#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ২১
বিকেল ৪ টার সময় আজ পূর্ণতা কে হসপিটাল থেকে রিলিজ করিয়ে বাসায় নিয়ে গিয়েছে পরিবারের সবাই ।
ডাক্তারের সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে এই ডিসিশন নিয়েছে সবাই । সকল পরামর্শ মেনে চললে ১ মাসেই পূর্ণতা সুস্থতা লাভ করবে বলে জানিয়েছেন ডাক্তার ।
এই দুইদিন হসপিটালে পূর্ণতার দম বন্ধ হয়ে এসেছে । আজ বাসায় এসে খুবই কমফোর্টেবল ফিল করছে পূর্ণতা । মিলি রহমান সমস্ত যত্ম নিচ্ছে । জিব্রানও ঠিক মতো দেখাশোনা করছে । মেডিক্যাল এ যেতে না পারলেও পড়া গুলো প্রেনার কাছ থেকে কালেক্ট করে নিয়েছে পূর্ণতা ।
পড়াশোনা বলতে সব কিছুই নতুন । তার উপর ও নিজে ক্লাস গুলো পায় নি আর কোচিং ও করছে না । এসব পড়ার বিষয় গুলো যেন ওর ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে ।
পূর্ণতা কে চিন্তিত দেখে জিব্রান বলল ,
– কিরে তুই কি এত চিন্তা করিস ??
পূর্ণতা কিছুটা মন খারাপ করে বলল ,
– আমার পড়াশোনা সব শেষ !! সবাই এগিয়ে যাচ্ছে আর এদিকে আমি না পারছি মেডিক্যাল এ যেতে আর না-ই বা পারছি কোচিং করতে । বাসায় একজন টিচার রাখা জরুরি ভাইয়া !!
– তাই নাকি ?? টিচার তো রেডি । কবে থেকে পড়াতে আসতে হবে বল শুধু । বাকি ব্যবস্থা আমি করছি !
– সত্যি বলছো ?? তাহলে আজ সন্ধ্যায় ই আসতে বলো । আমি তো সারাক্ষন ফ্রি । সব ক্লাসের পড়া গুলো আমার কালেকশন এ আছে । শুধু বুঝিয়ে দিতে হবে ।
– ঠিক আছে । চিন্তা করিস না তুই । আমি ম্যানেজ করছি । তুই সন্ধ্যায় রেডি থাকিস ।
– থ্যাংকস ভাইয়া ।
– ইটস ওকে পুচকি ।
দুপুরে খেয়ে দেয়ে পূর্ণতা একটা শান্তির ঘুম দিয়েছে । ঘুম ভাংলো একদম মাগরিবের কিছুক্ষণ আগে ।
তড়িঘড়ি করে উঠে কোনো রকম ফ্রেশ হয়ে মিলি রহমানকে ডেকে বলল ,
– আম্মু চুলটা বেধে দাও ।
– খোপা করবি ??
-না , দুইটা বেনি করে দাও ।
– আচ্ছা ।
মিলি রহমান বেনি করে দিয়ে পূর্ণতার কলার টা খুলে ঘাড়ে একটু গরম সেঁক দিয়ে একটু ঔষধ মালিশ করে দিয়ে আবারো কলার পড়িয়ে দিলেন । পূর্ণতা ঠোঁট উল্টিয়ে বলল ,
– আর কতদিন পড়তে হবে এই ছাতা নাতা ??
মিলি রহমান বললেন ,
– ঘাড় যখন ব্যথা ছাড়া নাড়াচাড়া করতে পারবি সেদিন থেকে আর এটার দরকার হবে না । তাই বলে আবার ইচ্ছে করে নাড়াতে গিয়ে ঘাড় ভাঙ্গিস না বলে দিচ্ছি ।
পূর্ণতা একটু হেসে বলল ,
– ধুর , তুমিও না ।
এর মধ্যেই কলিং বেল বেজে উঠলো । পূর্ণতা বলল ,
– আম্মু আমি আমার রুমে যাচ্ছি । তুমি একটু দরজাটা খুলে স্যারকে আমার রুমে পাঠিয়ে দাও ।
– ঠিক আছে । তুই গিয়ে টেবিলে বস ।
পূর্ণতা মাথায় ঘোমটা দিয়ে ভালো করে নিজেকে আয়নায় দেখে নিল ।
– না , সব পারফেক্ট ।
তারপর নিজের টেবিলে চেয়ার টেনে বসতে যাবে তখনই শব্দ পেল কেউ ওর রুমে প্রবেশ করেছে । ওর বুঝতে বাকি রইল না রুমে টিচার প্রবেশ করেছে । ও উল্টো ঘুরে মুচকি হেসে সালাম দিয়েই স্যারকে দেখে যেন ৪৪০ ভোল্টের ঝটকা খেল । স্যার সালাম গ্ৰহণ করে বলল ,
– কেমন আছেন মিস পূর্ণতা ??
পূর্ণতা স্যারকে পা হতে মাথা পর্যন্ত দেখে উত্তেজিত হয়ে বলল ,
– এই এই , আপনি এখানে কি করছেন ??
– আমি আপনার বাসার প্রাইভেট টিউটর শাহরিদ আহনাফ আবরন । এখন কথা না বাড়িয়ে টেবিলে বসুন , নাহলে আমি কিন্তু ভালোই জানি বাঁকা স্টুডেন্ট কে কিভাবে সোজা করতে হয় !!
পূর্ণতা আর কিছু করার না পেয়ে ভেংচি কেটে চুপচাপ টেবিলে বসে পড়লো ।
আবরন অপর পাশের চেয়ার টেনে বসে বলল ,
– কি কি নোটস কালেক্ট করেছেন ??
