#শুভ্র_রাঙা_প্রেম 🤍
#পর্ব_৮ ও ৯
#Usha (Writer)
১৫.
সকাল হতেই আদিয়াত অফিসে চলে গেছে।আদৃতার বাড়িতে একা একা ভালো লাগছে না।এতো বড় বাড়ি অথচ কোথাও যেন একটু মানসিক শান্তি খুঁজে পাচ্ছে না।রান্নাটা করলেও সময় কা’ট’তো।কিন্তু আদিয়াতের নিষেধ আছে ও যেন রান্নাঘরে না যায়।এই বাড়ির মানুষ বলতে আদিয়াত,অর্ণব দু’জনই অফিসে।আদিত্য আহমেদ আর মিসেস.তৌসি দু’জনই নিজেদের রুমে।তিষা নিজের মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত। সেই জন্য আজ আদৃতা একদম একা।
হঠাৎই তিষা আদৃতার রুমে এলো।আদৃতা বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো
~তুই এই রুমে?
তিষা বিরক্তি নিয়ে বললো
~এটা তোর রুম না ওকে?আদিয়াত ভাইয়ার রুম।আর তার রুমে আমি আমার ইচ্ছা-মতো আসবো।তোর কি তাতে?
আদৃতা কিছু বললো না আর।
এবার তিষা নিজেই খাটে এসে বসে আদৃতাকে বললো
~শোন তোর সাথে একটা কথা ছিলো।
আদৃতা আস্তে করে বললো
~হু বল কি বলবি?
তিষা এবার আদৃতার একটু সামনে গিয়ে ওর হাত ধরে বললো
~আগে বল কথাটা রাখবি?
আদৃতা বললো
~আগে শুনি রাখার মতো হলে অবশ্যই রাখবো।
তিষা বললো
~আমার কিছু টাকা লাগবে।তুই আমায় আদিয়াত ভাইয়ার থেকে নিয়ে কিছু টাকা দে।
আদৃতা আমতা আমতা করে বললো
~তুই অর্ণবের কাছে চেয়ে নে।আমি ওনাকে কি করে বলবো?তিষা হালকা রেগে গিয়ে বললো
~কি করে বলবি মানে?তুই বলবি তোর টাকা লাগবে। আমার টাকা চাই মানে চাই আর কোনো কথা শুনতে চাই না।কালকের মধ্যে আমায় ৫০ হাজার টাকা দিবি।কোথা থেকে দিবি সেটা আমি জানি না।কালকে যেন আমি টাকাটা পাই নাহলে কি করবো আমি নিজেও জানি না।
৫০হাজার টাকার কথা শুনে আদৃতা চমকে গিয়ে বললো
~মানে?এতো টাকা দিয়ে তুই কি করবি?আর এতো টাকার কথা আমি ওনাকে বলবো কি করে?উনি যদি জিজ্ঞেস করে তখন কি বলবো আমি?
তিষা ঝটপট বলে ফেললো
~তুই বলবি তোর শপিং করা লাগবে বা অন্য কোনো একটা বাহানা দিয়ে দিবি।আদিয়াত ভাইয়ার প্রচুর টাকা আছে তাই এই কয়েকটা টাকা চাইলে তোকে কিছুই বলবে না।আর হ্যা আমার কথা বলবি না আবার।বলেই রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।
আর আদৃতা বসে রইলো চুপচাপ।ও জানে তিষা বরাবরই প্রচুর জেদি।যেটা ও একবার চাইবে সেটা ও না পেলেও জোর করে আদায় করে নিবে।হুট করে ওর মাথায় এলো তিষা এতো টাকা দিয়ে কি করবে?ওর তো এতো টাকা লাগার মতো কোনো কারণ নেই?আর অর্ণবের কাছে চাইতেই বা সমস্যা কোথায়?কিন্তু আপাতত ওসব ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে ভাবতে লাগলো আদিয়াতের কাছে এতোগুলো টাকা কি করে চাইবে?এখনো দু’জনের মধ্যে এমন কোনো সম্পর্কের সৃষ্টি হয়নি যে ও নির্দ্বিধায় এতোগুলো টাকা আদিয়াতের কাছে চাইতে পারবে।ও জানে আদিয়াতের কাছে নিজের জন্য টাকা চাইলে সেটা আদিয়াত দিয়ে দিবে।কিন্তু বিশেষ কোনো কারণ না দেখিয়ে টাকা চাইলে তো আদিয়াতও সন্দেহ করবে?রাগে দুঃখে কান্না পেয়ে গেলো আদৃতার।
অন্যদিকে..
