শিশিরের বিন্দু
পর্ব ১
মারিয়া আফরিন নুপুর
___ ” চুপ হারামী তোদের কারণেই এই পালা আমার “।
শিশির যেন রাগে খেই হারিয়ে বলে উঠলো। আবির চুপ করে মাথা নিচু করে হাসছে। পাশে বিপ্লবও মিটমিটিয়ে হাসছে। ওদের অবস্থা দেখে শিশির আরো ক্ষেপে যেয়ে বলল,
___ ” এই বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না “।
___ ” দোস্ত তুই এমন করতেছিস কেন। তোকে দেখে মনে হচ্ছে আংকেল আণ্টিসহ আমরা সবাই তোরে শূলে চড়ানোর প্লান করতেছি।”
আবীর বিরক্ত হয়ে বলল। বিপ্লব সাথে সায় দিয়ে বলল,
___ ” একবার খালি আমাকে বিয়া করায়ে দিতে চাইত আব্বা আম্মা বিশ্বাস কর মাইয়া দেখা ছাড়াই বিয়া বইসা পড়তাম”।
___ ” তাইলে আমার বাপ মায়ের সাথে যোগাযোগ কর, বল যে তুই বিয়া করবি “।
শিশির ঝাড়ি দিয়ে বলে উঠলো। আবির আর বিপ্লব চুপ করে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। আসলে ওরা বুঝতে পারছেনা শিশিরটা বিয়ে নিয়ে এত ওভার রিএক্ট করছে কেন। যতদূর ওদের জানার কথা শিশিরের তো কোন রিলেশনও নাই। শিশির কিছু না বলেই সোজা বাড়ির পথে হাঁটা ধরল। আসলে ও নিজেও বুঝতেছে না ওর করনীয় কি? বাসায় এসে দরজা নক করতেই চমক দরজা খুলে দিল। ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে চমক চোখ মুখ খিঁচিয়ে বলল,
___ ” ভাইয়া তোর কি পেটে কোন সমস্যা হইছে নাকি?”
___ ” হঠাৎ এমন মনে হওয়ার কারণ কি তোর? আমার মুখে কি সাইনবোর্ড লাগিয়েছি নাকি যে আমার পেটে সমস্যা হইছে “!
শিশির মুখ অন্ধকার করে বলল। চমক কিছু বলতে যাবে তার আগেই শিশিরের বাবা হাবিব সাহেব এসে হাজির। বাবাকে দেখে কিছু না বলেই সোজা রুমে যেয়ে দরজা দিয়ে জামা কাপড় না পাল্টেই শুয়ে পড়লো বিছানায়। চোখ বন্ধ করতেই চোখের সামনে ভেসে উঠলো সেদিনের ঘটনা।
সেদিন সকালে অন্যদিনের মত অফিসের জন্য রেডি হতেই শিশিরের মা জাহানারা বেগম এসে হাজির। এটা উনার নিয়ম ছেলে অফিসে যাওয়ার আগেই উনি এসে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন তারপর শিশির রওনা হয় অফিসে। ওইদিন জাহানারার সাথে শিশিরের একমাত্র বোন চমক এসেও হাজির। দুইজনকে একসাথে দেখে শিশির অবাক হলেও কিছু না বলে শার্ট ঠিক করতে লাগল। জাহানারা শিশিরকে বলল,
