#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ৩৩
পূর্ণতা আবরনের আইডিয়া শুনে বার বার পানি খাচ্ছে আর নিজের রুমে পাইচারী করছে । বার বার মনে হচ্ছে কি করে সব সামলাবে আবরন !
এরই মধ্যে আবরন ওর রুমের দরজার সামনে এসে বলল ,
– পূর্ণতা , চলো আমাদের যেতে হবে !
পূর্ণতা ভাবনা ছেড়ে আবরনের কন্ঠ শুনে ওর দিকে তাকালো । মনের ভেতর ভয় কাজ করছে পূর্ণতার । তবুও নিজেকে শান্ত করে আবরনের দিকে এগিয়ে গেল ।
আবরন ওর হাত ধরে দ্রুত গতিতে ওকে নিয়ে বাহিরে বেরিয়ে গেল ।
রাত ১০ টা ,
আবরন পূর্ণতা কে নিয়ে বাহিরে বের হতেই দেখল দুই গাড়ি ভর্তি মানষজন ওদের জন্য অপেক্ষা করছে ।
শাদমান চৌধুরীর প্রাইভেট কারে শাদমান চৌধুরী , আধিরা আনজুম আর পেছনে মিলি রহমান আর আফতাব উজ্জামান বসেছে ।
আবরনের পার্সোনাল জিপে একদম পেছনে বসেছে জিব্রান , নাদিরা , তাসিন ।
মাঝের সিটে সাইডে বসেছে তাসিন , মাঝে আয়মান আর অপর সাইডে ফাহিম ।
এত মানুষ একসাথে এখন যাচ্ছে প্রেনাদের বাসায় বিয়ে পাকা করতে সেটা ভাবতেই পূর্ণতার বুক ভয়ে ফেটে যাচ্ছে । মনে মনে ভাবছে ,
– কি করে ম্যানেজ করলো আবরন সবাইকে ?? কি করে ??
ভাবনার মাঝেই আবরন বলল ,
– এমনিতেই অনেক লেইট আমরা । জলদি যেতে হবে চলো ।
এই বলে আবরন সামনে এগোতেই পূর্ণতা পেছন থেকে আবরনের হাত আটকে শক্ত করে চেপে ধরল ।
আবরন পেছনে ঘুরে পূর্ণতা কে বলল ,
– ইটস ওকে , আমি আছি তো । আর এখন শুধু আমি না , সবাই আছে আমাদের পাশে । ওকে ? চলো এখন ?
পূর্ণতা বলল ,
– প্রেনার আম্মু কি জানে আমরা যাচ্ছি তাদের বাসায় ?
– না ।
– এই যে ! এই জন্যই তো ভয় লাগছে ।
– ভয় কিসের ? সাথে আমাদের গার্ডিয়ান আছে না ? আর ঐদিক থেকে আয়মানের প্যারেন্টস ও অলরেডি রওনা হয়ে গিয়েছে ।
এখন আর এক মূহুর্ত সময় নষ্ট করা যাবে না । চলো চলো ।
– শুনুন !
– আবার কি ?
– আন্টি তো আমার উপর ভরসা করেই প্রেনাকে সেদিন আমাদের সাথে পাঠিয়েছিল । আন্টি যদি আমাকে ভুল বোঝে , খারাপ ভাবে ??
– বললাম তো আমি আছি । চলো এখন ।
– হুম ।
পূর্ণতা মন খারাপ করে কাপা কাপা ভাবে গাড়িতে উঠে বসলো । আবরন উঠে ড্রাইভিং সিটে বসে আগে পূর্ণতার সিট বেল্ট টা বেঁধে দিয়ে তারপর নিজের সিট বেল্ট বেঁধে প্রেনাদের বাসার উদ্দেশ্য নিয়ে রওনা হলো ।
আবরন ড্রাইভিং করতে করতে ফোনে কাজীর সাথে কথা বলছে ।
পূর্ণতার বুঝতে বাকি নেই আজ আয়মান আর প্রেনার যেভাবেই হোক বিয়ে পড়িয়ে দেওয়া হবে । এই ভেবে মনে মনে আল্লাহ কে ডাকতে শুরু করলো ,
– আল্লাহ , সব যেন ভালোয় ভালোয় হয় ! কোনো রকম ভুল বোঝাবুঝি আর গন্ডগোল যেন না সৃষ্টি হয় । তুমি ই সহায় , তুমি ই সব । প্লিজ , আল্লাহ , ওদের মিলিয়ে দিও । প্লিজ ।
ফ্ল্যাশ ব্যাক :
পূর্ণতা আর আবরন ছাদ থেকে ফিরে ঘরে ঢুকেই প্রথম পূর্ণতার রুমে গেল । সবাই এই মূহুর্তে মিলি রহমানের রুমে আছে আর জিব্রানের রুমে শুধু জিব্রান , তাসিন , ফাহিম আর আয়মান ।
আবরন পূর্ণতার রুমে ঢুকেই দরজা লাগিয়ে দিল । পূর্ণতা বলল ,
– জলদি বলুন কি প্ল্যান করেছেন ??
আবরন বলল ,
– প্ল্যান কিছুই না ।
– মজা করছেন ?
– না , আমি সিরিয়াস ।
– তাহলে সমাধান কি করে করবেন তা বলেন ।
– সবাইকে সব সত্যি জানিয়ে দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই ।
পূর্ণতা আবরনের মুখে এই কথা শুনে যেন ৪৪০ ভোল্টের ঝটকা খেল । তারপর বলল ,
– কি বলছেন কি ? মাথা ঠিক আছে আপনার ??
-হ্যাঁ , আমি ঠিক আছি । এখন যদি সত্যিটা না জানাই তাহলে হঠাৎ করে ওদের বিয়ে দেওয়া পসিবল হবে না । মূলত , গার্ডিয়ান দের অবশ্যই সহমত হতে হবে ।
– এখন কি করতে চাইছেন ?
– আমি বাবাকে বিষয়টা ক্লিয়ার করবো আগে । তারপর বাবা কেই বলবো যে কোনো ভাবে বাকি বিষয়টা সবার সাথে ক্লিয়ার করতে । সবাই যদি ম্যানেজ হয়ে যায় তাহলে বাকি থাকে শুধু প্রেনার বাবা মা আর আয়মানের বাবা মা ।
– ওনাদের কি করে ম্যানেজ করবেন ?
– সেটা আল্লাহ ই ভালো জানে ।
– আমার খুব ভয় করছে ।
– তুমি টেনশন নিও না । চুপচাপ এখানে বসো , মাথা ঠান্ডা করো । আমি বাবার সাথে বিষয়টা ক্লিয়ার করি ।
– সবাই যদি আমাদের ভুল বোঝে ?
