শুধু_আমারই
পর্ব_১০
গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার পর সায়ান যখন সানজানাকে পাশের সিটে আবিষ্কার করলো তখন রীতিমতো ধাক্কা খেলো। সাথে সাথে পিছনে তাকিয়ে দেখে পিয়া হাসি মুখে পিছনে বসে আছে।
পিয়ার ঠোঁটের কোণের হাসি সায়ানের বুকে যেন তীরের মতো বিঁধলো।
পিয়াকে জোর করে এনে যে কত বড় ভুল করেছে তা এখন সায়ান হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।
অপরাধী চোখে বার বার সে পিয়াকেই দেখছে।
আজ সানজানার মুখোমুখি হওয়া সায়ানের জন্য অস্বস্থিকর ছিলো। কিন্তু পিয়াকে এর মাঝে আনা মোটেও ঠিক হয়নি। সায়ান আর সানজানার সমস্যার সমাধান তো আর পিয়া দিবে না। উফঃ কেন সে এমন স্বার্থপরের মতো কাজ করলো।
সায়ান কখনোই পিয়ার মতো ভালো মানুষ হতে পারবে না, কখনোই পিয়ার মতো ধীরস্তির বুদ্ধিসম্পন্নও হতে পারবে না। পেছনে বসা পিয়ার মুখের হাসি অপরাধী সায়ানকে যেন ছিঁড়ে ফেলছে।
সায়ান এক হাত দিয়ে চুলগুলোকে টেনে পিছনে নেয়। খুব অস্থির লাগছে। সানজানা কি কথা বলছে সায়ানের মাথায়ই ঢুকছে না। মন চাচ্ছে সব বাদ দিয়ে পিয়াকে নিয়ে বাসায় চলে যেতে।
******
সানজানা বেশ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সায়ানের সাথে গল্প করছে৷ বেশির ভাগই ওর কাজ, কাজের অভিজ্ঞতা, নতুন কি কি কাজ করবে, সেসব পরিকল্পনার কথা। কথার ফাঁকে ফাঁকে সায়ানের কাঁধে হাত রাখছে তো হাতে হাত রাখছে।
সায়ান আজ অন্য সময়ের চেয়ে অনেক বেশি গম্ভীর হয়ে আছে। ও তো সব সময়ই খুব হাসিখুশি থাকে, বেশিক্ষণ গম্ভীর থাকতে পারেনা। কিন্তু হঠাৎ এতো গম্ভীর কেন হয়ে গেল কে জানে? হয়তো গার্লফ্রেন্ডের কাছে পারসোনালিটি দেখাচ্ছে।
আমার খুব রাগ লাগছে সায়ানের উপর। কেন সে বার বার ব্যাক মিররে আমাকে দেখছে? কেমন চোর চোর লাগছে। আমি সরে জানালার একবারে পাশে গিয়ে বসি যেন আর চোখাচোখি না হয়।
জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি আমি। এখান থেকে পালানোর উপায়ও নাই। নিজেই সায়ানকে শিখিয়েছি ঢাকায় ঘুরতে এসেছি আমি। এখন একা কিভাবে কি বলে বাসায় ফিরে যাবো?
আমি যে আজ এখানে কেবল সায়ানের জোর করায় এসেছি তা না। আমার নিজেরও ইচ্ছা ছিল একবার সানজানাকে দেখার। মনের কোথাও না কোথাও একটা আশা ছিলো সানজানার রূপ দেখেই হয়তো সায়ান পাগল হয়েছে। আমার ভালোবাসা হয়তো ওর রূপের চেয়ে বেশি কিছু। মনের যে হিংসা, যে আশা নিয়ে এসেছিলাম সানজানাকে দেখে, ওর সাথে কথা বলে সব গুড়ে বালি হয়ে গেল।
এতো ভালো কেন সানজানা!