মিসেস তৌসি একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকতেই দেখলো একজন মহিলা বসে আছে।মিসেস তৌসি ওনার সামনে গিয়ে বসলো।
~তো বলুন হঠাৎ আমায় কি দরকার?হুট করেই রেস্টুরেন্টে ডাকলেন যে?(অপরপাশের ব্যাক্তি)
~দরকারেই তো ডেকেছি।ঐ আদৃতকা নামক মেয়েটাকে আমি সহ্য করতে পারছি না।যেভাবেই হোক এমন কিছু করতে হবে যেন আদিয়াত নিজেই ঐ মেয়েটাকে ভুল বুঝে ওকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বার করে দেয়।(মিসেস.তৌসি)
~ওহ্ তাহলে এই ব্যাপার?আচ্ছা বেশ শুনুন………
অপরপাশের ব্যাক্তির কথা শুনে মিসেস.তৌসির মুখে ফুটে উঠলো এক ভয়ংকর হাসি।
১৬.
আদিয়াত রিশানের সাথে এসেছে ওদের গোডাউনে।চেয়ার টেনে বসে আদিয়াত রিশানকে বললো
~বল এবার কি অবস্থা?আর কারাই বা আদৃর ক্ষতি করার চেষ্টা করছে?
~তোর মা,তিষা, মিসেস.তৃণা আর……।(রিশান)
আদিয়াত বাকি তিনজনের নাম শুনে তেমন অবাক না হলেও তিষার নামটা শুনে অবাক না হয়ে পারলো না।আদৃতা তিষাকে বরাবরই বেশ ভালোবাসে।আর তিষা আদৃতাকে সহ্য করতে না পারুক তাই বলে ক্ষতি করার চেষ্টা করবে?আদিয়াতের চোখ লাল হয়ে গেলো রাগে।
আদিয়াত আপাতত রাগটাকে এক সাইডে ফেলে রিশানের সাথে আরো কিছুক্ষণ কথা বলে বেড়িয়ে গেলো।
__♥__
আদিয়াত এসেছে অনেকক্ষণ কিন্তু আদৃতার দেখা নেই।আদিয়াত রুমের মধ্যে বিরক্ত হয়ে বসে আছে।আদৃতার উপর বেশ রাগ হচ্ছে।মেয়েটা কি জানে না আদিয়াত বাড়িতে এসেছে?তবে রুমে আসছে না কেন?এরমধ্যেই আদৃতা রুমে এলো।আদিয়াত শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো আদৃতার মুখের দিকে।মেয়েটাকে দেখে মনে হচ্ছে কোনো কিছু নিয়ে বেশ অস্বস্তিতে আছে।কিন্তু কি নিয়ে?ভ্রু কুঁচকালো আদিয়াত।কিন্তু কিছু বললো না।আদিয়াত কে চুপ থাকতে দেখে আদৃতা বললো
~আপনি খাবেন না?নিচে আপনাকে খেতে ডাকছে।
আদিয়াত এবারও কিছু বললো না।আলমারি থেকে টিশার্ট আর ট্রাউজার নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।
….
খেয়ে অর্ণবের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে আদিয়াত দেখলো আদৃতা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।আদিয়াত ট্রাউজারের পকেটে দু’হাত গুঁজে আদৃতার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে শান্ত কন্ঠে বললো
~তোমার কি হয়েছে আদৃতা?
আদৃতা থতমত খেয়ে বললো
~আ..আমার?আমার কি হবে?