– আমরা এখন বড় হয়েছি পূর্ণতা , ভুল কেন বুঝবে ? আর আমাদের ফ্যামিলি এমন না যে আমাদের একা বিপদের মুখে ফেলে দিবে সব কিছু জেনে শুনেও । so , সত্যিটা সবাইকে জানানো দরকার ।
– আপনি পারবেন আঙ্কেল কে এই কথা বলতে ?
– পারবো , ইনশাআল্লাহ । কিন্তু তোমার সাপোর্ট দরকার । তুমি ই যদি ভয় পাও তাহলে আমি কি করে মনে সাহস জোগাবো বলো ?
– হুম , আচ্ছা । আপনি যান । আমি দোয়া দুরূদ পড়ি ।
– হুম ।
আবরন পূর্ণতার গালে হাত বুলিয়ে মিথ্যা হাসি দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল ।
সেই থেকে পূর্ণতা পানি খেতে খেতে মাথা ঠান্ডা করছে ।
আর এদিকে আবরন রুম থেকে বের হয়ে শাদমান চৌধুরীকে একটা কল দিল । শাদমান চৌধুরী আবরনের কল পেয়ে রুম থেকে বের হয়ে রিসিভ করতেই যাচ্ছিল কিন্তু দেখল আবরন সেখানেই দাঁড়িয়ে । ভ্রু কুচকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিয়ে আবরনকে বলল ,
– কি হয়েছে আবরন ?
কল কেটে আবরন শাদমান চৌধুরীকে বলল ,
– বাবা , তোমার সাথে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে । এখানে বলা যাবে না । তুমি কি আমার সঙ্গে একটু নিচে যাবে । আমরা আমার গাড়িতে বসে সেই বিষয়ে কথা বলি । খুবই জরুরী বাবা ।
– ঠিক আছে চলো ।
নিচে নেমে আবরন আর শাদমান চৌধুরী আবরনের গাড়িতে উঠে বসল । আবরন গাড়ি টা স্টার্ট দিয়ে এসিটা ফুল করে দিয়ে শাদমান চৌধুরীর দিকে তাকালো । শাদমান চৌধুরী বললেন ,
– তোমাকে এত নার্ভাস লাগছে কেন আবরন ? কোনো বড় রকমের সমস্যা হয় নি তো ?
আবরন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল ,
– বাবা , আমি তোমাকে নিজের বন্ধু মনে করে কিছু কথা শেয়ার করতে চাই । তুমি প্লিজ আমাকে ভুল বুঝো না ।
– তুমি নির্দিধায় বলো , বিষয়টা কি ?
– বাবা …… বিষয়টা হচ্ছে আয়মানকে নিয়ে !
– কি হয়েছে আয়মানের ? ওকে না উপরে দেখলাম ! সব তো ঠিক ঠাক ই ছিল ।
– হুম , ও তো ঠিক থাকার অভিনয় করছে ।
– কি হয়েছে সহজ ভাষায় বলো তো ?
– বাবা , আয়মান একটা অনেক বড় ভুল করেছে ।
– কি ভুল ?
আবরন বিষয়টা সম্পূর্ণ খোলাসা করে বলতেই শাদমান চৌধুরী কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন ,
– তুমি এত বড় একটা ঘটনার প্যারা একা মাথায় নিয়ে ঘুরছো কি করে ?
– একা মাথায় রাখতে পারবো না বলেই তো প্রথম পূর্ণতা কে জানিয়েছি ।
– এখন তুমি কি চাইছো ওদের মিলিয়ে দিতে ?
– আমি চাই না ওরা বিয়ের আগে যেই গুনাহ টা করেছে তা ওরা দুজন সারাজীবন বয়ে বেড়াক । তাই সেটা ওদের একসাথেই মিটাতে হবে । তাই আমি চাইছি তুমি ওদের বিয়েটা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দাও ।
– বড্ড ঝামেলা পাকিয়েছো তো ! কিন্তু এসব বলে আর কি হবে ? দেখছি কি করা যায় !
– থ্যাংকস বাবা , থ্যাংকিউ সো মাচ । আমি জানতাম তুমি আমাকে বুঝবে ।
এই বলে আবরন শাদমান চৌধুরী কে জড়িয়ে ধরল ।
শাদমান চৌধুরী ও আবরনের পিঠে হাত রেখে বলল ,
– থ্যাংকস টু ইউ মাই বয় । তুমি চাইলে বিষয়টা গোপন করতে পারতে কিন্তু তুমি সেটা করোনি !
আই এম রিয়েলি প্রাউড অব ইউ মাই সান ।
তুমিই দেশের ভবিষ্যৎ , এরকমই সৎ পরিকল্পনা নিয়ে ডাক্তার হও সেই দোয়া করি ।
আবরন আবারও শাদমান চৌধুরী কে জড়িয়ে ধরল ।
শাদমান চৌধুরী আবরনকে নিয়ে আবার উপরে ফিরে গেলেন ।
সবার মাঝে উপস্থিত হয়ে শাদমান চৌধুরী বললেন ,
– তোমাদের সবার সাথে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাই ।
আমি জানি , আফতাব আজকে খুব টায়ার্ড । কিন্তু আমার মনে হচ্ছে , আফতাবের টায়ার্ডনেসের চেয়ে আমার এখন বলতে চাওয়া কথাগুলো বেশি জরুরি ।
শাদমান চৌধুরীর মুখে হঠাৎ এমন কথা শুনে আফতাব উজ্জামান সহ রুমে উপস্থিত আধিরা আনজুম আর মিলি রহমান ও একটু নড়ে চড়ে বসলেন ।
শাদমান চৌধুরী দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকা আবরনের উদ্দেশ্যে বললেন ,
– আবরন , যাও গিয়ে বাকি সবাইকে এখানে ডেকে নিয়ে এসো ।
আবরন বাবার কথা অনুযায়ী জিব্রানের রুমে গিয়ে জিব্রানসহ বাকি সবাইকে ডেকে নিয়ে সেই রুমে হাজির হলো ।
একমাত্র পূর্ণতা কে আবরন ডাকল না । কারন এই মূহুর্তে পূর্ণতা কে এখানে আনা ঠিক হবে না মনে করেই আবরন ওকে ডাকলো না ।
রুমে সবাই উপস্থিত হতেই শাদমান চৌধুরী আয়মান আর প্রেনার বিষয়টা সবার কাছে খুলে বলতেই আয়মান ভয়ার্ত চোখে আবরনের দিকে তাকালো । আবরন আয়মানকে চোখ দিয়ে “রিল্যাক্স” হওয়ার জন্য ইশারা করল । কিন্তু আয়মানের ভয় কাটছে না কিছুতেই ।
আধিরা আনজুম বললেন ,
– এত বড় একটা ঘটনা আর ওরা আমাদের কিচ্ছু জানালো না !
