ভিনদেশী পর্ব ৪২+৪৩+৪৪

#ভিনদেশী
#আদ্রিয়ানা নীলা
#পার্ট ঃ৪২

ঊষার আলো ফুটেছে আরও পূর্বে৷ স্নিগ্ধ পরিবেশ। বৃক্ষের আঁকেবাঁকে সোয়ালো, হামিংবার্ড সহ নানারকম পাখির কিচিরমিচিরে মুখরিত। বাড়ির পাশের বাগানে মনে হয় ওরা প্রত্যক্ষ এসে হাজিরা দেয়। প্রতিদিন এদের কিচিরমিচির শব্দেই শ্রুতির তন্দ্রা ভেঙ্গে যায়। কিন্তু আজ হলো ব্যতিক্রম। ফোনের ক্রিং ক্রিং শব্দে শ্রুতি জেগে গেলো। তবুও শ্রুতির চক্ষু থেকে ঘুম সরলো না। সে বালিশে মাথা রেখেই তল থেকে ফোনটা বের করে কেটে দিয়ে আবার ঘুমানোর চেষ্টা করল। কে কল করেছে দেখার প্রয়োজনবোধ ও করল না। একের পর এক কল আসতে থাকলো। শ্রুতি ঘুমানোর চেষ্টা করলেও আর পারছে না। বালিশ দিয়ে কান চেপে ধরল৷কিন্তু কলের শব্দ কিঞ্চিৎ ও কমছে না। মনে হচ্ছে তার কর্ণকুহর ওই ক্রিং ক্রিং শব্দটাকেই বেশি শ্রবণ করছে। তাকে আর ঘুমাতে দিতে চাচ্ছে না। শ্রুতি এবার বিরক্ত হলো এবং রাগান্বিত হতে লাগল।ঘুমু ঘুমু চোখে সে ফোনটা হাতে নিয়ে কলটা রিসিভ কর্কশ কন্ঠে বলল,

–কোন সালা রে? সকাল বেলা কী কোনো কাজ নেই,বাসায় বউ নেই, আমারে ফোন দিছিস কেন? কথা বলতে ইচ্ছা করে সালা? ইচ্ছা করলে তোর বউ, তোর গার্লফ্রেন্ড রে কল দে? আমারে দিছিস কেন?ঘুমটা নষ্ট কইরা দিলি? সালা, গন্ডার, হনুমান, কুকুর, বিড়াল।

আরও সহ খানেক গালি দিয়ে কলটা কেটে দিল। ওপাশ থেকে কোনো উত্তরের আশা না করেই।
ফোনটা কেটে পুনরায় ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগলো।আজকে যেনো তন্দ্রা চক্ষু থেকে সরছে না। শ্রুতি সব ভুলে ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগলো। কিন্তু সেটাও স্হায়ী হলো না। আবার কল আসছে। শ্রুতি এবার প্রচুর রাগান্বিত হলো। কার এতো ভূতে কিলাচ্ছে যে তাকে শান্তিতে ঘুমাতে দিচ্ছে না। শ্রুতি উঠে বসলো। ঠিক করলো এবার কয়েকটা কঠিন কথা শুনিয়ে দিবে। কলটা রিসিভ করে বলল,

–কোন সালারে তুই? কাজ নেই তোর? মানা করা সত্ত্বেও আবার কল করছিস? কতো বড় কলিজা তোর হ্যাঁ?

–শ্রুতি, এটা কোন ধরনের ল্যানগুইজ।কোন ভাষায় কথা বলছো তুমি?

ফোনের ওপর পাশ থেকে জ্যাকের কন্ঠটা শুনে শ্রুতির সব ঘুম উবে গেলো৷ হতবাক হয়ে গেল। সে ফোনের স্কিনের দিকে তাকালো।জ্যাক কল করেছে।তার মানে আগের কলটাও তার। শ্রুতি ঠোঁটে কামড় দিল।মাথায় একটা চাটি মেড়ে বলল,

–ইশ,শ্রুতি! তুই জ্যাককে কে কী কী বললি? তোকে এখন ও কতো খারাপ ভাববে!

ওপাশ থেকে শুনতে পেলো জ্যাকের ক্রুদ্ধ কন্ঠ,

–কী বিড়বিড় করছো? কতক্ষণ ধরে কল করছি ধরোনি কেন? কল কেটে দিচ্ছো কেন?হ্যাঁ?

শ্রুতি জ্যাকের কথা শুনে স্বস্তির একটা নিঃশ্বাস ছাড়ল। বাবাহ! আগে জ্যাককে যা বলেছে জ্যাক তার কিছুই বোঝে নি।এই বিদেশে বাঙালিদের একটা সুবিধা পাওয়া যায়। রাগ উঠলে যতো গালি দেও বাঙালি ছাড়া কেউ বুঝবে না। শ্রতি কথাটা ভেবেই ঠোঁট চেপে হাসল।

অতঃপর একটা হালকা ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল,

–ঘুমাচ্ছিলাম জ্যাক।কেবল ৭টা বাজে তুমি কেন কল দিয়েছো এতো সকালে?

জ্যাক হালকা হেসে বলল,

–এমনি কল দিয়েছিলাম সুইটহার্ট।সাতটা বাজে এখনও তুমি ঘুমাচ্ছো কেন? ব্যায়াম করো না, গড এর কাছে প্রে করো না তাই না? ইমমম,,,এতো ঘুমাও বলেই দেখছো তুমি দিন দিন মোটা হয়ে যাচ্ছো?

শ্রুতি জ্যাকের কথা শুনে হা গেলো। নিজের হাত পা দেখতে দেখতে বলল,

–What! আমি মুটি হয়ে যাচ্ছি, কে বলেছো তোমাকে? আমার ওজন মাত্র ৪৩কেজি। সবাই বলতেছি আমি শুকিয়ে গেছি তুমি বলছো মোটা হয়ে যাচ্ছি?

ওপর পাশ থেকে জ্যাকের হাসির ঝংকার শোনা গেলো।

–মজা করছিলাম। তবুও সকাল উঠবা ওকে।

–হুম।

জ্যাক বলল,

–বাই,ফ্রেশ হও। তাড়াতাড়ি ভার্সিটিতে এসো। আজকে আমরা একসাথে লান্স করবো।

–ওকে বাই।

শ্রুতি কলটা কেটে বাথরুমে গেলো ফ্রেশ হতে।

_________

দ্বিপ্রহর,
২তলা বিশিষ্ট একটা লাক্সারি রেস্টুরেন্টে জ্যাক আর শ্রুতি বসে আছে।তারা ছাড়া আর কোনো গ্রাহক নেই। জ্যাক স্পেশাল ভাবে দুপুরের লান্স এর জন্য হায়ার করেছে।শ্রুতি বিষন্ন মনে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। টেবিলে অনেক ধরণের খাবার সাজানো। কিন্তু তার তাতে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। ভার্সিটি আসার পর থেকে মনটা তার খারাপ৷ এক অজানা কারণেই। কেন খারাপ সে নিজেও জানে না। মনটা বড্ড কু ডাকছে। মন হচ্ছে আজকে তার সাথে কিছু হবে। কোনো বিপদ তার জন্য অপেক্ষা করছে।

শ্রুতিকে এভাবে দেখে জ্যাক শ্রুতি দিকে আর একটু চেপে বসলো। শ্রুতির হাত দুটো নিজের হাত মুঠোর নিল।শ্রুতি অনুভূতিহীন চোখে জ্যাকের দিকে তাকালো। জ্যাক বলল,

–কী ব্যাপার শ্রুতি? কতক্ষণ ধরে খেয়াল করছি তুমি অন্যমনস্ক হয়ে কিছু ভাবছো? আমাকে বলো কিছু হয়েছে? মন খারাপ কেন?

