লাল পাঁড়ের সাদা শাড়ি
* পর্ব ২৮
সামিরা আক্তার
** দেখতে দেখতে দুইমাস কিভাবে চলে গেলো চৈতালী বুঝতেই পারে নি। এই দুই মাস তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। সুন্দর জায়গা আর সাথে ভালবাসার মানুষ। আর কি লাগে।
অবশেষে আজ তাদের ফ্লাইট। আজকে তারা রওনা দিবে বাংলাদেশের উদ্দেশ্য। চৈতালীর অবশ্য তুলতলের জন্য মন খারাপ হয়েছে। বাচ্চাটাকে একটু বেশিই ভালবেসে ফেলেছে সে।
চৈতালীর মন খারাপ দেখে রাফিয়া এগিয়ে এলো। তার নিজের ও খারাপ লাগছে। কিন্তু তা বললে তো আর হবে না।
– মন খারাপ করিস না চৈতালী। বাবু একটু বড় হলেই আমরা যাব। বললো রাফিয়া।
– আমি বাবুকে কে খুব মিস করবো রাফিয়া আপু। আর তোমাদের ও। বলেই রাফিয়া জরিয়ে ধরলো সে।
– আমরা খুব তাড়াতাড়ি আসবো। তবে এসে যেন তোর কোলেও একটা বাবু দেখতে পাই।
রাফিয়া হাঁসিমুখে কথাটা বললেও চৈতালী লজ্জায় মিইয়ে গেলো। কোনরকমে ওখান থেকে পালালো সে।
এয়ারপোর্টে ভাইকে জরিয়ে ধরে কিছুহ্মণ কাঁদলো রাফিয়া। রাফসান অসহায় বোধ করলো। তার নিজেরও খারাপ লাগছে। কোনরকমে গলা দিয়ে কথা বের করে বললো- আমি রোজ তোকে ভিডিও কল দিবো রাফু। কাঁদিস না। তুই জানিস না তুই কাঁদলে আমার কষ্ট হয়। তুই কি চাস এই কষ্ট নিয়ে দেশে যাই??
রাফিয়া সাথে সাথে কান্না থামিয়ে দিলো। রাফসান এবার জুনায়েদ কে জরিয়ে ধরলো। দুই বন্ধু জানে না তাদের আবার কবে দেখা হবে। তাই দুজন দুজনকে আঁকড়ে ধরে রইলো।
– ভাল থাকিস। আর আমার বোনটাকে এভাবেই ভাল রাখিস। বললো রাফসান।
– তুই ও ভাল থাকিস। এভাবেই। যেমন এই দুইমাস দেখলাম।
তারপর ওদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ওরা ঢাকার উদ্দেশ্য ফ্লাইটে উঠলো।
** দিন যায়। বছরও গড়ায়। চৈতালী ১৮ বছর ছেড়ে ১৯ শে পা দেয়। দুজনের দিন কাঁটে দুষ্ট মিষ্টি ঝগড়ায়, ভালবাসায় আর খুনসুটিতে।
দেখতে দেখতে চৈতালী সেকেন্ড ইয়ারের পরীক্ষা শেষ হয়ে ওদের ২য় বিবাহবার্ষিকী ও চলে গেলো।
রাফসান খেয়াল করেছে চৈতালী কিছুদিন ধরে কেমন উদাস থাকে।
কারণ জানতে চাইলে বলে এমনি। আজ অফিসে যাবার সময় চৈতালী কে আনমনে কিছু একটা ভাবতে দেখে ওর পাশে গিয়ে বসলো। তারপর আস্তে করে ওকে ডাক দিলো।
চৈতালী কিছু একটা ভাবছিলো। রাফসানের ডাকে চমকে তাকালো।
– কি ভাবিস এত চৈতী??
