শুভ্র রাঙা প্রেম পর্ব -০৭

#শুভ্র_রাঙা_প্রেম 🤍
#পর্ব_৭
#Usha (Writer)

১৩.
সকালে সারা বাড়ি খুঁজেও যখন আদৃতা আদিয়াতকে পেলো না তখন বেশ অবাক হলো।আদিয়াত গেলো কই?আব সিমা খালা উনি কই?মানে ওনাকে দেখছি না যে..?
~কে?আদিয়াত স্যার?সে তো সকাল হতেই বেরিয়ে গেলো।শুধু বললো তুমি উঠলে যেন তোমায় বলে দেই যে ওনার কাজ পড়ে যাওয়ায় উনি চলে গেছে।(সিমা খালা)
~ওহ আচ্ছা! (আদৃতা)
ওকে না ডেকেই চলে গেলো আদিয়াত ভাবতেই ওকে ঘিরে ধরলো একরাশ অভিমান।একটু ওকে ডেকে বলে গেলে কি হতো?
হঠাৎই আদৃতা বললো
~ধুর এসব কি ভাবছি।ওনার দরকারী কাজ পড়ে যাওয়ায় উনি চলে গেছে আর আমি ঘুমে ছিলাম তাই আর ডাকেনি।

আদৃতার আজকে কোনোভাবেই সময় কা’ট’ছে না।হঠাৎ মনে পড়লো ডায়েরি লিখার কথা।ও দৌড়ে গিয়ে ডায়েরি আর কলম নিয়ে লিখতে বসলো।

আনমনেই লিখলো অনেকটা..।এরপর যখন পড়তে গেলো নিজেই অবাক।ও সবসময় ডায়েরিতে ওর মনের সকল কথাই লিখে ফেলে।আর যখন ডায়েরি লিখে তখন আর কোনোদিকে খেয়াল থাকে না।
~হুট করেই কি থেকে কি হয়ে গেলো বুঝলাম না।মি.আদিয়াত আমায় ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ে করলো।তারপর আবার এতো কেয়ার।আমার সামান্য অসুস্থ হওয়াতে তার এতো উত্তেজিত হওয়া,চিন্তা করা।তার ঐ দু’চোখে যে আমি নিজের জন্য অসীম ভালোবাসা দেখেছি।আচ্ছা সে কি আমায় ভালোবাসে?হয়তো হ্যা আবার হয়তো না।না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।সে আমায় দেখেনি এর আগে আমিও তাকে দেখিনি।কেউ কাউকে ঠিকঠাক মতো চিনি না।অথচ ভাগ্য আমাদের দু’জনকে একটা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ করে দিলো।বিয়ে হলে নাকি এমনিতেই দু’জন মানুষ একে অপরের মায়ায় জড়িয়ে যায়?তবে কি আমিও তার মায়ায় জড়িয়ে গিয়েছি?কিন্তু ক’দিন বা হলো বিয়ের?মাত্র ৪দিন?আচ্ছা একজন মানুষকে ভালোবাসতে,তারার মায়ায় জড়াতে কি অনন্ত কাল একসঙ্গে থাকা লাগে?জানা নেই এর উত্তর আমার।আমি জানি না আমি তাকে ভালোবাসি কিনা তবে হ্যা আমি ভীষণভাবে মানুষটার মায়ায় জড়িয়ে গিয়েছি।

আর পড়লো নাহ্ ডায়েরিটা বন্ধ করে ব্যাগে জামা-কাপড়ের সাথে গুছিয়ে রেখে দিলো।আদিয়াত ফিরলেই ওরা ঐ বাড়িতে ফিরবে।আজকে সকালে যাওয়ার কথা ছিলো কিন্তু আদিয়াত তো বেড়িয়ে গেলো তাই আদিয়াত ফিরলেই একবারে বাড়ি ফিরবে।