___ ” বাবা তোর আসতে কি বেশি দেরি হবে? ”
___ ” কেন মা কোন কাজ আছে? ”
___ ” হ্যাঁ আজকে সবাই একটু বের হব তাড়াতাড়ি আসিস!”
শিশির ভাবলো হয়ত শপিং এ যাবে তাই তাড়াতাড়ি আসতে বলে। মাকে বলল যে সে তাড়াতাড়ি আসবে এই বলেই বেরিয়ে গেল সোজা। শিশির সেদিন অন্যান্য দিনের চেয়ে তাড়াতাড়ি সব কাজ গুছিয়ে বাসায় এসে দেখলো এতো এক এলাহী কান্ড। ছোট চাচ্চু যে কি না শিশিরের সবচেয়ে বেশি পছন্দের মানুষ সে হঠাৎ করে এসে হাজির। ওদিকে শিশিরের বেষ্ট দুই ফ্রেন্ড আবীর আর বিপ্লবও এসে হাজির হয়েছে বাসায়। শিশিরের ছোট ফুপা আর ফুপিও হাজির। এসব দেখে ওর মাথায় যেন কাজ করা ছেড়ে দিল। শিশির হা করে ড্রয়িং রুমে বসে থাকা সবার দিকে তাকাতে লাগল। এর মধ্যে ছোট চাচ্চু ওকে দেখে তাড়াতাড়ি করে উঠে এসে গলা জড়িয়ে ধরল শিশিরের। মুচকি হেসে অন্যান্যদের দিকে তাকিয়ে বলল,
___ ” এত দিনে আমার বিয়ের করার স্বপ্ন এক ধাপ বাস্তবায়ন হচ্ছে বুঝলি তোরা “।
ছোট ফুফু মুখ ঝামটা দিয়ে বলল,
___ ” ছোট ভাইজান শরম করো শরম। আজকে তোমার ভাতিজার জন্য মেয়ে দেখতে যাচ্ছ আর নিজের বিয়ের নামে ঠনাঠন। মেয়ে পক্ষ যদি শোনে ছেলের চাচা এখনও আবিয়াইত্তা আমার তো মনে হয় বিয়েই দেবে না তাদের মেয়ে “।
___ ” এক থাবড় দিয়ে দাঁত ফেলে দেব তোর কি সব অলুক্ষনে কথা বার্তা তোর। আরে শিশিরকে বিয়ে দিয়ে শিশিরের যে মেয়ে হবে ওইটারে বিয়া করব আমি।”
___ ” হ হ গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল। হেসে বাঁচি না তোমার কথা শুনে। শিশিরের জন্য সবে যাই মেয়ে দেখতে আর উনি আছে শিশিরের মেয়ে বিয়ে করার তালে। ”
ছোট চাচ্চু আর ছোট ফুপিরে তর্কাতর্কি শুনি ড্রইং রুমে বসা সবাই হেসে কুটোকাটা হচ্ছে এমনকি হাবিব সাহেবও হাসছেন ভাইবোনের খুনসুটি দেখে। কিন্তু শিশিরের পায়ের নিচের মাটি যেন সরে যাচ্ছে। এসব কি শুনে ও৷ আজকে ওর জন্য মেয়ে দেখতে যাচ্ছে মানে কেমনে কি। ও তো কিছুই জানে না। জাহানারা ভেতর থেকে এসে দেখলেন সবাই হাসাহাসি করছে আর শিশির থ মেরে এ কোনে দাঁড়িয়ে আছে। উনি এসে শিশিরকে তাড়াতাড়ি হাত ধরে ড্রইং রুম থেকে ওর বেডরুমে নিয়ে এসে নতুন একটা শার্ট ধরিয়ে দিয়ে বললেন,
___ ” নে বাবা এটা পরে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে, একটু পরেই বের হব”।
___ ” মা তোমরা আমরা জন্য মেয়ে দেখতে যাচ্ছ একটা বার জিজ্ঞেসও তো করলে না আমাকে “।
শিশিরের কণ্ঠে যেন অভিমান ঝরে পড়লো। জাহানারা ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