– কিছু না। তুমি অফিস যাবে না।
রাফসান এবার চৈতালীর হাতদুটো ধরলো। তারপর বললো- কি এমন কথা চৈতী? যা আমাকেও বলা যায় না। তুই এতটা পর ভাবিস আমাকে?? তোর এই গোমড়া মুখ আমার ভালো লাগছে না। প্লিজ বল আমাকে।
চৈতালীর হঠাৎ খুব কান্না পেলো। সে রাফসান কে জরিয়ে ধরে কান্না করে দিলো। রাফিয়ার ওখান থেকে তারা এসেছে প্রায় সাত মাস। আসার পর থেকেই চৈতালী রাফসান কে না জানিয়ে বাচ্চার চেষ্টা করছে। ভেবেছিলো হলে রাফসান কে একবারে সারপ্রাইজ দেবে।
কিন্তু এই সাত মাস ধরেই সৃষ্টিকর্তা তাকে হতাশ করে চলেছে। সে রাফসান কে লুকিয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়ে তার সব টেস্ট ও করিয়েছে। ডাক্তার বলেছে সমস্যা নেই বেবি হবে। তবে আপনার হাজবেন্ড কে নিয়ে আসবেন কিছু টেস্ট করাবো।
চৈতালী এই কথাগুলো রাফসান কে বলার সাহস পাচ্ছে না। প্রথমত রাফসান জেনে যাবে সে মেডিসিন নিচ্ছে না। বাচ্চা চাইছে।
দ্বিতীয়ত রাফসান কে হাসপাতালে টেস্ট করতে যেতে বললে যদি কষ্ট পায়।
এছাড়া চৈতালী বাচ্চা নিয়ে কোন কথা রাফসান কে বলতে শোনে নি। এমনি তে মনে হয় বাচ্চা খুব পছন্দ করে অথচ তার সাথে এই বিষয়ে আলাপ করে না।
চৈতালীর আজকাল তাই কিচ্ছু ভাল লাগে না।
রাফসানের বুকের ভিতর এসব কথাই ভাবছিলো চৈতালী। হঠাৎ রাফসান বললো- বলবি না তাই তো?? কি জন্য এরকম হুতুম পেঁচা সেজে থাকিস।
চৈতালী মৃদু হাসলো। তারপর বললো- বাড়ি যেতে ইচ্ছা করছে তাই। আসল কথাটা চেপে গেলো। সে আরও কিছুদিন দেখবে।
– আচ্ছা কয়েকটা দিন যাক। নিয়ে যাব। বলে ওর কপালে একটা চুমু দিয়ে উঠে দাঁড়ালো রাফসান।
**অফিসে এসে রাফসান চৈতালীর বিষয়টা নিয়ে ভাবতে লাগলো। চৈতালী যে আজ ওকে মিথ্যে কথা বলেছে সেটা ও বুঝতে পেরেছে। কিন্তু কিছু বলে নি। সে জানে চৈতালী সময় হলে নিজে থেকেই বলবে। কিন্তু ওর আসলে হয়েছে টা কি।
রাফসান অনুভব করলো কাজের ব্যাস্ততায় সে চৈতালী কে সময় দিচ্ছে কম। চৈতালী কে সময় দিতে হবে। ওর সমস্যা টা বুঝতে হবে।
** বেশ কয়েক দিন পরের কথা। রাফসান বিছানায় শুয়ে ল্যাপটপে একটা কাজ করছিলো। আর চৈতালী রুমজুরে পায়চারী করছে। রাফসান আঁড়চোখে একবার তাকালো।
চৈতালীর মধ্যে কেমন অস্থির অস্থির ভাব। কেন??
(ক্রমশ)লাল পাঁড়ের সাদা শাড়ি
* পর্ব ২৯
সামিরা আক্তার
** এত পায়চারী করছিস কেন?? কি হয়েছে??
রাফসানের কথায় চৈতালী একটু চমকে গেলো। এটা ঠিক যে সে একটু অস্থির। তবে এই অস্থিরতার কারণ আছে।
সে এই মাসের পিরিয়ড মিস করে গেছে। এই নিয়েই একটু অস্থির। এতদিনে বোধহয় সৃষ্টিকর্তা মুখ তুলে চাইলো।
ভেতরে ভেতরে মনটা খুশিতে বাগবাকুম করছে। তবে সিউর না হয়ে তো রাফসান কে বলা যাবে না। চৈতালী ঠিক করলো কালকে ফার্মেসী থেকে প্রেগনেন্সি কিট এনে টেষ্ট করবে।
– কি রে বললি না এত অস্থির কেন?
– কিছু না এমনি। তুমি কাজ করো। বলে আবার পায়চারী শুরু করলো চৈতালী। আচ্ছা এটা কি মাস চলছে?? আগষ্ট?
