শুভ্র রাঙা প্রেম পর্ব -০৪

#শুভ্র_রাঙা_প্রেম 🤍
#পর্ব_৪
#Usha (Writer)

৭.
পার্টিতে মিসেস.তৌসিকে দেখে আদিত্য আহমেদ,অর্ণব,আদিয়াত,আদৃতা সবাই যেন বেশ অবাক হলো।কিন্তু তিষার মধ্যে কোনো ভাবান্তর দেখা গেলো না।সে বিভিন্ন স্টাইলে ছবি তুলতেই ব্যস্ত।

মিসেস.তৌসি সবাইকে অবাক হতে দেখলেও সেদিকে পাত্তা না দিয়ে বললো
~কই একটু রেগে কি না কি বলেছি সকালে আর তোমরা আমাকে রেখেই পার্টিতে চলে এলে।একবার ডাকলেও না আমায়?
সবাই যেন আরেকদফা অবাক হলো।অর্ণব বোকার মতো বললো
~মা তোমার রাগ ভেঙেছে?তারমানে তুমি সব মেনে নিয়েছো?
মিসেস.তৌসি মিষ্টি করে হেসে বললো
~হ্যা অবশ্যই।কতক্ষণই বা আর রাগ করে থাকবো?আমার রাগ ভাঙানোর মতো তো কেউ নেই।তাই নিজে থেকেই চলে এলাম।আর আদি তুই সকালের কথাগুলো ভুলে যা বাবা।তখন রাগের মাথায় কিসব বলেছি নিজেও জানি না।আর আদৃতা তুমিও ওসব ভুলে যাও মা।
সবাই বেশ খুশি হলো মিসেস.তৌসি সবটা মেনে নিয়েছে বলে কিন্তু সহ্য হলো না একজনের।সে আর কেউ না তিষা।যাও একটু ভেবেছিলো শাশুড়ি আদৃতাকে পছন্দ করে না এই সুযোগে শাশুড়ির মনে নিজের জন্য জায়গা করে নিবে সেটা আর হলো না।

দেখতে দেখতে খুব সুন্দর করে পার্টি শেষ হলো।মেহমানরাও সবাই চলে গেছে প্রায় শুধু কাছের কিছু আত্মীয় আর মিসেস.তৃণা আছে।

পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়েই আদৃতা নিচে গেলো নাস্তা তৈরি করতে।সার্ভেন্টদের সাহায্যে সুন্দরমতো নাস্তা বানিয়ে ফেললো।তারপর টেবিলে গুছিয়ে রাখছে সব একে-একে।

এমন সময় তড়িঘড়ি করে একপ্রকার দৌড়ে রান্নাঘরে এলো তিষা।সার্ভেন্টদের উদ্দেশ্যে বললো
~আমি যা বলবো তা তোমরা চুপচাপ শুনবে যদি কোনো কিছু ভুল হয় তবে তোমাদের চাকরি থাকবে না বলে দিচ্ছি।এই সকল রান্না যে আদৃতা করেছে এই কথাটা যেন কারো কানে না যায়।এই সকল রান্না আমি করেছি।

আদৃতা টেবিলে সবকিছু গুছিয়ে রান্নাঘরের কাছে আসতেই দেখলো তিষা সার্ভেন্টদের কি যেন বলছে।ও এগিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই মিসেস.তৌসি এসে উপস্থিত হলেন রান্নাঘরে।

