ভালোবাসি হয়নি বলা পর্ব ৩১

#ভালোবাসি হয়নি বলা
#সাদিয়া নওরিন

পর্ব— ৩১

রোদেলা লাজুক চোখে সামনের দিকে তাকিয়ে আমাতাআমাতা করতে লাগলো.. কিছুখন আগে তো তার সামনে হাসনাত ছিল আর এখন মেঘলা আপু কিভাবে!!

মেঘলা ব্রু কুঁচকে বলল– কি চলে… রোদোলা চোখ বড় বড় করে তাকালো তার দিকে. তখন কোথা থেকে মুনিরা এসে মেঘলার কাধে হাত দিয়ে বলল– জনাবা বাংলাদেশেতো এখন রোদ্দুর রয় চলে…চাঁদ ওঠেছিল গগনে🎧🎧🎧।।।।।
মেঘলা মুখ ভেঙ্চিয়ে বলল– তোর বোধ হয় ওকে খুব ভালো লাগে.. ওর সাথে তোর বিয়েটা ঠিক করে দি.. মানুষ বলবে “”” শালার চাদ ওঠেছিল মুনিরার কপালে””””
রোদেলা সাথে সাথে খিলখিলিয়ে হেসে দেয়.. মুনিরা নাক ফুলিয়ে বলে– এক মাঘে শীত যায় না… আমার ও সময় আসবে হু…. এইবলে হনহনিয়ে চলে গেল সে… রোদেলা দাত বের করে হাসতে লাগলো… মেঘলা আবার ব্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে বলল– কি সমস্যা?? লাফিং গ্যাস খেয়েছো?? এতো দাত কেলানো কেন? যাও গিয়ে ঘুমাও… কালকের হলুদ ক্যান্সেন হয়ে গেছে…
রোদেলা অবাক হয়ে তাড়াতাড়ি বলল– কেন কেন?? কি করলাম আবার?? বিয়েটাকি হচ্ছে না…
মেঘলা হতাশ।।সব গাধাগুলোকে একসাথে তার বোন বানিয়ে পাঠানোর মানে টা কি… একেকটা একেক জগতের বাসিন্দা.. সে হতাশাজনক লুক দিয়ে বলল– বিয়ে তে কি পরবা??? নাকি জন্মদিনের ড্রেস পড়ে যাওয়ার ইচ্ছা…
রোদেলা– মানে???
মেঘলা– ঐ যে যেই ড্রেস পড়ে দুনিয়ায় আসছো সেইটা….
রোদেলার চোখ বড় হয়ে গেল মুহুর্তেই… তার বড় বোনটার নামে কেইস করবে সে.. যেকোন সময় হার্ট এট্যাক করাবে সে তাকে… এমনিতেই হার্ট দুর্বল তার….

মেঘলা রোদেলার কনফিউস্ট চেহারার দিকে তাকিয়ে বলল– গাধার সর্দারনী… কালকে ড্রেস কিনতে যাব.. পরশু হলুদ অনুষ্টান ..
রোদেলা সস্তির নিশ্বাস ফেলে বলল— আহ কালকে শুধুই ঘুমাবো…
মেঘলা— কেন.. ঘুৃম কি আকাশে চলে যাচ্ছে যে কালকেই যেতে হবে.. নাকি বিয়ের পর ঘুমাবে না তাই কালকে ঘুমাবে…
রোদেলা অন্যদিকে তাকালো-… ইশ্ কি লজ্জা… কি বলে এসব…
রোদেলা তাড়াতাড়ি “””আমার ঘুৃম আসছে “”বলে ঐ জায়গা থেকে চলে গেল…আর মেঘলা মুখ টিপে হাসতে লাগলো..

বিছানায় শোয়ে এপাশ ওপাশ করেও ঘুম আসছেনা হাসনাতের!!!রোদেলার মিষ্টি স্পর্শটা যেন এখনো তার ঠোটে লেগে আছে!! এতোটা সুন্দর কেন মেয়েটা!! কেন ওকে দেখলেই ভেতরটা এলোমেলো হয়ে ওঠে আমার!! এইসব ভাবতে ভাবতে পরম আবেশে চোখ বুজে ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগলো সে… আর অন্যদিকে রোদেলা হাসনাতের স্পর্শের সেই জায়গাগুলো আলতো করে হাত বুলিয়ে আনমনে হেসে দিল.. আজকের রাতটা নির্ঘুম না হলেও তা ছিল আবেশ মেশানো!! নিজেদের প্রিয়জনকে খুব করে কাছে পাওয়ার আকুলতা।। আর শুধুই মাদকতা!!!
//

