শুভ্র রাঙা প্রেম পর্ব -০৬

#শুভ্র_রাঙা_প্রেম 🤍
#পর্ব_৬
#Usha (Writer)

১১.
সকালে ঘুম ভাঙতেই আদৃতা উঠে বসলো।পাশে তাকিয়ে দেখলো আদিয়াত নেই।ঘড়ির দিকে একপলক তাকিয়ে খাট থেকে নামতেই মাথা ঘুড়ে পড়ে যেতে নিলো আদৃতা কিন্তু তার আগেই আদিয়াত ধরে ফেললো।তারপর সোজা করে দাঁড় করিয়েই দিলো এক ধমক।
~সমস্যা কি তোমার হ্যা?আমাকে টেনশনে ফেলতে অনেক ভাল্লাগে না?এই শরীর নিয়ে তোমায় বিছানা থেকে নামতে কে বলেছে হ্যা?
আদৃতা মিনমিন করে বললো
~আব ওয়াশরুমে যাবো তাই…।
আদিয়াত চোখ গরম করে তাকিয়ে বললো
~তো আমায় ডাকা যেতো না?তোমাকে পাকনামি করে একা উঠতে বলেছে কে?যদি পড়ে যেতে?তুমি জানো আমি তখন রুমে না এলে আর তোমায় ধরে না ফেললে পড়ে গিয়ে তোমার হাত-পা ভাঙতে পারতো?

আদৃতা মাথা নিচু করে রইলো।আদৃতাকে মাথা নিচু করে থাকতে দেখে আদিয়াত বাঁকা চোখে তাকিয়ে বললো
~যাও ওয়াশরুমে যাও।আমি বাইরেই আছি।সমস্যা হলে আমায় ডেকো।

__♥__

~আমরা ঐ বাড়িতে যাবো না?
আদিয়াত মোবাইলে কিছু ফাইল দেখছিলো আদৃতার কথা শুনে বললো
~কেন?এই বাড়িতে তোমার ভালো লাগছে না?
আদৃতা বললো
~না,আসলে তেমন কিছু না।আমি এমনি বললাম আরকি..।
আদিয়াত বললো
~তুমি আগে সুস্থ হয়ে নাও এরপর ঐ বাড়িতে যাবো।
আদৃতা ফট করে বলে উঠলো
~আমি তো সুস্থই।
আদিয়াত চোখ গরম করে তাকাতেই চুপচাপ বারান্দায় চলে গেলো আদৃতা।

একটা চেয়ারে বসে খোলা আকাশটার দিকে তাকিয়ে রইলো।চুলগুলো বাঁধা না থাকায় বারবার বাতাসে উড়ে সামনে চলে আসছে।আর আদৃতা বিরক্তি নিয়ে সামনে থেকে চুলগুলো সড়িয়ে কানের পিছনে গুজে রাখছে।এমন সময় আদিয়াত এসে কপালের সামনের চুলগুলো সড়িয়ে পেছন থেকে চুলটা বেঁধে দিলো।আদৃতা আনমনেই মুচকি হাসলো।

_♥_
বিয়ে ঠিক হওয়ার পর থেকেই অর্ণবের তিষাকে কেমন যেন লাগতে শুরু করেছিলো।কিন্তু এখন বিয়ের পর আরো অসহ্য লাগছে।যেই মেয়ে নিজের বোনকে সম্মান দিতে জানে না এতো মিথ্যা বলে সেই মেয়ের সাথে সারাজীবন কি আদোও থাকা সম্ভব?যে আদৃতা ওকে এতো ভালোবাসে সে আদৃতার সাখেই তিষার যা ব্যবহার তাহলে ও তো অর্ণবের ফ্যামিলির সাথে কখনোই মানিয়ে চলবে না এটুকু অর্ণবের ভালোই বোঝা হয়ে গেছে।এসব ভাবনা-চিন্তার মাঝেই পেছন থেকে তিষা অর্ণবকে জড়িয়ে ধরে আল্লাদী কনে বলে উঠলো
~বেবি আমার না কিছু কেনাকাটা আছে আমার একটু শপিং এ যেতে হবে।
অর্ণব স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিলো
~তো,যাও।
ওমনি তিষা অর্ণবকে ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বললো
~শপিং করবো কি দিয়ে?টাকা দাও?
অর্ণব কিছু না বলেই নিজের ক্রেডিট কার্ড দিয়ে গেলো।আর তিষা ওর আর কোনোদিকে খেয়াল নেই।নাচতে নাচতে বেড়িয়ে গেলো।অর্ণব সেদিকে একপলক তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো।রিলেশনে থাকাকালীন তিষা অর্ণবের থেকে বহুবার অনেক টাকা নিয়ে পার্টি করেছে শপিং করেছে।অর্ণবও তখন ওর প্রেমেই মত্ত ছিলো অন্যকিছুর খেয়াল ছিলো না ওর।কিন্তু এখন ভালোই বুঝতে পারছে আর যাই হোক তিষার সাথে ও থাকতে পারবে না।তিষা নিজের কোনো দরকার না হলে অর্ণবের সাথে ঠিকমতো দু’টো কথাও বলে না।অর্ণবের এখন নিজের ওপরেই রাগ হয়।কেন তিষার মতো একটা মেয়েকে বিয়ে করলো?ও মাথা ঠান্ডা করার বৃথা চেষ্টা করে ভাবলো নাহ্ কাল থেকে অফিসে জয়েন করবে।নিজেকে কাজে ডুবিয়ে রাখবে।