শাদমান চৌধুরী বললেন ,
– আহহা , জানালো না আবার কোথায় ! না জানালে আমি জানলাম কি করে ! ওদের কোনো দোষ নেই । এই বয়সটাই এমন । তাই বলে তো আমরা ওদের জীবনটা নষ্ট করতে পারি না । ওদের বিয়ে দিয়ে ওদের করা গুনাহ থেকে তো ওদের মুক্ত করতে পারি !
আফতাব উজ্জামান বললেন ,
– এখন কি তাহলে তুই চাইছিস যে ওদের বিয়ের ব্যবস্থা করবি ?
শাদমান চৌধুরী বললেন ,
– এক্সেক্টলি !
আফতাব উজ্জামান বললেন ,
– এখন আয়মান বাবা আর প্রেনা মায়ের ফ্যামিলি মেম্বারস দের কি করে ম্যানেজ করবি ?
– আয়মানের বাবা মাকে ফোনে জানাচ্ছি যেন ওরা এখনই রওনা দিয়ে প্রেনাদের বাসার সামনে চলে আসে ।
আর আমরা এদিকে থেকে বর পক্ষ হয়ে সরাসরি প্রেনাদের বাসায় গিয়ে উঠবো ওদের কিছু না জানিয়েই । কারন বিষয়টা এখন প্রেনার বাবা মাকে জানালে তারা রাগের বসে মেয়েটাকে মারধর করবে । তাই আমরা সেখানে গিয়েই ভেবে চিন্তে ঠান্ডা মাথায় বিষয়টা তাদের বোঝাবো । আর আবরন !!
তুমি কাজীর ব্যবস্থা করো ! জলদি ।
আবরন বলল ,
– ঠিক আছে বাবা ।
জিব্রান বলল ,
– আমি দুঃখিত , আমি ওদের সাথে গিয়েও ওদের খেয়াল রাখতে পারি নি ।
আফতাব উজ্জামান বললেন ,
– তোর এখানে কোনো দোষ নেই । গিয়েছিলি চিল করতে , সেই সব নিয়েই ব্যস্তথাকাটা স্বাভাবিক । দোষ কাউর ই নেই , ভাগ্যে ছিল তাই হয়েছে । এখন সেসব ভাবা যাবে না । সবাই তৈরি হও । বর পক্ষ যাবে বলে কথা , একটু মিষ্টি দইয়ের ব্যবস্থা তো করা দরকার ।
মিলি রহমান বললেন ,
– তা ঠিক আছে । এই রাত করেই আমরা যাবো নাকি ?
আফতাব উজ্জামান বললেন ,
– এখন বাজে নয়টা । বেশি রাত হয় নি । আর যত দ্রুত সম্ভব বিষয়টা ক্লিয়ার করতে হবে নাহলে আর কারো সমস্যা না হলেও প্রেনা মা খুব বাজে ভাবে ফেঁসে যাবে ।
আধিরা আনজুম বললেন ,
– হ্যা , মিলি । ভাই ঠিক বলছে । এক্ষুনি
যা করার করতে হবে ।
মিলি রহমান সবার কথা শুনে জিব্রানকে উদ্দেশ্য করে বললেন ,
– তাহলে তোরা দাঁড়িয়ে দেখছিস কি ? যা , গিয়ে আয়মানকে তোর একটা ভালো পাঞ্জাবি পড়িয়ে নিয়ে আয় ।
জিব্রান বলল ,
– যাচ্ছি , যাচ্ছি ।
জিব্রান রুম থেকে বের হতেই ফাহিম আর তাসিন মিলে আয়মানের ঘাড় ধরে ওকে রুম থেকে বের করতে করতে বলল ,
– শালা , দাঁড়িয়ে আছিস কেন ? বিয়ে করবি না নাকি ?
– চল , বলছি , চল ।
আবরন সবাইকে উদ্দেশ্য করে সালাম দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে সোজা জিব্রানের রুমে গেল ।
আবরন আগে থেকে পাঞ্জাবি পড়া । আয়মান সহ বাকিরা জিব্রানের পাঞ্জাবি পড়ে রেডি হয়ে নিল ঝটপট । তারপর বাকিদের সাথে বেরিয়ে গেল নিচের দিকে ।
আবরন গেল পূর্ণতার রুমে ওকে সাথে নিয়ে আসতে । কারন পূর্ণতা খুব চিন্তা করছে নিশ্চয়ই ।
পূর্ণতা কে সব বলে বুঝিয়ে ওকে নিয়ে বেরিয়ে এলো রুম থেকে ।
এদিকে শাদমান চৌধুরী কোনো রকম ভাবে আয়মানের বাবা আরিফুল হককে রাজি করালেন শুধু এই বলে যে ,
– আয়মানকে বিয়ে করানোটা খুবই জরুরি । আপনি এবং আপনার স্ত্রী জলদি ওমুক ঠিকানায় চলে আসুন । আপনারা এলে বাকিটা আপনাদের খুলে বলা হবে । কারন ফোনে সব বোঝানো এই মূহুর্তে সম্ভব না ।
আরিফুল হক শুধু একবার আয়মানের সাথে কথা বলতে চাইলেন বিষয়টার শিউরিটি জানার জন্য । আয়মান কথা বলার পরই ওনারা রওনা হয়ে গেলেন প্রেনাদের বাসার ঠিকানার উদ্দেশ্যে ।
জিব্রান নাদিরাকে বলে কয়ে ওদের বাসায় এনে ওকে সাথে নিতে পারলেও ফাহিম আর তাসিন রুহি আর নীরা কে ম্যানেজ করতে পারলো না । কারন তখন বাজে রাত ১০ টার কাছাকাছি । বাসা থেকে ওদের বের হতে না দেয়া টাই স্বাভাবিক ।
………………………………………………..
প্রেনাদের বাসার সামনে পর পর দুটো গাড়ি পার্ক করে রেখে সবাই গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো ।
গাড়ি থেকে নামতেই আয়মানের বাবা আরিফুল হক এবং মা আয়েশার সাথে সবার দেখা হলো ।
আরিফুল হক সোজা শাদমান চৌধুরীর সামনে গিয়ে চিন্তিত চেহারা নিয়ে বললেন ,
– আমার ছেলে কি করেছে যার জন্য ওকে এখন বিয়ে করাতে হবে ?
