সম্পর্কের_মায়াজাল পর্ব ৮

#সম্পর্কের_মায়াজাল_২
#ফারজানা_আফরোজ
#পর্ব_৮

শুভ্রতা তখন মিসেস সাবিনা বেগমকে জড়িয়ে ধরে বলল……..

—” জব পেয়ে গেছি আমি তাও আবার তোমার ছেলের অফিসে। জানো, খুশিতে নাচতে ইচ্ছা করছে আমার।”

শুভ্রতার কথা শোনে স্পন্দন ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। শুভ্রতা স্পন্দনের চোখের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিলো। মিসেস সাবিনা বেগম শুভ্রতার কান ধরে টান দিয়ে বললেন…..

—” লজ্জা করে না। দেখছিস না শাশুড়ি মা দাঁড়িয়ে আছে।”

—” ওহহ সরি ভুলে গিয়েছিলাম তুমি যে আমার শাশুড়ি মা। এখন চলো মিষ্টি খাওয়া যাক।”

শুভ্রতা পা দ্রুত চলে ফ্রিজ থেকে মিষ্টি আনতে যাচ্ছে । মিসেস সাবিনা বেগম স্পন্দনের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলেন…..

—” শুভ্রতার জব তোর অফিসে হচ্ছে বললি না কেন?”

স্পন্দন তখন বলল…

—-” আমি নিজেই জানি না তোমাকে কিভাবে বলব।”

—” তোর অফিসে জব হচ্ছে আর তুই জানিস না। মজা করছিস নাকি?”

—” আমাকে দেখতে কি জোকার মনে হয় তোমার? যে আমি মজা করব।”

—” নাহ তা অবশ্য দেখা যায় না কিন্তু শুভ্রতার প্রেমে যেকোনো সময় হয়ে যেতে পারিস।”

মিসেস সাবিনা বেগম আর দাঁড়ালেন না পা চালিয়ে চলে গেলেন। স্পন্দন রাগে কষ্টে মাথার চুল ছিঁড়ছে। শুভ্রতার প্রেমে অন্ধ হয়ে মারাত্বক ভুল করেছে সে। এখন স্পন্দনের ঠোঁটে একটি গান বাজছে……

“পিরিতি কাঁঠালের আঠা লাগলে পরে ছাড়ে না।”

শুভ্রতার আসতে দেরি দেখে স্পন্দন নিজের রুমে চলে যায়। বিছানা বসে ভাবতে থাকে…..

—” আমার অফিসে এমপ্লয়ি নিচ্ছে আর আমি জানি না কিভাবে সম্ভব? আচ্ছা এইটা শুভ্রতার কোনো প্ল্যান না তো? কি চাচ্ছে ও !”

শুভ্রতা রুমে ঢুকে স্পন্দনকে বসে থাকতে দেখে মিষ্টির প্লেট এগিয়ে দিয়ে স্পন্দনের পাশে বসে বলল……

—” কি ভাবছেন?”

—” ভাবছি দিনদিন মিথ্যাবাদী হয়ে যাচ্ছিস তুই। আগের সেই শুভ্রতা আর আজকের শুভ্রতার মাঝে আকাশ জমিন ফারাক।”

শুভ্রতা মাথা নিচু করে চুপ করে রইলো। স্পন্দন একটা আস্ত মিষ্টি মুখে পুরে বলল…..

—” কোথায় গিয়েছিলি তুই?”

—” ছয় মাসের ভিতর আমার ডিভোর্স চাই সেই জন্য উকিলের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম।”

স্পন্দন শুভ্রতার কথা শোনে আর কথা না বলে মিষ্টির প্লেট বিছানার উপর রেখে রুম থেকে বের হয়ে পড়ল। শুভ্রতা চুপচাপ খাটে বসে রইল……..………….

____________________________

সন্ধ্যার মন আজ কিছুতেই ভালো নেই। সমুদ্র বার বার ফোন দিচ্ছে কিন্তু তার ফোন ধরতে মোটেও ইচ্ছা করছে না। হটাৎ কোনো কারণ ছাড়াই সন্ধ্যার ব্রেকআপ করতে ইচ্ছা করছে কিন্তু কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে সে সমুদ্রকে কিছু বলতে পারছে না।

সন্ধ্যা একবার ফোনের দিকে তাকিয়ে বিরক্তি নিয়ে বলল…..