অন্যদিকে, তিষা চলে গেলো ক্লাবে। আশেপাশে তাকাতেই চোখ পড়লো একটা ছেলের দিকে।তিষা হেসে ছেলেটার পিছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে ছেলেটার চোখদুটো চেপে ধরলো।ছেলেটা ওর হাত চোখের সামনে থেকে সড়িয়ে ওকে টেনে নিজের কোলে বসালো।তারপর ওর কোমর জড়িয়ে ধরে বললো
~যা আনতে বলেছিলাম এনেছো?
তিষা ছেলেটার গলা জড়িয়ে ধরে বললো
~হু এনেছি।টাকা পরে দিচ্ছি আর আদৃতার খবর?ও কালকে আমাদের বাড়িতে গেছে আদিয়াতের সাথে।ওর জিনিসপত্র গুলো আনতে।কিন্তু ওখানে গিয়ে নাকি অসুস্থ হয়ে গেছে তাই আর বাড়ি ফেরেনি।আজকেও মনে হয় না ফিরবে।ঐ বাড়িতে ওরা দু’জন ছাড়া আর কেউ নেই।

১২.
আদিয়াত কয়েকবার ডাকতেই চোখ ডলে উঠে বসলো আদৃতা।উঠে বসতেই ওর ভ্রু কুঁচকে এলো।ও চোখ ছোট করে আদিয়াতের দিকে তাকিয়ে বললো
~আমি এখানে এলাম কি করে?আর ঘুমালামই বা কখন?আমি না বারান্দায় ছিলাম?
আদিয়াত বললো
~হু বারান্দায়ই তো ছিলে।এরপর ঘুমে টলতে টলতে আমার বুকেই ঘুমিয়ে গেলে।তখন আমি রুমে নিয়ে এসেছি।
আদিয়াতের বলা কথাটা কানে যেতেই আদৃতা লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো।ইশশ আদিয়াত কি না কি ভাবলো?

আদিয়াত আদৃতাকে লজ্জা পেতে দেখে বললো
~অনেক লজ্জা পাওয়া হয়েছে।এখন উঠে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নাও।সেইযে কখন খেয়েছো।আবার ঔষধ খেতে হবে তো নাকি?
আদৃতা চোখ মুখ কুঁচকে আদিয়াতের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বললো
~বদ লোক।আমি সুস্থ হয়ে গেছি আর উনি আমায় ঔষধ খাওয়ানোর জন্য বসে আছে।
আদিয়াত চোখ পাকিয়ে বললো
~আমাকে না বকে যাও যেটা বলেছি সেটা করো।
আদৃতা আর কিছু বললো না।চুপচাপ ফ্রেশ হয়ে এসে খেয়ে ঔষধ খেয়ে নিলো।

তারপর একটা উপন্যাসের বই নিয়ে পাশের রুমে চলে গেলো।পাশের ঘরে গিয়ে নিরিবিলি উপন্যাস পড়ছে..।