~কিছু যদি না হয় তবে এতো অস্থির দেখাচ্ছে কেন তোমায়?(আদিয়াত)
~ইয়ে মানে..এমনি।(আদৃতা)
~তোমার কিছু বলার থাকলে বা কোনো সমস্যা থাকলে তুমি নির্দ্বিধায় আমায় বলতে পারো।(আদিয়াত)
~আ..আমার কিছু টাকা লাগবে..।(আদৃতা)
আদিয়াত বেশ অবাক হলো।তবুও সেটাকে বেশি গুরুত্ব না দিয়ে শান্ত কন্ঠেই জিজ্ঞেস করলো
~কত টাকা লাগবে?
আদৃতা কাঁপা গলায় জবাব দিলো
~৫০ হাজার।
আদিয়াতের কপালে ভাজ পড়লো।কারণ আদৃতা কখনোই নিজের জন্য এতো টাকা খরচ করার মেয়ে নয় তবে এতো টাকা দিয়ে কি করবে?আদিয়াত ভ্রু কুঁচকে বললো
~টাকা দিয়ে কি করবে?
আদৃতা মাথা নিচু করেই তিষার শিখিয়ে দেয়া কথাই বললো
~আমার শপিং করা লাগবে..।
এবার আদিয়াত পুরোপুরি সিউর হয়ে গেলো আদৃতা মিথ্যে বলছে কারণ শপিং করার জন্য আদিয়াতের কাছে টাকা চাওয়ার মতো মেয়ে ও নয়।
আদিয়াত বেশ শান্ত কন্ঠে বললো
~যেটা পারো না সেটা করতে যাও কেন আদৃপাখি?
আদৃতা অবাক হয়ে আদিয়াতের দিকে তাকাতেই আদিয়াত বললো
~গুছিয়ে যখন মিথ্যে বলতে পারো না তবে বলতে যাও কেন?
এবার সত্যি করে বলো টাকা দিয়ে কি করবে?নাকি কেউ তোমার কাছে টাকা চেয়েছে?
আদৃতা এবার পুরোপুরি চমকে গিয়ে আদিয়াতের দিকে তাকালো।আদিয়াতের যা বোঝার বোঝা হয়ে গেছে।
আদিয়াত এবার তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো
~তোমার বোন তোমার কাছে টাকা চেয়েছে?
আদৃতা মাথা নিচু করে ফেললো।
আদিয়াত আদৃদাকে বললো
~তুমি যদি তোমার জন্য টাকা চাইতে তবে ৫০ হাজার কেন?এর বেশি টাকাও আমি তোমাকে দিয়ে দিতাম।কিন্তু ঐ মেয়ের জন্য একটা টাকাও আমি দিতে পারবো না।এতোটা বোকামি করো না আদৃপাখি।তিষা তোমার ভালো চায় না।আর তোমার একবারও মনে হয়নি যে তিষা এতো টাকা দিয়ে কি করবে?কালকেও তিষা অর্ণবের ক্রেডিট কার্ড থেকে ২ লাখ টাকা খরচ করেছে।কি করেছে সেটা কিন্তু কেউ জানে না।তাই তিষাকে এখন টাকা দেয়াটা কিন্তু কারোই উচিৎ নয়।হতেও পারো ও হয়তো খারাপ কোনো কাজের সাথে জড়িয়ে গেছে?
আদৃতা শুধু নিচের দিকে তাকিয়ে মিনমিন করে বললো
~ও টাকা চাইলে আমি কি বলবো?
আদিয়াত বললো
~তুমি বলে দিও তোমার স্বামীর অনেক টাকা থাকলেও সে তুমি ব্যতীত অন্য কোনো মেয়েকে দিয়ে টাকা নষ্ট করতে পারবে না।বলেই বারান্দা থেকে চলে গেলো।আদিয়াতের বেশ রাগও হচ্ছিল আদৃতার উপর।মেয়েটা কেন বোঝে না তিষা যে মেয়েটার ক্ষতি করার চেষ্টা করে?
চলবে…
#শুভ্র_রাঙা_প্রেম 🤍
#পর্ব_৯
#Usha (Writer)
১৭.