শ্রুতি পুনরায় বাহিরের দিকে দৃষ্টি দিল। জ্যাকের কথাকে অগ্রাহ্য করে বলল,

–জ্যাক আমার যদি কোনো বিপদ হয়, আমি যদি মারা যাই, তখন তুমি কী করবে? আবার নতুন করে কাউকে ভালোবাসবে?

শ্রুতির কথাটা শোনো সাথে সাথে জ্যাকে শ্রুতি জড়িয়ে ধরল শক্ত করে। শ্রুতি হতবিহ্বল। হঠাৎ কি হলো।কষ্ট পেলো নাকি জ্যাক তার কথায়৷ শ্রুতি জ্যাকের পিঠে হাত বুলিয়ে বলল,

–জ্যাক! কী হলো?

জ্যাক নিরুত্তর। শ্রুতি কাঁধে ভিজে কিছুর অনুভব করল৷শ্রুতি বুকটা কেঁপে উঠল। শ্রুতি অত্যাশ্চর্যিত হয়ে বলল,

–জ্যাক তুমি কাঁদছো কেন? ছেলেরা কী এতো সহজে কাঁদে নাকি হুম? ছেলেদের সহজে কাঁদতে নেই।

জ্যাক শ্রুতিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,

–তোমাকে ছাড়া আমি অপূর্ণ শ্রুতি। ২৪ ঘন্টার প্রতিটা মূহুর্ত আমি তোমাকে মিস করি। তোমাকে ছাড়া কখনো কাউকে ভালোবাসতে পারবো না। তুমি জীবনে প্রথম তুমিই শেষ। তোমাকে ছাড়া আমি কীভাবে থাকবো? তোমাকে ছাড়া আমি মরেই যাবো৷

শ্রুতি জ্যাক ঠিকভাবে বসিয়ে রুমাল দিয়ে চোখের পানিটুকু মুছিয়ে দিলো।

–আমি তো মজা করেছিলাম। এতেই কাদে নাকি ? আমি তো জানতাম মেয়েরা কাঁদুনি হয়, একটু হলেই কেদে নেই। আজকে দেখলাম ছেলেরাও ছিঁচকাঁদুনি।হুম?

জ্যাককে হালকা ধাক্কা মুচকি হেসে বলল।

জ্যাক শ্রুতির কথা শুনে হেসে দিল।

–মোটেও ছেলেরা ছিঁচকাঁদুনি নয়। ছেলেরা অনেক স্ট্রং। ওকে?

শ্রুতি জ্যাক গাল দুটো টেনে হেসে বলল,

–হুম ওকে। এখন থেকে তোমাকে যদি আর কখনো কাঁদতে দেখি তাহলে আমার চেয়ে খারাপ কিন্তু কেউ হবে না।

জ্যাক শ্রুতির হাত দুটো টেনে হাতের পিঠে অধরযুগল ছুইয়ে বলল,

–তুমি ওই সব বাজে কথা বলবে না। ওকে?

শ্রুতি হেসে বলল,

–আচ্ছা বাবা। কখনো বলবো।

জ্যাক একটু মুখ ফুলিয়ে বলল,

–আমি তোমার বাবা হই না৷ আমি তোমার বর হবো।

শ্রুতি জ্যাকের বাচ্চামো ধরনের কথা শুনে হাসলো।অতঃপর খাওয়া শুরু করলো। জ্যাক যতোই এটা ওটা বলুক না কেন, মন থেকে ভয়টা কাটছে না।

_________

রাত ৮ বাজে। তখন জ্যাক বাসায় বিছানায় শুয়ে মোবাইল স্ক্রল করছে। হঠাৎ ফোনে একটা কল আসলো।
জ্যাক হাসিমুখে ফোনটা রিসিভ করলো। ওপাশ থেকে ব্যাক্তিটির কথা শুনে জ্যাকের হাত থেকে ফোনটা পরে গেল। মুখটা বিষন্নতায় ছেয়ে গেল। একরাশ ভয় কাজ করতে থাকলো মনে।
জ্যাক পুনরায় ফোনটা ধরে বলল,

–লুসি এসব কোন ধরণের কথা?শ্রুতিকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না মানে কী? ওর তো ৬টার আগে বাসায় আসার কথা।এখন ৮বাজে বলছো যে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। ওর বন্ধুদের বাসায় খোঁজ নিয়েছো।

ওপাশ থেকে লুসি কাঁদতে কাঁদতে বলল,

–হ্যা জ্যাক।সবাইকে কল দিয়েছি৷ কারো বাসায় যাইনি। সবাই বলছে প্রাইভেট থেকে বের হয়ে তাদের আর দেখা হইনি। বাসায় ও তো আসে নি।তোমার কাছেও নেই কোথায় গেছে তাহলে ?ফোন ও বন্ধ। মমকেও বলেনি এসব কথা। বলেছি শ্রুতি ফ্রেন্ড দের বাসায় গেছে। আজকে আসবে না। কী করবো বুঝতে পারছি না আমি জ্যাক? ও তো এখানের তেমন কিছুই চেনে না।

জ্যাক লুসিকে শান্তনা দিয়ে বলল,

–টেনশন করো না। আমি খুঁজতে বের হচ্ছি৷কোনো ফ্রেন্ড দের বাসায় আছে হয়তো। পেয়ে যাবো৷

বলেই জ্যাক কলটা কেটে দিয়ে হন্তদন্ত হয়ে নিজের শার্ট টা গায় দিয়ে গাড়ির চাবি নিয়ে বের হলো।তার কেনো যেনো মনে হচ্ছে, শ্রুতি কিছু হয়েছে,কোনো বিপদের মধ্যে আছে? পরক্ষণেই নিজেকে শাম্ত দিয়ে বলল, না আমার শ্রুতির কিছুই হবে না আমি থাকতে। কিছুই না।

সে দ্রুত গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বেরিয়ে পড়ল শ্রুতিকে খুঁজতে।
#ভিনদেশী
#আদ্রিয়ানা নীলা
#পার্ট ঃ৪৩

নিস্তব্ধ শর্বরী৷ রাতের আঁধার পেরিয়ে হালকা আলো আভা ফুটতে শুরু করেছে। গগনে লাল -কমলা রঙের প্রলয়ংকরী নাচন, তার সঙ্গে নিস্তব্ধতার গভীর মিতালি।কিন্তু এই নিস্তব্ধতা নষ্ট করছে এক যুবক। খোলা মাঠ।সেখানে হাঁটু মুড়ে বসে চিত্কার করে কাঁদছে। একটা রাত পেরিয়েছে তার নির্ঘুম। নিদ্রা তার মনে হয় নির্বাসনে চলে গেছে।বক্ষে কষ্টের শৃঙ্গ, মাথায় টেনশন থাকলে কী ঘুম আসে? চাতক পাখির মতো অপেক্ষার করছে শ্রুতির জন্য। কিন্তু তার কোনো হদিস নেই।অপেক্ষার গুরুভারে বুকের ভিতরটা টনটন করছে। সারারাত খুঁজেছে সিয়াটলের এ গলিতে, ও গলিতে।খোঁজ নিয়েছে শ্রুতির সকল ফ্রেন্ড দের কাছে। কিন্তু নেই কোনো খবর। জ্যাক চিত্কার করে কাঁদতে কাঁদতে বলল,

–শ্রুতি কোথায় তুমি? কোথায় গিয়েছো?প্লিজ ফিরে আসো। এরকম কষ্ট কেন দিচ্ছো? আমার উপর রাগ করে কোথায় লুকিয়ে রয়েছে?এরকম কার্পণ্য কেন করছো আমার সাথে? প্লিজ ফিরে আসো। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।