___ ” এই ব্যাপারটা সম্পুর্ন তোর বাবার কাহিনী। আমার কাছে কৈফিয়ত চাস না প্লীজ। যদি যেতে না চাস তোর বাবাকে বল “।
এই বলেই জাহানারা সোজা রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। উনি ভাল করেই জানে এখন শিশিরের রেডি হওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। বাবাকে যমের মত ভয় করে ও। আর এই ওষুধটাই উনি মাঝে মাঝে প্রয়োগ করে যখন উনার হাতে আর কোন উপায়ই অবশিষ্ট না থাকে তো। ডার্ক ব্লু কালারের সাথে কালো গ্যাবাডিনের প্যান্টে শিশিরকে সেই মাপের স্মার্ট লাগতে লাগল। যখন মাথার চুলে একটু জেল দিয়ে শিশির বাইরে আসলো ছোট ফুপি চোখ থেকে কাজল টেনে নিয়ে ওর কানের পেছনে ফোঁটা দিতে দিতে বলল,
___ ” কারো নজর যেন না লাগে “।
___ ” ধাৎ কি যে করো না তুমি ফুপি”।
আবির শিশিরের কানের কাছে এসে বলল,
___ ” দোস্ত যেই একখান লুক মাশাল্লাহ বানাইছ মাইয়া না গলা ধইরা বসে আজকেই বাড়ি নিয়া চলোনেই বলে “।
___ ” শয়তানের তিন নাম্বার বিএফ খালি একটু ফাঁক পাই তোর মামদোবাজি আমি ছুটাবো। আজকে আমার মেয়ে দেখতে যাচ্ছিস আমারে তো একবার কল করতে পারতি “।
শিশির দাঁতে দাঁত পিশে বলল। আবীর দাঁতে জিব কেটে বলল,
___ ” বিশ্বাস কর দোস্ত আংকেল কল দিয়ে বলল ভাল করে সেজেগুজে চলে আসতে তাও আবার এই আধা ঘন্টা আগে। আমিও দেরি না করে রেডি হয়ে চলে আসছি “।
___ ” রেডি হওয়ার মাঝে কি কল করা গেছিল না “।
___ ” বিশ্বাস কর কল করতে চাইছিলাম কিন্তু দোস্ত জাইঙ্গা খুঁজে পাচ্ছিলাম না তাই কল করার কথা ভুলে গেছিলাম।”
শিশির ফোঁত করে এক নিঃশ্বাস ফেলল। মনকে এই বলে বুঝ দিল শুধু মেয়ে দেখতে যাচ্ছে বিয়ে তো পরের কথা। কিন্তু ও কি জানতো যে সামনে আর কত সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে ওর জন্য।
এক গাড়িতে বসল শিশির আবির বিপ্লব আর ছোট চাচ্চু। আর অন্যগাড়িতে বাকি সবাই। শিশির ওর দুই বন্ধুর মাঝে বসে বলল,
___ ” শোন মেয়ে যত ভালই হোক আর সুন্দরীই হোক না কেন আব্বু জিজ্ঞেস করলে সোজা বলে দিবি পছন্দ হয় নাই।”
___ ” আমি মিথ্যা কথা বলিইই না আর মেয়েদের ক্ষেত্রে তো একদমই না “।
বিপ্লব হামি দিতে দিতে বলল। শিশির আরো তেড়ে বলল,
___ ” ঠিক আছে সত্যবাদী হরিশ্চন্দ্র তুই বলিস সত্যি কথা আমিও তোর বাপরে কল দিয়ে বলব থার্টি-ফাস্টের রাত্রে মাল খেয়ে লেংটা হয়ে নেচেছিলি “।
বিপ্লব ঢোক খেয়ে বলল,
___ ” দোস্ত এটা কিন্তু আনফেয়ার।”
___ ” দোস্ত এটাই সাইন্স “।
শিশির বিটলামি মার্কা হাসি হেসে বলল। ছোট চাচ্চুর গলা খাকারিতে চুপ করল সবাই। মেয়ের বাড়ির সামনে থামতেই সবার চক্ষু তো চড়ক গাছ। সামনে দাঁড়িয়ে আছে………
চলবে
শিশিরের বিন্দু
২য় পর্ব
___ ” বুবু তোর বুকের উপরের তিলটা দেখা যাচ্ছে “।
কণা খিল খিল করে হেসে বলে উঠলো। বিন্দু শাড়ি ম্যানেজ করতে হিমশিম খাচ্ছে তারউপরে কনার এই ফাজলামি আর নিতে পারলো না। শাড়ি ঠিক করা বাদ দিয়ে কনার চুলে হ্যাঁচকা টান দিল বিন্দু। দাঁত মুখ খিঁচিয়ে কনার দিকে তাকিয়ে বলল,
