মনের দুয়ারে দাড়িয়ে পর্ব ২ এবং শেষ

#মনের_দুয়ারে_দাঁড়িয়ে
লেখা – জান্নাতুল ফেরদৌস মাটি
পর্ব – ২ (অন্তিম পর্ব)
.
.
______________________
” যেটা ইচ্ছে হয় করো কিন্তু দ্রুত। আমার হাতে ওতো পর্যাপ্ত সময় নেই যে এসব কাজে সময় নষ্ট করব।”
” ও হো….আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম তুমি একজন বিশিষ্ট বিজনেস ওমেন। তোমাকে সরি আপনাকে যে কী বলে ধন্যবাদ জানাবো মেম আমার মতো তুচ্ছ মানুষকে এভাবে সময় দেয়ার জন্যে। উফফ….. ”
” এসব নাটক করা বন্ধ করো। তোমার এসব সস্তা দরের নাটক দেখার জন্য আমি আসিনি।”
তিহান এবার কন্ঠস্বর ভারী করে বলল,
” গাড়িতে উঠো।”
” কেন?”
” রেপ করবো তাই।”
” তিহান!” আগুন্তুক দৃষ্টি ছুঁড়ে চেঁচিয়ে উঠলো তানহা।
” আস্তে এটা রাস্তা তোমার আমার বাসা না। যাও গাড়িতে উঠো।”
তানহা দাঁত কিড়মিড়িয়ে গাড়িতে উঠে বসল। তিহান গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বলল,
” এই হলো বাঙালি জাতি। ভালো কথায় কান দেবে না, দুটো নোংরা ভাষা বললেই সুড়সুড় করে সব করবে।”
” তুমি কিন্তু এবার বেশি বেশি করছ তিহান। সবকিছুর একটা লিমিট থাকে ভুলে যেয়েও না। তোমার কথায় এসেছি বলে এই না যে, যা খুশি তাই বলতে পারবে। ওই অধিকার আমি কখনোই তোমাকে দেইনি।”
তানহার চড়া কথাগুলোর প্রতুত্ত্যরে নিঃশ্বাস টুকুও না ফেলে গাড়ি চালানোর মাঝেই গাড়ির দরজা জানালা সব লক করে ফেলল তিহান। জানালার গ্লাস উঠিয়ে এসি অন করতেই তানহা বলল,
” এসি অফ করে জানালা খুলো। এসির ঠান্ডা বাতাসে আমার গা গুলিয়ে আসে।”
তিহান এবারও কিছু বলল না, আর না জানালার গ্লাস খুলে এসি অফ করিল। ওদিকে তানহাও তিহানের চুপসে যাওয়া দেখে নিজেও গুমোট মুখ করে উল্টো দিক ফিরে বসে রইলো।
মিনিট বিশেক যেতেই তিহান গাড়িটি একটি নিরিবিলি জায়গায় নিয়ে এক সাইডে দাঁড় করালো।
আচমকাই গাড়ি থেমে যাওয়াতে তানহা কিছুটা অবাক হলো। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখল তার প্রিয় জায়গাটিতে এসেছে তারা। উত্তরার মাঝে বাউনিয়া জায়গাটা অত্যন্ত প্রিয় তার। বসত বাড়ি তুলনামূলক কম। একপাশে বিল আর অন্যপাশে এয়ারপোর্টের রান ওয়ে। মিনিটে মিনিটে মাথার উপর দিয়ে ইয়া বড় বড় প্ল্যান উঠানামা করে। বিলের ধারে বসে এই প্ল্যানের উঠানামার দৃশ্যটি খুব পছন্দ তার। তবে সবচেয়ে ভালো লাগে পানির মাঝে সরল প্ল্যানের আঁকাবাকা প্রতিফলনটি ।
তানহা বলল,
” এখানে নিয়ে এলে যে? ”
তানহার প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে সিট বেল খুলে তানহার কিছুটা সামনে এগিয়ে গেল তিহান। বলল,
” তোমার সাথে কথা বলার জন্যে আজকাল বুঝি আমাকে লিমিট শব্দের সাথে বন্ধুত্ব করতে হবে? ”
” মানে?”
” কিছুক্ষণ আগে বললে না, সবকিছুর একটা লিমিট থাকে তাই জিজ্ঞেস করলাম।”
তানহা এবার চুপ হয়ে গেল। তিহান বলল,
” আমি না করা সত্ত্বেও কেন সেদিন রাহাতের সঙ্গে সিনেমা হলে গিয়েছিলে? আমার কথার কী কোনো মূল্য নেই তোমার কাছে? না-কি আমারই মূল্য নেই?”