আমার ভেতরটা খুব গুমোট লাগছে , অজান্তেই দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। বুকে কেউ যেন পাথর বেঁধে দিয়েছে। জানালা দিয়ে দেখা মানুষগুলো কেবলই ঝাপসা হয়ে উঠছে।
গাড়ি তিনশো ফিট রাস্তার উদ্দেশ্য ছুটছে। আমি ছুটছি বাস্তবতার দিকে। ভালোই হয়েছে। আমার জন্য এ শিক্ষাটার দরকার ছিলো। মানুষের যখন বুদ্ধিশুদ্ধি লোপ পায় তখন জোরে একটা থাপ্পর খাওয়ার দরকার পড়ে। আজ এখানে না আসলে আমি হয়তো সুখের স্বপ্ন থেকে জাগতামই না।
*******
তিনশো ফিট রাস্তার বেশ ভিতরে একটা নিরিবিলি জায়গায় সায়ান গাড়ি পার্ক করে। রাস্তার পাশেই পার্ক করতে চেয়েছিলো। কিন্তু সানজানা বেশ ভিতরে নির্জন জায়গায় থামতে বলল। সেলিব্রেটি মানুষ সে। খামখা কেউ চিনে ফেললে ডিসটার্ব হবে।
গাড়ি থেকে নেমে দেখি সায়ান অপরাধী মুখ নিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। সায়ানের মায়া ভরা মুখ দেখে আমার এখন অসহ্য লাগছে। প্রচণ্ড জিদ লাগছে আমাকে এখানে আনার জন্য।
আমি সানজানার দিকে ফিরে মুখে হাসি এনে বলি অনেক সুন্দর জায়গা তো! আমি বরং একা একটু ওদিকে হাঁটাহাঁটি করি! অনেক তো হাড্ডি হয়ে থাকলাম। তোমরা ওদিকটায় বসে সময় কাটাও।
থ্যাংকস পিয়া! — বলে সানজানা সায়ানের দিকে তাকাতেই ওর মোবাইল বেজে উঠে।
—সায়ান তুমি বসো গিয়ে আমি জরুরী আলাপটা সেরেই তোমার কাছে আসছি– বলে সানজানা একটু দূরে গিয়ে কল রিসিভ করে।
সায়ান আমার সামনে এসে বলে তোমার একা থাকার কোনো দরকার নাই।
আমি খুব স্থির চোখে সায়ানের দিকে তাকিয়ে বলি — তোমার কি মনে হয় সানজানা আমাকে তোমাকে নিয়ে এখানে আয় তব সহচরী গান গাইতে এসেছে? তুমি আমাকে কেন তোমাদের মাঝে এনেছো সায়ান??
— আমি একটা ইডিয়ট বলে। তুমি চাইলে আমাকে দুইটা থাপ্পর দিতে পারো।
— না সায়ান! থাপ্পর কেন দিবো! তোমাকে আমি ধন্যবাদ দিবো। তুমি ভালো কাজই করেছো। আমাকে আমার অবস্থান দেখিয়েছো।
সায়ান আহত চোখে আমার দিকে তাকায়। পিয়া প্লিজ এভাবে বলো না। আমি আসলে বুঝি নি এমন হবে।
— তুমি কি কখনোই বুঝো? বুঝাবুঝির সব দায়িত্ব তো আমার। কোনো একটা কাজ অন্তত ঠিক মতো করা শিখো সায়ান!
যাও, সানজানাকে সময় দিতে এসেছো ওটাই দায়িত্ব নিয়ে কর।
— না! তুমি আমার দায়িত্ব পিয়া! আমি তোমাকে একা রেখে যাবো না।
— তাই? তো এখন তোমাদের মাঝে বসে আমাকে তোমাদের প্রেমলীলা দেখতে হবে?
— পিয়া প্লিজ!
— কি প্লিজ! প্রেম করতেই তো এখানে এসেছো। যাও গিয়ে প্রেম করো।
সায়ানের চোঁয়াল শক্ত হয়ে উঠে। —চলো গাড়িতে ওঠো। আমরা আর এখানে থাকছি না। আমরা এখনই বাসায় যাচ্ছি চলো।
— না একদম না। আমি কোথাও যাবো না। এখানেই থাকবো। আর সাথে তুমিও থাকবে সানজানাকে নিয়ে।
তুমি যে চিজ দুদিন পর সানজানাকে বলবে আমার কিছু করার ছিলো না। পিয়াই আমাকে নিয়ে বাসায় চলে গেছে।
না বাবা আমি তোমাদের দোষী হতে চাই না।
সায়ানের নাকের আগা, চোখ লাল হয়ে আছে। রাগে না দুঃখে জানি না তবে ওর হাত কাঁপছে।
আমি মনে মনে বললাম অনেক মায়া দেখিয়েছি তোমায় সায়ান, আজ আর না। আজ তোমার পথে তুমি আর আমার পথে আমি।
— কি হলো সায়ান দাঁড়িয়ে কেন, যাও। সানজানা ডাকার আগে তুমি যাও। ও কি ভাববে বলো!
সায়ান দাঁত কিটমিট করে বলে যা ইচ্ছা ভাবুক। চলো, আমরা বাসায় যাচ্ছি।
— এতোদূর এসে এখন কেন বাসায় যাবে?? খামখা তুমি জিদ করছো।
— জিদ করলে জিদ। চলো!
আমি অন্য দিকে তাকিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলি, তুমি সবসময় জানতে চাও, আমি কি চাই!
তো আজ আমি চাই তুমি সানজানার কাছে যাও। ওর সাথে প্রেম করো, ভালোবাসার গল্প বলো, ওকে জড়িয়ে ধরো, ইচ্ছে মতো চুমু খায় যা ইচ্ছা করো। শুধু আমার সামনে থেকে যাও প্লিজ।
— পিয়া, এবার তুমি জিদ দেখাচ্ছো!