বলে আরও হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো।চোখের পানি বাধ মানছে না। হঠাৎ এই কান্নার বিঘ্ন ঘটালো একটা কল। জ্যাক চমকে উঠল। চোখের পানি মুছে উঠে দাড়িয়ে পকেট থেকে ফোনটা বের করল।একটা আন নন নাম্বার থেকে কল আসছে।জ্যাক আননন নাম্বার তাই কেটে দিলো। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে গাড়িতে গিয়ে বসলো। নিজেকে শক্ত করার জন্য বলল,

–এরকম দুর্বল হলে চলবে না। দুর্বলের আধিপত্য ভয়ংকর৷ দুর্বলতা মানুষের শক্তিতে কমিয়ে দেয়। ফলে খারাপ কোনটা খারাপ কোনটা ভালো তা মস্তিষ্ক বিবেচনা করতে পারে না। শ্রুতি কোথায় যাবে আর? অবশ্যই ফিরে আসবে। আমাকে ছাড়া শ্রুতি কোথায় যাবে না বলে প্রতিজ্ঞা করেছে।

জ্যাক গাড়ি স্টার্ট দিবে এই সময় আবার কল এলো। ফোনটা পাশের সিটের উপর রাখা ছিলো। জ্যাক তাকালো সেদিকে। স্কিনের দিকে তাকালে মুখে হাসি ফুটে উঠল। সে তাড়াতাড়ি ফোনটা হাতে নিয়ে রিসিভ করে হন্তদন্ত হয়ে বলল,

–এই শ্রুতি কোথায় ছিলে তুমি সারারাত হ্যাঁ? কিছু বলে যাওনি? জানো আমি তোমায় সারারাত কোথায় কোথায় খুঁজেছি। আন্টি, লুসি সবাই কতো টেনশন করছে। কোথায় গেলে বলে যেতে হয় তুমি জানো না? কোথায় তুমি এখন বলো আমি আসছি তোমায় নিতে। কঠিন একটা শাস্তি দিবো তোমায়।

একনিশ্বাসে পুরো কথা বললো। ফোনের ওপাশ কথার বদলে শুনতে পেলো কোনো পুরুষের হাসি। জ্যাকের বক্ষ কেঁপে উঠলো৷ অজানা ভয় আঁকড়ে ধরল। কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,

–Wh-o ar-e you? এটা- তো শ্রুতির ফো-ন?

ওপাশ থেকে বলল,

–জ্যাক একসাথে এতো কথা বললে তোমার শ্বাস তো শেষ হয়ে যাবে। নিঃশ্বাস নেও নাহলে ফুরিয়ে যাবে। সারারাত বুঝি শ্রুতির টেনশন করেছো। ঘুম হয়নি। সো স্যাড।

জ্যাক ফোনের ওপাশ থেকে এসব শুনে জ্যাকের ফোনের স্কিনে ভালো করে তাকালো। সেখানে স্পষ্ট ওঠা “শ্রুতি “।
তাহলে এ ফোন ক্লেভ এর কাছে কী করে? তাহলে শ্রুতি কী ক্লেভ এর কাছে? ক্লেভ ওর কোনো ক্ষতি করেনি তো।
কথাগুলো মনে মনে ভাবলো জ্যাক।
রুদ্ধ স্বরে বলল,

–ক্লেভ তুমি? শ্রুতি কোথায়? ওর ফোন তোমার কাছে কীভাবে?

–শ্রুতি আমার কাছে ফোন তো আমার কাছেই হবে তাই না? তুমি সারারাত কতো কষ্ট করে ওকে খুঁজতেছো। আর আমরা সারারাত কতো মজা করলাম,কত রোমান্টিক মুহূর্ত পার করলাম।শ্রুতি ইজ সো হট এন্ড সেক্সি।

জ্যাক এসব শুনে ক্রুদ্ধ হয়ে হাতদিয়ে গাড়ির ওপর একটি বাড়ি মারল। চোখ মুখ শক্ত করে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

–জ্যাক ভাষা ঠিক করো। নাহলে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না?

ওপাশ থেকে ক্লেভ ভীত কন্ঠে বলল,

–ও মা গো, ভয় পেয়ে গেলাম। কেউ বাঁচাও!
পরক্ষণেই আবার হেসে বলল,

–কে ভাষা ঠিক করবে তা নাহয় সময়ের সাথেই দেখা যাবে?জ্যাক তুমি আমাকে সবার সামনে, আমার মারলিওকে হত্যা করে কী বলেছিলে? সবার সামনে আমার দোষ দিয়েছিলে। আমাকে রেপিস্ট বলেছিলে ।মনে আছে? আজ না হয় একজন রেপিস্ট এর কাজ করি। কেমন হবে শ্রুতিকে রেপ করে ওই ভিডিওটা তোমাকে পাঠিয়ে দিলে?

বলেই ক্লেভের বিশ্রী হাসি শুনতে পেলো জ্যাক। জ্যাক স্বর কিছুটা নরম করল।এখন রাগ দেখানোর মানেই ক্ষতি। শ্রুতি এখন ক্লেভ এর কাছে। সত্যিই যদি খারাপ কিছু করে। জ্যাক অনুনয় করে বলল,

–প্লিজ ক্লেভ এরকম কিছু করো না।প্লিজ। তুমি যা চাও তাই দিবো।

–বাহহ!এই তো লাইনে এসেছো৷ এখন বাজে ৫ঃ০৫। তোমার হাতে ঠিক ১২ঘন্টা ঘন্টা সময় আছে। যদি তুমি শ্রুতিকে খুঁজে বের করে নিতে পারো তাহলে সে তোমার। নাহলে যা বললাম তাই করবো। বাট কোনো পুলিশের কাছে যদি গেছো তাহলে শ্রুতি সেখানেই শেষ।

জ্যাক আকুতির স্বরে বলল,

–না ক্লেভ প্লিজ শ্রুতির কিছু করো না। আমি পুলিশকে ইনফর্ম করবো না৷

ক্লেভ হাসতে হাসতে বলল,

–Good choice. Time start now.

বলেই খট করে কেটে দিলো। এদিকে জ্যাক ফোনটা হাতে নিয়ে, ক্লেভ, ক্লেভ করতে লাগলো।কিন্তু সারাশব্দ নেই। কারণ ক্লেভ অলরেডি কেটে দিয়েছো৷ জ্যাক আবার কল দিলো৷ কিন্তু তখন ফোন বন্ধ। জ্যাক গাড়ির সিটে মাথা এলিয়ে বলল,

–এরকম কেনো হলো শ্রুতি? তোমার সাথে কেনো ওরা এরকম করছে? তোমার তো কোনো দোষ নেই ।তাহলে কেনো?
কথাগুলো বলতে বলতে জ্যাকের চোখের নেত্র কোণ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে।

__________

এদিকে,
ক্লেভ জানালার পাশে বসে এতক্ষণ জ্যাকের সাথে কথা বলছিল।

–ক্লেভ!

পিছন থেকে কারো ডাকে ক্লেভের বুকটা কেঁপে উঠলো ৷ঘুরে তাকিয়ে দেখে জেসিকা দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে।
ক্লেভ একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল,

–ওমাহ!এই ভাবে কেউ ডাকে। আমি তো ভাবলাম যে জ্যাক এসে বুঝি আমাদের ধরলো।

জেসিকা বিরক্ত হয়ে বলল,

–ফাজলামো বন্ধ করো। কার সাথে কথা বলেছিলে এতক্ষণ?