” সেদিন রাহাতের সাথে সিনেমা হলে কিন্তু আমি একা যাইনি তিহান। আমার সাথে চারু সহ আরও অনেক ফ্রেন্ডরা গিয়েছিল। আর তার প্রমাণও আমি তোমাকে দিয়েছিলাম। আশা করি ভুলে যাওনি।”
” ভুলে যাবার কথা তো পরে আসবে। আমি তো তোমাকে যেতেই না করেছিলাম। কী যেতে না করেছিলাম না? তাহলে গিয়েছিলে কেন? তুমি খুব ভালো করেই জানো ওই রাহাত ছেলেটাকে আমার পছন্দ না। ওর নজর আমার কখনোই ভালো ঠেকেনি। তাছাড়া তুমিও একদিন বলেছিলে ও না-কি তোমাকে প্রপোজ করেছিল। যার কারণে আমি শুরু থেকেই ওর সাথে মিশতে তোমাকে বারণ করেছি। এক দুইবার নয় বারংবার নিষেধ করেছি। সেই নিষেধ তো তুমি মানোইনি উল্টো ওর সাথেই ঢ্যাং ঢ্যাং করে সিনেমা হলে সিনেমা দেখতে চলে গিয়েছ। এটা কি সত্যিই আমার পক্ষে গ্রহণ করার মত ছিল? ”
তানহা এবার মাথা নিচু করে ফেলল। তিহান আলতো করে টেনে তানহাকে বুকে জড়িয়ে ধরল। চুলের ভাজে হাত গুঁজে বলল,
” এতগুলো দিন হয়ে গেল আমার সাথে আছো। তুমি কি এখনো বুঝোনি আমি তোমার ব্যাপারে ঠিক কতটা সেন্সিটিভ? আমার জীবনে তোমার প্রায়োরিটি ঠিক কতখানি? তুমি নিজেই ভেবে দেখো, তোমার বলা প্রতিটি কথা আমি অক্ষরে অক্ষরে পালন করি। তাহলে তুমি কেন এভাবে আমার কথার অবমাননা করো? কেন তোমার ওই রাহাতের সাথে মেশা লাগবে? কেন তোমার ওরকম বন্ধু লাগবে যাকে আমার ভালো লাগে না? তোমার তো আরও ছেলে বন্ধু আছে কই আমি তো তাদের কথা বললাম না। ঘুরে ঘুরে ওই রাহাতের কথা বলছি। এখন এই রাহাতের কথাই বা কেন এত বলছি একটু যুক্তি দিয়ে ভেবে দেখো না। বুঝার চেষ্টা করো না আমার এতো নিষেধাজ্ঞার কারণ। ”
” একই কলেজে পড়ি।ফ্রেন্ডশিপও করেছি বললেই কী মুছা যায়? আমি তো পারি না। তাই বারবার তোমার কথার বিরুদ্ধে গিয়ে মেলামেশা করতে হয়। তবে বিশ্বাস করো আমার মন একদম ফ্রেশ। আমি রাহাতকে ভাই ছাড়া অন্য নজরে কখনোই দেখিনি।”
” আহা….তুমি কেন বুঝতে পারছ না বলোতো? এখানে তুমি কোন চোখে দেখছ সেটা বড় বিষয় নয়, রাহাত কোন চোখে তোমাকে দেখছে সেটা বড় বিষয়। সে যাই হোক আমি বলেছি ওর সাথে মিশবে না তো ব্যাস মিশবে না। এর বাইরে যেন আর কিছু না শুনি, ওকে?”
তানহা মাথা নেড়ে সায় দিল। তিহান আলতো করে তানহার কপালে চুমু খেয়ে বলল,
” এবার বলোতো বিয়ের মতো এতবড় সিদ্ধান্ত তুমি কী করে নিলে? এই সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে একটি বারের জন্যেও কি আমার কথা মনে পড়েনি তোমার? আমার মুখটুকু ভেসে উঠেনি তোমার অন্তরে? বুকটা কাঁপেনি? আচ্ছা, তুমি কি জানতে না তোমাকে না পেলে আমি ঠিক কী কী করতে পারি? এমনকি নিজের জীবন নিজের হাতে কেড়ে নিতেও দুবার হাত কাঁপবে না। জানতে তো… তাহলে কী করে পারলে ওরকম একটা সিদ্ধান্ত নিতে? কী করে পারলে আমাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়ার রাস্তা নিজ হাতে তৈরি করে দিতে?”
