সুঁই সুতোর আসক্তি পর্ব -০৮

#সুঁই_সুতোর_আসক্তি
#পর্বঃ০৮
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

(রি-চেক করা হয়নি।তাই ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।)

বমি করে কায়াসার শরীর খুব দুর্বল লাগছে।সে ওয়াশরুম থেকে এসে ধপ করে বিছানায় শুয়ে পড়ে।হঠাৎ কি মনে যেন কায়াসা বিছানা থেকে উঠে আর ধুপধাপ পা পেলে ড্রয়ংরুমে আসে।নিচে পড়ে থাকা চিঠিটা তুলে নিয়ে কায়াসা রান্নাঘরে চলে যায় তারপর সেটা আগুন লাগিয়ে দেয়।

” আ…….এ কোন পাগল আমার পেছনে পড়লো আল্লাহ?তুমি আমাকে কোন বিপদে ফেললে?এই নতুন বাসায় এসে শুরু হয়েছে যত জ্বালা।প্রথমে ওই আদ্রিক আর এখন এই সুতো না কি যেন ও।আদ্রিক তাও ঠিক আছে কিন্তু উনি।উনি তো মানুষ খুন করে তার থেকেও বড় কথা উনি একটা পাগল,সাইকো।তা না হলে কি কেউ মানুষের রক্ত আর তার নক দিয়ে চিঠি লিখতে পারে?হে আল্লাহ তুমি আমাকে এই পাগলের হাত থেকে রক্ষা করো।”

এদিকে টিভির স্ক্রিনে কায়াসা কাজগুলো দেখছে আর তার কথা শুনছে এশান।সে কায়াসা কথা শুনে জোরে জোরে হাসতে থাকে।

” সুঁই জান তুমি যখন আমার নজরে পড়েছো তোমাকে আমার থেকে কেউ বাঁচাতে পারবেনা।তুমি তো শুধু আমারই।সুঁই তুমি যে এই সুতোর আসক্তিতে পরিণত হয়েছো।এটা যে সহজে ছাড়া যায় না।হ্যাঁ আমি পাগল,সাইকো কিন্তু শুধু তোমার জন্য।হাহাহা……”

মাঝে কেটে যায় আরো কিছুদিন।আজ থেকে কায়াসার মেডিকেল কলেজের ক্লাস শুরু।কায়াসা বাড়ির কাজ শেষ করে তাড়াতাড়ি কলেজের জন্য বেরিয়ে পড়ে।

নিজের স্বপ্নের মেডিকেল কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে আছে কায়াসা।সে মুগ্ধ চোখে বাইরে থেকে কলেজটা দেখছে আর মন ভরে একটা নিশ্বাস নেয়।তার স্বপ্ন ছিল এই কলেজে পড়ার আজ সে সেটা বাস্তবে পরিণত করতে পেরেছে ভাবতেই কায়াসার মনে একটা প্রশান্তি বসে যায়।কায়াসা আস্তে আস্তে গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে।

কায়াসা চারিদিকে দেখতে দেখতে ভিতরে ঢুকছে হঠাৎ কোথা থেকে যেন পানি এসে পড়ে কায়াসার মাথায়।আচমকা এরকম কিছু হওয়াতে কায়াসা পুরো থ।তার মুখ,হিজাব আর জামার কিছুটা অংশ ভিজে গিয়েছে।কায়াসা কাঁদো কাঁদো মুখ করে আশেপাশে তাকাই।তখন কয়েকটা মেয়ে তার কাছে ছুটে আসে।

” আপু সরি সরি আসলে ও বুঝতে পারেনি।” একটা মেয়ে বলে।

” হ্যাঁ আমি আই এম রিয়েলি সরি।আসলে আমি ওদের মারতে গিয়ে ভুলে তোমাকে মেরে দিয়েছি।” আরেকটা মেয়ে বলে।

” হ্যাঁ বোন প্লিজ তুমি রাগ করোনা।আমাদের ভুল হয়ে গিয়েছে।” আরেকটা মেয়ে এসে বলে।

তখন কোথা থেকে একটা অতি স্টাইলিশ মেয়ে আসে।সে বিরক্তকর মুখ করে সবার দিকে তাকাই।

” এই তোরা এতো সরি সরি করছিস কেন?সামান্য পানিই তো পড়েছে।এতে এতো সরি বলার কি আছে?”