পরদিন সকাল হতেই তিষা রেডি হয়ে আদৃতার রুমে গেলো।
আদৃতা চুল আঁচড়াচ্ছিলো,তিষাকে দেখে উঠে দাঁড়ালো।
তিষা তড়িঘড়ি করে বললো
~দে তাড়াতাড়ি টাকাটা।
আদৃতা ভাবুক কন্ঠে জবাব দিলো
~কিসের টাকা?তুই আমার কাছে রাখতে দিয়েছিলি কোনো টাকা?
তিষা অবাক হয়ে বললো
~দেখ একদম ড্রামা করবি না।আমি তো কালকেই তোকে বলেছিলাম টাকার কথা।
আদৃতা শক্ত কন্ঠে জবাব দিলো
~তোর মতো আমারও কিন্তু বিয়ে হয়ে গেছে।এই কথাটা ভুলে যাস না।এখন তুই চাইলেই আমি তোকে টাকা দিতে পারবো না।আমি চাকরি করি না।আগে করতাম তখন চাইলেই দিয়ে দিতাম কিন্তু এখন আমার চাকরিটাই নেই।আর রইলো আদিয়াতের কাছে টাকা চাওয়ার কথাটা?তোর প্রয়োজন টাকাটা অথচ তুই তোর স্বামীর কাছে চাইতে পারছিস না?তবে আমার স্বামীর তোর জন্য টাকা দিবে সেটা আশা করে বসে আছিস কেন?সম্পর্কে অর্ণবের ভাবি হই আমি কই সেদিন তো অর্ণব যখন আমার সাথে একটু কথা বলেছিলো তখন ওর সাথে বেশ ঝগড়া করছিলি?যাইহোক এখন পুরোনো কাহিনী’তে যেতে চাচ্ছি না।
তিষা যেন অবাকের চরম সীমানায় পৌঁছে গেছে।আদৃতা এতোগুলো কথা শোনালো ওকে?এটা আসলেই আদৃতা?যেই মেয়েটা কিনা মাথা নিচু করে রাখে আর সবসময় শান্ত থাকে কখনো একটু উঁচু গলায় কথা পর্যন্ত বলে না?কটমট দৃষ্টিতে আদৃতার দিকে তাকিয়ে তিষা বললো
~বাহ মুখে কথা ফুটেছে দেখছি।বড়লোক বাড়িতে বিয়ে হয়ে গেছে বলে এতো কথা ফুটলো মুখে?ক’দিনই বা টিকতে পারবি এ বাড়িতে?আর আমি অর্ণবের সাথে ঝগড়া করেছিলাম সেটা তুই জানলি কি করে?আমার ঘরের সামনে আড়ি পেতে শুনছিলি নাকি?
আদৃতা কিছুটা জোরেই তিষাকে ধমকে বলে উঠলো
~চুপ একদম চুপ।সবাইকে তোর মতো ভাবিস নাকি?তুই ভুলে যাস না আমাদের পাশের রুমটাই কিন্তু তোদের।তাই ঐ রুম থেকে চিৎকার করে কিছু বললে সেটা একদমই স্পষ্টভাবে শোনা যায়।
তিষা চুপ হয়ে গেলো।ব্যাগের মধ্যে ওর ফোন বাজছে।হয়তো কেউ একজন অপেক্ষা করছে ঐপাশ থেকে কখন তিষা টাকা নিয়ে তার কাছে যাবে।
তিষা রেগে আদৃতাকে বললো
~তোকে আমি ছাড়বো না।
বলেই বেড়িয়ে গেলো।
আদৃতা হাসলো।এক তৃপ্তির হাসি।ওর যে মাঝে মাঝে রাগ হয় না তা নয়।কিন্তু ও রাগটাকে কন্ট্রোল করতে জানে।আর তিষা ছোট মানুষ সেটা ভেবেই কখনো কিছু বলতো না। কিন্তু আজ আর পারলো না।সবকিছুরই একটা সীমা থাকে।তিষা হয়তো তার সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে…।
আদৃতা ভাবলো সেদিনের ঘটনা..