৮.
আদৃতাকে দেখে যদিও মনে মনে বেশ বিরক্ত হলেন কিন্তু তবুও মুখে জোরপূর্বক হাসি ফুটিয়ে বললেন
~আরে তোমরা উঠে গেছো?
আদৃতা কিছু বলার আগেই তিষা জবাব দিলো
~হ্যা মা।আমি তো সেইযে কখন উঠেই বাড়ির সবার জন্য নাস্তা তৈরি করেছি।আর আদৃতা তো কিছুক্ষণ আগে মাত্র ঘুম থেকে উঠলো।
মিসেস.তৌসি তিষার কথায় বেশ খুশি হয়ে এগিয়ে গিয়ে তিষার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো
~এইতো একদম আমার মনের মতো একটা মেয়ে তুমি।আসতে না আসতেই আমার পরিবারটাকে আপন করে নিচ্ছো একটু একটু করে।আর একটা কথা কে কখন উঠলো সেটা তোমার দেখতে হবে না তুমি তোমার সংসারটা নিজেরমতো করে সাজিয়ে-গুছিয়ে নাও।কারণ ছোট বউ হলেও এই বাড়িতে তো তুমিই থাকবে সবসময়।আর অন্যরা তো আজ আছে কাল নাও থাকতে পারে?

আদৃতা বেশ ভালোই বুঝলো শেষের কথাটা মিসেস.তৌসি ওকে উদ্দেশ্য করেই বলেছে।ও শুধু নিচের দিকে তাকিয়ে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো।

সবাই যখন একসাথে বসে খাওয়া শুরু করবে এমন সময় মিসেস.তৌসি বললেন
~জানো আজকের এই এতো রান্না কে করেছে?সবকিছু তিষা করেছে।
সবাই মিসেস.তৌসির কথা বেশ স্বাভাবিক ভাবে নিলেও অর্ণব অবাক হয়ে গেলো।তিষা রান্না করেছে?ও তো ঘুম থেকে উঠে নিচেই এলো কিছুক্ষণ।আর তাছাড়া ওতো রান্নাই করতে পারে না আমি যতটুকু জানি?

আদিয়াত খেয়াল করলো সবাই বসে গেলেও আদৃতা এখনো খেতে বসেনি।আদিয়াত আদৃতাকে উদ্দেশ্য করে বললো
~আদৃতা কি হলো তুমি বসছো না কেন?
মিসেস.তৃণা আদিয়াতের কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আদৃতাকে বেশ তাচ্ছিল্য তরে বললেন
~আরে ছাড়ো তো আদিয়াত।ওই বাইরের মেয়েটাকে আবার ডাকছো কেন? ওর কোনো যোগ্যতা আছে নাকি তোমাদের সাথে একটেবিলে বসে খাওয়ার?ও দাঁড়িয়ে আছে দাঁড়িয়েই থাকতে দাও ওকে।
আদৃতার চোখ ভরে উঠলো।ও মাথা নিচু করে ওর ভেজা চোখ জোড়া লুকোনোর চেষ্টা করলো।আদিয়াত অগ্নিদৃষ্টিতে মিসেস.তৃণার দিকে তাকিয়ে বললেন
~ওকে বাইরের মেয়ে বলার সাহস কি করে হলো আপনার?ও বাইরের লোক নয় বরং আপনি বাইরের লোক।ও আমার স্ত্রী,এই বাড়ির বড় বউ।আর আপনি আপনি কে?বিয়েও তো শেষ এবার আপনি নিজের বাড়ি চলে যেতে পারেন।আর যদি এ বাড়ি থাকেন তবে মেহমান মেহমানের মতোই থাকবেন।

চলে খাবার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।আর আদৃতার দিকে তাকিয়ে বললো
~রুমে এসো তুমি।
আদৃতা আদিয়াতের পিছুপিছু রুমে গেলো
রুমে যেতেই আদিয়াত শব্দ করে দরজাটা বন্ধ করে দিলো।এরপর আদৃতার দিকে রাগী চোখে তাকালো।আদৃতা ভেবে পাচ্ছে না ওর উপরে কেন আদিয়াত রেগে আছে?
এরমধ্যেই আদিয়াত ওর সামনে এসে বললো
~এই কাঁদা ছাড়া কি তুমি আর কিছু পারো না?ওই বাইরের মহিলা তোমায় নিয়ে এতো কিছু বললো আর তুমি কিছু না বলে শুধু কাঁদছো?আর তিষা তুমি সকাল থেকে যেই রান্নাগুলো করলে সেগুলো নিজের বলে চালিয়ে দিলো ওকেও কিছু বললে না?