আদিয়াত মোবাইলে কিছু একটা করছিলো এরমাঝেই ওর ফোন এলো।ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কেউ একজন বলে উঠলো
~একা বাড়িতে তো আদৃতার সাথে ভালোই আছিস?
আদিয়াত বুঝতে পারলো এটা কার ফোন।ও রেহে গিয়ে বললো
~ভালো থাকি খারাপ থাকি সেটা জেনে তোর কি লাভ বল তো?আর তোকে ভালোয় ভালোয় বলছি আদৃতার ক্ষতি করার চেষ্টা করিস না।
অপরপাশের ব্যাক্তিটি হাসতে হাসতে বললো
~ওহহো আদিয়াত তুই তো জানিস আমি ভালো মানুষ না যে ভালোয় ভালোয় তুই বললি আর আমি সেটা শুনবো।আদৃতার করা অপমান আমি কখনোই ভুলিনি।ওর করা অপমানের প্রতিশোধ আমি নেবোই।
আদিয়াত বললো
~ঠিক আছে।আমিও দেখি আমি থাকতে কি করে তুই আদৃতার কোনো ক্ষতি করিস? বলেই কলটা কে’টে দিলো।

মাথা ব্যাথা করছে আদিয়াতের তাই ভাবলো একটু শুয়ে থাকবে। কিন্তু তা আর হলো না।নিচে থেকে কলিং বেল বেজে উঠলো। আদিয়াত উঠে নিচে গেলো।
আদৃতা গিয়ে দরজা খুলে দিয়েছে।দরজা খুলতেই একটা মহিলা ভেতরে ঢুকলো।আদৃতা ভ্রু কুঁচকে বললো
~আপনি কে?
মহিলাটি বললো
~আব..আদিয়াত স্যার আমায় বলেছে এখানে আসতে..।
আদৃতা কিছু বলতে যাবে তার আগেই আদিয়াত বললো
~হু আমিই আসতে বলেছিলাম ওনাকে।
আদৃতা অবাক হয়ে বললো
~কেন?
~ওনার ছেলে আসার অফিসে চাকরি করতো।কিন্তু একটা এ’ক্সি’ডে’ন্টে ওনার ছেলে মা’রা যায়।উনি এখন একদম একা।তাই উনি এখন থেকে এই বাড়িতেই থাকবে।এমনিতেও এই বাড়ি ফাঁকা পড়ে থাকবে..।এরচেয়ে ভালো কোনো মানুষ যদি এই বাড়িতে থাকে তাহলে বাড়িটাও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকবে।আর পরবর্তীতে এই বাড়িতে এলেও কোনো সমস্যা হবে না।(আদিয়াত)
আদৃতা মুগ্ধ দৃষ্টিতে আদিয়াতের দিকে তাকিয়ে ভাবলো
~এই মানুষটা এতো ভালো কেন?এতো মায়া কেন তার মাঝে?
~যাও ওনাকে সব দেখিয়ে দাও বাড়ির।(আদিয়াত)
আদৃতার ঘোর ভাঙলো আদিয়াতের কথায়।আদৃতা মাথা নাড়িয়ে ওনাকে নিয়ে সারা বাড়ি ঘুড়ে দেখালো।মহিলার সাথে কথা বলে জানতে পারলো তার নাম সিমা।ওনাকে রেস্ট নিতে বলে আদৃতা রুমে গিয়ে শুয়ে মুখের উপর বালিশ চেপে ভাবলো
~ আচ্ছা আমি কি কোনোভাবে আদিকে ভালোবেসে ফেলেছি?
পরক্ষণেই মাথা থেকে এসব চিন্তা ঝেড়ে ফেললো।আদিয়াত আদৃতাকে মুখের উপর বালিশ চেপে থাকতে দেখে বললো
~কি ব্যাপার?মুখের উপর বালিশ চেপে আছো কেন?
আদিয়াতের কথা কানে পৌঁছাতেই বালিশ সড়িয়ে তোতলিয়ে বললো
~আব..এমনি শীত করছিলো তাই।
আদিয়াত ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে ওর সামনে এসে দাড়ালো।হাতি বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিলো ওর কপাল।নাহ্ জ্বর তো নেই।তাহলে শীত করছে কেন?আদৃতার দিকে তাকাতেই আদৃতা বোকার মতো হেসে বললো
~আমার ভালো লাগছে না আমি একটু ঘুমোই ঠিক আছে।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here