#শুধু_তোমারই_জন্য(২)
লেখনীতে- অরনিশা সাথী
|১৭|
সব রকম রিচুয়্যালস মেনে ফাইয়াজ আর তাসকিয়ার বিয়ে সম্পন্ন হয়। ঘটা করে সকলে মিলে বাসর ঘরের দরজা আটকে দাঁড়িয়ে বাসরঘরের টাকাও আদায় করেছে। বাসরঘরে বসে আছে তাসকিয়া। ওকে ঘিরে বসে আছে আনিতা রোদেলা জেরিন নূর। রাত প্রায় সাড়ে বারোটা নাগাদ বাজে। আহিয়ান ফাইয়াজ ওরা ছাদে গিয়েছে ঘন্টা খানেক হবে। এখনো আসার নাম নেই কারো। নূর আর জেরিনকে ওখানে তাসকিয়ার কাছে বসিয়ে রেখে আনিতা আর রোদেলা গুটিগুটি পায়ে ছাদের দিকে এগোলো। ওদের কাছে আহিয়ান ফাইয়াজদের বেশি একটা সুবিধার মনে হচ্ছে না। সকলে মিলে নিশ্চয়ই ছাদে কিছু একটা তো অবশ্যই করছে।
আনিতা আর রোদেলা সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে দেখলো ছাদের দরজা ভিরানো। আনিতা এক হাতে দরজা ঠেলে দিয়ে পা টিপে ছাদে প্রবেশ করলো। এদিক ওদিক তাকিয়ে কাউকে দেখতে পেলো না ওরা। পায়ের শব্দ পেয়ে ওরা আগেই আনিতাদের ছাদে চলে গিয়েছিলো। নিচে নেমে আসতে পিছু ঘুরতেই রোদেলার হাত টান পড়লো। সাথে আনিতাও থেমে যায়। দুজনে এক সাথে পিছন ঘুরে দেখে তন্ময় রোদেলার হাত ধরে আছে। ওর পাশে আহিয়ান ফাইয়াজ রাতুল আরহান শুভ সকলেই আছে। সবার দিকে একবার চোখ বুলালো আনিতা। সকলেই যেন কেমন একটা বিহেভিয়ার করছে। বিশেষ করে আহিয়ান। অনেক বেশি স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করতে গিয়ে মাঝে মধ্যে অস্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে। আনিতা কিছু বলার জন্য আহিয়ানের দিকে পা বাড়ালো। হুট করেই তন্ময় রোদেলার সামনে হাটু গেড়ে বসে বলল,
–“আগে পড়ে অনেক মেয়ের সাথে মিশেছি আমি। কিন্তু তোমার মতো কাউকে কখনো পায়নি। তোমার মাঝে আমি আমার সেই খুশিটা খুঁজে পেয়েছি যেটা আমি সবসময় চাইতাম। জানি আমার কথায় তুমি ভীষণ অবাক হচ্ছো। আগে পড়েও তোমাকে আমি কখনো ইঙ্গিত করে কিছু বলিনি। আজকে হুট করেই সবটা বলে বসলাম। বলতে পারো নিজের মনে আর চেপে রাখতে পারলাম না। আমি এমনই কি করবো বলো? কখনো বলতে চাই না আবার কখনো এমন সব কান্ড করে ফেলি যাতে অপর পাশের মানুষটা একেবারে অবাক হয়ে যায়।”
–“আমি আপনার কথার আগাগোড়া কিছুই বুঝতে পারছি না। কি বলতে চাইছেন আপনি?”
–“বুঝবে ওয়েট। আগে আমাকে সবটা বলতে দাও।”
–“হুম তো এত না পেঁচিয়ে সরাসরি মেইন টপিকে আসুন না।”
–“ভালোবাসি রোদু। উইল ইউ ম্যারি মি?”
–“ম্ মানে?”
তন্ময় উঠে আনিতার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল,
–“আচ্ছা ভাবী আপনার বন্ধু কি বাংলা ইংলিশ কোনোটাই বোঝে না? আমি তো ভালোবাসি কথাটা স্পষ্ট বাংলায় আর বিয়ের কথাটা স্পষ্ট ইংলিশে বললাম সেটা কি বুঝতে পারেনি ও?”
–“ভা্ ভাবীইইই?”
