#মিতুর_গল্প
#২য়_পর্ব
#অনন্য_শফিক
‘
‘
‘
ধ্রুব অহংকারের আগুনে পুড়ছিলো এতোক্ষণ।সে শুধু সময়ের অপেক্ষায় ছিল। এবার হাতে সময় এলো। এবার সে বুঝিয়ে দিবে তার মামার গায়ে হাত তোলা আর তাদের অপমান করার পরিণাম কতোটা ভয়াবহ হতে পারে!
মিতু এসবের কিছুই ভাবেনি।সে বরং খুশি মনে বাসর ঘরে বসে বসে তার প্রিয়তমো স্বামীর জন্য অপেক্ষা করছিলো।সে মনে মনে ভাবছিলো,ধ্রুব তার কাছে গিয়ে মিষ্টি করে কথা বলবে। ধীরে সুস্থে আঁচলটা মাথা থেকে নীচে নামিয়ে তার কপালে চুমু খাবে।
কিন্তু অদ্ভুত বিষয় হলো ধ্রুব এসবের কিছুই করলো না। সে ঘরে ঢুকেই ঠাস করে দরজাটা বন্ধ করে দিলো ভেতর থেকে। তারপর মিতুকে ধমক দিয়ে বললো,’সাহস কতো বড় বিছানার উপর বসেছে! এক্ষুনি এখান থেকে নাম বলছি!’
মিতু ভয়ে কেঁপে উঠলো হঠাৎ ধমক খেয়ে।সে ভয়ে ভয়ে সামনে তাকাতেই দেখলো ধ্রুবর ভয়ংকর চেহারাটি।ওর চোখ লাল টকটকে। রাগে সে কাঁপছে!
মিতু কিছুই বলতে পারলো না। চুপচাপ বিছানার উপর বসে রইল।
এবার ধ্রুব নিজে এসেই মিতুর একটা হাত ধরে টান দিয়ে ওকে খাট থেকে নিচে ঝটকা মেরে ফেলে দিলো।মিতু ফ্লোরে পড়ে গিয়ে অনেক ব্যথা পেলো।সে ব্যথায় ককিয়ে উঠে দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে রাখলো। খুব কান্না পাচ্ছে তার।চোখ থেকে গরম জল গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে গালে।
ধ্রুব খাটের উপর পায়ের উপর পা তুলে বসে ওর দিকে তাকালো। তাকিয়ে বললো,’এখন থেকে তুই আমার সাথে সংসার করবি। বিয়ের শখ তোর আমি মিটিয়ে দিবো!তোর একার না তোর রাগী ফুফাতো ভাইটার শখও আমি মিটাবো। এবার বল,তোর এক্স কে?কার সাথে শুয়েছিলি তুই?শুভর সাথে তাই না?’
মিতু লজ্জা এবং ঘৃণায় মরে যাচ্ছে যেন! ছিঃ!ধ্রুব এমন অসভ্য ইতর!শুভ ভাইয়াকে নিয়ে এসব কী নোংরা নোংরা কথা বলছে! মিতু তো ভালো করে জানে এই পৃথিবীতে শুভ ভাইয়ার মতো ভালো ছেলে হয় না!
সে তখন বলেই ফেললো রাগে,’শুনুন,শুভ ভাইয়াকে নিয়ে একটিও বাজে কথা বলবেন না।আমি এটা মেনে নিবো না!’
সরল মনেই কথাটা বলেছিল মিতু। কিন্তু এটাকেই টোপ হিসেবে নিলো ধ্রুব।সে বিছানা থেকে উঠে এসে মিতুর সামনে বসলো। তারপর ওর চিবুকটা উঁচু করে ধরে বললো,’নাগরকে নিয়ে কিছু বললে ঝাল ধরে তাই না?এটা ধরা স্বাভাবিক। পৃথিবীর সব মেয়েরাই তার নাগরকে নিয়ে কিছু বললে হজম করতে পারে না!
তো ওর জন্য যেহেতু তোর এতো মায়া দরদ উথলে উঠছে তো তাকে বিয়ে করলি না কেন তুই?ওর সন্তানও তো তোর পেটে ছিল? নাকি
ওখানের মজা ফুরিয়ে গেছে? নতুন কাউকে চায় তাই না? আচ্ছা বল, আমার পর নতুন আর কাকে বেছে নিবি তুই? আমার বাড়ির গাড়ির ড্রাইভারকে তাই না?নাকি মাঝ বয়সী দারোয়ানকে?’