পূর্ণতা নোটস গুলো এগিয়ে দিয়ে বলল ,
– এখানে পুরো এক সপ্তাহের নোটস আছে । আমি তো ক্লাসে যেতে পারি নি তাই এগুলোর আগা গোড়া কিছুই মাথায় ঢুকছে না ।
– ওকে , সাতদিনের পড়া তো একসাথে আপনার মাথায় ঢোকানো যাবে না । আমি আজকে ১ম ক্লাসের নোটস গুলোই বুঝিয়ে দিচ্ছি ।
– ওকে ।
আবরন ওকে একটু একটু করে নোটস বুঝিয়ে দিচ্ছে আর পূর্ণতা তা মনোযোগ দিয়ে বুঝে নিচ্ছে । পড়ার মাঝখানে মিলি রহমান রুমে প্রবেশ করলেন চা নাস্তা হাতে নিয়ে ।
– সরি , একটু ডিস্টার্ব করলাম । খাবার গুলো খেতে খেতে পড়ো ।
আবরন বলল ,
– আচ্ছা আন্টি ।
পূর্ণতা চোখ ঘুরিয়ে মিলি রহমানের দিকে তাকিয়ে আছে । ও চোখের ইশারায় মিলি রহমানকে বোঝাতে চাইছে যে ,
– তার মানে তোমরা মিলে ঝিলে আমার সাথে এত বড় ষড়যন্ত্র টা করেছো ??
পূর্ণতার চাহনি দেখে আবরন ভালোই বুঝলো যে পূর্ণতার চোখ কি বলছে । মিলি রহমান রুম থেকে চলে যেতেই আবরন কলম দিয়ে স্বজোরে পূর্ণতার আঙ্গুলের উপর বারি দিতেই পূর্ণতা ব্যথায় চেচিয়ে উঠল ।
– আউউচ !!
তারপর আঙ্গুল ডলতে ডলতে বলল ,
– কি সমস্যা ?? মারলেন কেন ??
আবরন বলল ,
– আন্টির দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে ছিলেন যেন আন্টিকে চোখ দিয়েই গিলে খাবেন ?? কেন ?? কি সমস্যা ?? আন্টি কি করেছে ??
পূর্ণতা ভ্রু কুচকে বলল ,
– কি করে নি তা বলেন ?? ভাইয়া আর আম্মু মিলে ষড়যন্ত্র করে আপনাকে আমার টিউটর বানিয়েছে !!
-তো আমি কি টিউটর হিসেবে খারাপ ??
পূর্ণতা জিহ্বে কামড় দিয়ে বলল ,
– এ বাবা !! খারাপ কখন বললাম ??
– তাহলে আমার কাছে পড়তে কি সমস্যা ??
– সমস্যা আর কি ??
এইটুকু বলে মনে মনে ভাবল ,
– খালি তো পারেন বকা দিতে । আর টিউটর হয়ে কখন যেন মেরে বসেন তার ঠিক নাই !! হায়রে , কখন মারার কথা কি বলছি ?? একটু আগেই তো মারলেন !! আবার বলছেন আপনার কাছে পড়তে কি সমস্যা ?? ভাইয়াকে পড়া শেষ হলে ধোলাই দিতে হবে !!
আবরন পূর্ণতা কে চুপ চাপ অন্যমনস্ক হতে দেখে আবারও কলম দিয়ে হাতে বারি মারতেই পূর্ণতা বলল ,
– এই , আপনি খালি মারেন কেন ??
– পড়ানোর সময় আপনি অমনোযোগী হবেন কেন ??
পূর্ণতা বলল ,
– আপনি তো খাচ্ছেন । তাই ভাবলাম রিল্যাক্স টাইম দিয়েছেন ।
আবরন খেতে খেতে বলল ,
– রিল্যাক্স টাইমে আপনাকেও খেতে ঈশারা করেছি , কিন্তু আপনি কোন ধ্যানে চলে গিয়েছেন আপনিই ভালো জানেন । তাই ধ্যান ভাংতে ছোট্ট একটা মাইর আরকি !!
পূর্ণতা আবরনের কথা শুনে মনে মনে ভাবছে ,
– এই লোকটা ইদানিং আমাকে আপনি করে বলে কেন ?? না চাইতেও কেন যেন আপনি আপনি শুনতে খারাপ লাগে ??
পূর্ণতা ভাবনা থেকে বেরিয়ে বলল ,
– একটা কথা বলি ??
আবরন বলল ,
– বলেন !!
পূর্ণতা ঠোঁট উল্টিয়ে বলল ,
– আপনি আমাকে “আপনি” করে কেন বলেন ??
আবরন বলল ,
– সম্মান করি তাই ।
– ( আহ , আসছে আমার সম্মানদাতা রে !! )
মনে মনে ভেবে পূর্ণতা জবাব দিল ,
– আপনি না কেমন যেন বিহেইভ করেন আমার সাথে !!
আবরন ওর মুখের সামনে খাবার তুলে ওকে খেতে ঈশারা করে মুখে বলল ,
– কেমন বদলেছি ??
পূর্ণতা হা করে খাবারটা খেয়ে নিয়ে বলল ,
– আমিও ঠিক বুঝতে পারছি না ।
আবরন ওর মুখের সামনে আবারও খাবার তুলে বলল ,
– আমি এমনই । মেডিক্যাল এর ভিতরে এক রকম , মেডিক্যাল এর বাহিরে আরেক রকম । হসপিটালে যতক্ষন থাকি তখন এক রকম আবার বাসায় যতক্ষন থাকি ততক্ষন আরেক রকম ।
পূর্ণতা হা করে এই খাবারটুকুও মুখে নিয়ে বলল ,
– আমাদের বাসায় সবার সাথে যতক্ষন থাকেন ততক্ষন এক রকম , আমার সাথে যতক্ষন থাকেন ততক্ষন আরেক রকম !!
পূর্ণতা খাবার চিবাতে চিবাতে নিজের অজান্তেই কথা গুলো বলে খাবার তালুতে উঠতেই কাশি দিতে লাগল । আবরন পানি এগিয়ে দিতেই ও ঢকঢক করে সব পানি খেয়ে ফেলল ।
আবরন বলল ,
– আপনি কখন কি বলেন তা হয়তো আপনি নিজেও জানেন না !!