— আমার জিদের দেখেছো কি তুমি! তুমি আমার সামনে থেকে না গেলে আমি এই মুহূর্তে এখান থেকে তোমার কাছ থেকে, তোমার জীবন থেকে চলে যাবো। ভেবোনা আমি তোমার বাসাতেই যাবো। আমি আমার নিজের বাসায় যাবো। সুতরাং তুমি…
— ওকে ফাইন। আমি যাচ্ছি।
সায়ান যেতে যেতে আমার দিকে তাকিয়ে কাতর চোখে বলে পিয়া প্লিজ দূরে যেও না। পাশেই থেকো।
আমি সায়ানের কাছ থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলাম। আজ আমাকে সায়ানের কোনো কিছু স্পর্শ করতে পারবে না।
একা একা হাঁটছি আমি।
পশ্চিমদিকে লাল টুকটুকে সূর্য। বড় বড় ঘাসগুলো বাতাসে দোলা খাচ্ছে। আমি আমার রাগ, অভিমান, জিদ নিয়ে ঘাসের আড়ালে হাঁটছি। কান্না আসছে না কেমন যেনো ভোঁতা অনুভূতি। নির্বিকার আমি। সায়ান সানজানাকে আমি মাথা থেকে, জীবন থেকে ঝেরে ফেলতে চাই।
তুমি থাকো তোমার ভালোবাসাকে নিয়ে, সায়ান। তোমার কিছুই করার নাই যখন আমারও কিছুই করার নাই।
মনে হচ্ছে চিৎকার করে বলি আমি চাই না তোমাকে আমার জীবনে।
আমার তোমাকে দরকার নেই সায়ান! কোনো দরকার নেই।
আমি ঘুনাক্ষরেও বুঝতে পারি নি যে পর মুহুর্তেই সায়ানকে আমার এতোটা দরকার পড়বে। এতো বাজে এক পরিস্থিতির স্বীকার হবো আমি।
পিছন থেকে একজন হঠাৎ বলে উঠে আপা কয়টা বাজে??
আমি একটু চমকে তাকাই। একটা বাইশ চব্বিশ বছরের ছেলে। জিন্স, ক্যাডস পরা কিন্তু ছিচকা চেহারা, মুখে পান চিবুচ্ছে। দাঁড়ানোর ভঙ্গিমাটা আত্মবিশ্বাসী।
আমার হাতে তো ঘড়ি নেই এ কথা বলে আমি রাস্তার দিকে এগুতে থাকি।
ছেলেটা পেছন থেকে বলে আপা কি এখানে একা এসেছেন?? অনেকক্ষণ ধরে একাই হাঁটছেন!.
আমি উত্তর না দিয়ে তাড়াতাড়ি পা চালাই। চারিদিকের নির্জনতা আর বড় বড় ঘাসের আড়ালে সায়ানকে দেখতে না পাওয়া আমাকে যেন ভয় পাইয়ে দেয়।
কিন্তু ভয়াবহতা যেন আমার জন্য অপেক্ষা করে বসে ছিলো।
মানুষের জীবন তোলপাড় হতে অল্প কিছু মুহূর্তই যথেষ্ট।
হঠাৎ ছেলেটা আমার একটা হাত শক্ত করে ধরে টান দেয়। আমি ভয়ে হ্যাচকা টান দেই কিন্তু কোনোভাবেই হাত ছাড়াতে পারি না। হঠাৎই আমি অন্যহাত দিয়ে ছেলেটার চোখে জোড়ে গুতো মারি। ছেলেটা হাত ছাড়তেই আমি দৌড়ে পালাই। কিন্তু পরক্ষণেই সে আমাকে জাপ্টে ধরার জন্য পিছন থেকে সজোরে হাত চালায়। ওর হাতের ধাক্কায় আমি মাটিতে পড়ে যাই। বোধহয় খুব জোড়ে নখের আচড় দিয়েছে। পিঠটা জ্বলে যাচ্ছে। আমি নিচে পড়ে গেলে ছেলেটার মুখে তীর্ষক হাসি ফুটে উঠে। আমার দিকে হায়েনার দৃষ্টিতে এগিয়ে আসতে দেখে আমি স্বজোরে সায়ান বলে চিৎকার দেই।
পর্ব ১০
বড় বড় ঘাস ঘেরা জায়গায় সানজানা সায়ানকে নিয়ে বসে আছে। সানজানার মনে আজ অনেক কথা।
সায়ানের কোম্পানির একটা ফটোশুটের কাজেই মূলত সায়ানের সাথে দেখা। প্রথম দেখাতেই সায়ানকে ওর ভালো লেগেছিল। তারপর টুকটাক কথা বলা আর প্রতিবারই মুগ্ধ হওয়া। এতো বড় কোম্পানির হেড অথচ কত বিনয়ী, ভদ্র। সুদর্শন ছেলেরা সাধারণত অহংকারী হয় কিন্তু সায়ান পুরো ভিন্ন ছিল। সানজানার মতো সুন্দরী মেয়ের দিকে সে লাজুক হাসিতে চাইতো। সানজানা হুট করেই যেন সায়ানকে ভালোবাসার কথা বলে ফেলেছিলো আর সায়ানও লাজুক হেসে তাতে সায় দিয়েছিলো। এরপর দেখা সাক্ষাৎ যা হয়েছে ওটাকে অন্তত ডেট বলা চলে না। ফোনে যাও অল্পস্বল্প কথা হতো কিন্তু কাজের চাপ এতো বেড়ে যায় যে, সানজানা কাউকে ভালবাসে সেটা যেন মনে করারও সময় ছিলো না। একটার পর একটা কাজ হাতে নিতে থাকে সে । তবে সায়ানকে সে মেসেজে নতুন নতুন এচিভমেন্ট গুলো জানাতো সায়ানও তাকে অভিনন্দন দিয়ে রিপ্লাই দিতো। ব্যাস এতোটুকুই!