—” আজকাল ফোন, টিভি, ঘুরতে যাওয়া, পড়ালেখা করা, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া কোনো কিছুই কেন ভালো লাগে না? এইগুলোর পিছনে কারণটা কি? আচ্ছা কারণটা কি আমি জানি? হ্যাঁ জানি আমি। কারণ হলো আমার কয়েকটা দিন একলা থাকতে হবে ভীষণ একলা। নিজের সাথে কিছুটা দিন সময় কাটানো দরকার আমার। মাঝে মাঝে লোক সমাজের ভিড় থেকে একা থাকা ইম্পর্টেন্ট হয়ে দাঁড়ায়। একাতিত্ব মাঝে মাঝে মনকে প্রফুল্ল করে। ”

ফোনটা আবারো বেজে উঠলো। কণ্ঠস্বর স্বাভাবিক রেখে সন্ধ্যা বলল…..

—” বলো?”

—” ফোন ধরছিলে না কেন?”

—” আমার কয়েকটা দিন একা থাকা জরুরি। হটাৎ কেন যেন আমার কিছুই ভালো লাগছে না। কেন ভালো লাগছে না তার কারণ আমার অজানা। নিজেকে একা রেখে নিজের সাথে আলাদা সবটুকু সময় কাটানো দরকার। একা থাকতে থাকতে যখন আমার সবাইকে দরকার মনে হবে, আগের মত স্বাভাবিক হতে পারবো তখন কি আমরা কথা বলতে পারি না? কয়েকদিন কি আমাকে একদম একা থাকতে সাহায্য করবে?”

ফোনের ওপাশ থেকে নিরব হয়ে শুনছিল সমুদ্র। জোরে শ্বাস নিয়ে বলল….

—” ওকে । যখনই আমাকে তোমার দরকার পড়বে সাথে সাথে ফোন দিবে। তোমার জন্য অপেক্ষায় থাকবো আমি।”

সন্ধ্যা ফোন কেটে দিয়ে বসে আছে আর মনে মনে কথা বলছে। মনে মনে বকবক করছে নানান স্বপ্ন দেখছে আর মিটমিট করে হাসছে।

_______________________________

শুভ্রতা ঘুম থেকে উঠে আজ ভীষণ ধরনের অবাক হলো। বিছানার এক পাশে এক বক্স চকোলেট সাথে একটি লাল টকটকে গোলাপ। নীল চিরকুট দেখে শুভ্রতা চিরকুট হাতে নিয়ে দেখলো……

—” শুধু তোমার জন্য, প্রিয়।”

শুভ্রতা ভেবেছে চকোলেটের বক্স, গোলাপ ও চিরকুট স্পন্দন রেখে গিয়েছে। বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে এসে একটার পর একটা চকলেট চিবুচ্ছে আর বলছে…..

—” আজকের জন্য স্পন্দন নামক ঝামেলাটাকে বদ দোয়া দিবো না। শুধু এইটুকু বলবো আল্লাহ তায়ালা যেন তাকে খুব ধৈর্য দিয়ে থাকে। ধৈর্য শেষ হয়ে গেলে আমার আবার প্রতিদিন মার খেতে হবে। এই লোকটার তো হাত খুব বেশি চলে। কিন্তু অবাক করার বিষয় বিয়ের পর এখনও সে আমার গায়ে হাত তুলেনি। ভদ্র কবে থেকে হলো কে জানে?”

বক্সের অর্ধেক প্রায় শেষ হওয়ার পথে তখন স্পন্দন রুমে ঢুকে । চোখ দুটি ছোট ছোট করে শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে বলল…..

—” কে পাঠিয়েছে তোকে এই চকোলেট?”

—” মজা করছেন কেন? নিজে পাঠিয়ে আবার ভাব নিচ্ছে। ঢং।”

—” আমি কোন দুঃখে তোকে এইগুলো দিতে যাবো আমার কি টাকায় কামড় দিয়েছে নাকি?”

শুভ্রতা মুখ তুলে স্পন্দনের দিকে তাকিয়ে বলল…..

—” আপনি আনেন নি এই চকোলেট?”

—” উহু। বাসার বাহিরে কে যেন রেখে গিয়েছে সেই জন্যই তো খুঁজতে গিয়েছিলাম কে পাঠিয়েছে, এসে দেখি তুই খেতে শুরু করে দিয়েছিস। শালী পেটুক।”

—” ওই খবরদার পেটুক বলবে না। বজ্জাত, ফাজিল, ছাগলের তিন নম্বর আমদানি করা ছাগল। ”

—” আমি ছাগল তাই না?”

