মোনালিসা পর্ব ৫১

মোনালিসা
লেখা-ইসরাত জাহান তানজিলা
পর্ব-৫১
________________
দিন গুলো বেশ কাটছে সব মিলিয়ে। মোনার মাঝেও পরিবর্তন এসেছে। চেহেরায় হাস্যেজ্বল একটা ভাব থাকে। আগের মত বিষণ্ণতা কিংবা বিমর্ষতা নেই। জীবনের এই‌ পর্যায়ে মোনার মনে হচ্ছে প্রিয়ম’ই সেই পুরুষ,যার জন্য মোনা হাজার বছর আরাধনা করেছে। বেশির ভাগ রাতেই প্রিয়ম মোনার বাসায় থাকে। মাঝে মাঝে দুই-একবার বাসায় যায়।
শীতের প্রকোপ বাড়ছে দিন দিন। বিকাল বেলা গায়ে সোয়েটার কিংবা চাদর চাপাতে হয়। মোনা আর প্রিয়ম ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। মোনা আইসক্রিম খাচ্ছে আর প্রিয়ম বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে আছে মোনার দিকে। কিছুক্ষণ পর পর বলছে,
– “শীত‌ পড়তে শুরু করেছে তার উপর তোমার টনসিলের সমস্যা। আইসক্রিম’টা ফেলে দেও না মোনা।”
প্রিয়মের কথা যেন মোনার কর্ণপাত হলো না। মুখো ব্যঁজনের কোন পরিবর্তন নেই। চেহেরায় নির্লিপ্ত ভাব বিদ্যমান। আইসক্রিম খাওয়া শেষ হলে বলে,
– “কিছু হবে না।”
– “রাতেই বলবে তোমার জ্বর এসেছে গলা ব্যথা শুরু হয়েছে।”
মোনা প্রত্যুত্তর না আকাশের দিকে তাকালো। কিছুক্ষণ পর বলল,
– “শীত লাগে।”
প্রিয়ম এগিয়ে এসে নিজের গায়ের চাদরের মাঝে মোনা’কে আবদ্ধ করে। কিছু মুহূর্ত নিঃশব্দে কাটে। হঠাৎ মোনা হেসে উঠে বলে,
– “খালা যদি এখন আমাদের এই অবস্থায় দেখে?খালার প্রতিক্রিয়া কি হবে?”
মোনা আবার বলে,
– “খালা যদি কখনো রাতে এসে আপনাকে আমার বাসায় দেখে?”
মোনার বাঁধ ভাঙ্গা হাসি।প্রিয়ম ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে। এগুলো কি কোনো হাসির কথা?মোনার হাসি থামলে প্রিয়ম বলে,
– “এগুলো কোন হাসির কথা?”
– “না হাসির কথা না। কিন্তু হঠাৎ হাসি পেলো।”
– “এভাবে হাসবে সব সময়।হাসলে তোমায় লিওনার্দো ভিঞ্চির মোনালিসার মত লাগে।”
এই কথা’টা শুনেই মোনার জ্যাকের কথা মনে পড়ে গেল।জ্যাক মাঝে মাঝেই বলত এটা। প্রিয়ম আবার বলে,
– “প্রতিদিন যদি অফিস এভাবে ছুটি থাকত।”
– “শুধু অফিস ফাঁকি দেওয়ার ফন্দি সব সময়।”
– “না, না তোমার কাছাকাছি থাকার ফন্দি।”
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে চারদিকে হালকা কুয়াশা পড়তে থাকে। অন্ধকার ছাদ। চারপাশের বিল্ডিং এর লাইটের আলোতে ছাদে অন্ধকারের ঘনত্ব কমে। রাতের শহর এত সুন্দর! মোনার চোখ জুড়িয়ে যায়। মনে হয় কোন রূপকথার রাজ্যে আছে।
______________________________________
মোনা টেবিলে খাবার বেড়ে নিশান’কে ডাকছে।নিশানের কোন সাড়া নেই। মোনা রুমে গিয়ে দেখে নিশান গেম খেলছে।মোনা ছোঁ মেরে ফোন’টা নিয়ে গেল।
– “সারাক্ষণ গেম খেলার নেশা হয়েছে?আর কখনো মোবাইল ধরবে না। কতক্ষণ ধরে ডাকছি। খেতে আসো।”
এক শ্বাসে কথা গুলো বলে মোনা টেবিলের দিকে হাঁটতে লাগলো। নিশান মোনার পিছু পিছু গেল। মোনা নিশানের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে।প্রিয়ম সেই কখন গোসল করতে ঢুকেছে। মোনা গলা উঁচিয়ে ডাকল,
– “এখনো হয়নি?গোসল কতদিন লাগবে?”