অর্ণব আদৃতাকে দেখে বলেছিলো
~ভাবি ভাইকে দেখেছেন?
~না তাকে তো দেখলাম না।(আদৃতা)
~ওহ তাহলে মনে হয় ঐদিকে।আচ্ছা আমি যাই তবে..।(অর্ণব)
ব্যস দূর থেকে এটা দেখেছিলো তিষা।কথাগুলো শোনেনি কিন্তু হেসে কথা বলতে দেখেছে।তারপর সেদিন রাতে অর্ণবের সাথে প্রচুর ঝগড়া করেছিলো।
অর্ণব সেদিনের পর আদৃতাকে দেখলেও মাথা নিচু করে অন্যদিকে চলে যায়।হয়তো তিষার কথায়ই..।
আদৃতার মনটা আজ অনেক ভালো কেন তা ও নিজেও জানে না।সকাল থেকেই মেজাজটা বেশ ফুরফুরে।ও আনমনেই চুলটা খোঁপা করে বারান্দায় গিয়ে দাড়ালো।আদিয়াতের বারান্দায় একটা গোলাপ গাছ আছে সেখানে কয়েকটা লাল গোলাপ ফুটে আছে।আদৃতা একটা ফুল ছিড়তে গিয়েও ছিড়লো না।আদিয়াতের গাছ ওর অনুমতি ছাড়া ওর গাছের ফুল ছিড়াটা ঠিক হবে না।
১৮.
আদৃতা দোলনায় বসে পড়লো হাতে সমরেশ মজুমদারের ‘সাতকাহন’ উপন্যাসটি।
ও এতোটাই মনোযোগে পড়ছে যে কখন ওর পাশে একজন এসে দাঁড়িয়েছে সেটা টেরই পায়নি।যখন মানুষটা পেছন থেকে ওর খোঁপায় কিছু একটা গুঁজে দিলো,তখন ওর খেয়াল হলো।চমকে গিয়ে দোলনা থেকে উঠে দাড়ালো।সামনে তাকাতেই চোখ পড়লো আদিয়াতের ওপর।ক্লান্তিমাখা মুখখানিতেও মানুষকে এতোটা স্নিগ্ধ লাগে?সাদা শার্টটা ঘামে ভিজে গায়ের সাথে লেগে আছে আদৃতা অন্যদিকে চোখ ফেরালো।আদিয়াতের দিকে তাকিয়ে থাকাটা এই মুহূর্তে ওর কাছে বেশি ভয়ানক মনে হচ্ছে।আদৃতা হয়তো বুঝতে পারছে না ও নিজেও এই মানুষটার মায়ায় জড়িয়ে যাচ্ছে একটু একটু করে।
তখনই খেয়াল হলো খোঁপায় কিছু একটা গুঁজে দিয়েছিলো।কিন্তু কি দেখার জন্য খোঁপায় হাত দিতেই বুঝলো গোলাপ।ও আনমনেই হেসে ফেলো।আদিয়াত আদৃতার হাসিমুখ দেখে মুচকি হেসে বললো
~কি ব্যাপার?আজ ম্যাডামকে বেশ খুশি খুশি মনে হচ্ছে?
আদৃতা মুচকি হেসে বললো
~এমনি..।
আদিয়াত বললো
~ আচ্ছা আমি ফ্রেশ হয়েনি তুমি রেডি হও।
আদৃতা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো
~রেডি হবো কেন?
