সাইকো_লাভার পর্বঃ২৪
#লেখিকাঃসাদিয়া_সিদ্দিক_মিম
আমরা হাঁটতে হাঁটতে মেইন রাস্তায় এসে পৌঁছেছি,,,তখনই আমাদের চোখ যায় আমাদের থেকে কিছুটা দূরে সেখানে অনেক লোকের ভিড় জমে আছে।
দিয়াঃ ওখানে এত ভিড় কেন?কোন ঝামেলা হল নাকি।
আদিঃ চলো ত সামনে গিয়ে দেখি।
বলেই আদি আর রায়ান ভাইয়া সেদিকে এগিয়ে যাচ্ছে আমি আর চাচ্চুও ওদের পিছন পিছন যাচ্ছি।সেখানে গিয়ে যা দেখি তাতে শরীর শিউরে উঠে,,,এখানে একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে,,,একটা বড় ট্রাকের সাথে রিক্সার বাজে ভাবে ধাক্কা লাগে আর তাতে থাকা একজন প্যাসেনজার সেখানেই মারা গেছে আর লোকটার কী অবস্থা হয়েছে,,,শরীরের কিছু অংশ শরীরের সাথে নেই,,,খোদা কী নির্মমভাবে মৃত্যু দিলে,,,আর তার থেকে কিছুটা দূরে রিক্সা চালক আহত অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছে অথচ কেউ তাকে সাহায্য করছে না,,,আশেপাশে তাকিয়ে দেখি কেউ ফোনে ভিডিও করছে কেউ দাঁড়িয়ে নিরবে সবটা দেখছে সেটা দেখে আমার প্রচন্ড রাগ হতে লাগল।
দিয়াঃ আদি উনাদের হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে তাড়াতাড়ি কিছু করো।
কথাটা বলেই আমি রিক্সা চালকের কাছে যাই আর রায়ান ভাইয়া আর আদি গাড়ি নিতে সামনে গেছে।রিক্সা চালকের অবস্থাও বেশি ভালো না,,,খুব বাজে ভাবে এক্সিডেন্ট হয়েছে,,,রিক্সা ওয়ালার পেটে অনেকটা কেটে গেছে গামছা দিয়ে রক্ত আটকাবার চেষ্টা করছে,,,অথচ এই পাসান লোকগুলোর বিবেকে একটু নাড়া দিল না,,,ছি ঘৃনা হচ্ছে এসব মানুষের প্রতি।
দিয়াঃ এখানে কী সিনেমা হচ্ছে হে,,,যে আপনারা এভাবে দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুটিং দেখতাছেন,,,আপনাদের বিবেক বলতে কী কিছু নেই,,,এখানে এত বড় একটা এক্সিডেন্ট হল অথচ আপনারা এখানে দাড়িয়ে থেকে রং তামাশা দেখতাছেন ফোনে ভিডিও করতাছেন অথচ তাদের সাহায্য করছেন না,,,আপনারা মানুষের কাতারেই পড়েন না,,,”মানুষ মানুষের জন্য”কথাটা মিথ্যা তা আজ প্রমান পেলাম,,,ঘৃনা হচ্ছে এই মানুষ জাতীর প্রতি,,,আজ ওদের এ অবস্থা,,,কাল আপনার সাথে যে এমন হবে না সেটা কে বলতে পারে,,,আজ ওদের জায়গায় আপনার কোন আত্মীয় কিংবা আপনিও থাকতে পারতেন তখন কী এভাবে হাত পা ঘুটিয়ে বসে থাকতে পারতেন,,,চলে যান এখান থেকে।(রেগে চিৎকার করে)
আমার কথা শুনে অরা মাথা নিচু করে ফেলে।
চাচ্চুঃ দিয়া চুপ কর,,,মানুষকে সাহায্য করার জন্য আগে সুন্দর একটা মন থাকতে হয় যেটা এখানে কারোর নেই।
আদিঃ দিয়া তুমি শান্ত হও গাড়ি নিয়ে এসেছি ওদের হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে।