চৈতালী কিছুহ্মণ ভাবলো। তার রাফসান কে বলার জন্য মনটা আকুপাকু করছে। আচ্ছা পুরো কথাটা না বলে একটু বললেও তো হয়। সামান্য একটু টাস দিলো।
না হলে তো আজ তার ঘুম আসবে না।
চৈতালী আস্তে আস্তে রাফসানের কাছে গিয়ে বসলো।তারপর আস্তে করে রাফসান কে ডাক দিলো। রাফসান মন দিয়ে কাজ করছে।
সম্প্রতি তারা সিলেটের টুরিস্ট প্লেসে একটা আবাসিক হোটেল খুলেছে। বেশ ভালই চলছে। তবে সামান্য একটু সমস্যা দেখা দিয়েছে ইদানীং। যা ওখানে ম্যানেজার সামলাতে পারছে না। সেও এখানে বসে ম্যানেজ করতে পারে নি। হয়তোবা দুই একদিনের মধ্যে তাকে সেখানে যেতে হবে।
এসব ভাবনার মধ্যে চৈতালীর ডাক তার কানে যায় নি।
চৈতালী তাই এবার ধাক্কা দিলো রাফসান কে।
– কি হলো ধাক্কা দিলি কেন??
– তো কি করবো?? কখন থেকে ডাকছি।
রাফসান এবার ল্যাপটপ অফ করে চৈতালী কে জরিয়ে ধরে বললো- আমি তো সারাদিনই তোর কথা শুনতে চাই। তুই ই তো পাত্তা দিস না। বলে মুখটাকে দুঃখী দুঃখী একটা ভাব করলো সে।
– পারলে সারাহ্মণ আমার সাথে চিপকে থাকো আবার বলো পাত্তা দেই না??
– তাহলে তোর সাথে চিপকে থাকবো না বলছিস?? তোর ঐ বান্ধবী কি যেন নাম…উর্মি মেবি৷ ওকে….
রাফসান পুরো কথাটা শেষ করতে পারলো না। তার আগেই চৈতালী ওর উপর ঝাপিয়ে পরে কামড়ে খাঁমচে ওকে একাকার করে দিতে লাগলো।
– এটা ট্রেইলার ছিলো। জীবনে অন্য মেয়ের কথা মুখে আনলে পুরো মুভিটা তোমাকে দেখাবো আমি।
রাফসান শব্দ করে হেঁসে উঠলো। ওর হাঁসির শব্দে চৈতালী ওর দিকে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকালো।
– আচ্ছা ঠিক আছে। কি যেন বলছিলি..বললো রাফসান।
– আমি এ মাসের পিরিয়ড মিস করেছি।
রাফসান একটু ভ্রু কুচকে তাকালো। তার পর বললো
– তো কি হয়েছে?? হয় নি হয়ে যাবে।
– হু। কোনরকমে বললো চৈতালী। মনে মনে যদিও রাফসান কে হাজার বার গাঁধা বললো।
– চৈতী??
– হ্যাঁ বলো।
– তুই কি টেনশন করছিস?? মেডিসিন নিচ্ছিস তো??
চৈতালী একটু থতমত খেলো। পরহ্মণেই নিজেকে সামলে নিয়ে বললো- আরে না সেরকম কোন ব্যাপার না। আমার তো এমনিতেই পিরিয়ড লেটে হয়। দিন তারিখ ঠিক থাকে না।
– সেটাই।
চৈতালী ঠিক করলো টেস্ট করে সিউর হয়ে তবেই রাফসান কে জানাবে। এর মাঝে রাফসানের ফোন বেজে উঠলো। রাফসান কথা বলতে বলতে বারান্দার দিকে গেলো।
কথা শেষ করে এসে বললো- চৈতী আমায় কাল একটু সিলেট যেতে হবে। আর্জেন্ট।
চৈতালীর একটু মন খারাপ হয়ে গেলো। পরহ্মণেই বললো- কয়দিন থাকবে??
