শুভ্র রাঙা প্রেম পর্ব -০৫

#শুভ্র_রাঙা_প্রেম 🤍
#পর্ব_৫
#Usha (Writer)

৯.
হুট করে গাড়ি থামিয়ে দেওয়ায় আদৃতা বেশ অবাক হলো।আদিয়াতের দিকে তাকিয়ে বললো
~গাড়ি থামালেন কেন?
আদিয়াত গাড়ি থেকে নামতে নামতে বললো
~বাইরে তাকিয়ে দেখো।
আদৃতা বাইরে তাকাতেই দেখলো ওর বাড়ির সামনে এসেই আদিয়াত গাড়ি থামিয়েছে।

আদৃতা নিজেও গাড়ি থেকে নেমে আদিয়াতের পিছুপিছু বাড়িতে ঢুকলো।

দু’দিন হয়েছে মাত্র অথচ আদৃতার মনে হচ্ছে কতদিন পরে এই বাড়িতে এলো।
আদিয়াত ড্রয়িংরুমের সোফায় শুয়ে বললো
~যা যা লাগে গুছিয়ে নাও।গোছানো শেষ হলে আমায় ডেকো।
আদৃতা ঠিক আছে বলে চলে গেলো।

রুমে সব গোছাতে গোছাতেই আদৃতার চোখ পড়লো নিজের ডায়েরির দিকে।আদৃতা সঙ্গে সঙ্গে ডায়েরিটা হাতে নিলো।এই ডায়েরিতে আদৃতার অনেক অব্যক্ত কথা লিখা আছে।

এরমধ্যেই আদিয়াত রুমে এসে আদৃতাকে বললো অনেকটা পথ এসেছো এখন যাও ফ্রেশ হয়ে নাও।আমি খাবার অর্ডার করে দিয়েছি।
আদৃতা মাথা নাড়িয়ে ফ্রেশ হতে গেলো।আদিয়াতের ডায়েরিটার দিকে চোখ পড়তেই ও এগিয়ে গিয়ে ডায়েরিটা হাতে নিলো।প্রথমে ভাবলো আদৃতার অনুমতি ছাড়া ওর ডায়েরি পড়াটা কি ঠিক হবে?পরে বিরবির করে বললো
~নাহ্ এতোকিছু ভেবে লাভ নেই,পড়েই ফেলি।

ডায়েরিটা খুলতেই দেখলো প্রথম পৃষ্ঠায় খুব সুন্দর করে অনেকগুলো পাখির ছবি আঁকা আর নিচে ছোট্ট করে লিখা
~ইশশ আমি যদি এই পাখিটার মতো হতে পারতাম।সারাদিন খোলা আকাশে উড়ে উড়ে বেড়াতে পারতাম।

পরের পৃষ্ঠায় লিখা
~মা মা’রা যাওয়ার পর থেকে না আমার একটা কাছের মানুষের খুব অভাব।ছোট মা তো বাবার কাছে বেশি একটা যেতেই দেয় না আর যদি তাকে লুকিয়ে বাবার কাছে একটু যাই তবে বাবা বাড়িতে না থাকলে আমায় খুব মা’র’তো।

এভাবে আদিয়াত একের পর এক পৃষ্ঠা উল্টাতে লাগলো…
~আজ মা’য়ের মতো বাবাও আমায় একেবারেই একা করে দিয়ে চলে গেলো।তিষা সহ সবাই আমায়ই দায়ী করছে বাবার মৃত্যুর জন্য।অথচ এসবের পেছনে আমার কোনো হাতই নেই।

~বাবা আর ছোট মা মা’রা যাওয়ার প্রায় ১ বছর কে’টে গেছে। এই ১ বছরের বেশিরভাগ সময়ই তৃণা খালামনি এই বাড়িতেই ছিলো।উনি আমার সাথে হুট করেই বেশ ভালো ব্যবহার করা শুরু করেছে কয়েকদিন ধরে।অথচ আগে আমাকে দেখতেই পারতো না।এসব কি আসায় ভালোবেসে?উঁহু একদমই না বরং সব সম্পত্তি আমার নামে আছে তাই।তারা ভাবে আমি কিছুই বুঝি না কিন্তু নাহ্ আমার আসলে এসব ভালোই লাগে না।সম্পত্তি কিংবা টাকা-পয়সা আমি কখনোই চাইনি।আমি শুধু একটু ভালোবাসা পেতে চেয়েছি।কিন্তু মা মা’রা যাওয়ার পরে কেউ কখনো নিঃস্বার্থ ভাবে আমায় ভালোবাসেনি।