শাদমান চৌধুরী সংক্ষেপে সব বুঝিয়ে বললেন । আরিফুল হক বিষয়টা শোনার পর কোনো ভাবেই নিজেকে সামলাতে পারছেন না । তার একটাই কথা ,
– এত কষ্ট করে টাকা পয়সা খরচ করে ছেলেকে সে এই জন্য ডাক্তারি পড়াচ্ছি ? ছি , ছি , লজ্জায় আমার নাক মুখ কাটা যাচ্ছে । আমার মান সম্মান সব এভাবে ধুলোয় মিশিয়ে দিল আয়মান ? ছি …
আয়মান কাদছে বাবার মুখে এসব কথা শুনে । মনে মনে বাবার বলা কথা গুলো ভেবে ওর নিজের ই এখন খারাপ লাগছে ।
তাসিন আর ফাহিম ওকে ধরে সান্ত্বনা দিচ্ছে কোনো ভাবে ।
আয়মানের মা আয়েশা বললেন ,
– তুমি এভাবে ভেঙে পড়ো না , ভাগ্যে ছিল বলেই তো এমনটা হয়েছে । তুমি মেনে নাও । মাফ করে দাও । আমার বিশ্বাস ও ডাক্তার হয়ে নিজ পায়ে দাঁড়িয়ে একদিন তোমার হারানো সম্মান তোমায় ফিরিয়ে দেবে । মেনে নাও ওদের ।
আরিফুল হক বললেন ,
– মানতে তো হবেই আজ হোক বা কাল । তুমি তোমার ঘরের বউকে কি দিয়ে তুলে নেবে তা নিয়ে এসেছো তো ?
– আপাতত , বড় ছেলের বউ এর জন্য বানিয়ে রাখা চেইন আর বালা দুটো এনেছি । আর একটা নতুন লাল শাড়ি এনেছি । বউ ঘরে তুললে না হয় আরো কিছু দিয়ে ভরিয়ে দেব ।
সবাই বললেন ,
– আলহামদুলিল্লাহ ।
পূর্ণতা আর আবরনও খুশি হয়ে বলল ,
– আলহামদুলিল্লাহ ।
এরই মধ্যে কাজী ও এসে হাজির হলো । কাজীর সাথে আরো দুজন হুজুর এসেছে । তাদের হাতে ১০ কেজি মিষ্টির প্যাকেট ।
আরো এসেছে একজন উকিল সাথে করে রেজিস্টার পেপার ফাইলে নিয়ে ।
সবাইকে নিয়ে অবশেষে প্রেনাদের দরজায় বেল বাজালো শাদমান চৌধুরী ।
প্রেনার মা ইশিতা আলম এসে দরজা খুলে এত মানুষকে একসাথে দেখে যেন ৪৪০ ভোল্টের ঝটকা খেল ।
মিলি রহমান বললেন ,
– ভাবি , ভেতরে আসতে দিন , আমি সব বুঝিয়ে বলছি ।
ইশিতা আলম দরজা থেকে সরে দাঁড়াতেই একে একে সবাই ভেতরে ঢুকল ।
প্রেনা এত মানুষের ভিড়ের শব্দে নিজের রুম থেকে উঁকি ঝুঁকি দিতেই দেখল পূর্ণতা ওর রুমের দিকেই এগিয়ে আসছে । সাথে নাদিরা ভাবিও আছে ।
পূর্ণতা প্রেনার রুমে ঢুকেই ওকে বলল ,
– সারপ্রাইজড হওয়ার কিছু নেই । হাতে একদম সময় ও নেই । জলদি শাড়িটা পড়ে নে ।
– লাল শাড়ি ?
– না বোঝার ভান করিস না ! সব যখন বুঝিস , এখন না বোঝার কিছুই নেই ।
এই বলে পূর্ণতা দরজা লাগিয়ে দিল ।
– আমি শাড়ি পড়াতে জানলে এত বকবক ও করতাম না । সোজা তোকে শাড়ি পড়িয়ে সবার সামনে নিয়ে যেতাম ।
So , কথা না বলে জলদি শাড়িটা পড়ে নে ।
নাদিরা বলল ,
– পূর্ণ , বেচারির বিয়ের দিন ওর সাথে এভাবে বলো না ।
প্রেনা পূর্ণতার হাব ভাব আর নাদিরার কথা শুনে বিষয়টা আন্দাজ করতে পারল ।
নাদিরা জলদি জলদি প্রেনাকে শাড়ি পড়িয়ে দিল ।
নাদিরার প্রেনাকে শাড়ি পড়ানো শেষ হতেই পূর্ণতা প্রেনার চুলে টেনে টুনে একটা খোপা করিয়ে দিয়ে একটু হালকা পাতলা সাজিয়ে দিয়ে মাথায় শাড়ির আঁচল দিয়ে একটা বড় ঘোমটা টেনে দিল ।
তারপর আবরন কে কল দিয়ে বলল ,
– কনে রেডি ? আমি কি ওকে নিয়ে আসবো ??
আবরন বলল ,
– এসো , বাহির থেকে তো সবার কথা শুনে মনে হচ্ছে প্রেনার আম্মুকে রাজি করানো গিয়েছে । আর আঙ্কেলের কোনো আপত্তি ই দেখছি না ।
– যাক , আলহামদুলিল্লাহ।
অবশেষে সবার মত প্রকাশের পর আয়মানকে কাজি বসিয়ে দোয়া দুরূদ পড়াতে শুরু করলেন । তারপর পূর্ণতা আর নাদিরা মিলে প্রেনাকে নিয়ে এসে আয়মানের পাশে বসালো ।
কাজি আয়মানকে উদ্দেশ্য করে বলল ,
– বাবা , কবুল বলো ।
আয়মান কাজির কথা শুনে আশে পাশে উপস্থিত সকল মুরুব্বী দের দিকে তাকালো ।
সবাই মাথা নাড়তেই পেছন থেকে আবরন , তাসিন , ফাহিম আর জিব্রান ওর পিঠে চাপড় মেরে বলল ,
– শালা !! তাকিয়ে দেখছিস কি ?? কবুল বল !
আয়মান সবার কথা মতো মন থেকে কবুল বলতেই সবাই “আলহামদুলিল্লাহ” বলে উঠল ।
কাজী বলল ,
– এবার মেয়ের পালা ! আম্মা তুমি সহমত থাকলে কবুল বলো !
প্রেনা আশেপাশে তাকিয়ে দেখবে কি ? পূর্ণতা ওকে এত বড় ঘোমটা টেনে দিয়েছে যে ও নিজের হাত ছাড়া আশে পাশের কিছুই দেখছে না ।
পূর্ণতা পাশে বসে ওর হাতে থাপ্পড় মেরে আস্তে করে বলল ,
– কিরে ? বিয়ে করার ইচ্ছা নেই নাকি ? কবুল বল !