পূর্ণতা চুপ করে আছে । তারপর নোটস গুলো এগিয়ে দিয়ে বলল ,
– আমাকে এই দিকটা একটু বুঝিয়ে দিন ।
আবরন বলল ,
– বুঝাই পরে । আগে আমার জন্য পানি আনুন । আমার পানি তো আপনিই সব শেষ করে দিলেন ।
পূর্ণতা ওর ফ্লাক্সটা এগিয়ে দিয়ে বলল ,
– আমি আপনার পানি খেয়েছি , আপনি বরং আমার পানিটা খেয়ে নিন ।
এইটুক বলে থেমে দেখল আবরনের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই । তাই আবার বলল ,
– আচ্ছা , আমার পানি খেতে হবে না । আমি আবার ডায়নিং রুম থেকে পানি নিয়ে আসছি ।
এই বলে পূর্ণতা গ্লাস হাতে উঠে যাচ্ছিল কিন্তু আবরন ওকে হঠাৎ টান দিয়ে আবার চেয়ারে বসিয়ে বলল ,
– আমি বলেছি আপনাকে ডায়নিং রুমে গিয়ে পানি আনতে ?? আপনার ফ্লাক্স থেকেই খেয়ে নিচ্ছি ।
এই বলে আবরন পূর্ণতার ফ্লাক্স থেকেই পানি খেতে শুরু করলো ।
পূর্ণতা তাকিয়ে তাকিয়ে আবরনের পানি খাওয়া দেখছে আর মনে মনে ভাবছে ,
– লোকটা এমন কেন ?? সবসময়ই উপর উপর এক কথা বললেও ভিতরে ভিতরে অন্যরকম চিন্তা ভাবনা করে ।
আবরন পানি খেতে খেতে লক্ষ্য করল পূর্ণতা এক ধ্যানে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে । মনে মনে কিছু একটা ভেবে কোনো কিছু না দেখার ভান করে পানি খেয়ে ফ্লাক্সটা অফ করে পাশে রেখে ওকে বলল ,
– এখন বলেন !! কোন দিকটা বুঝিয়ে দেব ??
পূর্ণতা নোটস এ আঙ্গুল রেখে দেখিয়ে দিতেই আবরন বিষয়গুলো আবার বুঝিয়ে দিল ।
টানা ২ ঘন্টা পড়িয়ে লিখিয়ে বুঝিয়ে আবরন অবশেষে পূর্ণতা কে বলল ,
– আজকে যা যা পড়িয়েছি এবং বুঝিয়েছি তাতে কোনো প্রবলেম আছে ??
পূর্ণতা মাথা নেড়ে বলল ,
– উহু ।
আবরন বলল ,
– ওকে তাহলে আগামীকাল আমি এলে আমাকে আপনি এই পড়া গুলো বুঝিয়ে দেবেন । কাল আমি হবো আপনার স্টুডেন্ট আর আপনি হবেন আমার টিউটর । ওকে ??
পূর্ণতা মাথা নাড়ল ।
আবরন চেয়ার থেকে উঠে বলল ,
– ওকে । আজকের জন্য এখানেই আল্লাহ হাফেজ ।
আবরন রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই পূর্ণতা বই খাতা গুছিয়ে মিলি রহমানের রুমে গেল ।
মিলি রহমান কারো সাথে ফোনে কথা বলছে । পূর্ণতা বলল ,
– কার সাথে কথা বলো আম্মু ??
মিলি রহমান বললেন ,
– তোর বাবার সাথে কথা বলি । তুই কথা বলবি ??
পূর্ণতা খুশি হয়ে বলল ,
– হা , দাও । একটু কথা বলি ।
মিলি রহমান ফোন এগিয়ে দিতেই পূর্ণতা ফোনটা হাত থেকে নিয়ে কানে দিয়ে বলল ,
– আসসালামু আলাইকুম আব্বু । তুমি কেমন আছো ?
ওপাশ থেকে আফতাব উজ্জামান এর গলা শোনা গেল ।
– ওয়ালাইকুমুসসালাম মা । আমি ভালো নেই । তুই কেমন আছিস ?
– আছি কোনো রকম আরকি !! তুমি ভালো নেই কেন আব্বু ?? কি হয়েছে তোমার ??
– কতদিন তোকে দেখি না । তোর সাথে এর মধ্যে এত কিছু হয়ে গেল আর আমি তোর পাশে নেই । কিন্তু আমি আসছি খুব শীঘ্রই ।
– সত্যি বলছো ?? কবে আসছো ??
– সেটা নাহয় সারপ্রাইজ থাক ।
– এখন তো আমার রাতে ঘুম আসবে না । মনে হবে এই বুঝি তুমি চলে এসেছো ।
– হা হা হা । আমি আসছি খুব শীঘ্রই ।
– এলে কতদিন থাকবে ??
– এক দেড় মাস থাকবো । তারপর জিব্রান কে সাথে করে নিয়ে আসবো ।
জিব্রানকে সাথে করে নিয়ে যাবে শুনে পূর্ণতার মন খারাপ হয়ে গেল ।
– আব্বু ! একটা কথা বলি ??
– বল মা । কি বলবি ??
– আব্বু !! ভাইয়াকে কি না নিলেই নয় ??
– তোর ভাইয়া যদি ব্যবসার হাল না ধরে , আমার তো কয়দিন পর আর কাজ করার সামর্থ্য থাকবে না । তখন সংসারটা চলবে কি করে মা ??
– হুম , বুঝতে পারছি । কিন্তু আমি আর মা যে একা হয়ে যাবো !!
– একা কেন হবি ?? তোকে বিয়ে দিয়ে দেব । বিয়ে করে নতুন পরিবারে যাবি সাথে পড়াশোনা ও করতে থাকবি দেখবি আর একা লাগবে না । আর রইল বাকি তোর মায়ের কথা ! তোর মায়ের জন্য তো আমি আছি নাকি ?? আর জিব্রানকে বিয়ে করালে ওর বউ থাকবে বাড়িতে । তোর মা সময় পেলে আবার তোর শশুর বাড়ী যাবে । এভাবেই বাকি জীবন টুকু কাটিয়ে দিতে পারবে । তুই চিন্তা করিস না ।
পূর্ণতা শুধু ছোট্ট করে বলল ,
– হুম । তো ভাইয়াকে কবে বিয়ে করাবে ??
– তোর ভাইয়া ফ্রান্স এসে ৬ মাস বিজনেস করে নিজে কিছু ইনকাম করুক তারপর ই বিয়ে করাবো । কিন্তু মা , তোর যদি আপত্তি না থাকে তাহলে আমি এলে তোর বিয়েটা সেড়ে ফেলব ।
পূর্ণতা বলল ,
– তোমরা সবাই যা ভালো বোঝো আব্বু , আমি তা ই করবো সমস্যা নেই । কারন , পরিবার তো আর আমার খারাপ চাইবে না ।
– হু মা । আচ্ছা এখন বল চকোলেট বাদে আর কি কি আনবো তোর জন্য ??