তন্ময়ের মুখে এই প্রথমবার ভাবী সাথে আপনি ডাক শুনে বেশ অবাক হলো আনিতা। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে তন্ময়ের দিকে। ওদিকে রোদেলারও একই অবস্থা। তন্ময় ওদের দুজনের দিকে একবার তাকিয়ে কপালে হাত দিয়ে বলে,
–“কি মসিবতে পড়লাম রে বাবা? এদিকে ভাবীকে ভাবী বলাতে সে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। অন্য দিকে ভালোবাসার মানুষটাকেও ভালোবাসি বলাতে এমন একটা ভাব নিচ্ছে যেন কোটর থেকে চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম।”
ফাইয়াজ তন্ময়ের কাছে এসে ওর পাশে দাঁড়িয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
–“বেশি গিলেছিস তো তাই উল্টাপাল্টা বলে ফেলছিস। আনি বুড়িকে কখনো ভাবী ডেকেছিস যে আজকে ডাকলি? আপনিও তো বলিস না তাহলে এখন আপনি করে কেন বললি? এই তুই আর আহিয়ানই সবটা ঘেটে দিবি। তোদের দুজনের জন্যই ওদের কাছে ধরা পড়বো আমরা দেখিস।”
তন্ময় সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে কিছুটা জোরেই বলল,
–“আচ্ছা আর কোনো উল্টাপাল্টা বলছি না। ধরা পড়ার চান্স নেই পাক্কা।”
তন্ময়ের কথা শুনে ফাইয়াজের কপাল চাপড়ানোর অবস্থা। আনিতা আর রোদেলা সন্দিহান চোখে দেখছে ওদের সকলকে। আনিতা আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,
–“ব্যাপার কি বলুন তো? তন্ময় কিসের ধরা খাওয়ার কথা বলছে?”
আহিয়ান সঙ্গে সঙ্গেই ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চুপ হয়ে গিয়ে মাথা নাড়ালো। অর্থাৎ ও জানে না। আনিতা আহিয়ানের দিকে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে ওর মুখের স্মেল নিলো। আহিয়ান সরে গেলো কিছুটা। কিন্তু আনিতার বুঝতে অসুবিধা হলো না। আনিতা ফাইয়াজের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
–“ড্রিংকস করেছো তোমরা? এজন্যই এত আয়োজন করে ছাদে এসেছিলে ছেলেরা মিলে?”
–“বিশ্বাস কর আনি বুড়ি আমি ড্রিংকস করিনি। আর জানিও না কে ড্রিংকস আনিয়েছে।”
আনিতা ফাইয়াজের কিছুটা কাছে গিয়ে বুঝলো ও নিজেও ড্রিংকস করেছে কিন্তু মিথ্যে বলছে এখন। আনিতা চোখ পাকিয়ে বলে,
–“আবার মিথ্যে বলছো? বাসরঘরে নতুন বউ বসিয়ে রেখে এসে এখানে ড্রিংকস করছো লজ্জা করে না তোমার?”
–“বেশি না তো একটু খেয়েছি। একেবারেই একটু।”
আনিতা কিছু বলল না।
–“আমি আমার বউয়ের কাছে যাচ্ছি।”
এইটুকু বলেই ফাইয়াজ ওখান থেকে কেটে পড়লো। ও একটু কমই ড্রিংকস করেছে। আহিয়ান আর তন্ময়ই খেয়েছে বেশি। তাই তো দুজনেই ভুলভাল কথা বলে ফেলছে। তন্ময় রোদেলার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
–“আমি সেএএএএএই কখন থেকে তোমার উত্তর জানার জন্য ওয়েট করছি তুমি এখনো কিছু বলছো না কেন?”
–“আগে সেন্সে ফিরে আসুন তারপর বলবো। এরকম মাতালদের সাথে আমি কথা বলি না।”
রোদেলা গটগট করে নেমে গেলো ছাদ থেকে। তন্ময়ের উপর অনেক রাগ হচ্ছে ওর। তন্ময় ছাদে হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে পড়লো। রোদেলার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে প্রলাপ করতে করতে বলল,
–“আমার রোদু সোনা আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। কি হবে আমার এ জীবন রেখে? আমি গাছ থেকে লাফ দিয়ে ছাদে পড়ে মরে যাবো। তারপর দেবদাস হয়ে ঘুরে বেড়াবো আমার রোদু সোনার বাড়ির আশেপাশে। আর ওকে দেখলেই আবার দৌড়ে পালাবো আমি___”