প্রেনা , একদমে তিনবার কবুল বলেই দিল ।
সবাই “আলহামদুলিল্লাহ” বলে উঠল ।
পূর্ণতা খুশি হয়ে মিষ্টি হাত নিয়ে আয়মান আর প্রেনা কে খাওয়াতে শুরু করল ।
প্রেনার মা কাদছে । মিলি রহমান আর আধিরা আনজুম তাকে বোঝাচ্ছে যে
– ভাগ্যে যা ছিল তাই হয়েছে । হাসি মুখে মেনে নিয়ে ওদের মন থেকে দোয়া করে দিন ।
প্রেনা আর আয়মান উঠে গিয়ে সবাইকে সালাম করল ।
ইশিতা আলম বললেন ,
– অনেক খুশি থাকিস তোরা ! অনেক অনেক খুশি থাকিস ! আশা করি আমি মা হিসেবে তোদের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত টাই নিতে পেরেছি ।
প্রেনা কান্না করে ইশিতা আলমকে জড়িয়ে ধরল ।
ওদিকে পূর্ণতা খুশি হয়ে আবরনকে ইচ্ছে মতো মিষ্টি গিলাচ্ছে কারন সব বুদ্ধি আবরনের ই ছিল ।
আবরন বলছে ,
– পাগলামি করো না , আজ ই যদি সব মিষ্টি খেয়ে নিই তো নিজের বিয়ের দিন মিষ্টি কি করে খাবো ?? সেদিনের জন্য কিছু স্বাদ মুখে বাচাতে দাও ।
পূর্ণতা হাসতে শুরু করল ।
সব কাজ শেষ করে অবশেষে রাত ২ টায় প্রেনার রুমকেই সবাই মিলে সাজিয়ে গুজিয়ে দিয়েছে । এই রুমেই ওদের বাসরের এরেঞ্জমেন্ট করা হয়েছে । প্রেনাকে বৌ এর মতো বসিয়ে রেখে পূর্ণতা বাহির থেকে দরজা লাগিয়ে বাকি সবার সাথে বাহিরে এসে দাঁড়ালো ।
পূর্ণতা বলল ,
– আজকে আমি বড় লোক হয়ে যাবো । কারন আমি কনে এবং বর উভয় পক্ষ ই ।
আবরন বলল ,
– তা কি করে ?
– অত শত আপনি বুঝবেন না ……..
– বুঝিয়ে দাও ……..
– আমি প্রেনার বেষ্টি , তাই কনে পক্ষ !
আর আয়মান ভাইয়ার ছোট বোন তাই বর পক্ষ !
আবরন বলল ,
– তাহলে আমারো তো সেইম সেইম !
– এহ !
– আয়মান আমার বন্ধু আর প্রেনা আর শালিকা । 😜
– তাহলে চলুন দুজনই আয়মান ভাইয়ার কাছ থেকে খানা দানা খেতে কিছু চাই ।
– তা ঠিক আছে ।
তাসিন বলল ,
– তোরা একা দাঁড়াবি নাকি ? আমরাও আছি ! এই ফাহিম আয় , জলদি ।
নাদিরা হেসে বলল ,
– জিব্রান , জলদি ওদের একটা ছবি তুলো ।
জিব্রান ফোন হাতে নিয়ে শাট শাট করে ওদের ফাজলামির কয়েকটা মূহুর্ত ক্যামেরা বন্দি করে নিল ।
#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ৩৪
প্রেনা আর আয়মানের বিয়েটা জলদি জলদি হলেও কিছু শর্তাবলী আলোচনা হয়েছিল বিয়ের পূর্বে ।
আয়মানের বাবা আরিফুল হক বলেছেন ,
– আমরা ছেলে এবং মেয়ের পড়াশোনার কোনো ক্ষতি করতে চাই না । আমরা চাই ওরা দুজনই নিজ ভাবে প্রতিষ্ঠিত হোক । আমার ছেলে প্রতিষ্ঠিত হলেই আমরা মেয়েকে তুলে নিয়ে যাবো । আর মেয়ের পড়াশোনার দায় দায়িত্ব আমাদের । সে বিষয় নিয়ে কোনো চিন্তা করবেন না । আপাতত দুজনকে পবিত্র করতেই কিন্তু আমাদের এই ডিসিশন নিতে হয়েছে । আর বিয়ে টা তো খেলা না যে আজ বিয়ে করেছে কাল আবার ছেড়ে দিবে । বিষয়টা কিন্তু মোটেও এমন না । তাই আমরা ওদের আলাদা না করে বিষয়টা সারাজীবনের কথা ভেবে এগিয়ে নিয়ে গেলেই ভালো হয় ।
প্রেনার মা সব কথায় সহমত হয়ে বিয়েতে মত দেওয়াতেই ওদের বিয়েটা হুট করেই হয়ে গেল । এছাড়া হয়তো আর কোনো উপায় ছিল না ।
বিয়েটা সংক্ষিপ্ত ভাবে হলেও আবরন সবাইকে নিয়ে ছোট খাটো কিছু প্ল্যান করেছে । বন্ধুর বিয়ে বলে কথা !
আবরন , পূর্ণতা , ফাহিম , তাসিন , নাদিরা সব জড়ো হয়ে প্রেনার রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে । আয়মান এলেই তো আর ওকে সুরসুর করে বৌ এর কাছে চলে যেতে দেয়া যায়না ।
গেষ্ট রুমে বড়রা সবাই এক সাথে খোশগল্প করছে । আর এদিকে ওরা সবাই মিলে আয়মান আর প্রেনার সাথে মজা নিচ্ছে ।
প্রেনা আর আয়মানের জন্য প্রেনার রুমটাতেই বাসর ঘর সাজানো হয়েছে ।
আর প্রেনাদের বাসার ছাদেও কিছু মোমবাতি আর ফুল দিয়ে সাজিয়ে নিচে বিশাল বড় বিছানা করা হয়েছে ।
ছাদেই সবাই মিলে আড্ডা দেবে বলে একটু সাজানো হয়েছে ।
আবরন মেডিক্যাল এর এক ছাত্রের বড় ভাইয়ের সাথে এত রাতে যোগাযোগ করে কিছু ফুল আর মোমের ব্যবস্থা করেছে সাজানোর জন্য । নাহলে এই রাতে এই সামান্য ” বিয়ে বিয়ে ” ফিলিংস আনা সম্ভব ছিল না ।
প্রেনাকে প্রথমে সাজ গোজ করিয়ে রুমে বসিয়ে ওরা বাহিরে দাঁড়িয়ে পাহাড়া দিয়ে আয়মানের কাছ থেকে কিছু টাকা পয়সা হাতিয়ে নিয়ে সোজা ছাদে চলে এসেছে আড্ডা দেবে বলে ।
কিন্তু আড্ডা শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রেনা আর আয়মান ও ছাদে এসে হাজির হলো ।
ওরা ছাদে আসতেই সবাই চোখ বড় করে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে ।
আয়মান আর প্রেনা একে অপরের দিকে তাকিয়ে তারপর বলল ,
– কি হয়েছে ? সবাই এভাবে দেখছো কেন ?
ফাহিম বলল ,
– তোরা বাসর ছেড়ে এখানে কি করোস ?
তাসিন বলল ,
– বাসর তো আগেই শেষ তাই এখন আসছে আমাদের সাথে জয়েন হতে তাই না ?
আয়মান তাসিনের পিঠে চাপড় মেরে ওর পাশে বসে বলল ,
– কেন ? হিংসে হচ্ছে তোর ? আমার মতো বিয়ে করতে চাস ?
সবাই হাসল ।
তাসিন বলল ,
– আল্লাহ ই জানে আমার আর নীরার কি বিয়ে হবে নাকি ?