সায়ান অনেক বেশি ফ্ল্যাকজিবল একটা ছেলে। কোনো কিছুতেই বাধা নেই, কোন অধিকার ফলায় না, কোনো আবদারও নেই। ওর এ ব্যাপারটাই সানজানাকে অনেক বেশি শান্তি দেয় কিন্তু কেমন জানি স্পেশাল ফিল করায় না।
সায়ানকে ভালোবাসে সানজানা কিন্তু সে ভালোবাসাটা কেমন জানি! কোনো অস্থিরতা নেই, বুকের ধরফরানী নেই, যেন শান্ত নদীতে ভেসে চলা। এবার দেশে ফেরার পথে প্লেনে সে শুধু সায়ানের কথাই ভেবেছে।
সায়ান খুব ভালো একটা ছেলে কিন্তু শুধু ভালো বলেই কি ভালোবাসা হয়ে যায়! সায়ানের প্রতি সানজানার মিষ্টি এক অনুভূতি হয় কিন্তু সে অনুভূতি কি আদৌও ভালোবাসা? নাকি সায়ান শুধুই ভালোলাগা, কেবলই শুভাকাঙ্ক্ষী?
— সায়ান, আমি আগামীকাল চিটাগাং যাবো, ফিরবো ছয়দিন পর । এরপর আর কোনো কাজ হাতে নেই নি। কেন জানো? শুধু তোমাকে সময় দিবো বলে।
আমি জানি আমাদের রিলেশনে আমার আগ্রহই বেশি ছিলো কিন্তু আমিই বিভিন্ন কারণে তোমার কাছ থেকে অনেক দূরে সরে গেছি।
তাই আমি এবার মন দিয়ে, অনেক ভালোবাসা দিয়ে তা পূরণ করবো। বুঝলে!!
সায়ানের কিছুই ভালো লাগছে না। সানজানা কি বলছে তা সে শুনতেই পাচ্ছে না। পিয়ার বলা কথাগুলো বার বার সায়ানের কানে বাজছে।
সানজানা সায়ানের হাতে হাত রেখে বলে আমি আমাদের সম্পর্কে পুরোপুরি মনযোগ দিতে চাই সায়ান। তুমি আমাকে সবসময় অনেক সাপোর্ট দিয়েছো।
সায়ান কিছু না বুঝে অন্যমনস্ক হয়ে সানজানার দিকে তাকায়।
—সত্যি বলো তো সায়ান, আমাকে কি তুমি মিস করেছো একদিনও?
সায়ান নিশ্চুপ।
— সানজানা আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই। খুব জরুরী কথা।
— কেন জানি মনে হয় আমারও তোমাকে অনেক কিছু বলার আছে সায়ান! আমাদের নিয়ে, আমাদের রিলেশন নিয়ে।
— সানজানা, আমি জানি না তোমাকে কতটুকু গুছিয়ে বলতে পারবো। কিন্তু এখন না বললে আমার অস্থিরতা কমবে না, আমার খুব দম বন্ধ লাগছে।
—এতো কি অস্থিরতা?? দাড়াও তোমার মন ভালো করে দেই। প্রথম কিছু গিফট করছি তোমায়। চোখ বন্ধ করো।
সায়ান মুখোমুখি বসে বলে সানজানা বোঝার চেষ্টা কর! কথাটা জরুরি।
— আগে চোখ বন্ধ করো।
সায়ান বোকার মতো তাকিয়েই থাকে।
— কি হলো?? করো!!
— হু?? কি করবো??
— চোখ বন্ধ করতে বলছি।
সায়ান চোখ বন্ধ করার আগেই সানজানা টুপ করে সায়ানের গালে একটা চুমু খায়।
সায়ান চমকে তাকায়।
অদ্ভুতভাবে সায়ানকে চেয়ে থাকতে দেখে সানজানা বলে কি ব্যাপার আমার প্রথম চুমু পেলে তুমি খুশি হও নি? এখন কি ঠোঁটে দিতে হবে??
