#মন_পাড়ায়
#পর্ব_৪৯
#নিলুফার_ইয়াসমিন_ঊষা
রোমা বেগম বললেন,
“অর্ক বিয়ের দিন এতকিছু করে ঝিনুকের বিয়েটা ক্যান্সেল করেছে আর তোর সাথে ঝিনুকের বিয়ে করিয়েছে৷ শুধুমাত্র এইজন্য যে তুই দুইজনের জীবন নষ্ট করতে পারিস? ঝিনুকের খালু নিজের মান সম্মান সব ভুলে শুধুমাত্র তোদের জন্য এতকিছু করতে সাহায্য করেছে। তার পরিণাম তালাক?”
ইকবালও সৈকতের মা’য়ের কথায় সায় দিয়ে বলে,
“ঐটাই আজকালকার পোলাপানরাও না আন্টি এখন বিয়েকেও সম্পর্কের মতো মনে করেছে৷ এই ব্রেকাপ করলো আর এই প্যাচ-আপ।”
সৈকত ভ্রু কুঁচকে তাকায় ইকবালের দিকে। বলে,
“তোরে কেউ অতিরিক্ত কথা বলতে বলসে? নিজে যেমন আশি-কাইল্লা বুড়া।”
সাথে সাথে রোমা বেগম সৈকতের কাঁধে থাপ্পড় মেরে বলল,
“ভুল কী বলসে ও? বিয়েকে খেলনাই ভেবে রাখছিস। আমি যখন জানলাম যে তুই ঝিনুককে ভালোবাসিস, ওর জন্য এতকিছু করেছিস আর এইসব অর্ককে জানালাম তখন ও কত কষ্টে বিয়ের একরাত আগে…..”
সৈকত তার মা’য়ের কথা কেটে বলল,
“এক মিনিট। এইসব তুমি জানলে কীভাবে?”
প্রশ্নটা শুনে মা একটু চুপ করে গেলেন। আড়চোখে বারবার ইকবালের দিকে তাকাতে শুরু করলেন। সৈকত সন্দেহজনক দৃষ্টিতে ইকবালের দিকে তাকাতেই ইকবাল অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলো। সে উঠে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“তোকে আমি আজ কি কিরব নিজেও জানি না। তুই না প্রমিজ করছিলি কাউকে বলবি না?”
ইকবাল উঠে এক লাফে সৈকতের মা’য়ের পিছনে যেয়ে লুকালো আর বলল,
“আমি নিজের প্রমিজ রাখসি। একটা কথাও বলি নি শুধু কাগজে লিখে দিয়েছি।”
কথাটা শুনতেই আরও মেজাজ বিগড়ে যায় সৈকতের। সে ইকবালের পিছনে যেতে নিলেই তার মা হাত ধরে বলল,
“খবরদার ওকে কিছু করবি না। ও একদম ঠিক করেছে।”
“মা এইসব না করলেই তো এখন এ-সব ঝামেলায় কাউকে পড়তে হতো না। ঝিনুক সুখে অন্যকোথাও সংসার করতে পারতো।”
“তুই নিশ্চিত ও অন্যকোথাও সুখে থাকত? আর দোষ তো ইকবালের না, তোর ও ঝিনুকের। তোরা দুইজন একে অপরকে বুঝতে চাইছিস না। ঝিনুকের মাঝে বুঝার ক্ষমতার অভাব আছে বুঝলাম কিন্তু তুই তো পারিস এই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে তাই না?”
