#ষোড়শীর প্রেমের মায়ায়!
#লেখিকাঃতামান্না
#পর্ব_বাইশ
[#সারপ্রাইজ]
–” আমি কারো ঋণ রাখি না! কেউ আমাকে এক টাকা দিলে আমি তাকে দু টাকা নয় দশ টাকা দিয়ে দেই!
যেহেতু বেড়াতে এসেছি, জামা ভিজিয়ে ঋণ শোধ করতে চাইনা। আমার জিনিস অন্যরা দেখুক তা অন্তত চাইনা!”
স্নিগ্ধা অবাক হয়ে চেয়ে আছে, এই ছেলে একদম শুধরাবে না। ছুড়েছে পানি, আর শুনালো কি না এতগুলো কথা!
শ্রাবণ স্নিগ্ধার দিকে ভ্রু কুচকে হাসলো।
স্নিগ্ধা তাকে আবার ভেংচিকেটে দিল। তা দেখে শ্রাবণ অট্টোহাসিতে ফেটে পরল। পানিগুলো কাছে পেয়ে স্নিগ্ধার দিকে ছুড়ে মারলো। স্নিগ্ধাও কম যায় না সে ও শ্রাবণের গায়ে পানিগুলো ছুড়ে মারতে লাগল। দুজনে কিছুক্ষণ দুষ্টুমি করল।
প্রায় ঘন্টাখানেক পর স্নিগ্ধারা জাফলং ঘুরাঘুরি করে সিলেট শাহজালাল ও শাহপরাণ মাজারে ঘুরে তারা,
সেখান থেকে আবার রিসোর্টে ফিরে সবাই।
শ্রাবণ স্নিগ্ধাকে তার পাশের সীটে বসিয়ে দিল।রিসোর্টে যাওয়ার পর ক্লান্ত হয়ে যে যার রুমে চলেগেল।
পরেরদিন যথারীতি সবাই বিছনাকান্দিতে ঘুরে আসলো তবে স্বর্ণা আর শ্রাবণের সঙ্গে কথা বলেনি। স্নিগ্ধার সঙ্গে ও সে কথা বলেনি অন্যদের সঙ্গে কথা বলে ওদের সাথে একসঙ্গে ঘুরাফেরা করেছে। এসবের মাঝে স্নিগ্ধার কিছুটা হলেও স্বর্ণার জন্য খারাপ লাগল। স্বর্ণা যতটাই পাগলামো করুক সেতো তার ভালোবাসার মানুষের জন্যই করেছে। আর তাছাড়া স্নিগ্ধাকে নিয়ে স্বর্ণার হিংসাত্মক কথাবার্তা স্নিগ্ধা তেমন একটা গায়ে মাখেনি। তবু্ও মনের কোণে একটু হলেও কেমন যেন একটা চিন্তা থেকে যায়।
একদিন স্বর্ণা মৃত্তিকার সঙ্গে বসে কথা বলছিল। স্নিগ্ধা স্বর্ণার সামনে গিয়ে দাড়ালো। স্বর্ণা তখন স্নিগ্ধাকে দেখে সেখান থেকে উঠে যেতে চাইলে স্নিগ্ধা তার হাত ধরে বসিয়ে দিল।
–” আপু প্লিজ উঠবেন না!”
স্বর্ণা স্নিগ্ধার কথা শুনে বসে পরল। তবে মুখটা অন্যদিকে
ফিরানো।
–” আপু তুমি কি আমার উপর রেগে আছো?”
–” তোমার উপর রাগ করতে যাবো কেন? কে হও তুমি আমার? তুমি বেড়াতে এসেছো আমি ও এসেছি।”
–” তাহলে এরিয়ে যাচ্ছো কেন?”
—” আমার ভালো লাগছে না তাই!”
—” আপনার ভালো না লাগাটাও নিশ্চয়ই আমি?