সায়ান দুহাতে পিছনে ভর দিয়ে সানজানা থেকে দূরে সরে যায়। প্লিজ সানজানা না! কথা শুনো!
তখনই পিয়ার চিৎকার ভেসে আসে সা.. য়া..ন..
পিয়ার ভয়ার্ত চিৎকার শুনে সায়ানের বুঝতে বাকি থাকে না পিয়ার সাথে খারাপ কিছু হয়েছে। সায়ান ছুটে যায় সাথে সানজানাও পিছনে ছুটতে থাকে।
একটা ছেলে পিয়ার পা ধরে ক্রমানয়ে সামনে এগিয়ে আসছে আর পিয়া ভয়ার্ত মুখে সরে যাওয়ার চেষ্টা করছে। সায়ান মুহূর্তেই হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে ছুটে গিয়ে ছেলেটাকে সজোড়ে লাথি মারে। ছেলেটা সায়ানকে আসতে দেখেই পালাচ্ছিল কিন্তু সায়ানের লাথি খেয়ে ছিটকে পড়ে। সায়ান ছেলেটার কলার ধরে নাকে ঘুষি মারে। ছেলেটার নাক দিয়ে গলগল করে রক্ত বেড়িয়ে পড়ে। কিন্তু সায়ান থামে না পেটে মুখে আরও ঘুষি দিতেই থাকে।
সানজানা খেয়াল করে পিয়ার জামার পেছন খানিকটা ছিড়ে গেছে। সে নীচ থেকে পিয়ার ওড়না তুলে পিয়াকে জরিয়ে দিয়ে ওর হাত শক্ত করে ধরে।
সায়ানের মারের তোড়ে ছেলে কোনোভাবে তাল সামলে ছুট দেয়। সায়ানও ধাওয়া করতে গেলে সানজানা ডাক দেয়… সায়ান ছাড়ো ওটাকে। তুমি পিয়ার কাছে আসো!
সায়ান হঠাৎই থেমে যায়। পিয়া!! সে ছুটে এসে পিয়াকে জড়িয়ে ধরে। সরি পিয়া! সরি,সরি,সরি…. সব আমার দোষ। আমি নিজেকে কখনোও ক্ষমা করতে পারবো না। আমি কেন তোমাকে একা ছাড়লাম! আমি… সরি পিয়া। সরি..।
পিয়ার শরীর ভয়ে কেঁপে কেঁপে উঠছে। কিছুক্ষণ আগে ওর সাথে কি হয়েছিলো সে যেন কিছুই মনে করতে পারছে না। সে এলোমেলো চোখে এদিক সেদিক তাকাচ্ছে।
সানজানা বলে সায়ান চল এখান থেকে। ছেলেটা যদি স্থানীয় হয় তবে আরও ছেলেপেলে নিয়ে আসতে পারে। তাছাড়া মানুষ জড়ো হলে পিয়ার জন্য সেটা বিব্রতকর হবে। এখানে থাকা আর নিরাপদ নয়। গাড়িতে উঠো।
সায়ান পিয়াকে জড়িয়ে ধরেই গাড়ির সামনের সিটে বসিয়ে দেয়। পরিস্থিতি এতোটাই খারাপ যে কারো মাথাই কাজ করছে না। সায়ানের চোখ লাল হয়ে আছে। রাগে, দুঃখে, অপরাধবোধে সায়ান পুরো বিক্ষিপ্ত । কিছুক্ষণ পরপর সে নিজের চুল মুট করে টেনে ধরছে তো গাড়ির স্ট্যায়ারিংএ জোড়ে জোরে ধাক্কা মারছে।
সানজানা আজ অবাক হয়ে সায়ানকে দেখছে। সবসময় চুপচাপ, লাজুক সায়ান আজ যেন ভিন্ন মানুষ। ঐ ছেলেটা না পালালে সায়ান হয়তো আজকে ওটাকে জানেই মেরে ফেলতো।
সায়ান কিছুক্ষণ পর পর পিয়াকে দেখছে। পিয়া কেমন জানি শক্ত হয়ে আছে। কোনো অভিব্যক্তি নেই। সায়ানের সেটাই ভয় হচ্ছে। পিয়া সব সময়ই অনেক বেশি স্ট্রং। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে এতোটা শক্ত হয়ে যাওয়াও ঠিক না। ট্রমায় না চলে যায়! সায়ানের অস্থিরতা বাড়তেই থাকে। সে পিয়ার হাত ধরে নিজের বুকে চেপে ধরে। গাড়ি ছুটে চলছে।
পিয়া খুব শান্ত চোখে সানজানাকে এক পলক দেখে সায়ানের হাতটা ছাড়িয়ে নেয়।
সানজানা সবকিছুই খেয়াল করে। সে পিছন থেকে পিয়ার কাঁধে হাত রেখে বলে পিয়া তোমার জায়গায় অন্য কেউ হলে অনেক আগেই ভেঙে পড়তো। তুমি অনেক স্ট্রং একটা মেয়ে।
