#ভিনদেশী
#পার্টঃ২
#আদ্রিয়ানা নিলা (ছদ্মনাম)
শ্রুতি বাসায় এসে সোজা নিজের রুমের দরজা বন্ধ করে দিলো। দরজার গা ঘেষে বসে কাদতে কাদতে বলতে থাকলো,
কেনো এমন করলে ভাইয়া, কেনো? আমি যে তোমায় ভালোবাসি? খুব ভালোবাসি? তুমি কেনো বুঝলে না? আমার সাথে কেনো প্রতারণা করলে?
এই গুলো বলছে আর কাদছে। কিন্তু এর মধ্যে শ্রুতি মা আরশি বেগম দরজা ধাক্কা লেন। আর বলতে লাগলেন ,
–শ্রুতি দরজার খোল। রুমের দরজা বন্ধ করলি কেন। দরজা খোল বলছি।
শ্রুতি চমকে উঠল। নিজের চোখের পানি টুকু মুছে দরজা না খুলেই বলল,
–মা, আমার ঘুম আসছে।ঘুমাবো। প্লিজ ডিস্টার্ব করো না।
ওই পাশ থেকে আর কোনো কথা শোনা গেলো না। হয়তো মা চলে গেছে। শ্রুতি বিছানায় উল্টোপাশে শুয়ে, বালিশে মুখ গুজে কাদতে লাগলো। কিন্তু তার এই অশ্রু কেবল ঘর পর্যন্তই সীমাবদ্ধ।দেখার মতো কেউ নেই। এভাবে কাঁদতে কাঁদতেই ঘুমিয়ে গেলো।
বিকাল ৫ টার দিকে সোহা (শ্রুতির বোন) বাসায় আসলো। প্রচুর ক্লান্ত সে। অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়ে।পড়ালেখার পাশাপাশি সাদাফদের কোম্পানিতে পার্ট টাইম ভার্সিটি।বাসায় ঢুকেই সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করল। কিছু একটা মনে হতে ফট করে চোখ খুলল। আরশি বেগমকে জিজ্ঞাসা করলেন,
–মা, শ্রুতি কোথায়?ওকে যে দেখছি না? ও না এই সময় সংবাদ দেখে? ও কোথায়?
আরশি বেগম বললেন,
–দুপুরে সাদাফদের বাসা থেকে এসে দরজা বন্ধ করছে। এখনো খোলে নি। দুপুরের ভাত ও খায় নি।
সোহার অবাক হয়ে গেলো। শ্রুতি তো কোনোদিন সংবাদ দেখা বাদ দেয় না।সব কিছু নিয়ম মাফিক করে। তাহলে আজকে কী হলো? কিছু তো নিশ্চয়ই হয়েছে। সোহা ফট করে দাড়িয়ে উত্তেজিত হয়ে আবার মাকে জিজ্ঞাসা করল,
–মানে? এতক্ষণ দরজা খুলেনি? ভাত খায়নি? আর তুমি ওকে দরজা খোলতে বলনি? কী করছে ও?
আরশি বেগম বললেন,
–ও ঘুমাচ্ছে। কাউকে ডিস্টার্ব করতে মানা করছে।
সোহা চোখ মুখে বিরক্ত প্রকাশ করে বলল,
–তাই বলে এতক্ষণ হয়ে গেলো তুমি দরজা খুলতে বলবা না? এই অসময়ে কেউ ঘুমায় নাকি?
এই কথা বলে দ্রুত শ্রুতির ঘরে দরজার সামনে গিয়ে দরজা ধাক্কালো। আর বলল,
–এই শ্রুতি দরজা খোল। এই বিকাল সময়ে রুমে কী করছিস?
শ্রুতি নিজের আপুর ডাক শুনে হুড়মুড়িয়ে উঠে বসলো। দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকলো। আরে
–৫ঃ১০ বেজে গেছে। এতো বাজলো কখন?
এইদিকে সোহা আরো ঝোরে চিত্কার করে দরজা খোলতে বলতেছে।শ্রুতি তাড়াতাড়ি উঠে গিয়ে দরজাটা খুলল। আর সোহা তাড়াতাড়ি ঘরে ঢুকে বলল,
— তোকে এতক্ষণ ধরে ডাকছি। দরজা খুলছিলি না কেন?