ফাহিম বলল ,
– আর আমার রুহি ?? ওর তো অলরেডি নাকি ফ্যামিলি থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে ! কবে যেন পালিয়ে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিতে হয় !
নাদিরা বলল ,
– ইশশশ , তোমরা এখনো বাচ্চা । নিজেদের বিয়ের কথা না ভেবে বড় ভাইয়ের বিয়ের কথা ভাবো !
পূর্ণতা দাঁত কেলিয়ে বলল ,
– সে নিয়ে তুমি চিন্তা করো না ভাবী ! আমাদের এই বুদ্ধিমান মশাই তোমার আর ভাইয়ার বিয়েটাও পাকা করে ফেলবে !
আবরন বলল ,
– এহহ ! পাইছে আমাকে ঘটক ! আমার কপালে কি ঘটক লিখা যে আমি ঘটকালি করবো খালি ??
ফাহিম বলল ,
-ভাই , তুই ই পারবি সবার বিয়ে টা পাকা করে দিতে !
তাসিন বলল ,
– হ্যা , ভাই , তুই ই পারবি ।
আবরন বলল ,
– ওই , থাম তোরা ! নিজেদের বিয়ে নিয়ে পড়ে আছিস ! একবার ভেবেছিস যে আমার মতো হ্যান্ডসাম ড্যাশিং ছেলে এখনো বিয়ে করতে পারছে না কেন ??
সবাই প্রশ্নসূচক দৃষ্টি নিয়ে আবরনের দিকে তাকিয়ে বলল ,
– কেন ?
আবরন জবাব দেওয়ার আগেই পূর্ণতা বলে উঠল ,
– কারন , আপনি দেখতে হ্যান্ডসাম আর ড্যাশিং হলেও , আপনি কিন্তু একটা শিম্পাঞ্জি । আই মিন ড্যাশিং হ্যান্ডসাম লুকের শিম্পাঞ্জি !!
পূর্ণতার কথা শুনে সবাই হু হা করে হেসে উঠল ।
প্রেনা হাসতে হাসতে বলল ,
– আবরন ভাইয়া ! এত বড় অপবাদ এখনো ঘাড়ে নিয়ে ঘুরছেন ? এর জবাব দেবেন না ?
আবরন দাঁতে দাঁত চেপে পূর্ণতা কে বলল ,
– আমাকে যদি শিম্পাঞ্জির মতো দেখতে লাগে তাহলে তুমি কি ??
পূর্ণতা বলল ,
– কি আমি বলুন ?
আবরনের আগে জিব্রান বলে উঠল ,
– তুই হলি আস্ত একটা গাঁধী !
জিব্রানের কথা শুনে আবরন হু হা করে হেসে উঠল ।
পূর্ণতা জিব্রানের কথা শুনে ওর দিকে তাকিয়ে বলল ,
– তুমি আমাকে গাঁধী বললে ? ভুলে যেও না ভাইয়া , যে বাবা এসেছে । আম্মু তো তোমাকে বকা দেয় নি , বাবা ঠিকই দিবে ।
পূর্ণতার কথা শুনে জিব্রান ঢোক গিলে বলল ,
– ওলে ওলে ! ছোট বোনটা আমাল !! নাক কলে না ! তোকে চকেট কিনে দেব ।
পূর্ণতা ভাব নিয়ে আবরনের দিকে তাকালো ।
নাদিরা বলল ,
– তারমানে আমাদের জিব্রান সোনা তার বাবা কে একটু হলেও ভয় পায় !
পূর্ণতা বলল ,
– ভীতুর ডিম যে !
সবাই হেসে উঠল ।
তাসিন বলল ,
– থাক , লড়াই ঝগড়া পরে হবে । চলো কিছু মজাদার জিনিস খেলি ।
জিব্রান বলল ,
– চল , pass the pillow খেলি ।
আবরন বলল ,
– ভালো আইডিয়া ,আমরা টোটাল কয়জন আছি ?
আয়মান বলল ,
– ৮ জন ।
পূর্ণতা বলল ,
– তা ঠিক আছে । কিন্তু গান টা অফ অন করবে কে ?
আবরন বলল ,
– আরে ইউটিউব আছে না ! অন্যদের খেলার ভিডিও নিশ্চয়ই পেয়ে যাবো । ওদের খেলায় গান অফ হলে আমাদের খেলাও তখন অফ ধরা হবে ।
প্রেনা বলল ,
– খেলার নিয়মটা সবার ই জানা , তবুও কেউ একবার বলে দাও ।
আবরন বলল ,
– খেলার জন্য প্রথমে বাটা বাটি করে একজনকে নির্বাচন করা হবে এবং তার হাতে কুশন জাতীয় বালিশ দেওয়া হবে । সবাই গোল হয়ে কাছাকাছি বসবো । তারপর গান অন করা হবে এবং গান অনের সাথে সাথেই ডানদিকে একের পর এক পিলো পাস করতে থাকবে । এভাবে পাস করতে করতে হঠাৎ গান অফ হয়ে যাবে এবং পিলো পাস করা ও বন্ধ করতে হবে । লাষ্ট যার হাতে পিলো থাকা অবস্থায় গান অফ হয়েছে সে আউট ।
এভাবে একজন একজন করে আউট হতে থাকবে । লাষ্ট যে অবশিষ্ট থাকবে সে ই উইনার ।
সবাই বলল ,
– ওকে কপি দ্যাট ।
তো প্রথমে হাত বাটা বাটি করে করে তাসিনকে নির্বাচন করা হলো ।
সবাই গোল হয়ে বসে পড়লো ।
আবরন , পূর্ণতা , জিব্রান , নাদিরা , আয়মান , প্রেনা , ফাহিম এবং তাসিন । এভাবে সিরিয়ালি গোল হয়ে বসে তাসিনের হাতে পিলো দেয়া হলো ।
আবরন ইউটিউব খুঁজে পিলো পাসিং খেলার জন্য গান বের করে ফোনটা মাঝে রেখে জিব্রানকে উদ্দেশ্য করে বলল ,
– ভাইয়া , গান শুরু হলেই তো তাসিন আগে পিলো আমাকেই পাস করবে তাই আমি গান অন করে পিলো পাস করতে করতেই শেষ হয়ে যাবো । তুমি তো তুলনামূলক দূরে আছো , তোমার কাছে পিলো পৌঁছাতে কয়েক সেকেন্ড সময় বেশি লাগবে , তাই তুমি একটু গান টা প্লে করে দিও ।
জিব্রান বলল ,
– ওকে ফাইন ।