তানহা এবার হু হু করে কেঁদে দিল। তিহানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
” বলো না….এসব কথা বলো না তুমি। রাগ, অপমানবোধ, অভিমান সব মিলিয়ে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম আমি। কিচ্ছু মাথায় কাজ করছিল না। বিশ্বাস করো সেসময় আমি আমার মাঝেই ছিলাম না। সারাদিন শুধু মাথায় ঘুরঘুর করতো তোমার বলা কথাগুলো। আর উষ্কিয়ে দিত বিয়ে নামক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে। ”
” আমি না’হয় রাগের মাথায় দু চারটি কথা বলেছি কিন্তু এর সত্যতা কতটুকু কিংবা আমি আদৌ মন থেকে বলেছি কি-না তোমার তো যাচাই করার প্রয়োজন ছিল তাই না? এভাবে হুটহাট সিদ্ধান্তে যাওয়া টা তো মোটেও যুক্তিযুক্ত ছিল না।”
তিহানকে আরও শক্ত করে চেপে ধরল তানহা। বলল,
” ভুল হয়েছে, আমি ভুল করেছি। এরকম ভুল এ জীবদ্দশায় আর কক্ষনো হবে না। আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ।”
” ভুল করেছ সেটা তো আমিও জানি কিন্তু সব ভুলের কী ক্ষমা হয় তানহা? আজ তোমার এই ভুলটার জন্যই হয়তো আমার জীবন থমকে যেত। মুছে যেত এ ভুবন থেকে তিহান নামক এই আমি টির নাম। তখন…… তখন কেমন হতো?তাই মনে রাখবে সব ভুলের ক্ষমা সবসময় হয় না।”
তিহানের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে চোখের জল মুছে ভয়ার্ত কন্ঠে তানহা বলল,
” মানে? তুমি কী বলতে চাইছ? তুমি কি তাহলে আমাকে সত্যি সত্যি ছেড়ে দিবে?”
” আহা….সবকথার শেষে এই ছেড়ে দেয়ার কথাটা কেন আনো বুঝি না। ছেড়ে দেয়াই কি সবকিছুর সমাধান না-কি? এর উল্টো টাও তো সমাধান হতে পারে।”
” মানে?”
” মানে এই জীবন মরনের রিস্ক আমি আর নিতে পারব না। আমার এই মূল্যবান জীবন এ ভুবন ছেড়ে অকালে চলে যাবে তাও আবার অপমৃত্যু নাম হিসেবে ঘোষিত হয়ে আমি তা কখনোই মেনে নেব না। তাই তোমার শাস্তি হিসেবে আজ এক্ষুনি আমাকে বিয়ে করতে হবে। বিয়ে ছাড়া তোমার এই ভুলের প্রায়শ্চিত্ত হবে না। বিশেষ করে আমি মানব না।”
” বিয়ে! এখন?”
” হ্যাঁ বিয়ে আর এখনই। কেন? কোনো সমস্যা আছে? ”
” না না, কোনো সমস্যা নেই। তুমি যা বলবে তাই হবে আমার কোনো কথা নেই।”
” এই তো আমার লক্ষী বউ। এভাবেই সারাজীবন লক্ষীটি হয়ে থাকবে বুঝলে!”
বলেই তানহাকে ফের বুকে জড়িয়ে ধরল তিহান।
.