মোনা বাথরুমের দরজায় ধাক্কা দিলো। দরজা খোলাই ছিলো।প্রিয়মের গোসল শেষ,কোমরে তোয়ালে পেঁচানো। মোনা এক নজর তাকিয়ে চোখ অন্যদিকে ফিরিয়ে বলল,
– “এতক্ষণ লাগে গোসল করতে?”
– “ওদিকে ফিরে আছো কেন?আমার দিকে তাকাও। বললাম এক সাথে গোসল করি। একটু রোমান্টিক হও মোনা পাখি।”
মোনা এসব কথায় অস্বস্তি বোধ করে যেন। প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়ে বলে,
– “নাস্তা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে।”
এই টুকু বলে মোনা চলে গেল।প্রিয়ম অফিসের উদ্দেশ্যে রেডি হয়ে টেবিলে আসলো। মোনার দিকে তাকিয়ে বলল,
– “খাইয়ে দেও না একটু।”
– “নিশান বাসায়। আপনার লাজ-লজ্জার ঘাটতি আছে। কিন্তু আমার ঘাটতি নেই।”
প্রিয়ম হাসলো।মোনা প্রিয়মের প্লেটে খাবার তুলে দিতে দিতে বলল,
– “খালা যদি আসে এখন? আচ্ছা আপনি কোথায় থাকেন,বাসায় কেন যান না, এগুলো জিজ্ঞেস করে না খালা?”
প্রিয়ম খেতে খেতে বলল,
– “না। আমি আগে থেকেই এমন। দরজায় লুকিং গ্লাস লাগানো আছে,তোমার খালা আসলে আমি বাথরুমে গিয়ে বসে থাকব। বুঝলে?এসব নিয়ে চিন্তা করো না হুদাই।”
– “একটু তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করেন দেরি হয়ে যাবে তো।”
– “তাড়াতাড়ি খাওয়ার অভ্যাস নেই আমার, হবে না দেরি।”
কিছুক্ষণ পর প্রিয়ম ঠোঁটের কোণে দুষ্টুমির হাসি ফুটিয়ে আক্ষেপ করে বলল,
– “একটা বিষয় বুঝলাম না মোনা। তুমি রাতে আমায় তুমি করে বলো। দিনে কেন আপনি করে বলো?”
মোনা কিঞ্চিৎ লজ্জা পেল।পরক্ষণে মেকি বিরক্ত দেখালো।প্রত্যুত্তর করল না।
____________________________________
অফিসে যাওয়ার পথে জ্যাকের সাথে দেখা মোনার।জ্যাক ডাক দিলো মোনা’কে। মোনা সামনে-পিছনে,ডানে-বামে তাকিয়ে দেখল কোথা থেকে ডাক’টা এসেছে। মোনার অপজিট সাইডের শপিং মল থেকে বের হয়ে এসে জ্যাক মোনার সামনে দাঁড়ালো। মোনা’কে দেখে হেসে বলল,
– “অফিসে যাচ্ছেন?”
– “হ্যাঁ। আপনি হঠাৎ গাড়ি ছাড়া?”
– “মাঝপথে এসে গাড়িতে সমস্যা হলো। হেঁটেই আসলাম। আচ্ছা চলুন না একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসি। অনেক দিন ধরে কথা হয় না তেমন।”
মোনা হ্যাঁ সূচক ভঙ্গিতে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো। হাঁটতে হাঁটতে জ্যাক বলল,
– “আজকাল ব্যবসার যে ঝামেলা হচ্ছে।”
মোনা উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,
– “কেন কি ঝামেলা?”