আদিয়াত বললো
~ঘুরতে যাবো তাই।
আদৃতা কিছু বললো না।ওর নিজেরও বাড়িতে ভালো লাগছিলো না।তাই হেসে রেডি হতে গেলো। আলমারি খুলতে যাবে তখনই চোখ পড়লো খাটে রাখা প্যাকেটটার দিকে।এগিয়ে গিয়ে প্যাকেটটা খুলতেই বেড়িয়ে এলো সাদা রঙের একটা শাড়ি।সাদা রঙ দেখে বেশ বিরক্ত হলেও শাড়িটা খুলতেই মুখ হা হয়ে গেলো।কারণ শাড়িটা অনেক সুন্দর। সাদার উপরে অনেক সুন্দর করে কাজ করা, স্টোন বসানো শাড়িটা।শাড়ির সাথে আরেকটা প্যাকেট ছিলো সেটাতে সাদা কাঁচের চুড়ি আর কানের দুল।
আদৃতা শাড়িটা সুন্দর করে পড়ে চুড়ি আর কানের দুলগুলো পড়ে রেডি হয়ে গেলো।আদিয়াত এরমধ্যেই ফ্রেশ হয়ে বের হলো।আদৃতাকে দেখে যেন আদিয়াতের সময় ওখানেই থমকে গেছে।আদৃতাকে শাড়িতে বরাবরই একটু বেশিই সুন্দর লাগে আদিয়াতের কাছে।আজও তার ব্যাতিক্রম হলো না।আদিয়াত মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আদৃতার দিকে।
আদৃতা পেছনে ফিরতেই দেখলো আদিয়াত ওর দিকে তাকিয়ে আছে।ও কিছুটা লজ্জা পেলো কিন্তু প্রকাশ করলো না।ও আদিয়াতের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো
~ আচ্ছা আপনি সবসময় সাদা রঙে কি এমন পান হ্যা?বিয়ের লেহেঙ্গাটাও সাদা ছিলো এখন আবার শাড়ি টাও সাদা রঙের?
আদিয়াতের ঘোর ভাঙলো আদৃতার কথায়।আদিয়াত মুচকি হেসে বললো
~সাদা না বলে শুভ্র রঙ বলো।সাদার চেয়ে শুভ্রটাই বেশি সুন্দর লাগে..।যাইহোক শুভ্র মানে তো সাদা?জানো সাদা রঙ হচ্ছে পবিত্র একটা রঙ।আর তুমি আমার কাছে একদম পবিত্র একটা ফুল।তোমায় প্রথম আমি যেদিন দেখি সেদিনও তুমি সাদা রঙের শাড়ি পড়া ছিলে..।
প্রথম কথাগুলো শুনে বেশ মুগ্ধ হলেও শেষের কথাটা শুনে আদৃতার কপাল কুঁচকে এলো।আদিয়াতকি তবে ওকে আরো আগে থেকেই চিনে?কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে তার আগেই আদিয়াত ওকে থামিয়ে বলে উঠলো
~এখন আর কিছু জিজ্ঞেস করো না।পরে একসময় বলবো নে।
আদৃতা আর কিচ্ছু বলো না।কিছুক্ষণের মধ্যে আদিয়াত রেডি হয়ে এলো।তারপর দু’জনেই বেড়িয়ে পড়লো।
মিসেস.তৌসি তার রুমে ছিলো তাই আর তাকে বলে গেলো না ওরা।
গাড়িতে উঠে বসতেই আদিয়াত গাড়ি চালানো শুরু করলো।আদৃতা জানেনা ওরা কোথায় যাচ্ছে।অনেকটা দূর যেতেই হুট করে গাড়ির সামনে পিচ্চি একটা ছেলে এসে দাঁড়ালো।ছেলেটা ফুল,গাজরা এসব বিক্রি করে।বয়স বেশি না কিন্তু পেটের দায়ে করতে হয় এসব কাজ ওদের।আদিয়াত ছেলেটার থেকে একটা গাজরা কিনে নিলো।তারপর আদৃতার খোঁপায় গাজরাটা পড়িয়ে দিলো।আদৃতা হেসে ফেললো বরাবরই গাজরা খুবই পছন্দের একটা জিনিস ওর।
গাড়ি এসে থামলো একটা পার্কে।পার্কের ভেতরে ঢুকতে যাবে এমন সময় আদৃতার চোখ পড়লো একজনের দিকে।আদৃতার সারা শরীর কাঁপুনি দিয়ে উঠলো।৩ বছর পর আবার সেই জঘন্য মানুষটার সাথে ওর দেখা হবে তা কখনোই ভাবেনি।
চলবে…