___ ” চান্দু এই দিন দিন না আরো দিন আছে,এই দিনেরে যাইতে হবে ওই দিনেরই কাছে। আজকে আমার বিয়ে নিয়ে মজা করতেছিস খালি সময় আসুক তোর বিয়ের দিন তোরে ঘোল খাওয়াবো আমি “।
___ ” যা যা খালি খালি ফাঁপড় নিস না “।
কণা মুখ ভেঙচি কেটে বলল। বিন্দু কথা কাটাকাটি বাদ দিয়ে রেডি হতে বসল। লাল কালো মিশেলে একটা শাড়ি পরেছে ও। উজ্জ্বল শ্যামলা শরীরে শাড়িটা যেন একদক খাঁপ খেয়ে গেছে। কণা ওর বোনের দিকে তাকিয়ে নিঃশ্বাস ফেলল খুব বড় করে। যত যাই বলুক না কেন এই বোন যে ওর সব কিছুর সাথী। হুট করে এমন ছেলে পক্ষ যে বিন্দুকে দেখতে আসবে সেটা কণা বুঝতেই পারেনি। যদি বিন্দুর বিয়ে হয়ে যায় তখন কি হবে সেটা ভেবেই এই বিশাল দীর্ঘশ্বাস। কপালে ছোট্ট একটা টিপ পরো বিন্দু আর সাথে হাতে দিল কালো চুড়ি। চোখে কাজল আর ঠোঁটে হালকা লিপষ্টিকের ছোঁয়া। কনা ওকে দেখে তাড়াতাড়ি কাশি দিতে দিতে বলল,
___ ” বুবু আজকে তোরে এত এত কিউট লাগতেছে ছেলে তো ট্যারা হয়ে যাবে তোকে দেখে। ”
___ ” আমি বুঝলাম না আব্বু হুট করে আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য এত এত পাগল হল কেন।”
বিন্দ্যলু বিরক্তির স্বর তুলে বলল। কনা হাই দিয়ে বলল,
___ ” ভালই হইছে আমার রাস্তা ক্লিয়ার হল।”
___ ” তবে রে “।
এই বলেই বিন্দু কনাকে ধরতে গেল আর কনা দিল দৌড়। সামনেই রুমে ঢুকতেছিল রাহেলা। বিন্দু আর কনার মা। মায়ের সাথে ধাক্কা লাগতেই কনা দাঁড়িয়ে পড়ল। আর বিন্দু এই কাহিনি দেখে মুচকি হেসে আবার ড্রেসিং টেবিলের দিকে ঘুরে সাজগোজে মন দিল। রাহেলা বেগম চরম বিরক্ত হয়ে কনার দিকে তাকিয়ে বলল,
___ ” আমার আসলে ভুল হয়ে গেছে বিন্দুর আগে তোর বিয়ে দিতে বলা উচিত ছিল তোর বাবার কাছে “।
___ ” মানা করেছে কে মা আমি তো চার পায়ে খাঁড়া! ”
হাসতে হাসতে কনা বলল। বিন্দু আর রাহেলা অবাক হয়ে কনার দিকে তাকিয়ে রইল। রাহেলা ভ্রু কুঁচকিয়ে বললে,
___ ” চার পা মানে? তোর চার পা আসলো কোথা থেকে “?
___ ” মা আমি তোমার আর আমার দুইজনের পা মিলিয়ে বলেছি “।
এই বলেই খিলখিল করে হেসে দৌড়ে সরে গেল কনা। রাহেলা বেগম ওর যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে কতক্ষন অবাক হয়ে তাকিয়ে ভাবতে লাগলেন এই মেয়েকে নিয়ে কি যে করবে ও সেটা নিজেও জানে না।
বড়টা ভীষন শান্ত আর ছোটটা হইছে আল্লাহর দুনিয়ার অশান্ত নাম্বার ওয়ান। কই যে যাবে এদের নিয়ে। রাহেলার বিন্দুর দিকে তাকিয়ে বললেন,
___ ” রেডি হয়েছিস মা! ছেলেরা কিন্তু কাছাকাছি এসে পড়েছে। ”
বিন্দু কিছু না বলে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলল। বিন্দুর বড় ভাই সুর এসে রাহেলার দিকে তাকিয়ে বলল,
