#মাতাল_হাওয়া
#৯ম_পর্ব
#তাসনিম
পরেরদিন সকালে নিরব তুলির রুমে গেলো তুলির সাথে কথা বলতে। কালকে রাতে একবার এর জন্যও দরজা খুলেনি তুলি। নিরব হাজার বার কথা বলতে গিয়েছিল কিন্তু বিশেষ কোনো লাভ হয়নি। তাই ভেবেছে সকালে ঠান্ডা মাথায় কথা বলবে। কিন্তু রুমে গিয়ে তুলিকে পেলোনা। ভাবলো কলেজে গিয়েছে। কিন্তু পরক্ষনেই একটা চিঠি চোখে পরলো তুলির টেবিলে। নিরব চিঠিটা হাতে নিয়ে দেখলো তুলির চিঠি। তাতে লিখা ছিল————-
—-প্রিয় নিরব ভাই,
“ভাই বললাম তাই রাগ করো না প্লিজ। ভাই ছাড়া তোমাকে অন্য কিছু ডাকার সাহস আর আমার নেই।আর প্রিয় বললাম কারণ তুমি সত্যিই আমার অনেক প্রিয় একজন। আমি এইবাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছি। আমাকে খোজ করার চেষ্টা করোনা প্লিজ। জানি চাইলেই তুমি আমাকে খুঁজে বের করে ফেলতে পারবে। কিন্তু আমি চাইনা তোমরা কেউ আমাকে খুঁজো। নিরব ভাই আমি কখনো চাবো না যে তুমি আর খালু আমার জন্য কথা কাটাকাটি করো। তোমাদের মাঝে কোনো দেয়াল সৃষ্টি হোক তাও আমার জন্য তা আমি কখনো চাবো না। আমি কালকে সব কথাই শুনেছি। খালুর কথায় যথেষ্ট যুক্তি আছে। উনি যা বলেছে সব বাস্তব কথা বলেছে সত্যি বলেছে। আমার মতো অনাথ মেয়ে তোমাদের বাড়ির বৌ হওয়ার যোগ্যতা রাখেনা। তুমি প্লিজ আমাকে ভুলে গিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করো। আমিও চেষ্টা করবো। আর হ্যা নিজের খেয়াল রাখবে সবসময় হাসিখুশী থাকবে তোমার ওই সুন্দর হাসিতে ফাটল ধরুক আমি সেটা কখনো চাইবো না।
ইতি তোমার তুলি।”
নিরব চিঠিটা পরে দাঁড়ানো থেকে বসে পরলো। বুকে মনে হচ্ছে কেউ ভোতা ছুড়ি দিয়ে অনবরত আঘাত করছে। এত অসহ্য ব্যাথা অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে যা নিরব সহ্য করতে পারছেনা।প্রচুর পরিমাণে রাগ হচ্ছে নিরবের। তুলিকে সামনে পেলে ঠাটিয়ে দুইটা চড় দিতো। কতো বড় সাহস ওর এতবড় একটা ডিসিশন নেওয়ার আগে নিরবকে একবার জানানো প্রয়োজন মনে করলোনা। সাহস কি করে হয় ওর আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা চিন্তা করে। বাবাকে আজ না হয় কাল আমি মেনেজ করে নিতাম। আমাকে এই অসহ্য কষ্ট দেওয়ার শাস্তি ওকে পেতে হবে যাতে কোনোদিন আর আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা কল্পনায়ও না আনে। যদি ওকে ঠিক না করেছি তো আমার নামও নিরব না।
তুলি সুমির বাসায় গিয়ে সব খুলে বললো। সুমি সব শুনে বললো,
—-“তুলি তুই কাজটা ঠিক করলি কিনা ভুল আমি বুঝতে পারছিনা। তবে তোর নিরব ভাইকে জানানো উচিৎ ছিল। তোর কথা শুনে যতটুকু বুঝলাম উনি তোকে অনেক ভালবাসে। উনাকে এইভাবে কষ্ট দেওয়াটা তোর উচিৎ হয়নি রে!!”