শ্রুতি মাথা নিচু করে বলে,
–ইয়ে মানে আপু ঘুমাচ্ছিলাম।
–তুই কবে থেকে এতো ঘুম কাতর হয়ে গেলি। দুপুরেও নাকি ভাত খাসনি।কাল রাতে কী ঘুমাসনি?
–হিম, আসলে মাথাব্যথা করছিল তাই ঘুমালাম।
–আচ্ছা যা ফ্রেস হয়ে নিচে আয়।
এই বলে সোহা রুম থেকে নিজের রুমে গেল ফ্রেস হতে।সোহা যাওয়ার পর শ্রুতি তাড়াতাড়ি দরজা বন্ধ করে আয়নার সামনে গিয়ে চোখ মুখ দেখে অবাক হলো। চোখ, মুখ ফুলে গেছে। শ্রুতির ছোট বেলা থেকে এই সমস্যা কান্না করলেই চোখ, মুখ ফুলে উঠে। শ্রুতি মনে মনে বলল, ভাগ্যিস মাথা নিচু করে ছিলাম। নাহলে আপু সন্দেহ করত। তখন হতো আরেক ঝামেলা। তারপর বাথরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নিচে নামল। এখন কিছুটা তাকে স্বাভাবিক লাগছে। গিয়ে দেখে সোহা খাচ্ছে। শ্রুতি গিয়ে পাশে বসল এবং খাওয়া শুরু করল। খাওয়ার মাঝে সোহা বলে উঠল,
–তোর কী মাথা ব্যথা কমেছে?
–হ্যাঁ, আপু কমেছে।
ওহ, বলে আবার খাওয়া শুরু করল। শ্রুতি তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করে নিজের রুমে চলে গেল। রুমে আসার পর শ্রুতির মনটা আবার খারাপ হয়ে গেল। একরাশ একাকিত্বতা তাকে ঘিরে ধরল। বিছানা থেকে মোবাইলটা নিয়ে বেলকনিতে গিয়ে একটা চেয়ারে বসল। মোবাইলটা খুলতেই সামনে আসল, সাদাফ আর ওর একত্রে একটা ছবি। ছবিটা দেখেই শ্রুতির আবার কান্না আসল। নিজেকে সামলে মনে মনে আওড়াতে থাকল,
–না, আমি ওর জন্য আর চোখের পানি ফলবো না। ও আমাকে যে কষ্ট দিছে একদিন এ কষ্ট ও পাবে। ওর কোনো চিহ্ন আমার কাছে রাখব না।
ঠোঁট কামড়ে নিজের কান্না আটকাচ্ছে। মোবাইল থেকে সিমটা খুলে ভেঙ্গে ফেলে। গ্যালারির সব ম্যাসেজ, ছবি সব ডিলিট করে ফেলে। এসব করে কী হবে? মোবাইল থেকে সব স্মৃতি খুলো মুছে ফললো। কিন্তু মন থেকে কীভাবে করবে?
____________________________________________
“আমিও পথ হারা কবি ছিলাম,
রাত্রির আধারে, নির্লিপ্ত, দিশেহারা এক কবি,
প্রেমের বিচ্ছেদে কেঁদেছি,
সকাল আলোতে ভুলে যেতে চাই,
রাতের যত কান্নার অভিনয়। ”
সকালের সূর্যের আলো শ্রুতির মুখে পড়তেই তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। নিজেকে বেলকনির একটা চেয়ারে আবিষ্কার করে। কালকের রাতের ডিনারের পর এখানেই বসে ছিলো। কখন যে ঘুমিয়েছি টের পায়নি৷ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়িয়ে ঘরের ভিতর গেলো, ৭ঃ৩০ বাজে।
ফ্রেস হয়ে নিচে নামল। ড্রইংরুমে গিয়ে দেখে বাবা পত্রিকা পড়ছে৷ আপু এখনও উঠে নি। শ্রুতি বাবাকে সকাল আর রাতরে ছাড়া পায় না। তিনি একজন উচ্চপদস্থ সরকারি চাকুরিজীবী। শ্রুতি বাবার কাছে গিয়ে বসলো।শ্রুতির দিকে একবার তাকিয়ে পত্রিকার পাতা উল্টাতে উল্টাতে বলল,
–কি ব্যাপার আমার মামনির ঘুম ভেঙ্গেছে?
–হিম। বাবা আপুকে যে দেখছি না। আপু তো আমার আগে উঠে। আপু কোথায়?
,,,,,(চলবে)