#সুখপাখির_খোঁজে💔
#লেখনিতে_সুমাইয়া_ইসলাম_মিম
#পর্ব_১
.
“আমার যত ভালোবাসা তোমায় দিয়েছি চোখ বুজে,
তবু তোমার শত অবহেলায়ও বেরিয়েছি সুখপাখির খোঁজে!!”
-সুমাইয়া ইসলাম মিম
.
বিয়ের পর থেকে আজ পর্যন্ত কখনোই ইয়াসিন তার বউ নাদিরাকে স্পর্শ তো দূরে থাক, ভালোভাবে কথাও বলতে চায় না। তাদের বিয়ের পাঁচমাস চলছে। পরিবারের সবার সামনে এক পার্ফেক্ট কাপল হয়ে থাকলেও চার দেয়ালের ভিতরের কথা কেউ জানে না। ইয়াসিন আর নাদিরার বিয়ে হয়েছে পরিবারে সবার সম্মতিতেই। কিন্তু পোড়া কপালি নাদিরা সবসময়ের জন্য এবারও ভালোবাসার কাছে হেরে গেলো। ইয়াসিন তাকে প্রথম থেকেই এভোয়েড করতো। প্রথম প্রথম নাদিরা ভাবতো হয়তো ইয়াসিনের আরও সময়ের দরকার। তাই সেও সামনে আগায় নি। কিন্তু নাদিরা যে ভালোবাসার বড্ড কাঙাল! সে তার দিক থেকে কর্তব্য পালনে কোন ত্রুটি রাখে নি। তাই সাহস করে একদিন ইয়াসিনকে জিজ্ঞাসা করে যে কেন সে তাকে এভাবে এভোয়েড করছে? উত্তরে ইয়াসিন কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
-“আমি উপমাকে খুব ভালোবাসি। জানি তোমাকে না জানিয়ে খুব ভুল করেছি৷ কিন্তু তখন রাগে বিষয়টা মাথা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। আমি কখনোই তোমাকে মানতে পারবো না। সরি নাদিরা!”
নাদিরা ঘটনার আকষ্মিকতায় বাকশক্তি হারানোর উপক্রম হয়েছিল। আবারও! আবারও তার জীবন তাকে নিয়ে খেলল। আরও একবার তাকে টেনে হিচড়ে মাটিতে ফেলল। ভালোবাসা কি তার জন্য শুধুই মরিচিকা? সেদিন নাদিরা তার চোখের পানি ছেড়ে দিয়েছিল নিঃশব্দে। ইয়াসিন কে শুধু একবার বলেছিল,
-“আমাকে কি একবার উপমার জায়গাটা দেওয়া যায়? একটা বার কি আমি আপনার ভালোবাসা পাওয়ার সুযোগ পেতে পারি?”
ইয়াসিন কাঠ কাঠ গলায় বলেছিল,
-“সেটা কখনোই সম্ভব নয় নাদিরা! আমি আজও উপমাকেই ভালোবাসি।”
নাদিরা কোন কথা না বলেই চলে এসেছিল সেখান থেকে। তারপর থেকে শুরু হলো সারা বিশ্বের সামনে নাদিরার অভিনয়। এটাতে সে ছোটবেলা থেকেই অভ্যস্থ। সারাদিন অভিনয় করলেও রাতে সে বড্ড ক্লান্ত হয়ে পড়ে এই অভিনয় অভিনয় খেলা খেলে। সে এখনো চেষ্টা করে চলেছে যদি ইয়াসিনের মনের মতো হয়ে ওঠা যায়। ইয়াসিন তাকে স্ত্রীর অধিকার না দিলেও তার প্রতি একটু মায়া জন্মেছে। যতই হোক বাড়িতে একটা কুকুর পুষলেও তো তার প্রতি মায়া জন্মায়, আর সেখানে নাদিরা একজন মানুষ।
সকালে উঠে নাদিরা রান্নাঘরে গিয়ে সকল কাজ শেষ করে নেয়। ইয়াসিন এর জন্য টিফিন তৈরি করে রুমে আসে। ইয়াসিনকে ডাকতে হয় নি৷ এলার্ম শুনে নিজেই উঠে গেছে। নাদিরা কখনোই ইয়াসিনের চোখে চোখ রেখে কথা বলে না সেদিনের পর থেকে। আজও নিচু চোখেই বলল,
-“আপনার টিফিন তৈরি করে দিয়েছি। যাবার সময় একটু মনে করে নিয়ে যাবেন।”
নাদিরা চলে যাবে এমন সময় ইয়াসিন তাকে ডাক দিলো।
-“নাদিরা!”
