#সুখপাখির_খোঁজে 💔
#লেখনিতে_সুমাইয়া_ইসলাম_মিম
#পর্ব_২
.
ইয়াসিন বারান্দা থেকে রুমে এসে দেখে বিছানার এক কোনে ঘুমিয়ে আছে নাদিরা। সে ফ্রেশ হয়ে সোফায় ঘুমিয়ে পড়লো। পরপরই তার মোবাইল বেজে উঠলো। হাতে নিতে দেখে উপমার ফোন!
ইয়াসিনের ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো।
-“উপমা! জান!”
ওপাশ থেকে উপমা বলল,
-“বউকে বুকে জড়িয়ে গার্লফ্রেন্ডকে জান ডাকছো? ভালোই উন্নতি!”
ইয়াসিন আতংকিত হয়ে বলল,
-“এইসব কি বলছো উপমা? তুমি তো জানো আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি! আমি তো তোমাকে বললামই নাদিরাকে ডিভোর্স দিয়ে চল আমরা বিয়ে করি! কিন্তু তুমিই তো আমাকে মানা করছো বারবার!”
উপমা আমতাআমতা করে বলল,
-” দেখো ইয়াসিন বিয়ে করে কি হবে? তোমার তো বিয়ে হয়ে গেছে যতই হোক। তোমার ফ্যামিলি নাদিরাকে মেনে নিয়েছে। আর আমি তো তোমাকে ছেড়ে দেই নি। তুমি চাইলে এখনই আমি তোমার হতে পারি। তার জন্য বিয়ের দরকার হবে না। তুমি চাইলে কালকেই একটা রুম বুক করি?”
ইয়াসিন নাকমুখ কুঁচকে বলল,
-“ছিঃ উপমা! কি বলছো এইসব? আমি তোমাকে চাই! কিন্তু স্ত্রীর রুপে। আমি তোমাকেই স্ত্রীর অধিকার দিতে চাই। যার জন্য আমি এখনো নাদিরাকে স্পর্শ পর্যন্ত করি নি। আর না তাকে কোন প্রকার অধিকার দিয়েছি আমার উপর। আমি তোমাকে চাই, তাই বলে অবৈধভাবে না।”
উপমা কটাক্ষ করে বলল,
-“শিখাতে এসো না ইয়াসিন। দুজন ছেলে মেয়ে এক রুমে থাকে তবুও তাদের মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই, এটা বিশ্বাস করতে বলো না।”
ইয়াসিন বেশ ঝাঁঝালো সুরে বলল,
-“শোন উপমা প্রতিদিন তুমি এভাবে আমাকে অপমান করতে পারো না। আমাদের মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই। দুজনের একে অপরের প্রতি সম্মান আছে বিধায় সেই সম্পর্ক গড়ার প্রয়োজন পড়ে না। সেই ক্ষেত্রে দেখতে গেলে তুমি অনেকবার অনেকজনের সাথে টুরে গিয়েছো। তাহলে আমি কি ভাববো?”
উপমা এবার নরম সুরে বলল,
-“ইয়াসিন! বাবু! আমি তোমাকে নিয়ে অনেক ইনসিকিউর ফিল করি! তাই তো বলি নাদিরাকে তুমি স্পর্শ করবে না। তোমার যদি ছুতে ইচ্ছে হয় তো আমাকে বলবে। তাও ওই মেয়ের কাছে যাবে না।”
ইয়াসিন একটা শ্বাস ফেলে বলল,
-“চলোনা আমরা বিয়ে করে ফেলি! তাহলেই তো আর কোন সমস্যা হয় না।”
হঠাৎ করেই নাদিরা খাট থেকে নেমে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। ইয়াসিন অবাক হয়ে যায়। নাদিরা কি তবে ঘুমোয় নি? যেভাবে বের হলো তাতে মনে হয় না সে ঘুমিয়েছিলো। ইয়াসিন ফোন রেখে নাদিরার পিছু যায়। নাদিরার মাথা ধপধপ করছিলো। তার ইচ্ছে হচ্ছিলো নিজেকে শেষ করে দিতে। সে ডেস্পারেটলি এদিক সেদিক হাঁটছে। তার পুরো শরীর কাঁপছে। আবার রুমে এসে ড্রয়ার থেকে একটা কৌটা থেকে তিনটে ঔষধ নিয়ে পানি দিয়ে গিলে ফেলল। ইয়াসিনও তাড়াতাড়ি রুমে আসে, সে শুধু কিছু খেতে দেখে। কি খেয়েছে তা বুঝতে পারছে না। ভ্রু কুঁচকে নাদিরাকে সে জিজ্ঞাসা করে,
-“নাদিরা? তুমি কি খেয়েছো? আর এভাবে কাঁপছো কেন? তুমি ঠিক আছো?”
নাদিরা চমকে ইয়াসিনের দিকে তাকালো। তারপর মেকি হেসে বলল,
-“নাহ কিছু হয় নি তো! আমি আপনাকে ডিস্টার্ব করলাম তাই না? আমি দুঃখিত!আমি আসলেই বুঝতে পারি নি। আপনি ঘুমোন! আম…আমি কো..কো..থায় যা..বো?”
