মনের গহীনে পর্ব ১৭

#মনের_গহীনে
১৭তম পর্ব
লেখনীতে :নাদিয়া হোসাইন
প্রিয় সবে মাত্র গোসল থেকে বেড় হলো। ফোন বাজার শব্দে মনে হলো প্রাচুর্য ফোন দিয়েছে। কিন্তু ফোনের স্ক্রিনে সামায়ার নাম ভেসে উঠতেই বুকে কেমন ব্যাথা অনুভব হলো। সামায়ার ফোনে তার খুশি হওয়া উচিত ছিলো, কিন্তু কেনো জানি খুশি তাকে ধরা দিচ্ছে না। কোনমতে ফোনটা রিসিভ করলো।
হ্যালো! প্রিয়, প্রাচুর্যের কি হইছে তুমি কি কিছু বলছিলা ওরে?
কেন, ও কি তোমাকে ফোন দিছিলো?
হ্যাঁ দিছিলো, অনেক কান্না করছে কল দিয়ে। বার বার বলতেছিলো আমরা ওরে দয়া করছি। তুমি নাকি ওর উপর বিরক্ত। অনেকবার কল দিলাম ওরে, কিন্তু ফোন বন্ধ পাচ্ছি।
প্রিয় একটা দীর্ঘঃশ্বাস নিয়ে সামায়াকে কাল রাত থেকে যা কিছু ঘটেছে সব বলে থেমে গেলো।
বাহ প্রিয় ভাইয়া, নিজে তো ফাসলা সাথে আমাকেও ফাসাই দিলা।প্রাচুর্য এখন আমার সাথে আর কথা-ই বলবে না। ওইদিন তোমাকে আমি তোমার ভালো থাকার উপায় বলছিলাম। আমি তো তোমাকে জোর করিনি প্রাচুর্যের সাথে রিলেশনে যাওয়ার জন্য। বরং তুমি নিজ ঙ্গান থেকে এসব করছো। আর এখন আমাকেও ফাসাই দিলা। সমস্যা সব তোমার-ই। প্রাচুর্য এমন কি করছে, যার জন্য তুমি দুই সপ্তাহে ই বরক্ত হয়ে গেলা। আসল কথা তুমি মানুষ-ই চিনো নাই। একদিন পস্তাবে বলে দিলাম। ও তোমাকে যতটা ভালোবাসে, ততটা ভালোবাসা তুমি কোথাও পাবে না। ইনফেক্ট আমার থেকেও পেতে না।
সামায়া আরোও কিছু বলতে যাচ্ছিলো, কিন্তু প্রিয় ফোন কেটে দিলো। সামায়া হতভম্ব হয়ে গেলো। আজ সবাই ওর ফোন কেটে দিচ্ছে।দিসে হারা হয়ে সামায়া ইহানকে ফোন দিলো। এখন একমাত্র ইহান-ই আছে যে ওর সব কথা শুনে সঠিক জবাব দিয়ে যাবে।

প্রিয়র আজ সামায়ার কথা গুলো একদম-ই সহ্য হচ্ছিল না। যদিও সব দোষ প্রিয়র-ই ছিলো।কিন্তু কথা গুলো ঠিক কাটা ঘায়ে নুনের ছিটার মতো। অন্যসময় হলে সামায়ার এই কথা গুলোও শুনে নিতো শুধুমাত্র ওর ভয়েস শুনার জন্য। আজকে সামায়ার ভয়েসের উপর তার কোন ইন্টারেস্ট-ই কাজ করছে না। কেনো ইন্টারেস্ট কাজ করছে না তা খুব ভাবাচ্ছে প্রিয়কে।পিয়র সবচেয়ে বড় কষ্ট হচ্ছে সামায়ার কাছে প্রাচুর্যের কান্নার কথা শুনে। অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিলো প্রাচুর্যকে সরি বলার। প্রথমবার প্রাচুর্যকে ফোন দিলো আর নাম্বার বন্ধ পেলো। অন্য কোন উপায়ন্ত না পেয়ে ম্যাসেঞ্জারে খুব সিম্পলভাবে সরি লিখে সেন্ড করলো। ও জানে না প্রাচুর্য ম্যাসেজটা সিন করবে কি-না, কিন্তু মনের শান্তির জন্য সরিটা বললো।