সায়ানের উদ্দেশ্যে সানজানা বলে আমাকে তুমি সামনের শপিংমলে নামিয়ে দাও, সায়ান। আমি কল করে গাড়ি আনিয়ে নিবো। তুমি বরং পিয়াকে নিয়ে বাসায় যাও।
সায়ান কোনো উত্তর দেয় না।
সানজানা আবার বলে কি হলো সায়ান? সামনে গাড়ি পার্ক করো।
দেখো সানজানা, পিয়াকে একা ছেড়ে আমি ভুল করেছি আর এখন তোমাকে আমি এখানে একা নামিয়ে দিবো? এতোটা কেয়ারলেস ভাবছো কেন আমাকে? তোমাকে বাসায় নামিয়ে তারপর আমি বাসায় যাবো।
সানজানা আর কথা বাড়ায় না।
বাসার নিচে নেমে সানজানা পিয়া আর সায়ানের কাছ থেকে বিদায় নিলে খেয়াল করে সায়ান আবারোও শক্ত করে পিয়ার হাত ধরে বসে আছে।
*******
বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত নয়টা বেজে যায়। পিয়া গাড়িতে পুরোই চুপচাপ ছিলো। খুব সাবধানে সায়ান পিয়াকে নিয়ে বাসায় ঢুকে।
রুমে ঢুকে বলে পিয়া তুমি ঠিক আছো??
— হু। আমি শাওয়ার নিবো। আমার গা ঘিনঘিন করছে।
— ঠিক আছে, যাও!
পিয়া তোয়ালে নিয়ে শাওয়ারে ঢুকতে গেলে ওড়না চেয়ারের উপর রাখে। ওমনি আয়নায় খেয়াল করে ওর জামার পেছন ছেড়া আর গাঢ় নখের আঁচড়ে রক্ত জমাট বেঁধে আছে। পিয়া চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে। চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে। কেমন গা গুলাচ্ছে, ঘিনঘিন অনুভূতি…
সায়ান ঘড়ি খুলে সাইড টেবিলে রাখছিল। পিয়াকে আয়নার সামনে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে তাকায়।
পিয়ার সাথে চোখাচোখি হতেই পিয়া তড়িঘড়ি ওড়না আবার গায়ে জড়িয়ে নিয়ে কুঁকড়ে যায়। সায়ান ছুটে পিয়ার কাছে গিয়ে পিয়াকে জড়িয়ে ধরে।
— পিয়া প্লিজ! এতো শক্ত হয়ে থেকো না। এতো স্ট্রং হওয়ার দরকার নেই। তোমার চুপ হয়ে যাওয়াই আমি ভয় পাচ্ছি। প্লিজ পিয়া মনের উপর চাপ নিও না!
পিয়া সায়ানের শার্ট খামচে ধরে নীরবে কাঁদতে থাকে। কান্নার আওয়াজ ক্রমানয়ে বাড়তে থাকে। এক সময় চিৎকার করে পিয়া কাঁদে। সায়ান শক্ত করে পিয়াকে জড়িয়ে রাখে। এক হাতে রিমোট নিয়ে টিভির সাউন্ড বাড়িয়ে দেয় যেন দেয়ালের ওপারের মানুষ কিছু জানতে না পারে।
পিয়া কেঁদেই চলেছে। সায়ানেরও চোখে পানি। আজকের ঘটনার জন্য সায়ান নিজেকে কোনোদিন ক্ষমা করতে পারবে না। পিয়ার সাথে ঐ মুহূর্তে যা ঘটেছে তা সায়ানই মেনে নিতে পারছে না সেখানে পিয়ার উপর দিয়ে কি যাচ্ছে তা কেউ অনুধাবন করতে পারবে না। সায়ান কেন পিয়াকে একা ছাড়লো এ অপরাধ বোধ তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে।
হঠাৎ পিয়া সায়ানকে ধাক্কা দিয়ে ওয়াসরুমে তড়িঘড়ি ঢুকে যায়।
দরজার এপাশে দাঁড়িয়ে সায়ান শুনতে পায় পিয়া বমি করছে। দরজার পাশেই দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে সায়ান। অস্থির পায়চারি দেয়।
একসময় পিয়া বের হয়। শাওয়ার নেয়া হয়নি কেবল জামা বদলে ঘরের কামিজ পড়েছে । ওর চোখগুলো লাল হয়ে আছে। টলমলে পায়ে এগিয়ে আসতে দেখে সায়ান পিয়ার হাত ধরে বিছানায় বসায়।
পিয়া বলে, আমার প্রচণ্ড মাথা ব্যাথা করছে। জ্বর আসছে। তুমি আমাকে প্যারাসিটামল দিতে পারবে??
