#সম্পর্কের_প্রণয়
#পর্ব_০২
#নুর_নবী_হাসান_অধির
তনু দুপুরের রান্না শেষ করে বারান্দার গাছগুলোতে পানি দিচ্ছে। প্রখর সূর্যের তাপে শুষ্ক আবহাওয়ায় টবে পানির ছিঁড়ে ফোঁটাও নেই৷ ভেজা নরম মাটি শক্ত মাটিতে পরিণত হয়েছে৷ পানির অভাবে গাছগুলো নেতিয়ে পড়েছে৷ মানসিক অশান্তির জন্য গাছগুলো প্রতি যত্ন নেওয়া হয়নি৷ তনু নিজেই নিজেকে বকা দিচ্ছে৷ ফোনের রিংটোনে তনুর কর্ণধারে পৌঁছাতেই তনু ফোন রিসিভ করে৷ ফোনের অপর প্রান্তের ব্যক্তিটি হলো তার বাবা৷ তনু তার বাবাকে সালাম দিয়ে বলে উঠল,
❝দয়া করে এসব কথা আমার সামতে তুলবে না৷ আমি হাঁপিয়ে গেছি৷ তোমাদের ভুলের জন্য আজ আমার এ অবস্থা৷ সেদিন তোমার কান্ড দেখে মনে হলো আবারও আমার সংসার ভাঙতে তুমি এক ধাপ এগিয়ে।❞
তনুর বাবা দীর্ঘ শ্বাস নিলেন৷ এতকিছু হওয়ার পরও নিজের ভুল দেখতেই পাচ্ছেন না৷ কোমল গলায় জবাব দিলেন,
❝এসব নিয়ে চিন্তা কর না তনু৷ ডিভোর্স হলে তুমি নিজের পরিচয়ে বাঁচবে। আমার মনে হচ্ছে এখানে ডিভোর্সটাই ঠিক হবে৷❞
বাবার এমন বেখেয়ালি কথা শুনে তনুর মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে গেল৷ কোথায় বাবা বিয়ে বাঁচানোর জন্য ভালো পরামর্শ দিবে বা মনের সাহস জোগাবে৷ সেখানে নিজের বাবা বিয়ে ভাঙার পরামর্শ দিচ্ছে৷ তনু রাগে ঘৃণায় ফোন রেখে দিল৷ নেত্রদ্বয় থেকে দুই ফোঁটা নোনা জল গড়িয়ে পড়ে৷ চোখের জল মুছে গাছে পানি দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে৷ ভাবতে থাকে নিজেকেই কিছু করতে হবে৷
________________________
সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না৷ দ্রুত গতিতে সময় বয়ে যাচ্ছে৷ তনু এশার সালাত আদায় করে ঋষির ঘরের দিকে পা বাড়াল৷ ঋষি মসজিদ থেকে একটু আগেই নামাজ পড়ে এসেছে৷ ফজরের নামাজ ঋষিকে দিয়ে হয়না৷ রীতিমতো যুদ্ধ হয়ে গেলেও ঘুম ভাঙে না৷ অফিসে কাজের চাপে তেমন পড়ে না৷ তবে মাগরিব এবং এশার নামাজ পড়া বাধ্যতামূলন৷ আসিফ চৌধুরী নিজের ছেলেকে নিয়ে মসজিদে নামাজ পড়তে যাবেন৷ তনু কপাটে এসে কড়া নেড়ে বলল,
❝ভিতরে আসতে পারি৷ আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিল৷ আপনি শুনতে না চাইলেও আমি আজ বলব৷❞
ঋষি চকিত দৃষ্টিতে তনুর দিকে তাকাল৷ তনুর হাতে ডিভোর্স পেপার দেখা যাচ্ছে৷ মনের গহীন কোণে তীব্র ব্যথা অনুভব করল৷ তনু ডিভোর্স দিবে না বলে অনেক কিছু করবে৷ এমন কিছুই তো করছে না৷ ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠেছে এক চিলতে হাসি৷ ঋষি ভয়ে ভয়ে জবাব দিল,