ক্লেভ হেসে দিলো। একপা একপা করে বিছানায় পরে থাকা শ্রুতির নিথর দেহের দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলল,

–জ্যাকের সাথে কথা বলেছিলাম। একটু নুনের ছিটা দিয়ে দিছি।

জেসিকা এবার রাগান্বিত হয়ে ক্লেভের কাছে গিয়ে দুহাত চেপে ধরে থ্রেট এর সহিত বলল,

–বেশি বাড়াবাড়ি করো না ক্লেভ। যদি ধরা পরেছিতো___

ক্লেভ জেসিকার হাত দুটো আস্তে করে সরিয়ে দিয়ে নিজের পকেটে হাত রেখে বলল,

–ধরা পড়বো না ধরা সেই ব্যবস্হা করেছি। আর জ্যাককে ১২ঘন্টা সময় দিয়েছি। যদি এই ১২ঘন্টায় শ্রুতিকে খুজে বেরও করতে পারে তাহলেও শ্রুতিকে বাঁচাতে পারবে না। হা হা,

————-

ঘড়ির কাটা ঘুরতে ঘুরতে বিকাল ৪টায় এসে পৌঁছালো। কিন্তু জ্যাক শ্রুতির কোনো খোঁজ পাইনি। আর মাত্র ১ঘন্টা বাকি আছে। সিয়াটল শহরের সব জায়গা খুঁজেছে। কোথাও পায় নি। লোকদের ছবি দেখিয়েও জিজ্ঞেস করেছে তবুও কোনো খোঁজ পাইনি। কী করবে এখন জ্যাকের মাথায় আসছে। গভীর অবসাদে মনটা ঢেকে আছে নিবিড় নৈরাশ্যে৷ পাশ থেকে এলিশা বলল,

–কিছুই মস্তিষ্কে আসছে না জ্যাক।কী করবো? কোনো জায়গাই তো বাদ রাখেনি। তাহলে কোথায় শ্রুতি? ওরা কোথায় নিয়ে গেলো। আর মাত্র ১ঘন্টা ঘন্টা আছে। যদি ওরা সত্যি সত্যি শ্রুতিকে ____

পুরো কথা শেষ করার আগেই জ্যাক টেবিলে প্রবল প্রতাপে চাপড় দিয়ে এলিশার দিকে তর্জনী আঙ্গুল উঠিয়ে উচ্চস্বরে বলল,

–জাস্ট সাট আপ। আমার শ্রুতির কিছু হবে না। বুঝেছো? আজেবাজে কথা বললে এখানেই শেষ করে দিবো।
এলিশা একটা ঢোক গিলল। জ্যাকের চোখ রক্তবর্ণ ধারণ করেছে রাগে। পাশ থেকে লিও জ্যাকের পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বলল,

–শান্ত হও,জ্যাক। এখন রাগ করে কিছু হবে না। আমাদের শ্রুতিকে খুজতে হবে। ঠিকই ওকে খুঁজে বের করবো দেখো৷

এই সময় আরিচ দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করলো। সবাই সেইদিকে তাকালো। এতক্ষণ ওর জন্য সবাই অপেক্ষা করছিলো৷ ও নাকি কী কাকে নিয়ে আসবে, যে খুজতে সাহায্য করবে?আরিচের সাথে আরও একটা লোক আছে। সবাই উঠে দাড়ালো। কিন্তু জ্যাক আর লুসি দাড়ালো না। সে মাথা নিচু করে বসে রইল।
আরিচ লোকটাকে সবার সামনে নিয়ে এসে বলল,

–এই হলো আমার চাচা। এই খানের পুলিশ ডিপার্টমেন্টের অফিসার৷ আমি কালকেই তাকে শ্রুতির ঘটনা খুলে বলেছি। সে তখন কিছু কাজের জন্য নিউইয়র্ক ছিলো৷ আমাদের বিপদের কথা শুনে তাড়াতাড়ি ফিরে আসল। সে আমাদের হেল্প করতে পারে।

লুসি লোকটার দিকে তাকালো। বেশি বয়স না লোকটার৷ একটা কমলা কালার গেঞ্জি পড়া , সাথে প্যান্ট৷ সে যে পুলিশ তা বোঝা যায় না। লুসি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,

–আর মাত্র ১ঘন্টা আছে। এই ১ঘন্টায় আর কী হেল্প করবে?

লিও পাশ থেকে বলল,

–চুপ করো লুসি। এই বিপদের সময় প্রতিটা সেকেন্ড মূল্যবান। ১ঘন্টা মানে অনেক কিছু।স্যার আপনি বসুন৷

এবার জ্যাক দাড়ালো। ক্রুদ্ধ স্বরে বলল,

–আরিচ তোমাকে বলেছিলাম না যে ক্লেভ পুলিশকে ইনফর্ম করতে মানা করেছি,জানলে শ্রুতির ক্ষতি করবে ।তারপরও তুমি কেন,,,,

পাশ থেকে লোকটি বলল,

–শান্ত হও জ্যাক। তোমার অবস্থা বুঝতে পারছি৷ আমাকে সব আরিচ খুলে বলেছে। কিডন্যাপররা এইরকম বলবে।তোমরা এখনও ছোট। তাই পুলিশকে না বলে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকলে তো হবে না।

জ্যাক লোকটির কথা শুনে বসল। সত্যি তাদের এখন পুলিশের হেল্প নেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। মাথায় হাত দিয়ে জ্যাক বলল,

–সারারাত খুঁজলাম, সারাদিনও খুঁজলাম কোথাও পেলাম না ৷ ১ঘন্টায় আমরা আর কী করবো?

লোকটি বলল,

–আমার নাম জর্জ। এইখানে একজন পুলিশ অফিসার। যাইহোক কেসের ব্যাপারে আলাপ করা যায়।
জ্যাক, আরিচ আমাকে সব বলেছে তোমার, শ্রুতি আর ক্লেভ সম্পর্কে। আমার খুব খারাপ লাগছে এই ভেবে শ্রুতির কোনো দোষ না থাকা সত্ত্বেও একটা নিষ্পাপ মেয়ের এখন এই অবস্হায়। কিন্তু আমার একটা বিষয়ে সন্দেহ হচ্ছে?

জ্যাক বলল,

–কী?

–ক্লেভ তোমাদের মতোই। এতোবড় একটা কাজ ও একা করার সাহস পাবে না। আমার মনে হয়, এর পিছনে আরও কেউ আছে। শ্রুতির ক্লেভ ছাড়া আর কারো সাথে শত্রুতা ছিলো? আই মিন তোমাদের সাথে আর কারো,,,
এলিশা বলল,

–না আংকেল।শ্রুতি এই খানে এসে আমাদের সাথে থেকেছে। ওকে তো কারো সাথে কখনো ঝগড়া বা কোনো খারাপ কিছু করতে দেখেনি। অনেক ভালো মেয়ে ছিলো।

–ওহহ!জ্যাকের কী মনে হয় এই বিষয়ে?

জ্যাক কিছুক্ষণ ভেবে বলল,

–আমারও মনে হয় না যে শ্রুতির সাথে কারো খারাপ রিলেশন আছে। ইনফেক্ট ক্লেভের সাথেও তো খারাপ সম্পর্ক ছিলো না। আমার কারোনেই তো এরকম হলো।
বলেই জ্যাক নিজের চোখের পানিটুকু মুছল।
পাশ থেকে লুসি বলল,

–আছে একজন।

সবাই কৌতুহল নিয়ে বলল,

–কে?