হয়তো আমিই, আসলে আমিই কারন আমার মত ছন্নছাড়া মেয়েদের ভালো না লাগাটাই স্বাভাবিক। আমার এতে খুব একটা খারাপ লাগে না আপু। ছোটবেলা থেকেই আমি এগুলো তেমন একটা গায়ে মাখিনা। কেউ আমাকে নিয়ে যা ইচ্ছে তাই বলুক তাতে আমার খারাপ লাগেনা।
তবে কখন খারাপ লাগে জানেন? যখন কেউ আমাকে এরিয়ে যায়। কেউ যখন আমার সাথে কথৃ বলে না।
জানেন তখন আমার খুব কষ্ট হয়। আমি সহ্য করতে পারিনা। কোথাও একটা আমি তোমাকে বড় বোনের জায়গা দিয়েছিলাম। তুমি আমাকে কি ভাবো আমি জানিনা, তবে আমি তোমাকে কখনো নিজের প্রতিদ্বন্দ্বি ভাবিনি। ”
স্বর্ণা কিছুটা নড়চড়ে বসল। তারপর স্নিগ্ধার দিকে ফিরে বলল –
–” আমি তোমার উপর রেগে নেই, সেদিন যদি শ্রাবণ আমাকে কিছু না বলতো আমি হয়তো অন্যায়টা করতাম।
আমারই ভুল আমি তোমাকে হেয় করতে পারতাম না।
আমার দরকার ছিল এটার। ইটস্ ওকে স্নিগ্ধা, আমি তোমার উপর রেগে নেই। এতদিন যা ছিল তা আমার অপরাধবোধ ছিল। হাসি দিয়েই কথাটা বলল স্বর্ণা।”
স্নিগ্ধার সঙ্গে সেদিন থেকেই স্বর্ণার কথা বলা আবার শুরু।
সিলেটে প্রায় একসপ্তাহ ঘুরার পরই সবাই ঢাকায় চলে এলো। বাসায় এসেছে প্রায় তিনদিন, নানাভাই নাকি আবার অসুস্থ তাই কাল বিকেলে ছোটমামা আর মামি চট্টগ্রামে ফিরে গিয়েছে। স্নিগ্ধা ও যাবে তবে সে আজ কলেজ থেকে বেড়িয়ে বাসায় এসে চট্টগ্রাম যাবে। তাই স্নিগ্ধা কলেজের জন্য রেডি হয়েছে, আজ কলেজে যেতে হবে তার, প্রায় সপ্তাহ খানেক পর কলেজে যাবে সে।
আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুলগুলোকে ঠিক করে ক্রসবেল্টের উপর রেখে বিনুনীটা আবার ঠিক করেনিল।
আয়নায় চোখ পরতেই দেখল একজন বই হাতে নিয়ে বইটার আড়াল থেকে বারবার তারদিকে তাকাচ্ছে। স্নিগ্ধা কপট রাগ দেখিয়ে পিছনে ফিরতেই শ্রাবণ তারদিক থেকে সরে অন্যদিকে ফিরে তাকালো।
স্নিগ্ধা শ্রাবণের সামনে গিয়ে তার হাত থেকে বইটা টান মেরে বলল –
–” কি করছিলেন আপনি? আমার দিকে এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে তাকাচ্ছিলেন কেন?”
–” আমি তো বই পড়ছিলাম, উফফ বইটা দে তাড়াতাড়ি এখনো পড়া বাকি আছে।”
–” বই পড়ছিলেন না আমাকে দেখছিলেন? কোনটা করছিলেন?”
–” তোর এইসব ফালতু কথা আমাকে বলবি না। যেই না চেহারার শ্রী! ”
–” তাই? এখন আর আমাকে ভালো লাগেনা?”
–” শোন আমি তাহসানের মত না! তোর সাথে ডং করব!
যা সর!”
–” কি বললে? ও স্বর্ণা আপুকে খুব ভালো লাগে?
শ্রাবণ আমাকে নিলে না? শ্রাবণ আমাকে জানালে ন?
শ্রাবণ আমি কি তোমার কাছের মানুষ না? খুব ভালো লাগে স্বর্ণা আপুর ডংগী মার্কা কথা শুনতে?”
–” হ্যা আমার খুব ভালো লাগে, বাই দা ওয়ে তোর এত জ্বলে কেন? তোর কি হিংসে হয় নাকি রে? তাহলে তো একটা গান গাইতে হয়রে তোর জন্য! কি যেন গানটা?
আমার কেমন লেগেছিলো!
আমার কেমন লেগেছিলো!
তুমি যখন অন্যের হয়েছিলে
তোমার কেন জলেরে বন্ধু?
তোমার কেন জলে?
আমি কারো হলে,
তোমার কেন জলেরে বন্ধু?
তোমার কেন জলে?
–” হুহ, আমি অন্যকারো হয়েছি কবে? আমি তো কাউকে সেই সুযোগ দেইনি। ”
–” তোর বিএফ? তুই তো বললি তোর প্রেমিক আছে। ”
স্নিগ্ধা এই কথার পরিবর্তে স্নিগ্ধা কিছুই বলেনি। শ্রাবণ স্নিগ্ধাকে নিজের কাছে টেনে বসিয়ে দিল তারপর তার ঘাড়ে মাথাটা রেখে। স্নিগ্ধার হাত ধরে বলল –
–” স্নিগ্ধা!,
–” হুহ,
–“ভালোবাসিস আমাকে?”