প্রাচুর্য ঠিক করলো সব কিছু স্বাভাবিক করবে। প্রিয়কে নাহয় ও একা-ই ভালোবেসে যাবে। মনের গহীনে সব সময়-ই প্রিয়র স্মৃতিগুলো ভেসে থাকবে। আর বাইরে থাকবে এক অন্য প্রাচুর্য, যার সবটা নিজের জন্য হবে। প্রিয়কে কোথাও দেখলেও এভোয়েড করবে। হয়তো প্রাচুর্যকে দেখলেও প্রিয়র বিরক্ত লাগবে। প্রাচুর্য কখনোই চায় নি প্রিয় তার কোন ব্যাপারে বিরক্ত বোধ করুক আর এখনো চাইবে না। কিছু সময় ভালোবাসার মানুষটার কাছে না গিয়ে দূর থেকে ভালোবাসার মাঝেও কিছু মঙ্গল নিহিত থাকে। এতে বিশেষ কোন চাওয়া-পাওয়া না থাকলেও, যাকে ভালোবাসি তার খুশিটাও অনেক বড় পাওয়া হয়ে দাঁড়ায়। প্রাচুর্যর জীবনেও প্রিয়র প্রিয়র খুশিটাও বড় পাওয়া।প্রিয় তার না হোক কিন্তু ভালো থাকুক তাকে ছাড়া, এটাই প্রাচুর্যের বড় প্রাপ্তি। সে এখন প্রিয়র ভালোর জন্য,খুশির জন্য হলেও তার থেকে দূরে থাকবে।

এক সপ্তাহ হয়ে গেলো প্রাচুর্যের সাথে প্রিয়র বিচ্ছেদের। প্রিয়র মনে হচ্ছে প্রাচুর্য তাকে এক নাম না জানা মায়ায় ফেলে রেখেছে। সব কিছুতেই প্রাচুর্যকে মনে পরছে। যেই কাজ গুলোকে এতোদিন বিরক্ত লাগতো, সেই কাজ গুলোকেই আপন মনে হচ্ছে। শুধু একজন মানুষের অভাব অনুভূত হচ্ছে। এই তো কাল রাতে প্রিয় এক অদ্ভুত কাজ করলো। প্রাচুর্য আর প্রিয় যেভাবে ওইদিন রাতে ঘুরতে গিয়েছিলো, সে একা-ই সেভাবে রাত তিনটা পর্যন্ত বাইরে হেঁটে এলো। তারও প্রাচুর্যের মতো মনে হচ্ছিলো চাঁদ তার সাথে যাচ্ছে। শুধু কিছু একটার অভাব ছিলো। এক সপ্তাহ ধরে প্রাচুর্যকে এতোটা মিস করেছে, যতোটা মিস সে সামায়াকেও এতোদিন করেনি। সামায়াকেও ইদানিং একটুও মিস করছে না। সারাক্ষণ মাথায় প্রাচুর্য-ই ঘুরছে। তবে কি সে আর সামায়াকে ভালোবাসে না? প্রিয়র ঠোঁট জোড়াও এখন নিকোটিনের কালো ধোঁয়ায় গোলাপি বর্ন থেকে কফি কালারে পরিণত হয়েছে। প্রাচুর্যকে দেখতেও তার প্রচন্ড মন চাচ্ছে। কিন্তু সে বুঝতে পারছে না, প্রাচুর্যের প্রতি তার এমন অনুভূতির নাম কি। শুধু মিস করাকেই তো সে আর ভালোবাসা ধরতে পারে না। নিজেকেই প্রচন্ড ধিক্কার দিতে মন চাচ্ছে। বার বার-ই মাথায় আসছে, প্রাচুর্যও কি তাকে এতোটা মিস করছি। নাকে তার থেকেও বেশি করছে। প্রিয় নিজেকে একটু টাইম দিতে চায়। সে কি চাচ্ছে,তার বুঝা উচিৎ। একবার নিজের বোকামির জন্য প্রাচুর্যকে অনেকটা কষ্ট দিয়ে ফেলেছে। আর চাচ্ছে না কোন ভুল সিদ্ধান্ত নিতে। এবার যা নিবে তা একেবারে সঠিক নিবে। যদি সে প্রাচুর্যকে ভালোবেসে থাকে, তাহলে তার থেকে খুশি কেউ হবে না। একবার তার মন যদি প্রাচুর্যকে ভালোবাসার কথা বলে, তাহলে এই জীবনে সে প্রাচুর্যকে ততোটা ভালোবাসা দিবে, যতটা ভালো প্রাচুর্যও প্রিয়কে বাসে না।