” এই তুই চুপ করতো।” প্রথম মেয়েটা বলে। “প্লিজ আপু তুমি রাগ করোনা।”

” না না আপু সমস্যা নেই।আমি ঠিক আছি।”

” তুমি কি নতুন এসেছো?”

” জ্বি আপু।”

” আচ্ছা তুমি তোমার ক্লাসে যাও।কোন সমস্যা হলে আমাদের বলো।আমার থার্ড ইয়ারে পড়ি।” সে মেয়েটা ভুল করে পানি মেরেছে সে বলে।

” আচ্ছা ভাই আপুরা।আমি আসছি,আল্লাহ হাফেজ।”

” আল্লাহ হাফেজ।” সবাই বলে।

” হুম…..যতসব ঢং।” বিরবির করে বলে সেই মেয়েটা।কায়াসা চলে যেতেই মেয়েটা তার বন্ধুদের বলে, ” এই তোদের ওই গাইয়া মেয়েটার কাছে এতো সরি বলতে কেন হয়েছে?”

” তুই চুপ কর জেমি।আমাদের ভুল ছিল তাই আমরা বলেছি।এসব তুই বুঝবিনা।এই চল তোরা।” প্রথম মেয়েটা বলে।

” এই গাইয়া,আনকালচার মেয়েটার জন্য আমার ফ্রেন্ডের থেকে আমার কথা শুনতে হয়েছে।না এই মেয়েটা তো কিছু একটা করতেই হবে।মেয়ে তুমি আমার সাথে লেগে খুব বড় ভুল করেছো।এখন থেকে আমি তোমার জীবন অতিষ্ঠ করে তুলবো।” নিজে নিজে বলে জেমি।

অন্যদিকে,

ওয়াশরুমে গিয়ে বিরক্তি নিয়ে হিজাব খুলছে কায়াসা।হিজাব খুলে সে একটা দীর্ঘশ্বাস নেই।সে সবসময় তার সাথে এক্সটা একটা হিজাবের কাপড় রাখে তাই আজ সে বেঁচে গেলো কিন্তু তার জামাটা অনেকখানি ভিজে গিয়েছে।এখন কায়াসা কি করবে তাই ভাবছে।

” আরে তোমার জামা দেখি অনেকখানি ভিজে গিয়েছে।কি হয়েছে?পড়ে গিয়েছো নাকি?”

কায়াসা পাশে ফিরে দেখে একটা মেয়ে তারপাশে দাঁড়িয়ে আছে।

” না আপু পড়ে যাইনি।আসলে এক্সিডেন্টলি পানি পড়েছে গায়ে।”

” ও আচ্ছা।কিন্তু এভাবে তুমি ক্লাসে গেলেতো সবাই হাসাহাসি করবে।এই নাও তুমি বরং আমার এই ওড়নাটা গায়ে জড়িয়ে নাই।”

” না না আপু তার দরকার নেই।”

” আরে নাও তো।”

মেয়েটা জোর করে ওড়নাটা কায়াসা দিয়ে দেয়।কায়াসাও আর কথা না বাড়িয়ে ওড়নাটা নিয়ে নেয় আর গায়ে জরিয়ে নেয়।

” তুমি কি নতুন এসেছো?”

” জ্বি আপু আজই প্রথম।”

” ও….তার মানে তুমিও ফার্স্ট ইয়ার।ওয়াও গ্রেট।আমিও ফার্স্ট ইয়ার।চলো একসাথে ক্লাসে যায়।”

” আচ্ছা আপু চলুন।”

” কিসের আপু হ্যাঁ?আমি তোমার সমবয়সী।তাই নাম ধরে ডাকবে।আমার নাম আরোহী ইসলাম।তোমার?”