শুভ্রতার দিকে তেড়ে আসছে স্পন্দন। শুভ্রতা খাটে বসা ছিল। বসে বসে পিছিয়ে একদম খাটের মাথায় আটকে গেল। স্পন্দন শুভ্রতার কাছে গিয়ে শুভ্রতার নাক ধরে টান দিয়ে মুখে লেগে থাকা চকোলেট গালে লাগিয়ে দিয়ে হেসে দিল। শুভ্রতা রাগ দেখিয়ে বলল…..

—” শুধু শুধু আমি এতক্ষণ এই ফাজিল ছেলের জন্য ভালো দোয়া করছিলাম। এই ছেলে তো জীবনেও ভালো হবে না।”

—” আমি ভালো হতে চাই না মিসেস। আর আপনি কি জানেন আপনার জন্য একটি সুখবর আছে?”

—” কিহ্হ?”

—” গতকাল রাতে আপনার জন্য একটি জব খুঁজে বের করেছি। এখন থেকে আপনি আমার অফিসে কাজ করবেন। খুব শখ তাই না আমার অফিসে জব করা। আপনার শখ পূরণ করে দিলাম।”

স্পন্দন মুখে ডেবিল মার্কা হাসি দিয়ে চলে গেল। শুভ্রতা মুখ বড় করে হা করে স্পন্দনের কথা শুনছিল। শুভ্রতার কাজ করতে একদম ভালো না। ওর ইচ্ছা ছিল তাড়াতাড়ি বিয়ে করে সংসার করবে আর বছরে বছরে ক্রিকেট টিম বানানোর প্ল্যান করবে কিন্তু শুধু মাত্র এই স্পন্দনের জন্য ওর এত পড়তে হয়েছে। এখন আবার তাকে দিয়ে জবও করাবে। রাগে কষ্টে শুভ্রতা কপালে হাত দিয়ে বলল…..

—” একেই বলে সুখে থাকতে ভুতে কিলাই। কেন যে গতকাল ইয়া বড় মিথ্যা কথাটা বললাম। এই মিথ্যা কতবার জন্য আজ ফেঁসে গেলাম।”

_________________________

সাধনা আজ মাঠে বসে বসে মুগ্ধের দিকে তাকিয়ে আছে। মুগ্ধের গালে দুইটা ব্রণ দেখা যাচ্ছে আজ সেই ব্রণের দিকে নজর সাধনার। সাধনার কাছে আজ মুগ্ধকে অন্য রকম ভালো লাগছে। সাধনার দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ বসা থেকে উঠে সাধনার পাশে এসে বসল। সাধনা নিজেকে সামলে নিয়ে অন্য দিকে ঘুরে তাকালো। মুগ্ধ তখন ঠোঁট কামড় দিয়ে হেসে ফিসফিস করে বলল……

—” তোমার নজর লেগেছে আমার উপরে এই জন্য গালে আমার ব্রণ হয়েছে এখন বলো কিভাবে এই নজর দূর করা যায়?”

সাধনা মনে মনে বলল……

—” কোনোদিন এই নজর যাবে না। কিন্তু তুমি তো আস্ত একটা বলদ। আমার মনের কথা কিভাবে বুঝবে তুমি? সারাদিন তো আছো গোমড়া মুখো হয়ে।”

সাধনার মনের কথায় ছেদ ঘটিয়ে মুগ্ধ বলল….

—‘ ভালোবাসো আমায়?”

ভালোবাসা নামক শব্দটি মুগ্ধের মুখে শোনে অবাক নয়নে তাকিয়ে রইলো সাধনা। কেন মনে হচ্ছে ভুল কিছু শুনছে সে।

—” এইভাবে আর তাকিয়েও না তাহলে আমার মুখে আরো ব্রণ হবে। তোমার নজর তো আর যে সে নজর না।”

সাধনা অভিমানী মুখ নিয়ে অন্য দিকে তাকালো। মুগ্ধ তার হাতটা সাধনার মুখের কাছে নিয়ে গিয়ে বলল…..

—” আমি খুব ইনোসেন্ট একজন ছেলে। কারো কষ্ট দেখলে সহ্য করতে পারি না। তাই কেউ মনে মনে ভালোবাসলে তার ভালোবাসাকে দূরে ঠেলে দিতে পারি না। এখন কি করা উচিৎ আমার?”

চলবে………

বানান ভুল ক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটা লিখেছি রাত দুইটায় তাও আবার বাঁশির সুর শোনে। আমাদের বাড়ির পিছনে কে যেন রাতে বাঁশি বাজাচ্ছিল এত্ত ভালো লেগেছে যে কি বলব। 😍😍😍😍😍

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here