দাঁড়িয়ে । আবরনের ভাবনা এমন যে , পূর্ণতা ওর গান শুনুক বা না শুনুক !! অন্তত প্রকৃতি যেন ওর গান শুনে মুগ্ধ হয়ে পূর্ণতা কে গিয়ে জানান দেয় যে আবরন পূর্ণতার জন্য গান গাইছে ।
পূর্ণতা দেয়াল ধরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে নিঃশব্দে গান শুনছিল । আবরন গান শেষ করে হঠাৎ পেছনে না ঘুরে তাকিয়েই বলল ,
– লুকিয়ে লুকিয়ে গান শুনছো যে ??
পূর্ণতা হঠাৎ আবরনকে কথা বলতে শুনে চোখ বড় করে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গেল ।
আবরন ওর দিকে ঘুরে ঠোঁটে বাকা হাসি দিয়ে ওর দিকে ধীর পায়ে এগোতো এগোতে বলল ,
– ভয় পেলে বুঝি ??
পূর্ণতা ভয়ে ভয়ে মুখে জোড়পূর্বক হাসির রেখা টেনে বলল ,
– ইয়ে মানে !! না ভয় পাবো কেন ?? আপনি কি বাঘ না ভাল্লুক ??
আবরন ওর কথা শুনে এবার হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিয়ে বলল ,
– ওও তাই !! আমি বাঘ , ভাল্লুক নই বলে ভয় পাও না তাই না ??
পূর্ণতা ছাদের একদম রেলিংয়ের সাথে ঘেষে দাঁড়িয়েছে । হয়তো পেছনে যাওয়ার আরো জায়গা থাকলে ও আরো পেছনে যেত ।
আবরন পূর্ণতার একদম কাছাকাছি এসে পূর্ণতা কে দুই হাতের মাঝে রেখে দুইহাত রেলিংয়ে রাখল । পূর্ণতা চোখ বন্ধ করে থরথর করে কাঁপছে ।
আবরন বলল ,
– অ্যাহহহহ ,,, এসেছে আমার সাহসী রে !! সে নাকি আমাকে ভয় পায় না !! এখন দেখো কেমন কাপছে !!
পূর্ণতা ঠোঁট কাপাতে কাপাতে বলল ,
– আপনি বাঘ ও না , ভাল্লুকও না । আপনি একটা উল্লুক ।
– হোয়াট !! নিউ প্রোমোশন ?? আগে ছিলাম সাদা কাউয়্যা । আর এখন উল্লুক ??
বাই দ্য ওয়ে , তুমি উল্লুক দেখেছো জীবনে ?
– এই যে সামনে এতো বড় উল্লুক দাঁড়িয়ে আছে । না দেখার কি আছে !!
আবরন দাঁত কেলিয়ে বলল ,
– কখন থেকে চোখ বন্ধ করে আমাকে এটা ওটা বলছো !!
একটু তাকিয়ে ভালো করে দেখে বলোতো আমি কেমন ??
পূর্ণতা মাথা নেড়ে “না” সূচক জানালো ।
আবরন বলল ,
– কেন কেন ?? তাকাবে না কেন ??
পূর্ণতা মনে মনে ভাবছে ,
– এমনিতেই আপনি আশেপাশে থাকলে হার্টবিট বেড়ে যায় ! এখন এত কাছের থেকে দেখলে তো ‘হার্ট ফটাক’ থুরি ! “হার্ট এটাক” করবো ।
আবরন পূর্ণতা কে বলল ,
– তুমি তাকাবে নাকি ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেব ??
পূর্ণতা চোখ বন্ধ করেই ঠোঁট ফুলিয়ে বলল ,
– এই এই !! আপনি আমার সাথেই সবসময় এমন করেন কেন বলেনতো !! আমি কি দোষ করেছি ??
– তুমি আমার কথা শোনো না তাই শাস্তি দিই !! এখন কথা না বাড়িয়ে তাকাও , নাহলে আমি এক ধাক্কা মেরে নিচে ফেলে দেব !
পূর্ণতা বলল ,
– রিল্যাক্স !! তাকাচ্ছি !!