এরকম প্রলাপ করে যাচ্ছে তন্ময়। আনিতা হাসবে না কাঁদবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। কি রকম উদ্ভট সব কথা বলে যাচ্ছে তন্ময়। আহিয়ান তখনও মুখে আঙুল দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। আনিতা তন্ময়কে টেনে তুলল। ছাদের এক সাইডে বড় দুটো তোষক বিছিয়ে রাখা। ওখানেই হাত পা ছড়িয়ে বেঘোরে ঘুমোচ্ছে আরহান। শুভ উপুড় হয়ে শুয়ে ফোন ঘাটছে আর রাতুল শুভর পিঠ চাপড়ে গান গাচ্ছে। এই সবকটাকে একসাথে তুলে আছাড় মারতে ইচ্ছে করছে আনিতার। কিন্তু আফসোস ও পারবে না। সেই শক্তি ওর নেই। আনিতা তন্ময়কে নিয়ে রাতুলদের ওখানে রেখে আহিয়ানের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
–“চলুন আমার সাথে।”
আনিতা হাঁটতে শুরু করলো। কিছুদূর গিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখলো আহিয়ান এখনো আগের জায়গায় মুখে আঙুল দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে আনিতার। ও আহিয়ানের কাছে গিয়ে আহিয়ানের হাত ধরে আবারো হাঁটতে শুরু করলো।
–
আহিয়ানকে লেবু পানি খাইয়ে ওর নেশাটা কাটিয়েছে আনিতা। নেশা কেটে যাওয়ার পর আনিতার সাথে অনেক বার কথা বলার চেষ্টা করেছে কিন্তু আনিতা ওর কথা শুনেনি। এমন কি ওর সাথে কথা বলা অফ করে দিয়েছে। আহিয়ানকে জাস্ট পাত্তা না দিয়ে আনিতা ওয়াশরুমে চলে গেলো জামা পাল্টাতে। মিনিট পাঁচেক বাদে আনিতা প্লাজু আর টি-শার্ট পড়ে বের হয়ে এলো। রুমের লাইট অফ করে আহিয়ানের পাশে গিয়ে আহিয়ানের দিকে পিঠ করে শুয়ে পড়লো ও। আহিয়ান এতক্ষণ শুয়ে শুয়ে সবটা দেখছিলো। একটু ড্রিংকসই না হয় করেছে তাই বলে এভাবে এড়িয়ে যাবে? কথা বলা বন্ধ করে দিবে? এখন আবার পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো। কেন ও জানে না আনিতাকে জড়িয়ে ধরে না শুলে ওর ঘুম হয় না ভালো করে? জেনেও এমন করছে। আহিয়ান কিছুক্ষণ মুখ গোমড়া করে এসব ভাবছিলো।
আনিতার কাছে গিয়ে পিছন থেকে আনিতাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো আহিয়ান। আনিতা আহিয়ানকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। তাই বাধ্য হয়ে শান্ত হয়ে গেলো। আহিয়ান দুহাতে পিছন থেকে আনিতার পেট জড়িয়ে ধরে ওর ঘাড়ে আলতো করে একটা কামড় বসালো। কিছুটা কেঁপে উঠলো আনিতা। আহিয়ান আনিতার ঘাড়ে পিঠে নাক দিয়ে ঘঁষে নেশালো কন্ঠে বলল,
–“বউ? আমার না এখন খুব আদর আদর পাচ্ছে।”
দাঁতে দাঁত চেপে চুপ করে রইলো আনিতা। আহিয়ানের স্পর্শগুলো আনিতার মনে অন্যরকম এক শিহরণ জাগাচ্ছে আজকে। আহিয়ানের ছোঁয়াতে আজকে অন্যকিছুর আভাস পাচ্ছে ও। বুক উঠানামা বেড়ে গেলো আনিতার। নিশ্বাস ঘন হয়ে গেলো। মাঝে মাঝে ওর পেট খামছে ধরছে আহিয়ান। আনিতার সহ্যক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে সবটা। ও আর নিজেকে সামলাতে পারছে না। ঝড়ের গতিতে আহিয়ানের দিকে ঘুরে আহিয়ানকে জড়িয়ে ধরলো আনিতা। আহিয়ান মৃদু হেসে আনিতাকে আগলে নিলো নিজের বুকে। আহিয়ানকে জড়িয়ে ধরেও আনিতা দ্রুত নিশ্বাস ফেলছে। বুক দ্রুত উঠানামা করছে। সবটাই বুঝতে পারছে আহিয়ান। আনিতার চুলে হাত বুলিয়ে আহিয়ান বলল,
–“যাক এতক্ষণে তাহলে আমার বউয়ের রাগ কমলো?”
আনিতা কাঁপা কাঁপা স্বরে জবাব দিলো,
–“উঁহু এখনো কমেনি।”
–“তাহলে জড়িয়ে ধরলে কেন? আর কথাই বা বলছো কেন রাগ না কমলে?”
–“আপনাকে থামাতে। যা শুরু করেছিলেন। তাতে এদিকে না ঘুরে থাকা যায়? ড্রিংকস করার শাস্তি আপনাকে আমি কাল দিবো।”
–“আচ্ছা কালকের শাস্তি আমি মাথা পেতে নিবো। এখন তাহলে একটু আদর করি?”