–” বলতে পারবো না,”
–” কেন?”
–” জানিনা!”
–” আমি যদি তোকে ছেড়ে চলে যাই তখন বলবি?
ধর আমার কিছু হয়েগেল তখন? তুই তখন আমাকে হাজার খুজঁলেও আমাকে পাবি না!”
স্নিগ্ধা শ্রাবণের কথায় অবাক হয়ে তাকালো। কি বলছে এগুলো শ্রাবণ? স্নিগ্ধা শ্রাবণকে কিছু বলবে তার আগেই শ্রাবণ বেড়িয়ে গেল ঘর থেকে। শ্রাবণ একদম একরোখা কোন কথাই ঠিকভাবে শুনেনা। স্নিগ্ধা শ্রাবণের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ব্যাগটা কাধে ঝুলিয়ে নিল। রুম থেকে বেড়িয়ে বুঝল শ্রাবণ তাকে ফেলেই নিচে চলেগেছে।
স্নিগ্ধা ও মেইন দরজায় লক করে বেড়িয়েগেল।
নিচে দেখল শ্রাবণ গাড়িতে বসেছে কানে তার হেডফোন দেওয়া। স্নিগ্ধা গাড়িতে বসার পরই হাই স্পিডে গাড়ি চালাতে লাগল। স্নিগ্ধা একবার ডাক দিল শ্রাবণ শুনলো না। প্রায় কিছুক্ষণ সময় কাটার পর কলেজের সামনে নামিয়ে দিল শ্রাবণ। স্নিগ্ধা শ্রাবণের দিকে একবার ফিরে তাকালো কিন্তু শ্রাবণ তারদিকে ফিরে তাকালো না।
এই ছেলেটা এমন কেন?এর মেজাজ এত চড়া যে একটু থেকে একটু হলেই রেগেমেগে একাকার হয়ে যায়।
স্নিগ্ধা কলেজের ভিতর চলেগেল।
____________________________________
বাসায় এসেছে স্নিগ্ধা কলেজ থেকে ফিরে গোসল করেনিল সে। মামীর সঙ্গে ফোনে কথা বলে বিছানায় বসল। আজ চোখ দুটো কেমন ঘুমে টাল হয়েগেছে।
শ্রাবণ তাকে কলেজ থেকে বাসার নিচে নামিয়ে চলেগেছে আবার কোথায় যেন। স্নিগ্ধা শ্রাবণের সকালে বলা কথাগুলো ভাবতে লাগল।শ্রাবণের ঐ একটা কথা তার খুব খারাপ লেগেছে। এভাবে সে বলতে পারল? স্নিগ্ধার বুঝি খারাপ লাগে না এমন কথা শুনতে?
ঘুম ঘুম চোখে বিছানা থেকে উঠে পরল স্নিগ্ধা। চোখের দু পাতা যেন খুলতে পারছেনা সে খুব কষ্ট করে চোখদুটো খুলে দেখল চারদিক থেকে মসজিদের আজানের শব্দ আসছে। বেলকনির দরজা খুলে দেওয়া পর্দাগুলো উড়ে উড়ে দক্ষিণের শীতল হাওয়া ছড়িয়ে দিচ্ছে। এত সন্ধ্যা হয়েগেল অথচ শ্রাবণ কোথায়? হাতে ফোনটা নিয়ে দেখল সত্যিই সন্ধ্যা ছটা বাজে। স্নিগ্ধা রুম থেকে বেড়িয়ে পুরো ঘর জুড়ে দেখল না কোথাও নেই শ্রাবণ। হাতের ফোনটা নিয়ে কয়েকবার ফোন করতেই বুঝল ফোনটা সুইচড অফ! কি হয়েছে আবার? সুইচড অফ কেন ফোন টা?
স্নিগ্ধা সারাঘর ময় হাটতে লাগল ব্যস্ত হয়ে, কাকে জানাবে সে? শ্রাবণ কোথায়? কে বলবে তাকে?”
হঠাৎ তার মনে হলো তাশদীদকে ফোন করে জেনে নেওয়া যাক। দুবার রিং হওয়ার পর অপর পাশ থেকে ফোনকল রিসিভ হলো। স্নিগ্ধার হাত থেকে ফোনটা পরে যাওয়ার উপক্রম। নিজেকে সামলেই বলে উঠলো –
–” কোন হসপিটালে?”
চলবে।