নাদিরা কেমন যেন করছে। চোখ থেকে তার অনবরত পানি ঝড়ছে। এদিক সেদিক মাথা ঘুড়িয়ে দেখছে যেন কিছু খুঁজছে, কিন্তু না পাওয়ায় সে প্রচন্ড ক্ষিপ্ত। ইয়াসিন তাড়াতাড়ি এসে নাদিরাকে ধরে। নাদিরা ইয়াসিনকে তার থেকে দূরে সরানোর চেষ্টা করে কিন্তু ইয়াসিন তাকে শক্ত করেই ধরে রাখে। ইয়াসিন অবাক চোখে নাদিরাকে দেখছে, এইরকম ভাবে কখনোই সে নাদিরাকে দেখে নি। নাদিরাকে সে নিজে থেকেই ছেড়ে দিলে নাদিরা ছিটকে তার থেকে দূরে সরে যায়। সে অনবরত বিড়বিড় করে বলছে,
-“চলে যাবো! মরে যাবো! শেষ হয়ে যাবো। কেউ আমার নয়, আমি পাবো না আমার সুখপাখি! আমি শেষ হয়ে যাবো।”
ইয়াসিন কিছুকিছু শুনলেও কিছুই বুঝতে পারে নি। নাদিরা বারান্দায় দিয়ে গুটিসুটি মেরে এক কোনে পড়ে রয়। হাটু জড়িয়ে নিজেকে আড়াল করার এক ব্যর্থ চেষ্টা চালায়। ইয়াসিন সবটাই লক্ষ্য করে, কিন্তু নাদিরার এমন অবস্থা তার বোধগম্য নয়। সে নাদিরার দিকে একবার যেতে নিয়েছিল কিন্তু নাদিরা ভীত চোখে তাকে কাছে আসতে বারণ করে। বারবার চেষ্টার পর ব্যর্থ হয়ে ইয়াসিন বারান্দার দরজায় বসে পড়ে, আর এক সময় দুজনেই ঘুমে তলিয়ে যায়।
সকালে ইয়াসিনের চোখ খুলতেই দেখে তার থেকে বেশ দূরত্ব রেখে নাদিরা তাকে ডাকছে।
-“এই যে ইয়াসিন সাহেব! সকাল ৭ টা বাজে! আপনি উঠে পড়ুন। ”
ইয়াসিন কোন কথা না বাড়িয়ে উঠে ওয়াশরুমে চলে যায়। সে রাতের ঘটনার জন্য এখনো বেশ অবাক। কিন্তু নাদিরা এতটা নরমাল বিহেভ কিভাবে করছে তাই ভেবে পাচ্ছে না ইয়াসিন।
ওয়াশরুম থেকে বের হতেই ইয়াসিন দেখে নাদিরা হাতে কফির কাপ নিয়ে রুমে ঢুকলো। ইয়াসিনের দিকে কাপটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
-“এই নিন কফিটা!”
ইয়াসিন কাপটা হাতে নিতেই দেখে নাদিরার হাত থরথর করে কাঁপছে। ইয়াসিনের ভ্রু কুঁচকে এলো। সে নাদিরার হাত ধরে বলল,
-“তোমার হাত কাঁপছে কেন?”
নাদিরা হাতটা তাড়াতাড়ি সরিয়ে বলল,
-“কিছু না।”
বলেই নাদিরা রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। ইয়াসিন আরেকদফা অবাক হলো। আর কিছু মনে পড়তেই সে ড্রয়ারের কাছে এগিয়ে গিয়ে ড্রয়ার খুলে কিন্তু সে হতাশ হয়ে যায়! এখানে কিছুই নেই। ইয়াসিন খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে নাদিরা কিছু লুকাচ্ছে। কিন্তু নাদিরাকে জোর করার অধিকার তো সে নিজেই নেয় নি। কি করবে সে। আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে ইয়াসিন অফিসের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো।
ইয়াসিন অফিসে বেরিয়ে যাওয়ার পর নাদিরা রুমে এসে লাবনিকে ফোন দিলো। লাবনি নাদিরার ফ্রেন্ড। নাদিরার ফোন পেয়ে লাবনি খুশি হয়ে ফোন ধরলো।
-“হ্যালো নাদু! কেমন আছিস বনু?”
নাদিরার গলা কাঁপছে। চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে। কোনমতে কাঁপা কন্ঠে বলল,
-“ঔষধগুলো কাজ করছে না লাবু!”
লাবনি একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,
-“যেই ঔষধ তোর দরকার তাইই তো পাচ্ছিস না! কান্না করিস না হসপিটালে চলে আসিস! আমি ড. ইরামের এপোয়েনমেন্ট নিচ্ছি!”
নাদিরা কোনমতে বলল,
-“হুম”
লাবনি অসহায় ভাবে বলল,
-“চলে আয় না আমার কাছে!”
নাদিরা চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলল,
-“আমি আমার ভাগ্যকে মেনে নিয়েছি। এখন পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়ার দিন গুনছি! হয়তো তাতেই আমার শান্তি!”
,
,
,
চলবে……………….❣️