এইটুকু বলে আহিয়ান আনিতার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
–“গভীর ভাবে।”
সাথে সাথেই আনিতা খুব জোরে আহিয়ানকে আকঁড়ে ধরলো। ও প্রথমেই বুঝেছিলো আজকে আহিয়ানের স্পর্শ একদম অন্যরকম লাগছে। আনিতার গরম নিঃশ্বাস আহিয়ানের উম্মুক্ত বুকে গিয়ে বারি খাচ্ছে। এতে যেন আহিয়ানের শরীরেও অন্যরকম এক ভালোলাগার শিহরণ জাগাচ্ছে। আনিতা নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
–“আপনি না বলেছিলেন___”
–“আগে কি বলেছি সেসব ভুলে যাও। এখন কি বলছি সেটা নিয়ে ভাবো।”
–“আপনি এখনো ড্রাংক আহিয়ান। নেশার ঘোরে উল্টাপাল্টা বলছেন আপনি।”
আহিয়ান উঠে গিয়ে আনিতাকে নিচে ফেলে আনিতার উপর উঠে গেলো। দু হাতে আনিতার হাত চেপে ধরে বলল,
–“উঁহু আমি এখনো মোটেও ড্রাংক নই মিসেস আহিয়ান আদৃত। আর যা বলছি একদম সজ্ঞানে বলছি নেশার ঘোরে না।”
এইটুকু বলেই আহিয়ান আনিতার গলায় মুখ ডুবালো। আহিয়ানের স্পর্শে বারবার কেঁপে উঠছে আনিতা। ফাইয়াজ আর তাসকিয়ার বাসর ঘরে বসে আনিতা আজকেও ওর আর আহিয়ানের এই রাতটার কথা ভেবেছিলো। কিন্তু কে জানতো সেই রাতটা আজকেই হবে? কে জানতো আজকেই আহিয়ান ওকে অন্যরকম এক ভালোলাগার জগতে নিয়ে যাবে নতুন নতুন সব অনুভূতির সাথে পরিচয় করাবে?
আনিতার এসব ভাবনার মাঝেই আহিয়ান আনিতার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
–“আজকে তুমি শেষ মিসেস আহিয়ান আদৃত।”
এইটুকু বলে আহিয়ান আনিতার ঠোঁটজোড়া নিজের দখলে নিয়ে নিলো। সাথে সাথেই বন্ধ চোখজোড়া খুলে ফেলল আনিতা৷ যেই হারে এই ছেলে ওর ঠোঁট কামড়াচ্ছে তাতে আনিতা মনে মনে বলে উঠলো,
–“সত্যিই আজকে আমি শেষ। এই ছেলের ভালোবাসার টর্চারগুলো তো সবে আজকে থেকে শুরু হলো। আল্লাহ জানে আর কত কামড় কত পাগলামি কত টর্চার সহ্য করতে হয় আমার।”
–
বিছানার হেডবোর্ডের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে আনিতা। একা একাই ব্লাশ করছে। পাশেই আহিয়ান উপুড় হয়ে শুয়ে বেঘোরে ঘুমোচ্ছে। চুলগুলো ভালো করে মুছেনি অব্দি। এখনো চুল বেয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় পানি পড়ছে। আনিতা ওর মাথা থেকে টাওয়েল খুলে আহিয়ানের চুল ভালো করে মুছে দিয়ে আবারো নিজের চুলে পেঁচিয়ে নিলো। একধ্যান ও আহিয়ানকে দেখছে। আহিয়ানের ফর্সা পিঠে আনিতার নখের আচঁড়ে জায়গায় জায়গায় লাল হয়ে আছে। আচঁড়ের জায়গাগুলোতে আলতো করে হাত বুলালো আনিতা। কিছুক্ষণ আগের কথাগুলো মনে হতেই লজ্জায় লাল হয়ে গেলো আনিতার গালদুটো। আহিয়ানের স্পর্শগুলোর কথা মনে করতেই আনিতা কেঁপে কেঁপে উঠলো। দুহাতে মুখ ঢেকে নিলো আনিতা। ইশ্ কি লজ্জা!
বালিশ ঠিকঠাক করে শুয়ে পড়লো আনিতা। আহিয়ানকে সোজা করে শোয়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা চালালো খানিকটা সময়। শেষে না পেরে আহিয়ানের হাত ধরে ঝাকিয়ে ওকে ডেকে বলল,
–“এই যে শুনছেন? একটু ভালো শোন না প্লিজ। আমি আপনার বুকে মাথা রাখবো। আপনি খুব ভালো করে জানেন আপনি যখন থাকেন তখন আপনাকে জড়িয়ে ধরে না শুলে আমার ভালো লাগে না।”
আহিয়ান নড়েচড়ে ঠিকঠাক ভাবে শুতেই আনিতা আহিয়ানের হাতের উপর মাথা রেখে ওর বুকে কপাল মুখ ঠেকালো। আহিয়ানের অন্যহাত নিজের পিঠের উপর নিয়ে নিলো। আহিয়ান ঘুমের ঘোরেই আনিতার কপালে চুমু দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। একপর্যায়ে আনিতাও আহিয়ানকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লো।
#শুধু_তোমারই_জন্য(২)
লেখনীতে- অরনিশা সাথী
|১৮|
সকাল বেলা তাসকিয়াকে ঘিরে বসে আছে আনিতা রোদেলা জেরিন আরোহী। চারজনে মিলে তাসকিয়াকে একেবারে জ্বালিয়ে মারছে। সবার একটাই প্রশ্ন কাল রাতে কি কি হয়েছে। এদিকে বেচারি তাসকিয়া তো লজ্জায় শেষ। এমনি সময় মুখে কথার খই ফুটলেও আজ যেন টু শব্দটিও করতে পারছে না ও। তাসকিয়াকে আরো বেশি লজ্জায় ফেলতে রোদেলা বলল,
–“এই তাসকিয়া বেবি বল না ফাইয়াজ ভাইয়া কাল রাতে কিভাবে আদর করলো তোকে?”