দুপুর ২ টা। তিহানের হাত শক্ত করে ধরে দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে তানহা। ভয়ে বুক কাঁপছে তার। কাঁপছে হাত পা সহ সারা শরীর। কলিং বেল বাজাতে নিয়েও হাত ফিরে আসছে বারবার। কীভাবে দাঁড়াবে বাবা মায়ের সম্মুখে? কীভাবেই বা বলবে নিজের বিয়ের কথা? ভেবেই দিশেহারা হয়ে যাচ্ছে তানহা।
এদিকে তিহান আড়চোখে তানহার দিকে তাকাচ্ছে আর মিটিমিটি হাসছে। খুব ইনজয় করছে তানহার এই ভয়ার্ত মুখটির ভঙ্গিকে। যেন ছোট্ট একটি বাচ্চা মেয়েকে দেখছে সে।
কিন্তু তানহার সেদিকে বিন্দুমাত্র হুশ নেই। একসময় চোখ বুজেই কলিং বেল চেপে দিল তানহা। কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো দরজা কেউ খুলছে না। তানহা একপলক তিহানের দিকে তাকালো। তারপর আরও একবার কলিং বেল বাজালো। কিন্তু এবারও দরজা খুলল না কেউ। তানহা তার চিন্তিত মুখখানি তিহানের দিক ঘুরিয়ে কিছু বলতে নিলেই দরজা খুলে হাতে বরণ ডালা নিয়ে এগিয়ে এলো তাহমিনা বেগম। পেছনে মিষ্টি আর পানির গ্লাস নিয়ে দাঁড়িয়ে জান্নাত। সবার ঠোঁটের কোণ জুড়ে বড় মাপেত হাসি। তানহার চোখ দুটো যেন ছানাবড়ার হবার উপক্রম। কিছু বলতে নিয়েও পারছে না। গলা দিয়ে স্বরই বের হচ্ছে না। একবার তিহানের দিকে তাকাচ্ছে তো একবার পরিবারের সদস্যদের হাসিমাখা মুখের দিকে।
জামাল সাহেব এগিয়ে তানহার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
” মাশা আল্লাহ আমার মেয়ে আর মেয়ের জামাইকে তো খুব মানিয়েছে। আমার মেয়ের পছন্দ আছে বলতে হবে।”
তানহা অবাক পূর্ণ চাহনি দিতেই জামাল সাহেব বললেন,
” তিহান আমাদের সবই বলেছে। এমনকি বিয়ের আগ মুহূর্তে আমাদের থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েই তোকে বিয়ে করেছে। আর এ-ও বলেছে আমরা অমত করলে সে তোকে বিয়ে করবে না। এরকম ছেলে কী হয় না-কি এ যুগে? তাই আর অমত করতে পারিনি। দিয়ে দিয়েছি মত। স্বাধীনতা দিয়েছি তোদের ভালোবাসার। তাছাড়া ব্যাক্তিগত ভাবেও আমি তিহানকে চিনি। ওর ব্যাকগ্রাউন্ড,ওর ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড এ সবকিছুই আমার নখদর্পণে। একসময় আমারাই ছাত্র ছিল তিহান। তাই ওর মতো ছেলেকে মেয়ের জামাই হিসেবে পাওয়ার লোভ টা আমি আর সামলাতে পারিনি রে। তাই ও ফোনে বলার সাথে সাথেই আমি বিয়েতে মত দিয়ে দেই।”
তানহা যেন আরও একবার অবাক হলো! তিহানের দিকে দৃষ্টি তাক করে বলল,
” তুমি বাবাকে আগে থেকেই চিনতে? তারউপর আবার ছাত্রও ছিলে? কই আমাকে তো আগে কখনো বলোনি এ বিষয়ে। ”
” কীভাবে বলব? একই নামের অধিক মানুষকে কী নেই এ ভুবনে? আমিও সেরকম কিছু ভেবেছিলাম। তারউপর আমি নিজেই তো জানতাম না স্যারই তোমার বাবা। গতকাল চারুর থেকে তোমাদের বাড়ির পিউর লোকেশন নিয়ে আর স্যারের মুখোমুখি হয়েই ব্যাপারটা ক্লিয়ার হই। এখন আমার কী দোষ বলো। ”
জামাল সাহেব বললেন,
” না বাবা তোমার এখানে দোষ নেই। তোমার কেন, এখানে কারোই কোনো দোষ নেই। এরকম হতেই পারে এটা কোনো বিষয় না। ”
তাহমিনা বেগম এগিয়ে এসে বললেন,
” হয়েছে হয়েছে, এবার এসব দোষ গুণের বিচার রাখোতো। আগে আমার মেয়ে আর মেয়ের জামাইকে বরণ করতে দাও। পরে এসব কথা হবে।”
বলেই তানহা আর তিহানকে বরন করে ঘরে নিলেন তাহমিনা বেগম। এরই মাঝে দরজার ওপারে উপস্থিত হলেন তিহানের বাবা মা। জামাল সাহেব নিজে গিয়ে তাদের ভেতরে আনতেই নতুন বউকে বুকে জড়িয়ে কুশল বিনিময় করতে লাগলেন নতুন কুটুমদের সাথে।
.
রাত ১১ টা। ঘন্টা খানেক হয়েছে শ্বশুর বাড়ি এসে পৌঁছলেও এই মুহূর্তে তানহা রয়েছে একটি নির্জন রুমে একা। একহাত ঘোমটা টেনে বসে আছে ফুল সজ্জিত বিছানার মধ্যভাগে। এরই মাঝে ঘরে এলো তিহান। পরনে তার খয়েরী রঙের সুতি পাঞ্জাবি। দরজা ভেতর থেকে লক করে গলা খাঁকারি দিয়ে বিছানার দিক এগিয়ে তানহার কাঁধ ঘেঁষে বসল তিহান। খুব স্বাভাবিক ভাবেই তানহার ঘোমটা উঠিয়ে মুচকি হেসে বলল,
” মনে হলো ঊনিশ শতকের নববধূর বেশ ধরার আপ্রাণ চেষ্টা করছ! ব্যাপার কী?”