– এই ধর চার পাঁচদিন। ড্রাইভার কে বলে দেবো তুই একয়দিন বাড়ি থেকে বেরিয়ে আয়।
– চৈতালী কোনরকমে মাথা নাড়ালো।
কালকে সে আগে টেষ্ট করবে তার পর বাড়ি গেলে যাবে। রাফসান ফিরলেই না হয় ওকে জানাবে।
**পরদিন রাফসান বের হয়ে গেলো সিলেটের উদ্দেশ্য। রাফসান যাওয়ার পর চৈতালী ফার্মেসী থেকে ৫ টা প্রেগনেন্সি কিট নিয়ে এলো। সে পাঁচ বারই টেস্ট করবে।
রাফসানের হোটেল টা সিলেটের বিশ্বরোড, সোবাহানীঘাট নামক জায়গায়। বেশ বড় এরিয়া নিয়ে। টুরিস্টদের কথা মাথায় রেখে সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। দেখলে যে কারো ভালো লাগবে। গার্ডেনে বেশ বড় সুইমিংপুলের ব্যবস্থা আছে। আর আছে নানা ফুলের সমাহার, দোলনা আরও অনেক কিছু।
ফ্লাইটে আসার কারণে তাড়াতাড়ি পৌঁছে গেছে রাফসান সেখানে। এখন যত তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে ঢাকায় ফিরতে পারে।
কারণ প্রান পাখি চৈতী কে যে সে ঢাকায় রেখে এসেছে। চাইলেই চৈতী কে সাথে আনতে পারতো কিন্তু সে জানে তাকে ব্যাস্ত থাকতে হবে তাই আনে নি।
**চৈতালী কিট হাতে করে বসে আছে। কি করবে বুঝতে পারছে না। মনে হচ্ছে সে খুশিতে পাগল হয়ে যাবে। তার হাতে পাঁচ পাঁচটা কিট। সবগুলোতেই দুটো করে দাগ দেখা যাচ্ছে।
এতহ্মণে সে খুশিতে কেঁদেই দিলো। এহ্মণি তার রাফসান কে জানাতে হবে। এই নিউজ টা সে রাফসানের আগে কাউকে দেবে না। কিন্তু চার পাঁচদিন এই কথা চৈতালী কিভাবে চেঁপে রাখবে??
আচ্ছা চৈতালী যদি সিলেট গিয়ে একদম রাফসান কে সারপ্রাইজ দেয়?? ব্যাপার টা কেমন হবে?? এক মুহুর্ত ভাবলো সে।
তারপর সে সিধান্ত নিলো সে কালই সে সিলেট যাবে। তাড়াহুড়ো করে আসমাত শিকদার কে ফোন দিলো চৈতালী।
– কি ব্যাপার মা?? এসময়ে ফোন?? ওপাশ থেকে হাসিমুখে বলে উঠলো আসমাত শিকদার।
– এমনি। তুমি ভালো আছো বড় আব্বু?
-আছি মা। খুব ভালো আছি।
– ইয়ে বড় আব্বু একটা কথা ছিলো। ইতস্তত গলায় বললো চৈতালী।
– হ্যাঁ বলো না।
– আমি সিলেট যেতে চাই বড় আব্বু। ব্যবস্থা করো। তবে রাফসান ভাইকে বলো না। সারপ্রাইজ।
আসমাত শিকদার মৃদু হাসলেন। তারপর বললেন- আচ্ছা বলবো না।
ফোন রাখার পর চৈতালী মনে মনে বললো তোমাদের জন্যও সারপ্রাইজ আছে বড় আব্বু। সিলেট থেকে এসে দেবো।
(ক্রমশ)লাল পাঁড়ের সাদা শাড়ি
*পর্ব ৩০
সামিরা আক্তার
** রাফসানের হোটেলের নাম হ্মণিকালয়। নামটা তার মা পছন্দ করে দিয়েছে।
এই মুহুর্তে রাফসান গার্ডেনে ম্যানেজারের সাথে বসে আলাপ করছিল। এমন সময় তার হোটেল প্রবেশ করলো আফরিন।
আর ঢুকেই রাফসান কে দেখে থমকে দাঁড়ালো সে। সেই মানুষটা। কত বছর পর দেখলো। একমাত্র এই মানুষটাই তাকে পাগলের মত ভালবেসেছিল।
কিন্তু সে তখন অর্থবিত্তের মোহে রাফসানের ভালবাসা কে পায়ে ঠেলেছিল।
রাফসান কি তাকে হ্মমা করতে পেরেছে??
দূর থেকে খুটিয়ে খুটিয়ে রাফসান কে দেখতে লাগলো আফরিন। মানুষটা আগের চেয়ে বেশি সুদর্শন হয়ে গেছে। বয়স যেন কমে গেছে। বুকের ভিতর চিনচিন ব্যাথা অনুভব করলো সে।
এই স্মাটনেস নিয়েও কত কথা শুনিয়েছে সে।
রাফসান কথা শেষ করে নিজের রুমের দিকে এগুলো। টায়ার্ড লাগছে একটু রেস্ট নেওয়া দরকার। চৈতী কে ফোন দেওয়া দরকার। পাগলিটা কি করছে কে জানে??