তাসকিয়া মাথা তুলে সবার দিকে তাকালো। সবাই ওর উত্তরের আশায় বসে আছে। তাসকিয়া বলল,
–“আমাকে একা ঘিরে ধরেছিস কেন বুঝলাম না। আমার আগে তো আনিতার বিয়ে হইছে। ওরে তো এভাবে কেউ চেপে ধরিস নি।”
তাসকিয়ার কথায় জেরিন বলল,
–“আরে ধুর! রাখ তো ওদের কথা। আহিয়ান ভাইয়া তো অনেক বেশি ভালো তাই তার পিচ্চি বউকে সেরকম ভাবে টাচ অব্দি করেনি। বাসর রাতে নিজের বিয়ে করা বউকে কিনা বলে আগে তোমার ১৮+ হোক তারপর আমরা ফিজিক্যালি মিশবো। ভাবা যায়? এত সাধু ছেলেও আবার আছে?”
আনিতার কাল রাতের কথা মনে হতেই লজ্জায় মাথা নুইয়ে নিলো। ইশ্ কাল রাতের কথা যদি ওরা কেউ ঘুণাক্ষরেও টের পায় তাহলে তাসকিয়াকে রেখে ওকে নিয়েই পড়বে সকলে। আনিতা জেরিনের মাথায় একটা চাটি মেরে বলল,
–“থাকবে না কেন? আমার জলজ্যান্ত জামাইটাকে কি তোর চোখে পড়ে না?”
–“ইশ্! আহিয়ান ভাইয়ার মতো এরকম একটা ছেলে যদি আমার জামাই হতো। কি ভালোই না হতো তাহলে।”
আনিতার রোদেলার দিকে কিছুটা সরে বসে বলল,
–“রোদু বেবি তন্ময় ভাইয়া খুব ভালো ছেলে তো। আর কাল রাতে তোকে প্রপোজও করলো। কিন্তু তুই কি করলি? কোনো উত্তরই দিলি না। দিস ইজ নট ফেয়ার রোদু।”
আনিতার কথাগুলো শুনে তাসকিয়া জেরিন আরোহী রোদেলাকে একপ্রকার চেপে ধরলো। কাল রাতের কথা ওরা কিছুই জানে না। আনিতা সবটা বলল ওদের। রোদেলা নেমে আসার পর যে তন্ময় কিরকম পাগলামি করেছে কি কি বলেছে সবটা বলেছে ও। সেসব শুনে ওরা সবাই অট্টহাসিতে ফেঁটে পড়েছে। সারাঘর জুড়ে শুধু ওদের হাসির শব্দ। মুখ গোমড়া করে রোদেলা বলল,
–“তো কি করতাম আমি? তোরাই বল। সজ্ঞানে প্রপোজ করেছিলো ও আমাকে? করেনি তো। ড্রাংক অবস্থায় প্রপোজ করেছে আমায়। ধর তখন আমি রাজি হলাম। কিন্তু সকালে যখন ওর নেশা কেটে যেত তখন যদি সেসব কিছু ভুলে যায়? যদি বলে নেশার ঘোরে কি না কি বলেছি মনে নেই। ভালোবাসি না আমি তোমাকে তখন তো আমার___”
–“ভালোবাসি আমি তোমাকে। কাল রাতে নেশার ঘোরে বলেছিলাম আর আজ সজ্ঞানে বলছি।”
ঘরে প্রবেশ করতে করতে কথাটা বলল তন্ময়। রোদেলা একটু শুকনো হাসার চেষ্টা করলো। ও ভাবেনি এভাবে হুট করে এসে ভালোবাসি কথাটা বলে ফেলবে। তন্ময়ের পিছু পিছু আহিয়ান ফাইয়াজ এলো রুমে। আনিতা রোদেলাকে হালকা ভাবে ধাক্কা দিয়ে বলল,
–“জানু এখন উত্তরটা দিয়ে দাও। কাল তো নেশার ঘোরে ছিলো বলে উত্তর দাওনি। কিন্তু এখন তো স্বাভাবিক অবস্থায় ভালোবাসি বলেছে এখন তো উত্তরটা দেওয়া উচিত তাই না? এই নেশা কিন্তু কখনো কাটবে না, আর বলবেও না ভালোবাসি না।”