নাদিরা খুব খুশি হলো। যেন মরুভূমিতে এক বিন্দু জল খুঁজে পেয়েছে পিছনে ফিরে জ্বি বলতেই ইয়াসিন তাকে বলল,
-“আজ একটু রেডি হয়ে থেকো। তোমাকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে যাবো। তাই টিফিন নিবো না আজ।”
নাদিরা যে কি পরিমান খুশি হয়েছে তা তার চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে। খুশিমনেই বলল,
-“আমি রেডি হয়ে থাকবো।”
ইয়াসিন মুচকি হেসে বেরিয়ে যায়। সারাদিন আজ নাদিরা খুব খুশি হয়ে সব কাজ করেছে। তার শাশুড়ি মা অনেক বার জিজ্ঞাসা করে কি হয়েছে। সেও খুশি হয়ে বলে আজ তাকে নিয়ে ইয়াসিন বাইরে যাবে। ইয়াসিনের মা ও খুব খুশি হয়েছেন শুনে।
সন্ধ্যায় নাদিরা তৈরি হয়ে বসে আছে ইয়াসিনের অপেক্ষায়। তার ধারনা হয়তো সময়ে অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে ইয়াসিন তাকে মেনে নিবে। হয়তো সে একটু ভালোবাসা পাবে। ইয়াসিন বাসায় আসতেই দেখে নাদিরা রেডি হয়ে আছে। সে মুচকি হেসে ফ্রেশ হতে চলে যায়। তারপর দুজনেই বেরিয়ে পড়ে।
একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে ইয়াসিন আর নাদিরা। নাদিরা তো খুব খুশি। সে তার প্রিয় মানুষটার সাথে এই প্রথম ঘুরতে বেরিয়েছে, কিন্তু ইয়াসিন ভাবলেশহীন ভাবে আছে। মুখোমুখি বসে ছিল তারা। নাদিরার নজর ইয়াসিনের উপর থাকলেও ইয়াসিনের নজর সামনের দিকে। হঠাৎ করেই ইয়াসিন উঠে এসে নাদিরাকে জড়িয়ে ধরলো। নাদিরা তো অবাকের শীর্ষে। কিছুক্ষণ পর হুট করেই ছেড়ে দিয়ে বলল,
-“সরি জড়িয়ে ধরার জন্য!”
নাদিরা কিছু বুঝতে না পেরে বলল,
-“সরি কেন?”
ইয়াসিন ঠিকঠাক হয়ে বসে বলল,
-“আসলে উপমাকে দেখতেই আজ তোমাকে এখানে নিয়ে এসেছি। ওর আর আমার ঝগড়া চলছে তো তাই ওকে জেলাস ফিল করানোর জন্যই এতোকিছু!”
বলেই ইয়াসিন কফিতে চুমুক দিল। নাদিরার হাত থেকে ধপ করে কফিমগটা টেবিলে পড়লো। তার মনে হচ্ছে সে আজ বড্ড ব্যর্থ। কেন যেন তার নিজেকে নর্দমার কিট মনে হচ্ছে। হাত পা কাঁপছে। গলা থেকে কোন স্বর বের হচ্ছে না। তাও খুব কষ্টে বলল,
-“আমাকে কি আরও নাটক করতে হবে?”
ইয়াসিন ডানে বামে মাথা নাড়ালো। নাদিরা আবারও বলল,
-“চলুন তাহলে বাসায় যাই।”
ইয়াসিন অবাক হয়ে বলল,
-“সে কি! কিছু খাবে না? কিছুই তো খেলে না।”
নাদিরা জোরপূর্বক হেসে বলল,
-” আমার পেট মন সব ভরে গেছে। হয়তো গলা দিয়ে আর কিছু নামবেও না৷ চলুন বাসায়।”
ইয়াসিন আর জোর করে নি। চুপচাপ নাদিরাকে নিয়ে বাসায় চলে এসেছে। নাদিরাকে তার শাশুড়ি জিজ্ঞাসা করলে বলে সে খেয়ে এসেছে কিছু খাবে না। ইয়াসিন রাতে খাবার খেয়ে রুমে এসে দেখে নাদিরা রুমে নেই৷ এগিয়ে দেখে সে বারান্দার গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে আছে। কৌতুহলবশত সে গিয়ে নাদিরার পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই অনুভব করলো নাদিরার শরীর থরথর করে কাঁপছে। সোডিয়ামের হলদে লাইটে তার চোখের পানি স্পষ্ট। ইয়াসিনের একটু খারাপ লাগলো। ইয়াসিনের উপস্তিতি টের পেয়ে নাদিরা ইয়াসিনের দিকে না ফিরেই বলল,
-“আমাকে আর কখনো আজকের মতো নাটক করাতে নিবেন না প্লিজ। এটা আমার অনুরোধ। আর যদি উপমাকে বিয়ে করার জন্য ডিভোর্স লাগে আমাকে জানাবেন। তবুও এমন আর করবেন না প্লিজ। দোহাই লাগে।”
নাদিরা কথাগুলো বলে রুমে চলে আসে। ড্রয়ার থেকে তার মেডিসিন গুলো নিয়ে নেয়। হ্যাঁ এবার শান্তি। হয়তো এখন একটু শান্তিতে ঘুমোতে পারবে।
,
,
,
চলবে…………❣️
(নাহ! আমি মনে হয় না, না লিখে থাকতে পারবো!😑 তাই গল্প লিখে ফেললাম৷ এই গল্পটা আমি ভিন্নভাবে শুরু করেছি। এখানে নায়িকার অসহায়ত্ব ফুটে উঠবে। কিন্তু লাস্টে টুইস্ট থাকবে। তাই আগেই বলে রাখি যাদের ইচ্ছা হবে না তারা এভোয়েড করতে পারেন। গল্পটা ১০-১৫ পর্বের হবে।)