সৈকত বসে পড়ে বিছানায়। হাঁটুর উপর দুই কনুই রেখে কপালে হাত রাখলো আর বলল,
“আর পারি না মা। আমি ক্লান্ত, আমি ভীষণ ক্লান্ত। আমি জানি আমাদের দুইজনের ভুল আছে। ওর অবিশ্বাস করা আর আমার ওকে অবিশ্বাস করার কারণ দেওয়া ভুলটা দুই জায়গাতেই। কিন্তু এই ভুলগুলো আর ঠিক করা সম্ভব নয়। যেখানে ওর আমার সাথে থাকতেও ঘৃণা লাগে সেখানে আমি ওকে চাইলেই তো এই বাঁধনে জোরপূর্বক বেঁধে রাখতে পারি না। তালাকটাই আমার কাছে এই মুহূর্তে সঠিক মনে হচ্ছে।”
সৈকতের কথা শেষ হওয়ার পরের মুহূর্তেই ইকবাল বলল,
“আন্টি এইসব পুরাই ভুলভাল বুঝাচ্ছে আপনাকে। ঝিনুকের সাথে তালাক তালাক করছে কারণ এই মহাপুরুষ চান না যে ঝিনুক তার সাথে এমন অনিশ্চিত জীবনে যুক্ত থাকুক।”
“বেশি কথা বলবি না কিন্তু।” সৈকত চেঁচিয়ে উঠে। সেদিকে ইকবালের ধ্যান নেই। সে তার কথা বলতে থাকল,
“ও আগেও ভেবে রেখেছিলো যখন বিনয় ও নূহার কথা সবার সামনে আসবে তখন ঝিনুককে জ্যোতির ব্যাপার জানাবে। আর মোহিনীও কয়দিনে বাংলাদেশে আসবে ওর সাথেও দেখা করাবে। কিন্তু হঠাৎ করে এতকিছু হওয়ার পর সৈকত চাচ্ছে না যে ওর সাথে থেকে ঝিনুকের সামনের জীবন নষ্ট হোক। ওর ক্যারিয়ারটাও এখন রিস্কে আছে। জ্যোতির বাবা তো রাজনীতিতে জড়িত জানেন আর এতকিছুর পর সম্ভবনা আছে যে ওর জার্নালিস্ট হওয়ায় বাঁধা পরবে। সৈকত বুঝছিলো সবকিছু ঠিক হওয়ার পর ঝিনুককেও যখন সব জানাবে তখন কয়দিন রাগ দেখানে তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু এর পূর্বেই এতকিছু হয়ে গেল। আজ সকালেও এই ছাগলটা বলছিলো যেখানে ওর নিজের থাকার ঠিকানা নেই সেখানে ও ঝিনুককে কীভাবে রাখবে? এই গাঁধাটার মাথা থেকে বোধহয় চলেই গেছিলো যে এ বাসাটা আমরা এখনো ছাড়ি নি। এই বাসাটা এখনো আছে। আবার গতকাল রাতেও বলছে ফ্রম ফিলাপের জন্য নিজে টাকা দিতে পারছে না, ঝিনুককে তাহলে কীভাবে সামনে পড়াশোনা করতে পারবে ও? আর ও চায় না ঝিনুকের পড়াশোনায় কোনো ক্ষতি হোক। ওর কথানুযায়ী যেখানে ওর নিজের জীবনে কী করবে তার ঠিক নেই আর ঝিনুকের এত দায়িত্ব কীভাবে নিবে। এর থেকে ভালো ঝিনুক ওর খালু ও খালার কাছে থাকুক। তছয় মাসের মধ্যে আমাদের পড়াশোনা শেষ হবে এবং জবের জন্য এপ্লাই করা হবে তখন ওর জব পেলে ঝিনুককে ছাড়বে না, নাহয়…….।”
ইকবাল একটানা এত কথা বলে হাঁপিয়ে গেল। সে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলল,
“এই আন্টি। আর কিছু মনে পড়ছে না।”
সৈকত ধমক দিয়ে বলল,
“তোকে আর কিছু মনে করার অবস্থায় রাখলেই না।”
“আন্টি দেখে কি হুমকি দেয়!”
