#মনের_গভীরে_তুমি❤
#পর্ব_১০
#M_Marufa_Yasmin
অনেক রাত হয়ে গেছে আরাভ এখনও পর্যন্ত বাড়ি ফিরেনি। টিপ খুব চিন্তায় পড়ে যায়।আরাভ আবার উল্টো পাল্টা কিছু করে বসল না তো?
মনে মনে টিপ ভাবছে আর পায়চারি করছে ।
—“শুধু কালকের অপেক্ষা স্যার এত কষ্ট আমি আপনাকে পেতে দেবো না ।
তখনই টিপের একটা ফোন এলো ফোনটা আসতেই টিপ বারান্দায় চলে যায়।ফোনটা রিসিভ করে বলল
—“হ্যা বল যা বলেছিলাম তা হয়েছে তো? আর ওই ছেলেটা তোর কাছে আছে এখন?
—“,,,,,,,,,,,,,,,,,
—“ওকে শোন কাল ঠিক সময় ওকে নিয়ে হাজির হবি ।
বলে ফোনটা কেটে দেয়।
সকাল বেলা, ,,,,,,,,,
সবাই কাজে ব্যস্ত।তখনই আরাভ বাড়ি ঢুকল।
মিরা নেকামো করে দৌড়ে এসে বলল …
—“আরাভ তুমি কোথায় ছিলে সারারাত জানো আমি কত টেনশনে ছিলাম সারারাত ঘুমাতে পারিনি।
আরাভ কোনো কথা না বলে মিরা কে সরিয়ে ওপরে চলে গেল।
টিপের এইসব চোখ এড়ানো না সবটা দেখল।
ইশরা তো রাগ করে আসেনি বিয়েতে।ইমরান চৌধুরী এই বিয়েতে থাকবে না এটা আগেই বলে দিয়েছেন। কেয়া আর তার মা তো সেই খুশি।
কেয়া মিরা কে বউ সাজাচ্ছে। খুব সুন্দর করেই সেজেছে ভালোই লাগছে দেখতে।
এদিকে আরাভ ও খুব সুন্দর করে সেজেছে।
টিপ ও তো দারুন খুশি।
বিয়ের সময় চলে এলো কাজি ও চলে এসেছে।
আরাভ আর মিরা সামনাসামনি বসে আছে।
কাজি আরাভের দিকে খাতা কলম এগিয়ে সাইন করতে বলল।আরাভ সাইন করতে যাবে এমন সময়ে টিপ এসে বলল
—“দাঁড়ান! !
সবাই হা করে টিপের দিকে তাকিয়ে দেখে। পুরো বিয়ের বাড়ি নিঃশব্দ ।মিরা ও চুপ।
আরাভ খুশি হয়ে দাঁড়িয়ে যায়।আরাভ ছুটে গিয়ে
টিপ কে জড়িয়ে ধরে বলল ..
—“আমি জানতাম তুমি আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে না ।
সবাই দুজনের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।
—“স্যার ছাড়ুন সবাই দেখছে।
—“দেখলে দেখুক ।আমি আমার বউ কে জড়িয়ে ধরেছি ।
—“ওকে এখন ছাড়ুন ।
—“না আগে বলো ভালোবাসি ।
—“আচ্ছা সবার সমানে বলব ছাড়ুন ।
—“ওকে ।
আরাভ ছেড়ে দেয়। টিপ সবাই কে উদ্দেশ্য করে বলল
—“আমি টিপ চৌধুরী আরাভ চৌধুরীর স্ত্রী।
আমি আরাভ কে ভালোবাসি । i love you Arab
মিরা রেগে উঠে বলল …
—“টিপ এইসব কি বলছো তুমি?
টিপ চেঁচিয়ে বলল ..