তারপর পূর্ণতা চোখ খুলে তাকাতেই 🥺 দেখলো আবরন চোখ বড় বড় করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে । পূর্ণতা বলল ,
– কি ?
আবরন বলল ,
– এখন ভালো করে আমাকে দেখে বলো আমি দেখতে কেমন ? সত্যি করে বলবে ? যদি দুষ্টুমি করো বা মিথ্যে বলো একদম ধাক্কা মেরে ফেলে দেব ।
পূর্ণতা ঢোক গিলে আবরনের দিকে ভালো করে তাকালো । দেখল সকালের রোদে ওর চুল শাইন করছে । গালের খোচা খোচা দাড়ি গুলোও শাইন করচে । চোখ দুটো অন্য ছেলেদের চেয়ে তুলনামূলক সুন্দর । চোখের বর্ণও চুল-দাড়ির মতোই গাঢ় চকোলেট রংয়ের । তার উপর লাল ফর্সা ত্বক । নাকে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে ।
পূর্ণতাকে এভাবে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লক্ষ্য করে আবরন বলল ,
– এমন ভাবে দেখছো যেন আমি দুধের স্বর । আমাকে খেয়েই ফেলবে !!
পূর্ণতা বলল ,
– আপনি কি করে জানলেন আমি দুধের স্বর পছন্দ করি ??
– তারমানে তুমি আমাকে খেয়ে ফেলবে ??
– ধুর !!
– হা হা হা । বলো আমি কেমন ?
– ভালো ।
– আমি ভালো তা আমি জানি । দেখতে কেমন ?? সুন্দর ?? বেশি সুন্দর ?? বাজে ?? বেশি বাজে ?? কোনটা ??
পূর্ণতা কিছু একটা ভেবে বলল ,
– একটাও না । আপনি অন্যরকম সুন্দর । এমন যে সৌন্দর্য আল্লাহ সব ছেলেদের দেয় না ।
এখন সড়ুন । আমি বাসায় যাবো ।
আবরন এক ভ্রু বাকা করে বলল ,
– সত্যি বলছো ??
পূর্ণতা মুখ বাকিয়ে বলল ,
– ঢং করবেন না তো !! সত্যি বলেছি এখন আমাকে যেতে দিন ।
– ওও আমি ঢং করি না ?? আর আমি কখন বলেছি যে তুমি সত্যি বললে আমি তোমাকে যেতে দেব ??
পূর্ণতা কাদো কাদো ফেস করে বলল ,
– এই যে আবার ঢং করতেছেন ??
– ঢং আমি করি নাকি তুমি করো ?? এইযে ঢং করে কাদো । ঢং করে কথা বলো । ঢং করে রিয়েক্ট করো । ঢং করে ঠোঁট ফুলাও । ঢং করে ঘুমাও । ঢং করে খাও । ঢং করে হাঁটো । এখন একটু ঢং করে একটা কিস করে দাও গালে ।
পূর্ণতা আবরনের কথা শুনে চোখ বড় করে বলল ,
– হ্যা ??
আবরন বলল ,
– কিছু না । সব শুনছো খালি লাষ্টের লাইন ছাড়া !! ঠিক না ??
পূর্ণতা হা সূচক মাথা নাড়ল ।
আবরন বলল ,
– ওকে । তাহলে ঐ না শোনা কথার মধ্যে থাকা কাজটা বরং আমি ই করে দিই । কি বলো ??
এই বলে আবরন পূর্ণতার গালের কাছের চুল গুলো কানের পেছনে গুজে দিয়ে তারপর আস্তে করে গালে চুমু এঁকে দিল ।
পূর্ণতা আবরনের আচরনে শিহরিত ।
আবরন ওর থেকে একটু সরে দাঁড়িয়ে বলল ,
– যাও বাসায় । আমি আসতেছি ।
পূর্ণতা রোবটের মতো হেলে দুলে নিচে চলে গেল । আস্তে করে মেইন ডোর খুলে গুটি গুটি পায়ে নিজের রুমে গিয়ে খাটে বসতেই প্রেনা লাফিয়ে উঠল ।
– ওরেএএএএএএ !!
