মিতুর গল্প পর্ব ৩

#মিতুর_গল্প
#৩য়_পর্ব
#অনন্য_শফিক



এই লোকটিই তো একবার তার সর্বনাশ করতে চেয়েছিল।মিতু সেদিনের ভয়াবহ দৃশ্যটা চোখ বুজলে এখনও স্পষ্ট দেখতে পায়।সে তখন ক্লাস টেনে পড়ে।যেদিনকার ঘটনা এটি সেদিন ছিল তার প্রিয় বান্ধবী এনার বড় ভাই জয়ের বিয়ে। সেই বিয়েতেই এই ইরম এসেছিল এনাদের বাড়িতে গেস্ট হিসেবে। ইরম নাকি জয়ের বন্ধু। একসাথে ওরা কলেজে পড়েছে।যদিও মিতু তখন ওর নাম ইরম বলে জানতো না।জানতো নাসের বলে। বিয়ের দিন রাতে মিতু শুয়েছিলো এনার সাথেই। কিন্তু মাঝরাতে হুট করে কারোর হাতের স্পর্শে সে ঘুম থেকে জেগে উঠেছিল। চমকে উঠে তখন দেখে এনা এখানে নেই।এনার জায়গায় শুয়ে আছে এই ইরম। এবং এই ইরমই তার শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয়ার চেষ্টা করছে।
মিতু চিৎকার দিতে গিয়েও থেমে গেল হঠাৎ।কী সর্বনাশের কথা! এমন হলো কী করে?দরজাটাও ভেতর থেকে আটকে দেয়া।এনা কোথায় তবে?এনা এখানে নাই অথচ এই বদমাশ লোকটা এখানে কী করে এলো?কী চায় ও তার কাছে?
মিতু ভয়ে মোষঢ়ে উঠে বললো,’কী চান আআপপপনি এখানে?এনা কোথায়?’
ইরম চুপিচুপি বললো,’একদম সাউন্ড করবা না!’
মিতু ভয় পাচ্ছে।সে ভয়ে ভয়ে বললো,’কে–কেন? সাউন্ড করবো না কেন? আপনার এখানে কী?’
ইরম ওর মুখ চেপে ধরে বললো,’আমি তোমায় ভালোবাসি।তাই তোমার কাছে এই রাত নিশিতে এসেছি! এখন তোমায় আদর করে দিবো লক্ষ্মীটি!’
মিতুর গা ঘিন ঘিন করছে কেমন।ভয়ও করছে তার ভীষণ।সে জানে এই লোকটা নাকি খুব ভালো! মেডিকেলে শেষ বর্ষে পড়ে।মেডিকেল পড়ুয়া ছেলেরা সাধারণত খুব ভালো হয়। কিন্তু ও এমন কেন?
মিতু ওর কাছ থেকে ছুটতে চেষ্টা করলো প্রাণপণে। কিন্তু ইরম তাকে শক্ত করে ধরে ফেলেছে। গায়ের জামাটা টেনে ছিঁড়ে ফেলতে চায়ছে।
মিতুর কেমন কান্না পাচ্ছে।সে জানে না এনাও কী এর সাথে জড়িত কি না!জড়িত না হলে এই লোক এই ঘরে আসার সুযোগ পায় কী করে?আর এনাই বা এই মাঝরাতে তাকে এখানে একলা ফেলে রেখে উধাও হয়ে যায় কী করে?
মিতু বললো,’আমায় ছেড়ে দিন বলছি।আল্লাহর দোহাই লাগে।আমি আপনার ছোট বোনের মতো ভাইয়া। আমার সাথে এসব করবেন না প্লিজ!’
ইরম ওর কাছে বড় আদুরে গলায় তখন বলেছিল,’আমি তো তোমায় ভালোবাসি। দু’দিন পর তুমি আমার বউ হবে। তুমি মেনে নাও আমায় লক্ষ্মীটি! এমন করো না প্লিজ!’
মিতু তখন পাগল প্রায় হয়ে গেছে।যে করেই হোক এই শয়তানের কাছ থেকে নিজেকে রক্ষা করতেই হবে আজ।মিতু দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলো।সে বললো,’শুনুন, আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে। আগে আমার শর্তগুলো মেনে নিবেন তারপর আমি আপনার কাছে নিজেকে সমর্পণ করবো!’