সকালে সবাই রেডি হয়ে নিয়েছে বেরোনোর জন্য.. ফুল ফ্যামিলি যাবে তারা।। আর দোকানদারটা তাদের পরিচিত সেই হিসেবে কোন প্রবলেম ই নেয়.. চিটাগাং শাড়ী শো রুমে যাবে তারা আর সেখান থেকে গোল্ডের শোরুমে।।।
রোদেলার নানা মানার শর্তেও তাকেও যেতে হলো…দোকানে ডুকে দেখলো হাসনাতরা আগে থেকেই এসে বসে আছে… রোদেলা হাসনাত কে দেখতেই লাজুক চোখে অন্যদিকে তাকালো.. তার বড্ড লজ্জা লাগছে হাসনাতকে দেখে.. সে মৃদু হেসে হাসনাতের সামনে গিয়ে দাড়ালো….

সবাই শপিং করতে বিজি.. রোদেলার জন্য কিছু লেহেঙ্গা কেনা হলো…আর দুইটা শাড়ি.. আরো কিছু ড্রেস.. লাল টুকটুকে লেহেঙ্গা দেখে রোদেলা আনমনে হেসে দিল.. কোন একসময় এই লাল কালার হাসনাত তাকে পড়তে দিত না… হাসনাত সবার চোখের আড়ালে আস্তে আস্তে হেটে রোদেলার পাশে এসে দাড়ালো… কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল– লালে তোকে এতোটা আবেদনময়ী লাগে যে নিজেকে স্হির করা কষ্ট হয়… তাই এতোদিন লাল কিনি নাই.. কিন্তু এখন তো কোন সমস্যায় নেয়।।। বিয়ের দিন যতো আবেদনময়ী লাগবে ততো আমার জন্য ভালো!!! এইবলে চোখ টিপ মেরে অন্যপাশে চলে গেল সে…
রোদেলা সেখানে স্হির হয়ে দাড়িয়ে রইলো তার হাত পা যেন বরফ হয়ে গেছে!! হাসনাতের মিষ্টিকথাগুলো রোদেলার মাঝো শিহরন জাগাচ্ছে!!!এ কেমন অনুভূতি!!!

একটি ছেলে অনেকক্ষণ যাবত রোদেলার দিকে তাকিয়ে আছে… রোদেলার সেদিকে খেয়াল ই নেই!!! হঠাৎ হাসনাত রোদেলার কোমড় ধরে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল.. তারপর সেই ছেলের দিকে তাকিয়ে বলল– ভাই এইটা আমার জিনিস.. কেউ তাকালে চোখ তুলে নি আমি তাও কাঁটাচামচ দিয়ে.. ছেলেটা তাড়াতাড়ি দৌড়ায় চলে গেল.. .রোদেলা অবাক হয়ে কেপেঁ ওঠলো তার কথায়!! হাসনাতের শিতল হাতের স্পর্শ যেন তার মনে ভালোবাসার মধুর ঝংকার তুলছে বারবার..

ইফ্ফাতও এসেছে রোদেলার সাথে!! সে কিছু কিনার আগেই ইফতি তাকে একটা জামদানি শাড়িন কিনে দিল… মেজেন্ডা কালারের!!ইফ্ফাত ব্রু কুঁচকে বলল– এ কালারে তো আমাকে মানায় না.. ইফতি মুচকি হেসে বলল– না পড়ে রায় কিভাবে দিচ্ছেন মেডাম? আসমানের হুর পরী লাগবে আপনাকে…. ইফ্ফাত লাজুক হেসে ইফতীর পাশ থেকে দাড়িয়ে রোদেলার পাশে এসে দাড়ালো.. আবার অন্য কিছু বলে লজ্জায় ফেলবে তাকে এই ছেলেটা!!!
সব শপিং মোটামোটি শেষ.. হলুদের জন্যও ম্যাচিং শাড়ি কিনেছে সবাই… এখন তারা জুয়েলারি কিনতে যাবে….