ইকবাল সৈকতের মা’য়ের পিছনে লুকিয়ে বলে। মা উদাসীন মনে বলল,
“আমার ভুলের শাস্তি আজ তোর পেতে হচ্ছে।”
সৈকত তার মা’য়ের দিকে তাকিয়ে তার হাত নিজের হাতে নিয়ে বলল,
“মা এইসব ভুলে যাও। এইসব নিয়ে ভেবোনা।”
“তোর জায়গায় অন্যকেউ হলে তো কত কথা শুনাতো আর তুই……. যাই হোক, এইসব আর বলব না। শুধু এতটুকু বলব আমরা যাকে ভালোবাসি তাকে প্রতিটি অবস্থায় ভালোবাসি। এই’যে আমি পাগলের মতো আমার সব সুখ শান্তি ছেড়ে ওই লোকটার সাথে পালিয়ে গিয়েছিলাম।”
“আর এই জীবনে শুধু কষ্ট পেয়েছ। যার বিন্দুমাত্র আমি ঝিনুককে দিতে চাই না।”
“কিন্তু তুই তো ওই লোকটার মতো না বাবা। তুই তো
তার থেকে একদম উল্টো।”
“আমি ওই মানুষের কথা জানতে চাই না। আমাদের জন্য উনি মারা গেছেন আগেই। আমার বাবা একটাই, মাহমুদ সাহেব যেমনই হোক আমার বাবা। আর কারও পরিচয়ের প্রয়োজন নেই আমার। আর আমার নিজের পরিচয় করতেও উনার দয়ার প্রয়োজন নেই।”
মা মৃদু হেসে সৈকতের গালে হাত দিয়ে বলল,
“তুই জানিস ওই ব্যক্তি আমার জীবনটাকে জাহান্নাম তুল্য করে দিয়েছিলো অথচ সে আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর দিনগুলোও উপহার দিয়ে গিয়েছিলো। আমি দিনে দুইবেলা লবণ দিয়ে শুধু ভাত খেয়ে থাকলেও খুশি থাকতাম কারণ বুঝতাম আমার ভালোবাসার মানুষ আমার পাশে আছে।”
“এ-সব আবেগের কথা মা। কয়েকমাস বা একবছর এই আবেগ ভালো লাগে, সারাজীবন নয়। আজকের মতো উঠি, বাহিরে যেতে হবে।”
বলেই সে উঠে পড়ে। দরজার উপর থেকে শার্ট নিতে বোতাম লাগাতে লাগাতে বের হয়। আর উঁচু স্বরে বলে,
“তোকে আমন্ত্রণ দিতে হবে আসার জন্য? সাইক্রিয়াটিস্ট দিপ্তী চক্রবর্তীর ফ্লাইট টেক অফ করার পর আসবি?”
রোমা বেগম ইকবালকে জিজ্ঞেস করলেন,
“সাইক্রিয়াটিস্ট কেন? আর তুই বিনয়, জ্যোতি ও নূহার ব্যাপারে কী বললি? আর এই মোহিনী কে?”
“সে বহুত বড় কাহিনি আন্টি। রাতে লুডু খেলতে খেলতে বলব নে। আমি এখন ভাগি নাইলে আপনার পোলা আমাকে জীবন্ত করব দিবো।”
বলেই ইকবাল এক দৌড় দিলো।
.
.
নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে অর্কের। তার হাতে পাঁচটা চিঠি। তার ধারণা ঠিক ছিলো৷ এই চিঠির বাক্সের কথাই বলছিলো বিনয়। প্রতিটা চিঠির পিছনে তারিখ না লেখা থাকলেও বর্ষ লেখা আছে। সে অনুযায়ীই অর্ক চিঠিগুলো খুলল। তার হাত পা কাঁপছে সমানে।
প্রথম চিঠিঃ
অর্ক তুই জানিস তোকে আমি বন্ধু হিসেবে যতটা ভালোবাসি তার থেকে বেশি ঘৃণা করি। আমাকে সবসময় কেন তোর সাথে তুলনা করা হয়? সবসময়! সবসময়ই এটা শুনে এসেছি তুই আমার থেকে সবকিছুতে ভালো। তুই যা চাস সব পাস আমি পাই না কেন? আমি যে রেহানা শেষ তিন বছর ধরে ভালোবাসি সে আমি আমার প্রেমপত্রের প্রতিউওরে বলে ও তোকে ভালোবাসে। কেন? আমার সবকিছু তুই পাস কেন সবসময়? টিচার, আমার মা, বাবা সবসময় আমায় তোর উদাহরণ দেয়। তোর মতো হতে বলে। আমার কেন তোর মতো হওয়া লাগবে?