~তৃণা খালামনির ছেলে কয়েকদিন ধরে বারবার এই বাড়িতে আসছে।তার আচার-আচরণ একটু কেমন যেন।আর তাঁর চাহনিও অনেক বাজে।ইদানিং হুটহাট সে আমার রুমে চলে আসে..যেগুলো আমার একটুও ভালো লাগে না।

~অনেক সহ্য করেছিলাম কিন্তু আজ আর পারলাম নাহ্।মাথা ব্যাথা হওয়ায় নিজের রুমে একটু শুয়েছিলাম আর সে আমার অনুমতি ছাড়াই আমার রুমে প্রবেশ করে আমাকে খারাপভাবে ছোঁয়ার চেষ্টা করেছে।আমি না তাকে অনেক কথা শুনিয়ে দিয়েছি।সবাই সবসময় কেন আমার দূর্বলতার সুযোগ নেয়?আমিও তো একটা মানুষ এটা কখনো কেউ ভাবে না?

~তৃণা খালামনির ছেলেকে কথা শোনানোয় তার আসল রূপ সামনে এলো।কত বাজে কথাই শোনালো আমায়।শেষে আর সহ্য করতে পারলাম না।পুলিশ ডাকার ভয় দেখিয়ে মা-ছেলেকে বাড়ি থেকে বের করে দিলাম।

~তৃণা খালামনি আর তার ছেলেকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ায় তিষা আমাকে আরও ঘৃণা করা শুরু করলো।এমনিতেই আমায় সহ্য করতে পারতো না আর এখনতো।

আরো অনেককিছুই লিখা আছে কিন্তু নিচ থেকে কলিং বেল বেজে উঠায় বাকিটা আর পড়া হলো না।ডায়েরি জায়গামতো রেখে নিচে চলে গেলো আদিয়াত।
ডেলিভারি ম্যান পার্সেল দিয়ে গেলো মাত্রই।এরমধ্যে আদৃতা নিচে এলো।আদৃতাকে দেখে অসুস্থ মনে হচ্ছে আদিয়াত সেটা খেয়াল করে বললো
~তুমি কি অসুস্থ আদৃতা?
আদৃতা বললো
~না।শুধু মাথাটা একটু ব্যাথা করছে।
আদিয়াত উত্তেজিত হয়ে বললো
~মাথা ব্যাথা করছে?দেখি তুমি আগে বসে খেয়ে নাও।বলেই আদৃতার দিকে খাবার এগিয়ে দিলো।আদৃতাও চুপচাপ খেয়ে নিলো।এরপর আদিয়াত উঠে গিয়ে আদৃতাকে ঔষধ এনে দিলো।
তারপর রুমে গিয়ে রেস্ট নিতে বললো।

আদৃতা রুমে শুয়ে শুয়ে ভাবছে
~এর আগেও তো আমার কতবার মাথা ব্যাথা করেছে কই তখন তো কেউ আমার জন্য এতোটা উত্তেজিত হয়নি,এতোটা কেয়ারও করেনি।আচ্ছা আদিয়াত উহু আদিয়াত নামটা খুব বড় হয়ে যায় আমি আদি-ই বলবো।আদি আমায় বিয়ে কেন করেছে?আর সে তো আগে থেকে আমায় চিনতোও না।তবে আমার সামান্য মাথা ব্যাথায় সে এতোটা চিন্তিত হয়ে গেলো কেন আর আমার এতো কেয়ারই বা কেন করছে?
এসব ভাবতে ভাবতে তলিয়ে গেলো গভীর নিদ্রায়।

১০.
আদৃতাকে ঘুমোতে দেখে আদিয়াত আস্তে করে ওর পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।হঠাৎ করেই আদৃতার শরীর কাঁপতে শুরু করলো।আদিয়াত বেশ ঘাবড়ে গিয়ে আদৃতার কপালে হাত দিতেই দেখলো জ্বরে কপাল পুড়ে যাচ্ছে।