❝হুম! ভিতরে আসো৷ ডিভোর্স পেপারে সাইন করছো? সাইন করে থাকলে কালই উকিলের কাছে পাঠিয়ে দিব৷❞
তনু চকিত হয়ে বলল,
❝কিসের ডিভোর্স পেপার। আমি এখানে এসেছি দেনমোহরের টাকার হিসাব নিতে৷ দেনমোহরের টাকা পরিশোধ না করা অব্ধি আমাকে ডিভোর্স দিতে পারবেন না৷ সাথে আরও একটা খারাপ খবর আছে?❞
তনুর কথা ঋষির রাগ যেন আরও বেড়ে গেল৷ রাগী কন্ঠে বলল,
❝আমি জানতাম তুমি এই টাইপের মেয়ে৷ তোমার বাবা প্রথম ভালো মানুষ সাজার জন্য দেনমোহর ক্ষমা করে দিবেন৷ তারপর মেয়ে এসে কেওয়াজ সৃষ্টি করবে৷❞
তনু মুচকি হেসে বলল,
❝আপনি আমায় ভুল ভাবছেন৷ ইসলামে দেনমোহরের কথা ভালোভাবে বলা হয়েছে৷ দেনমোহর ক্ষমা করার আমি কে? আর দেনমোহর পূরণ না করলে আল্লাহ আপনাকে নয়৷ আমাকে শাস্তি দিবেন৷ আমি দুনিয়াতে জানা অজানা অনেক পা/প কাজ করেছি৷ এই পা/প কাজ করতে পারব না৷ আপনি আমায় ক্ষমা করে দিবেন৷❞
ঋষি রেগে তনুর বাহু চেপে ধরল। যেন তনুকে এখনই খু*ন করে ফেলবে৷ ঋষিকে রাগানোর জন্য তনু আরও বলল,
❝খু/ন করতে ইচ্ছে করছে৷ খু/ন করলে আপনার গায়ে কোন কালি লাগবে না৷ দ্বিতীয় বিয়ে করার সময় বলতে পারবেন প্রথম স্ত্রী মা/রা গেছে৷❞
ঋষি নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে৷ তনুর থেকে সদূরে দাঁড়িয়ে বলল,
❝তোমার দেনমোহরের টাকা সময় মতো পেয়ে যাবে৷ দেনমোহরের থেকে বেশি টাকাই তোমাকে দেখা হবে৷ এবার আমার চোখের সামনে থেকে আসো৷❞
❝আরও একটা খারাপ খবর আছে৷ সেই খবর না শুনেই চলে যাব৷❞
ঋষি রেগে বলল,
❝আমি একা থাকতে চাই৷ দয়া করে আমায় একা ছেড়ে দাও৷ তোমার কাছে হাত জোড় করছি এখন চলে যাও৷ আমি আর মেনে নিতে পারছি না।❞
❝অল্পতেই হাপিয়ে গেছেন। আরও অনেক কিছু বাকী আছে। ডিভোর্স পেপারে সাইন করার আগে আমার পারমিশন নিছেন৷❞
❝আমি কি করব না করব তোমার পারমিশন নিতে হবে৷ আমি তোমার সাথে এক ছাঁদের নিচে থাকতে চাইনা৷ সেজন্য ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিয়েছি৷❞
তনু ঋষিকে একটা কাগজ এগিয়ে দিয়ে বলল,
❝আমার গর্ভে আপনার সন্তান বড় হচ্ছে৷ এবরশনে মা, বাবা উভয়ের সম্মতি লাগে৷ সেজন্য আপনার সাইন লাগবে৷❞
তনুর কথায় ঋষির মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল৷ এমন পরিস্থিতিতে এসব কথা একদম আশা করেনি৷ ঋষি বাবা হতে চলছে আর সেই সন্তানকে খু/ন করতে হবে ডিভোর্সের জন্য৷ ঋষি বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে৷ তনু পুনরায় বলল,
❝আপনি যদি ডিভোর্স চান তাহলে এক বছর অপেক্ষা করতে হবে৷ আমি চাইনা একজন নিষ্পাপ শিশুকে হত্যা করতে৷ আপনার যদি বেশি তাড়া থাকে তাহলে হত্যা করতে বাধ্য হব৷❞