গতকাল আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আর এই বাক্সে কোন চিঠি রাখা হবে না তাই আজ তোর প্রতি আমার মনের কথাটা বলতে পাড়লাম।
(২০০৬)
দ্বিতীয় চিঠিঃ
আজ আমি অনেক খুশি। কেন জানতে চাইবি না? কারণ আজ আমি প্রথম তোর জিনিস নিতে পেরেছি। আমার সারাজীবনের আফসোসটা আজ শেষ। তুই যাকে কোনোদিন ভালোবেসেছিলি তাকে আমি আজ নিজের করে নিয়েছি। কিন্তু মানতে হবে তোর পছন্দ এত বাজে! যেদিন মেয়েটাকে দেখতে গেলাম সেদিনই ওকে দেখে আমার মন মানসিকতা নষ্ট হয়ে গেল। কিন্তু আবার মনে পড়লো তোর আলমারিতে পাওয়া ওর ছবি ও চিঠির কথা। যেদিন তুই বিদেশে গেলি তার পরেরদিনই আমি ছবিগুলো পাই আর সিদ্ধান্ত নিয়ে নেই যে এই মেয়েকেই আমার লাগবে। কারণ তুই ওকে পছন্দ করিস।
এত সুন্দরী মেয়ে তোর পিছনে পাগল ছিলো আর অবশেষে তুই তোর মন এই মেয়েকে দিলি?
যাই হোক, আই ডোন্ট ইভেন কেয়ার। তোকে ছবি দেখানোর পর তোর কন্ঠ শুনেই আমার বুকে জ্বলন্ত এত বছরের আগুন নিভে গেল। এত শান্তি আমার সারাজীবনে লাগে নি।
জীবনে এই প্রথম আমার তোর সাথে ঈর্ষা হচ্ছে না, কারণ তুই আমার সাথে ঈর্ষা করবি।
(২০১১)
তৃতীয় চিঠিঃ
আমি আজ প্রথম খেয়াল করলাম ওকে। এত স্নিগ্ধ ও পবিত্র হাসি আমি সারাজীবনে দেখি নি। আর না এত সুন্দর হাসি কারও দেখেছি। সকালে মিষ্টি সোনালী রোদ্দুর এসে আমার মুখে পরছিলো। আমি মেজাজ বিগড়ে জানালার দিকে তাকালাম। জানালার কাছে ছিলো ফাতেমা ও প্রভা। ফাতেমা মজা করে পর্দা খুলে দিচ্ছিলো আর প্রভা তা লাগাচ্ছিলো। ইতিমধ্যে ফাতেমা কি যেন বলল আর প্রভা খিলখিল করে হাসতে শুরু করল। সে এক মুহূর্তেই যেন আমার হৃদয়ের স্পন্দন বন্ধ হবার উপক্রম হলো। ওর হাসিতে ছিলো ঘোর লাগার ঔষধ। এত সুন্দর হাসি আমি সারাজীবনে দেখি নি। আজ অফিস ছিলো না তাই সে সকাল থেকে ওকে খেয়াল করলাম। আজ প্রথম শুধু ওর গায়ের রঙ না, ওকে দেখলাম। ওর অন্তর ও বাহিরের সৌন্দর্য সবটা। আমি নিজের উপর রাগ ছিলাম যে তোকে কষ্ট দিতে যেয়ে আমি এত বড় একটা ভুল করলাম কিন্তু আজ আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি ও আমার করা সবচেয়ে সুন্দর ভুল। তোর সাথে বন্ধুত্ব করে আমি কষ্ট ছাড়া কিছু পাই নি কিন্তু আজ যা পেলাম তার জন্য তোর প্রতি আমার সকল কষ্ট বাতাসে মিশিয়ে দিলাম।
(২০১২)
চতুর্থ চিঠিঃ
আমি সব ভুলে গিয়েছিলাম, সব। তোর প্রতি কষ্ট, সংশয়, রাগ, ঈর্ষা সব। কিন্তু আবার তুই আমার জীবনে এসে সব জাগিয়ে দিলি। আমি যে প্রজেক্টের জন্য গত বছর থেকে প্লানিং করছি তা তুই এক সাপ্তাহেই পেয়ে গেলি? তোর জন্য সব এত সহজ কেন? আমার সকল বন্ধু, পরিবারের সকলে, এমনকি আমার অফিসের স্যারও তোর গুণগান গাইতে গাইতে শেষ। এই ক্ষোভেই হয়তো নূহার সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছিলাম অথবা প্রভার প্রতি সকল আকর্ষণ হারিয়ে যাওয়াতে অথবা নিজের জঘন্য চিন্তাভাবনার কারণে। কোথাও নিলে আমার মনে হতো ওকে আমার সাথে দেখে কত লোকে কত নজরে তাকাচ্ছে। মানায় না ওকে আমার সাথে। ও তো আর নূহার মতো স্মার্ট ছিলো না আর না ওর মতো ধবধবে সাদা গায়ের রঙ ছিলো ওর। দোষ আমার আবার আমার না। আমি যখনই প্রভার রঙের কথা ভুলে শুধু ওকে ভালোবাসি তখনই এই সমাজ মনে করিয়ে দেয় যে এই সমাজে সাদা চামড়া অর্থই প্রশংসনীয়। আমিও এই জঘন্য চিন্তাভাবনার চাদরে লেপ্টে গিয়েছিলাম। সে চাদর দিয়েই ঢেকে দিয়েছিলাম আমার ভালোবাসা। আচ্ছা তুই আমার জায়গায় থাকলেও কী এমন করতি?