–জেসিকা। ও অনেকবার শ্রুতির সাথে খারাপ বিহেভ করেছে। ও শ্রুতিকে দেখতেই পারে না। কারণ জ্যাক শ্রুতিকে লাভ করতো বলে।ওর সাথে আবার জ্যাকের এনগেজমেন্ট ঠিক করা ছিল৷ জ্যাক শ্রুতিকে ভালোবাসতো বলে জেসিকাকে বাগদত্তা হিসেবে মানে না তা সবার সামনে বলেছে। আমার মনে হয়, ও আছে।

লিও বলল,

–হুম ঠিক আমারও তাই মনে হয়। যে জেসিকার বাবা হেল্প করেছে এতে।

জর্জ বলল,

–ওকে গুড।আচ্ছা জেসিকা যে এই কিডন্যাপের সাথে জড়িত তা নিয়ে তোমাদের কাছে কোনো প্রমাণ আছে?

সবাই না সূচক মাথা নাড়ালো৷
জর্জ বলল,

–ওহহ, আচ্ছা। জ্যাক ক্লেভ তোমাকে ভোর ৫টায় কল করেছিল।সেইটার রেকর্ডিং আছে ফোনে।

জ্যাক ফোনটা বের করতে করতে বলল,

–দাড়ান দেখছি। হয়তো আছে৷ অধিকাংশ সময় আমার ফোনের রেকর্ডিং চালু করা থাকে। কিন্তু সেটা দিয়ে কী করবেন?

জর্জ বলল,

–তুমি দেও। এটা প্রমাণে কাজে লাগবে।

জ্যাক ফোনটা বের করে দেখতে লাগলো রেকর্ডিং হয়েছে কীনা।জ্যাক বলল,

–এই নিন।রেকর্ডিং হয়ে আছে।
ফোনটা জর্জ এর দিকে এগিয়ে দিলো।
মিস্টার জর্জ রেকর্ডিং টা চালু করে শুনতে যাবে তখন ফোনে কল আসলো। মিস্টার জর্জ জ্যাকের দিকে ফোনটা এগিয়ে দিল।জ্যাক ফোনটা হাতে নিয়ে বলল,

–ক্লেভ কল করেছে।

মিস্টার জর্জ বললেন,

–সবাই একদম চুপ করো। জ্যাক তুমি রিসিভ করো আর লাউন্ড স্পিকার দেও। আমরা যাতে শুনতে পারি।

জ্যাক কলটা রিসিভ করলে ওপাশ থেকে ক্লেভের হাসির শব্দ শুনতে পেলো,

–কী জ্যাক? শেষমেষ জ্যাক হেরে গেলো নাকি? কিন্তু জ্যাক হেরে গেলে তো শ্রুতি শেষ। বলেই আবার হাসতে লাগলো।
জ্যাক দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

–জ্যাক হারতে শেখেনি।

–বাবাহ!জ্যাক বড় বড় কথা বলছে আবার। তোমার হাতে আর মাত্র ৪৫মিনিট আছে। এই কয়মিনিটে তুমি কোথায় পাবে শ্রুতিকে?আর ৪৫মিনিট পর শ্রুতির লাশ তোমার কাছে পৌঁছে যাবে৷
জ্যাক কিছু বলতে নিবে তার আগেই শুনতে পেলো ওপাশ থেকে কেউ চিত্কার করে বলছে,

–ক্লেভ!

বলার সাথে বিকট একটা শব্দ হলো। জ্যাক কন্ঠটা শুনে সবাই চমকে উঠল। তার মানে লুসির ধারণা সঠিক। সবাই একে অপরের মুখের দিকে চাওয়াচাওয়ি করল। অতঃপর আরও কিছু শুনার প্রতিক্ষায় জ্যাক ফোনের স্কিনের দিকে তাকালো৷ এখনও কল কানেক্টেড আছে। ওপাশ থেকে শুনতে পেলো মেয়েলি কন্ঠে কেউ চেচিয়ে বলছে,

–আবার তুমি কল করেছো? তুমি কী চাও আমরা ধরা পরি? তোমাকে দিয়ে কোনো কাজ হবে না।
বলেই মেয়েটির পায়ের শব্দ শুনতে পেলো। দপ দপ পা ফেলে মনে হয় ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।

ক্লেভের কন্ঠে শুনলো,

–আরে জেসিকা দাড়াও। কথাটা তো শুনো৷

তারপর পায়ের শব্দ শুনতে পেলো। মনে হয়, সে জেসিকার পিছনে চলে গেছে।
মিস্টার জর্জ ইশারায় জ্যাকের ফোনটা চাইলেন।এখনও কল কানেক্টেড আছে৷ হয়তো সেই সময়ের বিকট শব্দটা ফোন পরার।

জ্যাক ফোনটা এগিয়ে দিলেন।

জ্যাক মৃদু কন্ঠে বলল,

–লুসির ধারণা ঠিক৷ ক্লেভ একা নয় এই কাজের সাথে জেসিকাও জড়িত।

মিস্টার জর্জ বললেন কিছুক্ষণ মোবাইল স্ক্রল করে বললেন,

–গাড়ি বের করো। ওদের লোকেশন ট্রাক করেছি। এখানে থেকে ২০কিমি দূরে আছে। এই রাস্তা পাহাড়ি এলাকার দিকে। এখানে থেকে যেতে ৪৫মিনিট লাগবে। তাড়াতাড়ি চলো। আমাদের হাতে সময় খুব কম।

সবাই একে একে বেরিয়ে পড়ল গাড়ি নিয়ে।

গাড়ি খুব দ্রুত চালিয়ে পাহাড়ি এলাকার দিকে যেতে থাকলো। এটা সিয়াটল শহরের শেষের দিকে।
নির্দিষ্ট জায়গার আগেই গাড়ি থামালো। রাস্তা গুলো অনেক সরু। আর পাশে জঙ্গল। গাড়ি যাবে না। নেটওয়ার্ক পাওয়াও খুব কঠিন।
জ্যাক নিজের হাতের ঘড়ি দেখতে দেখতে বলল,

–আমরা সময়ে আগেই পৌঁছে ছি৷ এখনও আমাদের হাত ১০মিনিট আছে। কিন্তু আশেপাশে তো কোনো বাড়ি দেখছি। অনেক নির্জন জায়গাটা।

মিস্টার জর্জ বললেন,

–এখনও আরও ১০মিনিটের মতো লাগবে। এই পাহাড়ি পথ ধরে নামতে হবে ওদের লোকেশন জঙ্গলের ভিতর দেখাচ্ছে। সবাই ধীরে ধীরে নামো। কোনো শব্দ করবে না ওকে?

সবাই ধীরে ধীরে নামলো। চারপাশে গাছ আর গাছ। গহীন জঙ্গল। চলার সাথে সাথে নিচে শুকনো পাতার মড়মড় শব্দ হচ্ছে। লিও বলল,

–অনেক গহীন জঙ্গল। এখানে কোথায় খুঁজবো শ্রুতিকে। আশেপাশে তো কোনো বাড়িও দেখছিনা।

দৈবাৎ সকল কে চমকে মিস্টার জর্জ বললেন,

–কল ডিসকানেকটেড!