— অবশ্যই। কিন্তু কিছু খেতে হবে তো তোমার। খালি পেটে আছো। আবার বমিও করেছো। আমি কিছু আনছি ওটা খেয়ে তারপর ঔষধ খাও। তারপর শুয়ে পড়ো।
— না, না! আমি কিছু খাবো না। আচ্ছা ঠিক আছে তুমি বরং একটা আপেল আনো। কাউকে কিছু বলো না যেনো।
— হু!
পিয়া ঔষধ খেয়ে মাথা চেঁপে ধরে রাখে। সায়ান পিয়ার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
— পিয়া তোমার গা বেশ গরম।
— ও কিছু না। ঔষধ খেয়েছি। কাল পর্যন্ত ঠিক হয়ে যাবো। শুনো, তুমি রাতে মায়ের সাথে অবশ্যই খেতে বসবে। মা যেন কিছু টের না পায়। আমার কথা জিজ্ঞেস করলে বলবে আমার মাইগ্রেনের পেইন উঠেছে। বুঝলে??
— বুঝলাম। তুমি শোয় তো। ওতো চিন্তা করো না।
— তুমি বলেই তো চিন্তা করছি। আদৌও সামলাতে পারবে কিনা! আর শুনো, আমার জ্বর বাড়লে কাঁপুনি ওঠে। তুমি ভয় পেয়ে যেও না। ওটা এমনি ঠিক হয়ে যাবে। তুমি খবরদার স্বপ্নাবুকে ডাকাডাকি করবে না।
— আচ্ছা পিয়া সোনা, তুমি ঘুমাও।
সায়ানের মুখে পিয়া সোনা শুনে ঘোরের মাঝেও পিয়ার ভালো লাগে। সে শুয়ে পড়ার চেষ্টা করে কিন্তু চোখ বন্ধ করতেই ভয়ার্ত চোখে আবার লাফ দিয়ে উঠে। এলোমেলো ভাবে এদিক সেদিক তাকায়।
—-সায়ান, আমার খুব ভয় করছে। কেন জানি চোখ বন্ধ করলেই ঐ ছেলেটা চোখের সামনে চলে আসছে। আমি ঘুমাবো না, পারবো না আমি ঘুমোতে… পিয়া আবার কাঁদতে শুরু করে।
জ্বরের ঘোরে হোক আর আজকের ঘটনায় হোক পিয়া নিজেকে সামলাতে পারছে না। কেনোভাবেই ঘুম পাড়াতে পারছেনা সায়ান। অস্থির অশান্ত পিয়াকে অবশেষে বুকে জড়িয়ে চুলে হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়ায়। অনেক বেশি ধকল নেয়ায় ক্লান্ত শরীরে অল্পক্ষণেই পিয়া শুয়ে পড়ে।
পিয়া শুয়ে পড়লে সায়ান আস্তে করে নিজেকে ছাড়িয়ে রুমে পায়চারি দিতে লাগে। নিজেকে খুব তুচ্ছ লাগছে– এতোটুকু নিরাপত্তাও পিয়াকে দিতে পারলো না!
স্বপ্নাবু এসে খাওয়ার জন্য নিচে ডাকে। পিয়াকে এভাবে রেখে যেতে সায়ানের মোটেও ইচ্ছে করছে না কিন্তু পিয়া বারবার বলে দিয়েছে তাই অনিচ্ছা সত্যেও নিচে নেমে খেতে বসে।
মা পিয়ার কথা জিজ্ঞেস করলে সায়ান খাবার নাড়াচাড়া করতে করতে সত্য মিথ্যা মিলিয়ে কাহিনী বলে। সায়ানের খাবার নারাচাড়া দেখে মা বলেন খেতে না চাইলে বাদ দে। পিয়ার কাছে যা। স্বপ্নাকে কি বলবো পিয়ার সাথে থাকতে??
— না না। ওর তো শুধু মাথা ধরেছে। শুয়ে উঠলেই ঠিক হয়ে যাবে। আমি যাই বলে সায়ান জলদি জলদি পা ফেলে উপরে উঠে আসে।
পিয়া শুয়ে থাকায় পুরো রুমটা যেন নিস্তব্ধ হয়ে আছে। বিকট শব্দে সায়ানের মোবাইলের রিং বেজে উঠে। সায়ান মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে সানজানা কল দিয়েছে।
— হ্যালো সায়ান, পিয়া কেমন আছে??
— হু.. ঠিক আছে! ও অনেক শক্ত মেয়ে।
— ওর সাথে থেকো। ওকে সাহস দিও।
— হু রাখি। আমার কিছু ভালো লাগছে না।
— ঠিক আছে। জানোই তো কাল চিটাগাং যাচ্ছি। এসে কথা হবে। বাই!