– “ব্যবসা দিন দিন বড় হচ্ছে।ব্যস্ততা বাড়ছে। আর এই ব্যস্ততাই আজকাল ঝামেলা মনে হচ্ছে। ব্যবসা ছেড়ে দিবো ভাবছি।”
মোনা জ্যাকের দিকে তাকিয়ে অবাক গলায় বলল,
– “কেন?কি আজব ব্যাপার!”
– “জীবনে বিশ্রামের প্রয়োজন আছে।সারা জীবন যদি ডলারের পিছনে ছুটি, জীবনের শেষ পর্যায়ে দেখা যাবে এতসব প্রোপাটি ভোগ করার কেউ নেই।”
মোনা ভ্রুক কুঁচকে তাকিয়ে বলল,
– “এই উদ্ভট চিন্তা হঠাৎ আপনার মাথায় আসলো কেন বলুন তো?”
– “এর পিছনে আর একটা কারণ আছে।ডাক্তারি পেশা’টা মিস করছি। শীঘ্রই আবার জয়েন করছি। ফ্রি সার্ভিস দিবো।”
জ্যাকের কথা শুনে মোনা অবাক না হয়ে পারলো না। কি অমায়িক একজন মানুষ! মোনার মুগ্ধতার পাল্লা ভারি হচ্ছে ক্রমশ।
– “জ্যাক আপনি জানেন?আপনি খুব চমৎকার একজন মানুষ।”
জ্যাক হাসলো। নিজের প্রশংসার বিপরীতে প্রত্যুত্তর করার মত ভাষা খুঁজে পাওয়া যায় না। কিছুক্ষণ হেঁটে আসার পর একটা থাই রেস্টুরেন্টে ঢুকলো। জ্যাক স্যুপের বাটিতে চামচ ডুবাতে ডুবাতে বলল,
– “ম্যারিড লাইফ কেমন কাটছে? মোনালিসা আপনি না অদ্ভুত এক মানুষ! আপনার বরের সাথে আমায় পরিচয় করিয়ে দিলেন না।”
জ্যাকের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া উচিত ছিলো আসলেই। মোনা উপযুক্ত জবাব খুঁজে না পেয়ে চুপ থাকলো। জ্যাক আবার বলল কথা’টা। মোনা বলল,
– “ম্যারিড লাইফ দারুন কাটছে। জ্যাক আমরা গোপনে বিয়ে করেছি। কাউকেই বলি নি। শুধু আপনায় বলেছি।”
জ্যাক যেন অবাক হলো,
– “গোপনে বিয়ে! কেন?”
মোনা সব বলল। জ্যাক গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনলো। মোনার বলা শেষ হওয়ার পর জ্যাক কিছুক্ষণ চুপ থাকলো। কি যেন চিন্তা করছে। চিন্তার জগত থেকে বের হয়ে বলল,
– “এক বছর পর বিয়ে করতেন তাহলে। এখন কেন?”
মোনা কে প্রশ্ন’টা করে জ্যাক নিজেই আবার বলল,
– “অবশ্য ভালোবাসার মানুষ’কে নিজের করে পাওয়ার তৃষ্ণা জাগে।সেই তৃষ্ণা থেকেই হয়ত এক বছর আর ধৈর্য কুলায় নি।”
মোনা হাসলো জ্যাকের কথা শুনে।জ্যাকের সাথে অনেকক্ষণ ধরে কথা বলল। আজ আর অফিসে যাওয়া হবে না। রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে বাসায় উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো মোনা।
__________________________________________
প্রতি রাতে পড়া শেষ হওয়ার পর রুটিন মাফিক মোনা জ্যাকের ডায়েরি নিয়ে বসলো। আবার নিজের ডায়েরি’তেও সারাদিনের খুঁটিনাটি জিনিস গুলো লিখলো। প্রিয়ম আজ আসবে না, বাসায় যাবে। আজ অনেক রাত পর্যন্ত ডায়েরি নিয়ে বসে থাকা যাবে।প্রিয়ম এই ডায়েরি গুলো দেখে নি।মোনা চায়ও না যে প্রিয়ম দেখুক। জ্যাকের আর তাঁর স্ত্রীর ব্যক্তিগত কথা। আর কেউ না পড়ুক! কিছু সময় পর সেই পরিচিত ডোর বেলের শব্দ। মুহূর্তেই মোনার মাথায় প্রশ্ন জাগলো,’কে এলো?’