– আমার আর কিচ্ছু লাগবে না । তুমি শুধু সুস্থ ভাবে ফিরে এসো ।
– আচ্ছা মা । তাহলে রাখছি । নিজের যত্ম নিস । খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো করিস আর ঔষধ গুলো ঠিকমতো খেয়ে নিস ।
– আচ্ছা ।
এই বলে ফোনটা কেটে মিলি রহমানের দিকে এগিয়ে দিল পূর্ণতা ।
তারপর নিজের রুমে গিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো । আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখল আকাশটা অন্ধকার , মেঘাচ্ছন্ন হওয়ায় তারা গুলো পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না ।
রাস্তার দিকে তাকাতেই লক্ষ্য করলো মেইন গেইটের সামনে একটা বড় গাড়ি থামানো । গাড়িটা চিনতে ভুল হলো না পূর্ণতার । ও বুঝলো , তারমানে আবরন এখনো যায় নি ।
বারান্দা থেকে বেরিয়ে পূর্ণতা সোজা হেঁটে গুটি গুটি পায়ে জিব্রানের রুমে গেল । দেখল আবরন সেখানেই আছে ।
জিব্রান পূর্ণতা কে ওর রুমের দরজার সাথে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল ,
– কিরে , পুচকি !! ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন ?? ভেতরে আয় !!
আবরন উল্টো ঘুরে বসাতে পেছনে পূর্ণতা কে দেখলো না । আবার ওকে দেখতে উল্টোও ঘুরলো না ।
পূর্ণতা আবরনের সামনে দিয়ে জিব্রানের কাছে এসে দাঁড়িয়ে বলল ,
– ভাইয়া , আব্বু আসবে নাকি !
জিব্রান হেসে বলল ,
– জানি তো ।
– ভাইয়া , ইদানিং তোমরা সব কিছু আমাকে না জানিয়েই করছো । সব কথাই দেখছি তোমরা জানো কিন্তু আমি ছাড়া । কেন ??
জিব্রান বলল ,
– আরে আমার বোকা বোন রে !! তুই অসুস্থ তাই তোকে প্রেসার দিই না । এখন শোন তোর মন খারাপ হলে আমাকে বল আমি তোকে খুশি করার ব্যবস্থা করছি ।
পূর্ণতা বলল ,
– এখন ক’টা বাজে ??
জিব্রান ঘড়ি দেখে বলল ,
– ৮ টা ৫০ বাজে ।
পূর্ণতা বলল ,
– আমার মন চাইছে আমার হবু ভাবীর সাথে দেখা করতে !!
জিব্রান একবার পূর্ণতা আরেকবার আবরনের দিকে তাকিয়ে বলল ,
– এখন ??
পূর্ণতা বলল ,
– হ্যা , আজই , এখন , এই মূহুর্তে ।
জিব্রান আবরনের দিকে তাকিয়ে পূর্ণতা কে জবাবে বলল ,
– ঠিক আছে । আজকে রাতে আমি , তুই , আবরন আর তোর ভাবী একটা জায়গায় যাবো !!
পূর্ণতা আবরনের দিকে এক পলক তাকিয়ে জিব্রানকে বলল ,
– সত্যি বলছো ??
– হু সত্যি । শোন আমার একটা প্ল্যান আছে । আমি তোর ভাবিকে ঐ জায়গায় নিয়ে সারপ্রাইজ দিব আর সেই জায়গাতে তুই আর আবরন আগেই চলে যাবি ।
– সত্যি ?? ইয়েএএএ !! রাতে অন্যরকম একটা মজা হবে তাই না ??
– হুম ।
আবরন বলল ,
– এসব ছোট খাটো সারপ্রাইজের চেয়ে চলো একটা বড় কোনো সারপ্রাইজের প্ল্যান করি । কারন তুমি তো চলে যাবে , তাই যাওয়ার আগে ভাবির সাথে তোমার কিছু আলাদা সময় কাটানো প্রয়োজন বলে আমি মনে করছি ।
পূর্ণতা জিব্রানের পাশে বসল । জিব্রান বলল ,
– কি প্ল্যান করছিস তুই আবরন ??
– চলো একটু দূরে কোথাও যাই ।
– দূরে বলতে !!
– যেমন ধরো ঢাকার বাহিরে দূরে কোথাও !! উমমমম , ধরো চট্টগ্রাম গেলাম !!
– ঐখানে গিয়ে কোথায় থাকবো , কি করবো ??
– আরে ঐখানে আমাদের নতুন বাংলো আছে । অনেক মজা হবে । আর অনেক অনেক ঘুরতে যাওয়ার জায়গা ও আছে । আমরা নিজেদের গাড়ি নিয়ে এই চারজন ঘুরতে গেলে কিন্তু মজাই হবে । এই ধরো একদিন সকালে গেলাম । তারপর সেখানে গিয়ে সেদিন বাংলোতেই থাকলাম । পরদিন ঘুরলাম এর পরদিন কিছু শপিং করে আবার রাতে রওনা হয়ে চলে এলাম ঢাকায় ।
জিব্রান ভেবে বলল ,
– আইডিয়াটা কিন্তু দারুন দিয়েছিস । তাহলে কবে যাবি বল !!
– শোনো , আরেকটা কাজ করা যেতে পারে । সাথে যদি ফাহিম , রুহি , তাসিন , নীরা আর আয়মান , প্রেনাকে নেওয়া যায় তাহলে আরো মজা হবে ।
– ওয়াও । জাষ্ট গ্ৰেট । তাহলে সবার সাথে কথা বলে ডেট ঠিক কর । আমাকে জানাস । অফিস থেকে ছুটি নিতে হবে তো ।
– সেটা ঠিক । তবে আমাদের ভার্সিটি মিস দেওয়া যাবে না । আজকে তো ২৩ শে মার্চ । সামনে ২৬ শে মার্চ । হিসাব মিলিয়ে আমি ছুটি বুঝে তোমাকে জানাচ্ছি ।
– ওকে । কিরে পূর্ণতা তুই কি বলিস !!
– হুম , মজা হবে অনেক । লং জার্নি আমার খুব ভালো লাগে সেটা তো জানোই ।
আবরন বলল ,
– আপনি আবার বমি করতে করতে যাবেন নাকি ??
পূর্ণতা বলল ,
– জি নো । আমার অভ্যাস আছে ।
– গুড গুড ।
জিব্রান হাসছে ওদের কথা শুনে । আবরন বলল ,
– চলো এখন নাহয় পুরান ঢাকায় ঘুরে আসি !!