রায়ানঃ দিয়া এদের কিছু বলে লাভ নেই তাড়াতাড়ি উঠো ওদের হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে।
অতঃপর আমি আর কিছু না বলে উঠে দাঁড়াই আর রায়ান ভাইয়া,আদি আর চাচ্চু মিলে ওদের গাড়িতে উঠাচ্ছিল তখন কয়েকজন এসে ওদের গাড়িতে উঠাতে সাহায্য করে,,,তখন ইচ্ছে করছিল এদের প্রতেক কে ঠাস ঠাস করে কয়টা থাপ্পড় বসিয়ে দিতে।এতক্ষণ অরা এভাবে পড়ে ছিল তখন কেউ আসে নি সাহায্য করতে আর এখন আসছে মানবতা দেখাতে।কিন্তু আমি আর কিছু না বলে ওদের নিয়ে হসপিটালে চলে আসি।
হসপিটালে ওদের ভর্তি করে দিয়ে আমি,চাচ্চু আর আদি বাড়িতে চলে আসি,,,রায়ান ভাইয়া ওখানেই রয়ে গেছে,,,ওখানে রায়ান ভাইয়ার কিছু কাজ আছে।
(আমাদের দেশে এরকম অনেক এক্সিডেন্ট হয়,,,অনেকে বাজে ভাবে আহত হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকে কেউ সাহায্য করতে আসে কেউ আসে না,,,আমার আব্বু প্রায়ই বলে এখানে সেখানে এক্সিডেন্ট হয়ে কেউ মারা গেছে কেউ আহত অবস্থায় পড়ে আছে অথচ কেউ তাদের সাহায্য করে না,,,পুলিশ আসলে পুলিশরা তাদের সাহায্য করে,,,অথচ আশেপাশে এত লোক থাকা স্বত্বেও কেউ ফোনে ভিডিও করে কেউ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে,,,সাহায্যের জন্য কেউ এগিয়ে যায় না,,,আমি সেটাই আমার গল্পে তুলে ধরেছি,,,জানি না কতটা পেরেছি,,,যাই হোক গল্পে ফিরে যাই আমরা)
বাড়িতে ফিরতে ফিরতে বেশ রাত হয়ে যায় বাড়িতে এসে অবাক হয়ে যাই আমি,,,পুরো বাড়ি ফুল আর লাইট দিয়ে সাজানো মনে হচ্ছে কোন অনুষ্ঠান আছে বাড়িতে।কিন্তু বাড়িতে কীসের অনুষ্ঠান কিছুই ত বুঝতে পারছি না।
আদিঃ এই যে ভয়ংকরী রানী ভিতরে চলো একটা সারপ্রাইজ আছে।
দিয়াঃ সারপ্রাইজ!
আদিঃ হে সারপ্রাইজ এবার ভিতরে চলো।
বলেই আদি আমাকে টেনে ভিতরে নিয়ে যাচ্ছে,,,ভিতরে এসে দেখি আমার বড় মামু ফয়সাল মির্জা এসেছে।বড় মামুকে দেখে আমি দৌড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরি।
বড় মামুঃ আমার মা টা কেমন আছে?
দিয়াঃ খুব খুব খুব ভালো মামু,,,এতদিন পর তোমার আসতে ইচ্ছে হল বুঝি।
শ্বাশুরি আম্মুঃ আমরাও আছি কিন্তু।
আমি এবার আরো অবাক হয়ে যাই,,,আমার শ্বশুর,শ্বাশুড়ি,মিনহা সবাই এসেছে।আমি গিয়ে আমার শ্বশুর আর শ্বাশুড়ি আম্মুকে সালাম করি।শ্বাশুড়ি আম্নু আমার কপালে চুমু দিয়ে বলে উঠলেন।
আদির মাঃ আমাকে ত ভুলেই গেছো,,,সেই যে এলে আর ত গেলো না আমার সাথে দেখা করতে।
দিয়াঃ সরি আম্মু।আর এমন হবে না,,,এবার থেকে সপ্তাহে দুইদিন তোমার সাথে দেখা করে আসব।
আদিঃ সেটা আর করতে হবে না কারন তোমাকে পার্মানেন্টলি নিয়ে যাওয়ার ব্যাবস্থা করা হয়েছে।
দিয়াঃ মানে?