মোনা উঠে দরজার কাছে গিয়ে দেখে প্রিয়ম দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে। মোনা অবাক হলো।দরজার খুলে দিলো। প্রিয়মের হাতে শপিং ব্যাগ। মোনা তৎক্ষণাৎ প্রশ্ন করল,
– “একটু আগেই না বললেন আসবেন না?”
– “মিথ্যে বলেছি। একটু চমকে দিলাম তোমায়।”
সাদা শার্ট পড়া প্রিয়ম’কে অন্য রকম লাগছে আজ। কিছু’টা ঘেমে আছে, চেহেরায় ক্লান্তির ছাপ। মোনা তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ। প্রিয়মের উপস্থিতিতে সেই আগের মতই অনুভুতি হয়। অনুভূতি গুলো বদলে নি!
– “আজ খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে।”
– “আদর দেও সেরে যাবো।”
মোনা চোখ-মুখ ঘুচিয়ে ফেলল।প্রিয়ম হেসে বলল,
– “আহা কি লজ্জা!এত লজ্জা আসে কোত্থেকে?”
মোনা উত্তর দিলো না।হাতের ব্যাগ গুলো সোফার উপর রাখলো। তারপর আবার মোনার দিকে এগিয়ে আসলো। মোনার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,
– “মোনালিসা তুমি আমায় ভালোবাসো না?”
কি জানি ছিলো প্রিয়মের গলায় কিংবা প্রশ্নে।মোনার অদ্ভুত এক অনুভূতি হলো। প্রিয়ম সব সময় মোনা বলে,আজ মোনালিসা বলল! মোনা’কে নিরুত্তর দেখে প্রিয়ম আবার জিজ্ঞেস করল,
– “ভালোবাসো মোনা পাখি?”
মোনা মাথা ঝাঁকায়।সব মিলিয়ে প্রিয়ম’কে বোধ হয় দুই বার না যেন একবার বলেছে ভালোবাসি নামক শব্দ’টা। প্রিয়ম বলল,
– “মাথা ঝাঁকাও কেন? মুখে বলা যায় না?”
মোনা আস্তে করে বলল,
– “ভালোবাসি।”
প্রিয়ম সোফায় রাখা ব্যাগের দিকে তাকিয়ে বলল,
– “ব্যাগের ভিতর রাখা শাড়ি’টা পরো। একদম বিয়ের দিনের মত। আমি ওই রুমে যাচ্ছি,যতক্ষণ না ডাকবো আসবে না।”
মোনা চমকালো খুব। মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ বলল। প্রিয়ম পাশের রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিলো। কি করবে প্রিয়ম ওই রুমে?মোনা জানার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠছে। ব্যাগের ভিতর কালো রঙের ফিনফিনে জর্জেট শাড়ি। দারুণ একটা শাড়ি!
মোনা শাড়ি’টা পরে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়ালো। নিজের প্রতিবিম্ব দেখে নিজেই বিস্মিয় হয়ে গেল! কি দারুন লাগছে। দিকে দিকে সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাচ্ছে যেন। শাড়ি পরে অপেক্ষা করতে লাগলো। অনেকক্ষণ পর প্রিয়ম রুমের দরজা খুলল। রুম থেকে বের হয়ে মোনা’কে দেখে চোখ ধাঁধিয়ে গেল যেন। বিস্ময় ভরা চোখে তাকিয়ে রইল। অস্ফুট ভাবে মুখ থেকে বের হয়ে আসলো,
– “অস্পরী।”
নিজের প্রশংসা শুনে মোনার লজ্জা লাগছে।প্রিয়ম কয়েক পা এগিয়ে এসে মোনার পাশে বসলো। আবার বলল,
– “শাড়ি’তে তোমায় এত দারুন লাগে কেন মোনা পাখি?”
– “ওই রুমে কি করেছেন?”