__♥__

~তুমি নাকি শপিং এ গিয়েছিলে?কই তোমার হাতেও তো কোনো ব্যাগ দেখলাম না।তাহলে এতো টাকা দিয়ে কি করলে তুমি?
তিষাকে গম্ভীর ভাবে জিজ্ঞেস করলো অর্ণব।
তিষা অর্ণবের এই রূপে কিছুটা চমকে গেলো।পরে নিজেকে সামলিয়ে আমতা আমতা করে বললো
~ইয়ে মানে আসলে শপিংমলে হঠাৎ ফ্রেন্ডদের সাথে দেখা হয়।আর এতোদিন পরে দেখা হওয়ায় সবার সাথে ঘুরতে গিয়েছিলাম তাই…।
~চুপ,একদম চুপ,একটা মিথ্যে কথাও বলবে না।আর তোমার ঘাড়ে এটা কিসের দাগ?ছিহ্ তিষা তুমি এতোটা বাজে?বিয়ের কয়েকদিন না যেতেই এসব করে বেড়াচ্ছো তুমি?নাহ্ আমি কোনোভাবেই এসব সহ্য করবো না।(চিৎকার করে বললো অর্ণব)
~না প্লিজ এমন করো না অর্ণব।আমার ভুল হয়ে গেছে। এবারের মতো ক্ষমা করে দাও অর্ণব।প্লিজ..।(তিষা অর্ণবকে জড়িয়ে ধরে)
তিষাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে ঠাস করে থা’প্প’ড় মা’র’লো অর্ণব আর আগের থেকেও জোরে চিৎকার করে বললো
~আমার থেকে দূরে থাকবে তুমি।একদম আমার কাছে আসবে না তুমি।যাও বেড়োও আমার রুম থেকে।

তিষা চুপচাপ রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।ওর চোখগুলো ভয়ংকর রকমের লাল হয়ে আছে।

আর অর্ণব সে তো রাগে ফুঁসছে। এখন আর তিষার উপর রাগ লাগছে না বরং নিজের উপরেই রাগ লাগছে।কেন তিষার ভালোমন্দ দিক বিচার না করেই ওকে বিয়ে করলো?

১৪.
সন্ধ্যা ৭টা।আদিয়াত বাড়িতে এসেই আদৃতাকে রেডি হতে বললো।আদৃতাও রেডি হয়ে নিলো তারপর সিমা খালার সাথে দু’জনে একটু কথা বলে বেড়িয়ে গেলো ঐ বাড়ির উদ্দেশ্যে।

…….
~আমায় আর মা’কে অপমান করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলি না?সেই অপমানের জবাব তো আমি দেবোই।ভেবেছিলাম তো তিষার বিয়ে হয়ে গেলে যখন তুই একা থাকবি তখনই জবাবটা দিবো।কিন্তু ঐ আদিয়াত আগে থেকেই তোর বিপদের কথা বুঝে তোকে বিয়ে করে ফেলেছে।তবে যাই হোক না কেন আমায় করা অপমানের জবাব আমি দেবোই।আদিয়াত যদি বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় তাহলে ওকেই পথ থেকে সড়িয়ে ফেলবো।
আদৃতার ছবির দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে কথাগুলো বললো একটি ছেলে।