আদিয়াত তাড়াতাড়ি করে আদৃতার গায়ে একটা কাঁথা জড়িয়ে দিলো এরপরে একটা বাটিতে করে পানি এনে নিজের রুমাল ভিজিয়ে জলপট্টি দিতে শুরু করলো।

অনেকক্ষণ জলপট্টি দিয়ে আদৃতাকে একপলক দেখে রান্নাঘরে গেলো।জিনিসপত্র খুঁজে অনেক কষ্ট করে স্যুপ বানালো আদৃতার জন্য।

রুমে যেতেই চোখ পড়লো আদৃতার মুখখানির দিকে।একদিনেইচেহারাটা একদম শুকিয়ে গেছে।চোখগুলোও লাল হয়ে আছে।

আদিয়াত গিয়ে খাটের এক কোণায় বসে আদৃতার মাথাটা নিজের কোলে তুলে নিলো।তারপর আদৃতাকে বললো
~আদৃপাখি একটু খেয়ে নাও স্যুপটা।আমি ডক্টরকে কল দিয়েছি হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যে চলেও আসবে।কিন্তু তার আগে তুমি একটু খেয়ে নাও।

বলেই আদৃতার মুখের সামনে চামচ ধরলো।আদৃতার মুখটা একহাতে ধরে আরেক হাত দিয়ে খাইয়ে দিলো।অনেকটা খাওানোর পরে আদৃতা বললো
~আর ভালো লাগছে না।
আদিয়াত আর জোর করলো না।স্যুপের বাটিটা খাটের পাশের টেবিল এ রেখে আদৃতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।

আদৃতার চোখগুলোও ছলছল করে উঠলো।এর আগে কখনোই হয়তো নিজের জ্বর হলে এতোটা শান্তি অনুভব করেনি।কেউ তো ওর খবরও নেয় নি অথচ আদিয়াত কতটা কেয়ার করছে এমনকি নিজের হাতে খাইয়েও দিচ্ছে।

আদৃতার চোখে পানি দেখে আদিয়াত অস্থির হয়ে বললো
~খুব খারাপ লাগছে আদৃপাখি?উফফ আরেকটু কষ্ট করো এক্ষুণি ডক্টর চলে আসবে।

আদিয়াতের এই অস্থিরতায় নিজের অজান্তেই আদৃতার মনে কিছুটা শান্তি অনুভব হলো।

__♥__
কিছুক্ষণ আগে ডক্টর এসে আদৃতাকে দেখে গিয়েছে সেই সঙ্গে কয়েকটা ঔষধও দিয়ে গেছে।

আদিয়াত ঔষধগুলো নিয়ে এসে আদৃতাকে খাইয়ে দিলো এরপর ঘুম পাড়িয়ে দিলো।ক্লান্ত থাকায় নিজেও আদৃতার পাশে শুয়ে রইলো।মাঝরাতে আদৃতার জ্বর একদম বেড়ে গেলো।আদিয়াতের ঘুম ভেঙে যেতেই দেখলো আদৃতা কাঁপছে ও জ্বর চেক করে দেখলো জ্বর অনেকটা বেড়েছে।ও জলপট্টি দেওয়ার জন্য উঠতে যাবে তার আগেই আদৃতা কাঁপতে কাঁপতে ওকে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে।আদিয়াত আর উঠলো না বরং নিজেও আদৃতাকে নিজের সাথে মিশিয়ে রাখলো।আদৃতা বিরবির করে কিছু বললে স্পষ্ট না হলেও বেশ কাছাকাছি থাকায় আদিয়াত বুঝলো আদৃতার অস্পষ্ট কথা গুলো।

আদিয়াত আদৃতার কপালে পরা চুলগুলো হাত দিয়ে ঠিক করে দিয়ে বললো
~তোমায় আর কখনো কোনো কষ্ট পেতে দেবো না আমি আদৃপাখি।একবার যখন তোমায় নিজের অস্তিত্বে মিশিয়ে নিয়েছি এখন আর কেউ তোমায় আমার থেকে আলাদা করতে পারবে না মৃত্যু ছাড়া।কিন্তু এখন আমি তোমার কাছে ধরা দিচ্ছি না।আগে আমার অসম্পন্ন কাজ সম্পন্ন করি তারপর তোমায় সবকিছু খুলে বলবো।বলেই আলতো করে ঠোঁট ছোয়ালো আদৃতার কপালে।

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here