পূর্ণতা বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল ,
– কিরে ?? কি হইছে ??
– আমার পা শেষ !!
পূর্ণতা প্রেনার পায়ের দিকে এগিয়ে বলল ,
– কি হয়েছে পায়ে ??
– তুই বসছোস আমার পায়ের উপর !!
– আমার ওজন এতো যে তোর পা ভেঙ্গে গেছে ??
প্রেনা বসে বলল ,
– সাত সকালে কোথায় গিয়েছিলি ??
– রান্নাঘরে গিয়েছিলাম । ক্ষুধা লেগেছে তাই !
– আমারো ক্ষুধা লাগছে । কিছু নিয়ে আয় তো !
– এই কানা সকালে বিস্কুট ছাড়া কিছু পাবি না । আমার প্রিয় চকোলেট বিস্কুট আছে । খাবি ??
– আন ।
পূর্ণতা দরজা খুলে বের হতেই আবরনের সাথে ধাক্কা খেয়ে ওকে নিয়ে উল্টে পড়ল ফ্লোরে ।
পূর্ণতা চিৎকার করতে যাবে তার আগেই আবরন হাত দিয়ে ওর মুখ ঠেসে ধরে বলল ,
– এই চুপ চুপ !! আস্তে । নিচে তো আমি পড়েছি , তুমি আমার উপরে পড়েছো । ব্যথা আমি পেয়েছি , তুমি না । so , চিৎকার তো আমার দেওয়ার কথা তাই না ?? তুমি কেন চিৎকার দিতে চাইছিলে !!
পূর্ণতা আবরনের হাত মুখের সামনের থেকে সড়িয়ে বলল ,
– আমি তো ভাবছি ঘরে চোর ঢুকেছে আমি তার উপর পড়েছি । তাই চিৎকার দিতে চেয়েছি ।
পূর্ণতা এই বলে হেসে উঠে দাঁড়ালো । আবরন হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল ,
– তোমার ওজন ১০০টা ময়দার বস্তার সমান । দিয়েছো তো আমার কোমড় টা ভেঙ্গে । এখন টেনে তোলো ।
পূর্ণতা আবরনের হাত ধরে টেনে তুলে বলল ,
– আমার যদি ১০০ টা ময়দার বস্তার সমান ওজন হয় !! তাহলে আপনার কি ?? গুদামের টন টন ময়দার বস্তার ওজনের সমান দেহের ওজন আপনার । হুহ্ !
আবরন হেসে বলল ,
– তোমার কাছে আমার ওজন এমন মনে হবে এটা স্বাভাবিক !!
পূর্ণতা রান্নাঘরের দিকে চলে গেল । আবরন চলে গেল ফ্রেশ হতে ।
………………………………………………..
আজ মেডিক্যাল খোলা । আবরন দল বল নিয়ে আগে ভাগেই চলে গিয়েছে ।
এইদিকে পূর্ণতা গোসল করে একটা হালকা আকাশি রং এর কুর্তির সাথে ম্যাচিং ওরনা আর প্লাজো পড়ে বসে আছে ।
আধিরা আনজুম পূর্ণতা কে বলল ,
– মা জননী ! আপনি দেখি চুল বাঁধেন নি ??
পূর্ণতা হেসে বলল ,
– আন্টি , বেঁধে দেবে একটু ??
আধিরা আনজুম হেসে বলল ,
– আয় দিচ্ছি ।
পূর্ণতা খুশি হয়ে বলল ,
– একটা খোপা করে দিলেই হবে ।
আধিরা আনজুম পূর্ণতার চুল বাঁধতে বাঁধতে বললেন ,
– চুল গুলো তো মাশাআল্লাহ অনেক বড় । নিজে যত্ম করিস নাকি মা যত্ম করে ??
– আম্মুর ভেসজ তেল , শ্যাম্পুর কামাল । আমি নিজের যত্ম নিতে পারি না কিন্তু রান্না বান্না , ঘর গোছানো এগুলো ভালোই পারি ।
– এগুলোই আগে দরকার । নে তোর চুল বাঁধা শেষ ।
– আম্মু কোথায় ?