– যাবি তুই ??
– চলো যাই । তুমি ভাবীকে নিয়ে নাও । রাতে পুরান ঢাকার দৃশ্যই বদলে যায় । অনেক মজা হবে । তবে ওখানে শুধু হিমুর মতো হাঁটতে হবে । রাজি আছো ??
জিব্রান বলল ,
– আগে দেখি আমার মিসেস কি বলে !!
– ওকে ।
জিব্রান নাদিরাকে কল করে কনফার্ম হলো ও সাথে যাবে ।
পূর্ণতা একটা কালো প্লাজো সাথে লাল একটা শর্ট কামিজ পড়ে কালো একটা ওরনা শরীরে পেচিয়ে রেডি হয়ে নিল ।
জিব্রান রেডি হয়ে আবরন আর পূর্ণতা কে সাথে নিয়ে বেরিয়ে গেল । আজিমপুর মোড় থেকে ওরা নাদিরাকে পিক করবে গাড়িতে । তারপর যাবে পুরান ঢাকার দিকে ।
যেমন ভাবনা তেমনি কাজ । প্ল্যান মোতাবেক ওরা বেরিয়ে পড়ল ।
জিব্রান গাড়ির পেছনে আগেভাগে উঠে পূর্ণতা কে সামনে বসতে বাধ্য করলো ।
জিব্রান বলল ,
– সামনে নাদিরাকে পিক করলে ও আমার সাথে বসবে ।
আবরন গাড়িতে উঠে ড্রায়ভিং সিটে বসে নিজের সিট বেল্ট বেধে গাড়ি স্টার্ট দিতেই পূর্ণতা বলল ,
– আমার সিট বেল্ট কে বেঁধে দিবে ?? আমি তো মুভ করতে পারি না ।
আবরন ওর দিকে তাকিয়ে ওর সিট বেল্ট টা বেঁধে দিয়ে গাড়ি ড্রাইভিং করতে শুরু করলো । পূর্ণতা মনে মনে ভাবছে ,
– লোকটা ইচ্ছে করে আমার সাথে এমন করছে কেন ??
অন্যসময় তো নিজেই সিট বেল্ট বেঁধে দেয় !! আবার আমার হাত দিয়ে ড্রাইভিং এর গিয়ার ইউজ করে !! আজ হলো কি ??
এরকম হাজারো ভাবনা মনের মধ্যে গুনতে গুনতে ওরা গন্তব্যের দিকে এগোতে লাগল ।
#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ২২
লালবাগের মোড়ে গাড়ি থামিয়ে নাদিরাকে পিক করে নিল আবরন । নাদিরা পেছনে জিব্রানের সাথে উঠে বসতেই পূর্ণতা পিছনে ঘুরে নাদিরার দিকে তাকালো তারপর আবার সামনের দিকে তাকালো ।
নাদিরা জিব্রানকে বলল ,
– হঠাৎ রাত করে পুরান ঢাকা যাওয়ার প্ল্যান করলে যে !!
জিব্রান হেসে বলল ,
– মন চাইলো আমি একটু হিমু সেজে রূপাকে নিয়ে বের হই !!
নাদিরা জিব্রানের দিকে এক পলক তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল ,
– আমিও দেখবো তুমি কতো হাঁটতে পারো !!
পূর্ণতা ওদের কথা শুনে বলল ,
– ওয়ে হয়ে !! হিমু রূপার প্রেমে আমি মুগ্ধ এবং শিহরিত !!
নাদিরা হঠাৎ কারো কন্ঠ শুনে সামনে তাকাতেই দেখলো একটা মেয়ে বসা ।
নাদিরা ভ্রু কুচকে জিব্রানের দিকে তাকাতেই জিব্রান বলল ,
– সারপ্রাইইইইইইইজ !!
নাদিরা অবাকের শেষ পর্যায়ে গিয়ে বলল ,
– ওহ মাই গড !!! অবশেষে আমি পূর্ণর দেখা পেলাম তাহলে ???
পূর্ণতা হেসে বলল ,
– তোমার সাথে আমার দেখা হবে এত জলদি , আমিও সেটা ভাবতে পারি নি ।
আবরন বলল ,
– আমাকে তো মনে হচ্ছে তোমরা সবাই ড্রাইভার মনে করছো ?? এমন একটা ভাব যেন আমি তোমাদের উবারের ড্রাইভার !!
নাদিরা হেসে বলল ,
– আরে আমার আবরন ভাইয়া ও আছে দেখছি !!
আবরন ড্রাইভিং করতে করতে বলল ,
– জিব্রান ভাইয়া আমার কথা তাহলে বলেছে তোমাকে !!
নাদিরা একবার পূর্ণতা আরেকবার আবরনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল ,
– তোমার আর পূর্ণতার কথা বলবে না আবার !! তোমরা হচ্ছো আপনজন আমাদের ।
আবরন নাদিরার কথা শুনে এক পলক পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে ড্রায়ভিং এ মনোযোগ দিল ।
পুরান ঢাকার একটা গলিতে গাড়ি থামিয়ে আবরন , পূর্ণতা , জিব্রান ও নাদিরা নেমে দাঁড়ালো ।
অন্ধকার আকাশ , চারিপাশে লাল লাল পুরাতন বিল্ডিং আর রোড লাইটের আলো , নিচে এবড়োথেবড়ো রাস্তা । সব মিলিয়ে চমৎকার একটা পরিবেশ ।
জিব্রান আবরনকে ইশারা করে নাদিরার হাত ধরে হেঁটে সামনে এগিয়ে গেল ।
পূর্ণতা জিব্রান আর নাদিরার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবছে ,
– মাশাআল্লাহ । ভাইয়ার সাথে নাদিরা আপুকে অনেক ভালো মানিয়েছে । কারো নজর যেন না লাগে এদের উপর আল্লাহ ।
এসব ভেবে ভালো করে তাকিয়ে দেখল এবড়োথেবড়ো রাস্তায় দূর দূর পর্যন্ত ওরা হারিয়ে গিয়েছে ।
পূর্ণতার হঠাৎ মনে পড়ল ওর সাথে তো আবরনও ছিল । ভেবে পাশে তাকাতেই দেখল আবরন নেই । পেছনে ঘুরে গাড়ির দিকে লক্ষ্য করতেই দেখল আবরন গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোনে স্ক্রলিং করছে ।
পূর্ণতা আবরনের সামনে গিয়ে বলল ,
– আপনি কি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবেন নাকি যাবেনও ??