সানিয়া জুয়েলারি দোকানে ডুকতেই দেখলো ইশান সেখানে… তার কেন যেন ঐদিনের কাহিনীগুলো মনে পড়ছে…লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিল সে..খুব চুপচাপ থেকে সবকিছু কিনলো . গোল্ড বেশির ভাগ চয়েস করা ছিল তাই আর কিনতে তেমন কোন ঝামেলা হলো না।। দুই ফ্যামিলি চয়েস করে কিনে নিল সবগুলো… ইফ্ফাত আর ইফতির বিয়েটাও রোদেলাদের বিয়ের চারদিন পর সেই হিসেবে ইফতীর আম্মু ইফ্ফাতের জন্য ও কিছু গোল্ড কিনে নিল .. আর বাকিরা সবাই কিছু এমিটিশনের জুয়েলারি কিনতে লাগলো…

সানিয়া নিজের জন্য হালকা কিছু কিনে একপাশে বসে ফোনে গেইমস খেলতে লাগলো.. আর আড়চোখে ইশানকে দেখছে সে… ইশান বারবার তার দিকে তাকাচ্ছে… সে বোঝতেই পারছে না সত্যি কি ইশান তাকাচ্ছে নাকি তার ই মনের ভূল..
অন্যদিকে ইশানের কেন যেন অসস্তি লাগছে.. সানিয়া চুপচাপ আছে এইটাই তার ভাল ঠেকছে না.. সে এদিক ওদিক তাকাতেই একটা কোমড়ের বিছায় তার নজর পড়লো .. মুহুর্তেই সানিয়ার ফর্সা পেটের কথা মনে পড়ে গেল তার.. সেইদিন সানিয়ার ফর্সা পেট আর কোমড়ের কিছুটা অংশ দেখেছিল সে!! মনে পড়তেই পরপর কয়েকটা ঢুক গিলল সে… ইয়া আল্লাহ কি সব চিন্তা করি আমি আজকাল!! নিজেকে খুব করে বকে সে কোমড়ের বিছাটা নিয়ে সানিয়ার সামনে গেল.. সানিয়া ও যেতেই চোখ তুলে তাকালো.. ইশান জোরে নিশ্বাসটা নিয়ে আস্তে আস্তে ফেলে বলল– এই বিছাটা নিউ মডেল চায়লে ট্রাই করতে পারেন..
সানিয়া বিছাটার দিকে তাকালো.. ছোট ছোট কোন্তলের বল বসানো বিছাটা আসলেই অনেক সুন্দর.. হঠাৎ সে কিছু চিন্তা করে বলল– তো এইটা কিনে কে দিবে আপনার আব্বু?? আমার আব্বু তো দিবে না আর কিনে…এই বলে সে যেইনা উঠে হাটা ধরল.. পেছন থেকে সেইটা প্যাকেটে পুরতে পুরতে ইশান বলল– আব্বু কেন আব্বুর ছেলে দিবে কিনে.. ছেলে কি কাউকে কিছু দিতে পারে না…
সানিয়া মুচকি হেসে পিছনে ইশানের দিকে তাকিয়ে ব্রু কুঁচকে বলল– তো আপনি কি সব মেয়েদের এভাবে ফ্রিতে জুয়েলারি দিয়ে বেড়ান??
ইশানের খুব রাগ লাগলো মেয়েটার কথায়!!! সে দু কদম সামনে এসে সানিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল– আর আপনিও কি সবাই সাথে ঐভাবে কথা বলেন?? যেইভাবে আমার সাথে বলেন?? আর আপনার পেটের তিলটাও কি সবাইকে দেখিয়ে বেড়ান??
সানিয়া চোখ বড় বড় করে তাড়াতাড়ি মাথা দোলাল..আর বলল– না মানে… আর তখন ইশান তাকে থামিয়ে বিরবিরিয়ে বলল– কিছু মানুষ বিশেষ হয়… এইবলে সে দোকান থেকেই বেরিয়ে গেল….আর সানিয়া অবাক চোখে ওখানেই দাড়িয়ে রইল..