কথাগুলো বলে হেসে উঠলো ধ্রুব।
মিতুর মাথায় রক্ত উঠে গেছে ওর কথাগুলো শুনে!সে কিছু একটা বলতে যাবে এর আগেই ধ্রুব তাকে শক্ত করে ধরে ফেললো। তারপর একজন ধর্ষক যেভাবে তার শিকারকে উপভোগ করে ঠিক সেভাবেই উপভোগ করলো ধ্রুব তাকে।মিতু ওর তলে পিষ্ট হয়ে চিৎকার করলো।কাঁদলো।এতে কারোরই দয়া হলো না। এই বাড়ির সবগুলো মানুষ অহংকারী। ওদের কাছে মায়ার কোন বালাই নেই। ওদের যা আছে তা ক্ষোভ আর অহংকার!
ধ্রুবর ইচ্ছে টা পূরণ হয়ে গেলে সে তার কাছ থেকে দূরে ছুঁড়ে মারলো মিতুকে।যেন ও কোন পঁচা বস্তু। ওকে দূরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বললো,’আজ থেকে তুই এই ঘরের দাসীর মতো থাকবি।তোর জন্য এই ঘরের দরজা সব সময় রুদ্ধ।তুই ইচ্ছে করলেও আর কারোর সাথে কোন সময় কোন ধরনের যোগাযোগ করতে পারবি না।’
বলে ওর কাছ থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লো।
মিতু ফ্লোরের উপর উপোড় হয়ে পড়ে থেকে কাঁদতে লাগলো।ওর শরীরটা ব্যথায় অসাড় হয়ে আসছে। নিজেকে তার বড় অপয়া অলক্ষ্মী মনে হচ্ছে।সে জানে না একটা জীবন এমন কেন?এতো কষ্টের!এতো অপমান আর ঘ্লাণির!
সে তো কখনো কোন পাপ করতে জানে না!জেনে বুঝে কোনদিন একটি সামান্য পিঁপড়াও মেরে ফেলেনি সে। তবে তার কেন এতো কষ্ট?কেন এমন নরক যন্ত্রণা তাকে সহ্য করতে হচ্ছে!
এরপর ধ্রুব এ ঘর ছেড়ে চলে গেলো। মিতু কোন রকম খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে নিজেকে পবিত্র করে নিলো। তারপর বিছানায় এসে গা এলিয়ে দিলো।তার এই মুহূর্তে ভীষণ ঘুম পাচ্ছে। আপাতত তাকে ঘুমোতে হবে। এরপর অন্য কিছু ভাবনা!
কিন্তু মিতু খুব বেশিক্ষণ ঘুমোতে পারলো না। ফজরের পরপর তাকে ডেকে নিলো ধ্রুবর মা অহনা শিকদার। মিতু শাশুড়ির ডাক শোনে খুড়িয়ে খুড়িয়ে বিছানা থেকে নেমে এসে দরজাটা খুলে দিলো।অহনা শিকদার ওর দিকে তাকিয়ে চোরা হাসি হাসলো। হেসে বললো,’আমার সাথে এসো।’
মিতু তার শাশুড়ির পেছন পেছন হেঁটে গেল।
অহনা শিকদার ওকে নিয়ে রান্নাঘরে ঢুকলো। তারপর চার জাতের তরকারি,ডাল,আর সাদা ভাত রান্না করার কথা বললো।এটাই নাকি এ বাড়ির নিয়ম। বিয়ের প্রথম দিন থেকেই এ বাড়িতে পুত্রবধূরা রান্না করে।
মিতু প্রতিবাদ করতে গিয়েও প্রতিবাদ করতে পারলো না। তবে সে মিনমিনে গলায় বললো,’মা, আমার শরীরটা খারাপ লাগছে কেমন! আপনি আমার সাথে থাকুন! দেখিয়ে দেখিয়ে দিন কীভাবে কী করতে হবে!’
অহনা শিকদার কিছু বলার আগেই এখানে এসে উপস্থিত হলো গতকাল ধ্রুবর যে মামা শুভর হাতের চড় খেয়েছিল তার স্ত্রী।সে এসেই রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে উঠে বললো,’ঢং করো না? তুমি কত বড় লোকের মাইয়া আমরা জানি না মনে করছো? শুধু এইগুলো না আরো অনেক কাজ আছে।আজ সারাদিন তুমি কাজ করবা। বিয়ের শখ তোমার মিটাইয়া দেওয়া হবে! গতকাল তোমরা যেটা করছো এর শোধ তোলার আগ পর্যন্ত তোমার রেহাই নাই!’
মিতু যেন ভয়ে এবার মোষঢ়ে গেল।সে বোকার মতো কেমন তাকিয়ে রইল তার শাশুড়ির দিকে।তার শাশুড়ি এবার ধমক দিয়ে তাকে বললো,’আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে তো বলা হয় নাই।বলা হয়ছে কাজ করতে। জলদি কাজ শুরু করো!’