আবরন ফোনের দিকে তাকিয়েই বলল ,
– কোথায় যাবো ??
– ভাইয়া আর ভাবী তো চলে গেল । আমি আর আপনি দাঁড়িয়ে থেকে কি করবো ? চলুন আমরাও হাঁটি ।
আবরন ফোনের দিক থেকে চোখ না সড়িয়ে বলল ,
– আমরা কেন হাঁটবো ?? ভাইয়া ভাবী কাপল তাই একসাথে হাত ধরে হাঁটছে । আপনি আর আমি তো কিছু না , তাহলে কেন একসাথে হাঁটবো ??
পূর্ণতা রাগে উত্তেজিত হয়ে আবরনের হাত থেকে ফোনটা ছো মেরে নিয়ে দৌড় দিল আর বলল ,
– লাগবে না আপনার আমার সাথে হাঁটা । আমি একাই একশ ।
আবরন ওর কান্ড দেখে ওর পেছনে দৌড়ে যেতে যেতে বলল ,
– কাজ টা কিন্তু ঠিক করছেন না । আমার ফোনটা ফেরত দিন ।
পূর্ণতা হেসে দৌড়াতে দৌড়াতে বলল ,
– দেব না । পারলে নিয়ে দেখান ।
আবরন দৌড়ের গতি কিছুটা বাড়িয়ে দিয়ে পূর্ণতা কে ধরে ফেলল ।
পূর্ণতা ভয়ে চিল্লিয়ে দৌড় থামিয়ে দিয়ে হাপাতে হাপাতে বলল ,
– আপনার ফোন তো আমার কাছে নেই ।
আবরন চোখ বড় বড় করে বলল ,
– মানে !! দেখি কোথায় লুকিয়েছো ??
পূর্ণতা হেসে বলল ,
– যাক বাবা , ফোনের হারিয়ে যাওয়ার শোকে অন্তত আপনি আমাকে তুমি করে বললেন ??
আবরন বলল ,
– ফোন কোথায় ?? জলদি দাও । কথা ঘুরিও না ।
– ফোন কাউয়্যা নিয়ে গিয়েছে ।
এই বলে পূর্ণতা আবার হাঁটতে লাগল ।
আবরন দেখলো ওর গলায় ঝোলানো সাইড ব্যাগের চেইনটা খোলা । ওর বুঝতে বাকি নেই যে ফোনটা ব্যাগের ভেতরেই রেখেছে পূর্ণতা । আবরন কিছু একটা ভেবে ঠোঁটে বাঁকা হাসি দিয়ে হঠাৎ গিয়ে পূর্ণতা কে টান দিয়ে একটা বিল্ডিংয়ের দেয়ালের সাথে চেপে ধরল ।
পূর্ণতা আবরনের বিহেইভে কিছুটা ঘাবড়ে গেল । আবরন ওকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে ওর দিকে একটু একটু করে এগোতে লাগল । পূর্ণতা মনে মনে ভাবছে ,
– হায় আল্লাহ , কোন বিপদে পড়লাম ?? রাস্তাটাও খালি , একটা মানুষজন নেই যে তাদের কাছে হেল্প চাইবো । এখন কি হবে আমার ??
পূর্ণতা ঢোক গিলে চোখ খুলে তাকাতেই দেখল আবরন নেই ।
পূর্ণতা রাস্তার দিকে তাকাতেই দেখল আবরন হাতে ফোন নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে হু হা করে হাসছে ।
পূর্ণতা বুঝলো আবরন ওকে বোকা বানিয়ে ওর ব্যাগ থেকে ফোনটা নিয়ে নিয়েছে ।
আবরন মোবাইল পকেটে ঢুকিয়ে রাস্তায় ধীর পায়ে হেঁটে যাচ্ছে । পূর্ণতা রাগে ফুসতে ফুসতে মনে মনে ভাবছে ,
– উনি হঠাৎ এতো বদলে কি করে গেল ?? উনার এই বদল কেন যেন আমাকে ভেতর থেকে নিঃস্ব করে দিচ্ছে । না উনাকে আবার ঠিক করতে হবে যেভাবেই হোক । নিজেকে কি মনে করে উনি !!
পূর্ণতা ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে একটু মুচকি হেসে কিছুটা দৌড়ে আবরনের দিকে গিয়ে হঠাৎ পেছন থেকে ওর কাধে হাত রাখলো । আবরন পূর্ণতার আচরনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে হাঁটা থামিয়ে দিল ।
পূর্ণতা হেসে ওর কাধে ভর করে লাফ দিয়ে আবরনের গলা পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল আর পা সামনের দিকে ঝুলিয়ে দিল । লাফ দিতে গিয়ে ঘাড়ে একটু চোট পেলেও মুখে শব্দ করল না ।
আবরন পূর্ণতার এমন আচরনে সেখানেই থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ।
পূর্ণতা আবরনের গালের সাথে ঘেষে মাথা রেখে বলল ,
– আমাকে একটু ধরেন নাহলে পড়ে যাবো তো !! আর আপনি যে খাম্বার মতো লম্বা এত উঁচু থেকে পড়লে নির্ঘাত চোট পাবো ।
আবরন ওর কথা শুনে হেসে দুই হাত পেছনে দিয়ে ওকে ধরে বলল ,
– হঠাৎ বাচ্চাদের মতো বিহেইভ করছো কেন ??
– কারন আপনি বড়দের মতো শাষন করেন সবসময় !!
– তাই ??
-হু , এখন কথা বলতে বলতে হাঁটুন একটু । এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবেন নাকি ??
আবরন বলল ,
– মানে কি ?? তোমাকে কাধে নিয়ে আমি সারা রাস্তা হাঁটবো ??
– হ্যাঁ হাঁটবেন । কেন সমস্যা ?? আপনি তো আমার জানা মতে ব্ল্যাক বেল্ট পাওয়া ছাত্র তার উপর প্রতিদিন জিম করেন । আমার মতো একটা ফড়িং এর ওজন আপনার কাছে তো একটা তুচ্ছ বিষয় তাই না ??
আবরন হাঁটতে হাঁটতে বলল ,
– ভালোই তো কথা শিখেছো দেখছি । যাক ম্যাচুয়ারিটি ভালো ।
– তারমানে আমি এত দিন ম্যাচুওর ছিলাম না ??