___ ” মা তুমি এখানে, আব্বু সারা বাসা খুঁজতেছে তাকে ছেলেরা চলে এসেছে বাসার সামনে “।
সুরের কথা শুনে বিন্দুর পেটের ভিতরে যেন প্রজাপতি উড়তে লাগল কেমনই যেন লাগতে লাগল ওর। রাহেলা আর সুর দুইজনে তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে গেল রুম থেকে। বিন্দু শুধু এটুকুই জানে যে ওকে দেখিতে আসছে তার নাম শিশির। কালকে কনা অনেক্ষন হাহা হিহি করেছে এই নাম নিয়ে বারেবার বলেছে শিশিরের বিন্দু। ভালই মানিয়েছে নাম দুইটো।
মেয়েদের বাড়ির সামনে নেমে সবাই হাঁ কিরে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। বিশাল আলিশান বাড়ি একটা। শিশিরদের বাড়িও বড় কিন্তু এ বাড়িটা যেন তার চেয়েও অন্যন্য। আবির শিশিরের কানে কানে বলল,
___ ” দোস্ত এ বাড়ির জামাই হলে তো তুই গোল মারবি। দেখেছিস কি সুন্দর বাড়ি “।
___ ” এত শখ হলে তুই বিয়ে করে নে “।
শিশির কিটমিটিয়ে বলে উঠলো। হাবিব সাহেব ড্রাইভারদের গাড়ি থেকে মিষ্টি আর ফল বের করতে বলে অন্যদের তাড়া দিলেন ভেতরে যাওয়ার জন্য। সবাই বাড়ির নিচে যেতেই কিবরিয়া সাহেব মানে বিন্দুর বাবা বেরিয়ে এলেন। হাবিব সাহেবকে বুকে জড়িয়ে ধরলে উনি। পেছনে পেছনে কিবরিয়া সাহেবের ছেলে মানে বিন্দুর বড় ভাই বেরিয়ে এলো। সবার সাথে পরিচয় পর্ব শেষে ড্রইংরুমে বসল ওরা৷ ছোট চাচ্চু শিশিরের কানের কাছে এসে বললেন,
___ ” দেখেছিস শিশির এদের চয়েজ অনেক হাই ক্লাসের বাড়িটা কত সুন্দর করে সাজিয়েছে। ”
শিশির কিছু না বলেই চুপ করে বসে রইল। যে আছে যার জ্বালায়। কথাবার্তার মধ্যেই রাহেলা আর কনা দুজনে বিন্দুকে নিয়ে এসে হাজির হল। শিশির চুপ করে মাথা নিচু করে রইল। আর বাকি সবাই তো মেয়ে দেখে পুরোই ফিদা। গায়ের রঙটা যেন আল্লাহ পারফেক্ট করে দিয়েছেন মেয়েটাকে। তার উপরে শাড়িতে যেন একদম পুতুলের মত লাগছে বিন্দুকে। মেয়ে দেখে তো জাহানারা আর হাবিব সাহেব মহা খুশি। দেখতেই লক্ষী পনা স্বভাবের। বিপ্লব শিশিরকে খোঁচা মেরে বলল,
___ ” দোস্ত ভাবি তো সেই লেভেলের। যাকে বলে হেব্বি “।
___ ” লাজবাব রে। তোর কপালটাই ভাল। ”
বিপ্লবের সাথে আবিরও সায় দিল। সেই প্রথম শিশির মাথা তুলে সামনের দিকে তাকালো। লাল কালো শাড়িতে যেন এক অপ্সরা বসে আছে ওর সামনে। তারপরও শিশিরের মনে হচ্ছে এক্ষনি কেন বিয়ে। কনা হাঁ করে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে পাত্র কে। তিন তিনটা ছেলে একসাথে বসে আছে। কিন্তু ছেলে যে কোনটা সেটা কনা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছে না। এর মধ্যে নাস্তা নিয়ে আসলো কাজের লোকরা। সবাই যে যার মত কথা বলছে আর কনা এখনও বুঝতেছে না শিশির কোনজন। সামনের তিনটাই আড়চোখে বারেবার এদিকে তাকাচ্ছে। আবির শিশিরের কাছে এগিয়ে যেয়ে বলল,
___ ” দোস্ত তোর শালিটা কিন্তু……. সব ভালয় ভালয় হয়ে গেলে শালি আমার নামে রেজিষ্ট্রেশন করে দিবি। ”
রাগে দুঃখে শিশির পাগল প্রায় আর এরা আছে শালি নিয়ে টানাটানি। বিপ্লব কিছু বলতে যাবে ঠিক তখন শিশির ওর হাত চেপে ধরে বলল,