রোদেলা অনেকক্ষন ধরে দেখছে শপিং করতে আশা একটা মেয়ে হাসনাতের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে.. আর হাসনাতও সেদিকে তাকিয়ে চোখের ইশারাই কথা বলছে.. রোদেলার মেজাজ মুহুর্তেই গরম হয়ে গেল.. এই ছেলেটাকে কি করতে মন চায় তার!!! ছেলেগুলোর আসলে একটাতে হয়না.. এইসব বিরবির করতে করতে সে হাসনাতের সামনে গিয়ে বুকের ওপর হাত গুঁজে দাঁড়ালো।।। তারপর ব্রু কুঁচকে বলল– হনুমানের মতো দেখতে একটা ছেলে যখন পেত্নী মতো একটা মেয়ের সাথে ফ্লাটিং করে তখন ওয়ান্ডার প্রিন্সেসের মতো দেখতে মেয়েটি সেই হনুমানের মুখে জুতা মেরে নিউ পিন্সের খোজ করতে যাওয়ার পণ করে।।।
হাসনাতের পেট ফেটে হাসি আসছে সে নিজেকে নরমাল করে অবুজ ভঙ্গিতে বলে— তো সেই হনুমানের মতো দেখতে ছেলেটাকি সেই পেত্নীটাকে বিয়ে করে ফেলেছিল??
রোদেলা চোখ কটমটিয়ে হাসনাতে দিকে তাকায়.. তার ইচ্ছে হচ্ছে এই হাসনাতকে পিস পিস করে কেটে বঙ্গোপসাগরে দিয়ে আসতে কমছে কম মাছগুলোর তো পেট ভরবে.. সে দাতে দাত চেপে বলল– নাহ,, তখন সেই পিন্সেস সেই হনুমানকেই বিয়ে করে আর বিয়ের পর নিজেকে ডাইনীর মতো সাজিয়ে সেই হনুমানকে সুপ বানিয়ে খেয়ে নেয়।। তা ও সস সহ….
হাসনাত নিচের দিকে তাকিয়ে মুখ চেপে হেসে তারপর নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল– তাহলেতো সেই পিন্সেসটা ডাইনী ছিল তাই না?? নিশ্চয়ই পিন্সেসের ছাল গায়ে দিয়েছিল হনুমানকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে…
রোদেলা অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে সেখান থেকে প্রস্হান করলো আর গাড়িতে চেপে সোজা বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিল..আর হাসনাত পেটে হাত দিয়ে হাসতে হাসতে শেষ. মেয়েটা এতো পিচ্ছি কেন. হঠাৎ মেঘলাকে সামনে দেখে নিজের হাসিকে কন্ট্রোল করে বলল– আসলে মেঘলা…
মেঘলা কোমড়ে হাত গুঁজে বলল– কি মজাটা পাও মেয়েটাকে জালিয়ে??
হাসনাত আমাতাআমাতা করে বলল– আরে,, আমি তো জাষ্ট দুষ্টুমি করি…
মেঘলা—- এতোটাও দুষ্টুমি করোনা যে মেয়েটিকে ভিতর থেকে ভেঙ্গে ফেলে সেইটাই.. এমন করলে আমার বোন দেবনা তোমাকে…
এইবলে মেঘলা হনহনিয়ে প্রস্হান করে…
হাসনাত মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো.. ইফতি হাসনাতের কাধে হাত দিয়ে বলল– এভাবেই মেয়েদের হুমকির তলে চাপা পড়ছি আমরা অসংখ্য গোবেচারা নৌজোয়ান…

— গোবেচারা!! তোমরা মেয়েদের এতো জ্বালানো পরেও গোবেচারা??
ইফতি পিছনে ফিরে দেখে ইফ্ফাত.. সে মুখ বাকিয়ে বলল– তো কি? তোমরা পার টা কি আর.. শুধু ছেলেরকে জ্বালানো ছাড়া…
ইফ্ফাত — কি?? আমাদের কে কি খুব নরম মনে হয়.. আমাদের সামনে তোমরা তোলার মতো উড়ে যাবা.. আমরা কতোটা ট্যালেন্ট…
হঠাৎ মেহেদী কোথা থেকে এসে ইফতির কাধে হাত দিয়ে বলল– তাহলে চল কম্পিটিশন রাখি, হলুদ, মেহেদী অনুষ্টান, সঙ্গিত আর বিয়ে..চার টা. দেখি কে জিতে…
সানিয়া— আমাদের কি কম ভাব.. আমরা চার জন…
আমি, ইফ্ফাত, মুনিরা, তামান্না…
ইশান— তো আমরা ও তো তিনজন.. দেখা যাবে..
মেহেদি — তিনজন না… চারজন.. আরাফ ও আছে…

এদের এসব কিছুই যেন হাসনাতের মাথায় ডুকছে না.. সে চিন্তা করছে রোদেলার সেই রাগী চেহারা… ওফ!! মেয়েটা এতোটা কিউট কেন?? রাগলে আরো কিউট লাগে!!!!

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here