চৈতালীর কথা ভাবায় এতটাই মশগুল ছিলো সে যে পাশে আফরিন কে দেখতে পেল না সে। আর বুঝতেও পারলো না সে যে তার সুখের জীবনে ঝড় আসতে চলেছে।
রাফসান যেতেই আফরিন একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো। রাফসানের সাথে ডির্ভোসের পরবর্তী জীবন তার খুব বেশি সুখের আর সম্মানের নয়।
সে সাঈদ কে বিশ্বাস করলেও সাঈদ তাকে ঠকিয়েছে। তাদের ঘনিষ্ঠ সময়ের ভিডিও করে তাকে ব্ল্যাকমেইল করেছে।
তাকে বিভিন্ন ডিরেক্টরের কাছে পাঠিয়ে সাঈদ বিভিন্ন নাটক, বিজ্ঞাপনে কাজ নিয়েছে। এই যে সে আজ এখানে এসেছে তাও কারো ভোগের সামগ্রী হতে।
আফরিন আকাশের দিকে তাকালো। তার এই জীবন সে মেনে নিয়েছে। চাইলেও এখান থেকে বের হতে পারবে না সে। আগেই পারে নি। তার লোভ তাকে এখানে এনে দাঁড় করিয়েছে।
হঠাৎ রাফসানের সাথে কথা বলা সেই লোক কে দেখে তাকে ডাক দিলো আফরিন।
– এক্সকিউজ মি।
– ইয়েস ম্যাম। বলুন কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি। প্রফেশনাল ভাবে বললেন ম্যানেজার।
– না মানে একটু আগে আপনার সাথে রাফসান কে দেখলাম।
ম্যানেজার এবার একটু অবাক হলো।বললো- আপনি স্যারকে চিনেন??
– হ্যাঁ ফ্রেন্ডস আর কি। ও এখানে কিভাবে?
– ম্যাম এই হোটেলটা স্যারের। মাস ছয়েক আগে শুরু হয়েছে।
– ওহ। ধন্যবাদ আপনাকে।
আফরিন অবাক হয় নি। রাফসান দের যে অনেক টাকা পয়সা সেটা সে আগেই জানতে পেরেছিলো।
হোটেলে ঢুকতে ঢুকতে আফরিন ভাবলো সে একবার রাফসানের সাথে কথা বলার চেষ্টা করবে। রাফসানের কাছে মাফটা তার চাওয়া হয়নি। সে চাইলেও রাফসানের সাথে যোগাযোগ করতে পারে নি। এমনকি জুনায়েদ ও ফোন ধরে নি। এতদিনে সৃষ্টিকর্তা বোধহয় মাফ চাওয়ার একটা সুযোগ করে দিলো।
ভেবেই রিসিপশনের দিকে গেলো সে।
চৈতলী এয়ারপোর্ট থেকে আসমাত শিকদারের দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী একটা সিএনজি নিয়েছে। আর কিছুহ্মণের মধ্যেই রাফসানের কাছে পৌঁছে যাবে সে।
আচ্ছা রাফসান কি খুব বেশি অবাক হবে??
চৈতালী চিন্তা করেই হেঁসে দিলো।
রিসিপশনের মেয়েটি রাফসানের রুম নাম্বার চাওয়াতে আফরিনের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে। আফরিন অধৈর্য হয়ে বললো- কি হলো বললেন না??