রোদেলা মাথা নিচু করে নিলো। সকলেই মুখ টিপে হাসছে আর রোদেলা মৃদু ঘামছে। তন্ময় কিছুটা এগিয়ে গিয়ে বিছানায় দুহাতের ভর দিয়ে রোদেলার দিকে কিছুটা ঝুকে বলল,
–“কি হলো এবার তো ভালোবাসি বলো। আই নো রোদু তুমিও আমাকে ভালোবাসো। শুধু শুধু মনের মাঝে চেপে রেখে তো লাভ নেই। যত তাড়াতাড়ি ভালোবাসি বলবা তত তাড়াতাড়ি তোমাকে সারাজীবনের জন্য আমার কাছে নিয়ে আসার বন্দবস্ত করবো।”
রোদেলা কিছুটা পিছনে হেলে গিয়ে একটা শুকনো ঢোক গিলল। এই ছেলে তো দেখছি আস্ত ফাজিল একটা। এভাবে সবার সামনে কিভাবে ঝুকে আছে ওর দিকে। লজ্জা সরমের মাথা খেয়েছে একেবারে। মনে মনে এসব ভেবে বেশ কয়েকটা গালি দিলো তন্ময়কে রোদেলা। চোখমুখের এক্সপ্রেশন স্বাভাবিক করে সোজা হয়ে বসে বলল,
–“দূরে সরুন। দূরে সরুন বলছি। সবার সামনে এটা কি ধরনের অসভ্যতামি শুরু করেছেন?”
তন্ময় সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পরনে শার্ট-টা ঝেড়ে বলল,
–“ওকে ম্যাডাম ভুল হয়ে গেছে। নেক্সট টাইম থেকে সবার সামনে অসভ্যতামি করবো না। এরপর থেকে সবার আড়ালে অসভ্যতামি করবো কেমন?”
তন্ময়ের কথায় সকলে হো হো করে হেসে উঠলো। রোদেলা সকলের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকাতেই আনিতা ওরা চুপ হয়ে গেলো।
–
ফাইয়াজ বেরিয়ে গেছে অনেকটা সময়। আহিয়ান তন্ময় রাতুল আরহান ওরা সকলে মিলে আনিতা ওদের সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে ফাইয়াজের রুমে। আহিয়ান আনিতাকে কিছু একটা ইশারা করলো। আনিতা বুঝতে পারলো না কিছুই। বেশ কয়েকবার বোঝানোর চেষ্টা করেও আহিয়ান ব্যর্থ হয়। শেষে নিজের গলায় হাত দিয়ে আনিতার দিকে ইশারা করে। সাথে সাথেই আনিতা ওর গলায় হাত দেয়। আহিয়ান ইশারায় হ্যাঁ বোঝায়। আনিতা ফোনের ক্যামেরা অন করে সামনে ধরতেই দেখলো গলার নিচে ডানপাশের দিকটায় কালশিটে দাগ পড়ে আছে। সাথে সাথেই ওড়না দিয়ে গলাটা ঢেকে ফেলে। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো সবাই আড্ডায় মগ্ন। তাই ওদের ব্যাপারটা তেমন ভাবে লেউ লক্ষ্য করেনি। জেরিন আনিতার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
–“কাল রাতে তোর সাধু জামাই মানে আমাদের আহিয়ান ভাই বুঝি তোর গলায় লাভ বাইট এঁকে দিয়েছিলো।”
–“না মানে ত্ তুই__”
–“এখন আমার সামনে যদি তুই আর আহিয়ান ভাই চোখাচোখি করিস। চোখে চোখে ইশারায় এটা সেটা বোঝাস আর সেটা যদি আমার চোখে পড়ে যায় তাহলে আমার দোষ কোথায় বল তো?”