আদৃতা চমকে গেলো।আদিয়াত রান্নার ব্যাপারটা জানলো কি করে?
আদৃতাকে চমকে যেতে দেখে আদিয়াত বললো
~আমি কাল রাতে পানি আনতে নিচে যাচ্ছিলাম তখন শুনলাম মিসেস.তৃণা তিষাকে কিছু একটা বলছিলো আর তিষা বলেছিলো আদৃতা তো সকালে উঠে রান্না করবেই,সেগুলোই নাহয় নিজের নামে চালিয়ে দিবো।আদৃতা যদি কিছু বলেও ওর কথা শুনবেই বা কে আর বিশ্বাসই বা কে করবে?

আদৃতা সবটা শুনে একটা মলিন হাসি দিয়ে বললো
~ও রান্না পারে না।তাই এমন করেছে।আসলে বিয়ের পর তো টুািটাকি রান্না করতে হয়।
আদিয়াত যেন এবার বেশ বিরক্ত হলো।বিরক্তি নিয়ে আদৃতার উদ্দেশ্যে বললো
~হু বুঝেছি।যান এবার আপনি রেডি হয়ে নিন।
আদৃতা বোকার মতো বললো
~কোথাও যাবো?
আদিয়াত বাঁকা চোখে ওর দিকে তাকিয়ে বললো
~তুমি না তোমার বাড়িতে যাবে?
আদৃতা এবার বেশ খুশিমনে বললো
~ও হ্যা মনে পড়েছে।
বলেই রেডি হতে চলে গেলো।

_♥_

রেডি হয়ে দুজন একসাখে নিচে যেতেই দেখলো সবার অবস্থাই কাহিল।আদিয়াত হাসলো কিন্তু আদৃতা বুঝলো না কি হয়েছে এদের?
ভাবনার মাঝেই আদিয়াত ওর হাত টেনে বাইরে নিয়ে গেলো যাওয়ার আগে অবশ্য বাবাকে বলে গিয়েছে।

গাড়িতে বসে আদৃতা আদিয়াতের দিকে তাকিয়ে বেশ ভাবুক কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো
~ আচ্ছা বাড়ির সবার কি হয়েছিলো?
আদিয়াত বাঁকা হেসে বললো
~তেমন কিছু না।তিষার হাতের মজার মজার খাবার খেয়ে সবার ঐ অবস্থা হয়েছিলো।
আদৃতা অবাক হয়ে বললো
~মানেএএ?
আদিয়াত বললো
~কাল রাতে তিষা আর মিসেস.তৃণার কথা শুনে আমি সার্ভেন্ট দের বলে রেখেছিলাম যাই রান্না হোক তাতে যেন ওরা অনেক মরিচের গুঁড়ো আর লবণ মিশিয়ে রাখে।
আদৃতা এবার মলিন কন্ঠে বললো
~এরকমটা না করলেও পারতেন আদিয়াত সাহেব।
আদিয়াত এবার শান্ত কন্ঠে বলে উঠলো
~এতো নরম হলে চলবে না আদৃপাখি।পৃথিবীতে টিকে থাকতে হলে অনেক কঠিন হতে হবে নইলে যে তুমি টিকে থাকতে পারবে না।কখন কি পরিস্থিতি আসে বলা যায় না তাই আগে থেকে নিজেকে শক্ত করে নাও।এখন নাহয় কেউ কিছু বললে আমি তাঁদের জবাব দিচ্ছি কিন্তু যদি আমি না থাকি?তখন কি করবে তুমি?
আদৃতার সঙ্গে সঙ্গেই জিজ্ঞেস করলো
~মানেএ?আপনি কই যাবেন?
আদিয়াত হেসে ফেললো
~নাহ্ এমনি বললাম।
আদৃতা আর কিছু বললো না।

কিছুক্ষণ পরেই হুট করে আদিয়াত গাড়ি থামিয়ে দিলো।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here