সায়ান লাইন কেটে মোবাইলের সুইচ অফ করে দেয়। কিছুই ভালো লাগছে না ওর।
*****★—-_——
পিয়া শুয়ে আছে অনেকক্ষণ। অনেকক্ষণ বললে ভুল হবে বেশি হলে একঘণ্টা। এ একঘণ্টাকেই সায়ানের এক যুগ লাগছে। পুরো ঘরটা গুমোট লাগছে। এতো একা একা লাগছে!
পিয়া জেগে থাকলে এখন কত কথা বলতো, খুনসুটি করতো, ড্রেসিং আয়নার সামনে ঘুমোনোর প্রস্তুতিসরূপ মহা আয়োজন নিয়ে বসতো।
সায়ান পিয়ার গা ঘেষে বিছানায় বসে আছে। পিয়া তার পাশেই শুয়ে আছে অথচ মনে হচ্ছে চারিদিকে কত শূন্যতা!
পিয়ার দিকে তাকাতেই সায়ান দেখতে পায় পিঠের রক্ত জমাট দাগের কিছু অংশ। সায়ানের মনে পড়ে পিয়া আয়নায় ওর রক্তাক্ত পিঠ দেখছিল। তড়িৎ সায়ান ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে পিয়ার পেছনে বসে। পিয়া জেগে থাকলে ওকে জিজ্ঞেস করা যেত। কিন্তু ও তো শুয়ে আছে তাই সায়ান আগেপিছে না ভেবে পিয়ার জামার পিছনের হুক খুলে। পিঠে গাঢ় নখের চিহ্ন। সায়ানের চোখ ভিজে আসে। কতটা ভয়াবহতায় পিয়া ছিল! তুলা দিয়ে পরিষ্কার করে তাতে এন্টি সেফটিক লাগিয়ে দেয়।
রুমে পায়চারী দিতে দিতে সায়ান নিজের চুল এক হাতে টানতে লাগে। উফঃ কিছুতেই ভুলতে পারছে না পিয়ার ভয়ার্ত মুখ। দেয়ালে সজোড়ে ঘুষি মারে। হাতের ব্যথা যেন মনের ব্যথাকে ভুলাতে ব্যর্থ। কেন সে পিয়াকে একা ছাড়লো! বার বার একই আফসোস!
রাত দেড়টা বাজে। পুরো ঘর নীরব নিস্তব্ধ। সায়ানের মনে হচ্ছে সে দম বন্ধ হয়ে মারা যাবে। খুব ইচ্ছে করছে পিয়াকে জাগিয়ে দিতে। বলতে ইচ্ছে করছে কথা বলো পিয়া আমার সাথে। এতো নিস্তব্ধতা আমি নিতে পারছি না। আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। তুমি পাশে থাকার পরও তোমার নীরবতা আমাকে অস্থির করে তুলছে। তোমাকে ছাড়া যে আমি একেবারেই অসহায়!
পিয়া হঠাৎ কাঁপুনী দিতে শুরু করে। হাত পা জড়োসড়ো করো অনবরত কাঁপছে। সায়ান পিয়ার গায়ে আরেকটা কমফোর্ট জড়িয়ে দেয়। কিন্তু লাভ হয় না। সায়ান ঘাবড়ে পিয়া…বলে দুবার ডাকে কিন্তু পিয়া ঘুমের ঘোরে শুধু উ… করে। কোনো সাড়া না পেয়ে সায়ানের অস্থিরতা আরও বাড়তে থাকে। একবার ভাবে স্বপ্নাবুকে ডাকবে কিনা। আবার ভাবে পিয়া তবে অনেক রাগ করবে। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে কি করতে হয় সায়ান জানে না। এতো অসহায় লাগছে! এভাবে কাঁপছে পিয়া আর সায়ানের কিছুই করার নেই!
অস্থির মনে সায়ান অবশেষে পিয়াকে পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। একসময় আস্তে আস্তে পিয়ার কাঁপুনি থামে কিন্তু সায়ান ওভাবেই শুয়ে পড়ে।
পিয়ার মাঝরাতে ঘাম ছেড়ে জ্বর নামে। প্রচন্ড পিপাসা পায়। চোখ খুলে দেখে সায়ান পিয়াকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে।
কেন জানি পিয়ার খুব ভালো লাগে! এভাবেই পিয়া পড়ে থাকে কিছুক্ষণ । কিন্তু মরার পিপাসা বুঝি এখনই লাগতে হয়! অবশেষে আস্তে করে উঠে সাইড টেবিলে রাখা পানি খেয়ে নিঃশব্দে সায়ানের বুকে নাক ঢুঁকিয়ে আবার শুয়ে পড়ে পিয়া।
চলবে।
লেখকঃ ঝিনুক চৌধুরী।।
/