– রান্নাঘরে ।
– আচ্ছা ।
– একা যাবি নাকি ??
– সেটাই তো জানি না । ভাইয়া তো অফিসে গিয়েছে ।
এরই মধ্যে কলিং বেল বেজে উঠল ।
মিলি রহমান দরজা খুলে পূর্ণতা কে বলল ,
– পূর্ণ !! ফাহিম এসেছে !!
পূর্ণতা রুম থেকে বেরিয়ে দেখল ফাহিম দাঁড়িয়ে আছে । ফাহিম পূর্ণতা কে দেখে বলল ,
– পূর্ণতা !! আবরন আমাকে পাঠালো তোমাকে নিতে !! তুমি কি রেডি হয়েছো ??
– হা , আমি তো রেডি । আমি আরো ভাবছিলাম কার সাথে যাবো ??
– আচ্ছা , চলো তাহলে ।
– দাঁড়ান ভাইয়া । ব্যাগ নিয়ে আসছি ।
– আচ্ছা ।
ব্যাগ কাধে নিয়ে পূর্ণতা মিলি রহমান আর আধিরা আনজুম কে বিদায় জানিয়ে ফাহিমের সাথে বেরিয়ে গেল ।
মেডিক্যাল এর গেইটের সামনে রিকশা থামিয়ে ফাহিম পূর্ণতা কে নিয়ে নেমে ক্যাম্পাসে ঢুকে একটু এগিয়ে যেতেই হঠাৎ এক দল ছেলে মেয়ে এসে ওদের ঘিরে ধরলো । দুইটা মেয়ে পূর্ণতার হাত ধরে টেনে ওকে ইচ্ছা মতো মারতে লাগলো আর গালাগাল করতে লাগল ।
ফাহিমকে ভীরের মাঝে ধাক্কাধাক্কি করে দূরে পাঠিয়ে দিল । পূর্ণতা কে ক্যাম্পাসের বেশ কয়েকজন মেয়ে মিলে মারছে আর চারপাশে সবাই চেচাচ্ছে ওকে মারার জন্য ।
ঘটনা এত দ্রুত ঘটেছে যে পূর্ণতা প্রশ্ন করার সময় টুকু পায় নি যে , কি করেছে ও ??
ফাহিম আবরনকে কল করে জানাতে জানাতে ক্যাম্পাসের মাঝে বিশাল জনসমাগম তৈরি হয়েছে ।
আবরন একপ্রকার ছুটে দলবল নিয়ে এসেছে । তাসিন , ফাহিম , আয়মান সাথে আরো অনেক ছেলে মেয়ে মিলে সবাইকে দূরে সরাচ্ছে । আর আবরন আগে ambulance কল দিয়ে সোজা চিল্লিয়ে ভীড় ঠেলে পূর্ণতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ।
পূর্ণতা কে আহত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে থাকতে দেখে আবরনের মনে বড়সরো ধাক্কা লাগল । কপাল ফেটে রক্ত পড়ছে । নাকে-মুখে রক্ত । লম্বা চুল গুলো খুলে গিয়েছে । আকাশি জামায় রক্তের দাগ সাথে জায়গায় জায়গায় ছিড়ে গিয়েছে । হাতের জায়গায় জায়গায় চোট আর পায়েও একই অবস্থা ।
মাঠের হৈ চৈ এর মাঝে আবরন পূর্ণতা কে কোলে তুলে অ্যাম্বুলেন্সে তুলতে ব্যস্ত ।
আর ঐদিকে ফাহিম , তাসিন আর আয়মান সবাইকে শান্ত করতে ব্যস্ত ।
Ambulance চলছে আর আবরন চোখের পানি ফেলতে ফেলতে পূর্ণতা কে জড়িয়ে ধরে শুধু পাগলের মতো বলছে ,
– তোমার কিচ্ছু হবে না পূর্ণ , কিচ্ছু হবে না তোমার । তোমাকে ঠিক হতে হবে । এই সব কিছুর জন্য তোমাকে ঠিক হতে হবে । তোমাকে আমার জন্য ফিরতে হবে পূর্ণ । ফিরতে হবে তোমায় !!
#চলবে ♥️