– বাট ম্যাম আপনি কে?? না বললে আমি আপনাকে স্যারের রুম নাম্বার বলতে পারবো না।
আফরিন এক মুহূর্ত ভাবলো। তারপর বললো- আমি আপনার স্যারের ওয়াইফ।
মেয়েটি একটু হকচকিয়ে গেল। আমতা আমতা করতে লাগলো।
আফরিন বললো- বিশ্বাস হচ্ছে না?? ওয়েট। বলে নিজের মোবাইল থেকে তার আর রাফসানের একটা ছবি বের করে মেয়েটির দিকে এগিয়ে দিলো। ছবিটা সে যত্ন করে রেখছিলো।
মেয়েটির কাছ থেকে রাফসানের রুম আফরিন রাফসানের রুমে গিয়ে নক করলো।
রাফসান শুয়ে ছিলো। চৈতালী কে অনেকগুলো ফোন দিয়েছিলো সে কিন্তু চৈতালী রিসিভ করে নাই। হঠাৎ দরজায় করাঘাতের শব্দে দরজা খুলেই দেখতে পেলো আফরিন কে।
মুহূর্তেই তার চেয়াল শক্ত হয়ে গেলো, চোখ দুটো লাল হয়ে গেলো। এতবছর পর সেই বিশ্বাসঘাতনীর চেহারা দেখে হাত দুটো মুঠ হয়ে গেলো আপনা আপনি।
প্রথম কথা আফরিনই বললো- আমি তোমার সাথে কিছু কথা বলতে চাই রাফসান। একটু ভিতরে আসি??
রাফসান উচ্চস্বরে হেঁসে উঠলো। তারপর হিংস্র কন্ঠে বললো- আমার চরিত্র এতটা খারাপ নয় মিস। যে যাকে তাকে আমার রুমে ঢুকতে দেবো। আর আমি কোন অচেনা মানুষের সাথে কথা বলি না।
– প্লিজ রাফসান। আমি জাস্ট কয়েক মিনিট সময় নেবো।
– আমার সময়ের প্রচুর দাম। অযথা নষ্ট করার মত সময় আমার নেই।
– প্লিজ রাফসান। আফরিন এবার তার পায়ের কাছে বসে পড়লো
রাফসান অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে রেখেছিল। এই মেয়ের প্রতি তার কোন ফিলিংস নেই। কথা বলার রুচি ও নেই।
আফরিনের কান্না কে পাত্তা না দিয়ে সে রুমের দরজা লাগাতে গেলেই আফরিন বলে উঠলো – এখনও আমায় ভালবাসো তাই না রাফসান? আমার সামনে নিজের দূর্বলতা দেখাতে চাও না তাই না?? তাই পালাচ্ছ??
রাফসান আর নিজেকে সামলাতে পারলো না। এই জন্যই সে এই মেয়ের সাথে কথা বলতে চায় নি। কথা বললেই ভাববে রাফসান ওর প্রতি দূর্বল। না বলেও কোন লাভ হলো না।
সেই একই কথা বললো। দরজা থেকে সরে দাঁড়িয়ে শক্ত গলায় বললো- জাস্ট পাঁচ মিনিট এর মধ্যে কথা শেষ করবা।
আফরিন ভেতরে ঢুকে দরজা লাগাতে গেলে রাফসান বললো – একদম দরজা লাগাবে না।
সিএনজি থেকে নেমে হোটেলে ঢুকলো চৈতালী। তার পরনে লাল পাঁড়ের সেই সাদা শাড়ি টা। রাফসান বলেছিল স্পেশাল ডে তে শাড়িটা পড়তে। আজ তো স্পেশাল ডেই। তার জন্য।
রাফসানের অবস্থান জানার জন্য রিসিপশনের দিকে গেলো সে।
রাফসানের পাঁ ধরে আছে আফরিন। রাফসান বিরক্ত স্বরে বললো- পা ছাড়ো বলছি।আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিও না।
-আমাকে মাফ না করলে আমি পা ছাড়বো না। আমি অনেক দিন শান্তি তে ঘুমাই না। তুমি মাফ করলে শান্তিতে ঘুমাবো।
রাফসান বাঁকা হেঁসে বললো- আমি তো জানি বেঈমান রাই শান্তিতে ঘুুমায়।
রিসিপশনের মেয়েটি কোন ভাবেই রাফসানের রুম নাম্বার দিতে রাজি নয়। চৈতালী অধৈর্য হয়ে গেলো। একবার ভাবলো বলবে তোর চাকরি খাব আমি। পরহ্মণেই নিজেকে সামলালো।
– দেখুন আমার সত্যি রাফসানের সাথে দরকার আছে।
– সরি ম্যাম। আপনাকে তো অনেকহ্মণ যাবত বলসি পসিবল না৷ তারপরও আপনি যখন এত করে বলছেন তখন কিছুহ্মণ পরে আসুন। স্যার এলাও করলে আপনাকে পাঠাবো।
চৈতালী এবার কন্ট্রোল হারালো।- পরে মানে?? এখন কি হয়েছে??
(ক্রমশ)