প্রাচুর্য নিজেকে বাইরে থেকে অনেকটা স্ট্রং করে নিয়েছে। ইদানীং প্রাচুর্যের শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। প্রিয় ছাড়াও মনের মধ্যে অন্য এক ভয় বাসা বেধেছে। এক সপ্তাহ পরেই পরীক্ষা । প্রাচুর্য জানে না এই কটা দিন সে কীভাবে পার করবে। প্রাচুর্যের এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে তার পরিবারের অনেক স্বপ্ন। তার প্রিপারেশনও নেই তেমন। ভেতর ভেতর এসব নিয়ে প্রাচুর্য বেশ ডিপ্রেশনে পৌছে গেছে। কিন্তু বিধাতার উপর বিশ্বাস রেখে এগিয়ে যাচ্ছে প্রাচুর্য । এরপর যা হবে ভালোই হবে। সব কিছুর মধ্যে প্রাচুর্যের কেনো জানি প্রিয়র উপর একটুও রাগ, ঘৃণা বা খোভ প্রকাশ হচ্ছে না। বরং তার এখন মনে হচ্ছে প্রিয় যা করেছে ভালোই হয়েছে। ওই ক’দিনের স্মৃতি নিয়ে বাকিটা জীবন দিব্যি কাটিয়ে দিতে পারবে। প্রাচুর্যের বাসার জানালাটা তার বড্ড প্রিয়। এই জানালায় দাড়িয়েই মন খারাপের সময় গুলো বেশ কাটিয়ে দিতে পারে। প্রাচুর্যর এখন গান গাইতে মন চাচ্ছে। এই জানালায় দাঁড়িয়ে গান গেয়ে সে প্রিয়কে অনেকটা ফিল করতে পারে। তাই প্রাচুর্য গান গাইতে শুরু করলো,

আমি তোমায় না দেখি,
তুমি আমার না হও!
আমি যত দূরে যাই চলে,
তুমি কাছে রও।

অনেক ভেবে দু’দিন সময় নিয়ে প্রিয় বুঝতে পারলো সে প্রাচুর্যকে অনেকটা ভালোবাসে। এটা পুরোটাই প্রাচুর্যের জন্য সম্ভব হয়েছে। প্রাচুর্য তার ভালোবাসায় প্রিয়কে অনেকটা বদলিয়ে দিয়েছে। এখন প্রাচুর্যকে ছাড়া সে থাকিতে পারবে না। সামায়ার জন্য-ও প্রিয় এতো কিছু ফিল করে নি। তার এখন সবচেয়ে বড় চাওয়া প্রাচুর্য। সে জানে, সব কিছু বুঝতে অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছে তার। সেদিন প্রাচুর্যকে অনেকটা আঘাত করে ফেলেছে সে। মানুষের সাথে প্রায়-ই এমন ঘটনা ঘটে। যখন তার কাছে একটা মানুষ অনেক অবহেলার পাত্র তখন সেই মানুষটার কষ্ট বুঝার চেষ্টা করে না। অথচ সেই মানুষটা দূরে চলে গেলে, তার শূন্যতাটা চারদিক থেকে ঘিরে ধরে। অনেক সময় সেই শূন্যতাটা শুধরে নেওয়ার সুযোগটাও পায় না। তখন দেখা যায়, সেই মানুষটা আর আগের মতো নেই। প্রিয় তিনদিন ধরে-ই প্রাচুর্যের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে। কিন্তু সব রকম যোগাযোগ মাধ্যমেই প্রাচুর্যকে লাইনে পাচ্ছে না। খুব চিন্তা হচ্ছে প্রাচুর্যের জন্য৷ হয়তো প্রিয়র আঘাতটা একটু বেশি-ই হয়ে গেছে প্রাচুর্যের প্রতি। আর না পেরে সে ঠিক করলো প্রাচুর্যর বাসায় যাবে। প্রকাশ্যে প্রাচুর্যের দেখা পাওয়া যাবে বা বিধায় সে লুকিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো।

চলবে,

ভাবছিলাম আজকেও দিবো না। তিন ঘন্টার অবদানে এইটুকু লিখা হইছে 😐, তাও অনেক 😌।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here