প্রিয়ম মোনার চোখে হাত দিয়ে মোনা’কে পাশের রুমে নিয়ে গেল।মোনার আগ্রহী চোখ দুটো’তে তৃষ্ণা। কি করেছে প্রিয়ম এই রুমে তাই দেখার কৌতূহল। প্রিয়ম মোনার চোখ খুলে দিলো। টিপটিপ করে জ্বলা মোমের আলোয় রুম’টা আচ্ছন্ন হয়ে আছে।এক মায়াময় পরিবেশ। রুমের ঠিক মাঝ খানটায় অনেক খানি জায়গা দিয়ে মোম দিয়ে লাভ আঁকা। মোনার চোখে-মুখে ভালোলাগার ঝিলিক। প্রিয়ম মোনার মুখের দিকে তাকিয়ে মোনার প্রতিক্রিয়া দেখছে। অবাক হওয়ার পালা শেষ হলে মোনা প্রিয়ম’কে জড়িয়ে ধরে আবেগে উৎফুল্লিত হয়ে বলল,
– “ইস! কি সুন্দর।”
প্রিয়ম মোনার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে আদুরে গলায় বলল,
– “মোনা পাখি খুশি হয়েছে?আজ ক্যান্ডেল লাইট ডিনার।”
মোনা প্রিয়ম’কে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
– “খুব খুশি হয়েছি।”
প্রিয়ম মোনা’কে কোলে তুলে নিয়ে লাভের ভিতর বসালো। তারপর মোনার পিঠে পিঠ ঠেকিয়ে বসলো। মোনার মন জুড়ে ভালোলাগা তোলপাড় করছে। সুখানুভূতি হচ্ছে! প্রশান্তি’তে মোনার মর্মদেশ ছেয়ে যাচ্ছে। মোনার সমস্ত ইন্দ্রিয় ভালোবাসার গন্ধে বিভোর।চেতনা বিবশ।
____________________________________
মোনার এত সব সুখে ভাটা পরলো। হঠাৎ একদিন প্রিয়ম অফিস থেকে এসে বলল,
– “আমার এখন থেকে বোস্টন থাকতে হবে।সেখানেই অফিস।”
প্রিয়মের চোখ মুখে বিষণ্ণতা।মোনাও নীরব হয়ে রইল।মোনার গলায় বিষাদের সুর। মোনা কষ্ট হচ্ছে প্রচণ্ড। গলা থেকে কথা বের হচ্ছে না যেন। অনেকক্ষণ চুপ থেকে বলল,
– “এখন কি হবে?”
প্রিয়ম মোনা’কে আশ্বস্ত করে বলল,
– “এত মন খারাপ করছ কেন?সময় পেলেই চলে আসবো আমি তোমার কাছে।”
তবুও মোনার কেন জানি ভীষণ যন্ত্রনা হচ্ছে।মোনা পাশ ফিরে শুয়ে থাকলো। প্রিয়ম এসে মোনার কাঁধে মৃদু ঝাঁকি দিয়ে বলল,
– “এই মোনা পাখি।হলো টা কি?”
প্রিয়ম আবার বলল,
– “আর তো কয়’টা মাস। তারপর তো আমরা এক সাথে থাকব। লুকিয়ে লুকিয়ে তোমার কাছে আসতে হবে না তখন।”
মোনা একটা ক্ষীণ নিঃশ্বাস ফেলে উঠে বসে। খিন্ন গলায় বলল,
– “মন খারাপ করছি না।”
প্রিয়মের প্রশস্ত বুকে শুয়ে আছে মোনা। ভালো লাগছে না কিছু।প্রিয়ম মোনার মন ভালো করার চেষ্টা করছে,হাসানোর চেষ্টা করছে। মোনা মাঝে মাঝে হাসছে একটু। মন খারাপের হাসি।
প্রিয়মের বোস্টন যাওয়ার দিন ঘনিয়ে আসলো। বাসা থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে রওয়ানা হলো।প্রিয়মের সাথে লিলি বেগম। গাড়ি মোনার বাসার সামনে দিয়েই যাবে। মোনা জানালা গ্রিলের ফাঁক দিয়ে উঁকি মেরে তাকিয়ে রইল। একটা কালো রঙের কার শোঁ শোঁ করে যাচ্ছে। মোনা বসে থাকে বিমর্ষ হয়ে। বিষাদময় লাগছে সব।
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here