——“আমার এইটা ছাড়া কোনো অপশন ছিলনা রে!! আমার জন্য আগেও উনাদের বাবা ছেলের মাঝে অনেক ঝামেলা হয়েছে। আর এইবার যদি আমি এই ডিসিশন না নিতাম তাহলে অনেক বড় বিবাদ সৃষ্টি হয়ে যেত রে বাবা ছেলের মাঝে!! যা আমি কখনো চাইবোনা। খালা খালুর টা খেয়ে পড়ে মানুষ হয়েছি। উনাদের থেকে উনাদের ছেলে কিভাবে আলাদা করতাম বল!!!! আমি জানি খালুও যেমন এককথার মানুষ তেমনি নিরব ভাইও একরোখা। আমি জানি নিরব ভাই কোনো না কোনো ভাবে আমাকে নিজের করে নিতো যেটা খালু কখনও মানতো না। এমনকি আমাকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যেতেও দুবার ভাবতো না নিরব ভাই। আচ্ছা বাদ দে এইসব কথা আমার একটা থাকার জায়গার ব্যবস্থা করে দিতে পারবি??? অনেক উপকার হবে রে!!!”
——“হ্যা!! তুই চাইলে আমার সাথেই থাকতে পারিস। আমরা ৪ জন মেয়ে একসাথে থাকি ওরাও অনেক ভালো। তোকেও দেখবি আপন করে নিবে অনেক তারাতাড়ি।”
—–“বাচালি রে আমায়!! আমি একটা জব মেনেজ করে নিব রে তারাতাড়ি। অইটুকু পর্যন্ত একটু টাইম দিস প্লিজ। আমার হাতে এখন বেশি টাকা নেই রে!!”
—–“কি যে বলিস না!! বিপদে বন্ধু বন্ধুর পাশে না থাকলে কে থাকবে শুনি। তুই কোনো চিন্তা করিসনা। তোর যতদিন খুশি আরামে থাকতে থাক। আর আমিতো আছিই তোর পাশে।”
সুমির কথা শুনে শান্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো তুলি। আপাতত একটা থাকার জায়গা হয়েছে এটাই অনেক। এখন একটা পার্টটাইম জব খুঁজে নিলেই নিশ্চিন্ত। না জানি খালামনি কি হালে আছে যতকিছুই হোক আমাকে তো মেয়ের মতো কোলে পিঠে করে মানুষ করেছে। নিজের অনিচ্ছায় খালামনিকে অনেক বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছি। কান্না করে চোখ ফুলাচ্ছে নিচ্শিত। আর নিরব ভাই উনি খুব রেগে আছে আমার উপর জানি হয়তো সামনে থাকলে ঠাটিয়ে দুইটা চড় মারতো। এইসব ভেবে ফোস করে নিঃশ্বাস ফেলে তুলি।
কেটে গেল ৩ মাস। তুলি একটা পার্টটাইম জব নিয়ে নিয়েছে। কলেজ চাকরি সবমিলিয়ে অনেক ব্যস্ত সময় কাটে তুলির। কিন্তু একাকী গভীর রাতে নিরবের কথা মনে করে চোখের জল ফেলে। বিষাদে ভরে যায় মনটা। বাসা থেকে চলে আসার পরে একটাবার ও খোজ নেয়নি ওর নিরব। তাহলে কি ভুলে গেছে তুলিকে ওর নিরব???? কিছুদিনের মোহ ছিল সব??? খালামনি অনেকবার তুলির খোঁজ নিয়েছে। তুলিকে প্রতিবার খরচাপাতি ও দিয়ে গেছে। তুলি নিতে না চাইলে ও জোর করে দিয়ে গেছে। অনেকবার এসে তুলিকে অনুরোধ করেছে যাতে উনার সাথে ফিরে যায় কিন্তু তুলি ওর কথায় অনড়। তাহলে কি খালামনির কাছ থেকে জেনে নেয় নিরব ভাই আমার কথা কিন্তু খালামনি একবারও নিরব ভাইয়ের বেপারে কিছু বলে নাই তার মানে উনি আমার কথা খালামনিকে কিছুই জিজ্ঞেস করে না। মিছিমিছিই আমি ভাবছি এসব!! নিরব ভাই ভুলে গেছে আমাকে পুরোপুরি। এইসব ভেবে চাপা অভিমানে কান্নায় ভেংগে পরলো তুলি।