কথাটা বলে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে গেল অহনা শিকদার। এরপর বেরিয়ে গেল ধ্রুবর মেজো মামী।যাওয়ার সময় ধ্রুবর মেজো মামী মিতুর কানের কাছে ফিসফিস করে বলে গেল,’মাত্র তো কেবল শুরু। এরপর টের পাবি তুই আসল মজা!’
মিতু যেন এ বাড়িতে এসে মস্ত এক বোকাই বনে গেছে। নিরুপায় হয়ে গেছে সে।তার মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে ওরা লুকিয়ে ফেলেছে পর্যন্ত। এখানে সে পুরোপুরি বন্ধ। মানুষ যে এমন নিষ্ঠুর আর বর্বর হয় তা সে কোনদিন কল্পনাও করেনি।
কিন্তু সে এখন পর্যন্ত ধ্রুবর বড় ভাই ইরমকে দেখতে পায়নি নিজ চোখে।এর ওর মুখে শুনেছে ইরমের কথা। শুনেছে বড় অহংকারী ইরম। তবে সে এখনও দেখেনি। ওকে একবার সে দেখতে চায়।ওই লোকটির জন্যই তো সব সমস্যার শুরু!
‘
এসব ভাবতে ভাবতেই রান্নাটা করে ফেললো মিতু।রান্নায় তার হাত পাকা।মা নাই ছোট বেলা থেকেই।তাই শৈশবেই তার রান্না বান্নার হাতেখড়ি। ভালো রাঁধতে পারে সে। আত্মীয়-স্বজনদের ভেতর তার রান্না নিয়ে উচ্চ প্রশংসা আছে। কিন্তু এখানকার কেউ তার রান্নায় সন্তুষ্ট হতে পারলো না।ওর শাশুড়ির আদেশে ও যখন ভাত তরকারি বেড়ে নিয়ে বাড়ির সবার সামনে উপস্থাপন করলো তখন তারা নানান কথা শুনাতে শুরু করলো। একজন বলছে লবণ বেশি তো অন্যজন বলছে ঝাল বেশি। আবার কেউ কেউ বলছে,যেরকম ঘরে বড় হয়েছে রান্না তো ওরকমই শিখবে।
কেউ ওয়াক ওয়াক করে বমি করার চেষ্টা করছে।
কেউ কেউ টেবিল ছেড়ে উঠে গেছে। খাবার উল্টো করে ফেলে দিয়েছে নিচেও!
মিতুর খুব কান্না পাচ্ছিলো তখন। তবুও সে নিজেকে সামলে নিয়ে তার ঘরের দিকে চলে যাচ্ছিলো হেঁটে হেঁটে। কিন্তু ঘরের দিকে আর যেতে পারলো না।দু’ কদম সামনে হাঁটতেই তার শাশুড়ি অহনা শিকদার ওপাশের একটা ঘর দেখিয়ে দিয়ে বললো,’ওই ঘরে আমার বড় ছেলে ইরম আছে।ওর খাবার দিয়ে এসো গিয়ে!’
মিতুর মুখ ভয়ে অতটুকু হয়ে গেছে। তবুও সে ওখানে যাবে।তার খুব ইচ্ছে এই মানুষটিকে একবার দেখতে। যদিও সে আগে বাড়ির অন্যান্য মানুষের মুখ থেকে শুনেছে ইরমের চেহারা নাকি অহংকার পূর্ণ। দেখতে কেমন নাটক সিনেমার ভিলেনদের মতো লাগে।তারও ধারণা মানুষটির চেহারা এমন-ই হবে।যে মানুষটি তার উপর শুধু শুধু অত বড় একটা অভিযোগ তুলে তার সুন্দর জীবনটা নরক করে তুলেছে তার চেহারা কোন ভালো মানুষের চেহারার মতো হতে পারে না!
‘
মিতু ভাত আর তরকারি বেড়ে নিয়ে ওর শাশুড়ির দেখিয়ে দেওয়া ঘরটায় যেতেই চমকে উঠলো।তার সারা শরীর কেমন কেঁপে উঠলো।চোখ হয়ে এলো ঘন অন্ধকার! চেয়ারের উপর বসে আছে যে এই কী সেই ধ্রুবর বড় ভাই ডাক্তার ইরম নাসের? এই ইরম নাসের তো তার আরো তিন বছর আগের চেনা। এই ইরম নাসেরকে তার চেয়ে আর ভালো চেনে কে? এই লোকটিই তো একবার—-
‘
#চলবে
‘