” নিশাত জাহাত কায়াসা।”

” বাহ্ তোমার নামটাতো খুব সুন্দর।আচ্ছা চলো ক্লাসে নয়তো আবার দেরি হয়ে যাবে।”

কায়াসা আর আরোহী কথা বলতে বলতে ক্লাসে চলে আসে আর একসাথে বসে।অনেক্ষণ কথা বলার পর তারা দুজন অনেকটা ফ্রী হয়ে যায়।হঠাৎ পেছন থেকে কেউ এসে কায়াসার পিঠে জোরে একটা থাপ্পড় দেয়।কায়াসা বুঝতে পেরে যায় এটা কে।

” ইতরের বাচ্চা ইতর।তুই আবার আমার পিঠে মারছি।” রেগে বলে কায়াসা।

” তো না মেরে তোরে কি আদর করবো?বেয়াদি মাইয়া তোরে আমি কতবার ফোন দিয়েছি তার খবর আছে?খবর থাকবে কেমর করে মহারাণী তো গল্প করতে ব্যস্ত।দেখি সর বসতে দে।”

কায়াসা ফোন বের করে দেখে আসলে ইতি তাকে ৫/৬ বার ফোন দিয়ে ফেলেছে।কায়াসা ইতির দিকে বোকা বোকা হাসি দিয়ে তাকাই।

” একদম হাসবিনা।”

” প্লিজ বইন রাগ করিসনা।সরি আমি আসলে খেয়াল করিনি।পরের বার আর এরকম হবেনা।”

” যা সর।”

” আচ্ছা ও কে?” আরোহী বলে।

” ও আচ্ছা ইতর না মানে ইতি।তুই আসার আগে আমার একমাত্র ফ্রেন্ড ছিল।”

” হ্যালো ইতর সরি ইতি।আমি হচ্ছি আরোহী।”

” হ্যালো তবে ইতর বললে না তোন পিঠেও কায়ু মতো পড়বে।”

” আচ্ছা বাবা বলবোনা।”

ক্লাস শেষ হলে আরোহী,ইতি আর কায়াসা সবার শেষে নামে।কথা বলতে বলতে তারা তিনজন নামতে থাকে তবে কারো সাথে ধাক্কা লেগে কায়াসা পড়ে যায়।

” ওপস…..সরি।টেক কেয়ার।বাই।” কথা বলে হাসতে হাসতে জেমি চলে যায়।এদিকে কায়াসা পা ধরে নিচে বসে আছে।

” কায়ু কি খুব ব্যথা পেয়েছিস কি?” ইতি বলে।

” না তেমন একটা না।”

” ইতু কায়ুকে ধর।ও মনে হয় নিজে হাঁটতে পারবেনা।”

” আরে না আমি পরবো।”

” চুপ কর।আরু ধর।”

ইতি আর আরোহী কায়াসা ধরে রিক্সায় তুলে দেয়।বাসার সামনে নেমে কায়াসা অনেক কষ্টে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে।কায়াসার ফ্ল্যাট দোতাল হওয়াতে খুব একটা কষ্ট তাকে করতে হয়নি।কায়াসা ব্যাগটা সোফায় রেখে খুড়িয়ে রান্নাঘরে যায় আর চুলায় ভাতের পাত্রটা বসিয়ে দেয়।

এদিকে কায়াসাকে খোঁড়াতে দেখে এশান ঘাবড়ে যায়।তার অবস্থা তো পাগল প্রায়।

” কুনাল,কুনাল।” চিৎকার করে ডাকে এশান।এশানের চিৎকার শুনে একটা ছেলে দৌড়ে আসে।

” স্যার ডেকেছেন?”

” ডেকেছি বলেই তো তুমি এসেছো,তাইনা?”

” জ্বি স্যার বলুন আমি আপনার জন্য কি করতে পারি?” মাথানিচু করে বলে কুনাল।

” আমার আধাঘন্টার মধ্যে খবর চাই কায়াসা কেন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে।কলেজে কি হয়েছে।”

” ওকে স্যার।”

” মনে রাখবে তোমার কাছে কিন্তু জাস্ট আধাঘন্টা সময় আছে।”

” ওকে স্যার।”

” এবার আমার চেহারার দিকে না দেখে যে কাজটা দিয়েছি সেটা করো।”

” ওকে স্যার।” কুনাল তাড়াতাড়ি করে চলে যায় আর এশান টিভিতে কায়াসাকে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে।

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here