মিস্টার জর্জ এর কথা শুনে সবাই হতভম্ব হয়ে গেল।দিশেহারা হওয়ার মতো অবস্হা। কী করবে এখন?জ্যাক রাগে পাশে থাকা গাছে জোরে লাথি মারলো।

–এখন কী হবে? শেষ মুহূর্তে এসে কী সব শেষ গেল। এখন কী করবো আমরা ?
#ভিনদেশী
#আদ্রিয়ানা নীলা
#পার্ট ঃ৪৪

ও.টি’র দরজার পাশে মাথা ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে জ্যাক। এক রকম অনুভূতিহীন পাথর হয়ে গেছে।শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ও.টি’র দিকে।পাশে থাকা চেয়ারে লুসি বসে কান্না করছে। এলিশা ওকে এটা ওটা বলে শান্তনা দিচ্ছে। লিও, আরিচ অস্হির হয়ে পায়চারি করছে। তারা নিজেদের মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। শ্রুতি তাদের আপন কেউ না হলে নিজেদের বোনের মতো ট্রিট করেছে সব সময়। কীভাবে শান্ত থাকবে তারা? শ্রুতি কেমন অবস্হায় আছে তা তারা জানে না।অথচ দু ঘন্টা হতে চলেছে কিন্তু ভিতর থেকে কেউ বের হচ্ছে না৷ জ্যাককে নিয়েও টেনশন হচ্ছে।একেবারে বিধস্ত লাগছে তাকে। শ্রুতি হাসপাতালে নিয়ে আসার পর ওই এক জায়গায়ই বসে আছে। কথা বলছে না, নড়াচড়া করছে না তার দৃষ্টি শুধু মাত্র ও.টির দরজার দিকেই।
এমন সময় লুসির ফোনে কলের শব্দ শোনা গেলো। সবাই সেদিকে তাকালো। কিন্তু জ্যাক সে তাকালো না। লুসি ফোনটা হাতে নিয়ে ভীত কন্ঠে বলল,

–শ্রুতির বোন কল দিয়েছো? কী বললো এখন?

আরিচ বললো,

–রিসিভ করো। কিন্তু শ্রুতির এই অবস্হার কথা কিছু বলো না। তারা ওতো দূরে বসে টেনশন করবে।

লুসি ফোনটা রিসিভ করে লাউন্ড স্পিকার দিলো। ওপাশ থেকে সোহার চঞ্চল কন্ঠস্বরে বলছে,

–লুসি, শ্রুতি কোথায়? ফোন বন্ধ করে রেখেছে কেনো? কতক্ষণ ধরে কল দিচ্ছি৷ ফোন বন্ধ।

লুসি স্হির হয়ে বসে আছে৷কন্ঠস্বর রুদ্ধ হয়ে আছে। কী উত্তর দিবে সোহার কথার?শ্রুতির এই সকরুণ অবস্থার কথা কীভাবে বলবে? তাদের উপর ভরসা করে এখানে পড়তে পাঠিয়েছিল আর আজ তারা তাদের দ্বায়িত্ব পালনে ব্যর্থ। লুসির কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখে সোহা এবার অস্হির হয়ে বলল,

— কী হলো লুসি কথা বলছো না কেন?শ্রুতির কিছু হয়েছে? বলো।

লুসি আঁখি দিয়ে কয়েকফোটা লোর (অশ্রু) গড়িয়ে পড়ল। পাশ থেকে এলিশা লুসির হাত শক্ত করে ধরল। লুসি সেইদিকে তাকালো। এলিশা চোখের ইশারায় শান্তনা দিয়ে কথা বলতে বলল।লুসি নিজের চক্ষুর অশ্রুবারি টুকু মুছে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,

–শ্রু-তি- শ্রুতি ঠি-ক আছে৷ ও এখন পড়তে আছে দরজা বন্ধ করে। তাই হয়তো ফোন বন্ধ করে রাখছে। আমি একটু আগে গিয়ে দরজা খুলতে বললে বলল, তাকে ডিস্টার্ব না করতে। ওর পড়া শেষ হলে আমি ওকে তোমার সাথে কথা বলতে বলবো ৷
বলেই ওপাশ থেকে আর কোনো উত্তরের আশা না করে ফোনটা খট করে কেটে দিলো লুসি। মুখে হাত দিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলো।

পাক্কা দু ঘন্টা পর ও.টির দরজা খুলে দু জন ডাক্তার বের হলো নিজেদের ভিতর কথা বলতে বলতে। ডাক্তারকে দেখে সবাই উঠে দাড়ালো৷ জ্যাক দ্রুত সেখান থেকে উঠে ডাক্তারের সামনে গেলো।ব্যাকুল হয়ে জিজ্ঞেস করল,

–শ্রুতি ঠিক আছে তো? ওর কিছু হয় নি তো?

ডাক্তার দুজন কথার উত্তর না দিয়ে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো। হয়তো পেসেন্ট কার তা জিজ্ঞেস করছে। জ্যাক তার কথার উত্তর না পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে পুরুষ ডাক্তারের কলার চেপে ধরল। ক্রুদ্ধ কন্ঠে বলল,

–কথার উত্তর দিচ্ছেন না কেন? শ্রুতি ঠিক আছে বলুন? দু ঘন্টা ধরে কী করেছেন আপনারা যদি ওর কোনো ক্ষতি হয়,আমি ছাড়বো না আপনাদের?

পাশের থাকা মহিলা ডাক্তারটি ভীত হয়ে বলল,

–আরে কী করছেন আপনি? ছাড়ুন।

আরিচ জ্যাকের অবস্হা দেখে এগিয়ে এলো। জ্যাকের কাছ থেকে ডাক্তারকে ছাড়িয়ে বলল,

–সরি ভেরি সরি। ওর এখন মাথা ঠিক নেই তাই এরকম করেছে। পেসেন্ট আমাদের। প্লিজ বলুন সে ঠিক আছে কীনা?

পুরুষ ডাক্তারটি নিজের কলার ঠিক করে থমথমে গলায় বলল,

–পেসেন্টের অবস্হা বেশি ভালো না। ২৪ ঘন্টার আগে কিছু বলা যাচ্ছে না।পেসেন্টকে হাই ডোজের মারাত্মক ড্রাগস দেয়া হয়েছে।

লুসি আঁতকে ওঠে বলল,

–হোয়াট ড্রাগস?

পাশে থাকা মহিলা ডাক্তার বলল,

–হ্যাঁ, শরীরে মারাত্মক ড্রাগস পাওয়া গেছে। এই ড্রাগস পুরো শরীরে একবার প্রবেশ করলে রোগীকে আর বাঁচানো যায় না। ধীরে ধীরে ড্রাগসটি মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়।

জ্যাক এসব শুনে নিজের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলার আগে লিও এসে পিছন থেকে ধরে।
আরিচ বলল,

–এখন কী অবস্হা ডাক্তার?বাঁচবে তো?

পুরুষ ডাক্তারটি বলল,

–আর একটু দেরি হলে বাচানো যেতো না। কারণ ড্রাগস পুরো শরীরে তখনো ছড়ায় নি। আমরা ড্রাগস এর প্রতিষেধক দিয়েছি তবুও বাচবে কিনা আমরা নিশ্চিত না ২৪ঘন্টার আগে বলা যাবে না। যদি বেচেও যায় ড্রাগসের সাইড ইফেক্ট পড়তে পারে। কারণ ড্রাগসটা অনেক মারাত্মক।

আরিচ বললো,

–এখন কী দেখা করা যাবে?