বড় মামুঃ মানে হল পরসু তোমার আর আদির আবার বিয়ে সেটাও ধুমধামে।
বড় মামুর কথা শুনে আমি অবাকের সপ্তম পর্যায়ে পৌঁছে যাই,,,কী বলছে এসব,,,আবার বিয়ে।
দিয়াঃ মামু এসব কী বলছো?আগে ত বলেছিলে আমার পরীক্ষার পর।
আদিঃ হে সেটা বলা হয়েছিল কিন্তু এখন বলা হচ্ছে যে তুমি আমাদের বাড়িতে থেকেই পরীক্ষা দিবে।
দিয়াঃ কিন্তু,,,,
দিয়ার বাবাঃ কোন কিন্তু নয়,,,যেটা অরা বলছে সেটাই হবে।আর ভাই সাহেব আপনারা এখন ভিতরে গিয়ে রেস্ট করুন।
আদির বাবাঃ না ভাই আমরা আজ থাকব না,অনেক কাজ বাকি আছে সেটা গিয়ে করি তারপর না হয় এসে থাকব।
দিয়ার চাচ্চুঃ আচ্ছা ঠিক আছে কিন্তু আদি আজ আমাদের এখানে থাকুক।
আদি ত এ কথা শুনে খুশিতে গদগদ।
আদির মাঃ না ভাই আদিও আমাদের সাথে যাবে,,,একেবারে বিয়ের পর এসেই থাকবে না হয়।
আদির মায়ের কথা শুনে আদির মনটা অটোমেটিক খারাপ হয়ে যায়,,,কিন্তু পরক্ষণেই কিছু একটা ভেবে বলে উঠে,,,
আদিঃ আচ্ছা তোমরা যাও আমি আসছি,,,দিয়া চলো তোমার সাথে কথা আছে।
বলেই আদি সবার সামনে থেকে আমাকে টেনে নিয়ে আসে।আমার রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দেয় আদি,,,আর আমার গালে হাত রেখে বলল,,,
আদিঃ দিয়া তুমি কী চাও না আমরা একসাথে থাকি।
দিয়াঃ না আদি আমি সেটা কেন চাইব না,,,আমি ত তোমার সাথেই থাকতে চাই।
আদিঃ তোমার কোন আপত্তি নেই ত ২য় বার বিয়ে করতে।
দিয়াঃ আরে না বাবা আমার আপত্তি নেই,,,কিন্তু হঠাৎ করে এসব কেন?সেটাই বুঝতে পারছি না।
আদিঃ আমি বলেছি করতে,,,আমি আগেই বাড়িতে ফোন করে জানিয়েছি যাতে আমাদের আবার বিয়ের ব্যাবস্থা করে,,,আমি আর তোমার থেকে দূরে থাকতে পারব না তাই এই ব্যাবস্থা।
দিয়াঃ এতকিছু করে ফেলেছো আর আমাকে কিছু জানালে না কেন?
আদিঃ সারপ্রাইজ।
বলেই আদি হেঁসে উঠল,,,পরক্ষণেই হাসি থামিয়ে বলে উঠল,,
আদিঃ দিয়া বাড়িতে এখন আর কিছু বলার দরকার নেই,,,যা হওয়ার তা হয়ে গেছে কাউকে কিছু বলতে হবে না,,,এখন এসব জানলে সবাই উত্তেজিত হয়ে পড়বে তখন আমাদের বিয়েতে কেউ মজা করতে পারবে না ত আগে বিয়েটা হোক তারপর জানাব বাড়িতে কেমন।
দিয়াঃ আচ্ছা ঠিক আছে,,,এবার যাও সবাই কী ভাব্বে বলো ত।
আদিঃ যেতে ত মন চাইছে না কিন্তু যেতে ত হবেই।কিন্তু আগে একটু বউটাকে আদর করে নেই।
দিয়াঃ একদম না,,,যাও এখন।
আদিঃ না একটু আদর ত করবই।
বলেই আদি আমার ঠোঁটে হালকা ঠোঁট ছোঁয়াল,,,আর ঝড়ের গতিতে দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো।আমি সেটা দেখে হেসে বলে উঠি,,,”পাগল একটা”।
#চলবে…