__♥__

বাড়িতে পৌঁছাতেই মিসেস.তৌসি আদৃতার কাছে গিয়ে বললো
~কি ব্যাপার আদৃতা?নিজের বাড়িতে গিয়েই অসুস্থ হয়ে থেকে এলে দু’দিন?আচ্ছা সত্যিই কি অসুস্থ ছিলে?
আদৃতা কিছু বলার আগেই পাশ থেকে আদিয়াত বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলো
~আমরা দু’জনই এখন খুব ক্লান্ত। তাই তুমি ওর সাথে পরে কথা বলো মা।আদৃতা রুমে এসো।
বলেই আদৃতার হাত ধরে ওকে নিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো আদিয়াত।আর মিসেস.তৌসি এতে বেশি অপমানিত বোধ করলেন।ঠিক সেই মুহূর্তে তিষা এসে হাজির হলো মিসেস.তৌসির পাশে।এসেই মিসেস.তৌসিকে উদ্দেশ্য করে বললো
~ইশশ অর্ণবের কাছে কতো শুনেছি আদিয়াত ভাইয়ার কথা।সে নাকি আপনাকে কতো ভালোবাসতো।কই এখন তো দেখছি ঐ আদৃতাকে নিয়ে কিছু বললে সে যেন সেটা মানতেই পারছে না।এভাবে আপনার সামনে দিয়ে আদৃতার হাত ধরে ট নে না নিলেও পারতো মা।আমিও বুঝি না আদৃতা কি এমন করে আদিয়াত ভাইয়াকে বস করলো?ওকে তো আমি চিনি ছোটবেলা থেকেই ও এখন আদিয়াত ভাইয়াকে আপনাদের সবার কাছ থেকে দূরে সড়িয়ে নেবে।
তিষার কথায় মিসেস.তৌসির রাগটা একদমই বেড়ে গেলো আদৃতার প্রতি।আবার ভয়ও হলো সত্যিই কি আদৃতা তার ছেলেকে তার থেকে কেড়ে নেবে?মিসেস.তৌসি কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে বিরবির করে বললেন
~নাহ্ সেটা তো হতে পারে না আমি যত দ্রুত সম্ভব আদৃতাকে এ বাড়ি থেকে তাড়ানোর ব্যবস্থা করছি।

__♥__
রাত ২টা..

আদৃতা-আদিয়াত ঘুমোচ্ছে।এরমধ্যে আদিয়াতের ফোন বেজে উঠলো।আদিয়াত উঠে ফোন হাতে নিতেই দেখলো রিশানের কল।
((রিশান হচ্ছে আদিয়াতের বেস্ট ফ্রেন্ড।))
আদিয়াত ফোন হাতেই ছাদে চলে গেলো।ছাদে গিয়ে কল ব্যাক করলো।সঙ্গে সঙ্গেই রিশান রিসিভও করে ফেললো।

~কিরে কিছু হয়েছে এতো রাতে কল করলি?(আদিয়াত)
~দোস্ত ওরা সবাই কিন্তু আদৃতার ক্ষতি করার চেষ্টা করছে।(রিশান)
~ওরা মানে কারা?একজনই তো?(আদিয়াত)
~উহু একজন না চারজন।এরমধ্যে তোর মাও আছে।(রিশান)
~মানেএএ?এসব কি বলছিস?(আদিয়াত চমকে গিয়ে)
~হ্যা এটাই সত্যি আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি।আর তুই তো জানিসই তোর বাড়ির একজন সার্ভেন্টই সব খবর দেয় আমাদের।তুই তো অনেকদিন ধরে গোডাউনে আসিস না।তাই অনেককিছুই জানিস না।আর বাকি যারা ওর ক্ষতি করার চেষ্টা করছে তাদের নাম আমি ফোনে বলতে পারবো না।(রিশান)
~ আচ্ছা আমি কালকে আসবো।(আদিয়াত)
~ঠিক আছে।যা ঘুমো তাহলে..।(রিশান)
~হু! বলেই কল কা’ট’লো আদিয়াত।

আর অবাক হয়ে ভাবলো ~মা এতো ভালো অভিনয় কি করে করতে পারে?মা এমন হলোই বা কবে থেকে?মা কারো ক্ষতি করার চেষ্টা করছে?তাও আবার যার ক্ষতি করার চেষ্টা করছে সে মা’য়ের ছেলেরই বউ।নাহ্ আমি থাকতে আদৃতার কোনো ক্ষতি আমি কাউকে করতে দিবো না।যে ওর কোনো ক্ষতি করতে আসবে প্রয়োজনে তাকেই আমি ঐ তোহার মতো অবস্থা করবো।
এই মুহূর্তে আদিয়াতের হিংস্র রূপটা প্রকাশ পাচ্ছে। কিন্তু কেউ এই রূপ দেখছে না।আদিয়াত নিজের এই রূপটা সবার থেকে আড়ালে রাখতেই ভালোবাসে।আদিয়াতের এই রূপ সম্পর্কে শুধুমাত্র রিশানই জানে।
(তোহা কে সেটা পরে বলবো..)

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here