সবাই রেডি হয়ে বসে ১ , ২ , ৩ গুনতেই জিব্রান গান প্লে করে দিল । ফোনে গান প্লে করতেই মিউজিক শুনেই তাসিন জলদি জলদি আবরনকে পিলো পাস করে দিল । আবরন পিলো পাস করে দিল পূর্ণতার কাছে । পূর্ণতা দিল জিব্রানের কাছে ।
এখন মিউজিক শেষ হয়ে গান বাজছে ,
স্বপ্ন যেন আজ ইচ্ছেমতি
আর ইচ্ছেরা লাজুক লাজুক
নীরবে সুপ্ত কামনা গুলো
লজ্জাতে হলো লাল টুকটুক
সপ্ন যেন আজ ইচ্ছেমতি
আর ইচ্ছেরা লাজুক লাজুক
নীরবে সুপ্ত কামনা গুলো
লজ্জাতে হলো লাল টুকটুক
আকাশে(আকাশে) ঐ মেঘের পরে
খেলে গোপন লুকোচুরি
এইটুক হতেই গান অফ হয়ে গেল ।
পিলো সবার হাতে দুইবার ঘুরে তৃতীয় বারে এসে ফাহিমের কাছে যেতেই গান থেমে গেল ।
“ফাহিম আউট ” বলে সবাই চিল্লিয়ে উঠল ।
ফাহিম বেচারা মন খারাপ করে উঠে পড়লো । তারপর ওর গ্যাপটা ফিলাপ করে সবাই আবার গোল হয়ে বসতেই ফাহিম দাঁড়িয়ে গান প্লে করে দিল ।
ফাহিম আউট হওয়াতে ফাহিমের পরে তাসিনের কাছ থেকেই আবার খেলা শুরু হবে ।
ফাহিম রেডি ১ , ২, ৩ বলে আবারো গান প্লে করে দিল ।
এ যেন এসেছ ভবে
নিল এ প্রাণটা কাড়ি
ধুমতানা ধুমতানা ধুম তানানানা বাজে
নাচেরে মন নাচে (পেখোম তুলে মন নাচে)
ধুমতানা ধুমতানা ধুম তানানানা বাজে
নাচেরে মন নাচে (নাচে নাচে নাচে)
ছলকে উঠে জল করে টলমল
প্রেম ঝিমঝিম আষাঢ় শ্রাবণে
তেমনিই মন উথালপাথাল জানিনা কি কারনে
এই টুক হতেই আবার গান অফ হয়ে গেল । এবার নাদিরা আউট হয়ে গেল ।
কাদো কাদো ফেস করে নাদিরা উঠে গিয়ে ফাহিমের কাছে দাঁড়ালো এবং বলল ,
– এখন সবাই সাবধান । গান আরো দ্রুত অফ করা হবে ।
সবাই আবার নাদিরার গ্যাপ ফিল আপ করে গোল হয়ে বসল ।
আবারো গান প্লে করা হলো !
ছলকে উঠে নদীরজল করে টলমল
প্রেম ঝিমঝিম আষাঢ় শ্রাবণে
তেমনিই মন উথালপাথাল জানিনা কি কারনে
আকাশে(আকাশে) ঐ মেঘের পরে
খেলে গোপন লুকোচুরি !
এবার পূর্ণতা আউট হয়ে গেল ।
পূর্ণতা আউট হতেই আবরন বলল ,
– তুমি এত ঢিলা কেন ?
পূর্ণতা বলল ,
– এহ নিজে ফ্ল্যাশের মতো ফাষ্ট তা স্বীকার করে না ! আমি নাকি স্লো ! হুহ ।
পূর্ণতা গিয়ে নাদিরা আর ফাহিমের সাথে দাঁড়ালো ।
এভাবে একে একে পর পর আয়মান , তাসিন এবং প্রেনা আউট হয়ে অবশেষে আবরন আর জিব্রান বাকি ।
নাদিরা বলল ,
– এবার খেলা জমবে ।
জিব্রান বলল ,
– গানটা কি দ্রুত অফ হবে নাকি সময় নিয়ে অফ হবে ?
পূর্ণতা বলল ,
– আগে কেন বলব ! হঠাৎ অফ হবে । তোমরা খেলায় কনসেন্ট্রইট করো তাহলেই হবে ।
আবরন বলল ,
– ভাইয়া আর আমার মাঝে খেলা ! হায়রে !!
জিব্রান বলল ,
– ভয় পাচ্ছিস ?
আবরন বলল ,
– আমি কি তোমার মতো ভীতুর ডিম নাকি ?
সবাই আবরনের কথা শুনে হু হা করে হেসে উঠল ।
জিব্রান বলল ,
– বেটা তুই ও কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিচ্ছিস !
আবরন দাঁত কেলিয়ে বলল ,
– ওকে , লেটস স্টার্ট !
জিব্রান বলল ,
– খেলা শুরুর আগে আমার একটা শর্ত আছে ?
সবাই ভ্রু কুচকে তাকালো জিব্রানের কথা শুনে ।
নাদিরা বলল ,
– খেলার শেষ পর্যায়ে এসে তুমি এখন কি শর্ত রাখতে চাইছো ?
জিব্রান বলল ,
– তোমরা সবাই তো লুজার ! আমার আর আবরনের মাঝে যে জিতবে তাকে তো অবশ্যই পুরষ্কার দিতে হবে ।
ফাহিম বলল ,
– সমস্যা নাই , সান্ত্বনা পুরষ্কার হিসেবে তোমাকে “বদনা” দেওয়া হবে জিব্রান ভাইয়া ।
ফাহিমের কথা শুনে সবাই এক দফা না হেসে পারলো না ।
আবরন হাসি কোনো মতে থামিয়ে বলল ,
– তোকে দেওয়া হবে সান্ত্বনা পুরষ্কার ‘ ‘ ‘বদনা ‘ । কারন খেলায় তুই এক নাম্বার লুজার ।
জিব্রান বলল ,
– তোর বদনার গুল্লি মারি ! আমার কথা শোন আগে ।
ফাহিম কাদো কাদো ফেস করে বলল ,
– দিবা তো দিবা একটা ‘বদনা’ , তাও যদি গুল্লি মাইরা ফুডা কইরা দাও , সেটা দিয়ে আমি কেমনে কাজ সাড়মু ভাই ??
আয়মান ওর পিঠে জোরে জোরে বারি মেরে বলল ,
– এই তুই থামবি ?? বদনা , বদনা করে কান পঁচায়া ফেললি । জিব্রান ভাইয়ার কথা শুনতে দে !
জিব্রান বলল ,
– যাই বলিস তোরা , বদনার টপিকস টা সেই ছিল ।
সবাই হাসি থামিয়েও থামাতে পারছে না ।
অবশেষে হাসি থামিয়ে জিব্রান সকলকে উদ্দেশ্য করে বলল ,
– এবার আসল কথায় আসি । কথা টা হচ্ছে , যদি আমি জিতে যাই তাহলে আবরন কে আমার আর নাদিরার বিয়ের ব্যাপার নিয়ে বাবার সাথে কথা পাকা করে দিতে হবে । আর যদি আবরন জিতে যায় তাহলে ……….