মহিলা ডাক্তারটি বললো,

–হ্যাঁ, এখন অবজারভেশনে রাখা হয়েছে৷ দেখে আসতে পারবেন তবে বেশি ভীর করবেন না। এতে পেসেন্টের ক্ষতি হবে। একজন একজন করে৷

বলেই তারা চলে গেলো।

লিও জ্যাকের কাঁধে হাত রেখে বলল,

–জ্যাক টেনশনের কিছু নেই। শ্রুতি ঠিক হয়ে যাবে৷ তুই গিয়ে দেখে আয়।

জ্যাক আর এক মুহূর্ত দেরি করল না। একপ্রকার ছুটে গেলো কেবিনের দিকে।

———

কেবিনে ডুকতেই জ্যাক থম মেরে দাড়িয়ে যায়। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে অদূরে শুয়ে থাকা শ্রুতির দিকে।শ্রুতি দেখে মনে হচ্ছে সে এই ধরনী সকল দৌরাত্ম্য, ঐশ্বর্য, অবসাদ ভুলে নিশ্চিন্তে শুয়ে আছে। জ্যাকের মনে পড়ে গেলো দু ঘন্টা আগের কথা।

———-

মিস্টার জর্জ যখন বললেন, কল ডিসকানেক্টেড তখন সকলের বুকটা কেঁপে উঠল। কী করবে এখন?
মিস্টার জর্জ বললেন,

–এখন টেনশন বা রাগান্বিত হওয়ার সময় নয়৷ আমাদের এখন শ্রুতিকে খুজে বের করতে হবে। ওরা এই জঙ্গলেই কোথাও আছে।

লিও অসহায় ভাবে বলল,

–এতো বড়ো, গহীন জঙ্গলে কোথায় খুঁজবো?

–সবাই একসাথে আমার পিছনে পিছনে আসো। কেউ কোনো শব্দ করবা না তাহলেই বিপদ।

মিস্টার জর্জ সামনে এগিয়ে গেলেন। সবাই যতো সামনে এগোতে থাকলো ভয় যেনো ততো বাড়তে থাকলে৷ জঙ্গল অনেক গহীন, হাঁটার সাথে সাথে শুকনো পাতার মড়মড় শব্দ হচ্ছে। কিছুদূর যাওয়ার পর মিস্টার জর্জ ফিসফিস করে বললেন,

–ঐ দেখো সামনে হালকা হালকা একটা জরাজীর্ণ বাড়ি। আমার মনে হয় ওরা এখানে।

সবাই সেই দিকে তাকালো।

একটা গাছের আড়ালে বাড়িটা।গাছটার কারণে বাড়িটাকে ঠিক ভাবে দেখা যাচ্ছে না। মনে হয় এটাই বাড়ির সুরক্ষা কবজ।
সবাই ধীরে ধীরে চুপিচুপি করে এগিয়ে গিয়ে গাছের পিছনটাতে লুকালো। মিস্টার জর্জ ফিসফিস করতে বললেন,

–কোনো গুন্ডাদের তো দেখছি না। এই বাড়িতে কেউ কী পাহারা দার নেই।যদি ক্লেভ আর জেসিকা এইখানে শ্রুতিকে নিয়ে আসে তাহলে অবশ্যই বাড়িটার চারপাশে পাহারাদার থাকবেন।

এমন সময় শুনতে পেলো কেউ বলছে,

–তুই এইখানটা দেখিস৷কাউকে আস্তে দেখলে সোজা উপরে পাঠিয়ে দিবি। ধরা পড়লে স্যার মেডাম আস্ত রাখবে না আমাদের। আমি একটু বাথরুম সেরে আসি। খুব জোরে চাপ দিয়েছে।
বলেই সে গভীর জঙ্গলের ভিতরে চলে গেলো।

সবাই গাছের ফাক থেকে দৃশ্যটা দেখলো। এখন একজন লোক দরজার সামনে পাহারা দিচ্ছেন। জরাজীর্ণ বাড়িটা চারপাশে কাঠ দিয়ে বেড়া দেয়া৷
মিস্টার জর্জ জ্যাকের কানে কানে ফিসফিস করে বললেন,

–জ্যাক এইটাই উপযুক্ত সময়৷ তুমি গিয়ে ওইটারে খতম করে দিয়ে আসো। সাবধান কেউ যেনো টের না পায়।

জ্যাক গাছের পিছন থেকে বের হয়ে কাঠের বেড়ার পাশে লুকালো। লোকটা যখন পিছন দিকে তাকালো, তখন জ্যাক গিয়ে লোকটার মুখ চেপে ধরে গাছের পিছনে নিয়ে আসলো। অতঃপর নিজের শার্টের পিছন থেকে ক্লোরোফর্ম টা বের করে লোকটার মুখে স্প্রে করে দিলো।
এইদিকে সবাই অবাক হয়ে জ্যাকের দিকে তাকিয়ে আছে,

লিও বিস্মিত হয়ে বলল,

–ও মাই গড, জ্যাক তুমি ক্লোরোফর্ম পেলা কোথায়?

জ্যাক মুখে আঙ্গুল দিয়ে ইশারায় চুপ থাকতে বলল।ফিসফিস করে বলল,

–আমার গাড়িতে রাখা ছিলো। তাই নিয়ে আসলাম। এটা অনেক কাজে দিবে। শ্রুতি এইখানে আছে আমি সিওর। আমাদের ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে হবে। তোমরা কয়েকজন এই খানে থাকো।কেউ যদি পালানোর চেষ্টা করে তাহলে ধরবে। আমি, মিস্টার জর্জ, আরিচ আমরা ভিতরে যাই। ওকে?

সবাই মাথা নাড়ালো।

অতঃপর জ্যাকরা একে একে বাড়িটার দিকে এগিয়ে গেলো। গ্যাটের কাছে আসতেই থেমে গেলো।পাশ থেকে উকি দিয়ে দেখলো কেউ আছে নাকি। তিনজন বন্দুকধারী বাড়ির আঙ্গিনায় পাহারা দিচ্ছেন।

মিস্টার জর্জ সবাইকে একটা বুদ্ধি দিলেন কী করতে হবে। অতঃপর তিনি, আরিচ, লিও বাড়ির বাম দিকটায় চলে গেলেন।
জ্যাক মিস্টার জর্জের দেয়া বুদ্ধিতে নিজের পা দিয়ে ধপ ধপ আওয়াজ করল। বাড়ির ভিতর থেকে একজন লোক বলে উঠল,

–কে ওখানে? কে?
বলেই বাহিরের দিকে এগিয়ে আসলো।

জ্যাক কন্ঠস্বর শুনেই সেও বাড়ির বামদিকটায় গেলো।
কিছুক্ষণ পর একটা লোকটা, কে কে করতে করতে গ্যাটের বাহিরে আসলো। তারপর এদিক এদিক তাকালো৷কাউকে না দেখে যখন যাওয়া ধরবে তখন জ্যাক গিয়ে পিছন থেকে মুখ চেপে ধরে বাড়ির বাম দিকটায় নিয়ে আসলো। এমন ভাবে নিয়ে আসলো যেন কেউ টের না পায়, কোনো শব্দ না করে। তারপর লোকটার মুখে ক্লোরোফর্ম স্প্রে করে দিলো। লোকটা সেইখানে অজ্ঞান হয়ে পড়ে রইল। মিস্টার জর্জ বললেন,

–দুইটা শেষ হলো। আমার মনে হয়, বাড়িটা ভিতর বেশি গার্ড নেই।

–হুম আমারও তাই মনে হয়। এতে আমাদের ই সুবিধা হবে। কিন্তু এভাবে কতক্ষণ ধরে কয়টাকে মারবো।

মিস্টার জর্জ বললেন,

–হুম আমাদের এইরকম করে করলে অনেক সময় লাগবে। ভিতরে প্রবেশ করতে হবে৷ কিন্তু সাবধান শত্রুপক্ষ যেনো টের না পায় তাহলে শ্রুতির কিন্তু ক্ষতি করবে এবং তারা পালিয়ে যাবে।

অতঃপর সবাই একে একে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে চুপচুপি পিছন থেকে বাড়ির আঙ্গিনায় আর দুজন গার্ড মুখ চেপে ধরল। জ্যাক একজনার মুখে ক্লোরোফর্ম স্প্রে করে দিলো। আর মিস্টার জর্জ যেটাকে ধরেছেন তার পিছন দিয়ে মাথায় একটা বাড়ি মারলেন। দুজন ওইখানে অজ্ঞান হয়ে গেলো। অতঃপর তারা বাড়ির এক এক টা দরজার কাছে গিয়ে খুজতে লাগলো। কিন্তু কোনো রুমেই পেলো না। হঠাৎ তারা কারো পায়ের শব্দ শুনতে পেলো।ধরা পড়ার আগে সবাই পাশে থাকা একটা রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো৷
মিস্টার জর্জ বললেন,

–সব রুম ই তো খুঁজলাম কিন্তু কোথাও পেলাম না। শ্রুতি কী তাহলে এইখানে নেই?

