সাদাফের জন্য আজকে পাত্রী দেখতে যাবে, ” মায়ের মুখে কথাটা শুনে শ্রুতি হতভম্ব হয়ে গেল। মুখের হাসিটাও মিলিয়ে গেল। বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো ক্ষণেই। বিষয়টি তার হজম করে নিতে সময় লাগছে বেশ। এটা কীভাবে সম্ভব? সাদাফ তো তাকে ভালোবাসে। তাহলে কীসের পাত্রী দেখাদেখী? শ্রুতির মাথায় কিছুই ঢুকছে না। সে আরশি বেগমকে (শ্রুতির মা) কম্পিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
–পাত্রী মানে? কোন পাত্রী? নাম কী? কার সাথে?
–আরে দ্বারা বলছি আস্তে আাস্তে। সাদাফ যে ভার্সিটিতে পড়ে ওর ক্লাসেরই একটা মেয়ে। মেয়েরাও নাকি বড়লোক। দুজন দুজন নাকি ভালোবাসে। কালকে ওর বাবা বিয়ের কথা বললে ও নাকি এই কথা বলছে। মেয়েটার নাম আমাকে বলছিল, কিন্তু মনে নেই। পরশু এনগেইজমেন্ট হবে। বিয়ে দুইজনের লেখাপড়া শেষ করে হবে।
মায়ের কথা শুনার সাথে সাথে শ্রুতি নিজের বল-শক্তি হারিয়ে ফেলে। হাত -পা অবশ হয়ে আসছে কী করবে বুঝতে পারছে না। কাপাকাপি শুরু হয়ে গেছে। নিজের ভারসাম্য হারানোর আগেই দ্রুতি কোনোমতে টেবিলটা আকড়ে ধরে। কী করবে বুঝতে পারছে না? কথাটা তার বিশ্বাসই হচ্ছে না। এটা কী করে হতে পারে? ভাইয়া তার সাথে প্রতারণা করল? তার ভালোবাসা নিয়ে খেলল? শ্রুতি নিজের কান্না আটকিয়ে দৌড়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেল৷
আরশি বেগম পিছন থেকে বলে উঠেন ডাকতে থাকেন। কিন্তু শ্রুতির কোনো হুশ নেই। তার এখন একটাই লক্ষ্য সাদাফ ভাইয়ার বাসায় যাওয়া। কেন এমন করল তার উত্তর চাই শ্রুতির?
শ্রুতি দৌড়াতে দৌড়াতে সাদাফের বাসায় পৌছালো। বাসা বেশি দূড়ে না,কাছেই ২০মিনিটের মতো লাগে। শ্রুতি হাপাতে হাপাতে সাদাফদের ড্রইংরুমে ডুকতেই শাহিদা চৌধুরী (সাদাফের মা) শ্রুতিকে দেখেই জিজ্ঞেস করল,
–আরে শ্রুতি,তুমি এই সময়। আর চোখ মুখের এই অবস্থা কেন? কোনো সমস্যা?
শ্রুতি ছলছল নয়নে জিজ্ঞেস করল,
–চাচীমা সাদাফ ভাইয়া বাসায় আছে?
শাহিদা চৌধুরী বলল,
–হ্যাঁ, সাদাফ তো তার রুমে। কিন্তু তোর এই অবস্হা কেন?
শ্রুতি কোনো কথার উত্তর না দিয়ে সোজা সাদাফের রুমে যায়। এদিকে সাদাফ মালিহার (সাদাফের গার্লফ্রেন্ডের) সাথে হেসে হেসে কথা বলছিল। রুমের ভিতর কেউ ডুকতেই সেদিকে তাকালো। শ্রুতিকে এই সময় নিজের রুমে দেখে অবাক হলো। ফোনে মালিহাকে বলল,
–তোমার সাথে পরে কথা বলছি।
এই বলে ফোন কেটে দিয়ে শ্রুতির দিকে ঘুরে জিজ্ঞেস করল,
–কী ব্যাপার? তুই এই সময় আমার রুমে?
শ্রুতি হাপিয়ে গিয়েছে দৌড়াতে দৌড়াতে । হাটুর উপর হাত দিয়ে কিছু ক্ষণজোরে জোরে শ্বাস নিল। তারপর কাপা কাপা কন্ঠে বলল,
–সা,, দা,,ফ ভাইয়া, এই সব কী? তোমার নাকি বিয়ে? তুমি তো আমাকে ভালোবাসো? তাহলে বিয়ে কীসের?