___ ” দেখ বিপ্লব শিশির এমনিতেই আমার ব্রেইনের অবস্থা দই বানায়ে দিছে। তোর পায়ে ধরি সেই দই দিয়ে তুই প্লিজ ঘোল বানাইস না। ”
সব কথা বার্তা শেষে হাবিব সাহেব কিবরিয়া সাহেবকে বললেন,
___ “বন্দু মেয়ে আমাদের অনেক পছন্দ হয়েছে৷ এখন তুমি বলো কবে বিন্দু মা কে আমি আমার বাসায় নিয়ে যাব।”
বাবার কথা শুনে শিশিরের মাথার চুল ইলেট্রিক শক খেলে যেমন দাঁড়িয়ে যায় ঠিক তেমনি দাঁড়িয়ে গেল। বিয়ে মানেটা কি? চেনা নেই জানা নেই হুট করে বিয়ে। কিবরিয়া সাহেব হেসে বলল,
___ ” হজ্বে তো সবাই এক সাথেই যাচ্ছি তাহলে হজ্বের আগেই বিয়েটা সারি কি বলো।”
___ ” একদম আমার মনের কথা বলেছ “।
হাবিব সাহেব জাহানারার দিকে তাকিয়ে বললেন,
___ ” কি শিশিরের মা তুমি কি বলো “।
___ ” আমি তো অপেক্ষায় আছি কবে ঘরের লক্ষী ঘরে নিয়ে যাব “।
হেসে বললেন জাহানারা। বিন্দু একপলক তাকিয়ে সামনে দেখলো ডীপ ব্লু শার্ট আর কালো প্যান্টে এক ছেলে নিচের তাকিয়ে আছে। কেন জানি না ওর মনে হল এই হয়ত শিশির হবে। আবির বিপ্লব এর খুশি যেন ধরতেছে না। এমন হুট করে বিয়ে ঠিক হয়ে যাবে শিশিরের এটা যেন ভাবতেই পারে নি ওরা। এক সপ্তাহ পরে বিয়ের দিন ঠিক করল সবাই। মিষ্টি মুখ করার পরে শিশিরের কাছে মনে হতে লাগল অ যেন কুরবানীর গরু। যাকে জবাই করার আগে একবারও কেউ জিজ্ঞেস করল না যে, ” ব্যাটা গরু তোর কি জবাই হওয়ার ইচ্ছা আছে কি না “।
আসলে মানুষ ঠিকই বলে যার বিয়েভতার খবর নেই পাড়া পড়শীর ঘুম নেই। শিশির আবির আর বিপ্লবের দিকে তাকিয়ে দেখলো দুইটায় পারেনা খালি নাচতে। ছোট ফুপি আর আর চাচ্চুও আনন্দে বাকবাকুম করতেছে। বিন্দু মাথা নিচু করে চুপ করে বসে আছে। হঠাৎ এমন করে বিয়ে ঠিক হয়ে যাবে সেটাও নিজেও বুঝতে পারে নি। ছোট চাচ্চু এমন সময় হাবিব সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলল,
___ ” ভাইয়া শিশির আর বিন্দুকে একটু আলাদা কথা বলতে দিলে হতো না।আফটার অল ওদের ও তো একটা মতামত আছে।”
হাবিব সাহেব হাত উঠিয়ে থামিয়ে দিলেন ওকে। কড়া গলায় বললেন,
___ ” ছোটন তুমি কি জানো না যে আমাদের ফ্যামিলিতে বিয়ে আগে ছেলে মেয়ের সাথে কথা বলা নিষেধ “।
এর পরে আর কেউই কথা বাড়ালো না। শিশির মনে মনে নিজেকে প্রবোধ দিতে লাগল এই বলে যে, থাক মেয়ে তো বিয়ের আগে দেখার নসীব হয়েছে তার যেই বাপের বাপ দেখা যেত বিয়ের দিন বলত ” উঠ ছ্যামড়া আজকে তোর বিয়ে “। কথাবার্তা শেষে সবাই উঠলো।বিদায় নেওয়া শেষ করে সবাই আস্তে আস্তে বের হতে লাগল। শিশির ছিল সবার শেষে। হঠাৎ ও টের পেল ওর হাত কে যেন টেনে ধরেছে, ঘুরে ও যা দেখলো তাতে ওর কেমন জানি হাত পা ঠান্ডা হয়ে যেতে লাগল। ও দেখলো…….
চলবে
মারিয়া আফরিন নুপুর