তনু এক মুহুর্ত দাঁড়াল না৷ নিজেকে অনেক কষ্টে সামলিয়ে রেখেছে৷ আর পারছে না নিজেকে সামলাতে। তনু দ্রুত গতিতে নিজের ঘরে চলে যায়৷ ঋষি ধপাস করে মাটিতে বসে পড়ল৷ না চাওয়া সত্ত্বেও চোখ থেকে দুই ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল৷
তনু নিজেকে আটকিয়ে রাখতে পারল না৷ বিছানার উপর শুয়ে অঝোরে কান্না শুরু করল৷ পূর্নিমার আলোয় আমাবস্যার রাত হানা দিয়েছে। তনু নিজের চোখের জল মুছে উদরে হাত রেখে বলল,
❝আমি তোর কোন ক্ষতি হতে দিব না৷ তোকে সকল বিপদ থেকে আগলে রাখব৷ তোর গায়ে কোন আঁচ লাগতে দিব না। তোর জন্য আমি গোটা পৃথিবীর সাথে যুদ্ধ করব। দরকার পড়লে দূরে কোথায় পাড়ি জমাব৷ তুই আমার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন।❞
_______________________________
জুম্মার নামাজের পড় সবাই একসাথে টেবিলে খাবার খেতে বসেছে৷ তনু সবাইকে নিজ হাতে যত্নসহকারে খাওয়াচ্ছে৷ ঋষি তনুকে উদ্দেশ্য করে বলল,
❝আমি নিজে নিজে নিয়ে খেয়ে নিব৷ তুমিও আমাদের সাথে খাবার খেতে বসে যাও৷❞
তনু আসিফ চৌধুরীর দিকে এক পলক তাকিয়ে বলল,
❝আমি পরে খেয়ে নিব৷ আপনি বরং খাবার খান৷ খাবারের সময় বেশি কথা বলতে হয়না৷❞
ঋষি চোখ রাঙিয়ে বলল,
❝এক কথা বার বার বলতে পছন্দ করি না৷ তুমি আমাদের সাথে এক টেবিলে বসে খাবে৷ এটাই আমার শেষ কথা৷❞
তনু দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাটিয়ে টেবিলে বসে নিজের প্লেটে অল্প পরিমাণ খাবার নিল৷ যেন ঋষি নতুন করে সবকিছু শুরু করতে চাইছে৷ ঋষি এক লোকমা খাবার মুখে দিয়ে বলল,
❝আমি তোমাদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলতে চাই৷ কিন্তু কিভাবে বলব? কোন জায়গা থেকে শুরু করব বুঝতে পারছি না৷❞
গুলবাহার তিক্ত গলায় বলে উঠলেন
❝হেয়ালি না করে সরাসরি বলে ফেলা উচিত৷ এখানে তোমার কথা শুনার জন্য সারাদিন বসে থাকব না৷❞
ঋষি তনুর মুখ পাণে এক পলক তাকিয়ে বলল,
❝আমি ডিভোর্স চাই। কিন্তু এখানে আমার আর তনুর জীবন নিয়ে নয়৷ আমাদের সাথে আরও একটি প্রাণ জড়িয়ে আছে৷ এখন আমাদের ডিভোর্স হলে আমাদের সাথে সাথে আমার অনাগত সন্তানের জীবন নষ্ট করতে পারব না৷ ডিভোর্স হবে তবে এক বছর পর৷ ততদিন তনুর দেখাশোনার সকল দায়িত্ব আমার৷❞
ঋষির কথা তনু মেনে নিতে পারল না৷ ভেবেছিল ঋষি তাদের সম্পর্কে সুন্দর একটা রুপ দিবে৷ যেখানল অতীতের কালো ছায়া হানা দিবে না৷ তনু এক গ্লাস পানি ঋষির মুখে ছুঁড়ে মা’রল৷ কান্না করতে করতে দ্রুত পায়ে নিজের রুমে চলে আসল৷ রুমে এসেই……
চলবে……