– না ।
পূর্ণতা রেগে আবরনের গালে দাঁত বসিয়ে দিল ।
আবরন ব্যথা পেয়ে বলল ,
– আউউউচ !! বেয়াদব মেয়ে !! তুমি কি শাকচুন্নি হয়ে গেলে নাকি ?? কামড়া কামড়ি কবে থেকে শুরু করলে ??
– আজকের থেকে । দুই হাত দিয়ে তো আপনার গলা পেচিয়ে রেখেছি তাই অবশিষ্ট দাঁত দিয়ে আপনাকে শাস্তি দিলাম !!
আবরন বলল ,
– আমার এত সুন্দর ফেস এ এই কামড়ের দাগ দেখলে কোনো মেয়ে আর প্রোপোজ করতে আসা তো দূরের কথা আমার দিকে ফিরেও তাকাবে না !!
পূর্ণতা বলল ,
– ভালো হয়েছে । আপনার দিকে কে তাকায় ?? উল্লুকের মতো চেহারা !!
আবরন বলল ,
– তাই নাকি ?? তোমাকেই তো দেখি আমার দিকে কেমন ঢ্যাপ ঢ্যাপ করে তাকিয়ে থাকো !!
পূর্ণতা ভ্রু কুচকে বলল ,
– আমি আপনার দিকে কখন ঢ্যাপ ঢ্যাপ করে তাকালাম ??
আবরন বলল ,
– এত জলদি ভুলে গেলে ??
পূর্ণতা মনে করতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে বলল ,
– হ্যা ভুলে গিয়েছি ।
আবরন বলল ,
– পড়তে বসে টিউটরের দিকে এভাবে কেউ তাকায় ?? মান সম্মান থাকবে কিছু ?? তোমার ভাগ্য ভালো যে আমার মতো একজন টিউটর পেয়েছো নাহলে আমার জায়গায় অন্য কারো দিকে এভাবে তাকালে তোমার চোখ ফুটো করে দিত !!
পূর্ণতা আবরনকে ইচ্ছা করে আবারো গালে কামড় দিয়ে বলল ,
– আপনি একটা অসভ্য বাজে লোক !!
আবরন বলল ,
ওকে পিঠ থেকে নামিয়ে দিয়ে বলল ,
– এই এই , কথায় কথায় আমার গালে কামড় দাও কেন ?? সত্যি সত্যি শাকচুন্নি তে ধরে নি তো ??
পূর্ণতা বলল ,
– ধুর !! আপনার সাথে কথা বলাই ভুল হয়েছে । কখন থেকে বকা দিচ্ছেন !! পারেন তো খালি বকাই দিতে । ছোটদের আদর স্নেহ করতে জানেন না কিছু না ।
আবরন হেসে বলল ,
– হা হা হা , তুমি নিজেকে ছোট বলছো ?? হায়রে !! হা হা হা ।
পূর্ণতা রাগে ফুসতে ফুসতে সামনের দিকে সু্র সুর করে হেঁটে যেতে লাগল ।
আবরন এবার ওকে পেছন থেকে গিয়ে পাজকোলা করে তুলে নিল ।
হঠাৎ এভাবে মাটি থেকে উপরে উঠে যাওয়ায় পূর্ণতা কিছুটা ভয় পেয়ে আবরনের গলা ধরে ওর পাঞ্জাবি খামচে ধরে চোখ বন্ধ করে বলল ,
– পড়ে যাবো তো !! নামিয়ে দিন বলছি !!
আবরন আস্তে করে ওর কানে কানে বলল ,
– এটা পৃথিবীতে তোমার জন্য সবচেয়ে সেফ জায়গা !! ভয় পেয়ো না , আমি থাকতে কিচ্ছু হবে না তোমার !!
পূর্ণতা চোখ খুলে আবরনের দিকে তাকাতেই দেখল আবরন ওর দিকেই তাকিয়ে আছে ।
হঠাৎ আকাশে আলোর ঝলকানির সাথে শব্দ শোনা গেল ।
ওরা দুজনই দুজনের থেকে চোখ সরিয়ে আকাশের দিকে তাকাতেই দেখল বৃষ্টির ঝিরিঝিরি ফোঁটা নেমে আসছে ওপর থেকে ।
মূহুর্ত্তের মধ্যে বৃষ্টির বেগ বেড়ে যেতেই আবরন পূর্ণতা কে কোলে নিয়েই দৌড়ে একটা শুকনো জায়গার খোঁজ করতে অস্থির হতে লাগল ।
কিন্তু বরাবরই পূর্ণতার বৃষ্টি পছন্দ না হলেও আজ কেন যেন খুব ভালো লাগছে এই মূহুর্তটা ।
পূর্ণতা নিজের মাথায় ওরনাটা দিয়ে বাকি অর্ধেক ওরনা আবরনের মাথায় দিয়ে বলল ,
– ও মিষ্টার , জলদি চলুন । ভিজে তো পুরো একাকার হয়ে যাচ্ছি ।
আবরন বলল ,
– আমি স্বজোরে দৌড়াচ্ছি । ঐ তো সামনে একটা ছাউনি দেখতে পাচ্ছি ।
পূর্ণতা দেখল একটা ভাঙ্গা বিল্ডিং এর বারান্দার নিচের অংশ দেখা যাচ্ছে ।
আবরন সেখানে গিয়ে বৃষ্টির থেকে সংযোগ বিচ্ছেদ করল ।
আবরন পূর্ণতা কে কোলে নিয়েই হাপাচ্ছে ।
পূর্ণতা আবরনকে দেখে হেসে বলল ,
– ভালোই তো পারেন দৌড়াতে !! দৌড় প্রতিযোগিতায় ও নিশ্চয়ই চ্যাম্পিয়ন ছিলেন !!
আবরন ওর কথা শুনে হেসে বলল ,
– এতো প্রশংসা করো না মেয়ে !! আমি কিন্তু একেবারে গলেই যাবো ।
পূর্ণতা হেসে বলল ,
– এখন আমাকে নিচে নামান ।
আবরন বলল ,
– কেন ?? সুখে থাকতে ভুতে কিলাচ্ছে ??
পূর্ণতা বলল ,
– ভিজে গিয়েছি অনেক খানি । ঠান্ডা লেগে যাবে তো !!