জিব্রান কথা শেষ করার আগেই আবরন বলল ,
– তাহলে আমার বিয়ের ব্যবস্থা তোমাকে করে দিতে হবে ।
জিব্রান বলল ,
– এক্সেক্টলি রাইট !
সবাই বলল ,
– তাহলে এই কথা ই রইল । এখন খেলা স্টার্ট করা যাক !
নাদিরা ১ , ২ ,৩ বলে গান প্লে করে দিতেই দুজন পুরো দমে দুজনের দিকে বালিশ পাস করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল ।
পূর্ণতা মনে মনে ভাবছে ,
– হঠাৎ সবাই বিয়ের জন্য উঠে পড়ে লাগলো কেন ? যাই হোক , একজন জিতবে , আরেকজন তো হারবেই । কিন্তু যে কোনো একজনের আবারো বিয়ে ফাইনাল হতে যাচ্ছে ।
ফোনে স্বজোরে গান বাজছে ,
তুমি তো আমার-ই, জানো না হো-ও-ওও
এ হৃদয় তোমার-ই
ও-হো-ওও
তোমাকে ছাড়া আমি, বুঝি না কোনো কিছু যে আর
পৃথিবী জেনে যাক, তুমি শুধু আমার
তোমাকে ছাড়া আমি, বুঝি না কোনো কিছু যে আর
পৃথিবী জেনে যাক, তুমি …….
গান অফ হয়ে যেতেই দেখা গেল বালিশ আবরনের হাতে এসে থেমেছে ।
নাদিরা বাদে সবাই একসাথে চিল্লিয়ে উঠলো ,
– ইয়েএএএএএএ , এবারে জিব্রান ভাইয়া আর নাদিরা ভাবীর বিয়ে ফাইনাল হতে যাচ্ছে !!
জিব্রান বলল ,
– এটা আবরনের জন্য অনেক বড় একটা চ্যালেঞ্জ । কারন বাবা আমাকে এখন ফ্রান্সে নিয়ে যাবে বলে এসেছে । মনে হয় না বাবা আবরনের হাজার জোড়াজুড়িতে ও রাজি হবে ।
কিন্তু মনে হয় , পূর্ণতার বিয়ের কথা পাকা হতে যাচ্ছে ।
পূর্ণতার হাসি বদ্ধ মুখটা জিব্রানের কথা শুনে ফ্যাকাশে হয়ে গেল ।
নাদিরা বলল ,
– ওর বিয়ে কেন পাকা করবে এত দ্রুত ?
জিব্রান বলল ,
– ওর বিয়ে পাকা না করলে আমি চলে গেলে আম্মু আর ওকে কে দেখে রাখবে ?
ফাহিম আস্তে করে আবরনকে বলল ,
– তুই কি পারবি পূর্ণতা কে বিয়ে করতে ?
আবরন বলল ,
– জানি না । এখন এ বিষয়ে কিছু বলিস না । আগে ভাইয়ার কথা শোন ।
– ওকে ।
নাদিরা বলল ,
– কিন্তু ওকে এত জলদি বিয়ে দিলে ওর পড়াশোনার অনেকটা ক্ষতি হয়ে যাবে !
– সব ভেবে রেখেছি । প্রেনা আর আয়মানের যেমন বিয়ে হয়েছে কিন্তু প্রেনাকে এখন আয়মানদের বাড়িতে নেওয়া হবে না পড়াশোনা শেষ না করে ঠিক একই ভাবে আমরা পূর্ণতার বিয়ে দিব ঠিকই কিন্তু শশুড় বাড়ি এত জলদি পাঠাচ্ছি না ।
– তাহলে কিভাবে কি করতে চাইছো ?
– পূর্ণতা পড়াশোনা শেষ করবে তারপর ওকে তুলে দেয়া হবে । কিন্তু আমি চলে গেলেও যেন সাপোর্ট হিসেবে ওর শ্বশুড় বাড়ির মানুষজন পাশে থাকে তাই আরকি !
নাদিরা বলল ,
– বিয়ের জন্য কি আঙ্কেল পাত্র রেডি করে রেখেছে ??
– তা জানি না । হয়তো রেখেছে । নাহলে হুট করে কি করে বিয়ে পাকা করবে !
আবরন খুশি হয়ে বলল ,
– তারমানে তোমার বিয়েটাও যদি পূর্ণতার বিয়ের সাথে পাকা করতে পারি তাহলে তো একদিনে দু দুটো বিয়ে খেতে পারবো !
সবাই হাসলো । শুধু পূর্ণতা বাদে ।
পূর্ণতা আবরনকে খুশি হতে দেখে মনে মনে ভাবছে ,
– তারমানে কি আমার বিয়ে অন্য কারো সাথে বাবা ঠিক করে রেখেছে ? আর এটা শুনে উনার মনে একটুও খারাপ ফিল হচ্ছে না ? এটা কিভাবে সম্ভব ?
আয়মান বলল ,
– ওকে , কাল এসব বিষয়ে কথা হবে । ৫ টা বাজতে আর মাত্র পনেরো মিনিট বাকি । এখন ঘুম না দিলে কাল আর ভার্সিটিতে যাওয়ার মতো আমাদের কারো অবস্থা থাকবে না !!
জিব্রান বলল ,
– হ্যা , আমাকে আর নাদিরাকে সকাল সকাল অফিসে যেতে হবে ।
তাসিন বলল ,
– কিভাবে ঘুমাবো এখন ?
আবরন বলল ,
– নিচে ঢালা বিছানা করা আছে । কিন্তু আয়মানের বাসর ঘর ক্যান্সেল । প্রেনার রুমে এখন প্রেনা , পূর্ণতা আর নাদিরা ভাবী ঘুমাবে । আর আমরা সব ঢালা বিছানায় ।
আয়মান কাদে কাদো ফেস করে প্রেনার দিকে তাকালো ।
ফাহিম বলল ,
– হইছে , আর ঢং করিস না । চল । নিচে চল ।
এই বলে আয়মানেকে গলা পেচিয়ে ধরে নিচে নিয়ে গেল ।
সবাই হেসে একে একে নিচে নেমে গেল । বাকি রইল শুধু আবরন আর পূর্ণতা ।
পূর্ণতার মুড অফ । বিষয়টা আবরন বুঝেও না বোঝার ভান করে বলল ,
– এখানেই ঘুমানোর ইচ্ছা আছে নাকি ?
পূর্ণতা বলল ,
– না । চলুন ।
– পায়ে হেঁটে যাবে নাকি কোলে তুলতে হবে ?
পূর্ণতা ভেংচি কেটে বলল ,
– হয়েছে , ঢং করতে হবে না । আমি একাই যেতে পারবো ।
– ওকে , এজ ইউর উইশ ।
পূর্ণতা রাগ দেখিয়ে নিচে চলে গেল ।
আবরনও এক গাল হেসে নিচে চলে গেল ।
#চলবে ♥️