তুই বিদেশে থাকতে যখন নূহার খেয়াল রাখতে বলিস তখন মাঝেমধ্যে ওকে দেখে আসতাম। ওর প্রতি আমার কখনো আকর্ষণ ছিলো না। কিন্তু ওর ব্যবহারগুলো ভীষণ আজব লাগতো মাঝেমধ্যে। কিন্তু কিউট লাগতো। ওর সাথে সম্পর্কে তোর উপর জেদ করে গেলেও ওর সাথে থাকায় শান্তি লাগতো। সাংসারিক জীবনের হাজারো অশান্তির মাঝে ওর সাথেই একটু শান্তি পেতাম৷ সবার জন্য দায়িত্বের ভার নিতে নিতে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। ওর সাথে একটু সময়ের জন্য হলেও আরাম পেতাম আমি। আমি ভেবেছিলাম ওর মতো মিষ্টি মেয়ে আর কোথাও হতেই পারে না। কিন্তু ওর ব্যবহারগুলো কেমন যেন ছিলো।
ও যখন প্রভাকে নিয়ে এক সাইক্রিয়াটিস্টের কাছে পাঠায় আমার সাথে তখন একদিন আমি ওকেও দেখতে পাই। কিন্তু ও সম্পূর্ণ মানা করে দেয় যে ওর কোনো সমস্যা নেই। তবে আমি যখন ওর কাজের দিকে ধ্যান দেই তখন মাথায় আসে যে ওর আসলে কোনো না কোনো সমস্যা আছে। কিন্তু কি তা জানি না।
আমি সবসময় ভেবে এসেছিলাম যে সবাই কেন তোরই প্রশংসা করে। কারণ তুই প্রশংসার যোগ্য।সেদিন যখন রাহান প্রভার সাথে দুর্ব্যবহার করল তখন আমি আমার স্ত্রীর কথা চিন্তা না করে নিজের গোপন তথ্য প্রকাশের পর কি হবে তার চিন্তায় ছিলাম। এত জঘন্য কবে হয়ে গেলাম আমি নিজেও বুঝলাম না।
যখন প্রভা আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে তখন আমি বুঝেছি কি হারিয়েছি আমি৷ ও আমাকে ডিভোর্স দেওয়ার কথা যখন বলল আমার ভেতরটা শূন্য হয়ে এলো। আমি একসময় পর কখনো ওকে নিয়ে ভাবি নি, আজ যখন ভাবছি বুঝতে পারছি কত অন্যায় করেছি ওর সাথে যার অনুতাপ করলেও এখন লাভ নেই। আমি হীরা ফেলে কাঁচের পিছনে ছুটে বেড়াচ্ছিলাম এত বছর ধরে। তবুও আমি চেষ্টা করব। প্রয়োজনে ওর পা ধরে মাফ চাইব। কারণ ওর মতো মেয়ে কোটিতে একটা পাওয়াও কঠিন।
আমি তোকে এ-সব বলার চেষ্টা করেছি খুব। তিন চারবার ফোন দিয়েছি এইসব বলব বলে কিন্তু সাহসে কুলায় নি। আমার কর্ম মাফ করার মতো না তবুও পারলে মাফ করে দিস।
(২০১৭)
২০১৭ সালের আরেকটা চিঠি দেখে অর্ক। অর্থাৎ হয়তো আগেরটাই বিনয়ের শেষ চিঠি অথবা তার হাতেরটা। সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে কিছুক্ষণ পর চিঠিটা খুলে। আর প্রথম লাইন পড়তেই চমকে উঠে অর্ক।
চলবে……..
[আশা করি ভুল ক্রুটি ক্ষমা করবেন ও ভুল হলে দেখিয়ে দিবেন।]