সাদাফ উচ্চস্বরে হেসে উঠল। হাসতে হাসতে বলল,
–ওয়েট ওয়েট, কী যেনো বললি? ভালোবাসা?
এই বলে আবার হাসতে শুরু করল। শ্রুতি সাদাফের হাসি দেখে অবাক হলো। এখানে হাসার কী আছে? হাসতে হাসতে বলল,
–শোন ওটা কোনো ভালোবাসা ছিলো না। আমি শুধু মালিহাকে ভালোবাসা। ও আমার জান, কলিজা।আমাদের ২বছরের রিলশন। তোর সাথে ওটা নাটক ছিল। তুই আমাকে সব সময় বিরক্ত কর। ভালোবাসি ভালোবাসি বলতে বলতে আমার মাথা খারাপ করে দিয়েছিস। তাই তোকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য ৬মাস ভালোবাসার নাটক করলাম। এই নাটক করতে করতে আমি ক্লান্ত। তাই বাবাকে বিয়ের কথা বলছি। আশা করি বুঝতে পেরেছিস৷। একটা উচিত শিক্ষা দিলাম। আমার পিছনে আর লাগতে আসবি না। আর এই ন্যাকা কান্না বন্ধ কর।
চোখ মুখে বিরক্তি প্রকাশ করে একনাগাড়ে এই কথাগুলো বলে সাদাফ থামলো। শ্রুতি সাদাফের দিকে তাকানো, যেনো পলকই পড়ছে না। এ কোন সাদাফকে দেখছে সে। চোখ থেকে তার টপ টপ পানি পড়ছে। সে সাদাফকে টাস করে একটা থাপ্পড় মারল। এতে সাদাফের রাগ উঠে গেল। চিত্কার করে বলল,
–হাউ ডেয়ার ইউ? তোর সাহস কী করে হয় আমাকে থাপ্পড় মারার?
শ্রুতি কান্নারত অবস্হায় তাচ্ছিল্যের হাসি দিল৷ তার বুকটা ক্ষত বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে। মনে হয়, কলিজাটা কেউ টুকরা টুকরা করে কাটছে। সে নিজের চোখটা মুছে বলল,
–সাহসের তো কিছুই দেখো নি ভাইয়া। শুধু তোমাকে ভালোবাসতাম বলে সবসময় তোমার পিছে ঘুরতাম। তোমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করতাম। তুমি যখন আমাকে প্রপোজ করেছিলে আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না।পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হয়েছিল আমাকে। কিন্তু আমার এই সহজ সরল মনে বুঝতে পারে নি তোমার মনে এই সব ছিলো। ভুলটা আমারই। আমি তোমার পিছনে কুকুরের মতো ঘুরেছি একটু ভালোবাসার জন্য। তেমার কোনো দোষ নেই। তোমার মতো একটা জানোয়ারকে ভালোবেসে আমি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল করছি। কিন্তু এখন বুঝতে পেরেছি। ধন্যবাদ তোমাকে, নিজের আসল রুপটা দেখানো জন্য।চলে যাচ্ছি। চেষ্টা করব তেমার থেকে দূরে থাকার। কিন্তু তোমাকে একদিন আমার কাছে আসতে হবে। আমার কথা মিলিয়ে নিও৷
এই বলে শ্রুতি নিজের চোখের পানি মুছতে মুছতে নিচে নামল। বের হতে যাবে, তখন চাচীমা (আরশি চৌধুরী) পিছন থেকে বলল,
–আরে শ্রুতি, যাচ্ছো কোথায়? এখনই তো আসলা।
শ্রুতি পিছন দিকে না ঘুরেই বলল,
–থাক চাচীমা আর একদিন আসবো। শরীরটা বেশি ভালো লাগতেছে না।
তারপর চাচীমার আর কোনো কথা না শুনেই চলে গেলে। আর এইদিকে আরশি চৌধুরী সাদাফের রুমে দিকে তাকালো আর বলল,
–মেয়েটা যে কী হলো? এই আসলো আর এই চলে গেলো।
তিনি আবার রান্নাঘরে ঢুকলেন।
শ্রুতি রাস্তা দিয়ে হাঁটছে। আর চোখের পানি মুছতেছে। যতই কান্না আটকানোর চেষ্টা করতেছে, ততই চোখের অবাধ্য জল গুলো গড়িয়ে পড়ছে। হয়তো আজ এই চোখ গুলোও তার সাথে বেইমানি করছে।
….(চলবে)
#ভিনদেশী
#পার্ট ঃ১
#আদ্রিয়ানা নিলা (ছন্দনাম)