ইরম অস্থির গলায় বললো,’কী শর্ত বলো। এক্ষুনি বলো।’
মিতু বললো,’এখানে নয়।আমরা বাইরে কোথাও যাই চলেন!’
ইরম চতুর ছেলে।সে সঙ্গে সঙ্গে বোঝে ফেললো মিতু তার হাত থেকে ফসকে যাওয়ার চেষ্টা করছে।তাই সে বললো,’এখানেই ভালো। বাইরে যাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই!’
মিতু তবুও বুদ্ধি করে বললো,’এনা।এনা যে এসে পড়বে!’
ইরম বললো,’ও এখানে আসবে না!’
বলেই ইরম মিতুর দুটো হাত দু দিকে সরিয়ে নিলো। তারপর জোর করেই ঠোঁটে চুমু খেলো। মিতুর মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে সে নরকের আগুনে জ্বলছে। কিন্তু মান সম্মান হারাবার ভয়ে চিৎকার পর্যন্ত করতে পারছে না।তার দু চোখ বেয়ে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে।সে কিছুতেই ভাবতে পারছে না এনা তার সাথে কী করে এমন করতে পারলো!
ইরম এবার মাতালের মতো আচরণ করছে।মিতু বুঝতে পারছে তার আর কিছুই করার নেই। সবকিছু শেষ হয়ে যাবে আজ!
সে শেষ বারের মতো অনুনয় করে বললো,’আপনি আমার সম্মান ভিক্ষা দিন ভাইয়া!প্লিজ আমার সাথে এই কাজটা করবেন না!’
কিন্তু কে শোনে কার কথা!ইরম যেন তখন আরো ক্ষীপ্র হয়ে উঠলো।
মিতু যখন প্রায় আশা ছেড়ে দিয়ে আল্লাহকে ডাকতে লাগলো ঠিক তখনই দরজায় কড়া নড়ে উঠলো।কেউ ধীরে ধীরে নক করছে দরজায়।
ইরম রাগে ক্ষোভে ফেটে পড়ছে যেন।সে তখন মিতুকে বললো,’আমি এখানে লুকিয়ে থাকবো। কাউকে কিচ্ছু বলবে না কিন্তু!যদি বলো তবে তোমাকে আমি খুন করবো!’
মিতু কী আর তখন কোন কথা বলে।সে তড়িঘড়ি করে বিছানা থেকে লাফিয়ে নেমে দরজার কাছে গেল।আর ইরম গেল খাটের নিচে লুকোতে।

মিতু দরজা খুলেই জার জার করে কেঁদে ফেললো।তার সামনে এনা দাঁড়ানো।কোথা থেকে যেন এসেছে।এনাকে সে জাপটে ধরে কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,’আমায় ফেলে রেখে কোথায় গিয়েছিলি তুই?’
এনা খুব সাবধানে বললো,’চুপ।আস্তে।কেউ শোনে ফেলবে।আয় রুমে গিয়ে সব বলছি!’
মিতু তেড়ে উঠে ঝাঁজালো গলায় বললো,’এক্ষুনি বল বলছি। তুই কাকে রেখে গিয়েছিলি এই ঘরে? আমার সাথে তুই এমন করলি কী করে এনা?তুই কী আমার বন্ধু না শত্রু?’
এনা ভীষণ রকম অবাক হলো।সে সত্যিই কিছু বুঝতে পারছে না।তাই সে বললো,’কী বলছিস এসব মিতু?কী হয়েছে তোর?আমি আবার ঘরে কাকে রেখে যাবো!তুই তখন ঘুমে ছিলি। হঠাৎ নুহাশ ফোন করেছে। ওর নাকি ঘুম আসছে না। আমার সাথে দেখা করতে চায়।তাই তোকে আর জাগাইনি ঘুম থেকে। চুপচাপ আমিই বেরিয়ে গিয়েছিলাম!আর এখন তুই কী সব বলছিস?’