তানহা মুচকি হাসল তবে স্তব্ধতা মিশিয়ে।
তিহান আলতো করে তানহার হাত দুটো মুঠোয় চেপে ধরল। বলল,
” ঘোর কি এখনো কাটে নি? না-কি ইচ্ছে করেই ঘোরকে গভীর করার তীব্র ইচ্ছা পোষণ করছ?”
” সব ঘোর কী সহজে কেটে যেতে চায়? তারউপর সে যদি হয় জীবনের সবচেয়ে বড় ঘোর।”
” তাও কথা! ”
আরেকটু কাছ ঘেঁষে বসল তিহান। এবার তানহার শ্বাস প্রশ্বাস যেন কয়েকগুণ বেশি দৌড়োদৌড়ি করতে লাগল। এত চেনা স্পর্শরাও যেন অচেনা অনুভূতির ছোঁয়ায় তানহার আপাদমস্তক কম্পিত করতে লাগল। তিহান বলল,
” তোমার গতকালের সিদ্ধান্তের পরিণাম আজকের এই মোহনীয় রাতটি। তবে…..যদি আমি গতকাল তোমাদের বাড়ি না যেতাম আমাদের দু’জনের জীবনে কী নেমে আসতো তোমার ধারণা আছে? ভেবে দেখেছ কী একবার?”
তানহা এবার মাথা এলিয়ে দিল তিহানের কাঁধে। বলল,
” তোমার অনুপস্থিতিতেও আমি তোমায় অনুভব করি। তুমি কখন কী করতে পারো চোখ বুজে বলে দিতে পারি। তোমার নিঃশ্বাসের গতিবিধি অদৃশ্যের মাঝেও আন্দাজ করতে পারি। তুমি যে আমার মনের দুয়ারে দাঁড়িয়ে। তুমি আসবে আর আমি ভাববো না তা কী হয়? আমি তো জানতাম তুমি আসবে। তোমাকে যে আসতে হবেই। তোমার স্বস্তির নিঃশ্বাস কুড়োনোর জন্য হলেও তোমাকে আসতে হতো।”
তিহান একগাল হাসল। একহাত জড়িয়ে বলল,
” আমার পাগলীটা দেখি গুছিয়ে কথা বলা শিখে গিয়েছে। ব্যাপারখানা কী হুম?”
” ব্যাপারখানা আবার নতুন করে কী হবে? তোমার বুকে আসলে তো আমি অটোমেটিক গুছিয়ে কথা বলতে পারি জানো না?”
” হা হা…..আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম তোমার গুছিয়ে কথা বলার ওষুধ যে আমি।”
” হুম ওষুধই তো। এই ওষুধ না পেলে আমি বাঁচবই না।”
” সে তো জানি কিন্তু তুমি কি এটা জানো, তুমি আমার ওষুধ নও তুমি আমার নেশা। যে নেশায় মাতলামো না করলে জীবনটাই যাবে বৃথা। ”
” বাব্বাহ! সেকেন্ডের মাঝে কবিতাও বানিয়ে ফেলেছ। নট বেড!”
” উহু, এটা কবিতা নয়। এটা মনের সুপ্ত না বৃহৎ কামনা।”
” মানে!” তানহা ঘাড় উচিঁয়ে অবাক চাহনি দিতেই তিহান দুষ্টু হাসির রেখে চোখমুখ জুড়ে ফুটিয়ে তুলল। তানহা ঢোক গিলে পেছনে যেতে নিলেই তিহান খাপ করে ধরে একটানে মিশিয়ে ফেলল নিজের মাঝে। তানহার নিঃশ্বাস প্রয়োজনের তুলনায় বেশি চলাচল শুরু করলে তিহান কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,
” কেবলই তো মাঠে নামলে। এখনই এই অবস্থা! গোল দিলে হবে কী?”
বলেই তানহার কোমরে হাত বিচরণ করাতে লাগল তিহান। তানহা শক্ত হাতে বিছানার চাদর খামচে ধরতেই তিহান একহাত উঁচিয়ে সুইজবোর্ডে চাপ দিয়ে ঘরের আলো নিভিয়ে দিল। আর মুখ গুঁজলো তানহার মাতাল করা সুগন্ধময়ী গলার ভাঁজে।

.
.
(সমাপ্ত)
(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here