আনিতা কিছু না বলে রাগে গজগজ করছে। এতটা সময় তো ভালোই ছিলো। কেউ কিছুই লক্ষ্য করেনি। শুধু শুধুই ওর জন্য জেরিনের কাছে লজ্জায় পড়তে হলো। এই ছেলেটা যদি এখানে এরকম ইশারা টিশারা না করতো তাহলে নিশ্চয়ই জেরিনের চোখে কিছুই পড়তো না। আনিতা চোখ পাকিয়ে একবার তাকালো আহিয়ানের দিকে।
–
ফাইয়াজের বিয়ের ঝামেলা শেষ। বাড়ির লোকজন ছাড়া এখন আর একজন মেহমানও নেই ফাইয়াজ বা আনিতাদের বাসায়। ফাইয়াজের বিয়ের জন্য বেশ কদিনের ছুটি নিয়েছিলো আহিয়ান অফিস থেকে। আর তিনদিন আহিয়ান আছে আনিতাদের বাসায়।
আনিতা দুপুরের খাবার খেয়ে বিছানায় শুয়ে ফোনে গেমস খেলছিলো। তখনই রুমে আহিয়ান এলো। ওকে দেখে আনিতা উঠে বসলো। ফাইয়াজের সঙ্গে বের হয়েহিলো ও। সময় দেখলো আনিতা চারটা বাজে। সেই সকালে বেরিয়েছিলো আর এখন ফিরলো। আহিয়ান গায়ের শার্ট-টা খুলে আনিতার কাছে এসে আনিতার হাত ধরে টেনে দাঁড় করালো। তারপর মিনিট দুয়েক শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখলো। আনিতার মাথায় একটা চুমু দিয়ে বলল,
–“মন খারাপ আমার বউয়ের?”
আনিতা মুখ গোমড়া করে জবাব দিলো,
–“নাহ তো মন খারাপ হবে কেন? আমার মন খারাপ হোক এমন কিছু করেছেন কি আপনি?”
আহিয়ান আনিতাকে ভালো করে জড়িয়ে নিয়ে বলল,
–“আ’ম সরি বউ। আমি সত্যিই লাঞ্চের আগেই বাসায় ফিরতে চেয়েছিলাম কিন্তু কাজের চাপে পারিনি।”
–“আমি কি কিছু বলেছি আপনাকে?”
–“উঁহু বলোনি। কিন্তু আমি বুঝতে পারি তো।”
–“সেজন্যই তো আসেননি।”
–“সরি তো।”
আনিতা আহিয়ানের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে কাবার্ডের কাছে চলে গেলো। কাবার্ড থেকে একটা জিন্স শার্ট আর টাওয়েল বের করে আহিয়ানের হাতে দিয়ে বলল,
–“এবার গোসলে যান। পরে কথা হবে।”
কথাটা বলে আনিতা ঠেলে ঠেলে আহিয়ানকে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দিলো। আজকে আহিয়ান সকালে না খেয়েই বের হয়েছিলো। তা নিয়ে আনিতা কিছুটা রাগ করায় আহিয়ান বলে দুপুরে একসাথে খাবে। কিন্তু দুপুরেও আসেনি ও। ফোন করে জানিয়ে দেয় আসতে লেট হবে আনিতা যাতে খেয়ে নেয়। সেজন্যই আনিতার একটু আধটু মন খারাপ। তবে সেটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হবে না ও খুব ভালো করেই জানে। বলা ভালো আহিয়ান বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে দিবে না। সেজন্য ও মন খারাপ ভাবটা আর রাখলো না।
গোসল শেষে দু হাতে চুল ঝাড়তে ঝাড়তে ওয়াশরুম থেকে বের হলো আহিয়ান। পরনে এ্যাশ কালার জিন্স। গলায় টাওয়েল ঝুলানো। বিছানায় বসে ফোন ঘাটছিলো আনিতা। পায়ের শব্দ পেয়ে মাথা তুলে তাকাতেই আহিয়ানকে ওভাবে দেখে কয়েক সেকেন্ড স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে থেকে চোখ সরিয়ে নিলো। তা দেখে আহিয়ান মৃদু হাসলো। বারবার আড়চোখে আহিয়ানকে দেখছে আনিতা। আহিয়ান আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। দু হাতে চাপদাড়ি গুলো সেট করে চুলে জেল লাগাতে লাগাতে বলল,
–“তোমারই তো বর। এভাবে লুকিয়ে চুড়িয়ে দেখার কি আছে? তুমি চাইলে তোমার সামনে বসিয়ে রেখেও দেখতে পারো।”
লজ্জায় মাথা নুইয়ে নিলো আনিতা৷ ইশ্! ধরা পড়ে গেলো। এই ছেলের চোখে কিচ্ছু এড়ায় না। আনিতা আবারো ফোন দেখায় মনোযোগ দিলো। আহিয়ান শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে আনিতার পাশে বসে বলল,
–“সেজেছো?”
–“দেখে মনে হচ্ছে?”
–“আমার চোখে তো তোমাকে সবসময়ই সুন্দর লাগে। সাজলে যেমন না সাজলেও তেমন।”
আনিতা কিছু না বলে বের হয়ে গেলো রুম থেকে। আহিয়ান আয়নার সামনে গিয়ে পারফিউম লাগাচ্ছিলো। তখনই খাবার হাতে আনিতা অনিমা দুজনে রুমে এলো। আহিয়ান পারফিউম জায়গা মতো রেখে বিছানায় গিয়ে অনিমার পাশে বসে একহাতে অনিমাকে জড়িয়ে নিয়ে বলল,
–“কি ব্যাপার ছোট গিন্নি? অসময়ে দুই বোন একসাথে যে? ব্যাপার কি?”
অনিমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আনিতা খানিকটা রাগী গলায় বলল,
–“আগে খেয়ে নিন। পরে বলবো দু বোন একসাথে কেন?”
আনিতার কথায় আহিয়ান বিছানায় উঠে আসাম করে বসলো। তারপর বলল,
–“আচ্ছা তাহলে খাইয়ে দাও।”
–“আপনার হাত আছে না? নিজের হাতেই খান।”
–“আনি খুব ক্ষুধা পেয়েছে কিন্তু। কিচ্ছু খাইনি। আর তুমি না খাইয়ে দিলে খাবো না কিন্তু।”
আনিতা আর কথা না বাড়িয়ে হাত ধুয়ে এসে বিছানায় বসে খাইয়ে দিতে লাগলো আহিয়ানকে। খাওয়া শেষে আনিতা আর অনিমা আবার সবকিছু কিচেনে রেখে আহিয়ানের পাশে এসে বসলো। আহিয়ান দুজনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল,
–“কি চাই দুই বোনের? তাড়াতাড়ি বলে ফেলো আবদারটা কি?”
অনিমা আহিয়ানের চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বলল,
–“ভাইয়া চলেন না ঘুরতে যাই। অনেকদিন হলো কোথাও যাই না।”
–“ওহ এই ব্যাপার? তা ঘুরতে যাওয়ার ভূতটা কার মাথায় চেপেছে শুনি?”
–“কার আবার? অবশ্যই আমার।”
–“কোথায় যাবে?”
–“আপনি যেখানে নিয়ে যাবেন।”
–“আচ্ছা চলো তাহলে সামনের ওই মাঠ থেকে ঘুরে আসি।”
আনিতা এতক্ষণ চুপ করে ছিলো। কিন্তু এখন আর চুপ করে থাকতে পারলো না। কিছুটা ঝাঁজালো গলায় বলল,
–“মাঠে ঘুরার হলে তো আমরা দুজনে গিয়েই ঘুরতে পারি। তাহলে কি আর আপনাকে বলতাম?”
আহিয়ান বুকে হাত দিয়ে ভয় পাওয়ার ভাণ করে বলল,
–“ভয় পাইছি তো বউ। এভাবে কেউ ধমকে কথা বলে?”
আনিতা চোখ রাঙিয়ে তাকালো আহিয়ানের দিকে। আহিয়ান খানিকটা শব্দ করে হেসে ফেলল। খানিক বাদে হাসি থামিয়ে বলল,
–“দশ মিনিট সময় দিলাম। এর মাঝে রেডি হয়ে না আসতে পারলে কোথাও নিয়ে যাচ্ছি না আমি। ইউর টাইম স্টার্ট নাউ।”
অনিমা খুশি হয়ে দৌড়ে চলে গেলো রেডি হতে। আনিতাও যাওয়ার জন্য উঠতেই আহিয়ান ওর হাত ধরে টেনে আহিয়ানের বুকের উপর ফেলে দেয়। আনিতার মুখের উপর পড়া চুলগুলো সরিয়ে আনিতার গালে শব্দ করে একটা চুমু দেয় আহিয়ান। কেঁপে উঠে আনিতা৷ সরে আসতে চাইলে আহিয়ান আরো ভালোভাবে আকঁড়ে ধরে। আনিতা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে বলল,
–“আপনার দেওয়া দশ মিনিট কিন্তু শেষ হয়ে আসছে। পরে আবার আমাকে বলবেন আমার রেডি হতে সময় লাগে। ছাড়ুন আমাকে।”
–“পারলে ছাড়া পেয়ে দেখাও।”
আনিতা মোচড়ামুচড়ি করছে। কিন্তু ছাড়া পাচ্ছে না কিছুতেই। হঠাৎ করেই আনিতা আহিয়ানের হাতে খুব জোরে কামড় বসালো। আহিয়ান মৃদু আর্তনাদ করে ছেড়ে দিলো আনিতাকে। সেই ফাঁকে আনিতা কাবার্ড থেকে জামা নিয়ে দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। আহিয়ান বিছানায় বসেই কিছুটা চেঁচিয়ে বলল,
–“রাতে তো আমার কাছেই আসতে হবে। তখন কোথায় পালাবে তুমি? একটা কামড়ের শাস্তি হিসেবে আমি হাজারটা কামড় দিবে। তবে সেটা অন্যভাবে। আমার স্টাইলে।”
চলবে ইনশাআল্লাহ~
চলবে ইনশাআল্লাহ~
[