মিতু আরো রেগেমেগে আগুন হলো।সে এবার চেঁচিয়ে উঠে বললো,’জয় ভাইয়ার দুশ্চরিত্র বন্ধুটাকে তুই এ ঘরে রেখে যাসনি আমার ক্ষতি করতে?’
এনা চমকে উঠলো।সে বললো,’কী সব আবোল তাবোল বকছিস তুই মিতু? ভাইয়ার বন্ধুকে আমি এখানে রেখে যাবো কেন?তাও তোর ক্ষতি করতে!
কী হয়েছে বল তো আমায় তুই?’
মিতু ওর হাত ধরে টেনে ভেতরে নিয়ে এলো ওকে। তারপর খাটের নিচে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বললো,’ওই দেখ কে এটা!’
মিতু কথাটা বলে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো।
ইরমকে খাটের নিচে আবিষ্কার করে এনার রাগে শরীর কাঁপতে লাগলো। এই লোকটা যে লম্পট এটা সেও ভালো করে জানে।ওর তাকানো দেখলেই বোঝা যায় ওর চরিত্রে সমস্যা!
ইরম ওদের দেখে কাঁচুমাচু করতে লাগলো।সে বুঝে গেল এরপর পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে যেতে পারে। এখানে লোক আরো বাড়তে পারে।তাই চুপচাপ খাটের নিচ থেকে বেরিয়ে এলো সে। তারপর মাথা নিচু করে যেই না চলে যেতে চাইলো এ ঘর থেকে তখনই দৌড়ে গিয়ে মিতু ওর সামনে দাঁড়ালো। তারপর রাগী রাগী গলায় বললো,’দাঁড়া এখানে।এক পাও সামনে যাবি না তুই!’
ইরম যেন ভেবাচেকা খেয়ে গেল সঙ্গে সঙ্গে।সে হা করে তাকিয়ে রইল মিতুর দিকে। কিন্তু এভাবে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলো না। ওর গালে মিতুর হাতের স্যান্ডেলের বাড়ি খেয়ে তব্দা খেয়ে গেল। এবং মাথা নিচু করে ফেললো।
মিতু এবার ত্যাজী গলায় বললো,’এবারের মতো তোকে ছেড়ে দিলাম। এরপর থেকে যদি এমন কিছু করার সাহস করিস তুই তবে তোকে জন্মের শিক্ষা দিয়ে দিবো একেবারে কুত্তার বাচ্চা!’
ইরম অপমানিত আর অপদস্থ হয়ে চুপচাপ নিচ দিকে তাকিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল। এরপর আর সে কখনোই মিতুর সামনে পড়েনি!
সেদিন অবশ্য এনা মিতুর সাহসের খুব প্রশংসা করেছিল। কিন্তু ভয়ও পেয়েছিল সে।ভয় পেয়ে মিতুকে বলেছিল,’মিতু এইসব ছেলেরা সাইকো টাইপের হয়। এদের মস্তিষ্ক বিকৃত। আল্লাহ জানে ভবিষ্যতে আবার তোর সাথে খারাপ কিছু করতে চায় কি না ও!’
মিতু তখন সাহস করেই বলেছিল,’এরপর যদি এরকম কিছু করার সাহস করে তবে ওকে আমি নিজের হাতে খুন করবো। কুকুর দিয়ে ওর লাশ খাওয়াবো আমি!’
কিন্তু মুখ দিয়ে এসব বড় বড় আর সাহসী সাহসী কথা বললেও মিতুর মনে ভীষণ ভয় ছিল।ভয় ছিল এটা যে কখন জানি আবার এই সাইকো টাইপের বদ লোকটা তার ক্ষতি করতে চেষ্টা করে!
এই ভয় বুঝি আজ সত্যি হতে চললো।
এর আরো এক বছর পর বিয়েটা হলো মিতুর।তাও ওই বদ লোকটার ছোট ভাইয়ের সাথে। আচ্ছা এই বিয়ের পেছনে কী ইরমের হাত আছে?ওর কু পরিকল্পনা অনুযায়ী এই বিয়েটা হয়েছে? ইরমের সামনে দাঁড়িয়েই থরথর করে কাঁপতে শুরু করলো মিতু!

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here