—“একদম চুপ আর একটাও কথা বলবি না তুই।
কি ভেবেছিলি আমার বর কে বিয়ে করে কষ্ট দিবি?আমি থাকতে সেটা কখনোই হতে দেবো না।
কি ভেবেছিলি ।আমি কি বকা তাই না এ শোন আমি কোনো সিনেমার নায়িকা নয় সে নিজেকে কষ্ট দিয়ে ভালোবাসার মানুষ টিকে অন্যর হাতে তুলে দেবো । আর আমি বাকি সব মেয়েদের মতো ও না যে নিজেকে কষ্ট দিব।আমি টিপ।বুঝেছিস আর এই টিপ কে তুই চিনিসনি।
মিরা রেগে বলল …
—“তুমি কি করে আরাভ এর স্ত্রী ওর সাথে কাল তোমার ডিভোর্স হয়ে গেছে ।
টিপ তাচ্ছিল্য হেসে বলল …
—“আমি জানতাম তুই এটা বলবি এই দেখ ডিভোর্স পেপার আমাদের সাইন করা আছে ঠিকই কিন্তু কোটে গিয়ে এখনও পৌছায়নি। উফফ সরি পৌছাতে দিয়নি। এখন তোর সামনে এই ডিভোর্স পেপার আমি ছিড়ে ফেলব।
টিপ ডিভোর্স পেপারটা নিয়ে ছিড়ে টুকরো টুকরো করে দিল।
আরাভ কিছু বুঝতে পারছে না। কি হচ্ছে ।
কেও বুঝতে পারছে না ।
আরাভ টিপ কে জিজ্ঞেস করলো
—“টিপ পরিস্কার করে সবটা খুলে বলো ।
—” হুম বলছি ।
যে দিন মিরা আমাদের বাড়িতে এলো সেইদিন কেমন যেন ওকে আমার সুবিধার মনে হয়নি ।তারপর সেই দিন রেসটুরেন্টে আমি ওকে দেখেছিলাম।
অতীত, ,,,,
টিপ রুমে বসে ভাবছে, ,,,,,,,
—“আচ্ছা আমি সেইদিন মিরা দি কে রেসটুরেন্টে দেখলাম আর ও স্যারের দিকে তাকিয়ে ও ছিল তাহলে সেই দিন কেনো স্যারের সাথে কথা বলল না? আর হঠাত তিন বছর পর কোথা থেকে উদয় হলো? তাছাড়া ও আমার সাথে মিস বিহেভ করে কেনো?
এত কিছু প্রশ্নে ওর মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছিল।তখন টিপ তার কলেজ ফ্রেন্ড কে ফোন করল তাকে ফোন করে মিরার জন্য সব রকম তথ্য জোগাড় করতে বলল, ,,,,, রাফি সব তথ্য এনে টিপ কে দিল।মিরার বয়ফ্রেন্ড কেও ধরে আনে।
টিপ ওর থেকে জানতে পারে।আরাভ কে কষ্ট ও তিলে তিলে মেরে ফেলার জন্য ও এইসব করছে।
কারন কলেজ জীবনে মিরার বড়ো বোন আরাভ কে ভালোবাসতো কিন্তু আরাভ তাকে পাত্তা দিত না হঠাত একদিন সে সুইসাইড করে কেনো সেটা কেও জানে না আর সেটার দোষ মিরা এখন আরাভ কে দেয়।আরাভের ওপর প্রতিশোধ নাওয়ার জন্য আরাভের সাথে প্রেম করে। তারপর একদিন ওকে কষ্ট দাওয়ার জন্য ব্রেকআপ করে নেয় ।মিরা ভেবেছিল।আরাভ হয়তো কষ্ট পেয়ে সুইসাইড করবে কিন্তু যখন ও টিপের সাথে আরাভ কে খুশি দেখল তখন ওর আর সহ্য হলো না।
আর আরাভের বাড়িতে এসে এইসব নাটক করে
আর এই সব প্রমাণ করবার জন্য টিপের একটা সুযোগ এর দরকার ছিল। শুধু শুধু এইসব প্রমাণ সবাই কে দেখালে নানারকমের প্রশ্নের জবাব দিতে হবে ।সেই সময়ে মিরা এসে টিপ কে বলে আরাভের জীবন থেকে চলে যেতে আর আরাভ এর সাথে ওর বিয়ে টা যেনো হয় সেটা টিপ কে খেয়াল রাখতে ।টিপ সুযোগ পেয়ে নিল।
আর হ্যা ডিভোর্স পেপারে দুজনেই সাইন করে ছিল ঠিকই কিন্তু ।যখন উকিল চলে যায়।তখন টিপ বাইরে গিয়ে উকিলের কাছে থেকে পেপারটা নিয়ে নেয়।
এখন ,,,,,
মিরা রেগে বলল …
—“প্রমাণ কই?
—“রাফি ওকে নিয়ে আয় ।
রাফি মিরার বয়ফ্রেন্ড কে নিয়ে আসলো ।
টিপ বলল
—” যে গুলো আমাকে বলেছিলে সেই গুলো সবার সামনে খুলে বল ।
ছেলেটা সব খুলে বলল ….