আবরন পূর্ণতা নামিয়ে দিতেই পূর্ণতা নিজের ওরনা চিপে শরীর ভালো করে মুছে নিল । তারপর আবরনকে বলল ,
– নিচু হন একটু ।
আবরন নিচু হতেই পূর্ণতা নিজের ওরনাটা দিয়ে আবরনের চুল ভালো করে মুছে দিতে লাগল ।
আবরন বলল ,
– হঠাৎ এত কেয়ার আমার প্রতি ??
পূর্ণতা চুল মুছে দিতে দিতে বলল ,
– যারা আমাকে কেয়ার করে , লাইফে ইম্পর্টেন্স দেয় আমিও তাদেরকে ইম্পর্টেন্স দিই ।
আবরন হালকা হেসে পূর্ণতা কে হঠাৎ জড়িয়ে ধরল ।
পূর্ণতা চুপ করে রইল । ওরও কেন যেন ইচ্ছা করছে আবরনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে । আবরন বলল ,
– কখনো বদলে যেও না প্লিজ । এমনই থেকো ।
পূর্ণতা নিজের অজান্তেই জবাব দিল ,
– আমি তো বদলাই নি , বদলে তো আপনি গিয়েছেন ।
আবরন পূর্ণতা কে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল ,
– কোথায় বদলেছি !! আমি তো জাষ্ট তোমার পরীক্ষা নিচ্ছিলাম যে তোমাকে কি শুধু আমিই লাইফে এত গুরুত্ব দিচ্ছি নাকি তোমার লাইফেও গুরুত্বপূর্ণ একটা জায়গায় আমিও আছি ??
পূর্ণতা বলল ,
– পরীক্ষা করে কি বুঝলেন ??
আবরন পূর্ণতা ছেড়ে ওর দুই গালে হাত রেখে বলল ,
– বুঝলাম যে শুধু আমি ই না , তুমিও আমাকে ……
এইটুকু বলে থামল আবরন ।
পূর্ণতা বলল ,
– কি বলুন ?? চুপ করে গেলেন কেন ??
– জানো !! আমাকে নিজের করে পেতে কত মানুষ রাতের ঘুম হারাম করে , কিন্তু আমি সবসময় এমন একজনকেই চেয়েছি যার জন্য আমার রাতের ঘুম হারাম হবে ।
পূর্ণতা চুপ করে শুনছে আবরনের কথা গুলো । ওর মন চাইছে মনের জমানো হাজারো না জানা কথা গুলো আবরনকে ওরই মতো করে বলে দিতে ।
…………………………………………………..
জিব্রান নাদিরাকে নিয়ে একটা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে । নাদিরা বলল ,
– আজকেই বৃষ্টি টা নামতে হলো !!
জিব্রান বলল ,
– আমার কিন্তু ভালোই লাগছে বৃষ্টিতে ভিজতে !!
– তাই ! জ্বর আসলে বুঝবে ঠ্যালা !!
জিব্রান হেসে বলল ,
– আসবে না । বাই দ্য ওয়ে , তুমি বাসায় ম্যানেজ করলে কি করে এত রাতে ??
নাদিরা হেসে বলল ,
– আম্মা জানে তোমার কথা ।
জিব্রান অবাক হয়ে বলল ,
– কি বলছো কি ?? সত্যি ??
– হ্যা , সত্যি । আম্মা জানে তোমার আমার ব্যাপারটা । আম্মা বলেছে সময় হলে তোমাকে বলবে যেতে আমাদের বাসায় । বাবাকে আম্মাই ম্যানেজ করবে তুমি চিন্তা করো না ।
– হুম ভরসা আছে তোমার উপর , এই জন্যই তো এত ভালোবাসি তোমাকে ।
বাবা আসছে সামনের সপ্তাহে । আমাকে সাথে করে নিয়ে যাবে ফ্রান্স ।
– তারপর ফিরবে কবে ??
– কমপক্ষে ছয়মাস তো গিয়ে থাকতে হবে । তারপর ফিরে এসে তোমাদের বাসায় যাবো প্রস্তাব নিয়ে ।
পারবে না অপেক্ষা করতে ??
নাদিরা জিব্রানকে জড়িয়ে ধরে বলল ,
– কেন পারবো না ?? এতদিন অপেক্ষা করতে পেরেছি , বাকি কটা দিনও অপেক্ষা করতে পারবো । তুমি চিন্তা করো না ।
– হুম , আমি যাওয়ার আগে বোধয় পূর্ণতার বিয়ে দিতে হবে । বাবা ও সহমত ।
– সত্যি বলছো ?? তাহলে একটা বিয়ে খেতে চলেছি সামনে ।
– হুম ।
– তোমার বোনটা না আসলেই পুচকি । ওর সাথে তো ভালো করে কথাই হলো না । গাড়িতে এবার আমি আর পূর্ণতা পেছনে বসবো । তুমি বরং সামনে গিয়ে বসো ।
জিব্রান হেসে বলল ,
– পারবে না । কারন আবরন পূর্ণতা কে নিয়েই সামনে বসবে ।
নাদিরা বলল ,
– আবরন অনেক ভালোবাসে ওকে , ও কি বোঝে না ??
– বোঝে কিন্তু মুখে বলে না ।
– আহারে , আবরনের মনের ভিতরটায় বোধয় তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে !!
– আবরন এই জন্য প্ল্যান করেছে চট্টগ্ৰাম যাবে । তুমিও কিন্তু আমাদের সাথে যাচ্ছো ।
– সত্যি ?? তাহলে তো মজা হবে । টোটাল কতজন যাবো ??
– সব কাপল । টোটাল ১০ জন ।
– অনেক মজা হবে ।
– দিন – ক্ষন ঠিক করে জানাবো । অপেক্ষায় থেকো ।
– ঠিক আছে । বৃষ্টি কমেছে চলো ফিরে যাই ।
– চলো ।
ওরা দুজন আবার ফিরতে লাগল গাড়ির দিকে ।
#চলবে ♥️
বিঃদ্রঃ এখন থেকে আগের রুটিনে গল্প দিব অর্থাৎ একদিন পর পর । আমার সমস্যা গুলো একটু বোঝার চেষ্টা করে সাথেই থাকুন ।
আর সময় ঘনিয়ে আসছে , আবরন হয়তো ওর মনের কথাটা এবার পূর্ণতা কে জানিয়েই দেবে । জানতে হলে সাথেই থাকুন ।
। ♥️