নিরব আর আগের মতো নেই অনেক পাল্টে গেছে। চোখের নিচে কালি পরেছে, উস্কো খুস্কো চুল, মুখটা মলিন হয়ে গেছে, দাড়ি গুলো বড় হয়ে আছে। নিরবের চেহারা বাসায় সারাদিনও দেখা যায়না। সকালে অফিসে চলে যায় আবার একদম রাতে আসে। সালেহা বেগম খুব চিন্তিত নিরবকে নিয়ে। ছেলেটা তার যে অনেক কষ্ট নিয়ে ঘুরে বেরাচ্ছে মা হয়ে তা সহ্য করতে পারছেনা আর না পারছে কিছু করতে।একদিকে উনার স্বামী অন্যদিকে উনার ছেলে। উনি বারবার চাইছিল তুলির সাথে কথা বলবে কিন্তু নিরব রাজি হয়নি। তুলিকে কোনোভাবে বাসায় আনতে পারলে কিছু একটা ব্যাবস্থা করা যেত কিন্তু ছেলেটা তো যেদ ধরে আছে। কি যে করবে উনি বুঝে পান না।আর এইদিকে নিরব খাবার দাবার ঠিক মতো করেনা, সারারাত ঘুমাতে পারেনা ঠিকমতো, ছোটফোট করতে করতে নির্ঘুম রাত কাটায়। তুলিকে ছাড়া বাচা যে ওর অসম্ভব বেপার এইটা দিন দিন তিলে তিলে ও টের পাচ্ছে। তুলি যে ওর অস্তিত্বের একটা অংশ, ওর ভালোবাসা, ওর বেচে থাকার প্রেরণা। তুলিকে ছাড়া একবিন্দু নিঃশ্বাস নিতেও ওর কষ্ট হচ্ছে!!! ওকে ছাড়া যে ও অসম্পূর্ণ, নিঃস্ব। কিন্তু তারপরও নিরব তুলির কাছে ওকে ফিরিয়া আনতে যায়নি। একটা চাপা অভিমানে ভরে আছে মন। কিন্তু আর পারছেনা তুলিকে ছাড়া থাকতে। তুলিকে কষ্ট দেওয়ার প্লেন করে নিজে আরো বেশি কষ্ট পাচ্ছে। মার কাছে তুলির সব খবর নিতো সবসময় নিরব। তুলি কোথায় আছে, কার সাথে আছে, কিভাবে কি মেনেজ করে সবই জানে নিরব।সুমির কাছে টাকা পাঠায় নিরব সালেহা বেগমের নাম করে। সুমিকে বারণ করেছে যাতে তুলিকে কিছু না বলে।কিন্তু তুলির সামনে যাওয়ার সঠিক সময় হলে যাবে নিরব। তার আগে না। কিন্তু মনে হচ্ছে তুলির সামনে যাওয়ার সময় হয়েছে এখন ওকে যে তিলতিল করে আগুনে পুরিয়েছে এখন ও তুলিকে ছারখার করে দিবে। শাস্তি তো পেতেই হবে তুলিকে ওর ভালোবাসা নিয়ে ছিনিমিনি খেলার মজা ওকে বুঝাবে নিরব। মুখে বাকা হাসি দিয়ে বললো,
—–“সুইটহার্ট!!!! আসছি আমি তোমার কাছে। তোমার কি হাল করি আমি!!! জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ!!!!”
চলবে………………
(দয়া করে যারা গল্প পরছেন প্লিজ একটা ছোট্ট করে রিয়েক্ট দিয়ে যাবেন তাতে আমার বুঝতে সুবিধা হবে যে আপনাদের গল্পটা ভালো লাগলো কিনা। অনেকে গল্প পরেন তো ঠিক আছে কিন্তু কোনো রিয়েক্ট করেন না। আমার প্রথম লিখা গল্প তাই কিছু ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃস্টিতে দেখবেন)
[বিঃদ্রঃ দয়া করে কার্টেসি ব্যাতীত কপি করবেন না।]