লিও ভেবে বলল,

–হুম সব গুলো রুম খুজেছি । কোথায় নেই৷ এখন কী করবো৷আর বাইরে তো মনে হয় পাহারাদার আছে। এই রুম থেকেও তো বের হতে পারবো না।

এই সব আলোচনার মাঝে দৈবাৎ জ্যাক বলে উঠল,

–সবাই চুপ কর। এই পাটাতনের নিচ থেকে আওয়াজ আসছে।

সবাই চুপ করল। জ্যাক নিচে বসল। অতঃপর মেঝেতে মাথা ঠেকিয়ে শোনার চেষ্টা করল এর নিচে কিছু আছে নাকি।

ক্লেভ বলছে,

–জেসিকা আর ৫মিনিট বাকি আছে ৫টা বাজতে। দেখেছো জ্যাক খুজে পেলো না শ্রুতিকে। খামোখা টেনশন করেছিলে তুমি।

জেসিকা বলল,

–তা আমি জানতাম। ৫টার আর অপেক্ষা করতে হবে না। ওকে এখনি মেরে ফেলো। জ্যাকের আশা বাদ দেও। ও খুঁজে পাবে না।

ওদের কথোপকথন সবাই শুনতে পেলো। জ্যাক উঠে দাড়িয়ে বলল,

–ওরা এই পাটাতনের নিচে আছে৷ কিন্তু আমরা এখন পৌছাবো কী ভাবে নিচে। শ্রুতিকে শেষ করে দেবার কথা বলছে। আমরা এখন পৌছাবো কীভাবে?

মিস্টার জর্জ জ্যাকের পিঠে হাত রেখে বললেন,

–জ্যাক শান্ত হও। এই খানেই কোনো সুরঙ্গ আছে। যেটা দিয়ে নিচে প্রবেশ করা যাবে। খোজো সবাই।

রুমের আনাচে-কানাচে সবাই খুঁজতে লাগলো। হঠাৎ লিও কোনো কিছুর সাথে পা আটকে পরে গেলো৷বেশি শব্দ হয়নি। সবাই লিওর কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল,

–কী হয়েছে লিও? পড়ে গেলা কীভাবে?

লিও নিজের পায়ে হাত দিয়ে ধরে বললো,

–এইটার সাথে উষ্ঠা খেয়ে পড়ে গেছি।

সবাই মেঝের দিকে তাকালো লিওর দেখানো জায়গাটায়। সবাই জায়গাটা দেখে অবাক হলো৷ মেঝের বাকি সব জায়গা গুলোর চেয়ে এটা অনেকটা উঁচু এবং ঢাকনার মতো । জ্যাক বলল,

–আমার মনে হয়, এইটাই নিচে নামার পথ। খোলার চেষ্টা করো।

সবাই হাত দিয়ে জাপটাকে খোলার চেষ্টা করলো। খুলেও গেলো।সিড়ি দেয়া আছে।সিড়ির নিচে একটা রুম। রুমটায় কেউ নেই৷ শব্দ আসছে পাশের রুম থেকে। সবাই একে একে নিঃশব্দে সিড়ি বেড়ে নিচে নামলো।
বিশাল বড়ো একটা রুম। পাশে আরও একটা রুম আছে।সবাই বুঝতে পারলো ক্লেভ, জেসিকা সেই রুমেই আছে সেই খান থেকে তাদের কথোপকথনের শব্দ আসছে। মিস্টার জর্জ ফিসফিস করে বললেন,

–ওরা ওই রুমটায় আছে।আমি আর জ্যাক যাচ্ছি। আরিচ আর লিও তোমরা দরজার পাশে লুকিয়ে থাকবা। ভিতর থেকে কেউ বের হয়ে পালাতে চেষ্টা করলেই ধরবা।

ক্লেভ একটা গান হাতে নিয়ে শ্রুতি দিকে এগিয়ে গেলো।গানটায় যখনি প্রেস করতে যাবে তখনি গুলির শব্দ হলো৷ ক্লেভের হাত থেকে গানটা পরে গেলো৷ সে নিচে বসে পড়ল। মিস্টার জর্জ তার হাতে গুলি করে দিয়েছে৷ জেসিকা দরজার দিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠলো। জ্যাক এসে গেছে৷ জেসিকা জানালা দিয়ে পালাতে নিলে মিস্টার জর্জ জেসিকার পায়ে গুলি করল। জেসিকাও আর পালাতে পারলো না। সে পায়ে হাত দিয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগলো। জ্যাকের নজর পড়লো খেটে শুয়ে থাকা শ্রুতির দিকে।একেবারে নিস্তেজ হয়ে শুয়ে আছে৷ মুখটা কেমন ফ্যাকাসে হয়ে আছে। জ্যাক স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে রইল। কী অবস্হা হয়ে গেছে মেয়েটার?মিস্টার জর্জ বললেন,

–তুমি শ্রুতিকে নিয়ে হাসপাতালে যাও৷ আমার মনে হয়, ওর তেমন কিছু হয় নি,কোনো ক্ষতি হয়নি। অজ্ঞান হয়ে গেছে হয়তো ভয়ে৷ আমি ওদের ব্যবস্থা করছি৷

———

জ্যাকের এসব কথা ভেবে চোখের কোণে পানি জমলো। তারা কী ভেবেছিলো হলো কী? এতো বড়ো ক্ষতি যে ক্লেভ আর জেসিকা করতে পারে তাদের কোনো আন্দাজ ছিলো না। জ্যাক চোখটা হাতের পিঠ দিয়ে মুছে শ্রুতির পাশে বসলো। মুখে অক্সিজেন মাক্স লাগানো আছে আর এক হাতে স্যালাইন। জ্যাক শ্রুতির কপালে ভালোবাসার পরশ ছুঁইয়ে দিলো৷ নিজের হাতটা ধীরে ধীরে শ্রুতির হাতের উপর রাখলো।
অস্পষ্ট স্বরে বলল,

–শ্রুতি!

জ্যাক শ্রুতির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। ভাঙ্গা কন্ঠে বলে ওঠে,

–শ্রুতি তুমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠো। তুমি পণ করেছিলে কখনো ছেড়ে যাবে না তাহলে আজকে তোমার সাথে এই রকম হলো কেন? শ্রুতি তোমার এই অবস্থার জন্য যারা দায়ী তাদের কে আমি ছাড়বো না। ওই জেসিকা আর ক্লেভ সবচেয়ে কঠিন শাস্তির ব্যবস্হা করবো তোমাকে ছুয়ে প্রতিজ্ঞা করলাম।

আরও কিছুক্ষণ এভাবে শ্রুতির মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে আর হাতে ঠোঁটের উষ্ণ পরশ ছুঁইয়ে বেরিয়ে গেলো হাসপাতাল থেকে৷

চলবে……

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here