রাফি ছেলেটাকে ছেড়ে দিল ।টিপ গিয়ে মিরার গালে চর দিতে লাগল।মিরা টিপ কে মারতে এলে আরাভ এসে ওর হাত ধরে নেয়। আর আরাভ ও মিরা কে দুটো চর দেয়।আরাভের মা এসে মিরা কে চর মারতে থাকে ।
রাফি আগেই পুলিশ কে জানিয়ে ছিল পুলিশ এসে মিরা কে গ্রেফতার করে ।
—” তোদের কাওকে ছাড়বো না আমি সব কটা কে মারবো দেখেনিস।
আরাভ রেগে বলল
—“নিয়ে যান অফিসার ওই মেয়ে কে ।
মিরা পুলিশ নিয়ে চলে যায়।
আরাভ এর মা টিপের কাছে এসে বলল
—“আমাকে ক্ষমা করে দে মা আমি তোকে কত কিছুই না বলেছিলি ।তুই আমরা ছেলেকে এত ভালোবাসিস।
টিপ লজ্জা পেয়ে গেল ।
কাজি ওদের উদ্দেশ্য করে বলল
—“বিয়ে কি হবে, না?
আরাভের মা হাসতে হাসতে বলল
—“হবে তো এই পাগল দুটোর
কোনো বাধা ছাড়া বিয়ে সম্পন্ন হল ।বউ সেজে টিপ বাথরুমে আরে না ফুল সাজানো ঘরে বসে আছে। এবার বাথরুমে নয়। কিছুক্ষন পর আরাভ রুমে এলো দরজাটা লাগিয়ে টিপের কাছে গিয়ে বসে বলল।
—” রানু মন্ডলের মতো ঘোমটা দিয়ে বসে আছো কেনো? আমাদের কি নতুন বিয়ে হলো নাকি?
টিপ ঘোমটা উঠিযে বলল
—” হু আমার ও সখ নাই ঘোমটা টানার মা বলল তাই ঘোমটা দিয়েছি।
—” আজ যদি ওর সাথে বিয়েটা হয়ে যেত ।
—” আপনি তো একটা লুচ্চা। নাচতে নাচতে বিয়ে করতে বসে গিয়েছিলেন।ছেলেরা তো এমনই ওদের যদি হাজার টা বিয়ে দাওয়া হয় ওরা তাতেও খুশি।
—“কি আমি লুচ্চা তোমরা মেয়েরা কি হ্যা ?
লুচ্চা তো তোমরা ।
—” তাই আমরা লুচ্চা নয় আপনারা ছেলেরা লুচ্চা ।
—” কিহহ
—“হুম জিজ্ঞেস করে দেখুন দর্শক দের ।
—” দরকার নেয।আর আমি নাচতে নাচতে বিয়ে করতে যায়নি তুমি নিজের বর এর বিয়েতে নাচ করছিলে লজ্জা করে না ।
—” হু বেশ করেছি আপনি কি করছিলেন ওই শয়তান মেয়েটাকে সেই দিন জড়িয়ে ধরে নিয়েছিলেন ।ছি ছি কি লুচ্চা বর ।
—” জ্বলছ?
—” আমার বর কে জড়িয়ে ধরবে আর আমি জ্বলবো, না আপনি একটা ব্রাহ্মদত্যি ,রাবন,
যম, রাক্ষস,
—” থাক হয়েছে ।আমারা ঝগড়া করছি কেনো?
—“তাই তো ।
আরাভ শয়তানি হাসি নিয়ে টিপের দিকে তাকিয়ে আছে টিপ আমতা আমতা করে বলল
—” ও ভাবে তাকিয়ে থাকার কি আছে ।
—” আমার বউটা কিন্তু খুব হট ।
—” খব্বিশ একটা ।
টিপ চলে যেতে নেয় ।আরাভ পেছন থেকে হাতটা ধরে নিজের বুকে টেনে নেয়।আর ঠোঁটের সাথে ঠোঁট ডুবিয়ে দিল ।
থাক থাক এখানেই স্টপ ।কাবাব মে হাড্ডি হতে হবে না ।🙈
সকাল বেলা আরাভ চোখ খুলে দেখে টিপ ওর বুকে ঘুমিয়ে আছে।কি সুন্দর লাগছে টিপ কে।
হা করে তাকিয়ে আছে আরাভ। টিপের চুল গুলো মুখে এসে পড়ছে বারবার আরাভ চুল গুলো কানে গুঁজে দিয়ে কপালে ঠোঁটের স্পর্শ ছুঁয়ে দিল ।
টিপ চোখ খুলে দেখল।আরাভ এক ভাবে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।টিপ লজ্জা পেয়ে যায়।
টিপ আরাভ কে সরিয়ে যেতে নেয়।তখনই আরাভ ওকে টেনে ওর গলায় মুখ গুঁজে দেয় ।
টিপ ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে আরাভ কে ভেংচি দিয়ে দৌড়ে ফ্রেশ হতে চলে যায।আরাভ ওর কান্ড দেখে হাসতে থাকে ।
*
*
*
*
*
বাকি
(